কাশফুলের মেলা পর্ব ১০ || রোমান্টিক বিয়ের গল্প

কাশফুলের মেলা পর্ব ১০
Nusrat jahan Sara

দেখতে দেখতে জীবন থেকে কী করে এক বছর ফুরিয়ে গেলো বুঝাই গেলোনা।আরশি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে এক ধ্যানে বাইরে তাকিয়ে আছে।বাতাসে তার চুল এলোমেলো ভাবে উড়ছে।চোখের নিচে কালোদাগও পরে গেছে।এই বারো মাসে একবারো ভালো করে চোখের পাতা এক করে দেখেনি আরশি সব সময় ইশানের কাছে কাছে থেকেছে।বিছানায় শুয়ে থাকা ছোট্ট মেয়েটার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।মেয়ের তিনমাস হতে চলল অথচ এখন পর্যন্ত তার বাবার স্পর্শটুকুও পেয়ে দেখেনি।আরশি আবারো মনে করতে লাগল এক বছর আগের কথা,,,

সেদিন ইশান ছাদ থেকে পরে ওর বা হাত আর ডান পায়ের হাঁটু ভেঙে গিয়েছিলো।মাথায়ও খুব চোট পেয়েছিলো ডক্টর তো বলেই দিয়ে ছিলো ইশানকে বাঁচানো সম্ভব না তবুও উনারা শেষ চেষ্টা করে দেখবেন বাকিটুকু আল্লাহর হাতে।সেদিন হয়তো ইশানের মা বাবা আর আরশির দোয়ায় ইশান বেঁচে গিয়ে ছিলো কিন্তু এখন সে বেঁচেও মরার মতো। একবছর ধরে ইশান কোমায় আছে। যেদিন আরশি জানতে পারল ও প্রেগন্যান্ট তখনি ওর দুনিয়া অন্ধকারে ছেয়ে গেছিলো। খুশি হওয়ার চাইতে উল্টো আরও কষ্ট পেয়েছিলো।শুধু এটাই ভাবত ইশান নিজের মেয়েকে মেনে নিতে পারবে তো।
ছোট্ট মেয়েটার কান্নার আওয়াজে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলো আরশি।তারাতাড়ি মেয়েটাকে এক হাত দিয়ে ধরে কোলে তুলে নিলো।ঠিক তখুনি ওর চোখ পরলো ইশানের আঙুলের দিকে।ওর আঙুল নড়ছে। আরশি আবেগে আপ্লুত হয়ে তারাতাড়ি ইশানের হাত ধরে কেঁদে দিলো।কিছুক্ষণ ওর হাত ধরে রেখে তারাতাড়ি ইশানের মা বাবাকে ডেকে আনলো।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

ইশানের মা হতদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করেই প্রশ্ন ছুড়ে মারলেন
“আমার ছেলের কী হয়েছে আরশি?
“মা ও রেসপন্স করছে।এই দেখো আঙুল নড়ছে।
ইশানের বাবা তারতাড়ি ডক্টরকে ফোন করে আসতে বললেন,
ডক্টর কিছুক্ষন চেকআপ করে বলল ইশান আবারো আগের মতো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।তবে আরও চার পাঁচদিন লেগে যাবে ওকে ঠিক হতে।সবেমাত্র রেসপন্স করেছে।
ডক্টরের কথা শুনে পরিবারে খুশির জোয়ার বয়ে গেলো।পিচ্চি মেয়েটি কী বুঝেছে কে জানে সেও খিলখিল করে হেঁসে দিলো।
পাঁচদিন এভাবেই কেটে গেলো ইশান শুধু এই কদিন হাতই নাড়িয়েছে কিন্তু চোখ মেলে তাকায়নি।সবেমাত্র চোখ লেগে আসছিলো আরশির হঠাৎ মাথায় কারও আলতো হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলল সে।এই স্পর্শটা যে তার খুব চেনা।মুখ তুলে উপরে তাকিয়ে দেখলো ইশান ওর দিকে মুচকি হেঁসে তাকিয়ে আছে।ইশানকে সুস্থ দেখে আরশি আবেগে কেঁদে দিলো।দু-হাত দিয়ে জড়িয়ে ওর বুকের সাথে লেপ্টে গেলো।ইশান আরশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।ইশানের নজর বিছানার এক সাইডে যেতেই সে আরশিকে টেলে ওর বুক থেকে তুলে নিলো।

“কী হয়েছে?
“এই বাচ্চাটা কে?আর কোথা থেকে এলো?
আরশি জানত ইশান এমন প্রশ্নই করবে তাই সে কিছুক্ষন নিরব থেকে বলল,
“এটা আমার বাচ্চা মানে আমাদের বাচ্চা।
“তুমি কী পাগল?আমাদের বাচ্চা আসবে কোথা থেকে? আর এই কদিনে বাচ্চাই বা কী করে এলো?
“এ কদিন মানে?
“কয়েকদিন আগেই তো আমি ছাঁদ থেকে পরেছিলাম।
“বারোমাস হয়েছে আপনি বিছানায় পরে আছেন আর আপনি বলছেন কদিন?
“কীহ একবছর?
“হ্যাঁ একবছর। বিশ্বাস না হলে ক্যালেন্ডার দেখেন।
“ওয়েট ওয়েট বারোমাস যদি হয় তাহলে এই বাচ্চার বয়স কতো?
“তিন মাস।
“কিন্তু আমরা তো এমন কোনো সম্পর্কে যাইনি।
“আমি জানতাম আপনি এমন কুয়েশ্চন করবেন ওয়েট
আরশি হাতে করে একটা কাগজ এনে ইশানের হাতে দিলো।ইশান ভালো করে কাগজটিতে চোখ বুলিয়ে দেখলো এটা ডিএনএ রিপোর্ট। আর ডিএনএ রিপোর্ট এটাই বলছে এই বাচ্চাটা আর কারও নয় ইশানের। ইশান একটু খুশি হলেও পরক্ষনে মুখ কালো করে বলল,
“এই রিপোর্টটা যে নকল নয় সে গ্যারান্টি কে দিবে
“আপনার বাবা মা।আপনার বাবা নিজে ডিএনএ রিপোর্ট এনে আমার হাতে দিয়েছেন।
“কিন্তু কীভাবে কী?
আরশি রিসোর্টে ঘটে যাওয়া মুহুর্তগুলো সব ইশানকে খুলে বলল।ইশানের চোখে পানি চিকচিক করছে।সে খুশিতে আরশিকে দুইহাত দিয়ে জরিয়ে ধরে চুমোয় ভরিয়ে দিলো।
“আমি তোমাকে পাওয়ার জন্য এতো ছটপট করতাম আর তুমি কী না আমার বাচ্চার মা হয়ে বসে আছো।

আরশি কিছু না বলে মুচকি হেঁসে ওর মেয়েকে ইশানের কোলে তুলে দিলো।মেয়েটা একেবারে বাবার মতো হয়েছে।চোখ নাক ঠোঁট সব ইশানের।ইশানের মনে যে সন্দেহ ছিলো সেটা এখন আর নেই।সে আলতো করে মেয়েটির কপালে চুমো খেলো।
ইশানের সুস্থ হওয়ার খবর শুনে সবাই এসে ওকে দেখো গেলো।বাড়িতে একরকম খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। ইশানের মা সকাল থেকে ছেলের পছন্দের সব খাবার রান্না করে যাচ্ছেন।আর ওর বাবা মিষ্টি বিতরন করছেন।ইশান নিজের মেয়েকে নিয়ে বসে আছে।মেয়েটিও এক দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে আর মাঝেমধ্যে ফোকলা দাঁতে হাসছে।আরশি মেহমানদের যত্নআত্তি করায় ব্যস্থ।
রাতে ইশান রুমে এসে দেখলো পুরো রুম অন্ধকারে ছেয়ে গেছে।কোনো এক অজানা কারনে ওর বুক কেঁপে উঠল।চারদিকে একবার চোখ বুলালো কিন্তু আরশি কোথাও নেই।হঠাৎই পিছন থেকে কেউ এসে ওকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো।ইশান ব্যাক্তিটির হাত ধরে সামনে আনলো।এটা তো আরশি।আরশি নতুন শাড়ি পরে সাজুগুজ করেছে।ইশান ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো যেন কত বছর ধরে ওকে দেখেনি। ক্রমস আরশিকে কাছে পাওয়ার কামনা ওকে গ্রাস করতে লাগল। হয়তো আরশিও সেটাই চায় তাই সেও ইশানকে করে জড়িয়ে ধরলো।

কাশফুলের মেলা পর্ব ৯

“অনু, অনু তোর পড়া শেষ?
মায়ের ডাক শুনে থেমে গেলো অনু।এতক্ষন দুজন মানুষের প্রেমকাহিনী পড়ে ও চোখ বেয়ে পানি পরেছে।কিন্তু ডায়েরির পরের পাতা তো সব সাদা আর কিছুই লিখা নেই ডায়েরিতে।তাহলে কী উনাদের কোনো বিপদ হয়েছে।অজানা এক আশংকায় বুক কেঁপে উঠলো অনুর।ডায়েরিতে কোনদিনের কোন ঘটনা সব লিখা আছে।অনুর হিসাব মতে এটা আরও বিশ বছর আগের ডায়েরি।
তাহলে তো সেই পিচ্চি মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে।হয়তো আমার সমান হয়ে গেছে এটা ভেবে আলতো করে হাসলো অনু।আচমকাই কেউ ওর হাত থেকে ডায়েরিটা কেড়ে নিলো।অনু তাকিয়ে দেখলো ওর মা।উনার চোখ মুখ কেমন লাল হয়ে গেছে চুলও উষ্কখুষ্ক পরনে মলিন পোষাক।
“কী হয়েছে মা?
“সকাল থেকে রান্না করার মতো যে কিছু নেই সেদিকে কোনো খেয়াল আছে তোমার।সারাদিন এই ডায়েরি নিয়ে পরে থাকো।বলি সামনে যে পু্ুকুরটি আছে সেখান থেকে তো বরশি দিয়ে কয়েকটা মাছ মেরে নিয়ে আসতে পারো।সারাদিন মানুষের বাড়িতে খাটাখাটুনি করে আমার আর ভালো লাগেনা এসব চিন্তা করতে।

অনুর কানে যেন কথাগুলো গেলই না। সে এক ধ্যানে ওর মায়ের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল,
“আচ্ছা মা এই ডায়েরিটা তুমি কোথায় পেয়েছো?
অনুর এমন প্রশ্ন উনাকে অস্বস্তিতে ফেলে দিলো।উনি সে দিকে কর্নপাত না করে বললেন,,,,
“পেয়েছি এক জায়গায় তোমার এত কিছু না জানলেও চলবে।কেন যে থ্রী পর্যন্তই লেখা পড়া করিয়েছিলাম কে জানে?যদি না পড়াতাম তাহলে হয়তো এই ডায়েরিটা নিয়ে পরে থাকতেনা আর এটা নিয়ে এত চিন্তাও করতেনা।
অনু মন খারাপ করে নিলো।ওর যে আরও জানতো ইচ্ছে করছে কী হয়েছিলো ওদের জীবনে যে ডায়েরির অর্ধেক অংশই সাদা রয়ে গেলো।

কাশফুলের মেলা পর্ব ১১