আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ১৫ || লিখা: জাহান আরা

আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ১৫
লিখা: জাহান আরা

আজকের দিনটা শ্রাবণের জন্য অন্যরকম। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন।শ্রাবণ শেরওয়ানি খুলে বাসর ঘর সাজানোর কাজে লেগে গেলো।
শ্রাবণের বন্ধুরা সবাই হা হয়ে শ্রাবণের কর্মকাণ্ড দেখছে।
তামিম এসে একবার ধমকে ধামকে বললো,”ছি শ্রাবণ!
দুনিয়ায় মনে হয় একা তুই-ই বিয়ে করেছিস তাই নিজের বাসর নিজে সাজাচ্ছিস!
লজ্জা করে না ব্যাটা তোর?

কোথায় আমরা সাজাবো তা না উল্টো তুই এসে মাতব্বরি করা শুরু করে দিয়েছিস,বলি আড্ডা থেকে শুরু করে সব কাজে কি আমরা সবাই তোর হুকুমেই চলবো না-কি?
আজকে অন্তত আমাদের দায়িত্ব দিতি,বিয়ে তো আমি ও করেছি,কই আমি তো তোর মতো এতো বেহায়া ক্যান তুই?”
মুরুব্বী,আত্মীয় স্বজনেরা এসে শ্রাবণের এই কাজ দেখে কেউ কেউ শ্রাবণ কে বেহায়া,নির্লজ্জ ছেলে বলে আখ্যা দিলেন।
শ্রাবণ কারো কথায় কান দিলো না।
শবনম শ্রাবণের এই বেহায়াপনার কথা শুনে লজ্জায় মরে যাচ্ছে যেনো
শ্রাবণের মধ্যে উৎসাহের শেষ নেই।ইতোমধ্যে রুমের সব আসবাবপত্র বের করে ফেলেছে বন্ধুদের দিয়ে।পুরো রুম সাজিয়েছে ময়ুরের পালক দিয়ে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বিছানার পায়ের পাশটা সাজানো হয়েছে ময়ুরের পালক দিয়ে,দেখে মনে হচ্ছে যেনো কোনো ময়ুর পেখম মেলে দাঁড়িয়ে আছে। পুরো রুমে নীল,বেগুনি লাইটিং।
তাজা গোলাপের সুবাসে পুরো রুম সুবাসিত।
পুরো ফ্লোরে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে গালিচা বানানো।
শ্রাবণের এক কথা,বাসর রাত তো জীবনে একবার আসবে,বাসর ঘর ও জীবনে একবার সাজাবো,সেটা কেনো অন্যদের পছন্দমতো সাজাবো আমি?
আমার স্পেশাল রাতকে স্পেশাল করে সাজাবো আমার যেভাবে পছন্দ।
শবনমের মাথা ধরে আছে,এ বাড়িতে আসার পর থেকে একটানা মানুষের প্রশ্নের জবাব দিয়েই যাচ্ছে শবনম।

শ্রাবণদের আত্মীয়রা অনবরত প্রশ্ন করেই যাচ্ছে শবনম কে।
বিরক্তি চেপে রেখে শবনম জবাব দিচ্ছে।
শ্রাবণী বুঝতে পারলো শবনমের বিরক্তি ভাব। যে মেয়েটা সদ্য নিজের ভালোবাসার মানুষ কে ছেড়ে এসেছে তার মানসিক অবস্থা কতোটা ভালো হতে পারে শ্রাবণী বুঝে আর কেউ না বুঝলেও।
আর শবনমের জন্য তো বিষয়টা বেশি সিরিয়াস
শ্রাবণী এসে বললো,”অনেক হয়েছে,ব্যস।এবার ভাবী একটু বিশ্রাম নিবে।”
শ্রাবণীর ছোট চাচী বললেন,”কেনো রে শ্রাবণী,প্রতিদিন তো আর আমরা এসে বসে থাকবো না নতুন বউয়ের সাথে কথা বলার জন্য,আজকেই তো সবাই একটু বিরক্ত করবে,আজকে একটু কষ্ট দিবে সবাই।তুই এভাবে সবাইকে তাড়িয়ে দিচ্ছিস কেনো?”

শ্রাবণী ছোট চাচীর দিকে তাকিয়ে বললো,”কি অদ্ভুত নিয়ম তোমাদের বলোতো চাচী,কোথায় তোমরা মানুষটাকে একটু রিলাক্স করতে দিবে,আজকে তার জীবনের অন্যতম একটা দিন।আজকের দিনে তার ভীষণ মন খারাপ,একমাত্র সে জানে কাকে রেখে এসেছে সে,কাকে ছেড়ে কার কাছে এসেছে,তার ভিতরে যে আগুন জ্বলছে তা সামলানোর জন্য তাকে একটু স্পেস দিবে।অথচ তোমরা কি অমানবিক আচরণ করছো চাচী।”

শবনম বুঝতে পারলো শ্রাবণী কি বুঝাতে চাইছে। এই বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে শবনম কে মুক্ত করার চেষ্টা করায় শবনম খুবই কৃতজ্ঞ হলো।
শ্রাবণী কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের রুমে নিয়ে এলো শবনম কে।রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে শবনম কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।
শবনম ভীষণ অবাক হলো। শ্রাবণী কে বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগলো,”কি হয়েছে তোমার? ”
কাঁদতে কাঁদতে শ্রাবণী বললো,”কেনো এরকম করলে ভাবী?
কেনো মেনে নিলে,প্রলয় ভাইকে কেনো ছেড়ে এলে তুমি?
নিজের ভালোবাসার মানুষ কে রেখে আসতে কি কষ্ট আমি জানি ভাবি,কেনো রাজি হলে প্রলয় ভাইয়ের কথাতে?”

শবনম নিজেকে জোর করে শক্ত করলো,কিছুতেই কাঁদবে না বলে নিজেকে বুঝাতে লাগলো।
ধাতস্থ হয়ে বললো,”সে তো আমার না বোন,সে তোমার।”
শ্রাবণী বিস্মিত হলো শবনমের কথা শুনে,শবনমের দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে বললো,”কি বলছো ভাবী?”
শবনম নিজেও বিস্মিত। কিন্তু প্রলয় তাকে যা বলেছে তাই বললো সে শ্রাবণী কে।
“প্রলয় তো আমাকে বলেছে,ও তোমাকে ভালোবাসে।”

আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ১৪

“ভাবী আমার মাথায় ঢুকছে না কিছু।আমি ওই বার যখন খালার বাসায় গেলাম প্রলয় ভাইকে নিজের ভালোবাসার কথা বলতেই সে হেসে উড়িয়ে দিলো।আমাকে বললো,সে তোমাকে ভালোবাসে।আমাকে বোন ভাবে সে।বিশ্বাস করো ভাবী আমি তখন লজ্জা পেয়েছি শুনে।আমি তাকে স্বামী রূপে পেতে চাই আর সে আমায় বোন ভাবে।নিজেকে নিজের ভীষণ নিচু মনের মনে হয়েছিলো।”

শবনম কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।
অনেকক্ষণ চুপ থেকে শ্রাবণী বললো,”কোথাও কিছু একটা ভুল হয়েছে ভাবী।প্রলয় ভাই নিশ্চয় অন্য কাউকে ভালোবাসে,তাই আমাদের এভাবে বোকা বানিয়েছে।”
শবনমের বিশ্বাসের পৃথিবী যেনো হঠাৎ করে ভেঙে গেলো।
প্রলয় কি তবে এভাবে শবনমের হাত থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলো?
শবনমের মনে হলো যাকে সে দেবতা ভাবতো সে আসলে অপদেবতা।
এতোবড় একটা ধাক্কা খাবে শবনম ভাবে নি কখনো।

আমি তোমার গল্প হবো পর্ব ১৬