শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ২২

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ২২
তাসনিম জাহান রিয়া

অনুপমের স্বভাব একদমি চেইঞ্জ হয় নাই। কলেজে থাকতে কোনো মেয়েকে নিজের আশেপাশেও ঘেষতে দিত না। আমি তো ভেবেছিলাম বড় হলে স্বভাব চেইঞ্জ হয়ে যাবে। কিন্তু তুই আগের মতোই আছিস। কোনো মেয়েকে নিজের শরীর টাচ করতে দিবি না। তোর শরীরের মতো কী কেউ এখনো তোর মনও ছুঁতে পারেনি?
রূপম একটু কেঁশে বলে,

সবার জন্য না। একজনের জন্য সাতখুন মাফ। সেই রমণী শুধু তার শরীর না একদম হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।
বাহবা অনুপম মহশয়ের প্রেমিকাও আছে? তোর হাত-টাত ধরতে দিস? নাকি সবার জন্যই একটাই বাক্য, “ডোন্ট টাচ মি”। হাত-টাত ধরতে না দিলে ভাববে তোর মাঝে কোনো সমস্যা আছে। বুঝতে পেরেছিস তো আমি কী মিন করেছি?
কথাটা শেষ করেই একটা চোখ টিপ দেয়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এহেম এহেম ডাক্তার আংকেল আপনি যেই রমণী সম্পর্কে কথা বলছেন সে আপনার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।
রূপার কথায় লোকটা অবাক হয়ে শ্রেয়সীর দিকে তাকায়। শ্রেয়সী লজ্জায় মাথা নিচু করে
আছে। গাল জুড়ে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ে। শ্রেয়সী সবার তাকানো দেখে অস্বস্তিতে পড়ে যায়। ইতস্তত করে বলে,
আমি আসি। অনেকটা লেইট হয়ে গেছে। ওরা চিন্তা করবে। আসসালামু আলাইকুম।
শ্রেয়সী কথাগুলো বলেই দ্রুত পায়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে। হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে অলরেডি দুই ঘন্টা পার হয়ে গেছে।

শ্রেয়সী ফোন বের করে ইভাকে জানিয়ে দেওয়ার জন্য তার আসতে একটু লেইট হবে। ফোনের স্কিনে প্রিয়ন্তির অনেকগুলো মিসড কল দেখে অবাক হয়। ফোন সাইলেন্ট থাকার কারণে বুঝতে পারেনি প্রিয়ন্তি এতোগুলো কল দিয়েছে।
প্রিয়ন্তি সাধারণত মানুষকে এতো সময় নিয়ে কল দেয় না। কেউ ফোন রিসিভ না করলে তিনটার বেশি কল কখনোই দেয় না। শ্রেয়সী প্রিয়ন্তিকে কল দেওয়ার আগেই প্রিয়ন্তিই কল দেয়। কল রিসিভ করার আগেই ফোন বন্ধ হয়ে যায়। শ্রেয়সী বুঝতে পারে চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় ফোন বন্ধ হয়ে গেছে।

শ্রেয়সী একটা রিকশা ডেকে ওঠে বসে। মিনিট বিশেকের মাঝেই শ্রেয়সী ইভাদের বাসায় পৌছে যায়। কলিংবেল বাজাতেই মুহিব এসে দরজা খুলে দেয়।
এখন থেকেই দরজা খুলে দেওয়ার প্র্যাকটিস করছিস? গুড, বেরি গুড। চালিয়ে যা।
মুহিব শ্রেয়সীর মাথায় টোকা দিয়ে বলে,

ফাজলামো করবি না। আসতে এতো দেরি হলো কেনো? কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছি। প্রিয়ন্তি তোকে কতোগুলো কল দিয়েছে। একটাও রিসিভ করিসনি কেনো?
আরে ইয়ার বলিস না অনুপমের সাথে হসপিটালে গিয়েছিলাম। ফোন সাইলেন্ট ছিল তাই কল দেখিনি। ফোনের চার্জ শেষ হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। তাই আর কল ব্যাক করতে পারিনি।
আচ্ছা চল। সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে।

মুহিব শ্রেয়সীকে নিয়ে সোজা ইভার রুমে যায়। শ্রেয়সী খেয়াল করে প্রিয়ন্তি মুখ কালো করে বসে আছে। শ্রেয়সী কিছু বলার আগেই প্রিয়ন্তি বলে ওঠে,
শ্রেয়সী তোর মনে হচ্ছে না তুই একটু বেশি বেশি করছিস?
আমি কী করলাম?

প্রতিনিয়ত তুই আমাকে ইগনোর করছিস। একটু আগে কল দিলাম সেটাও রিসিভ করলি না। তোর ভাইয়ার সাথে প্রেম করে বুঝি আমি পাপ করে ফেলছি?
মুহিব প্রিয়ন্তিকে ধমক দিয়ে বলে ওঠে,
না জেনে কথা বলবি না প্রিয়ন্তি।

মুহিব তুই আজকে আমাকে চুপ করাতে পারবি না। আমি সবসময় চুপ থাকি বলে যে কষ্ট হয় না বা পড়াশোনা নিয়ে থাকি বলে যে আমার ফিলিংস নেই এমনটা তো নয়। তোরা ইগনোর করলে আমার কষ্ট হয়, খারাপ লাগে। আমার খারাপ লাগাটা তোদের মতো প্রকাশ করতে পারি না হয়তো। আমি কী তোর ভাইয়ার অযোগ্য? আমি কী দেখতে কুৎসিত? আমার আচার-আচারণে অসংগতি রয়েছে? তুই আমার আর নাহিনের রিলেশন আছে এটা জানার পর থেকেই আমাকে আর নাহিনকে ইগনোর করছিস।

আমি তোদের কখন ইগনোর করলাম? তোদের রিলেশন নিয়ে আমার কেনো সমস্যা হবে?
সমস্যা তো আমাদের রিলেশন নিয়ে না। সমস্যা তো আমাদের রিলেশনের কথা তোকে জানানো হয়নি সেটা নিয়ে। নাহিন তোর ভাইয়া বলে কী সবকিছু তোকে বলে করতে হবে? কার সাথে রিলেশন করবে, কবে থেকে রিলেশন সব তোকে বলতে হবে। নাহিনের কোনো প্রাইভেসি নেই? তোর আর অনুপমের ভাইয়ার রিলেশনের কথা নাহিনকে বলেছিস?

শ্রেয়সী কিছু না বলে ইভার বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। কথায় কথা বাড়ে। সবাই শ্রেয়সীকে আটকানোর চেষ্টা করে। শ্রেয়সী কারো কোনো কথা না শুনেই বেরিয়ে আসে। প্রিয়ন্তি কথায় সে অনেক কষ্ট পেয়েছে। সে তো নাহিন আর প্রিয়ন্তিকে ইচ্ছাকৃতভাবে কখনো ইগনোর করেনি। সে তো বিয়ের বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত ছিল তার সাথে নিজে নাচ প্র্যাকটিস নিয়ে ব্যস্ত ছিল। প্রিয়ন্তির তার সম্পর্কে এরকম ধারণা সেটা শ্রেয়সী মানতে পারছে না।

শ্রেয়সী হাঁটতে হাঁটতে ময়মনসিংহ সরকারী গ্রন্থাগারে চলে আসে। দীর্ঘক্ষণ বই পড়ে নিজের অস্থির মনটাকে শান্ত করে। সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরে। বাসার সামনে রিকশা থেকে নামতেই দেখে অনুপম দাঁড়িয়ে আছে। শ্রেয়সী অনুপমকে দেখে তার মতিগতি বোঝার চেষ্টা করে। অনুপমকে প্রতিদিনের তুলনায় একটু বেশিই গম্ভীর লাগছে। শ্রেয়সী রিকশা থেকে নামতেই অনুপম এসে ভাড়া মিটিয়ে দেয়।

এতক্ষণ কোথায় ছিলে? তোমার ফোন বন্ধ কেনো?
ইভাদের বাসায় ছিলাম। ফোনের চার্জ শেষ তাই বন্ধ হয়ে গেছে।
অনুপম হুট করেই শ্রেয়সীর দুই বাহু চেপে ধরে। রাগে হিসহিসিয়ে বলে,
তুমি আমাকে মিথ্যা বলো? মুহিব আমাকে বলেছে তুমি অনেকক্ষণ আগেই ইভার বাসা থেকে বেরিয়ে গেছো। আমাকে টেনশনে ফেলতে তোমার ভীষণ ভালো লাগে তাই না?

অনুপম কন্ট্রোল ইউর সেল্ফ। হাত ছাড়ুন। সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
অনুপম আশেপাশে তাকিয়ে শ্রেয়সীর বাহু ছেড়ে দিয়ে দ্রুত পায়ে গেইট দিয়ে ঢুকে যায়। শ্রেয়সীর বিক্ষিপ্ত মন আরো বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। তার আশেপাশের সবকিছু বিষাক্ত মনে হচ্ছে। শ্রেয়সী স্লান পায়ে হেঁটে নিজের ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। কলিংবেল বাজাতেই নাহিন এসে দরজা খুলে দেয়। নাহিনকে দেখেই শ্রেয়সী মাথা নিচু করে ফেলে। আজকের দিনটাই তার কাছে বিষাক্ত মনে হচ্ছে। শ্রেয়সীর নাহিনের দৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছে নাহিনও তাকে দেখে বিরক্ত হচ্ছে। শ্রেয়সী মাথা নিচু করে নাহিনকে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই নাহিন শ্রেয়সীর পথ আটকে দাঁড়ায়।

তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।
শ্রেয়সী নাহিনের চোখের সাথে চোখ মেলাতে পারছে না। ভাইয়াও হয়তো প্রিয়ন্তির মতো আমাকে ছোট মনের মানুষ ভাবছে। এটা ভেবে শ্রেয়সীর মন আরো তিক্ত হয়েছে ওঠে।শ্রেয়সী মিনমিন করে জবাব দেয়,
ভাইয়া আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। মাথা ব্যথা করছে। একটু পর এসে কথা বলছি।
শ্রেয়সী তোর মনে হচ্ছে না তুই একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছিস?

শ্রেয়সী অবাক হয়ে নাহিনের দিকে তাকায়। শ্রেয়সীর বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে এটা তার ভাইয়া। নাহিন কখনোই তার সাথে এমন সুরে কথা বলেনি।
তুই এমন ছোট মনের মানুষের পরিচয় দিবি সেটা আমি কখনোই ভাবিনি। তোর আর অনুপমের রিলেশনের কথা আমাকে বলিসনি সেটা নিয়ে কী আমি রাগ করেছি? তোকে কিছু বলেছি? আমার ভাবতে কষ্ট হচ্ছে তুই আমার বোন।
শ্রেয়সী চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। স্লান হেসে বলে,

খুব ভালো বলেছো ভাইয়া। তোমরা ছোট একটা ইস্যু নিয়ে এতো টানা হেছড়া করবে আমি কখনোই ভাবিনি। তোমার যদি আমাকে বোন ভাবতে কষ্ট হয়। তাহলে আমাকে বোন ভেবো না। এখন থেকে মনে করবে তোমার বোন মারা গেছে। আরেকটা কথা শ্রেয়সী এখনো এতো ছোট মন মানসিকতার হয়ে যায়নি কারো ব্যক্তিগত ব্যাপার তার সাথে শেয়ার করা হয়নি বলে সে রাগ করবে। তোমাদের রিলেশনের ব্যাপারটা আমি শুরু থেকেই জানতাম।

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ২১

শ্রেয়সী আর এক মুহূর্তও দাঁড়ায় না। রুমে এসেই ফোনটা চার্জে দিয়েই প্রিয়ন্তিকে কল দেয়। একবার রিং হতেই প্রিয়ন্তি ফোন রিসিভ করে।
আই হেইট ইউ। আই যাস্ট হেইট ইউ প্রিয়ন্তি।

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ২৩