বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব ১৭ || Romantic Valobashar Golpo

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব ১৭
Writer Nondini Nila

পেট চেপে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছি আমি। আমার সামনে বসে আছে ডাক্তার আর পাশে গম্ভীর মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে আদনান ভাই। আমার দিকে শক্ত লাল চোখ করে তাকিয়ে আছে পেট ব্যাথার মাঝেও ভাইয়ার দিকে তাকালে আমার কান্নার রেশ কমে যাচ্ছে ভয়ে।
ডাক্তার চলে গেল আমাকে দেখে ভাইয়া তার সাথে গেল বাইরে। তখন আম্মু গরম পানির ভাপ দিতে এলো আমার পাশে আমাকে ছুঁতে বলে ভাপ দিতে লাগলো এতে নাকি ব্যাথা কমে।
কাঁদতে কাঁদতে আমার নাক মুখ লাল হয়ে গেছে।
ভাপ দেওয়ায় ব্যাথা কম লাগছে হালকা দশ মিনিট পর ভাইয়া এলো ওষুধ নিয়ে। তার দিকে তাকালেই আমি ভয়ে আতকে উঠি।
আম্মু উঠে বাইরে চলে গেল গরম পানি রাখতে মামনি আমার পাশে বসে আছে।
ভাইয়া আমার কাছে এসে দাঁড়ালো।
কি খেয়েছিলি?

ভাইয়া এখন ও জানে না কি জন্য এতো পেট ব্যাথা হয়েছে আমার। তখন মামনি ভাইয়াকে কল করে বলেছিল আমার কথা আর ছুটে চলে এসেছে। ডাক্তার নিয়ে এসেছে ভাইয়া জানে আমি গন্ডগল করে কিছু খেলেই এমন হয়। তাই তো এমন গম্ভীর মুখ করে তাকিয়ে ছিল এখন সূযোগ পেয়েছে আর দেবে আমাকে।
“কি হলো বল? কি খেয়েছিলি আজকে আবার?”
ভাইয়া শক্ত কন্ঠে আমি ভয়ে মামনির হাত শক্ত করে ধরে শুয়ে আছি।
আমি কিছু বলছি না দেখে ভাইয়া এবার চিৎকার করে উঠল।
আমি কেঁপে উঠলাম। মামনি ও আতকে উঠলো এবং ভাইয়াকে একটা ধমক দিল।
“কি হচ্ছে কি আদনান তুই এমন করে দোলাকে ভয় কেন দেখাচ্ছিস? দেখছিস তো ভয় পাচ্ছে?”
ভাইয়া উত্তেজিত হয়ে হয়ে আবার বলল,,,” এন্সার মি। আর আম্মু প্লিজ ওর হয়ে কথা বলো না।”
আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম,,,
“ভাইয়া আমি কিছু করিনি।”
আমার বলতে দেরি হলো ভাইয়ার আরেক ধমক দিতে দেরি হলো না।
“চুপ মিথ্যুক। সত্যি করে বল।”
আম্মু ও ততক্ষণে এ চলে এসেছে। আর রেগে ভাইয়াকে সব বলে দিল।ভাইয়া সব শুনে আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে টেনে বিছানার উপর বসিয়ে দিল।
আমি কাঁপতে কাঁপতে উঠে বসলাম। ভাইয়া কিছু বলবে তার আগেই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলাম।

আরও গল্প পড়তে ভিজিট করুন

সবাই আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে আগেই বলেছি। আমার কান্না দেখেই ভাইয়া ও থেমে গেল।
আমি কান্না গলায় বললাম,,,”আর এমন করবো না প্রমিজ।”
ভাইয়া কড়া গলায় বলল,,”ইডিয়েট একটা তিন প্রিলেট ফুসকা কেউ খায়। রাক্ষসী একটা মরার শক হয়েছে তোর তাইনা। এতো খেয়ে আবার লুকিয়ে ছিলি‌।”
“আর খাব না। আমি আর জীবনেও ফুসকা খাব না।”
কাঁদতে কাঁদতে বললাম।
ভাইয়া আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি কান্না করছি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। ভাইয়া আমার দুগালে নিজের হাত রাখলো। আচমকা ভাইয়া এভাবে ধরায় চমকে উঠলাম।
কান্না থেমে গেল আমি স্তব্ধ হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া আমার চোখের পানি নিজের হাত দিয়ে মুছে দিল আমি হতদম্ব হয়ে ভাইয়া দিকে তাকিয়ে আছি।

ভাই আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,,,
“আর কখনো যেন এমন করতে না দেখি।নিজের ভালোটাতো বুঝবি কবে বল। তোর ভুলে অন্যের ক্ষতি তো হলো না তোর নিজের ক্ষতি হলো। নিজে কষ্ট পেলি সাথে আমাদের কেও কষ্ট দিলি।”
“সরি ভাইয়া আর এমন করবো না। আসলে তখন সবার সাথে খেতে খেতে কখন যে এতো বেশি হয়ে গেছে বুঝিনি।”অসহায় মুখ করে।
ভাইয়া রেগে না নরম হয়েই বললো,,
“আচ্ছা। এতোটা ছেলে মানুষি ভালো না এখন নিজের কেয়ার নিতে শিখ।”
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।
ভাইয়া আচমকা আমার কপালে কিস করলো। আমি বিষ্ময়ে হতদম্ব হয়ে গেলাম। বড় বড় চোখ করে ভাইয়ার দিকে তাকালাম কিন্তু ভাইয়া কাজটা করে এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালো না ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেল।
আমি বাকরুদ্ধ হয়ে ভাইয়ার যাওয়ার পাশে তাকিয়ে আছি।
আমার সারা শরীর কেঁপে উঠলো। ভাইয়া এমন করলো কেন? চারপাশে তাকিয়ে দেখি আম্মু মামনি কেউ নেই আমি একা তারমানে কেউ দেখেনি।
আমি বিস্মিত হয়ে নিজের হাত কপালে রাখলাম সাথে সাথে কেঁপে উঠলাম। মনে হচ্ছে ভাইয়ার শরীরে স্পর্শ করছি।
হার্টবিট অতিরিক্ত মাত্রায় লাফাচ্ছে। আমি ওইভাবেই স্তব্ধ হয়ে বসে র‌ইলাম। তখন আম্মু আসলো।

আর আমাকে বললো,,
” কিরে এভাবে বসে আছিস কেন পাথর হয়ে?”
আমি হকচকিয়ে গেলাম আম্মুর কথায়।
“কি হলো চমকালি কেন?”
আম্মু কথায় নিজেকে স্বাভাবিক করলাম।
“ক‌ই কিছু হয়নি তো।”
“তাহলে…
“আম্মু আমার পেট…
মাকে কথা ঘুরানোর জন্য বললাম। আম্মু আমার পেট এর কথা শুনেই আর কিছু বলল না আমাকে শুতে বলল।
আমি ঘুমানোর জন্য চোখ বন্ধ করলাম আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
আমি চোখ বন্ধ করে ও ঘুমাতে পারছি না বারবার ওই সময়ের কথা মনে পরছে।
ওইভাবে কখন ঘুমিয়ে পরেছি মনে নেই। পরদিন সকালে উঠে চমকালাম। কারন রাতে আমি একটা সপ্ন দেখেছি তাও রোমান্টিক সপ্ন সেটা আর কাউকে নিয়ে না ভাইয়া কে নিয়ে।

দেখেছি ভাইয়ার আর আমি হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছি সাগর পারে। ভাইয়া আমার হাতে চুমু খেয়ে বলছে আমকে খুব ভালোবাসে।
আমি বড় বড় চোখ করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি যেন সপ্ন দেখছি।
সপ্নে আমি এসব দেখেছি। ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে এসব কেন দেখলাম।
উঠে ওইভাবেই বারান্দায় এলাম আর ভাইয়ার রুমে জানালা দিয়ে উঁকি দিলাম।
ভাইয়া ঘুমিয়ে আছে আমি হাঁ করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবছি ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে।
হ্যা হতেই পারে কাল ইলমা রাও তাই বলেছিলি।
কিন্তু ভাইয়া আমাকে ভালোবাসলে বলে না কেন? সমস্যা কি?
আজকে থেকে আমার মিশন শুরু ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে কিনা জানতেই হবে।
আমি নাচতে নাচতে রুমে এলাম পেট ব্যাথা কমছে কিন্তু একটু একটু আছে আর লাফালাফি করলাম না ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে সোফায় বসলাম।
হাতে চিপস নিয়ে খেতে লাগলাম আম্মু এসেই দিল ধমক আর চিপস নিয়ে চলে গেল।

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব ১৬

আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি আম্মুর দিকে এসব খেলে নাকি পেটের পেন বারবে তাই।
আমি কি মনে করে বাসা থেকে বেরিয়ে এলাম।সোজা মামনির বাসায় চলে এলাম।
বাসায় এসেই মামনির সাথে দেখা না করেই আদনান ভাইয়ের রুমে এলাম পা টিপে টিপে।
আদনান ভাই বুকে ভর দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। আমি আস্তে আস্তে ভাইয়ার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম তারপর হা করে তাকিয়ে র‌ইলাম।
ভাইয়ার পরনে কালো গেঞ্জি আর ট্রাউজার।
হালকা পাতলা একটা চাদর গায়ে জড়ানো ভাইয়ার মাথায় খাড়াখাড়া চুল এলোমেলো হয়ে কপালে পড়ে আছে। ভাইয়ার কপালে একটা তিল আছে বাম ভ্রু এর উপরে হাল্কা লাল লাল। ভাইয়ার ফর্সা ধবধবে গায়ে রং। ভাইয়ার চাপ দাঁড়ি যেটা আমার সব থেকে ফেবারিট।
আমি নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ভাইয়াকে দেখলেই আমার কেমন কেমন জানি লাগে। এতো ভালো কেন লাগে সত্যি কি ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে।
এটা যদি সত্যি হয় আমি তো খুশিতে মরেই যাবো।
আমি ভাবতে ভাবতেই চিৎকার করে উঠলাম।

আর ভুল করলাম ভাইয়া জেগে গেল। হকচকিয়ে গেলাম ভাইয়ার আওয়াজ পেয়ে। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ভাইয়া আমার দিকে ঘুম ঘুম চোখে। আমি ভাইয়ার তাকিয়ে দেখেই ভৌ দৌড় দিলাম কিন্তু আমার কপাল সব থেকে খারাপ।
এই দেখুন কি করে ফেললাম,,
উত্তেজিত হয়ে দৌড়ে দিয়েছি কিছু না দেখেই মে আমি যাচ্ছি কোথায় তাই তো পরলাম বিপদে। আমি দৌড়ে একদম খাটে গিয়ে পরলাম তাও ভাইয়ার উপরে।

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব ১৮