শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ৪০

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ৪০
তাসনিম জাহান রিয়া

আমাদের সবার একজন করে ভালোবাসার মানুষ আছে শুধু ইভা আর মুহিবের ছাড়া। ওরা দুজন যে সিঙ্গেল এটা আমার বিশ্বাস হয় না। তোরা দুজন আবার তলে তলে টেম্পো চালাচ্ছিস না তো?
শ্রেয়সীর কথায় কেঁশে ওঠে মুহিব। নিতু আলতো হাতে মুহিবের পিঠে থাপ্পড় দিয়ে বলে,

তোরা যদি সিঙ্গেল হয়ে থাকিস তাহলে সেটিং করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। শুন তোরা বরং আগামীকাল কোথাও ডেটিংয়ে চলে যা। ঠুস ঠাস কয়েকটা চুমু খেয়ে নিজেদের মাঝে ভালোবাসা আদান প্রদান করে নে।
মুহিব নিতুর কথা শুনে কাঁশতে কাঁশতে চোখ মুখ লাল করে ফেলছে। ইভা নিতুর চুলে হালকা টান দিয়ে বলে,
তোকে আমাদের নিয়ে ভাবতে হবে না। তুই বরং তোরটার কথা ভাব। তোর পাখি তো বিদেশ উড়াল দিল। দেখিস আবার কোনো বিদেশী ম্যাম সাহেব বিয়ে না করে নিয়ে আসে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

হোক না হাজার মাইলের দূরত্ব ফুয়াদ তো নিতুতেই আসক্ত।
ঘামে ভেজা প্রিয়ন্তিকে দেখে সবাই একটু অবাক হয়। কপাল থেকে টুপটুপ করে ঘাম ঝরে পড়ছে। ঘামে ভিজে পিঠের দিকের জামাটা আটশাট হয়ে পিঠের সাথে লেগে গেছে। হাতের ছাতাটা ভাঁজ করতে করতে ক্যান্টিনে প্রবেশ করে প্রিয়ন্তি। প্রিয়ন্তিকে ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছে। মুখ লাল হয়ে গেছে। যেনো টুকা দিলেই রক্ত বের হবে। প্রিয়ন্তি মুহিবের পাশের চেয়ারটাই বসে পড়ে। শ্রেয়সী এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয় প্রিয়ন্তির দিকে। পানি পান করতে গিয়ে প্রিয়ন্তি কেঁশে ওঠে। নিতু আলতো করে পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

তোকে এতো ক্লান্ত দেখাচ্ছে কেনো? মুখ এমন লাল হয়ে আছে কেনো? রোদে গিয়েছিলি?
প্রাইভেট পড়িয়ে হেঁটে আসছি তো তাই।
সবাই অবাক চোখে তাকায় প্রিয়ন্তির দিকে। সবার অবাক চাহুনি দেখে প্রিয়ন্তি আলতো হাসে।
রোদের মাঝে হাঁটার কষ্ট এর আগে কখনো বুঝতে পারিনি। এক ঘন্টা যাবৎ বসে থেকে ধৈর্য ধরে কাউকে পড়ানোর কষ্টটাও আগে কখনো বুঝিনি।

মুহিব আজকে তোকে আমার সালাম করতে ইচ্ছে করছে। এই কষ্টগুলো তুই সেই ছোটবেলা থেকে করে আসছিস। তোর কষ্টগুলো আগে উপলব্ধি করিছি কিন্তু এতোটা যে কষ্ট সেটা বুঝিনি। এর আগে বোঝার প্রয়োজন হয়নি কারণ তখন আমার মাথার ওপর বাবা নামক ছায়াটা ছিল। যার কাছে কোনো কিছু চাওয়ার আগেই পেয়ে যেতাম। হয়তো বাবার ভালোবাসা পায়নি কিন্তু আমার জীবনে টাকার কোনো অভাব হয়নি।

উনি হয়তো আমাকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন তবুও তো দিন শেষে সবাইকে তো বলতে পেরেছি আমার বাবা আছে। দিন শেষে কল দিয়ে তো কেউ একজন জিঙ্গেস করতো তুমি কেমন আছো? তোমার থাকতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো? তোমার কিছু প্রয়োজন আছে? এখন আর কেউ কল দেয় না? বাবা নাম দিয়ে সেইভ করে নাম্বার থেকে আর কল আসে না। এই পৃথিবীতে নিজের বলতে আর কেউ রইল না।

প্রিয়ন্তি তুই এভাবে বলছিস কেনো? আমরা কী তোর কেউ না? তোর বাবা তো এখনো আছে। হয়তো তোর সাথে যোগাযোগ করছেন না। কিন্তু উনি তো তোর আশেপাশেই আছেন। উনি নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন সবার কাছ থেকে।
প্রিয়ন্তি কিছু বলে না সবার অগোচরে আলতো হাসে। তাচ্ছিল্যের হাসি নাকি কষ্টের হাসি বুঝা দায়। প্রিয়ন্তি যেভাবে এসেছিল কাউকে কিছু না বলে হন্তদন্ত হয়ে ঠিক সেভাবেই চলে যায়। কিছু একটা ভেবে শ্রেয়সী সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।

শ্রেয়সী ভার্সিটি থেকে ফিরে ব্যাগটা সোফার ওপর রেখে ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খায়। তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল। যা গরম পড়েছে। গরমে বেঁচে থাকাই দায়। শ্রেয়সী হাত থেকে গ্লাসটা টেবিলে নামিয়ে রাখতেই শ্রেয়া বেগম শ্রেয়সীকে ঢেকে ওঠেন। শ্রেয়া বেগমের ডাক শুনে শ্রেয়সীর বুকের ভিতর ধক করে ওঠে।শ্রেয়সী মনে মনে দোয়া পড়তে শুরু করে। শ্রেয়সী ভাবছে তার মা হয়তো তার সাথে অনুপমকে দেখে নিয়েছে। তাই তো এমন গম্ভীর কন্ঠে ডাক দিল। কথায় আছে আছে না চোরের মন পুলিশ পুলিশ। শ্রেয়সী শুকনো হাসি দিয়ে শ্রেয়া বেগমের দিকে তাকায়।

তোর সাথে আমার কথা আছে শ্রেয়সী।
হ্যাঁ বলো।
তোর বাবা যখন হসপিটালে ভর্তি ছিল ঐ ডক্টর তোকে ‘ভাবি’ বলে সম্বোধন করছিলেন কেনো?
কই ভাবি বলছিলেন?
কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবি না শ্রেয়সী। আমি বিষয়টা খেয়াল করেছি একবার দুবার না ছেলেটা যতবার তোর সাথে কথা বলেছে ততবার ভাবি বলেই সম্বোধন করেছে? আমি তখনি জিঙ্গেস করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হাসপাতালে কোনো সিনক্রিয়েট হবে বলে আর কিছু জিজ্ঞেস করি নাই।

আমি তো এটা খেয়াল করি নাই। তুমিই বলো তখন কী এতো কিছু খেয়াল করার সময় ছিল? আমি তো তখন আব্বুর চিন্তায় বিভোর ছিলাম। হয়তো উনি কারো সাথে আমাকে ঘুলিয়ে ফেলেছেন বা ভেবেছেন আমি বিবাহিত তাই ভাবি বলে সম্বোধন করেছেন। বাদ দাও তো এই টপিক।

শ্রেয়সী আমাকে ঘোল খাওয়ানোর চেষ্টা করিস না। ভুলে যাস না আমি তোর মা। তুই আমাকে পেটে ধরিসনি আমি তোকে পেটে ধরেছি। তুই কখন সত্যি বলিস আর কখন মিথ্যা বলিস তা আমি চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারি। এখন সত্যি করে বলতো তোর কারো সাথে এফেয়ার চলছে না তো?

আম্মু তুমি যে কী বলো না। তুমি তোমার মেয়েকে চিনো না? এসব প্রেম-টেম থেকে তোমার মেয়ে দশ হাত দূরে থাকে।
শ্রেয়া বেগম শ্রেয়সীকে আর কিছু না বলে কিছুক্ষণ তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে যান।
শ্রেয়া বেগম চলে যেতেই শ্রেয়সী হাফ ছেড়ে বাঁচে। ব্যাগটা হাতে নিয়ে এক দৌড়ে রুমে গিয়ে দরজা আটকে দেয়। শ্রেয়সী জুরে জুরে শ্বাস নেয়। ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নেয়। কিছু একটা ভেবে রুম থেকে বের হয়ে নাহিনের রুমের সামনে আসে। নাহিন ল্যাপটপে তখন কিছু গুরুত্বপূর্ণ মেইল চেক করছিল। রুমের দরজা খোলাই ছিল। তবুও শ্রেয়সী নক করে। নাহিন ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই বলে,

আম্মু তুমি কবে থেকে আবার এতো ফর্মালিটি ম্যানটেইন করতে শুরু করলে? আমার রুমে আসতে তোমার অনুমতির প্রয়োজন আছে ভিতরে আসো।
আসবো?

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ৩৯

শ্রেয়সী গলা শুনে চমকে ওঠে নাহিন। ‘আমার রুমে আসার জন্য তোর পারমিশন নিতে হয়?’ কথাটা বলতে গিয়েও থেমে যায় নাহিন। তাদের সম্পর্কটা তো এখন আর আগের মতো নাই। তাদের মাঝে এখন এক আকাশ সমান দূরত্ব। শ্রেয়সী এখন তার রুমেও আসে না। তাই তো নাহিন ভেবেছে শ্রেয়া বেগম এসেছেন। নাহিন শ্রেয়সীর সাথে কথা বলতে গেলে শ্রেয়সী হ্যাঁ অথবা না দিয়ে কথা শেষ করে দেয়।

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ৪১