নীড়ের খোজে পর্ব ৬

নীড়ের খোজে পর্ব ৬
জান্নাতুল বিথী

তীব্র অপমানে থমথমে মুখে তাকিয়ে আছে ঐশী।তার প্রত্যাশার বাহিরে ছিলো শৈবালের জবাব।সে ভেবেছিলো শৈবাল হয়তো স্বভাব সুলভ চুপ থাকবে নয়তো তাদের সাপোর্ট করবে।কিন্তু সে যে হঠাৎ করে তার বউকে সা*পোর্ট করবে এটা আমার এবং শৈবালের সব বন্ধুদেরই ভাবনার বাহিরে ছিলো।আমি কি বলবো বুঝতে না পেরে চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।ঐশীকে এভাবে অপমানিত হতে দেখে দিয়া এগিয়ে এসে বললো,

‘শৈবাল তুই এই সামান্য মেয়েটার জন্য ঐশীকে এভাবে অপমান করতে পারিস না।আর ওর হয়ে তুই জবাব দিচ্ছিস কেনো?
কথাটা শুনে শৈবাল ভ্রু কুচকে দিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘আমি কখন ঐশীকে অপমান করলাম?আমিতো জাস্ট তার প্র*শ্নের জবাব টা দিলাম।আর যাকে তুই সা*মান্য মেয়ে বলছিস সে আমার বউ হয়।তাই মুখ সামলে কথা বলবি।সে তোদের কাছে সামান্য হলে আমার কাছে মোটেও সামান্য না।বাকী রইলো ওর হয়ে জবাব দেওয়া।তা হলো আমি যদি এখন কোনো বিপদে পড়ি তাহলে তোরা তিনজনের কেউ এগিয়ে আসবি না।যে আসবে আমার উচিত তার বিপদের সময়ে তার পাশে থাকা।রাইট?’

শৈবালের মুখে “আমার বউ” কথাটা শুনে সারা শরীর জুড়ে শীতল বাতাস বয়ে যায়।আমি কিছুক্ষণ থমকানো সুরে তার দিকে তাকিয়ে থাকি।অন্যদিকে তার কথাটা শুনে ওরা তিনজনই গটগট করে চলে যায়।ওদের এভাবে চলে যেতে দেখে নুহাশ বললো,
‘মাম্মা এক্কেবারে ফাটাইয়া দিছোস।উম্মা*হহহহ।’

তার কথা শুনে শৈবাল চোখ মুখ কু*চকে ওর দিকে তাকাতেই সে অন্য দিকে তাকায়।তানিম তার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘মামা খাবো চল না।এখনি যদি না খাই তাহলে আমার পেটের নাড়িভুড়ি সব বেরিয়ে এসে তোদের সাথে যু*দ্ধ ঘোষনা করবে।’

তার কথাটা শুনে আমি ফিক করে হেসে দেই।এতক্ষনের ক*ষ্ট যেনো এক নিমিষেই উধাও হয়ে যায়।হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে।তাই আমি দ্রুত চোখ তুলে সবার দিকে একবার তাকিয়ে নেই।কই না তো কেউই আমার দিকে তাকিয়ে নেই।তাহলে মনে হলো কেনো?

খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে যে যার মতো আলোচনায় মগ্ন হয়ে পড়ে। এদিকে আসার পর থেকে শৈবাল আমার সাথে একটা কথাও বলেনি।তাই আমি মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছি।একটু পর শৈবাল ওদের উ*দ্দেশ্যে বললো,

‘তোরা হলে চলে যা আমার একটু কাজ আছে।আর আমি আজ বাড়ি যাবো।কালকে বা পরশু চলে আসবো।’
শৈবালের কথাটা শুনে তানিম হালকা ঘাড় চুলকে বললো,
‘মাম্মা সাবধানে চইলো।দে*ইখো আবার পা পিচলে পইড়া যাইবা।তোমার অবস্থা বেগতিক বোঝাই যাচ্ছে।’
কথাটা শুনে শৈবাল তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো,

‘পড়বো?পড়ে যাবো কেনো?আর কোথায় পড়বো?’
তার এতো প্রশ্নে নুহাশ গলা পরিষ্কার করে দুষ্টু হেসে তার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
‘মেয়েটার প্রেমে।’

কথাটা শুনেই শৈবাল হালকা কেশে উঠে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।তার অবস্থা দেখে করে তানিম আর নুহাশ মুখ টিপে হাসে।অতঃপর দুজন শিষ বাজাতে বাজাতে প্রস্থান করে।এদিকে আমি আর হিমেল হা করে তাদের দিকে তাকিয়ে আছি।তারা ফিসফিস করে কি বলছে কিছুই বুঝতেছিনা।তাদের চলে যেতে দেখে হিমেল কিছুটা নড়ে চড়ে উঠে আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,

‘বাঘের খাচায় চলে এসেছি গোও তুহাপু।এখন এখান থেকে কেটে পড়াই উত্তম হবে।নয়তো বাঘের থা*বা থেকে আমি বাচতে পারবোনা।আমি চলে যাচ্ছি আপু।’
বলতে বলতে সেও চলে যায়।আমি এখনো ওর যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।সে কেনো চলে যাচ্ছে তা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে ফোস করে একটা নি*শ্বাস ফেলি।ঘুরতে যাওয়ার নাম করে যে হিমেল আমাকে এখানে নিয়ে আসবে জানতাম না।

আমি জিজ্ঞেস করতেই সে বলেছিলো ভাইয়া তোমাকে দেখতে চাইছে আপু।তাই নিয়ে এসেছি।কিন্তু আমি প্রথম থেকেই নিশ্চিত ছিলাম যে শৈবাল কখনো আমাকে দেখা করানোর জন্য এখানে নিয়ে আসতে বলবে না।তারপরো চুপচাপ ছিলাম।আমাকে দেখে তার চমকে যাওয়ার দৃশ্যটা মিস করতে চাইনি।হঠাৎ মুখের সামনে তুড়ি বাজতেই চমকে উঠি আমি।তার দিকে তাকাইতেই দেখি সে ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।তাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললাম,

‘আচ্ছা আপনার ভ্রু তে কি কোনো সমস্যা আছে?’
আমার অবান্তর প্রশ্ন শুনে যে শৈবাল হতভম্ব হয়ে যায় তা তার মুখ দেখেই বেশ বুঝতে পারছি আমি।আমার করা প্রশ্ন তার বুঝে উঠতে বেশ সময় লাগে।যতক্ষণে বুঝলো তখন বললো,
‘হোয়াট?এটা কোন ধরনের প্রশ্ন?ভ্রুতে কি সমস্যা হবে আমার?’

‘কোনো সমস্যা না থাকলে সারাক্ষণ এতো ভ্রু কুচকে থাকেন কেনো?এভাবে ভ্রু কুচকে থাকতে থাকতে একসময় আপনার ভ্রু আপনার নামে বিদ্রোহ ঘোষনা করবে।’
আমার কথা শুনে শৈবাল কি বলবে বুঝতে না ফেরে ধ*মক দিয়ে বললো,
‘এই মেয়ে আমার সামনে তো খুব ফ*টর ফটর করতে পারো তাহলে কেউ কিছু বললে চুপচাপ হ*জম করো কেনো?তখন তোমার এসব ননসেন্স টাইপের বকবকানি কোথায় থাকে?’

তার কথাটা শুনে আমি হালকা হেসে বলি,
‘আমার পক্ষ থেকে তাদের বলার জন্য তো আপনি আছেনই।যখন আপনি থাকবেন না পাশে তখন না হয় তাদের কথার জবাব দেবো।এখন আপাত আমার কথার ভান্ডার খালি করতে চাইনা।খালি করলে আপনার সামনে ননসেন্স টাইপের বক*বক করবো কিভাবে?’

আমার কথাটা শুনে শৈবাল অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।সে মনে মনে ভাবতে থাকে এ কি সেই তুহা যে প্রয়োজনের সময়ও কথা বলতো না?মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে মেয়েটা কতো পরিবর্তন হয়ে গেলো ভাবতেই সে মনে মনে একটা স্বস্থির শ্বাস ফেলে।সে ভেবেছিলো অসুস্থ পরিবেশে থেকে থেকে মেয়েটা হয়তো মানসিক ভাবেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে।হয়তো অনেক সময় লাগবে তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে।কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি যে আসবে ভাবেনি।একেই হয়তো বলে মায়ের সংস্পর্শে আসলে পাগলও শান্ত হয়ে যায়।সেখানে তুহা তো একজন সুস্থ মানুষ।

আমাকে নিয়ে শৈবাল একটা স্বর্ণ কারের দোকানে আসে।দোকানে এসে সে দোকানি কে বললো,
‘দাদা ছোট পাথরের নাকফুল বের করেন।’
দোকানি কতোগুলো নাকফুল বের করে তার সামনে রেখে আমাকে ইশারা করে বললো,
‘ভাই ভাবীর জন্য?’

উত্তরে শৈবাল শুধু উপর নিচ মাথা নেড়ে হ্যা বলে।দোকানি তখন তার হাতে একটা ছোট নাকফুল দিয়ে বললো,
‘আপনি চাইলে এটা নিতে পারেন।ভাবীকে বেশ মানাবে এটায়।’
শৈবাল নাকফুল টা তার হাত থেকে নিয়ে রাখতে রাখতে বললো,
‘না দাদা এটা সুন্দর না।’

নীড়ের খোজে পর্ব ৫

অথচ এক পাথরের নিখুত ডিজাইনের নাকফুল টা আমার অনেক পছন্দ হইছে।কিন্তু সাহস করে বলতে পারিনি তাকে।সে আরেকটা নাকফুল হাতে নিয়ে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে আগের নাকফুল টা খুলে যত্ন সহকারে হাতের টা পরিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে বললো,
‘নাউ পারফেক্ট।’

নীড়ের খোজে পর্ব ৭