অভিমানেই আছো তুমি পর্ব ৩ || ovimanei aso tumi

অভিমানেই আছো তুমি পর্ব ৩
Writer:TanjiL Mim

“আদিত্য আমায় কোলে করে নিয়ে এসে একটা তুলতুলে সাদা বিছানায় বসিয়ে দিল’!!রাগ হচ্ছে ভিষণ’!!আমি রেগে আদিত্যকে বললামঃ
———–“এসব কি হচ্ছে,এই সব করার মানে কি,জোর জবরদস্তি করে বিয়ে করলেন কেন??
“আদিত্য শান্তস্বরে বললোঃ
———–“বলবো পরে তুমি এখন রেস্ট নেও ডারলিং বাকি কথা পড়ে হবে আগে তোমার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করি…..
————“আপনি কি আমার সাথে মসকরা করছেন নাকি,আমি থাকবো না আপনার সাথে…
“এই বলে যেই না বিছানা থেকে উঠে যেতে যাবো সাথে আদিত্য আমায় বিছানার সাথে চেপে ধরে বললোঃ

————“এই ধরনের ভুল একদম করো না ডারলিং একমাস প্রচুর পুরিয়ে ছো আমায় তার শাস্তি যে তোমায় পেতে হবে…..
“আদিত্যের কথা শুনে আমি রেগে বলে উঠলামঃ
———–“আপনায় পুরিয়ে ছি মানে আমাদের দেখা হলো কোথায়……
————“এতো কথা এখন বলতে পারবো না তোমায়’!!চুপ করে বসে থাকো এখানে, এক পা নড়লে একদম পা ভেঙে বসিয়ে রাখবো’!!আমি আজকে খুব খুশি তাই একদম রাগাবে না আমায়….
“এই বলে আমায় ছেড়ে দিয়ে দরজা সামনে থেকে বন্ধ করে চলে যায় আদিত্য’!!আদিত্যের কাজে চরম বিরক্ত আমি’!!কি পেয়েছে কি আমায়’!!যখন যা ইচ্ছে হবে তাই করবে নাকি’!!বিছানার চাদর চেপে ধরে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করছি আমি’!!

“কিছুক্ষণ পর…….
আদিত্য হাতে করে কিছু খাবার নিয়ে রুমে আসলো’!!আদিত্যকে দেখলেই মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে আমার’!!একদম সহ্য হচ্ছে না’!!এই ছেলেটার জন্য কতোটা না অবহেলা সহ্য করেছি,কতোবার নিজেকে নিজেই আঘাত করেছি’!!আদিত্যের স্মৃতি ভুলে যাওয়ার কতোকিছু করেছি আমি’!!আর সেই আদিত্য কিনা কোনোকিছু মেনে নিতে পারছি না আমি’!!আদিত্য খাবারগুলো নিয়ে এসে আমার পাশে এসে বললোঃ
———–“এখনো ফ্রেশ হও নি তুমি,তুমি কি চাও আমি তোমায় ফ্রেশ করিয়ে দেই….
————“একদম বাজে কথা বলবেন না আমার ভালো লাগে নি তাই ফ্রেশ হই নি’!!(রেগে)
“হাসলো আদিত্য’!!আদিত্যের হাসি একদমই সহ্য হচ্ছে না আমার’!!আদিত্য তার হাসি থামিয়ে বললোঃ
———–“ঠিক আছে ফ্রেশ হতে হবে না’!!আমি তোমায় খাইয়ে দিচ্ছি……
————“আমি খাবো না…..
————“বেশি বাড়াবাড়ি করছো তুমি…..
————“বারাবারি করছি বেশ করছি কি পেয়েছেন কি যা বলবেন তাই হবে নাকি,আপনি চেয়েছেন আপনার জীবন থেকে সরে আসতে আমিও সরে এসেছি তাহলে আজ কেন আপনি এমন করলেন উওর দিন আমায়……

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

————“তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিবো আমি তবে এখন নয় পরে…..
————“কিন্তু আমি যে এখনি শুনবো…..
————“এত বক বক করো না আমার মাথা খারাপ হয়ে যাবে’!!
————”মাথা খারাপ হয়ে যাবে মানে,মাথা তো আমার খারাপ হয়ে যাচ্ছে কেন করেছেন আপনার জন্য আমার পরিবার আমায় ঘৃণা করে এখন’!!বলতে বলতে কেঁদে উঠলাম আমি’!!
“আদিত্য আমার কাজে চেঁচিয়ে বললঃ
———-“চুপ কর….
———–“চুপ করবো মানে আগে প্রশ্নের উত্তর দিন কেন করেছেন এমন…..আর কিছু বলার আগেই আদিত্য আমার মুখে খাবার ভরে দিল’!!
“আচমকা এমনটা হওয়াতে আমি পুরো বোকা বনে গেলাম’!!এখন কথাও বলতে পারছি না…..

“আদিত্য খাবার দিতে দিতে শান্তস্বরে বললোঃ
———-“বলবো সব তবে পরে,একটু সময় দেও সব ঠিক করে দিবো আমি’!!
“কিন্তু আদিত্যের এই সান্ত্বনা একদম সহ্য হচ্ছে না আমার’!!
“জোরজবরদস্তি করে আদিত্য খাবার খাইয়ে দিল আমায় তারপর বললোঃ
———-“তুমি ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরো’!!
———-“আমি ফ্রেশ হবো না,এইভাবেই থাকবো….
———–“বেশি বারাবারি করলে কিন্তু আমি তোমায় ফ্রেশ করিয়ে দিবো’!!
———–“উল্টো পাল্টা কথা একদম বলবেন না’!!আপনাকে সহ্য হচ্ছে না আমার’!!বেরিয়ে যান রুম থেকে (চেঁচিয়ে)
“একপর্যায়ে চেঁচাতে চেঁচাতে কেঁদে উঠলাম’!!আদিত্য কিছুটা ঘাবড়ে গেল আরুশির কাজে’!!শেষমেশ সেও আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়’!!
“আদিত্য যেতেই আরুশি কাঁদতে কাঁদতে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে’!!তার একদমই সহ্য হচ্ছে না আদিত্যকে…….

“ড্রিংক হাতে সোফায় বসে আছে আদিত্য’!!এই এক মাস তার দিনগুলো কিভাবে কেটেছে ভাবতেই অবাক হয় আদিত্য’!!এই একমাসেই আদিত্য বুঝতে পেরেছে আরুশির প্রতি তার অনুভূতি তার ভালোবাসা’!!কথায় আছে না কাছে থাকলে কেউ বুঝতে পারে না তার গুরুত্ব কতোটা,দূরে গেলেই বোঝা যায় তার শুন্যতা’!!আদিত্য বুঝেছে আরুশির শুন্যতা’!!এমনটা নয় যে সে খুব কষ্ট পাচ্ছে আরুশির ব্যবহারে’!!কম অবহেলা করে নি সে আরুশিকে’!!আর সেই অবহেলার যন্ত্রনা পেয়েছে আদিত্য এই এক মাসে’!!চোখ বন্ধ করে আদিত্য ভাবতে লাগলো সেই পুরনো দিনগুলোর কথা’!!
||
“প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেছে আরুশির সাথে দেখা হয় নি আদিত্যের’!!প্রথম প্রথম ভালো লাগলেও পরে ভালো লাগে নি আদিত্যের’!!ভিতরে ভিতরে আরুশির শুন্যতা অনুভব করছে সে’!!আরুশির পাগলামী মনে করে’!!হর্ঠাৎই আদিত্য হেঁসে উঠে’!!আচমকা আদিত্যের এমন হেঁসে ওঠায় অবাক হয় তার বন্ধুরা’!!রাশেদ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেঃ
———–“কি হলো ভাই…..
“রাশেদের কথায় আদিত্য তার কল্পনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো’!!তারপর বলে উঠলঃ

———–“না তেমন কিছু নয় বাদ দে……
———–“ওহ আচ্ছা ভাই…..
“কিছুক্ষণ পর আদিত্য বলে উঠল রাশেদকেঃ
———–“আচ্ছা ওই মেয়েটাকে আর দেখছি কেন বলতো আগে তো রোজ তিন চারবার করে সামনে আসতো……
“আদিত্যের কথা শুনে রাশেদ অবাক হয়ে বললোঃ
————“ভাই আপনি কি মেয়েটাকে মিস করছেন…..
“সাথে সাথে আদিত্য চমকে উঠলো’!!তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলঃ
———–“মিস করতে যাবো কেন এমনি বললাম….
———-“ওহ আচ্ছা ভাই,জানি না গত কয়েকদিন যাবত আমরাও দেখি নাই মেয়েটাকে…..
————-“ঠিক আছে বাদ দে…..
———–“ঠিক আছে ভাই…..

“এই বলে আদিত্য টপিক চেঞ্জ করে দিলো’!!আদিত্য নিজেও অবাক’!!সে কি সত্যি মেয়েটা কে মিস করছে নাকি’!!ধুর যা হয়েছে ভালো হয়েছে, আর মেয়েটার ইস্টুপিড কান্ডগুলো দেখতে হবে না’!!এসব ভেবে আদিত্য নিজের কাজে মন দিতে শুরু করে….
“কিন্তু দিন যত যাচ্ছিল আদিত্যের আরুশির প্রতি শুন্যতা বেড়ে যাচ্ছে’!!একটা সময় আদিত্য সত্যি সত্যি মিস করতে শুধু করে দেয় আরুশিকে’!!আরুশির করা পাগলামি গুলো খুব মনে পরতে শুরু করে তার’!!রাতে ঘুমও হয় না ঠিক মতো আদিত্যের’!!ধীরে ধীরে আদিত্য দিশেহারা হয়ে পড়ে আরুশির জন্য’!!এভাবেই কাটছিল দিন’!!
||
“ড্রিংক হাতে বসে ছিল আদিত্য এমন সময় তার কিছু বন্ধুরা এসে বসে তার পাশে’!!আদিত্যের কাছে আসতেই আদিত্য নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রাশেদকে জিজ্ঞেস করলোঃ

———-“মেয়েটার কোনো খবর পেলি…..
———–“ভাই খবর তো পাই নি,শুধু জেনেছি মেয়েটা নাকি ভার্সিটিও যাচ্ছে না অনেকদিন যাবৎ…..
————“ভার্সিটি……
“নামটা শুনেই আদিত্য সেদিনের কথা মনে পড়ে গেল’!!এমন সময় রাশেদ বলে উঠলঃ
———–“ভাই আমার যতদূর মনে পড়ে মেয়েটাকে সেদিনই লাস্ট ভার্সিটি গিয়েছিল’!!হয়তো সেদিন ভয় পেয়েছিল ওই যে গুলি ধরেছিল ওর মাথায় আরাফ(গুন্ডাটার নাম)……
“আদিত্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললোঃ
———–“মেয়েটাকে খুঁজে বের কর, যে করেই হোক মেয়েটাকে আমার চাই……
———–“ঠিক আছে ভাই চেষ্টা করছি আমরা……
“এই বলে আদিত্যের লোকেরা চলে যায়’!!আর আদিত্য ড্রিংক করতে করতে মেজেতেই ঘুমিয়ে পরে…..

“এদিকে রাশেদ নিজেও বুঝতে পারছে না আদিত্যের কান্ড এতদিন মেয়েটা আসতো বলে বিরক্ত হয়েছে,আজ আসছে না বলে বিরক্ত হচ্ছে’!!অদ্ভুত……
||
“পরেরদিন রাশেদের ডাকে ঘুম ভাঙে আদিত্যের’!!আদিত্যের ঘুম ভাঙতেই রাশেদ অবাক হয়ে বললোঃ
———–“ভাই আপনি কি সারারাত মেঝেতে ঘুমিয়ে ছিলেন নাকি…..
“রাশেদের কথার উওর না দিয়ে আদিত্য বলে উঠলঃ
————-“ওসব বাদ দে আগে বল মেয়েটার কোনো খবর পেয়েছিস……
“রাশেদ মাথা নিচু করে বললোঃ
————-“পেয়েছি ভাই তবে…..
————-“কি তবে…..
————-“ভাই মেয়েটার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে,দুদিন পরই বিয়ে…..
“রাশেদের কথা শুনে আদিত্য রেগে গিয়ে রাশেদের কলার চেপে বললোঃ
———–“এসব কি বলছিস এটা হতে পারে…..

“মুহূর্তের মধ্যে আদিত্যের মাথা খারাপ হয়ে যায়’!!বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হয় তার’!!পুরো রুমের জিনিসপএ ভেঙে চুরে নছতছ করে ফেলে’!!
সে কিছুতেই মেনে নিতে পারে নি আরুশির বিয়ে’!!শেষে আদিত্যের মাথায় ওই ছবিগুলোর কথা মনে পড়ে আর বিয়ের দিন…….
__________________________________________
_______________________
———–“ভাই ভাবির জন্য জামাকাপড় কিনে আনতে বলেছিলেন না এই যে এনেছি’!!হর্ঠাৎই রাশেদের কণ্ঠ শুনে আদিত্য তার কল্পনা জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো’!!আনমনে বলে উঠল সেঃ
———-“কি…..
———-“ভাই জামাকাপড় ভাবির জন্য…..
———-“ওহ ওগুলো ওইখানে রেখে যা তোরা…..
————“ঠিক আছে ভাই……
“এই বলে চলে যায় রাশেদ’!!
“আবারো ড্রিংক এর গ্লাসে চুমুক দেয় আদিত্য……

অভিমানেই আছো তুমি পর্ব ২

“রাত দুটো বেজে পয়তাল্লিশ মিনিট’!!আদিত্য ঢুলতে ঢুলতে আরুশির রুমে ঢুকলো’!!আদিত্য ঢুলতে ঢুলতে গিয়ে বসে পরল আরুশির পাশে’!!আনমনে ঘুমিয়ে আছে আরুশি’!!মায়াবী তার মুখ’!!আনমনেই আদিত্যের হাত চলে যায় আরুশি গালের কাছে’!!
.
“এদিকে আচমকা কারো স্পর্শ গালে পরতেই হালকা নড়ে উঠল আরুশি’!!হাসলো আদিত্য তারপর আনমনে বলে উঠল আদিত্য….
———-“যখন তুমি আমার কাছে ছিলে তখন হয়তো আমি বুঝতে পারি নি তোমার জায়গা কোথায় আমার কাছে’!!কিন্তু এখন যখন বুঝে গেছি একবার আর ছাড়ছি না তোমায়’!!সবসময় আগলে রাখবো তোমার অভিমান ভাঙিয়ে নতুন করে শুরু করবো সবকিছু’!!এতটুকু বলে আরুশির গালে একটা চুমু দেয় আদিত্য তারপর চুপটি করে আরুশির পাশে গিয়ে শুয়ে আরুশিকে জড়িয়ে ধরে বললঃ

————“অনেকদিন ঘুম হয়নি আমার, আজকে আরামের ঘুম দিবো আমি……
“এতটুকু বলে ঘুমিয়ে পড়ে আদিত্য আরুশিকে জড়িয়ে ধরে’!!আর আরুশি সে হয়তো আদিত্যের বলা কথা গুলো কিছুই শুনতে পায় নি’!!শুনলে হয়তো খুশি হতো হয়তো না…….

অভিমানেই আছো তুমি পর্ব ৪