আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ১৪ || লিখা: জাহান আরা

আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ১৪
লিখা: জাহান আরা

সকাল থেকে শবনমের বুক কাঁপছে দুরুদুরু করে।শেষ বারের মতো প্রলয় কে দেখতে ইচ্ছে করছে একবার।
প্রলয় রুম থেকে বের হয় নি এখনো।
শবনম সবার অলক্ষ্যে রুম থেকে বের হয়।প্রলয়ের রুমের দরজার সামনে গিয়ে এদিক ওদিক তাকালো শবনম।
কাউকে দেখা যাচ্ছে না কোথাও।
শবনম দরজায় টোকা দিলো।দুইবার একসাথে তারপর এক বার।আবার দুইবার একসাথে তারপর এক বার।

প্রলয় সারারাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে জানালার সামনে।
ঠান্ডায় শরীর কাঁপছে। নিজেকে নিজের মনে হচ্ছে আস্ত একটা ডিপ ফ্রিজ।
দরজায় টোকা পড়ার শব্দ শুনে প্রলয়ের হুশ এলো।কোনোমতে টলতে টলতে দরজার সামনে এলো।দরজা খুলতেই শবনম হুড়মুড় করে রুমে ঢুকে পড়লো।
প্রলয় অপলক তাকিয়ে রইলো শবনমের দিকে।শবনমের চোখ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে প্রলয় সেদিকে তাকিয়ে রইলো।
অশ্রু ফোঁটা শবনমের গাল বেয়ে চিবুকে এসে স্থির হলো।তারপর টুপ করে ঝরে পড়লো,হাত বাড়িয়ে প্রলয় হাতে নিলো।তারপর ড্রয়ার থেকে জিপলক ব্যাগটা নিয়ে ব্যাগে জমিয়ে রাখলো।
শবনম প্রলয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রলয় আগের চাইতে রোগা হয়েছে।অবাক হলো শবনম ভীষণ।
একরাতে মানুষটার এতো করুণ অবস্থা কেনো?
কেনো ভাগ্য এতো বিরূপ হলো শবনমের?
কি ক্ষতি হতো যদি প্রলয় শবনম কে ভালোবাসতো?

শবনমের কাছে এসে প্রলয় বললো,”চলে যাও শবনম,আজ তোমার বিয়ে,আমার সাথে এক রুমে তোমাকে দেখলে কেউ খারাপ ভাবতে পারে।চলে যাও।”
প্রতিবাদ জানানোর কোনো সাহস নেই শবনমের। যেমন ভগ্ন হৃদয় নিয়ে এসেছিলো তেমনি ভগ্ন হৃদয় নিয়ে বের হয়ে গেলো প্রলয়ের রুম থেকে।দুচোখ ভরে প্রলয় কে দেখার সাধ মিটলো না শবনমের।
সকাল ৯টায় রাহেলা বানু শবনম কে পার্লারে পাঠালেন। শবনমের সাথে পার্লারে যাবার মতো কেউ নেই এই মুহূর্তে। রাহেলা বানু কিছুটা ব্যথিত হলেন।
“আহারে,মেয়েটার বিয়ে অথচ কেউ নেই যে মেয়েটাকে পার্লারে নিয়ে যাবে।”
শবনম মনে মনে এই সুযোগ টা চাচ্ছিলো।
ড্রাইভার শবনম কে নামিয়ে দিয়ে চলে এলো।

পার্লারের রিসিপশনে কিছুক্ষণ বসে রইলো শবনম। ১০ মিনিট বসে থেকে শবনম বের হলো।পার্লারের মেয়েটাকে বলে গেলো,আমার একটু কাজ আছে,কাজ সেরে আসছি।
বুকের ভিতর কি অজানা ব্যথা শবনম কে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে সে একা শবনম জানে।
কি অদ্ভুত ভালোবাসা!
কেনো মানুষের জীবনে এলো এই ভালোবাসা?
কেনো ঝড়ের মতো এসে সাজানো জীবনের সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে যায়?
কে দিবে এই উত্তর?
ভাবতে ভাবতে আনমনা হয়ে রাস্তা ক্রস করছিলো শবনম। বাম পাশ থেকে একটা গাড়ি ফুল স্পিডে আসছে শবনম খেয়াল করলো না।
খেয়াল হলো শবনমের শক্ত হাতের হ্যাঁচকা এক টান খেয়ে।মুহুর্তে বুঝতে পারলো শবনম কি দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিলো এইমাত্র।

কলিজা ধুকপুক করতে লাগলো শবনমের। সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে সে।
এতো বড় একটা দুর্ঘটনা থেকে কে বাঁচিয়েছে তার দিকে ফিরতে গিয়ে শবনম বিস্ময়ে থ হয়ে রইলো।শ্রাবণ দাঁড়িয়ে আছে হাসি মুখে।
শ্রাবণ কে শবনম আশা করে নি এখানে।
শবনমের এরকম হতভম্ব অবস্থা দেখে শ্রাবণ হেসে ফেললো। তারপর বললো,”কোথায় যাচ্ছিলে এরকম আনমনা হয়ে বলো তো?
তুমি তো দেখছি আমাকে বিপত্নীক করতে চাও।এরকম অসতর্ক হয়ে কেউ চলাফেরা করে রাস্তায়?”

শবনমের বলার মতো কিছু ছিলো না।কি জবাব দিবে শ্রাবণ কে?
শ্রাবণ শবনমের হাত ধরে আবার রাস্তা পার করে দিলো।পার্লারের সামনে যেতেই শবনম জিজ্ঞেস করলো,”আপনি এখানে কেনো?”
শবনমের প্রশ্ন শুনে শ্রাবণ মাথা নিচু করে ফেললো।শবনম দেখলো শ্রাবণের গাল,কান লাল হয়ে উঠেছে।শবনম আশ্চর্য হলো।
এতো লজ্জার কি আছে?
মাথা নিচু করেই শ্রাবণ জবাব দিলো,”আমি এসেছি তোমাকে দেখতে,সেজেগুজে আমার বউ বের হবে,তার মুখ সবার আগে আমি দেখতে চাই।তাই এসেছি এখানে।”
শবনম কিছু বললো না আর।সোজা পার্লারে ঢুকে গেলো।
শবনম যেতেই শ্রাবণের মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো।

প্রলয় রুম থেকে বের হলো কন্যা বিদায়ের সময়।বঁধু বেশে শবনম কে দেখে প্রলয়ের ছোটখাটো একটা স্ট্রোক হবার জোগাড়।
এই মেয়ে এতো সুন্দর কেনো?
বঁধুর সাজে কেনো মেয়েটাকে এতো বেশী ভয়ংকর সুন্দর লাগছে?
প্রলয়ের মনে হলো হঠাৎ করে,অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে প্রলয়।
এই মেয়েটা একেবারে তার হতো।যে কিনা প্রলয় কে ভালোবাসতো নিজের চাইতে বেশি।
এই মেয়েটার লম্বা চুলে প্রলয় বিনুনি করে দিতো।
সময় অসময়ে এই মেয়েটার চুলের খোঁপা খুলে দিতো প্রলয়।
রুটি বানাতে গেলে মেয়েটাকে রাগিয়ে দেয়ার জন্য গালে আটা লাগিয়ে দিতো প্রলয়।
মেয়েটা রাগ করলে চুমু খেয়ে খেয়ে তার রাগ ভাঙাতো প্রলয়।
গভীর রাতে….

আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ১৩

না আর ভাববে না প্রলয়। আর কিছু ভাববে না সে।শবনম কাঁদবে না বলে ঠিক করে রেখেছিলো কিন্তু প্রলয় কে দেখে হঠাৎ করে আর নিজেকে সামলাতে পারে নি।
মনে মনে প্রলয় বললো,”কেঁদো না শবনম। শুধু শুধু চোখের পানি ফেলো না।আমায় মতো দুর্বল মানুষের জন্য কাঁদতে নেই।আমাকে সৃষ্টিকর্তা সেই ক্ষমতা দেয় নি।আমি যে খুবই তুচ্ছ প্রাণী। ”
শ্রাবণীর বুক ফেটে যাচ্ছে। প্রলয় ভাই তার হয় নি বলে যতোটা কষ্ট পেয়েছে তার চেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে নিজের ভালোবাসার মানুষ কে ও প্রলয় ভাই পায় নি বলে।

সৃষ্টিকর্তাকে জিজ্ঞেস করলো শ্রাবণী,”এ কোন খেলা খেলছো তুমি উপরে বসে?
আমি প্রলয় ভাইকে না পাই আমার আফসোস নেই,কিন্তু প্রলয় ভাইকে কেনো তার ভালোবাসার মানুষ কে দিলে না খোদা?দুটি হৃদয় এভাবে কেনো ভেঙে দিলে তুমি?”

আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ১৫