coffee & vanilla part 1 || Arohi Ayat

coffee & vanilla part 1
Arohi Ayat

বান্ধবির বিয়ের আরও ৫দিন বাকি কিন্তু সকাল থেকে শুনছি বান্ধবিকে নাকি পাওয়া যাচ্ছে না ভাবছি আমাকে ধরে আবার বিয়ে করিয়ে দিবে নাতো?! ভেবেই খুশি লাগছে কারণ জিজুটা অনকে হ্যান্ডসাম! আমি বান্ধবিকে আগের থেকেই বলতাম তোর হবু বরকে আমার কাছে দিয়ে দে,,সেটা শুধু দুষ্টামি করে বলতাম নিশ্চই,,, কিন্তু আজ মনে হচ্ছে এই কথাটা আবার সত্যি হয়ে যাবে নাকি?৷ আসলে আমার বান্ধবি রুমাইশার যার সাথে বিয়ে হচ্ছে সে হলো ওর খালাতো ভাই লন্ডন থাকে৷

ওর খালাতো ভাই ওকে অনেক পছন্দ করে আর রুমাইশাও আমাকে বলেছিল ও নিজেও ওকে অনেক পছন্দ করে তাহলে আজকে শালিটা কোথায় পালিয়ে গেলো বুঝলাম না৷ উনারা লন্ডন থেকে খালার বাসায় এসেই এইখানেই বিয়ে করবে তারপর রুমাইশাকে নিয়ে আবার লন্ডন চলে যাবে৷ আর আমি বান্ধবির বিয়ের ৫দিন আগেই চলে এসেছি৷ আমি সিরির সামনে দাঁড়িয়ে আছি নিচ থেকে বেচারা টেন্সনে হ্যান্ডস্যাম জিজুটা চিল্লিয়ে ওর খালা মানে রুমাইসার মাকে বলছে
– না আমি কিছু জানি না,,, রুমাইশা কোথায় গেছে? ওকে এখনি আমার কাছে এনে দাও! আমি শুধু ওকেই বিয়ে করবো আর শুনো এমন কিন্তু হবে না যে ওকে পাওয়া যাচ্ছে না তাই বলে ধরে ওর বান্ধবির সাথে আমাকে বিয়ে করিয়ে দিবে! আমি এটা মানবোই না! যার সাথে বিয়ে করতে এসেছি ওর সাথেই বিয়ে করবো!!
আর বাকি সবাই উনাকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলছে

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

– শান্ত হ বাবা প্লিজ ঘরে এমন করিস না অনেক মেহমান আছে সবাই কি ভাববে?! আমি জানি না রুমাইশা এমন সকাল সকাল কাউকে কিছু না বলে কোথায় চলে গেছে!
আমার এই সময় জিজুর চেহারা দেখে অনেক হাসি আসছে৷ আমি সিরির সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছি৷ হঠাৎ রুমাইশার মার চোখ আমার উপর পরতে উনি এসে আমাকে বলল
– তুমি জানো নিশ্চয়ই রুমাইশা কোথায় গেছে?! ও ত তোমাকে সব বলে তাই না?!
আমি আমতা আমতা করে বললাম
– না আন্টি আমি ত কিছুই জানি না!
জিজু আমার কাছে এসে বলল
– তুমি কেন জানো না ও কোথায়? এই ছিলো বেস্ট ফ্রেন্ড? এটাকেই বেস্ট ফ্রেন্ড বলে পরিচয় দিয়েছিলে? যেইদিন তোমার সাথে পরিচয় হয়েছি কত কি না বলেছিলে যে আমারা বেস্ট ফ্রেন্ড একেবারে বোনের মত আরও কত কিছু এখন কিছু জানো না কেন তুমি????

আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি আমি বুঝলাম না উনি আমার সাথে এমন করছে কেন? আমি ত আসলেই কিছু জানি না! এইবার রুমাইশার উপর অনেক রাগ লাগছে আসুক আজকে ওকে আমি দুইটা থাপ্পড় লাগাবো! আল্লাহ জানে ও আবার ফিরে আসবে কিনা আর যদি না আসে তাহলে কি সবাই এসে আমাকেই বকবে? রুমাইশার মা বলল
– আচ্ছা বাবা তুই একটু চল আমার সাথে রুমে শান্ত হ! তুই ত আমার মেয়ে কে চিনিস ও কখনো এমন করতে পারে না ও নিশ্চয় চলে আসবে!
উনারা রুমে চলে গেলো৷ আমি একটু বিরক্তির চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম৷ এইসময় ঘরে অনেক হইচই কিন্তু হঠাৎ এত হইচই এর মধ্যে একজনকে আমার চোখে পড়লো৷ শুধু মাত্র সেই ব্যাক্তিটাই একা যে এই সময় শান্তিতে বসে আছে৷ পায়ের উপর পা উঠিয়ে বসে হাতে একটা জুসের গ্লাস দেখে ত আমি নিজেও এক গ্লাস ক্রাশ খেয়েছি কিন্তু এইসময় অনেক রাগ লাগছে তাই গিয়ে রুমে বসে রইলাম৷ একটু পরে হঠাৎ মনে হলো বাহিরে রুমাইশার আওয়াজ৷ আমি তারাতাড়ি দরজা খুলে নিচে গেলাম৷ দেখলাম রুমাইশা দাঁড়িয়ে আছে আর ওর সামনে ওর মা আর হবু বর৷ আমি রাগে নিচে গিয়ে রুমাইশার সামনে গিয়ে বললাম

– কোথায় চলে গিয়েছিলি হুম? আমাকেও বলে যাস নি আর কাউকে বলে যাস নি! জানিস তোর জন্য সবাই আমাকে খারাপ ভেবেছে! আন্টি যে আমাকে অনেক বিশ্বাস করে উনিও,,,! আর সবাই কত টেনশনে ছিল বেচারা জিজু,,,,,!
রুমাইশা ভ্রু কুচকে বলল
– তোমারা সবাই এমন করছো কেন? আমি ত একটু রুবিনার বাসায় গিয়েছিলাম আর সকাল সকাল যেতে হয়েছে কারণ ও আজকেই ওর শশুর বাড়ি চলে গেছে সকালে,, আমার বিয়ে তেও আসতে পারবে না ওর সাথে একটু কথা বলতে গিয়েছিলাম আর সবাই ত কাজে ব্যাস্ত ছিল তাই কাউকে বলতে পারি নি!
রুমাইশা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
– তুই ত ঘুমিয়ে ছিলি তাই তোকে বলি নি কিন্তু আমি ত ফারহানের কাছে বলে গিয়েছিলাম ও কি তোমাদের কিছু বলে নি?!
আন্টি বলল
– আচ্ছা রাখ এইসব এর পর থেকে আমাকে বলে যাবি,, এখন মেহমানের সামনে অনেক গন্ডগোল লেগে গেছে!
ওরা সবাই আবার কাজে ব্যাস্ত হয়ে গেলো৷ আমার এখন আরও বেশি রাগ লাগছে এই ফারহানটা কে? সে যদি জানত যে রুমাইশা কোথায় গেছে তাহলে সবাইকে বলল না কেন? কেন আমার সবার সামনে এমন কথা শুনতে হলো? আমার চোখ আবার গেলো সেই শান্তিময় চিন্তা ছাড়া ব্যাক্তিটার উপর সেইভাবেই বসে আছে এখনো কিন্তু খেয়াল করলাম আমার দিকে কেমন ভাবে যেন তাকিয়ে আছে আমি উপরের দিকে তাকিয়ে বিশাল একটা ভাব নিয়ে ভেংচি কেটে সেখান থেকে চলে এলাম৷

” আমার নাম রাইশা জাহান,,মা নেই কিন্তু বাবার একমাত্র কন্যা আমি৷ বাবার স্বপ্ন পুরোন করতে এখন আমি ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করছি৷ আগে বেশির ভাগ হোস্টেলেই থাকতাম কিন্তু এখন বাবার সাথেই থাকি৷ বাবার আদরে অনেক বেশি দুষ্টু হয়ে গেছি আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলে আমার মত কেউ নেই কিন্তু এখন আবার আমার সাথে থেকে থেকে সবাই আমার মত হয়ে গেছে৷ আমি আবার চুপচাপ স্বভাবের না যেখানে আমার যা বলা উচিৎ আমি বলেই ছারি কিন্তু শুধু মাত্র উচিৎ কথাই বলি আর আমি সবাইকে যথেষ্ট সম্মানও করি৷

বসে বসে ফোন চাপতে ব্যাস্ত আমি আমার কিছুই করার নেই৷ নিচে গিয়েছিলাম আন্টির কাছে আন্টি এক কথাই বলেছে তোমার এখনে কোন কাজ করতে হবে না তুমি বিয়েতে এসেছো তুমি শান্তিতে ঘুরে বেরাও মজা করো৷ আর রুমাইশাও ব্যাস্ত একেবারে ওর বিয়ে নিয়ে এইদিকে আমার কিছুই করার নেই৷ ফোন রেখে বারান্দায় গেলাম,,নিচে ওদের অনেক বড় জায়গা মানে মাঠের মত আবার ওরা সেখানে বাগানও করেছে অনেক সুন্দর করে সাজানো আর সেখানে একটা বড় দোলনাও রাখা ৷ বারান্দা থেকে নিচে তাকাতেই দেখলাম সেই ছেলেটা আরাম করে দোলনায় বসে আছে৷ আমি ভ্রু কুচকে ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছি ছেলেটার দিকে৷ কেমন যেন ভ্যাম্পায়ার এর মত দেখা যায় একেবারে মনে হয় মাথায় কোন চিন্তা নেই একেবারে ভ্যাম্পায়ার এর মত কিছুটা রাগি আর কিছুটা রুড চেহারা নিয়ে তাকিয়ে আছে৷ হঠাৎ আমার উপর চোখ যেতেই আমি চোখ পিটপিট করে উপরের দিকে তাকালাম৷ একটু পরে আড় চোখে আবার নিচে তাকাতে দেখলাম দোলনায় কেউ নাই আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম৷ তারপর ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রুমে এলাম৷ রুমে এসেই দেখলাম দরজার সামনে সেই ভ্যাম্পায়ারটা দাঁড়িয়ে আছে৷ অবাক হলাম,,ছেলেটা আমার সামনে এসে বলল

– তুমি রুমাইশার ফ্রেন্ড রাইট?!
– হুম,, আপনি কে?
ছেলেটা বাকা হেসে প্রথমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল৷ আমি এত অবাক বলার বাহিরে,,দরজা বন্ধ করে আবার আমার সামনে এসে বলল
– আমি ফারহান রুমাইশার খালাতো ভাই মানে ওর যার সাথে বিয়ে হচ্ছে তার ছোট ভাই!
– ওহ আপনি,,,,,ওহ তাহলে আপনি রুমাইশার ভাই?! তাহলে সকালে যখন ও বাহিরে গিয়েছিল আপনি ত আপনার আন্টিকে বলতে পারতেন নাকি যে রুমাইশা কোথায় গেছে! উনাকে আর বাকি সবাইকে এত টেনশনে দেখেও আপনি চুপচাপ বসে ছিলেন?! আপনার ভাই ও ত কত টেনশনে ছিলো! গাধা নাকি আপনি?
আমি বুঝলাম না আমার কথার মাঝখানে ছেলেটা আমার হাত ধরে জোর দারের একটা কামর বসিয়ে দিল৷ আমি ব্যাথায় আহ্ আহ্ করছি হাত মুচরা মুচরি করছি কিন্তু অসভ্য বেয়াদব ভ্যাম্পায়ার টা ছারছেই না৷ একটু পরে আমার হাত ছেরে দিতে দেখলাম হাতে একেবারে দাগ পরে গেছে লাল হয়ে আছে৷ আমি হাত চেপে ধরে বললাম
– এ কেমন অসভ্যতা? ভিতরে একটুও ম্যানার্স নেই! বেয়াদব এত খারাপ কেন আপনি?! পাগল! এটা কি ছিল? এমন আবার কেউ করে নাকি?
– সরি!
ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল৷ এত রাগ লাগছে না যে ইচ্ছে করছে পাশের সব আসবাবপত্র গুলো ছুরে মাথায় মারি৷ আমি বড় বড় চোখ করে রেগে তাকিয়ে আছি হঠাৎ আমাকে আবার অবাক করে দিয়ে অসভ্যটা বলল
– ৫ দিনের জন্য আমার গার্লফ্রেন্ড হবে?!
– what! কি? মানে কি? গার্লফ্রেন্ড তাও ৫ দিনের জন্য?! পাগল!!!!
অন্য দিকে তাকিয়ে রেগে বললাম৷ অসভ্যটা আবার বলল

– what! পাগল? like seriously? আমি ত শুধু গার্লফ্রেন্ডই হতে বলছি!
– কেন আমাকেই কেন বলেন ত এখানে আরও কত মানুষ আছে আর তাছাড়া আমি ত ভাবতেই পারি নি আপনার মত একটা ছেলের গার্লফ্রেন্ড নেই হাস্যকর! আর ৫দিনের জন্য মানে কি? আমার সাথে কি মশকরা করছেন?
ছেলেটা এই পর্যন্ত একবারও রেগে কথা বলে নি আর না হেসে কথা বলেছে সেই রুড চেহারা নিয়েই আবার বলল
– বিয়ের আরও ৫দিন বাকি আর ৫দিন পরেই আমি আবার লন্ডন ফিরে যাব তাই বলছি ৫দিনের গার্লফ্রেন্ড হতে!
আমি একটু আজগুবি চেহারা করে বললাম
–হেএএএএ! এটা আবার কেমন কথা ৫দিন পরে চলে যাবেন ভালো কথা তাতে আবার ৫দিনের গার্লফ্রেন্ড লাগে নাকি? কেন এই ৫দিন কি গার্লফ্রেন্ড ছাড়া থাকতে পারবেন না বুঝি পাগল টাগল!! আচ্ছা আপনি আমার হাতের এই অবস্থা করেছেন কেন?
– এটা শুধু একটা চিহ্ন মাত্র! তোমার হাতের এই দাগ হলো প্রমান যে তুমি আমার ৫ দিনের গার্লফ্রেন্ড!
– কি? পাগল!! আমি কি আপনাকে হ্যা বলেছি?
– ঠিক আছে তাহলে এই ৫দিন আমি যা বলবো তুমি তাই করবে তাই শুনবে!

আমি বুঝতে পারছিনা আসলে কি জবাব দিব আমি ত অবাক হোওয়ার চোটেই বাচ্ছি না৷ মানে মাথা কাজ করছে না এই প্রথম আমি বুঝতেই পারছি না কিছু যে এই ধরনের পাগলদের কি বলবো,, হ্যা আমি প্রথমে ক্রাশ খেয়েছিলাম কিন্তু পরে ভেবেছিলাম এত্ত সুন্দর পোলা নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ড আছে আর আমার যতই ভাল লাগুক কিন্তু আমার এমন একজনকে চাই যার আমি প্রথম আর শেষ গার্লফ্রেন্ড থাকবো৷ ছেলেটা দেখছি পাগল! আমি কিছু বললাম না নিজে এসেই হাতে কামর দিয়ে আমাকে গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে ফেলেছে! ছেলেটাকে ডেকে বললাম

– এক মিনিট! আপনার কি আর গার্লফ্রেন্ড নাই?আপনি লন্ডন থাকেন থাকার কথা গার্লফ্রেন্ড!
– তুমি কি জবাব আশা করছো হ্যা নাকি না?
– আজব আমি সত্যি জবাব আশা করবো আপনার মত পাগল নাকি মাথায় ছিট আছে নাকি?!
ছেলেটা কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
–তোমার ঠোটের নিচে তিল আছে!!
– মানি কি আপনি আমাকে ভালো মত দেখেনও নি আর এসেছেন আমাকে গার্লফ্রেন্ড বানাতে!! প্রথমে দেখে আমার স্বপ্নের ভ্যাম্পায়ার এর মত মনে হয়েছিল কিন্তু এ ত দেখছি পাগল!

coffee & vanilla part 2