More than love part 9

More than love part 9
মেঘলা আহমেদ

-” সাইমন। সাইমন ওঠো। দেখো আমি এসেছি।
রুহি চারদিকে ভালো করে তাকিয়ে নেয়। সে জানে কেউ আসবেনা। কিন্তু তবুও ভয় করছে। সাইমন নিভু নিভু চোখ খুলে তাকায়।‌ সামনে রুহির মুখটা দৃশ্যমান হতেই সে লা/ফিয়ে ওঠে। অবাক চোখে তাকায় রুহির দিকে। রুহি ছলছল চোখে সাইমনের দিকে তাকায়। সাইমন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে-

-” একি তুমি কেন এসেছ? তুমি তো রুহি। আমার কাছে কি চাই তোমার?
রুহি নিজেকে আর সামলাতে পারলো না। সে জড়িয়ে ধরে সাইমন কে। সাইমন বিরক্ত হয়ে রুহিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে।
-” এই ছাড়ো বলছি। কেমন বে/হায়া, নির্ল/জ্জ মেয়ে তুমি? মাঝরাতে পরপুরুষের ঘরে এসে জ/ড়াজড়ি করছো? ছাড়ো বলছি ছাড়ো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রুহি নিজের কান্না সংবরন করার চেষ্টা করে। সাইমন কে ছেড়ে দিয়ে তার দিকে তাকায়। সে কেন চিনতে পারছে না রুহিকে। রুহি ব্যাকুল হয়ে বলে-
-” তোমার কি কিছু মনে পড়ে না? তুমি আমাকে কত ভালবাসতে! তোমার কি কিছুই মনে নেই? তুমি কেন রোজার পিছনে পড়ে আছো? কেন ওকে বিরক্ত করছো?
সাইমন রুহির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে-

-” আমার দশবছর বয়স থেকেই আমি এক নারী মূর্তি কে স্বপ্নে দেখেছি। কিন্তু বাস্তবে তাকে আমি চিনতাম ও না। তারপর বছর সাতেক আগে আমি আর বাবা মা মিলে এই গ্রামের বাড়িতে চলে আসি। তারপর আমার রোজার সাথে দেখা হয়। রোজাকে দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। কারন আমার স্বপ্নে দেখা নারি মূর্তি আর কেউ নয় রোজা নিজেই। এতবছর ওকে স্বপ্নে দেখতে দেখতে আমি ভালোবেসে ফেলেছি। তাই ওর পিছনে পড়ে আছি‌।
রুহি দুই হাতে সাইমনের নিচু মুখটা তুলে জিজ্ঞাসা করে-

-” আচ্ছা তুমি রোজাকেই ভালোবাসো? নাকি তোমার স্বপ্নে দেখা নারী মূর্তি কে? ভেবে বলবে!
সাইমন রুহির চোখের দিকে তাকায়। চোখের অতলে যেন এক ভালোবাসার সমুদ্র। এ চোখ যেন স্বপ্নে দেখা সেই চোখ। কিছুক্ষণ তাকিয়েই চমকে ওঠে সে‌। একটু দূরে সরে বলে-
-” আমি আমার স্বপ্নে দেখা মেয়েটিকে ভালোবাসি। আর আমি জানি সে রোজাই।
রুহি মৃদু হেসে বলে-

-” আচ্ছা তাহলে একটা কথা বলো। তুমি স্বপ্নে যে মেয়েটি কে দেখো তার কোন বিশেষ চিহ্ন, কিংবা অন্যকিছু দেখেছো কি? যা তুমি রোজার মধ্যেও দেখেছো। এবং তাকেই সেই মেয়ে বলে চিহ্নিত করছো।
সাইমন কিছুক্ষন ভেবে বলে-
-” হ্যা দেখেছি। সেই মেয়েটার পায়ে আমি স্বপ্নে নূপুর পড়িয়ে দিয়েছিলাম। তার পায়ে গোড়ালীর একটু উপরে, একটা কাঁ/টা চিহ্ন দেখেছি। কিন্তু রোজার পা তো আমি চেক করিনি। বুঝবো কিভাবে।

সাইমনের কথা শুনে রুহি ভীষন আনন্দ পায়। খুশিমনে নিজের পা বিছানার উপর তুলে দেয়। জিন্স টা একটু উপরে তুলে কাঁ/টা চিহ্ন টা বের করে‌। সাইমন তা দেখে চোখ বড় বড় করে রুহির দিকে তাকায়। রুহির মুখের মৃদু হাসি। যা অবিকল স্বপ্নের মেয়েটির মতো। সাইমন নিজের হাত বাড়িয়ে রুহির চিহ্নটার উপরে রাখে। সে অবাক হয়ে উত্তরের আশায় রুহির দিকে তাকায়। রুহি জিন্স টা নামিয়ে বলে-

-” তুমি রোজাকে নয়। আমাকে স্বপ্নে দেখতে। আমিই তোমার স্বপ্নের মেয়েটা।
-” আমি বিশ্বাস করি না। কি প্রমান আছে তোমার কাছে? যে তুমিই সেই? তুমি প্রমান দিতে পারবে?
রুহি উঠে দাঁড়িয়ে সাইমন কে বলে-
-” প্রমান তো আমি দিলাম ই। এরপর বিশ্বাস না হলে রোজার পা চেক করে দেখবে। আর রোজাকে দেখার পরেও তোমার স্বপ্নে ঐ নারী মূর্তি এসেছিল তাই না?

সাইমন রুহির দিকে তাকিয়ে বলে-
-” হ্যা দেখেছি। কিন্তু তুমি জানলে কি করে?
-” আমি সব জানি। সাইমন তুমিও জানো। কিন্তু মনে পড়ছে না আর মানতে চাইছো না। কিন্তু একটা জিনিস, তুমি আজ জেনে গেছো আমি তোমার স্বপ্নে আসতাম।

দেখে নিও আজ থেকে তুমি আর স্বপ্ন দেখবে না আমাকে নিয়ে। মিলিয়ে নিয়ো। আজ আমি গেলাম। মন আর মস্তিষ্কের দ্বিধাদ্ব/ন্দ্ব শেষ হলে, তোমার উত্তর পেলে আমার কাছে এসো‌। তোমাকে আরো অনেক কিছু বলার আছে। টাটা‌।
রুহি চলে যায়। পেছনে তাকিয়ে থাকে সাইমন। তার চোখে হাজারো প্রশ্ন। মিলবে কি উত্তর?

রুহি চোরের মতো গিয়ে বাড়িতে ঢোকে। কেউ টের পেয়ে গেলে সর্বনা/শ। আজ ঝুঁকি নিয়ে সাইমনের কাছে তাকে যেতে হলো‌। এছাড়া তার কোন উপায় ছিল না। তার কাছে মাত্র কিছুদিন সময় আছে‌। তার বাইশ বছর পূর্ণ হওয়ার আর মাত্র কিছুদিন বাকি। সে সাবধানে সদর দরজা লাগিয়ে দেয়। এরপর গুটি গুটি পায়ে নিজের ঘরে চলে যায়।

কেউ চুপটি করে দেখে রুহিকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে যায় আবার। রুহি নিজের ঘরের দরজা দিয়ে লাইট অন করে। মেঝে থেকে কার্পেট টা সরিয়ে ফেলে। এক গুপ্ত দরজা সেটা। রুহি গিয়ে আবারো লাইট নিভিয়ে দেয়। তারপর এসে গুপ্ত দরজাটা খোলে। এই দরজাটা লাইটের সাথে সংযুক্ত। লাইট অফ করলে এটা খুলে যায়। লাইট অন করলে এটা বন্ধ হয়ে যায়। রুহি সাবধানে ঢোকে সেখানে। আলোয় আলোকিত জায়গাটা। এটা ছিল রোজার মায়ের গোপন ল্যাবরেটরি।

সে এখানে বিভিন্ন জিনিস নিয়ে গবেষণা করতো। এই ঘরের হদিস শুধু রুহিকেই দিয়েছে ইয়াসমিন। রুহি গিয়ে একটা ডায়েরি খোলে‌। সেখানে একটা প্রজেক্টের কথা লেখা আছে। এই প্রজেক্ট এ ইয়াসমিন কাজ করতো। প্রজেক্ট টা অসম্পূর্ণ ছিল। রুহি তা সম্পূর্ণ করেছে। এখন শুধু তার ২২ বছর হওয়ার অপেক্ষা। তারপর সে তার মায়ের কাছে ফিরে যাবে। কতদিন পর মা কে জড়িয়ে ধরবে মা বলে ডাকবে। আর রোজাও তার মা কে ফিরে পাবে‌। ভাবতেই সারা শরীরে রোমাঞ্চকর অনুভূতি বয়ে যাচ্ছে।

সকাল হয়ে গিয়েছে। চারদিকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ। জানালা গলে এক চিলতে রোদ এসে পড়ে রোদ্দুরের মুখে। কি নিষ্পাপ মুখ‌। ঘুমোলে বুঝি সবাইকেই নিষ্পাপ লাগে? রোদ্দুর মুখের উপর বালিশ দিয়ে আবার ঘুমায়। এই আলো বিঘ্ন ঘটাচ্ছে ঘুমে। তখনি চায়ের কাপ হাতে লিপি ঘরে ঢোকে। গুটি গুটি পায়ে বিছানার কাছে এগিয়ে যায়। চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে রোদ্দুর এর কাছে যায়। রোদ্দুর এর কাঁথা টেনে সরিয়ে বলে-

-” গুড মর্নিং চাচ্চু। উঠো চাচ্চু। আমার মিস কে নিয়ে এসো। আমার ভালো লাগছে না‌।
রোদ্দুর মুখের উপর থেকে বালিশ সরিয়ে ফেলে। নিভু নিভু চোখে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে-
-” গুড মর্নিং মাম্মাম। তুমি তোমার মিসের বাসায় যাবে?
রোদ্দুরের প্রস্তাবে লিপি যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল। খুশি হয়ে বলল-

-“সত্যি তুমি আমায় নিয়ে যাবে? ইয়েএএ কি মজা। ওখানে রুহি আন্টিও আছে। চাচ্চু উঠো উঠো।
লিপি ঠেলে রোদ্দুর কে উঠিয়ে দেয়। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে দুজনে মিলে রোজাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রোদ্দুরের বাবা আরমান ছেলেকে বলে-

-” যাচ্ছ কই? এখন?
রোদ্দুর বলার আগেই লিপি বলে-
-” আমরা মিসের বাসায় যাচ্ছি দাদু। তুমি যাবে?
আরমান ছেলের দিকে আরচোখে তাকিয়ে বলে-
-“রোদ্দুর কয়দিন পরেই বিয়ে। এখন ও বাড়িতে না গেলে হয়না?
রোদ্দুর লিপিকে কোলে উঠিয়ে বলে-

-” বাবা তুমি আসলেই একটা আনরোমান্টিক‌। এই জন্য আমার কোন বোন ও নাই। আরে বাবা এখন হবু বউয়ের কাছে কাছে থাকবো। তাহলেই তো ভালো হবে। তুমি ওসব কি বুঝবে হুহ। এই লিপি চলো মামনি।

More than love part 8

রোদ্দুর আর লিপি চলে গেল। আরমান রিসাদ তাকিয়ে রইলেন ওনার ঠোঁটকাটা ছেলের যাওয়ার পানে। এমন ঠোঁটকাটা কারো ছেলে আছে? এটা কি তার গর্ভে এই না না তার স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নিয়েছে? নিশ্চয়ই ছেলে মায়ের মতই হয়েছে। হাড়/গিলে সয়/তান।

More than love part 10