নীড়ের খোজে পর্ব ৭

নীড়ের খোজে পর্ব ৭
জান্নাতুল বিথী

শৈবালের এক একটা পরিবর্তনে আমি অবাক হয়ে যাই।সে আমাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে আমার সব প্রয়োজন মুখ ফুটে বলার আগেই সে বুঝে যায়।মানুষটা কি সারাজীবন এমন থাকবে নাকি তার মোহ কেটে যাওয়ার পর সে সব ভুলে যাবে সব কিছু।স্বর্ণ*কারের দোকান থেকে বের হওয়ার পর থেকে আমি অন্যমনস্ক হয়ে এসবই ভেবে চলেছি।বাড়িতে আসার পরও আমাকে অন্যমনস্ক দেখে আম্মু বললো,

‘কি হয়েছে তোর তুহা?এমন লাগছে কেনো তোকে?কাল রেজাল্ট দিবে বলে চিন্তত মামনি?’
আম্মুর কথা শুনে আমি চোখ পিট*পিট করে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘কাল আমার রেজাল্ট দিবে?’
উত্তরে আম্মু কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো,
‘বাহ্ বিয়ের খুশিতে রেজাল্টের কথাই ভুলে গেছেন ম্যাম?’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কথাটা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে পেছনে তাকিয়ে দেখি দেয়ালে হেলান দিয়ে বুকে দুহাত গু*জে শৈবাল দাড়িয়ে আছে!আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে ভ্রু নাচিয়ে কি জি*জ্ঞেস করে!আমি তার কথার উত্তর না দিয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘আম্মু সত্যি কালকে আমার রেজাল্ট দিবে?’
কথাটা শুনে আম্মু মলিন মুখে মাথা উপর নিচ নামিয়ে হ্যা বলে বললো,

‘টেনশনের কিছু নেই।তুই যেমন পরীক্ষা দিয়েছিস রেজাল্টও তেমন হবে।আর তোর উপর আমার পুরো বিশ্বাস আছে।তোর রেজাল্ট খারাপ হতেই পারেনা।’
আম্মুর এতো আত্মবিশ্বাস দেখে আমি মনে মনে একটা ফাকা ঢোক গিলে নেই!কি করবো বুঝতে পারছি না!
‘কিছু খাবে তুমি শৈবাল?’

‘না মেজোমা তুমি যাও আমার কিছু লাগবে না।’
‘আচ্ছা লাগলে কিন্তু তুহাকে বলবে।’
কথাটা বলতে বলতে আম্মু চলে যায়।আমি এখনো আগের জায়গাতেই থম মেরে দাড়িয়ে আছি।একটু পর শৈবাল আমার কাছাকাছি এসে বললো,
‘এক মগ কফি বানিয়ে দেও।’
কথাটা শুনে আমি তার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বললাম,

‘একটু আগেই তো আম্মু আপনাকে কিছু খাবেন কিনা জিজ্ঞেস করেছে!তখন বলেননি কেনো?’
‘বউ থাকতে আমি শ্বাশুড়ি কে দিয়ে কষ্ট করাবো কেনো?’
তার কথা শুনে কি বলবো ভেবে পাইনা।ইচ্ছে করছে গলা টিপে ধরে রাখি কিছু*ক্ষণ।অতঃপর তাকে মনে মনে বকা দিতে দিতে কিচেনে গিয়ে দাড়াতেই পেছন পেছন শৈবালও আসে।তাকে আমার সাথে আসতে দেখে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘কি হচ্ছে কি এসব?আমার পেছন পেছন আসেন কেনো?’

সে ফ্রিজ খুলে একটা আপেল বের করে ধুতে ধুতে বললো,
‘আমার বাপের বাড়ি আমি যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাবো তাতে তোমার কি?ফ*টর ফটর না করে কাজে মন দাও।’
কিছু না বলে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে জোরে একটা নিশ্বাস ফেলে কাজে মন দেই আমি।দুই মিনিটের মাঝেই হঠাৎ কেউ একজন চেঁচিয়ে বললো,

‘বিয়ে হয়েছে এখনো কুড়ি দিনও হয়নি আর তুই এখনি বউয়ের আঁচলে আঁচলে ঘুরছিস শৈবাল?’
কথাটা শুনে আমি পিলে চমকে উঠে, দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি ৩৪ কিংবা ৩৫ হবে বয়স এমন একজন মহিলা দাড়িয়ে!দেখে যথেষ্ট স্মার্ট মনে হচ্ছে তাকে!সে নাক মুখ কুচকে এদিকেই তাকিয়ে আছে।তাকে এগিয়ে আসতে দেখে শৈবাল কিচেন থেকে বের হয়ে তার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,

‘কি হইছে ছোটমা চেচাচ্ছ কেনো?’
তার কথাটা শুনে উনি তেলে বেগুনে জ্ব*লে উঠে বললো,
‘কি বললি তুই?আমি চে*চাচ্ছি?আজ কাল ভালো কথা বললে তোদের কাছে চেচা*মেছি লাগে?’
অতঃপর একটু থেমে আবার বললো,

‘কি হলো কি জিজ্ঞেস করেছি আমি?বউয়ের আঁচলে আঁচলে ঘুর*ছিস কেনো তুই?’
‘বউয়ের আঁ*চল ধরে ঘুরলে শরীরের এনার্জি বাড়ে ছোটমা।তুমি যেহেতু মেয়ে সেহেতু তুমি এই এক্স*ট্রা এনার্জির মানে বুঝবে না।তাছাড়া শুনলাম বউয়ের আঁচল ধরে হাটলে নাকি পুরুষ মানুষ সু*ন্দর হয়ে যায়।তাই আমিও একটু সুন্দর হওয়ার চেষ্টা করছি।তুমি দেখো না ছোট চাচ্চু দিন দিন কতো সুন্দর হয়ে যাচ্ছে?’

‘কি বললি তুই?তোর চাচ্চু সুন্দর হয়ে যাচ্ছে?’
প্রশ্ন শুনে শৈবাল প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে আয়েশ করে বললো,
‘হুমমম’
‘কিন্তু আমি তো এতোদিন বাড়ি ছিলাম না তাহলে সে কার আঁচল ধরে হেটে হেটে সু*ন্দর হচ্ছে?আবার আরেকটা বিয়ে করেনি তো তোর চাচ্চু?দাড়া দেখাচ্ছি মজা।’

কথাটা বলতে বলতে উনি চলে যায় উপরে।এতক্ষনের শৈবালের সব কথা মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিলো আমির।লোকটা কি পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি?কি আবল তাবল বকছে?আমার ভাবনার মাঝেই সে এসে আমার হাত থেকে কফির মগ নিয়ে গান গা*ইতে গাইতে উপরে চলে যায়।এদিকে আমি শুধু অবাকের উপর অবাক হচ্ছি।

যথারীতি সকাল সাড়ে ১১ টা বাজে।পুরো রুম জুড়ে পায়*চারী করছি আমি।কোনো কিছুতেই শান্তি পাচ্ছি না।টেন*শনে মাথার রগ গুলো টন*টন করে উঠে।আর আধ ঘন্টা পরেই রেজাল্ট পাবলিস্ট হবে ভাবলেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়।শরীরের তা*পমাত্রা ও বৃ*দ্ধি পাচ্ছে।একটু পর পরই শ্বাশুড়ি মা নয়তো আম্মু দরজায় টোকা দিয়ে খেতে ডাকে।সকাল থেকে এখনো অব্দি নাস্তাটাও করিনি।গলা দিয়ে সামান্য পানিই নামতে চাইছে না।আবার দরজায় নক করতেই বিরক্তি মুখে বলে উঠি,
‘আম্মু আমি খাবো না বললাম না।ভালো লাগছে না আমার।’

কথাটা বলার পরও ওইপাশ থেকে কোনো উত্তর আসেনা,দেখে আমি নিশ্চিত হয়ে খাটে বসতে যেতেই ওইপাশ থেকে নরম কন্ঠে আমার নাম ধরে ডাকে!কন্ঠটা আমার খুব চেনা!এই মানুষটার ডাক কখনো আমি অগ্রাহ্য করতে পারিনা!তাই গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই দেখি আব্বু দাড়িয়ে আছে।আমাকে দরজা খুলতে দেখে সে বিশ্ব জয় করার মতো একটা হাসি দিয়ে বললো,

‘এই তো আমার আম্মাজান দরজা খুলেছে!আসেন আম্মাজান আপনার জন্য খাবারেরা অপেক্ষা করে আছে।’
কতো সুন্দর করে কথা বলেন উনি।শুনলেই মনে একটা প্র*শান্তির বাতাস বয়ে যায়।আমি তার কথা শুনে মুচকি হেসে বাহিরে বের হই।সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে দেখি শৈবাল একটা সিঙ্গেল সোফায় বসে আছে,তার কোলে ল্যাপটপ।তার ঠিক পেছনেই হিমেল দাড়িয়ে।তার হাতে একটা কাগজ উঁকি দিচ্ছে,ভালো করে তাকিয়ে দেখি সেটা আমার এডমিট কার্ড।তার ঠিক বিপরীত পাশেই সোফায় সৈকত ভাই,বড় বাবা,আর ছোট বাবা বসে আছেন।এদের এতো আয়োজন করে আমার রেজাল্ট দেখতে বসতে দেখে আমার গলা শুকিয়ে আসে।আমাকে নামতে দেখেই ছোটমা বললো,

‘এতো ন্যা*কামি করছো কেনো মেয়ে?মনে হচ্ছে সারা বাংলাদেশে এক*মাত্র তোমারই রেজাল্ট দিচ্ছে?’
তার কথাটা শুনে শ্বাশুড়ি মা রান্নাঘর থেকে ধ*মকে উঠে তাকে,যার ফলে সে চুপ হয়ে যায়।আম্মু এসে আমাকে টেনে নিয়ে গিয়ে চেয়ারে বসিয়ে পরোটা ছিড়তে ছিড়তে বললো,
‘এতো টেনশন করছিস কেনো?দেখবি যা হবে ভালোই হবে।’

আম্মুর কথা শুনে বির*বির করে বলি আমার কেমন লাগছে তা তোমাকে বুঝাতে পারলে তো ভালোই হতো।এর মাঝেই হঠাৎ হিমেল আমার এডমিট টাকে দিয়ে প্যাচিয়ে মাইক সি*স্টেম করে বললো,
‘গাইস তুহাপুর রেজাল্ট প্রকাশ হয়েছে।তবে আন*ফরচুনেটলি সে এ+ পায়নি।’
কথাটা শুনেও আমার মাঝে কোনো হেল*দোল হয় না।কারন আমি যে পরিস্থিতি তে পরীক্ষা দিয়েছি তাতে এ+ পাওয়া জীবনেও সম্ভব না।একটু পর শ্বশুড় মশাই শৈবালকে বললো,

নীড়ের খোজে পর্ব ৬

‘কিরে রেজাল্ট প্রকাশ হইছে?কি পাইছে তুহা?পয়েন্ট কতো?’
শৈবাল ল্যাপটপ বন্ধ করতে করতে উঠে দাড়ি বললো,
‘এ পাইছে আপনাদের বৌমা।পয়েন্ট হলো ৪.৮৩।
কথাটা বলতে বলতে সে উপরে উঠে যায়।আমি তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছি।সে কি রাগ করলো?

নীড়ের খোজে পর্ব ৮