শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ২১

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ২১
তাসনিম জাহান রিয়া

আপনি? আপনি কেনো আমাকে ফোন দিচ্ছেন?
তোমাকে চুমু দেওয়ার জন্য।
কথাটা বলেই ফুয়াদ ফোন রেখে দেয়। নিতু ফোন কানে নিয়ে থম মেরে বসে আছে। ফুয়াদের কথাটা বোধগম্য হতে তার কিয়ৎক্ষণ লাগে। বিড়বিড় করে বলে,

অশ্লীলত, অশ্লীল।
মাথা মৃদু নাড়াতে নাড়াতে আবার পড়ায় মনোযোগ দেয়।
তুই তো ফুয়াদ ভাইয়াকে পছন্দ করিস। তাহলে ইগনোর কেনো করছিস?
নিতু প্রিয়ন্তির কথার জবাব দিলো না বরং গুনগুন করে গাইলো,
সখী তোরা প্রেম করিও না,
পিরিত ভালা না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সখী তোরা প্রেম করিও না।
পিরিত করছে যে জন,
জানে সে জন
পিরিতের কি বেদনা।

গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে আবার পড়া শুরু করে দেয় নিতু। প্রিয়ন্তিও আর নিতুর কাছ থেকে উত্তরের অপেক্ষা থাকে না। সে জানে নিতু এখন আর কিছু বলবে না। প্রিয়ন্তি যদি বলে,
নিতু তুই যদি এখন আমার প্রশ্নের উত্তর না দিস, তবে আমি মারা যাব। নিতুর উত্তর হবে, তাহলে তুই মরে যা।
প্রিয়ন্তি জানে তার বাস কিছু ঘাড় ত্যাড়া মানুষের সাথে। যারা একবার না বললে, সেই ‘না’ টাকে হ্যাঁ করা আর আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া এক কথা।
প্রিয়ন্তি এলোমেলো চুলগুলো হাত খোপা করে ফ্রেশ হতে যায়।

আমার বন্ধুর মন ভালা না,
শুধু চেহেরাটাই ভালা।
চেহেরা দেইখা পিরিত করলে তো এমনই হবে।
গানের মাঝখানে কথা বলায় মিহান বিরক্ত হয়। বিরক্তির সুরে বলে,
নিতু তুই দিন দিন বিরক্তিকর হয়ে যাচ্ছিস। গানের মাঝখানে কথা বলিস কেনো? আমার মনসংযোগ নষ্ট হলো।
নিতু মিহানের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটে। তন্ময় অবাক হওয়ার ভান করে বলে,

মানুষ ডুবে ডুবে জল কীভাবে খায়? আমি প্রেম করার আগেই শহরের অলিতে গলিতে নিউজ হয়ে গেছে। তন্ময় প্রেম করে।
মুহিব তন্ময়ের কাধে হাত রেখে বলে,
ভাই জীবনে অনেক ছ্যাঁকা খাইছি। মানুষের ফেইস দেখে ক্যারেক্টার বিচার করতে গিয়ে।
একটা কথা আছে না।
Don’t judge a book by it’s cover.

যাদের দেখে ভাবতাম প্রেম করে না। তারাই ডুবে ডুবে জল খায়। যাদের দেখে ভাবতাম প্রেম করতে করতে মারা যাচ্ছে। তারাই আজন্মা সিঙ্গেল।
বিশ্বাস কর ভাই প্রিয়ন্তির জায়গায় যদি ইভা হতো তবুও আমি বিশ্বাস করতাম ইভা প্রেম করে। কিন্তু প্রিয়ন্তি প্রেম করে এটা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। এটা শোনার আগে আমার এক গ্লাসে পানিতে ডুবে মরে যাওয়া উচিত ছিল।
ইভা ধুম করে মিহানের পিঠে কিল বসিয়ে দেয়। মিহানকে চোখ পাকিয়ে বলে,

তুই সব জায়গায় আমার নাম নিয়ে টানাটানি করিস কেনো? আমি প্রেম বিরোধী, প্রিয়ন্তি তো না। প্রিয়ন্তি অলটাইম প্রেমের পক্ষে কথা বলে। তাই প্রিয়ন্তি প্রেম করতেই পারে। আমি ভাবছি প্রিয়ন্তির প্রফেসার বাপ জানলে কী হবে?
মিহান শ্রেয়সী এক গোছা চুল টেনে ধরে। শ্রেয়সী ব্যথায় ‘আহ’ করে ওঠে।
মোবাইলের ভিতর ঢুকে যা। আজকাল আমাদের তুই পাত্তাই দিস না। অনুপম ভাইয়াকে পেয়ে আমাদের ভুলেই গেছিস। সারাদিন তো কথা বলিস। এখন একটু আমাদের সময় দে।

শ্রেয়সী মিহানের কথায় জবাব দেয় না। বরং ফোনের দিকে আরও বেশি মনোযোগী হয়। কিয়ৎক্ষণ পর শ্রেয়সী আনন্দ সহিত চিৎকার করে ওঠে। শ্রেয়সীর চিৎকার শুনে অনেকে উৎসুক দৃষ্টিতে শ্রেয়সীর দিকে তাকাচ্ছে।
গাইস ফাইনালি আমার স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। কিছুদিনের মাঝে বড় একটা ডান্স কম্পিটিশনের আয়োজন হতে চলেছে। আমার আবেদন কনফার্ম হয়ে গেছে। ফাইনালি আমি সুযোগ পেলাম এতো বড় নাচের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার।
শ্রেয়সীর খবরটা সবার কর্ণগোচর হতেই সবাই একসাথে চিৎকার করে ওঠে। উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে সবাই তাকিয়ে আছে প্রাণোচ্ছল বন্ধুদের দিকে। সবাই শ্রেয়সীকে কংগ্রেস জানায়।

আমি এখন বাসায় যাচ্ছি। আম্মুকে সরাসরি না বললে আমার শান্তি হবে না। আমার নাচের ব্যাপারে সব থেকে বেশি উৎসাহ আম্মুর ছিল। আম্মুর রিয়েকশনটা সামনে থেকে দেখতে চাই। বাই গাইস। বিকেলে দেখা হবে।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ছুটতে ছুটতে চলে যায় শ্রেয়সী।
মুহিব তুই বাড়িতে কবে যাচ্ছিস?
মুহিব স্লান স্বরে বলে,

গত সপ্তাহে যাব দেখি। অনেকদিন যাওয়া হয় না। গতকাল ছোট আপার প্রাইমারি স্কুলে চাকরি হয়েছে। আম্মা সেজন্য বার বার যেতে বলছে। আম্মা দ্রুত ছোট আপার বিয়ে দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু ছোট আপা বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না। জানি ছোট আপা আমাদের কথা চিন্তা করেই বিয়ে করতে চাইছেন না। ছোট আপার সামনে গেলে নিজেকে কেমন স্বার্থপর মনে হয়।

শ্রেয়সী বিকালে ইভাদের বাসায় যাওয়ার জন্য বের হতেই অনুপমের সাথে দেখা হয়ে যায়। শুধু অনুপম বললে ভুল হবে রূপম আর রূপার সাথেও দেখা হয়ে যায়। রূপা শ্রেয়সীকে এক পলক দেখে বলে,
তুমি কোথাও যাচ্ছো?
হ্যাঁ একটু ইভাদের বাসায় যাব ভাবি। ইভার আব্বু আজকে ইউরোপ থেকে আসছে। তোমরা কোথায় যাচ্ছো?
আমরা একটু হসপিটালে যাচ্ছি। আমার আজকে ডক্টর দেখানোর ডেইট আর অনুপম ইনজেকশন দিতে যাচ্ছে। রূপম যাচ্ছে আমাদের বডিগার্ড হিসেবে।

রূপা কথাটা শেষ করেই হেসে ওঠে।
আমি একা বডিগার্ড হবো কেনো? সাথে আরেকটা বডিগার্ড নিয়ে নেই? কী শ্রেয়সী এই অধমের সাথে বডিগার্ডের চাকরিতে যোগদান করবে?
শ্রেয়সী একটু ভেবে বলে,
যোগদান করাই যায়।
অনুপম মৃদু স্বরে বলে,

তুমি না ইভাদের বাসায় যাচ্ছো দেরি হয়ে যাবে না?
আমার হাতে এখনো ঘন্টা দুয়েক সময় বাকি আছে। আমি ইভাদের বাসায় যাওয়ার আগে একটু লাইব্রেরি যেতাম। লাইব্রেরি বরং অন্যদিন যাব। আজকে বডিগার্ডের দায়িত্ব পালন করি।
তাহলে চলো সবাই।

হসপিটালে এসে বাধে আরেক বিপত্তি। অনুপম কিছুতেই নার্সের হাতে ইনজেকশন দিবে না। দিবে না মানে দিবেই না। এই তো ঘন্টা খানিক হলো তারা হসপিটালে এসেছে। রূপার চেকআপ করানোর পর অনুপমকে ইনজেকশন দেওয়ার জন্য নিয়ে আসা হয়। নার্স যখন ইনজেকশন পুশ করতে আসবে ঠিক তখনি অনুপম গম্ভীর স্বরে বলে ওঠে,
ডোন্ট টাচ মি।

হুট করে এভাবে বলায় নার্সটা ভয় পেয়ে যায়। অনুপমের কথায় রূপা আর রুপম চমকায় না বরং অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
কী হয়েছে?
এই মহিলা কেনো আমাকে ইনজেকশন দিবে?
রূপা আর রূপম হেসে দেয়। শ্রেয়সী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে বলে,
উনি ইনজেকশন দিবেন না কেনো?
অনুপম বিরক্তি স্বরে বলে,

‘কেনো’ এই ওয়ার্ড তুমি বলো কীভাবে? তোমার সামনে তোমার বয়ফ্রেন্ডকে অন্য একটা মেয়ে ছুঁতে আসছে আর তুমি ‘হা’ করে দাঁড়িয়ে আছো। নিজে বাঁধা দিচ্ছো না আবার আমি বাঁধা দিচ্ছি বলে প্রশ্ন করছো?
শ্রেয়সী অবাক হয়ে বলে,
উনি তো যাস্ট আপনাকে ইনজেকশন দিতে আসছে।

অনুপম যে শ্রেয়সীর কথায় বিরক্ত হচ্ছে সেটা অনুপমের দৃষ্টি দেখেই বুঝা যাচ্ছে। নার্সটা ইনজেকশন দেওয়ার জন্য আবার এগিয়ে আসতে নিলে অনুপম এবার হালকা ধমক দিয়ে ওঠে,
আপনাকে আমি নিষেধ করলাম না ইনজেকশন দিতে? তবুও ইনজেকশন দিতে আসছেন? আপনি আমাকে ইনজেকশন দিবেন না।

অনুপম, রুপম তোরা এখানে?
সাদা এপ্রোন গায়ে রূপমদের বয়সি একটা ছেলে এদিকেই আসছে। ছেলেটাকে দেখেই রূপম জড়িয়ে ধরে। অনুপম আর রূপম দুজনেই কুশল বিনিময় করে। রূপাও ছেলেটার সাথে হ্যান্ডশেক করে।

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ২০

তাদের কথা-বার্তা শুনে বুঝতে বেগ পেতে হলো না তারা একে অপরের পরিচিত। শুধু পরিচিত নয় খুব ভালো বন্ধু। স্কুল লাইফ আর কলেজ লাইফ একসাথেই কাটিয়েছে। তারপর সবাই নিজ নিজ স্বপ্ন পূরণের জন্য ভিন্ন পথে চলে গেছে।

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ২২