More than love part 5

More than love part 5
মেঘলা আহমেদ

-” আপনি কি জানেন, আপনি একটা নি/র্লজ্জ, বে/হায়া আর আর একটা ফাউ/ল ভ/ন্ড মানুষ!
রোদ্দুর চোখ পিটপিট করে রোজার দিকে তাকায়।‌ মেরুন আর রুহি সবজি কিনতে গিয়েছে। তাকে আর রোজাকে পাঠিয়েছে মাছ, মাংস কিনতে। রোদ্দুর ভারী ইনোসেন্ট কন্ঠে জিজ্ঞেস করে-

-” আর?
রোজা ক্ষেপে বলে-
-” আর একটা খ/বি/শ, খ/চ্চর, অ/সভ্য।
রোদ্দুর হাসি চেপে বলে-
-” এত সুন্দর সুন্দর উপাধী গুলো আমায় দিচ্ছো কেন? আমি কি করেছি?
রোজা র/ক্তিম চোখে রোদ্দুরের দিকে তাকায়। কন্ঠে তেজ নিয়ে বলে-

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” আপনি কত বড় খারাপ! আপনি আমায় শুধু শুধু অপমান করেছেন। আমার ড্রেস ও ছিঁ|ড়ে/ছেন। আপনি কি জানতেন ঐ কাপটা কেন দিয়েছি? লিপি আমার কাছে চেয়েছিল। ওর কোন চাওয়া আমি অপূর্ণ রাখি না। আপনি তা না জেনে আমায় অপমান করলেন। আপনার কি উচিত ছিল না আমাকে একটা সরি বলা? আবার মেরুন বলতেই বে/হায়ার মতো নাচতে নাচতে আমাদের সাথে ঢ্যাং ঢ্যাং করে চলে আসলেন। রুহিকেও পটিয়ে নিলেন। এই আপনি কতটা নি/র্লজ্জ, আপনী যদি তা জানতেন তাহলে বাংলাদেশের উচ্চতম সেতু গাবখান সেতু থেকে লা/ফ দিয়ে শহিদ হয়ে যেতেন। অসহ্য লোক।

রোদ্দুর সব কথাগুলো মনযোগ দিয়ে শুনলো। তারপর রোজার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল-
-” শহিদ অনেক আগেই হয়ছি। বাগানের একটা গোলাপ ফুল ছিঁড়তে গিয়ে, তাঁর কাঁটা ফুটে আমি প্রথম শহিদ হয়েছি।‌ সেই থেকে প্রতিনিয়ত শহিদ হয়ে আসছি। বুঝলে রোজ!

রোদ্দুরের প্রতিটি কথা রোজার হৃদয় স্পর্শ করলো। কন্ঠে যেন নেশা মেশানো ছিল। তাকে রোজ বলে ডাকলো রোদ্দুর? রোজা আচমকা রোদ্দুরের হাত চেপে ধরে। রোদ্দুর অবাক হয়ে যায় রোজার এহেন কান্ডে। কিন্তু তার মন ভালোলাগায় ছেয়ে যায়। রোজার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায় সে। তখনই একটা শ্যামলা মতন ছেলে এসে ওদের সামনে দাঁড়ায়। ছেলেটি কে দেখে রোজা আরো মিশে দাঁড়ায় রোদ্দুরের সাথে। ছেলেটি দুজনকে ভালোমত পরখ করে বলে-

-” রোজা, এটা কে?
রোদ্দুর কিছু বলবে তার আগেই রোজা বলে-
-” এটা রোদ। বলেছিলাম না বয়ফ্রেন্ড আছে। শুধু শুধু আমাকে উত্ত্যক্ত করো না আর। এই যে ও রোদ ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। এখন বিশ্বাস হলো তো।
রোদ্দুর শুধু অবাক হয়ে দেখছে রোজার কান্ড। রোজা মিথ্যা বলছে কেন? শ্যামলা ছেলেটা বলল –

-” আচ্ছা সাইডে এসো দু মিনিট কথা বলব।
রোজা রোদ্দুরের হাত জোড়ে চেপে ধরে বলল-
-” আমার কোন কথা নেই তোমার সাথে ফালতু লোক।

রোজা রোদ্দুর কে মাছের বাজারে নিয়ে গেল। তার বুক এখনো ধরফর করছে। এই সাইমন তার পিছে জোঁক এর মতো চিপকে আছে কেন? আর কোনটা রোজা কোনটা রুহি এটা যে কেমনে বোঝে। রোজা ভেবেই পায়না। রোজা রোদ্দুর কে ছেড়ে মাছের দোকানিকে প্রশ্ন করে-

-” আংকেল মাছগুলো তো অনেক বড়। দেখতেও অনেক সুন্দর।
মাছের দোকানি দাঁত বের করে হেসে বলে-
-” মামনি, মাছ একদম টাটকা! একবার খাইল স্বাদ আজীবন মুখে লাইগা থাকব।
রোজা মাছের দিকে তাকিয়ে বলে-

-” কিহহহ! সারাজীবন মুখে লেগে থাকবে কেন? তাহলে আমি অন্য খাবার খাবো কিভাবে? না আংকেল এটা ঠিক না।
রোজার কথায় রোদ্দুর বেক্কল বনে যায়। দোকানী এখনো হাসছে কারন ওদের এসব কথায় সে অভ্যস্ত। রোদ্দুর গলা খাঁকারি দিয়ে জিজ্ঞেস করে –
-” মামা মাছের‌ দাম কত।
দোকানি এবারো হেসে বলে-

-” ৭০০ টাকা কেজি বড়গুলো। আর ঐ পাশের গুলো ৫০০।
রোজা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে-
-” কিহ! আপনারে মাছ বেচতে কইছে কেডা মামু? আপনে ডা/কাত দলে যোগ দিলেই পারেন বোঝলেন। তখন একদম বৈধ ভাবে ডা/কাতি করতেন। মাছের এত দাম চাইয়া ইনডিরেক্টলি আমগো মতো নাদান জনগন কে ডা/কাতি করা অবৈধ।

রোদ্দুর কপাল চাপড়ে রোজার কানে কানে বলে –
-” এই রোজ!‌ এইসব কি বলছো?
রোজা রোদ্দুর কে ধমকে বলে-

-” আপনি চুপ করেন রোদ ভাই। দামাদামি করতে শিখেন।‌ কপালে নাইলে বউ জুটবো না। আর না জুটলে আমি রুহিকে দান করে দিবো, নো প্রবলেম। এই মামা শোনেন মাছের দাম এত কেন?এয় থাকে পানিতে আর দাম নাকি ৭০০। আর মুরগিকে কি কষ্ট করে ঔষধ, খাবার খাইয়ে বড় করে তার দাম ২০০ ও না। এত কষ্ট করে গরু পালে একদম তরতাজা মাংস তাও এত দাম না। আর এই মাছ তুই কয়দিন কোল্ডস্টোরে আছিলি ঠিক নাই‌। তাও তোর এত ভাব? এই ইলিশ মাছ জাতীয় মাছ এর স্বীকৃতি পাইছোস দেইখা তর কি ভাব বাইড়া গেছে?

রোজার কথা শুনে মাছের দোকানি হেসেই আছে। সে যেন অবাক হচ্ছে না একটুও। রোদ্দুর এসব দেখে রোজা কে হাত ধরে দূরে নিয়ে আসে। আঙুল উঁচিয়ে বলে-
-” এইখানে দাঁড়াও, এক পাও নড়বে না। আমি মাছ আর মাংস নিয়া আসছি। বেশি পকরপকর করো তুমি।
রোদ্দুর হাঁটা দেয়। রোজা গলা উঁচিয়ে বলে-
-” এই যে বাবার নাম বলে দামটা খাতায় লিখিয়ে আসবেন। আপনার মহৎগিরি করে টাকা দেয়া লাগবেনা। আপনি এসব করে হিরো হতে পারবেন না হুহ।

রোদ্দুর পেছন ফিরে প্রতিউত্তর করলো না। এই মেয়ে আগের থেকে বেশি চালাক হয়ে গেছে। সে ভেবেছিল রোজা অত্যন্ত লাজুক হবে। কিন্তু এ তো সয়/তানের নানী। রোজা মুচকি হাসছে। সে রোদ্দুর কে জ্বালাতেই এসব করেছে। যাতে সাইমন এর কথা মাথা থেকে বেড়িয়ে যায়। বিকট শব্দ করে ফোনটা বেজে ওঠে। রোজা কল পিক করে বলে –

-” বল লুহার বাচ্চা।
-” রোজার বাচ্চা কথা ঠিক কর। নাইলে একদম চৌমাথার মোড়ের ভিক্ষুকের সাথে বিয়ে দিয়ে দেব। তারপর একসাথে হাটবি আর ভিক্ষা করবি।
রোজার এই মুহুর্তে ঝগ/ড়া করতে ইচ্ছে করছেনা। তাই সে বলে-

-” চুন্নি বেডি, তোর সাথে ঝগ/ড়া করার আমার কোন ইচ্ছা নাই। কি বলতে ফোন করেছিস ফ/টাফট বলে ফোন রাখ।
-” শোন তুই আর রোদ ভাইয়া বাসায় চলে আসিস। আমি আর‌ পিপিন চলে এসেছি। তাড়াতাড়ি আসিস।
ফোনটা খট করে কেটে দিলো রুহি‌। রোজা উজবুকের মতো ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। এই রোদ্দুর এর সাথেই যাওয়া লাগবে তার। ও চাইছে এই সয়/তানের থেকে দূরে থাকতে। আর রুহি আর পিপিন ওকে ঠেলে ঠেলে সয়/তানের মুখে পাঠাচ্ছে।

-” হেই কি হয়েছে? উজবুকের মতো তাকিয়ে আছো কেন?
রোজা চমকে সামনে তাকায়।‌ রোদ্দুর এক হাতে মাছ অন্যহাতে মাংস। রোজা জোড়পূর্বক হেসে বলে-
-” নাহ কিছুনা। চলুন। ওরা বাসায় চলে গেছে আমরাও চলুন।
দুজনে একটা রিকশায় উঠে। রোজা যথাসম্ভব ফাঁকা রেখে সরে বসে। রোদ্দুর তা‌ দেখে মুচকি হাসে। রিকশাওয়ালাকে বলে-

-‘ মামা বিবি পুকুরের ওখানে চলুন। স্লো চালাবেন।
রিকশা তার আপন গতিতে চলছে। রোজার চুলগুলো উড়াউড়ি করছে। বারবার চুল ঠিক করছে সে। খুবই বিরক্তিকর মুখের ভাব। রোদ্দুরের ভালোই লাগছে দেখতে। সে আচমকা বলে-
-” আমি সরি রোজ। আমি তখন জানতাম না ওটা তুমি!
রোজা আর চোখে তাকিয়ে বলে-

-” জানলে বোধহয় মাথায় তুলে নাচতেন।
-” বিশ্বাস করো জানলে কিছুই বলতাম না।
-” হয়েছে হয়েছে থাক।
এরপর দুজনেই চুপ। রোদ্দুর আবার নিরবাতা ভেঙে বলে-
-” তুমি আজ বিকেল থেকে লিপি কে পড়াতে যাবে।
রোজা অন্যদিকে তাকিয়ে বলে-

-” উহুম। আমি‌ বলেছি না যাবোনা। আমি টাকার অভাবে ওকে পড়াতে যাইনি। শুধু ওর একাকিত্বের সঙ্গী হওয়ার জন্য ওর সাথে থাকতাম। কিন্তু এখন তো আপনি আছেনই।
রোদ্দুর অনুরোধ করে-

More than love part 4

-” প্লিজ না করোনা। ও তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবেনা। খুব কেঁদেছে। ঠিকমত খাচ্ছেনা। আমার উপরে রাগ করে একটা বাচ্চা মেয়েকে কষ্ট দিও না। ও তোমাকে খুব ভালোবাসে।
রোজারও ভালো লাগছে না লিপিকে ছাড়া। তবুও লিপি কে কি সে আজীবন দেখবে? কদিন পর বিয়ে হয়ে গেলে তখন তো একাই থাকবে লিপি। আগে অভ্যাস করলে দোষ কি। রোজা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে –
-“ভেবে বলবো!

More than love part 6