শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ২০

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ২০
তাসনিম জাহান রিয়া

নিস্তব্ধ রাতকে ফালাফালা করে দিয়ে শ্রেয়সীর ফোনটা বেজে ওঠে। ফোনের শব্দে তড়াক করে লাফিয়ে ওঠে শ্রেয়সী। ফোনের স্কিনে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব নামটা ঝলঝল করছে। শ্রেয়সী ফোনটা মিউট করে শ্রেয়া বেগমের দিকে তাকায়। শ্রেয়া বেগম শ্রেয়সীর সাথেই ঘুমান। আজকাল মেয়েকে নিয়ে বেশ চিন্তিত থাকেন তিনি। মেয়ের হুটহাট প্রেসার লো হয়ে জ্ঞান হারানো নিয়ে উনার যত ভয়। শ্রেয়সী শ্রেয়া বেগমের থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে ফোনটা রিসিভ করে। ফিসফিস করে বলে,

এতো রাতে ফোন দিচ্ছেন কেনো? আপনি তো জানেন আম্মু এখন আমার সাথে ঘুমান। তাই আপনার সাথে কথা বলা সম্ভব না।
অনুপম শ্রেয়সীর কথার কোনো জবাব দেয় না। বরং গম্ভীর স্বরে বলে,
ছাদে এসো।
আপনি পাগল হয়ে গেছেন? এতো রাতে আমি ছাদে যাব কেনো?
আমি আসতে বলেছি তাই আসবা। যদি না আসো তাহলে আমি তোমার বাসায় আসছি।
অনুপমের কথা শুনে আতকে ওঠে শ্রেয়সী। আহাজারি করে বলে ওঠে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অসম্ভব আমি এতো রাতে ছাদে যাব না। আমি নিশ্চিত আপনার মাথার তার দুই একটা ছিঁড়ে গেছে। আমি এখন ছাদে যাব না। আপনি বরং আপনার বাসার ছাদে ওঠে দাঁড়িয়ে থাকুন।

আমি ছাদেই দাঁড়িয়ে আছি আমার না বরং তোমার বাসার ছাদে। দশ মিনিটের মাঝে তুমি যদি ছাদে না আসো আমি তোমার ভাইয়াকে ফোন দিব। তোমার ভাইয়ার নাম্বার কিন্তু আমার কাছে আছে। তোমার ভাইয়াকে ফোন দিয়ে বলবো, আপনার বোন আমাকে এক ভয়ঙ্কর প্রেম রোগে আক্রান্ত করে দিয়েছে। কিন্তু এখন সেই রোগের ঔষধ না দিয়ে রুমে ফোঁস ফোঁস করে ঘুমাচ্ছে।

আপনার কী হয়েছে বলুন তো? এমন অদ্ভুত আচারণ করছেন কেনো?
আজকে অদ্ভুত আচারণ করার দিবস। তাই অদ্ভুত আচারণ করছি। তুমি আসবা?
আসছি।

শ্রেয়সী উড়না গায়ে জড়াতেই শ্রেয়া বেগম নড়েচড়ে ওঠে। শ্রেয়সী সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। শ্রেয়া বেগম আবার গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হতেই শ্রেয়সী আস্তে করে দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। খুব সাবধানে পা ফেলে ছাদে ওঠে। ছাদে ওঠেই বুক ধড়ফড় করে ওঠে শ্রেয়সীর। গোটা ছাদ অন্ধকারে নিমজ্জিত। অনুপম তখনো লাইনেই ছিল।
শ্রেয়সী ভয়ে ভয়ে জিঙ্গেস করে,

আপনি কোথায়? আপনাকে দেখতে পাচ্ছি না তো।
আমি তোমাকে দশ মিনিটের মাঝে আসতে বলেছিলাম। তুমি চৌদ্দ মিনিট পর আসছো। তাই আমি ছাদ থেকে চলে আসছি।
আপনি আমার সাথে ফাজলামো করছেন তাই না?
আমি তোমার সাথে ফাজলামো কেনো করবো? আমার কথা শুনে তোমার মনে হচ্ছে আমি ফাজলামো করছি?
দেখুন আমার ভয় করছে। প্লিজ আপনি আসুন।

ঐপাশ থেকে আর কোনো উত্তর আসে না। ভয়ে শ্রেয়সীর গলা শুকিয়ে আসছে। ধপ করে একটা আওয়াজ হয়। শ্রেয়সীর হাত থেকে ছিটকে ফোনটা পড়ে যায়। শ্রেয়সী ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। এর মাঝে শ্রেয়সীকে একটা হাত আঁকড়ে ধরে। শ্রেয়সী ভয়ে চিৎকার করে ওঠে। অনুপম দ্রুত শ্রেয়সীর মুখ চেপে ধরে ফিসফিস করে বলে,
এই শ্রেয়সী এটা আমি। অনুপম।

শ্রেয়সী নিজের শরীরের ভর সবটুকু অনুপমের ওপর ছেড়ে দেয়। অনুপম দুই হাতে শ্রেয়সীকে আগলে নেয়। ভয়ে শ্রেয়সীর শরীর এখনো কাঁপছে। নিভু নিভু চোখে অনুপমের দিকে তাকায়।
এই শ্রেয়সী আমার দিকে তাকাও। দেখো এটা আমি। তোমার ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব। ভয় পাচ্ছো কেনো?
অনুপম শক্ত করে শ্রেয়সীকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। চুলের ভাজে আলতো করে হাত বুলিয়ে দেয়।
এখনো ভয় করছে?

আপনি এমন করলেন কেনো? আপনি তো জানতেন আমি রাতে ছাদে একা আসতে ভয় পাই আর উত্তেজিত হলে আমার প্রেসার লো হয়ে যায়।
সরি। আমি বুঝতে পারিনি তুমি এতোটা ভয় পেয়ে যাবে।
শ্রেয়সী মিনিট কয়েক সময় নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে। অনুপমকে ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে সরে দাঁড়ায়। শ্রেয়সী অনুপমের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে,

সুযোগের সদ্ব্যবহার তো ভালোই করতে জানেন। সুযোগ পেলেন আর চট করে জড়িয়ে ধরলেন। আসলেই আপনারা বেডা মানুষগুলো সুবিধার না।
বেডা মানুষ, বেডা মানুষ বলে চিল্লাও আবার এই বেডা মানুষ ছাড়াই বাঁচো না। এটাই হচ্ছে বেডি মানুষ।
শ্রেয়সী চোখ বড় বড় করে অনুপমের দিকে তাকায়। অবাক হয়ে বলে,

আপনিও এসব জানেন?
সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। তোমার সাথে থাকতে থাকতে এই বদভ্যাসগুলো আমার মাঝেও চলে আসছে।
থাকেন কেনো আমার সাথে? থাকতে বলেছি আপনাকে আমার সাথে?
এতো ঝগড়া করো কেনো? জ্ঞান হারানো মেয়েদের এতো ঝগড়া করতে হয় না।
একদম জ্ঞান হারানো মেয়ে বলবেন না। আমার একটা সুন্দর নাম আছে। শ্রেয়সী বলে যদি ডাকতে পারেন তবে ডাকবেন। নাহলে ডাকবেন না।

তুমি তো আমার সন্ধ্যাবতী। তোমার সাথে প্রথম কোথায় দেখা হয়েছিল জানো?
কোথায় আবার বাসে।
উহু। এই শহরে কোনো এক সন্ধ্যায় তোমার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। তুমি আর তোমরা বন্ধুরা একটা ফুচকার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছিলে। সবে শহর জুড়ে সন্ধ্যা নেমেছিল। আমি বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম। তুমি তখন প্রাণখোলা হাসিতে মেতে ছিলে। তুমি না দেখেই দুই কদম পিছনে যেতেই আমার সাথে ধাক্কা লাগে। তোমার মাথা ঠেকেছিল আমার বুকের কাছে। মনে পড়ে?

শ্রেয়সীর হুট করেই মনে পড়ে বছর খানিক আগের ঘটনা। সেদিন লোকটাকে না দেখেই সরি বলে দিয়েছিল। সে কী সেদিন ভেবেছিল এই অপরিচিত পুরুষটাই একদিন তার একান্তই ব্যক্তিগত পুরুষ হবে?
আপনিই ছিলেন সেদিন?
জ্বী ম্যাম। সেদিন আমিই ছিলাম।

সেদিন আপনি আমাকে নজর দিয়েছিলেন তাই না? তাই তো বাসায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। সে কি পেট ব্যথা আমার।
আমি আমার জিনিসে নজর দিয়েছি। তাতে তোমার কী? আমার নজর দেওয়ার ফলে তুমি যদি কালো হয়ে যেতে তাহলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করতাম।
আপনি মনে মনে তাহলে চান আমি কালো হয়ে যাই? আপনার সাথে কথা বলায় উচিত না। আমি যাচ্ছি। আপনি থাকুন।
আচ্ছা যাও।

এখন বাজে তিনটে বা সাড়ে তিনটে। নিতুর সঠিক জানা নেই এখন ঠিক কয়টা বাজে। নিতু ঘুম থেকে ওঠেই চোখে মুখে পানি দিয়ে পড়তে বসে। নিতুর শেষ রাতে ওঠেই পড়তে বসে। সন্ধ্যা থেকে পড়ার অভ্যাস তার নেই। সন্ধ্যার সময় তার পড়তে ভালোও লাগে না। সন্ধ্যা সময় পড়তে বসলে তার পড়া মনেও থাকে না। শেষ রাতে পড়তে বসলে নিতুর পড়া তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়। নিস্তব্ধ পরিবেশে পড়া তাড়াতাড়ি মাথায় ঢুকে।

নিতু পড়তে পড়তে ফোন হাতে নেয়। ফোনের স্কিনে তাকাতেই নিতুর চোখ চড়কগাছ। দুইশো প্লাস মিসড কল আর একশ প্লাস মেসেজ। সবগুলো এসেছেই আননোন নাম্বার থেকে। নিতু ফোন রাখতে গেলেই আবার ফোন বেজে ওঠে। নিতু ফোন রিসিভ করে।
হ্যালো।

ওপাশের ব্যাক্তিটা নিশ্চুপ। শুধু নিশ্বাসের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
হ্যালো। ঐ মিয়া কী সমস্যা? নিজের নিশ্বাসের শব্দ শোননোর জন্য আমাকে ফোন দিচ্ছেন? কথা বলার হলে বলুন নাহলে ফোন রাখুন। আজাইরা আপনার সাথে কথা বলায় বৃথা।
নিতু কথা শেষ করে কল কেটে দেয়। নিতু কল কেটে দেওয়ার সাথে সাথে আবার কল বেজে ওঠে। নিতুর বিরক্তি এখন চরম শিখরে পৌছে গেছে। নিতু বিরক্তি নিয়েই ফোন রিসিভ করে।

কথা বলছেন না কেনো? এই মিয়া আপনি কী চুপ করে থাকার জন্য কল দিয়েছেন? আপনাদের খাইয়া কোনো কাজ নাই? মাঝরাতে মানুষকে কল দিয়ে বিরক্ত করেন। আমি শিওর আপনি কোনো ছেলে। মাঝরাতে মেয়েদের কল দিয়ে ফাতরামো করেন। থাপরায়া দাঁত ফেলে দেওয়া উচিত আপনার।

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ১৯

সাট আপ।
ধমক শুনে কেঁপে ওঠে নিতু।

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ২১