এক চিলতে রোদ পর্ব ৪৮ || bangla romantic premer golpo

এক চিলতে রোদ পর্ব ৪৮
Nondini Nila

গাড়িতেই ঘুরাঘুরি হলো বিকেল ভর। আমি মুখ গোমড়া করে একা পেছনে বসে ছিলাম। আর ফারিয়া ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলো। ভাইয়া লুকিং গ্লাস এ আমার দিকে দেখেছে একটু পর পর কিন্তু তা আমি বুঝতে পারিনি‌।
ভাইয়া আইসক্রিম পার্লারে ঢুকলো আমাদের নিয়ে। আমার যেহেতু এটা পছন্দ আর আমি কিছু খাইনি বের হ‌ওয়ার পর তাই। ফারিয়াকে সেরা রেস্টুরেন্টে খাইয়েছে। আমি চুপ করে বসেছিলাম। ভাইয়া খেতে বলেছিলো আমি খাইনি। ভাইয়া ও খাইনি। আইসক্রিম খেতে এসে ফারিয়া ফোন টিপছে ও আইসক্রিম খায় না‌। আমি তবু ও একবার খাওয়ার জন্য ডাকলাম এলো না। ভাইয়া আর আমি বসলাম। ভাইয়া খাবে না কিন্তু আমার সাথে বসেছে। আমি খাওয়ার মাঝে ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে ভাইয়াকে এই প্রথম নিজে থেকে খাইয়ে দিতে গেলাম।

ভাইয়া বিস্মিত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আইসক্রিম মুখে নিচ্ছে না। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,,
‘ এমন হা করে তাকিয়ে আছেন কেন? আমার হাতে কি খেতে চান না?’
ফারিয়া আমাদের দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে আছে। ভাইয়া আমার কথা শুনে আমার হাত ধরে আইসক্রিম মুখে পুরে নিলো। আর অবাক সুরে বললো,
‘ ঊষা আজকে কোন দিকে সূর্য উঠেছিল বলতো।’
আমি কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বললাম, ‘ কেন?’
‘ তুই নিজে থেকে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছিস এই পাবলিক প্লেসে জোর করা ছাড়া এটা কি করে সম্ভব?’
আমি কপাট রাগ দেখিয়ে বললাম, ‘ আপনি ফাজলামি করছেন কেন? ‘
‘ ফাজলামো কোথায় করলাম? আমি সত্যি অবাক।’
‘ আমার এমনি মনে হলো তাই। এতো অবাক হ‌ওয়ার কি আছে?’
বলেই নিজের মুখে আইসক্রিম পুরে আড়চোখে ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম। রাগে তাকিয়ে আছে আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ভাইয়ার হাত ধরে বললাম,, ‘খাওয়া শেষ চলেন।’
ভাইয়া হাতের দিকে অবাক হয়ে তাকালো। ভাইয়া চমকের উপর চমক খাচ্ছে। আমাকে সাথে নিয়েই বিল দিলো ভাইয়া এবার আমি ফারিয়ার আগে সামনে বসে পরলাম।
এটা দেখে ভাইয়ার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আমি ফারিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
ফারিয়া আজ সাদা শার্ট আর কালো লেডিস প্যান্ট পড়ে আছে।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

ফর্সা মুখ রাগে লাল হয়ে এসেছে।
‘ ঊষা এখানে তো আমি বসে ছিলাম। তুমি আমার জায়গায় কেন বসলে?’
আমি বললাম, ‘ এটা আপনার জায়গা আপু?’
‘ হোয়াট ডু ইউ মিন?’
‘ আসার সময় তো আপনি বললেন এটা আমার জায়গা সব সময় আমি বসবো। এখন তাহলে আমার জায়গাকে নিজের বলে দাবী করছেন কেন?’
ফারিয়ার থোতা মুখটা ভোঁতা হয়ে গেলো নিমিষেই। কটমট করে পেছনে গিয়ে বসলো। আমি এতো গুলো কথা বলে নিজেই অবাক হয়ে বসে আছি। ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আমি বললাম, ‘ সরি।’
ভাইয়া ভ্রু কুঁচকালো, আমি বললাম, ‘ আপনার ফ্রেন্ডকে কথা শুনালাম।’
ভাইয়া মুখে সেই অপূর্ব হাসি ফুটিয়ে ড্রাইভ করতে লাগলো।আমি তার বাম গালে টোল পরার দিকে তাকিয়ে আছি।
এই জিনিসটা আমার সব চেয়ে প্রিয় হাসলে ভাইয়াকে সব চেয়ে সুন্দর লাগে।
আমি ঘাড় বাঁকিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখি ফারিয়া ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাকাতেই আমার দিকে রেগে তাকালো।
সন্ধ্যায় পরে আমরা বাসায় এসে পৌঁছালাম।ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে কফি চাইলো তারপর সোজা উপরে চলে গেলো।

ফারিয়া ও চলে গেলো আমি ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে এলাম কফি করতে। লতা আমাকে কেমন ঘুরলাম জিজ্ঞেস করলো আমি হেসে সব বললাম।
সব শুনে লতা খুব খুশি ওর কথা রেখেছি। লতাইতো এসব শিখিয়ে দিয়েছে‌ আমাকে।
‘ ওই লাক সাহেবের বেটির মুখটা তখন দেখার মতো হয়েছিল তাই না ঊষা। এখন থেকে আমার কথা শুনে ওই ছেরি রে শিক্ষা দিবি বুঝছিস। তোকে অপমান করেছে তাই না দেখিস আমি কি হাল করি ওর। তুই শুধু আমার কথা শুনবি!’
‘ভাইয়া যদি রাগ করে?’
‘ ধুর এইসব যদি ভাইজান জানতে পারেনা ওই লাক সাহেবের বেটি কি হাল করবে আল্লাহ জানে।তার থেকে আমরা কম‌ই করছি। তুই তো ভাইজান কে বলতে পারবি না চাচির ভয়ে তাহলে এসব শুনবি না কেন?’
আমি কিছু বললাম না। কফি হাতে উপরে এলাম। ইলা আপুর সাথে দেখা হলো আর ফট করেই হাত থেকে কফি নিয়ে নিলো।
‘ এটা আমি খাই তুই আরেকটা ইহানের জন্য নিয়ে যা।’
আমি থ মেরে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম। নিচে এসে রান্নাঘরে যাব ফারিয়া টেনে আমাকে নিয়ে বললো,
‘ বাট আর ইউ ডুইং টু মাচ!’
‘ আমি কি বেশি করলাম?’
‘ইহান তোমাকে ভালোবাসে না। তোমার প্রতি এটা শুধু আকর্ষণ মাত্র। আমি চলে এসেছি দেখো ও এখন আমাকে ভালোবাসবে।’
‘ আমি তো শুনেছি ভাইয়া আপনাকে ভালোবাসতোই না কখন!’
‘ কে বলেছে ইহান আমাকে খুব ভালোবাসতো।’
‘ সত্যি।’

ফারিয়া থতমত খেয়ে গেলো। আমি বললাম,
‘ আমার লেট হয়ে যাচ্ছে। ভাইয়া আবার বকবে!’
আমি চলে এলাম। ফারিয়া কটমট করে নিজের রুমে এসে ফুলদানি ছুঁয়ে মারলো তখন চাচি রুমে ঢুকে মৃদু চেঁচিয়ে উঠলো,
‘ হায় হায় এসব কি করছো?’
ফারিয়া বললো,’ আপনার ছেলে আমাকে ভালোবাসতো কিন্তু এখন ও ওই ঊষাকে ভালোবাসে এটা আমি মানতে পারছি না। আমি ইহানরকে খুব ভালো বাসি আন্টি প্লিজ আমার ইহানকে ফিরিয়ে দিন।’
‘ইহান তোমাকে ভালোবাসতো সত্যি?’
অবাক হয়ে বললো চাচি।
‘ হুম।’
‘তাহলে ঊষা।আর ও তো কখনো বলেনি কাউকে ভালো বাসে আর এখানে আসার পর থেকে তো ঊষার পেছনে পরে আছে। তুমি কি সত্যি বলছো?’
ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল।
ফারিয়া চুল খামচে ধরে বললো,
‘ আমি ইহানকে খুব ভালোবাসি। ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।ওর জন্য শুধু মাত্র আমি বাংলাদেশের এসেছি। ইহান আমাকে ফোন করে এসব বলেছিলো।’
ইহন যখন রিয়ালাইজ করে ও ঊষাকে ভালোবাসে তখনই ও ফারিয়াকে সব জানিয়ে দেয়।
সেদিন রাতে ফোন করে ফারিয়াকে বলে,

‘আমি একজনকে ভালোবাসি ফারিয়া আর সে তুমি না!তোমার সাথে আর এইভাবে আমি কথা বলতে পারছি না। এতদিন হয়ে গেল। কিন্তু আমি তোমাকে এখনো ভালোবেসে উঠতে পারিনি। তোমাকে একজন ভালো বন্ধু ছাড়া আমি এর চেয়ে বেশি কিছু ভাবতে পারিনা। কিন্তু ওকে প্রথম দেখাই আমার মনের কোণে সপ্ত অনুভূতির জন্ম হয়। ও আমার হৃদয়ে ভালোবাসার জন্ম দিয়েছে। ওকে এক সেকেন্ড না দেখলে আমার নিজেকে পাগল পাগল লাগে। ওর কিছু হলে আমার ভেতরটা ছারখার হয়ে যায়।ওকে আমি খুব ভালোবাসি। তুমি প্লিজ আমাকে ভুলে যাও। এতোদিন হলো বাংলাদেশে এসেছি দুরত্ব ও আমার তোমাকে মিস করায়নি।আমরা এক হলে কেউ সুখে থাকতে পারবো না। আমি তোমাকে মন থেকে ভালবাসতে পারব না।নিজের জীবন নতুন করে সাজাও। পাগলামি করো না। নিজের ক্ষতি করো না। তুমি তোমার ফ্যামিলির একমাত্র সন্তান। নিজের মম ড্যাডের দিকে তাকিয়ে নিজেকে নতুন করে সাজাও। নতুন কাউকে নিজের জীবন সঙ্গী করো তাকে ভালোবাসো। আমি তোমার সাথে সারা জীবন কথা বলব ফ্রেন্ড রাখব। আমরা ফ্রেন্ড হয়ে থাকবো। ‘
এতো সব কথা সেদিন বলেছিলো। ইহানের কথা শুনে ফারিয়া হতভম্ব হয়ে গেছিলো। অনেক কিছু বুঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা। মম ড্যাড ফারিয়ার কথায় উঠে বসে তারা পর্যন্ত ফারিয়াকে সেদিন বলে,
‘ ফারিয়া তুমি ওই ছেলেটার জন্য অনেক পাগলামো করেছো। আর না ও নিজের দেশে চলে গেছে ভালো হয়েছে। ওকে ভুলে যাও তোমার জন্য আমরা ছেলে দেখবো।’
‘ নো মম আমি ইহান ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না।’
‘ ও তোমাকে ভালোবাসে না!’
‘ আমি ইহানকেই চাই আমি বাংলাদেশ যাবো।’

ফারিয়ার বাবা মা মেয়ের এই আবদার রাখেন না‌। তারা ইহানকে ভুলতে বলে। কিন্তু ফারিয়া পারেনা আর বাংলাদেশে আসে সবাইকে লুকিয়ে। ইহানকে মানিয়ে নিজের সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
সব খুলে চাচি কে বললো। চাচি সব শুনে বললো,
‘ তুমি চলেই যাও। আমার ওই ঊষার থেকে তোমাকে পছন্দ। কিন্তু ছেলেকে ভীনদেশে পাঠাতে পারবো না। আমার ছেলে আমার কাছে থাকবে। একমাত্র ছেলে আমার।’
চাচি চেয়েছিলো এই ফারিয়ার মাধ্যমে ছেলেকে ঊষার থেকে সরিয়ে আনতে কিন্তু তার জন্য ছেলেকে চোখের আড়ালে পাঠাতে পারবে না। একটা মাত্র ছেলে তাকে কিনা ও মেয়ে বিদেশে নেওয়ার পরিকল্পনা করে আমাকে শুনাচ্ছে।
রাগ উঠে দাঁড়ালো ফারিয়া কি বলবে বুঝতে পারছে না‌। রাগে এই বুড়িটাকে আছাড় দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু না এখন একেই ওর কাছে লাগবে একবার ইহান আমার হলে ওকে বিদেশ নিয়ে যাওয়া ব্যাপার না। কিন্তু তার আগে কারো সাহায্যের প্রয়োজন।
ও তারাতাড়ি গিয়ে চাচির হাত ধরে বললো,
‘ আন্টি আপনি যদি চান আমি এখানে থাকতেই রাজি। তবুও আমার ইহানকে চাই। ওর জন্য আমি সব কিছু করতে রাজী আছি।’
এই তো লাইনে আসছে। চাচী মনে মনে খুশি হলো কতো ভালোবাসে আমার ছেলেটারে। আর আমার বোকা ছেলে কিনা এই সুন্দরী স্মার্ট মাইয়া রেখে ওই ঊষার জন্য পাগল হলো।
চাচি খুশি হয়ে ফারিয়ার দিকে তাকালো। এই মাইয়া আমার বউমা হলে সবার কাছে কতো দাম বাড়বে। মাইয়া কথায় কথায় ইংরেজি বলে। আবার বিদেশি ধনী মাইয়া আসছে আমার ছেলের জন্য। খুশি বাকবাকুম করতে করতে সোফায় এসে আরামছে বসে চাচি।
আমি কফি করে ভাইয়ার কাছে আসি। ভাইয়া বিছানায় বসে আছে ট্রাউজার আর গেঞ্জি পরে। হাতে ফোন আমি গিয়ে কফি বাড়িয়ে ধরলাম। ভাইয়া মাথা তুলে বললো,

‘ এতো দেরি হলো কেন?’
আমি বললাম, ‘ ইলা আপু আপনার কফি নিয়ে গেছে। তাই আবার করে আসতে সময় লাগলো।’
ভাইয়া কিছু বললো না কফিতে চুমুক দিয়ে বললো,
‘ বস এখানে।’
আমি দূরত্ব রেখে বসলাম তা দেখে ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে র‌ইলো। কফি দুই চুমুক দিয়ে পাশে রেখে আমার দিকে এগিয়ে এসে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রেখে বললো,
‘ আচ্ছা তুই কি জেলাস ফারিয়ার উপর।’
আমি উঠার চেষ্টা করলে ভাইয়া টেনে নিজের সাথে ভালো করে মিশিয়ে নিলো। ভাইয়ার দুহাত আমার পেটের উপর রাখা‌। আমি হাত বাড়িয়ে ভাইয়ার হাত ছুটাতে চাইলাম আর বললাম,
‘ ছারুন।’
ভাইয়া একহাতে আমার হাত ধরে বললো,
‘ তুই আজ আমাকে খাইয়ে দিলি। নিজে থেকে আমার পাশে বসলি রাস্তায় হাত ধরে রাখলি। এসব তুই করেছিস? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।’
আমার সারা শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। ভাইয়া আমার উন্মুক্ত কাঁধে নিজের ঠোঁট রেখে কথা বলছে। আমি ঠোঁট কামড়ে ধরে চোখ খিচে বন্ধ করে আছি।
ভাইয়া আবার বললো, ‘ জানিস আমি কতোটা হ্যাপি আজকে। তুই নিজেকে থেকে আমার জোর করা কাজ করেছিস। এটা আমার জন্য কতোটা তোকে প্রকাশ করতে পারবো না।’
ভাইয়া আমার কাঁধে থেকে মাথা তুললো আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। চোখ খুলে ভাইয়াকে কোন রকম সরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।
ভাইয়া তা দেখে আমাকে আবার টেনে বসিয়ে দিলো।আগের বার আমার পিঠ ঠেকে ছিলো ভাইয়ার দিকে এবার আমি ভাইয়ার মুখোমুখি বসে। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। আর ভাইয়া খালি ওইসব বলে যাচ্ছে। কেন যে ওসব করলাম। এই লতার জন্য এখন ভাই আমাকে এসব বলেই পাগল করে ছাড়বে।

আমি নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলাম হঠাৎ ভাইয়া আমাকে ডেকে উঠলো,
‘ ঊষা আমার দিকে তাকা না প্লিজ।’
আমি সঙ্গে সঙ্গে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়ার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক দেখা যাচ্ছে ভাইয়া তার সুন্দর ঠোঁট নাড়িয়ে বললো,
‘ তুই আমাকে ভালোবাসিস আমি জানি। কিন্তু আমার তোর মুখে এটা শুনার খুব ইচ্ছে প্লিজ একবার নিজের মুখে বল ‘ ভালোবাসি।’
আমি ভাইয়া দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া অধীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমার কি হলো জানি না আমি ফট করে বলে ফেললাম,
‘ ভালোবাসি’
ভাইয়া চমকে উঠে বললো,
‘ কি বললি?’

এক চিলতে রোদ পর্ব ৪৭

আমি কি বলেছি বুঝতে পেরে লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। নিচের দিকে মাথা নুইয়ে নিতে যাব ভাইয়া আমার থুতনি ধরে আটকে ফেললো।
‘বল প্লিজ!’
আমি ভাইয়া মুখের দিকে তাকিয়ে বলার সাহস পেলাম না। এমনি তাকিয়ে থাকতেও পারছি না। আমার মুখ লজ্জায় রাঙা হয়ে গেছে। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। ভাইয়া আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আবার বলতে বললো। আমি বললাম,
‘ আআ–মি আপনাকে ভালোবা–সি।’
ভাইয়ার হাত আমার থুতনি থেকে পড়ে গেছে। আমি চোখ বন্ধ করে বসে আছি। লজ্জা তাকাতে পারছি না। নিজে মুখে ভালোবাসি বলে এখন আমি কি করে ভাইয়ার দিকে তাকাবো। আমার বুকের ভেতরে টিপটিপ করছে। সারা শরীর অসম্ভব ভাবে কাঁপছে। আমি চোখ মেলে তাকালাম কারণ ভাইয়ার আওয়াজ পাচ্ছি না। আমি তাকাতেই একটা অদ্ভুত কান্ড ঘটালো তা দেখে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।আমি তাকিয়ে থাকতে পারলাম না। আপনা আপনি চোখ বন্ধ হয়ে গেল। ইহান আচমকা আমার একদম কাছে চলে এলো আর আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দিলো। কতোক্ষণ এভাবে কাটলো জানিনা কিন্তু আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। ছারছেই না। আমি নিজের হাত দিয়ে খামচে ধরে ছিলাম ভাইয়ার বুকের কাছে। এবার আমি ধাক্কা দিতে লাগলাম। ভাইয়া আমায় ছেড়ে দিতেই। আয়া হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।

ছাড়া পেয়ে যেন প্রাণ ফিরে পেলাম। বড় বড় শ্বাস নিচ্ছি আমি। মুহূর্তের মধ্যে কি ঘটে গেলো সব আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো।
ভাইয়া আমার দুগালে হাত রেখে আমার মুখ উঁচু করে তুলে বললো,
‘ ঊষা আজকে আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। আমি তোর মুখে ভালোবাসি শুনেছি। এটা আমার জন্য কতোটা আনন্দের আমি বলে বোঝাতে পারবো না।’
বলেই বুকের মাঝে শক্ত করে চেপে জরিয়ে ধরলো।

এক চিলতে রোদ পর্ব ৪৯