এক চিলতে রোদ পর্ব ৫০ || Nondini Nila

এক চিলতে রোদ পর্ব ৫০
Nondini Nila

ফারিয়ার মনে তো লাড্ডু ফুটছে। খুশিতে ও দিশেহারা হয়ে পরেছে। ও কল্পনাও করতে পারিনি ইহান এতো সহজে মেনে নিবে। ওর সাথে চলে আসবে ডান্স করতে ঊষাকে রেখে।
ও ইহানের পাশে থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে ঊষার মুখটা দেখলো। আহ কি শান্তি লাগছে ওর। ঊষার মলিন মুখটা দেখে বুকের ভেতর সুখের জোয়ার ভেসে ফারিয়ার। ও শয়তানি হাসি দিয়ে ঊষার থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। ডান্স ফ্লোরে এসে হাসি মুখে ইহানের দিকে তাকালো। ওর মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো।
‘আমি খুব খুশি ইহান।’
ইহান কপাল কুঁচকে বললো, ‘ এতো খুশি হওয়ার কারণ কি?’
‘ তুমি যে আমার কথা রাখবে এটা আমি ভাবিনি। আমার কথা রাখার জন্য থ্যাংক ইউ সো মাচ।’
‘ আমি তোমার কি কথা রাখলাম?’
অবাক হয়ে বললো ইহান।
ফারিয়া বললো, ‘ এই যে আমার কথা শুনে আমার সাথে ডান্স করতে চলে এলে।’
‘ওহ।’
‘হুম’
ফারিয়া এগিয়ে এসে ইহানের কাঁধে হাত রাখতে যাবে তখন ইহান পিছিয়ে যায়। আর বলে,
‘ ওয়েট ওয়েট।’

ফারিয়া হাত নামিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ‘ কেন?’
‘ তোমার পার্টনার কে ডাকতে তো দেবে। আমাকে টানছো কেন?’
‘ হোয়াট? তুমি তো আমার সাথে ডান্স করবে তাই না। আবার কাকে ডাকবে।’
‘ আমি তোমার সাথে ডান্স করবো কখন বললাম।’
‘ করবে না বলছো। কিন্তু তাহলে আমার কথা শুনে আসলে কেন?’
‘ তোমার কষ্ট দেখে।’
‘ আমার কষ্ট দেখে মানে?’ অবাক হয়ে বলে।
‘ আমার ফ্রেন্ড ডান্স করার পার্টনার না পেয়ে মন খারাপ করে থাকবে তা কি করে হয়? তাই তো আমি পার্টনার খুঁজে দিতে এলাম।’
‘ হোয়াট? তোমাকে আমি পার্টনার খুঁজে দিতে বলিনি। পার্টনার হতে বলেছি।’
‘ কিন্তু সেটা সম্ভব কি করে বলো? আমার পার্টনার রেখে অন্যকারো সাথে কি করে আমি ডান্স করা তুমি বলো।’
‘ তাই বলে…
ইহান ফারিয়ার কথা শুনলো না পেছনে ঘুরে একটা ছেলেকে ডাকলো।
‘ মিহির।’
একটা ছেলে হাসি মুখে এগিয়ে এলো।
আর ইহানের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ কিরে ডাকছিস কেন? এই ক্যাপেলদের মাঝে আমি আসতে চাইনা। নিজের তো ফাটা কপাল একটা গার্লফ্রেন্ড জুটাতে পারলাম না। এসব দেখে এইখানে কেমন জানি করে রে আমি তাই দূরে বসে আছি।’
‘ তোর জন্য একজন আছে। এই যে আমার ফ্রেন্ড ফারিয়া লন্ডন থেকে এসেছে। ওর ও পার্টনার নাই তোর ও নাই তাই আজকের জন্য দুজন দুজনের পার্টনার হয়ে যায়।’
বলেই মিহির এর দিকে এগিয়ে কানে কানে বললো,
‘ দোস্ত পটাতে পারলে গার্লফ্রেন্ড করে নে সিট খালি আছে।’
মিহির আর ফারিয়ার হাত ধরিয়ে ইহান সরে এলো।
ফারিয়া রেগে ইহানের দিকে তাকিয়ে আছে। এইভাবে ওর আনন্দ মাটি করে দেবে কল্পনা ও করেনি। কতোটা আনন্দ পেয়েছিল আর সেকেন্ড এ ওর আনন্দ নষ্ট করে ইহান। ওই ঊষার কাছে চলে গেলো। ফারিয়া ইহানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইহান ঊষার কাছে গিয়ে কানে ধরে কি যেন বলছে? ঊষা গাল ফুলিয়ে মুখ সরিয়ে নিলো।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

রাগে ওর কান দিয়ে ধোঁয়া বের। তখন ও নিজের কোমরে কারো হাতের স্পর্শ পায় সামনে তাকিয়ে অপরিচিত একটা মুখ দেখে। এই ছেলেকে ইহান রেখে গেলো ওর জন্য।ছেলেটা কেমন দাঁত কেলিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে আবার পারমিশন ছাড়াই ওকে দুলিয়ে নাচাচ্ছে। একটা জিনিস খেয়াল ছেলেটার সাথে ওর ড্রেস মিলে গেছে।ছেলেটা ও নীল রঙের কোর্ট পরে আছে। আর ফারিয়া ও নীল শর্ট ফ্রক পরেছে। এই ছেলের সাথে ডান্স করার একটুও ইচ্ছে নাই ফারিয়ার ও হাত ছারানোর ট্রাই করছে কিন্তু পারছে না ছেলেটা ওকে ছারছেই না।ও এবার মুখ খুললো তাও ছারছে না।
মিহির শুধু বলেছে,
‘ আরে আমার সাথে ডান্স করুন না আমি ওতোটাও খারাপ ডান্স করি না।’
‘ ছারুন আমি আপনার সাথে ডান্স করবো না।’
‘ আরে আপনার ও পার্টনার নাই আমার ও নাই এক দিন না হয় দুজন দুজনের পার্টনার হয়ে গেলাম। সমস্যা কি তাতে?’
ফারিয়া রাগে গজগজ করতেছে‌। কিন্তু ছারাতে পারেনি।
‘ আপনি আমাকে রেখে চলে গেলেন আমার কতোটা খারাপ লেগেছিলো জানেন?আমি ভেবেছিলাম আপনি ফারিয়ার সাথে নাচবেন।’
‘ আচ্ছা বাবা সরি। আর ডান্স তো করিনি তাইনা। তাহলে কেন রাগ করছিস?’
‘আমি ভয় পেয়েছিলাম।’
‘ তাহলে আটকালি না কেন?’
‘আমি কেন আটকাবো?’
‘ওকে না আটকালি আমি অন্যদের সাথেই ডান্স করি তাহলে।’
‘খবরদার এটা করলে আমি আপনাকে মেরে ফেলব’
‘না আটকালে আমি এটাই করবো।’
‘ কিন্তু আমি তো আটআতে চাই না। আমি জানি আপনি আমাকে রেখে অন্য কারো কাছে যাবেন ই না‌।’

‘যদি যাই তখন কি করবি।’
‘মেরে ফেলবো।’
‘ তুই আমাকে মারতে পারবি?’
‘ না নিজেকে মারতে পারবো তো।’
আমার কথা শুনে ভাইয়া রেগে গেলো।
‘ কি বললি? নিজের ক্ষতি করার কথা ভাবলে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে।’
ভাইয়ার কঠিন কথা শুনে ভয় পেয়ে চুপ মেরে গেলাম।ভাইয়া আমাকে একহাতে জরিয়ে ধরে বললো,
‘ তোর কিছু হলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো বলতো? দেখ আমার শরীর কাঁপছে এমন কথা আর কখনো বলবি না।আমি শুধু তোকেই ভালোবাসি বুঝেছিস’
‘হুম।’
ইমা আপু আর রিফাত ভাইয়া নাচছে, আমি তাদের নাচ দেখছি ভাইয়ার সাথে মিশে দাঁড়িয়ে। ফারিয়া আর একটা ছেলে তাদের মুখের ভঙ্গি দেখছি।‌আরো অনেকে। হুট করে ভাইয়া ও আমাকে নিয়ে ডান্স ফ্লোরে চলে এলো।
আমি ভাইয়াকে বলতেছি আমি নাচতে পারি না। তবুও ভাইয়া বলছে তোর নাচতে হবে না শুধু আমার সাথে তাল মিলাবি।আজকে দিয়ে ভাইয়ের সাথে আমার দ্বিতীয়বার ক্যাপেল ডান্স করা হলো। সেই দিন ছিল অনেক অস্বস্তি আর আজকে লজ্জা। লজ্জায় লাল-নীল হয়েছি ডান্স করা পুরোটা সময়।
ভাইয়া আজকে সাদা কালারের ব্লেজার পরেছে। সাদা কালারের ভাইয়াকে শুভ্র দেখা যাচ্ছে। ভাইয়ের ফর্সা গায়ে খুব মানিয়েছে। রানী গোলাপি শার্ট উপরে সাদা ব্লেজার সাদা প্যান্ট পড়েছে। হাতে ঘড়ি আর এক হাতে ব্রেসলেট, সিল্কি চুলগুলো কপালে পড়ে আছে নাচের সময় ভাইয়া ঠোটে মুচকি হাসি ছিলো।আর তার সেই নজর কারা গালে টোল। ভাইয়ার গোল মুখে তার এই টোল পড়া হাসি আমার এত পছন্দ শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।

ভাইয়া ঠোট একদম গোলাপি যেন লিপস্টিক দিয়েছে। এত সুন্দর দেখতে যে আমি তাকিয়ে থাকা শুরু করলে শেষই হয় না।
নাচ শেষে ও আমি হা করে ডান্সফ্লোরে দাঁড়িয়েই তাকিয়ে আছি ভাইয়ের দিকে হা করে।ভাইয়ার ধাক্কা খেয়ে আমি হকচকিয়ে মাথা নিচু করে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কেউ নাই সবাই চলে গেছে নাচ শেষ করে।
আমি এখনো ভাইয়ার কাধে দুই হাত দিয়ে রেখেছি। তাড়াতাড়ি হাত নামিয়ে আমি সরে দাঁড়ালাম
ভাইয়া হেসে আমার হাত ধরে সবার কাছে চলে এলো। কেক কাটার সময় সবাই চেঁচিয়ে আমাকে উইশ করতে লাগল।আমি চোখভর্তি জল নিয়ে সবার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে ছিলাম। এবার কেক কাটার সময় আমি কেক কেটে সবার আগে চাচী’র দিকে তাকালাম চাচী’র মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেল। আমি মুখটা মলিন করে চাচা কে দিতে গেলাম চাচা গম্ভীর হয়ে থাকলে ও সবার সামনে কিছু বলল না আমার হাত থেকে নিয়ে নিজেই খেয়ে নিল। আমি এবার ইমা আপুকে দিলাম। আপু আমার মুখে আগে দিয়ে নিজে নিল একটু। ইলা আপু খাবেনা বলে দিলো আমি রিফাত ভাইয়া লতাকে খাইয়ে দিলাম। কেকে সাথে সবাই খাবার খেতে বসে গেল।শুধু ইহান ভাইয়াকে খাইয়ে দেই নাই সবার শেষে। ভাই এত বড় একটা কেকের খন্ড এনে আমাকে খাইয়ে দিলো না আমার দু গালে মাখিয়ে দিল। আমি হতভম্ব হয়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি আর মনটা আমি কল্পনা করিনি।

এক চিলতে রোদ পর্ব ৪৯

মৃদু চেঁচিয়ে করে বলে উঠলাম, ‘ এটা কি করলেন?’
ভাইয়া বললো, ‘তোকে কেক দিয়ে ভূত বানিয়ে দিলাম।’
‘ধুর।’
আমি নিজের রুমে চলে এলাম মুখ ধুয়ার জন্য। ভাইয়াকে রাগ দেখিয়ে।আমার সব সাজ নষ্ট করে দিলো। আমি তোয়াল দিয়ে গাল মুছে নিচ্ছি। তখন আমার কাঁধে কারো গরম নিঃশ্বাস পেলাম। চমকে ঘাড় ঘুরাতে গেলে ভাইয়া আওয়াজ পেলাম।
‘ আমাকে একটু কেক খাইয়ে দিলি না। সবাইকে দিলি আর আমি বাদ পরলাম।’
আমি বললাম, ‘ ছারুন আমাকে। আপনি কি করছেন? আমার সাজ টাই নষ্ট করে দিলেন।এইভাবে কেউ মুখে কেক দেয়।’
ভাইয়া আমার সামনে এসে দাড়ালো। আর হাতে তে তোয়াল নিয়ে আমার গাল মুছে দিয়ে বললো,
‘ আজ তোকে এতোটা সুন্দর লাগছে যে আমি কন্ট্রোল লেস হয়ে যাচ্ছি বারবার। আমার অনেক কিছু করে ফেলতে ইচ্ছে করছে।’
‘ কি সব বলছেন?’
‘ সত্যি। আমার তোকে…
থেমে গেলো।আমি জিগ্গেস করে তাকিয়ে আছি উৎসুক হয়ে।ভাইয়া আমার কপালে চুমু খেয়ে বললো, তোর জন্য একটা গিফট আছে।’
আমি বললাম, ‘ আবার গিফট‌। এতো এতো সারপ্রাইজ গিফট দিয়ে ও আর কি দেওয়ার আছে।’
‘আছে।’
ভাইয়া একটা ইয়া বড় বক্স বের করলো সেটা খুলতে বললো আমাকে আমি বক্সে কি আছে ভেবে হাত বাড়িয়ে খুলতে লাগলাম। একটা ইয়া বড় টেডি বিয়ার বের হলো। সাদা ধবধবে তার মাথায় ক্যাপ করানো লাল টকটকে। আমি বড় বড় চোখ করে টেডির দিকে তাকিয়ে আছি। উত্তেজিত হয়ে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম,

‘ এটা আমার জন্য।’
‘ হুম।’
‘ এতো এতো সারপ্রাইজ গিফট আমি তো আজ হার্ট এ্যাটাক করবো আমি।’
‘ তুই খুশি তো।’
‘ আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন আজকে।এমন স্বপ্নের মতো দিন আমি আজ‌ই প্রথম পেলাম। শুধু আপনার জন্য।’

এক চিলতে রোদ পর্ব ৫১