নীড়ের খোজে পর্ব ৮

নীড়ের খোজে পর্ব ৮
জান্নাতুল বিথী

এ গ্রেড পাওয়ার খুশিতে আব্বু মিষ্টি কিনতে গেছে।বড় বাবা বাজার করতে গেছে,আজ নাকি বাড়িতে আমার পছন্দের সব রান্না হবে।বড় মা,আম্মু সবাই দুপুরের রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে।হিমেল তার বন্ধুদের ট্রিট দিতে গেলো।সবার এতো এতো আয়োজনেও আমার মনে হচ্ছে কোথাও একটা শূন্যতা রয়ে গেছে।সেই শূন্যতা টা হলো শৈবাল,সে সেই যে নিজের রুমে ঢুকেছে এখনো অব্দি তার বের হওয়ার নাম গন্ধও নাই।এক সময় তার কাছে যাওয়ার লোভ সামলাতে না পেরে সোফা থেকে উঠে দাড়িয়ে আম্মুকে বললাম,

‘আম্মু আমি একটু রুমে যাচ্ছি’
কথাটা বলে তার উত্তরের অপেক্ষা না করেই আমি উপরে চলে আসি।ধুরু*ধুরু করে বুক কাঁপছে আমার।কি হয়েছে তার?সে কি রাগ করলো?কিন্তু এক্ষেত্রে তার রা*গ করাটা যে বেমানান।সে কি একটুও আন্দাজ করেনি যে,কোন পরিস্থিতি তে আমি পরীক্ষা দিয়েছি?তার তো উচিত ছিলো এখন আমাকে শান্তনা দেওয়া বা এই সময়টাতে আমার পাশে থাকা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তাহলে সে নিজের রুমে কি করছে?ভাবতে ভাবতেই দরজায় নক করে হালকা উঁকি দেই রুমের ভেতরে।শৈবাল খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে!তার চোখ আমার দিকেই।আমাকে দেখে চোখ দিয়ে ইশারা করে ভেতরে আসতে বললো।আমিও ভদ্র মেয়ের মতো ভেতরে ঢুকে তার সামনে গিয়ে দাড়াতেই সে ঠোটের উপর আঙ্গুল দিয়ে আমাকে কথা বলতে নি*ষেধ করে চুপচাপ বসতে বললো।

তার আচরনে একের পর এক অবাক হয়ে যাচ্ছি আমি।আমি একটু ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম তার কোলের উপর ল্যাপটপ,আর সে বসে বসে ক্লাস করছে।বাড়িতে বসে ভার্সিটির ক্লাস করছে বাহ দারুন ব্যাপার তো।প্রায় দশ মিনিট পর সে ক্লাস শেষ করে ল্যাপটপ অফ করে পাশে রাখতেই আমি বললাম,

‘আপনি কি আমার উপর রে*গে আছেন?’
শুনে শৈবাল ভ্রু নাচিয়ে বললো,
‘রা*গ করবো কেনো?’
‘রেজাল্টের জন্য।’
‘কেনো রেজাল্টের কি হইছে?’

তার প্রশ্ন শুনে আমি হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।সে কি বলছে এসব?এমন ভ্রু*ক্ষেপ হীন ভাবে কথা বলছে কেনো?আমাকে হা করে তাকাতে দেখে সে দুই হাত দিয়ে আমার গালে মৃদু থা*প্পড় দিয়ে বললো,
‘কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি?’
‘আপনি আমাকে মা*রলেন কেনো?’

‘যাহ বাবা কখন মার*লাম?তাছাড়া আমার হাতে যদি তুমি স্যতিই মা*ইর খাও তাহলে এতক্ষনে হাসপাতালে থাকতে।বুঝলে?এবার বলো আমাকে মিস করতেছিলে কেনো?’
‘মিস কেনো করবো?তখন আপনি রাগ করে আপনার রুমে চলে আসলেন তাই জিজ্ঞেস করতে এসেছি কতোটুকু রাগ করছেন?কতো পার্সেন্ট রা*গ করছেন।’

আমার কথা শুনে শৈবাল ফি*ক করে হেসে দেয়ে।হাসতে হাসতে বললো,
‘আরে পাগলি আমি তোমার উপর রা*গ করতে যাবো কেনো?আমার ক্লাস ছিলো তাই চলে এসেছি!’
‘তার মানে আপনি রাগ করেন নি?আর এখানে বসে ক্লাস করছেন কিভাবে?’

‘নুহাশ ভিডিও কলে ছিলো।পেছনের ক্যামেরা দিয়ে স্যারের দিকে ফোকাস করছে,ক্লাস টা খুব ইমপটেন্ট ছিলো তাই এভাবেই করতে হলো।আর তোমার রেজাল্ট যথেষ্ট ভালো হয়েছে বলে আমি মনে করি।অমন একটা অসুস্থ পরিবেসে মানুষ বেচে থাকতেই পারেনা সেখানে তুমি তো তোমার পড়া লেখাও বাদ দাওনি।কতো স্ট্রাগল করতে হইছে তা একটু হলেও অনু*ভব করতে পারি আমি।তাই রাগ করিনি।আর তাছাড়া রাগ করবোই বা কেনো?

আজ যদি তুমি স্বাভাবিক একটা পরিবেশে পরীক্ষা দিতে,ঠিক মতো পড়া লেখা করতে,আমি যদি তোমার পড়া-লেখার দায়িত্ব নিতাম তাহলে রেজাল্ট খা*রাপ হলে রাগ করতাম।কিন্তু এসব কিছুই যখন হয়নি তাহলে আমি রা*গ করবো কেনো পাগল মেয়ে?’
তার কথা গুলো শুনে যেমন ভালো লাগা কাজ করে তেমনি বুকের উপর থেকে একটা ভা*রী বোঝা নেমে যায়।আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি তার দিকে।আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে নিচের ঠোট কা*মড়ে ধরে মুচকি হেসে বললো,

‘এভাবে তাকিয়ো না মেয়ে!প্রেমে পড়ে যাবে!’
তার কথাটা শুনে মুচকি হেসে মনে মনে বললাম,
‘আমি আপনার প্রেমেই পড়তে চাই।এক বার নয় দু বার নয় হাজার কোটি বার পড়তে চাই।এক ঘন্টায় নয় দু ঘন্টায় নয় প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে আপনার প্রেমে পড়তে চাই।’
কিন্তু মুখ ফু*টে বললাম,

‘আপনার প্রেমে পড়া আর মহা সাগরে ডুব দেওয়া সমান।আমি ভাই এতো রিস্কি কাজ করতে চাই না।’
‘ওকে আমি বরং সেই দিনের অপেক্ষায় থাকি যেদিন তুমি মুখ ফুটে বলবে আমি একটা ভুল করেছি শৈবাল!ভুল করে মহা সাগরে ডুব দিয়েছি।এখন আমি বাচবো কিভাবে?সেদিন কিন্তু বাচাতে আমাকেই সাগরে ডুব দিতে হবে।’

শেষের কথাটা শৈবাল আমার দিকে অনেকটা ঝুকে বললো।হঠাৎ তার এমন কথায় আর কাজে আমি হ*কচকিয়ে কিছুটা পিছিয়ে যাই।চোখ পিটপিট করে তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকি।তার বড় চুল গুলো চশমার উপর হেলে পড়ছে।হঠাৎ আমার মনে একটা সুপ্ত ইচ্ছে জাগলো।তার চুল গুলো কপাল থেকে সরিয়ে দিতে।কিন্তু অতোটুকু সাহস আমার এখনো হয়নি।তাই আরেকটু পিছিয়ে গিয়ে বললাম,

‘এতো কাছে আসবেন না প্লিজ বুকের ভেতর ঢোল বাজে!’
কথাটা শুনে শৈবাল কানে কানে ফিসফিস করে বললো,
‘আরেকটু জোরে পিটাতে বলবো ঢোল?’
‘আপনি দিন দিন কেমন জানি পা*গল পা*গল হয়ে যাচ্ছে।’

নীড়ের খোজে পর্ব ৭

কথাটা বলতে বলতে আমি সরে এসে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যাই।তুহার যাওয়ার পথে তাকিয়ে শৈবাল বললো,
‘সে তো আমি আরো দু’বছর আগেই পা*গল হয়েছিলাম।ওইসময় অপ্রকাশিত ছিলো।এখন তোমার কাছে প্রকাশিত হলো।’

নীড়ের খোজে পর্ব ৯