শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ১৮

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ১৮
তাসনিম জাহান রিয়া

প্রেসার লো হয়ে যাওয়ার কারণে শ্রেয়সী অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। অতিরিক্ত টেনশন আর না খেয়ে থাকার কারণে প্রেসার লো হয়ে গিয়েছিল। শ্রেয়সীকে হুট করে অজ্ঞান হয়ে যেতে থেকে টেনশনে পড়ে যায় নিতু আর প্রিয়ন্তি। এদিকে শ্রেয়সীর হাত-পাও ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল। ইভা হলে এসেছিল প্রিয়ন্তির কাছ থেকে নোট নিতে। শ্রেয়সীর এই অবস্থা দেখে অস্থির হয়ে পড়ে। ইভা নিজের পরিচিত এক ডক্টরকে ফোন করে আর শ্রেয়সীর বাসায় ফোন করে। এদিকে প্রিয়ন্তি কেঁদে চোখ-মুখ লাল করে ফেলেছে।

ঘন্টা দুয়েকের মাঝেই শ্রেয়সীকে ডক্টর দেখিয়ে বাসায় নিয়ে আসে মিরাজ সরকার। আসার পর থেকে শ্রেয়া বেগম শ্রেয়সীকে জোর জবরদস্তি করে খাওয়াচ্ছে। শ্রেয়সীর মনে হচ্ছে তার মা সাতদিনের খাবার একদিনেই খাইয়ে দিয়েছে। শ্রেয়সী বর্তমানে বিছানায় পড়ে আছে ব্যাঙের মতো। নড়াচড়া করতে পারছে না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কিয়ৎক্ষণ পরেই শ্রেয়সীর ওপর হামলে পড়ে তার বন্ধুমহল। আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে তন্ময় আজকে সাথে অনন্যাকেও নিয়ে আসছে। অনন্যার পড়নে একটা নীল রঙের তাঁতের শাড়ি। তন্ময়ের পড়নে একটা নীল রঙের পাঞ্জাবি।
শ্রেয়সী তোর কাহিনী কী? দুই দিন পর পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিস। তোর জ্ঞান হারানোর রোগটা হয়েছে ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে। আমাদের আড়ালে আবার কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলিসনি তো?

তন্ময় তোকে আমি এক লাথি মেরে বাসার বাইরে ফেলে দিব। তাই বলছি প্রেমিকার সামনে নিজের মান-সম্মান বজায় রাখ।
মিহান নিজের চুলে হাত চালাতে চালাতে বলে,
প্রেম করিস তুই। তিন বছর ধরে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরছিস তুই। আর শ্রেয়সীকে বলছিস কোনত অঘটন ঘটিয়েছে নাকি? শ্রেয়সী কোনো অঘটন ঘটালে তোর মানসম্মান থাকবে। অঘটনের সংবাদটা আমরা তোর কাছ থেকেই আগে শুনতে চাই।
লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয় অনন্যা। ঠোঁটের কোণে বিদ্যমান লাজুক হাসি। অনন্যা শ্রেয়সীকে জড়িয়ে ধরে বলে,

এখন কেমন আছেন আপু?
এতক্ষণ যাও একটু ভালো ছিলাম, কিন্তু এদের দেখে যতটুকু না সুস্থ হয়েছিলাম তার ডাবল অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তোমাকে আজকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। কোথাও যাচ্ছিলে বুঝি?
অনন্যা কানের পিঠে চুল গুঁজে দিয়ে বলে,

আপনার বন্ধুর সাথে ঘুরতে গিয়েছিলাম। আপনার খবর শুনেই তো উনি একদম অস্থির হয়ে পড়েন।
সরি গো। আমার জন্যই তোমাদের এতো সুন্দর মোমেন্টটা নষ্ট হয়ে গেলো। সরিরে তন্ময়।
একটা থাপ্পড় দিব। সরি কীসের? তোদের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে আর কিছু নেই।
মিহান হালকা কাশি দিয়ে বলে,

প্রেমিকার সামনে এভাবে বলতে হয় না। প্রেমিকা রাগ করবে।
অনন্যা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
আমি মোটেও রাগ করবো না ভাইয়া। আপনাদের মতো বন্ধু সবার ভাগ্যে জুটে না। আপনারা সবসময় উনার পাশে থাকেন। আমি যখন ছিলাম না তখনও আপনারা ছিলেন। ভবিষ্যতে আমি ছেড়ে গেলেও আপনারা কখনো ছেড়ে যাবেন না। বন্ধু বন্ধুর কাছে খোলা বইয়ের মতো। ও হয়তো অনেক কিছু আমার কাছে বলতে পারে না কিন্তু আপনাদের কাছে নিঃসংকোচে বলতে পারে।

আমার সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে বলে তো ওর জীবনের স্বাধীনতা বলে যে কিছু থাকবে না। ও ব্যক্তিত্বহীন হয়ে পড়বে এমনটা আমার কাম্য নয়। এমন ছেলে আমার পছন্দ নয়।
উনি এডাল্ট নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নিবেন। কাকে বেশি প্রায়োরিটি দিবেন কাকে কম সবটাই উনার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার।
ইভা অনন্যার নাক টেনে বলে,

এই জন্যই তোমাকে আমার এতো ভালো লাগে। তন্ময়কে বলি আমাদের সাথে আড্ডার দেওয়ার সময় তোমাকেও নিয়ে আসতে। কিন্তু এই ছাগল তোমাকে নিয়ে আসে না।
আপু আমি নিজেই আসি না। আপনাদের একটা প্রাইভেসি আছে তো। আর উনারও তো একটা স্পেসের প্রয়োজন আছে। সবসময় উনার আগে পিছে থাকলে এক সময় উনারও হয়তো বিরক্ত লাগবে। উনি আপনাদের সাথে যেভাবে কথা বলেন সেভাবে তো আমার সামনে বলতে পারবেন না।

মুহিব হাত দিয়ে চুল ব্রাশ করতে করতে বলে,
আমাদের থেকে বয়সে তুমি ছোট। কিন্তু তুমি অনেক বেশি ম্যাচিওর। এদের মাঝে যদি তোমার ম্যাচিওরিটির ছিটেফোঁটাও থাকতো তাহলে আমাদের মতো অসহায় ছেলেগুলো বেঁচে যেতো। কিন্তু তুমি এতো ম্যাচিওর হয়েও তন্ময়ের মতো ছাগলকে কীভাবে পছন্দ করলে?

অনন্যা মুহিবের কথার বিনিময়ে লাজুক হাসে। এর মাঝে রুমে প্রবেশ করে শ্রেয়া বেগম। অনন্যার চিবুকে হাত রেখে বলে,
বাহ তোমাকে তো বেশ লাগছে। তখন তোমাকে সেভাবে খেয়াল করা হয়নি। শ্রেয়সী এটা তোর নতুন বান্ধবী বুঝি?
না আম্মু। বান্ধবী না ভাবি।
ভাবি মানে?

ভাবি মানে মিহানের ভাবি। মিহানের ভাবি মানে তো আমাদেরও ভাবি। আম্মু তুমি মনে হয় ওদের খাওয়ার জন্য ডাকতে এসেছিলে?
ও হ্যাঁ। একদম ভুলে গিয়েছিলাম। তোমাদের জন্য অল্প কিছু খাবার ব্যবস্থা করেছি। আগে খেয়ে আসো তারপর এসে গল্প করো।
প্রিয়ন্তি বিনয়ের স্বরে বলে,

না আন্টি আজকে আমরা কেউ আর খাবো না। সবাইকে এখন ফিরতে হবে। দেরি হলে আমাদের হলে ঢুকতে দিবে না।
এতোটা কষ্ট করলে, এখন না খেয়েই চলে যাবে।
আন্টি আপনি এমন করছেন যেনো আমরা আর আসবো না। আমরা তো পর কেউ না। আমরা যে এখানে আসি না তেমনটা কিন্তু না। ময়মনসিংহে ভর্তি হবার পর এখানে যতবার এসেছি ততবার নিজের বাড়িতে গেছি নাকি সন্দেহ। আপনি মন খারাপ করবেন না। আমরা আবার আসবো। আপনি এখন এই শুটকি মাছকে খাওয়ান। খাওয়া-দাওয়া ঠিক ঠাক করে না আর হুটহাট জ্ঞান হারায়।

আচ্ছা। তোমরা সাবধানে যেয়ো। আমি একটু নাহিনের কাছে যাই।ওর ঔষধ খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
শ্রেয়া বেগম চলে যেতেই নিতু শ্রেয়সীর ফোনটা শ্রেয়সীর কাছে দেয়।
তোমার লক্ষীন্দরকে ফোন দেও। সে তার বেহুলার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে। তোমরা পিরিত করো আমরা যাই।
শ্রেয়সী নিতুর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকায়। নিতু হেসে দেয়। একে একে সবাই বিদায় নিয়ে চলে যায়। শ্রেয়সী অনুপমকে ফোন দেয়।

এখন কেমন আছো তুমি? প্রেসার এতো লো
হলো কীভাবে? খাওয়া-দাওয়া করোনি নিশ্চয়ই।
প্রেসার লো হোক বা আমি মারা যায় তাতে আপনার কী?
একটা থাপ্পড় দিব।
শ্রেয়সী অভিমানী কন্ঠে বলে,

পারেন তো শুধু থাপ্পড় মারতে আর রাগ দেখিয়ে চলে যেতে।
রাগ দেখিয়ে চলে আসবো না তো কী তোমাকে চুমু খাবো? তুমি অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করার জন্য রাজি হয়ে গেলে? ঐ ছেলেকে নিয়ে বাসর রাত পর্যন্ত স্বপ্ন দেখে ফেলছো।

আমি কী করতাম? আপনি বিবাহিত শুনে আমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। আপনাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য বোকার মতো একটা কাজ করে ফেললাম।
এই কথাটা মাথায় আসেনি যে, আমি যদি বিবাহিত হই তাহলে তুমি বিয়ে করো বা মরে যাও তাতে আমার কিছু আসে যাবে না।

এতো গম্ভীর হয়ে কথা বলেন কেনো? বাচ্চা প্রেমিকাদের সাথে এতো গম্ভীর হয়ে কথা বলে আইনত অপরাধ।
শ্রেয়া বেগমের গলা শুনে ফোন হোল্ড করে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে শ্রেয়সী। শ্রেয়সী ঘুমোচ্ছে ভেবে শ্রেয়া বেগম চলে যায়। অনুপমের সাথে কথা শেষ হতেই হেলাল সরকারের আসার আবাস পেয়েই শ্রেয়সী আবার আগের মতো শুয়ে পড়ে। হেলাল সরকার মৃদু স্বরে ডাকে।
আম্মা? আম্মা?

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ১৭ শেষ অংশ

হেলাল সরকারের ডাকার সাথে সাথেই শ্রেয়সী উঠে বসে। হেলাল সরকার শ্রেয়সীর পাশে বসে।
এখন কেমন আছো?
আলহামদুলিল্লাহ।
তোমার সাথে তোমার বিয়ের ব্যাপারে কিছু কথা ছিল।

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ১৯