নীড়ের খোজে পর্ব ৫

নীড়ের খোজে পর্ব ৫
জান্নাতুল বিথী

বিকেল বেলায় আমি রুমে শুয়ে শুয়ে হুমায়ুন আহমেদ এর অপেক্ষা বইটি পড়ছি।পড়ছি বললে ভুল হবে।কারন আমি শুধু বইয়ের দিকে তাকিয়েই আছি পড়া হচ্ছেনা।অলস সময় কাটানোর চেয়ে বই পড়াই ভালো মনে করছি।এই বাড়িতে আসার পর কেটে গেছে প্রায় পনেরো দিন।এই পনেরো দিনে সবার সাথেই আমার স*ম্পর্ক সহজ হয়েছে।

খুব সহজেই তারা আমাকে আপন করে নিয়েছে।আজ তেরো দিন হলো শৈবাল বাড়িতে নেই।পড়া-লেখার জন্য তাকে নাকি ভার্সিটির হোস্টেলেই থাকতে হয়।তার সাথে সম্পর্ক টা চেয়েও স্বাভাবিক করতে পারছি না।মানুষটা কেমন যেনো দূরে দূরে থাকছে।আজ এতো দিন হলো বাড়িতে নেই অথচ সে আমার সাথে একবারো যোগা*যোগ করেনি।সবার সাথেই কম বেশি কথা হয় তার।শুধু আমি ব্যাতীত।এসবই ভাবছিলাম হঠাৎ দরজায় টোকা পড়ায় আমি ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসি।কে আসতে পারে এসময় ভাবতে ভাবতেই দরজা খুলে দেখি হিমেল দাড়িয়ে।আমাকে দরজা খুলতে দেখে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘এই নাও তোমার উপহার?’
আমি অবাক হয়ে বললাম,
‘আমার গিপট মানে?কিসের গিপট?কে দিলো?কেনো দিলো?’
‘উফ আপু এতো প্রশ্ন না করে দেখো তো কি আছে ভেতরে?’
আমার হাতে শপিং ব্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে হিমেল চলে যায়।আমি এখনো হা করে তাকিয়ে আছি তার যাওয়ার পথে।হঠাৎ করে হিমেল হাটা থামিয়ে বললো,
‘আপু একটু পর রেডি হয়ে থেকো।আমরা ঘুরতে যাবো।’

শপিং ব্যাগটা নিয়ে আমি বিচানার উপর বসে খুলে দেখি ব্যাগে একটা স্মার্ট ফোন।আমি ফোনটা হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখি।ফোনটা গিপট পেয়ে যতোটা না অবাক হয়েছি তার চাইতেও বেশি অবাক হয়েছি ফোনের ওয়াল-পেপার দেখে।ছবিটা যেদিন আমি এ বাড়িতে এসেছিলাম তার পরের দিনের হয়তো।

আমি সোফায় বসে একহাতে একটা বেলী ফুল অন্য হাতে চায়ের কাপ। যখন খানিকটা ঝু*কে চায়ের কাপে ফু দিতে গেলাম ঠিক তখন ছবিটা তোলা হইছে।কয়েক গুচ্ছ চুলও মুখে আছড়ে পড়ছে।আমি এখনো হা করে ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছি।কে তুলেছে এই ছবি ভাবনাতে আসতেই তাড়াতাড়ি ব্যাগ চেক করি।ব্যাগের ভেতর একটা চিরকুট উঁকি দিচ্ছে।ঝটপট্ চিরকুট টা হাতে নিয়ে খুলে দেখি গুটি*গুটি হাতে লেখা,

‘তোমাকে কি বলে সম্বো*ধন করবো জানা নেই আমার।সম্বোধন করার মতো সম্পর্ক ও গড়ে উঠেনি এখনো আমাদের মাঝে।তাই সম্বোধন করা বাদেই লিখছি।যতো ব্যাস্ত সময় কাটানোর কাটিয়ে নাও পরিবারের সাথে।আমার একটা পরীক্ষা ছিলো তাই হঠাৎ চলে আসতে হলো।মন খারাপ করো না।আর এই ফোনটা নিজের কাছো রাখো।প্রয়োজন হতে পারে তোমার।’

“অগোছালো ছেলেটা”
পুরো চিরকুটে এতোটুকুই লেখা। মনে মনে চৌদ্দ বার পড়লাম চিরকুট টা।পনেরো বার পড়ার সময় দ্বিতীয় বারের মতো দরজায় পুনরায় নক করে কেউ।দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি হিমেল দাড়িয়ে আছে।আমাকে তাকাতে দেখে ভেতরে আসতে আসতে বলে,

‘আপু তুমি এখনো রেডি হওনি?আমরা বের হবো কখন?’
‘কোথায় যাবো আমরা হিমেল?’
‘কোনো গন্তব্য নাই আজ।শুধু গন্তব্য হীন ভাবে ঘুরবো চলো চলো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও’
কথা না বাড়িয়ে আমি একটা মেরুন কালারের থ্রি-পিচ পরে চুল গুলো বেনী করে গিয়ে হিমেলের সামনে দাড়াতেই সে বললো,
‘চলো চলো দেরী হয়ে যাচ্ছে আমাদের।’

বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে শৈবাল।তার পাশে বসে আছে তানিম আর নুহাশ।দুজনেই শৈবালের খুব কাছের বন্ধু।দুজনেই গভীর চিন্তায় মগ্ন আছে।একটু পর নুহাশ শৈবালকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
‘শৈবাল বলেছি তো দিয়া পিচ্চি ভাবীকে পড়াতে পারবে।’
শৈবাল বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে বললো,
‘আমিও বলেছি দিয়া বাদে অন্য কাউকে চয়েজ কর।’
‘কিন্তু দিয়া তে কি সমস্যা?’
‘অনেক সমস্যা।তুই বুঝবি না।’
‘দিয়া…..

নুহাশকে কথা শেষ করতে না দিয়ে তানিম ধমক দিয়ে উঠে বললো,
‘চুপপ।একদম চুপ।আর শৈবাল তোকে বলছি মেয়েটার এখনো এইচএসসির রেজাল্ট দেয়নি আর তুই এখনই কোচিং নিয়ে পড়ে আছিস?’

‘আরে ইয়ার বুঝতে পারছিসনা কেনো কালকে ওর রেজাল্ট দিবে।’
‘তাহলে সেটা নিয়ে চিন্তা কর।আপাত কোচিং এর চিন্তা বাদ দে।আগে আমাদের তোর বিয়ের ট্রিট দে।আফটার অল পছন্দের মানুষের সাথে বিয়ে হইছে বলে কথা।’
‘এই কথাটা এখানে বলেছিস ঠিক আছে কিন্তু কারো সামনে যদি কথাটা মুখ থেকে বের করিস তাহলে তোর পেট ফুটো করে দিবো আমি তানিম।’

শৈবালের কথা শুনে নুহাশ ফিক করে হেসে দেয়।তারপর দুজনের জোরাজুরি তে শৈবাল রাজি হয় তাদের ট্রিট দিতে।হোস্টেল থেকে বের হতেই তাদের সামনে পড়ে দিয়া,ঐশী আর ইকরা।ওদের কে দেখে ইকরা এগিয়ে এসে বললো,
‘কোথায় যাওয়া হচ্ছে?’
‘রেস্টুরেন্টে চল আজ শৈবাল আমাদের তার বিয়ের ট্রিট দিবে।’

তানিমের কথা শুনে শৈবাল ওর দিকে রাগী লুকে তাকায়।শৈবালকে এভাবে তাকাতে দেখে তানিম খানিটা চুপসে যায়।অন্যদিকে শৈবালের বিয়ের কথা শুনে দিয়া বললো,
‘শৈবাল আবার বিয়ে করলো কোন দিন?কই আমরা তো এসব ব্যাপারে কিছুই জানিনা।’
‘আসলে বিয়েটা হঠাৎ করে হয়ে গেছে তাই তোদের জানানোর সুযোগ পাইনি।চল ট্রিট দিবো তোদের।’
‘কিন্তুটা মেয়েটা কে শৈবাল?’

ঐশীর কথা শুনে সে তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো,
‘কোন মেয়ে?’
‘তোর বউ মানে কাকে বিয়ে করেছিস তুই?’
‘আমার কাজিন।মেজোমার মেয়ে তুহা।’
‘কিন্তু আমরা তো ওকে কখনো দেখিনি?
‘দেখবি কোন এক দিন’

বলতে বলতে শৈবালের ফোন বেজে উঠে।স্কিনে তাকিয়ে দেখে “SHE” লেখা।শেবাল অবাক হয়ে যায় তুহার ফোন দেখে।দ্রুত রিসিভ করে হ্যালো বলার আগেই ওইপাশ থেকে হিমেল বললো,
‘বড় ভাইয়া একটু গেটের বাহিরে আসবে?’

বলার পর পরই ফোন কেটে যায়।শৈবাল আরেক দফা অবাক হয় এভাবে কল কেটে যাওয়াতে।তাই বেশি কিছু না ভেবেই দ্রুত গেটের কাছে গিয়ে দেখে তুহা আর হিমেল দাড়িয়ে।ওদেরকে এখানে এভাবে দেখে তার ভ্রু জোড়া নিজ দায়িত্বে কুচকে যায়।ততক্ষনে ওরা পাঁচজনও তার পেছনে এসে দাড়িয়েছে।শৈবালকে দাড়িয়ে পড়তে দেখে হিমেল আর তুহা তার দিকে এগিয়ে আসে।হিমেল শৈবালকে দেখে ১এক গাল হেসে বললো,

‘তোমাকে আপু মিস করছে তাই নিয়ে এসেছি দেখা করাতে।’
হিমেলের কথা শুনে দিয়া এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,
‘এটা তোর বউ শৈবাল?’
হতভম্বতা কাটিয়ে শৈবাল অস্ফুট স্বরে হু বলে।শৈবালের উত্তর শুনে ঐশী কপাল কুচকে তুহার সামনে দাড়িয়ে বললো,
‘তুমি শৈবালের বউ?
ঐশী নামের মেয়েটার কথা শুনে আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।তাই শুধু উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম।মেয়েটা আবার বললো,

‘তুমি জানোনা যে আজ তুমি শৈবালের সাথে দেখা করতে আসবে?আর তার সাথে দেখা করতে আসলে অবশ্যই তার বন্ধুদের সাথে দেখা হবে।এতোটুকু ধারনা নিয়েও বুঝি আমাদের জন্য একটু সাজতে পারলে না?এতো ক্ষ্যাত সেজে দেখা করতে আসে নাকি কেউ?’

ঐশী আপুর কথা শুনে আমার চোখ ছলছল করে উঠে।আমি কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকি।হঠাৎ পুরুষালী শক্ত কন্ঠ শুনে কেপেঁ উঠে তার দিকে তাকাই।ততক্ষনে সে বললো,

নীড়ের খোজে পর্ব ৪

‘ঐশী তোর হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে।বউ টা যেহেতু আমার সেহেতু সে স্পেশালি আমার জন্যই সাজবে।কষ্ট করে কেনো তোদের দেখাতে সাজবে আমার বউ?আমি যেহেতু ক্ষ্যাত সেজে আছি তাই আমার বউ ও আমার সাথে দেখা করতে ক্ষ্যাত সেজেই চলে আসছে।’

নীড়ের খোজে পর্ব ৬