এক চিলতে রোদ পর্ব ৭ || Nondini Nila

এক চিলতে রোদ পর্ব ৭
Nondini Nila

পরীক্ষা অবশেষে এসেই পরল। রাতে খাবার শেষে বাসন ধুয়ে রেখে রুমে গিয়ে পড়তে বসলাম। ভালো মতো পড়তে পারি না সারাদিনে সময় হয়ে ওঠে না। একটার পর একটা কাজে লেগে থাকে বাড়িতে । নয়টায় পড়তে বসলাম কোথা দিয়ে একটা একটা বেজে গেলো বুঝতে পারি নাই। চোখ জ্বলে উঠছে আর বসে থাকলেই বোধহয় সকালে উঠতে পারবো না। বাধ্য বইখাতা বিছানার পাশে রেখেই শুয়ে পড়লাম ধপাস করে।

বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই সারা রাজ্যের ঘুম এসে ভীড় করলো আমার চোখে।
রোদের ঝাপটা এসে চোখে উপর পরলো জানালার কাচ ভেদ করে। কাল জানালা অফ করতেই ভুলে গেছিলাম। কিন্তু মনে হচ্ছে এটা অফ না করেই ভালো হলো। কিন্তু তাও অনেক দেরি হয়ে গেছে যেখানে আমি ছয়টার আগেই উঠে পরি সেখানে আজ অনেক দেরি করে ফেলেছি আমার একটা ঘড়ি আছে সেটা হাতে নিয়ে আঁতকে উঠলাম। সাথে সাতটা বাজে। লাফিয়ে বিছানা থেকে নামলাম। এতো বেলা কখন হয়ে গেল আমার মনে হচ্ছে এই মাত্র তো ঘুমালাম। বাথরুমে গিয়ে কোন রকম চোখে পানি দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে এলাম তারাতাড়ি কাজ শেষ করতে হবে।

আজকে আমার পরীক্ষা আছে দশটা থেকে পরীক্ষা তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করতে হবে। আমি জানি যে এগুলো আমার কাজ এগুলো কেউ ছুবেও না সেগুলো সেই ভাবে পড়ে থাকবে। বাইরে এসে ঝাড়ু নিয়ে দোতালায় চলে গেলাম। উপরে প্রত্যেকটা রুম ঝাড়ু দিয়ে এখন ইহান ভাইয়ের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। সেই দিন রাতের পর আর ভাইয়ার সাথে আমার কথা হয় নি ভাইয়া কে দেখতে শুধু খাওয়ার টাইমে দেখিয়েছি। এছাড়া ভাইয়া বাসার বাইরে থেকেছে সব সময়। কালকে ইমা আপুর থেকে জানতে পারলাম ভাইয়া নাকি একটা কলেজে জব নিয়েছে তারা নাকি ভাইয়া অফার করেছিলো। তো ভাইয়া সেখানে জয়েন হয়েছে।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

এজন্য আরো বাসায় থাকা হয়না। এটা অবশ্য আমার ভালোই হয়েছে।‌ওই দিনের পর আরো ভাইয়ের সামনে যেতে আমরা আরো বেশি লজ্জা লাগে। ভাইয়াকে দেখলে আমার হার্টবিট ফাস্ট হয়ে যায়। কেন এমন হয় বুঝি না সেতো আমার ভাই তাকে দেখলে আমার এত লজ্জা কেন পায়?লজ্জায় কুঁকড়ে থাকি কিন্তু অদ্ভুত ভাই আমার ভুল করেও তাকায় না!এই যেমন খাবার যখন টেবিলে রাখি। ভাইয়া খাবার টেবিলে একদম রেডি হয়ে বসে থাকে। কি সুন্দর লাগে দেখতে। ভাইয়ের দিকে তাকালে আমার বুকের ভেতরটা কেমন তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। আমি লজ্জায় কুকড়ে ভাইয়ের দিকে আড়চোখে তাকায় কিন্তু অদ্ভুত ‌ ভাইয়া আমার দিকে তাকায় ও না কথাও বলে না।আগে যেমন ভাইয়া দেখা হলেই হাসত একটা দুটো কথা বলতো কিন্তু এখন ভাই আমার মুখের দিকেও তাকায় না। ব্যাপারটা আমার বোধগম্য হয় না আর আমি এতো পাত্তাও দিইনা।

ওদিকে আমার পরীক্ষার সময় হয়ে যাচ্ছে।এক সপ্তাহ ভাইয়ের রুমে আসেনি। ঝাড়ু দেয়নি। কোন ভাবে কাটিয়ে লতাকে দিয়ে ঝড়ু দিয়েছি। কালকে ও আমাকে বলে দিয়েছে ও আর আমার হয়ে ঝাড়ু দিতে পারবে না। ওকে নাকি আরো অনেক কাজ করায়। অবশ্য আমার চাচি কাউকে বসে খাওয়ায় না।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম। অদ্ভুত ভেতরে ঢুকে ভাইয়াকে দেখতে পেলাম না।সারা রুমে চোখ ঘুরিয়ে ভাইয়াকে না পেয়েও কোথায় আছে জানার প্রয়োজন বোধ করলাম না। তাড়াতাড়ি ঝাড়ু দিতে লাগলাম তখনই বাথরুমের দরজা খুলে। ভাইয়া বাথরুম থেকে শুধু প্যান্ট পরে বেরিয়ে এলো। আমি আচমকা ভাইয়াকে খালি গায়ে দেখে আমার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো।

ভাইয়ার ফর্সা শরীরে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে মাথা থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানির নিচে পড়ছে। ভাই এর গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি তেও পানি লেগে আছে। আমি বিস্মিত হয়ে ভাইয়া দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া আমাকে দেখে চরম অবাক হয়তো আমাকে আশা করিনি। আমি লজ্জায় তাড়াতাড়ি মাথা নিচু করে ফেললাম। আর তাড়াতাড়ি ঝাড়ু দিতে লাগলাম।ভাইয়া তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নিজের শার্ট নিয়ে ভেজা শরীরেই পড়তে লাগলো। ভাইয়া হয়তো এভাবে আমার সামনে এসে লজ্জা পেয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে দরজা খুলে বের হতে যাবে তখন ভাই আমাকে পেছন থেকে ডেকে উঠলো। ভাইয়ের কণ্ঠ শুনে আমি ওখানেই জমে দাঁড়িয়ে পরলাম।
পেছনে ঘুরার সাহস করলাম না।
ঊষার দিকে তাকা।

ভাইয়ার কথা শুনে চমকে উঠলাম। কিন্তু ভাইয়ার কথা অগ্রাহ্য করতে পারলাম না আমি আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়ালাম মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। নিজের পায়ের বুড়ো আঙ্গুল ফ্লোরে শক্ত করে চেপে ধরে সেদিক তাকিয়ে আছি।
“জি ভাইয়া।
ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এলো আমি বুঝতে পারছি নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে ভাইয়ার ফর্সা পা দেখতে পেলাম। যা আমার দিকে অগ্রসর হচ্ছে আমার থেকে দুই পা পেছনে থেমে গেল।
ভাইয়া মৃদু সরে আমার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,,
আজকে না তোর পরীক্ষা আছে।
আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম।
তাহলে পড়া বাদ দিয়ে কাজ করছিস কেন?
আমি কি বলবো বুঝতে পারছিনা।
কি হল কথা বলছিস না কেন?
আমতা আমতা করে বললাম, জি আমার তো পড়া সব শেষ তাই আর এই সব তো আমিই করি না হলে আমার চাচি বকবে।

ভাইয়া আমার কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল বোধ হয়।
তোর উপর অনেক অত্যাচার করে আম্মু তাই না।
ভাইয়ার কথা শুনে আমি চমকে ভাইয়ের মুখের দিকে তাকালাম ভাই আমার দিকে অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছে।
চাচী আমাকে অত্যাচার নির্যাতন যাই করুক না কেন? তার আশ্রয় এই তো আমি বেঁচে আছি থাকতে পারছি খেতে পারছি। তার উপর আমার কোন রাগ নেই।
আমি মুখে হাসি ফুটিয়ে বললাম,, ক‌ই আমাকে তো খুব ভালোবাসে চাচী। অত্যাচার কেন করবে?
ইহান অবাক হয়ে বললো,
ভালোবাসে?
আমি বললাম,, হুম দেখেন না ভালো না বাসলে কি
আমি এই বাসায় থাকতে পারতাম। পারতাম না। খাচ্ছি পরছি সব তো তাদের জন্য তাই না।
কিন্তু আম্মু তো তোকে দিয়ে অনেক কাজ করায় তা তোর জন্য কষ্টকর।
হুম করায় তাতে কি এসব করে আমার খারাপ লাগেনা। আর লাগলেই বা কি এসব ধরতে নেই। অন্যের বাসায় থাকছি, খাচ্ছি, পরছি তাদের তাকায়, সব তো তাদের দয়া এসবের জন্য হলেও এইটুকু করা দরকার।

এক চিলতে রোদ পর্ব ৬

ভাইয়া আমার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।আমি চলে এলাম। যাদের খাচ্ছে যাদের দয়ায় আমি আছি বেঁচে তাদের বদনাম আমি করতে পারব না ভাইয়া। চাচা আমাকে যতই দূরে ছাই করুক তবুও তো তার কাছে থাকতে পারছি। তারা আমাকে লাথি-ঝাটা দিলেও বাসায়তো আশ্রয় দিয়েছে। না হলে কোথায় পড়ে থাকত না আমি।
নিচে আসতে চাচির মুখোমুখি হলাম চাচি আবার যা আসে তাই বলে বকাবাজি করতে লাগলো। আমি সেসব গায়ে মাখলাম না। রান্নাঘরে গিয়ে দেখলাম আজকে রান্না সব শেষ। বাসন মেজে নিয়ে টেবিলে খাবার দিলাম।
সবাই এসে বসেছে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আমার নজর আটকে গেল ভাইয়া সাদা শার্ট পরেছে হাতে ঘড়ি। কি যে সুন্দর লাগছে দেখতে আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি তখনই ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো আমি অবাক হলাম কতোদিন পর ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো ইশ কি মিষ্টি হাসি। ভাইয়া হাসলেই গালে টোল পরে যা আজকে বুঝা যায় হালকা দাড়ির জন্য হালকা কি সুন্দর হাসি।
ঊষা তুই ও আমাদের সাথে খেতে বস।

ভাইয়ার কথা শুনে থমকে গেলাম। চাচির দিকে তাকিয়ে দেখি রেগে ভাইয়ার দিকে তাকালো।
ও কেন আমাদের সাথে বসবে।ও রান্না ঘরে পথে লতার সাথে খাবে আমাদের পর।
ভাই বলল,, আমাদের সাথে বসলো সমস্যায় কি? আর আজকে ওর পরীক্ষা আগেই খেয়ে কিছুক্ষণ পরে না হয় পরীক্ষা দিতে যাবে পরে খেলে তো অনেকটা সময় চলে যাবে।
চাচি গম্ভীর গলায় বলল, সেসব আমার দেখার বিষয় না। ও আমাদের সাথে খেতে পারবে না ব্যস।
ভাইয়া কিছু বলতে যাবে তখন ইমা বলল,,
মা এমন করছ কেন বলতো খেতে দাও না। আজকে একটু আজকে থেকে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আজকে অন্তত ঝামেলা করো না আমার পাশে বসতো ঊষা আয়।
আমি সাথে সাথে মাথা নেড়ে বললাম,, আপু আমার কোন দেরি হচ্ছে না তোমরা খাও। আমি পরে খেয়ে নেব লতার সাথে।

আপু আমার কথা শুনল না উঠে এসে আমাকে জোর করে টেনে খাবার টেবিলে বসালো। আমি চমকে হতদম্ব হয়ে বসলাম ভয়ে ভয়ে সবার দিকে তাকাচ্ছি। তখনি চাচী চিৎকার করে বলে উঠলো,
এই অলক্ষণের বাচ্চা এখানে বসলে আমি এই খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে যাব।
চাচির কথা শুনে আমার আত্মা কেঁপে উঠল। থমকে আমি টেবিল ছেড়ে উঠে দাড়ালাম।চোখ ঝাপসা হয়ে গেল আমি আর কারো দিকে না তাকিয়ে দৌড়ে নিজের রুমে চলে এলাম।

এক চিলতে রোদ পর্ব ৮