আমার ক্রাশ পর্ব ১৬ || রোমান্টিক গল্প

আমার ক্রাশ পর্ব ১৬
Tanisha Sultana (Writer)

সায়ান তখন থেকে তুলিদের বাসায় কলিং বেল বাজাচ্ছে কেউ সারা দিচ্ছে না। সায়ানের টেনশনে মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে। এতো জোরে কলিং বেল চাপছে মনে হয় এখুনি ভেঙে যাবে। আদর দরজা খুলে দেয়
“এতোখন লাগলো দরজা খুলতে ?
” তুই এখানে এইসময় কেনো?
“তুলি কোথায়? তুলির সাথে দেখা করবো
” তুলি তোর সাথে দেখা করবে না
“মানে কি?
” বিরক্ত করিস না। যা এখান থেকে
আদর মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেয়।
“আজব! মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিলো। এখন তুলির সাথে কথা বলবো কি করে? এদের বলে লাভ নেই এরা ভীষণ হ্মেপে আছে আমার ওপর। অন্য কোনো রাস্তা খুঁজতে হবে।
সায়ান তখন থেকে তুলিদের বাসার সামনে বসে আছে৷ তুলির দেখা মিলছে না। কি আজব বেপার দুদিন আগেই মেয়েটাকে সয্য করতে পারতো না৷ কি করে তুলির হাত থেকে বাঁচবে সেটা ভাবতো আর আজ সেই তুলিকে এক নজর দেখার জন্য বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। কথায় বলে

” থাকলে কাছে কে আর বুঝে
হারিয়ে গেলে সবাই খুঁজে ”
সায়ানের বেপারটাও এমন হয়েছে।
সায়ান পায়চারি করছে।
“তুলি একবার বারান্দায় আসো প্লিজ। তোমাকে দেখার জন্য মনটা কেমন করছে প্লিজ তুলি। আমি আর কখনো তোমাকে কষ্ট দেবো না। মাথায় করে রাখবো। আল্লাহ সাহায্য করো
সায়ান মনে মনে বলছে।
তুলি ফ্লোরে মাথা রেখে খাটে পা রেখে চিপস খাচ্ছে আর টিভি দেখছে। তুলির এভাবে থাকতে ভালো লাগে। বিশেষ করে মন খারাপের সময়। আদর তুলির রুমে আসে
” বোন
“বলো
” সায়ান এসেছিলো
“তো
” তোর সাথে কথা বলতে চাইছিলো
“ওই ব্যাটা টার চেহারা আমি দেখতে চায় না৷ ও যদি এখানে আসে তাহলে আমি কাউকে কিছু না বলে দুরে কোথাও চলে যাবো আর কখনো খুঁজে পাবে না আমায়।
” ও কে তাড়িয়ে দিয়েছি
“ভেরি গুড। আদিহ্মেতা দেখাতে এসেছে। আমাকে থার্ড ক্লাস মেয়ে বলেছে আমি না কি ড্রামা করি। আরও অনেক কিছু বলেছে।?
” ওকে তো আমি খুন করবো?
“কিছু করতে হবে না। ওর সাথে আমি কোনোরকম সম্পর্ক রাখতে চায় না।
” আমিও নিশিকে বিয়ে করতে পারবো না। এখন না করবো
তুলি ঠাস করে সোজা হয়ে বসে
“দাভাই এটা করো না। নিশিপু খুব ভালো ওর কোনো দোষ নেই
” যার ভাই আমার বোনকে কষ্ট দিছে তাকে বিয়ে করবো ইম্পসিবল
তুলি আদরের হাত ধরে
“প্লিজ দাভাই আমার জন্য নিশিপুকে রিফিউজ করো না প্লিজ
“………
” এই বিয়ে টা না হলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো
“আমি বিয়েটা করতে পারি যদি
” যদি
“তুই আগের মতো হাসিখুশি থাকিস
” তুলির আবার মন খারাপ আছে না কি? তুলি তো সব সময় হাসে। এখন তো ডান্স প্যাক্টিজ করতে হবে। কাল তো অনেক নাচবো
আদর মুচকি হেসে তুলিকে জড়িয়ে ধরে
“লাভ ইউ বোন
” লাভ ইউ টু দাভাই

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

দিন গড়িয়ে সন্ধা হয়ে এসেছে সায়ান এখনও ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে। সায়ানের বাবা ফোন দেয়। সায়ান বাড়ি ফিরে যায়। সায়ান গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই তুলি বেলকনিতে আসে। আসলে বিকেলে বেলকনিতে হালকা রোদ থাকে তাই তুলি আসে নি। তুলির আবার রোদ একদম অপছন্দ।
এক কাপ কফি হাতে নিয়ে টুল টেনে বেলকনির রেলিংয় হাত দিয়ে বসে।
“ভালোবাসা বলতে এ জুগে কিছু নেই। মা বাবা ভাই বোন ছাড়া আর কেউ ই মন থেকে ভালোবাসে না। এই সায়ানকে এতো ভালোবাসলাম। কিন্তু ও কি করলো অপমান করলো গায়ে হাত তুললো।
এসব ভেবে তুলি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে সায়ানের ১৪৫ টা মিস কল। এতো এতো মেসেজ। তুলি তাচ্ছিল্য হাসে
” এই হলো কিছু মানুষের স্বভাব। তারা দু নৌকায় পা দিয়ে চলতে যায়। কখনো যদি টের পায় একটা নৌকা একটু সরে যাচ্ছে তাকে যেতে দেয় না আটকে রাখেন। কারণ তাদের দুটোই চায়। কিন্তু শেষে তারাই নিশ্ব হয়ে যায়।
এসব ভাবনার মাঝে আবারও ফোন বেজে ওঠে। তুলি ফোনটা বন্ধ করে দেয়।
“যখন মায়া বাড়িয়ে লাভ হয় না
তখন মায়া কাটাতে শিখতে হয় ”

“এতোদিন তুলির ভালোবাসা দেখেছো এবার ঘৃণা দেখবে সায়ান মাহবুব।
সায়ান নিজের রুমে অস্থির হয়ে পায়চারি করছে। তুলি ফোন বন্ধ করে দেওয়ায় আরও কষ্ট + রাগ হচ্ছে। দুই প্যাকেট সিগারেট শেষ করেছে।
” একবার তোমাকে হাতের কাছে পায় তুলি তারপর দেখাবো আমাকে ইগনোর করার পরিনাম। ভুল করেছি একটা সরি বলার সুযোগ তো দিতে হয়।
সায়ান নিজে নিজে এসব বলছে।
আজ আদর আর নিশির গায়ে হলুদ। সায়ান ওর মা বাবাকে পাঠিয়েছে তুলিকে ফিরিয়ে আনতে। তুলি শশুড় শাশুড়ীর মাঝ খানে বসে আছে।
” দেখ মা এক সাথে থাকতে গেলে এমন অনেক ছোটখাটো জিনিস নিয়ে ঝগড়া ঝামেলা হয়। তাই বলে তো সংসার ছেড়ে চলে আসা যায় না বল। ফিরে চল মামনি
তুলি শাশুড়ীর কথা শুনে উঠে দাঁড়ায়। তুলির মা বাবা আদরও এখানেই আছে।
“আপনার বলা শেষ হলে আপনারা এবার যেতে পারেন আন্টি। দাভাই স্পষ্ট বলে দিয়েছিলো আপনার মেয়েকে বিয়ে করবে না কিন্তু আমার কথায় রাজি হয়েছে। এখন আপনারা এসব কথা বাদ না দিলে আমি নিজে বিয়ে ভাঙতে বাধ্য হবো।
সায়ানের বাবা মা অবাক দৃষ্টিতে তুলির দিকে তাকায়। এটা তুলি তো? তুলি তো কখনো এভাবে কথা বলে না। তাহলে আজ কেনো এভাবে কথা বলছে?

” তুলি মা
তুলি হাত জোর করে বলে
“আপনারা আসতে পারেন।
তুলি রুমে চলে যায়। সায়ানের মা তুলির পেছনে যেতে নেয় তুলির বাবা আটকে দেয়
” আপনার ছেলেকে বিয়ে করে আমার তুলি অনেক অপমান সয্য করেছে। আপনার ছেলের হাতের থাপ্পড় ও খেয়েছে। এবার ওকে ওর মতো থাকতে দিন প্লিজ। আমি ডিভোর্সের ব্যবস্থা করছি। পেপার এলে তুলির সাইনসহ পাঠিয়ে দেবো। কেমন
সায়ানের বাবা মা চলে যায়। সায়ানকে সব বলে। হাতের কাছে থাকা কাঁচের গ্লাস টা ভেঙে ফেলে সায়ান
“খুব বার বেরেছে তুলির। বড় বড় কথা বলতে শিখে গেছে।
বিকেলে
হলুদ শাড়ি মাথায় ফুলের গাজরা লাল লিপস্টিক চোখে মোটা করে কাজল ভারি মেকাপ দিয়ে পারফেক্ট হয়ে সেজে বের হয় তুলি।
” বাপি কেমন লাগছে তোমার তুলিকে?
বাবা তুলির কানে কাজলের টিকা দিয়ে বলে
“পারফেক্ট
তুলি খুশি হয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে। তারপর বেরিয়ে পরে মেয়ের বাড়িতে আই মিন নিশিদের বাড়িতে নিশিকে হলুদ দিতে। তুলিসহ আরও অনেকগুলো মেয়ে। সায়ানদের বাড়ি তুলিদের বাড়ি থেকে খুব বেশি দুরে না। তাই পায়ে হেঁটেই যায়। অভি জিসান সহ আশেপাশে যত মানুষ আছে সবার নজর তুলির দিকে। অপূর্ব লাগছে তুলিকে।
তুলি অভি জিসানের সামনে যায়

” কেমন লাগছে ?
“পরি। অনমনে বলে অভি।
আমার ক্রাশ
” তাহলে চলো প্রেম করি?
“তোমার সাথে প্রেম করতে পারলে জীবন ধন্য
” কও কি
“সত্যি
” লাভ ইউ. এখন তুমি টু কও।
“লাভ ইউ টু
অভি আর তুলি দুজনই ফিক করে হেসে ওঠে। জিসান আসলে কি হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করছে।

আমার ক্রাশ পর্ব ১৫

সায়ানদের বাড়ির সামনে বাগানে হলুদের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সায়ান বেলকনিতে ছিলো তাই তুলি আর অভির হাসাহাসি দেখতে পায়। সায়ানের মাথায় রক্ত চরে যায়। হনহনিয়ে রুমে থেকে বের হয়।
তুলি নিশির কাছে যাচ্ছিলো। কেউ তুলির হাত ধরে টেনে একটা অন্ধকার রুমে নিয়ে যায়। তুলি চিৎকার দেওয়ার মতোও সময় পায় না। কে নিয়ে গেলো সেটাও বুঝতে পারছে না। লোকটা দরজা বন্ধ করে দেয়। তুলির ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। দুই কানে হাত দিয়ে তুলি দেয় এক চিৎকার

আমার ক্রাশ পর্ব ১৭

1 COMMENT

Comments are closed.