শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ১৯

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ১৯
তাসনিম জাহান রিয়া

তোমার বিয়েটা এক বছর পর হবে। আপাতত বিয়ের প্রসঙ্গটা স্থগিত। তোমার বয়স কম তাই তারা এখনি তোমাকে ঐ বাড়ির বউ করে নিয়ে যেতে চাইছে না। আর আমরাও তোমাকে এখন বিয়ে দিতে চাইছি না। তুমি তো এখন পর্যন্ত ঠিক করে নিজের যত্ন নিতেই শিখোনি। সংসার সামলাবে কীভাবে? সব দিক বিবেচনা করেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই বিয়ের আলোচনা এক বছর পর করা হবে। এ ব্যাপারে তোমার কিছু বলার আছে?

শ্রেয়সী হেলাল সরকারের কথা শুনে মনে মনে অনেক খুশি হয়। কিন্তু সেটা হেলাল সরকারের সামনে প্রকাশ করে না বরং গম্ভীর হয়ে বলে,
আমি আর কী বলবো? তোমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছো তা অবশ্যই ভেবে নিয়েছো। তবে এক বছর পর বিয়েটা হলে ভালোই হবে। আমি নিজেকে আরেকটু গুছিয়ে নিতে পারবো।
তাহলে আমি আসি। তুমি বিশ্রাম নাও।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ঘাসের ওপর বসে আছে প্রিয়ন্তি আর শ্রেয়সী। শ্রেয়সী অনুপমের সাথে মেসেজ আদান-প্রধান করছে। প্রিয়ন্তি আরেকটু শ্রেয়সীর গা ঘেষে বসে।
তুই কী আমার ওপর রাগ করেছিস?
রাগ করবো কেনো?
তুই কী আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস?

না শুনলে উত্তর দিলাম কীভাবে? তোর ওপর রাগ করার কোনো কারণ তো আমি দেখছি না।
আমার আর নাহিনের ব্যাপারটা নিয়ে।

এটা নিয়ে রাগ করবো কেনো? এটা তো রাগ করার মতো বিষয় না। এটা একান্তই তোদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তোদের রিলেশনের কথা কাকে বলবি আর কাকে বলবি না এটা নিতান্তই তোদের ব্যাপার। সেখানে আমার কমেন্ট করার কোনো অধিকার নেই। আমি যে অনুপমের সাথে রিলেশনে আছি সেটা কী আমি ভাইয়াকে বলেছি? বলিনি তো। ভাইয়া নিজের রিলেশনের কথা আমাকে বলবে নাকি না সেটা তার ব্যাপার আমি অহেতুক রাগ করবো কেনো?

রাগ না করলে আমাদের সাথে এমন অদ্ভুত বিহেইভ করছিস কেনো?
আমার তো মনে হচ্ছে না আমি অদ্ভুত আচারণ করছি। যদি সত্যিই করে থাকি তাহলে সরি। একচুয়ালী আমি একটা বিষয় নিয়ে চিন্তিত। তন্ময় চলে আসছে। তুই ক্লাসে যা। আমি একটু নার্সারিত যাব।
ঘাসের ওপর থেকে ব্যাগটা নিয়ে ওঠে দাঁড়ায়।প্রিয়ন্তির থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।

মুহিব জড়োসড়ো হয়ে সোফার এক কোণায় বসে আছে। অস্বস্তিতে হাঁসফাঁস করছে। তার সামনে সাজানো-গোছানো নাস্তা। কিন্তু সে কোনো খাবার ছুঁয়েও দেখেনি। তার সামনের সোফায় বসে আছে আলী সাহেব। তার থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে দাঁড়িয়ে আছে তার বড় আপা। এক সময় এই বড় আপাকে ছাড়া সে কিছুই বুঝতো না। আজকে তার থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে দাঁড়িয়ে আছে তবুও চাইলেও সে ছুঁতে পারছে না। তাকাতেও তার অস্বস্তি হচ্ছে।

মুহিবের আজ মনে হচ্ছে যে বলেছিলে, দূরত্ব ভালোবাসা বাড়ায়। সে ভুল বলেছিল। দূরত্ব ভালোবাসা বাড়ায় না, দূরত্ব দূরত্বই বাড়ায়। সেও তো তার বড় আপাকে ভালোবাসতো। কিন্তু আজকে কথা বলতেও অস্বস্তি হচ্ছে। আসার পর থেকে ভালো মন্দ জিঙ্গেস করা ছাড়া আর কোনো কথা হয়নি।

তার কোলে বসে আছে তার সাত বছরের ভাগ্নি আফিয়া। বুঝ হওয়ার পর এই প্রথম মেয়েটা তাকে দেখছে। মুহিবের বড় আপার একটা ছেলেও আছে। ছেলেটা হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। মুহিবের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক। সুযোগ পেলেই মুহিবের সাথে দেখা করার জন্য ছুটে যায়। আফিয়া মুহিবের গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

তুমি আমার মামা তাই না? তাহলে তুমি আমাদের বাসায় আসো না কেনো? আমার ফ্রেন্ডদের মামারা তাদের সাথে কতো খেলা করে। তুমি আমার সাথে খেলা করো না কেনো?
আলী সাহেব আফিয়াকে উদ্দেশ্য করে মৃদু স্বরে বলে,

মামুনি তোমার মামা তো পড়াশোনা করে। তাই তোমার সাথে খেলা করার সময় পায় না। আজকে তোমার সাথে অনেক খেলা করবে। এখন তুমি পাশের রুমে গিয়ে খেলা করো। তোমার মামার সাথে আমার একটু কথা আছে। আমার সাথে কথা বলেই তোমার সাথে খেলা করবে। এখন যাও পাশের রুমে।
নিজের বাবার কথা শুনে বাধ্য মেয়ের মতো আফিয়া চলে যায়।
তোমাদের সিদ্ধান্ত কী? মেঘলার সিদ্ধান্ত কী?

আমাদের সিদ্ধান্ত তো আমি আপনাকে আগেই জানিয়ে দিয়েছি। ছোট আপা এখন বিয়ে করতে চায় না আর আমরাও ছোট আপার মতের বিরুদ্ধে বিয়ে দিব না।
এটাই তোমাদের শেষ সিদ্ধান্ত?
হ্যাঁ। আমি আসি।

এখনি চলে যাবি? কিছু তো মুখেও দিলি না?
আপা আজকে আমার হাতে একদমই সময় নেই। অন্য একদিন খাওয়া যাবে। আজ আসি।
অন্য একদিন খাবি? আর আসবি তুই আমার কাছে?
অস্বস্তিতে পড়ে যায় মুহিব। মৃদু স্বরে বলে,

আসবো। আসবো তোমার কাছে। আজকে আসি ভালো থেকো। সাবধানে থাকবে। আসসালামু আলাইকুম।
মুহিব আর এক মিনিটও দাঁড়িয়ে না থেকে বেরিয়ে যায়। মুহিব জানে তার উপস্থিতি ভালো ভাবে নেয় না আলী সাহেব। আলী সাহেব নাক উঁচু মানুষ। তারা মধ্যবিত্ত। তাই আলী সাহেব তাদের পছন্দ করে না। মুহিবের বড় বোনের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু তিনি প্রথম থেকেই মুহিবদের পরিবারকে পছন্দ করতেন না। বিয়ের পর দুইবার গিয়েছিলেন মুহিবদের বাসায়।

মুহিব তার বড় আপার চোখের ভাষা দেখেই বুঝে গেছে তার বড় আপা ভালো নেই। টাকা-পয়সা, অর্থ-সম্পদ থাকলেই মানুষ সুখে থাকে না। তার আপার যে স্বাধীনতা নেই। তার আপা যে নিজের সিদ্ধান্তে এক পাও এগোতে পারে না। তার আপা ছিল মুক্তিকামী পাখি, এই বন্দিত্বে যে তার আপা ভালো নেই। কিন্তু সে তার আপার জন্য কিছু করতে পারছে না। সে যে নিরুপায়।

নিতু ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে একটু সামনে যেতেই ফুয়াদ নিতুর পথ আটকে দাঁড়ায়। নিতুর পাস কাটিয়ে যেতে নিলেই ফুয়াদ আবার নিতুর সামনে দাঁড়ায়। নিতু ভ্রু বাঁকিয়ে তাকায় ফুয়াদের দিকে।
তুমি কী আমাকে ইগ্নোর করছো?
আমি আপনাকে ইগ্নোর করতে যাব কেনো?
চিঠি দিচ্ছো না যে? ডিস্টার্ব করছো না? বার বার চোখের সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করছো না।
সরি।

সরি ফর হোয়াট?
সরি ফর এভরিথিং। আপনাকে চিঠি দিয়ে বিরক্ত করার জন্য। বার বার চোখের সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করে আপনাকে বিরক্ত করার জন্য। আবারও সরি। আমি আসি। আপনাকে আর বিরক্ত করবো না।
নিতু ফুয়াদকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। ফুয়াদ বোকার মতো তাকিয়ে আছে নিতুর যাওয়ার দিকে। সে নিতুর ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলো না। প্রিয়ন্তিকে দেখেই বলে,

এই মেয়ে শুনো।
আমাকে বলছেন?
হ্যাঁ তোমাকেই বলছি। এদিকেই আসো।
প্রিয়ন্তি উদাসীন হয়ে হেঁটে আসে ফুয়াদের সামনে। ফুয়াদ প্রিয়ন্তির দিকে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলে,
তুমি এতো আস্তে হাঁটো কেনো? তোমার বান্ধবীর কী হয়েছে?
কোন বান্ধবী?

নিতু। আমার সাথে এমন অদ্ভুত বিহেইভ করলো কেনো?
ওহ। নিতু ঐদিন ক্যান্টিনে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য নিজেকেই দায়ি করে। নিতুর ভাবনা সে যদি আপনাকে চিঠি না দিতো ঐসব ঘটনা ঘটতো না। ঐদিন তো শ্রেয়সীর হাত না কেটে আরো বেশি কিছু ঘটে যেতে পারতো। নিতু এটা মানতে পারছে না যে, তার জন্য শ্রেয়সীর ক্ষতি হয়েছে।

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ১৮

তোমাদের বাকি বন্ধুরা কোথায়? তোমরা দুই বান্ধবী এমন অদ্ভুত আচারণ করছো কেনো? তোমাদের ভাব সাব এমন উদাসীন কেনো?
প্রিয়ন্তি উদাসীনভাবে কথাগুলো বলে চলে যায়। ফুয়াদের আর কোনো কথার উত্তর দেয় না। ফুয়াদের ভীষণ রাগ হচ্ছে। সবাই আজকে তাকে ইগ্নোর করছে। একদম পাত্তাই দিচ্ছে না তাকে কেউ। তার কথার উত্তর দিচ্ছে না কেউ।

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ২০