রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ২২ || লেখিকা : স্বর্ণা সাহা

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ২২
লেখিকা : স্বর্ণা সাহা
দিশানী নীলাদ্রির কথা শুনে মেঘার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। মেঘা আবারও বললো,
—যদিও নীলাদ্রি দা আমাকে এসব বলতে বারণ করেছে কিন্তু আমি মনে করি তোকে আমার এসব বলা উচিত।
—কি বলবি?
—আচ্ছা দিশু তুই কি বুঝিস না নীলাদ্রি দা তোকে এখনো ভালোবাসে।
দিশানী মেঘার কথা শুনে মুচকি হাসে। মেঘা দিশানীকে হাসতে দেখে বলে,
—এভাবে হাসছিস কেনো? আমি হাসার মতো কিছু কি বলেছি যে তুই এভাবে হাসছিস?
দিশানী উত্তর দিলো,
—আমি এতোটাও অবুঝ না যে নীলাদ্রির ভালোবাসা বোঝার আমার ক্ষমতা নেই।
মেঘা উত্তেজিত হয়ে বলে,
—তাহলে নীলাদ্রি দা কে নিজের মনের কথা বলে দে।তোদের সম্পর্কটাকে আগা।নীলাদ্রি দা এখনো শুধুমাত্র তোর জন্য অপেক্ষা করে আছে।আজকালকার দিনে এরকম খুবই কম দেখা যায়।তোরা নিজেদের সম্পর্কটাকে আগানো নিয়ে খোলাখুলি কথা বল।
—না।এটা সম্ভব না। আমার এই ভাঙাচোরা জীবনের সাথে আমি আর কাউকে জড়াতে পারবো না।উনি আমার থেকে আরো অনেক ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করে।
—কিন্তু নীলাদ্রি দা তো অন্য কোনো ভালো মেয়েকে চায় না, নীলাদ্রি দা শুধুমাত্র তোকে চায় সেটাও তোর ইচ্ছা হলে তবে।নীলাদ্রি এখনো তোকেই ভালোবাসে, অন্যকাউকে কখনো তোর জায়গাটা দিতে পারবে না বলেই তো বিয়ে করেনি।এখন অনেকদিন পর যখন তোদের সেই ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগানোর সুযোগটা এসেছে তাহলে এই সুযোগটা হাতছাড়া করছিস কেনো?
—আমার প্রতি ওনার প্রথমত এতো কনসার্ন  দেখে আমি ভেবেছিলাম এটা আমার প্রতি ওনার করুণা। কিন্তু সেদিন যখন উনি প্রাইভেট ভার্সিটির ফর্ম হাতে দিলেন সেইদিন রাতে আমি বুঝে গেছিলাম উনি আমাকে এখনো ভালোবাসেন তবুও সিউর ছিলাম না কিন্তু ওনার একের পর এক কর্মকান্ডে আমি সিউর হই উনি আমাকে এখনো ভালোবাসেন কারণ করুণা থেকে মানুষ মানুষের  জন্য কখনো এতো কিছু করে না যতটা নীলাদ্রি আমার জন্য করেছে।
—বুঝেই যখন গেছিস নীলাদ্রি দা এখনো তোকে ভালোবাসে তাহলে সম্পর্কটা আগাতে এতো দ্বিধা কেনো হচ্ছে তোর?
—ভয় হয় আমার।আমি চাইনা আর কাউকে এই জীবনের সাথে জড়াতে।আর তাছাড়া ওনার আত্মীয়রাও তো মানবে না একটা ডিভোর্সি মেয়েকে, উনি তার থেকে একটা ভালো মেয়েকে বিয়ে করে সুখী হোক।
মেঘা রেগে গিয়ে বললো,
—তুই কি আমার কথা ঠিক করে বুঝিসনি নাকি বুঝতে চাইছিস না,নীলাদ্রি দা এখনো শুধু তোকেই ভালোবাসে আর সেই কারণেই ওনাকে বিয়ে করার কথা বললে উনি এড়িয়ে যায়,কারণ অন্য মেয়েকে বিয়ে করলে উনি কখনো তোর জায়গাটা তাকে দিতে পারবেনা আর তাকে ভালোও বাসতে পারবেনা এতে ওই মেয়েটার জীবন নষ্ট হবে সেই কারণেই নীলাদ্রি দা বিয়ে করতে চায়না। এখন যখন আবারও সুযোগ এসেছে তবুও নীলাদ্রি দা তোকে নিজে থেকে কিচ্ছু বলেনি কারণ উনি তোর মতামতটাকে প্রাধান্য দিতে চায়।তুই কি চাস সেটার গুরুত্ব দিতে চায়।একমাত্র তুই রাজি হলেই এই সম্পর্ক জুড়বে নয়তো জুড়বে না ।এরকম মানুষ খুব কম হয় উনি তোর জন্য যা করেছে তা কেউ করে না ওনাকে এভাবে কষ্ট দিস না।
দিশানী শান্ত গলায় বললো,
—তোর কথা আমি বুঝতে পারছি কিন্তু আমার একটা জায়গায়তেই যে বার বার ভয় হচ্ছে।যদি নির্ঝরদের দেওয়া দোষ সত্যি হয়?
মেঘা শান্ত গলায় বললো,
—তুই যেটার জন্য ভয় পাচ্ছিস বললি সেটা শুধুমাত্র তোর একটা বাহানা ছাড়া কিছুই নয়। মানুষ যখন কোনো কিছু থেকে পালাতে চায় ঠিক তখনি বাহানা বানায়। তুই নিজেও জানিস ডাক্তার নিজেই বলেছে তোর দিক থেকে কোনো প্রকারের খুঁত নেই নাহলে তুই নির্ঝর দার বাড়িতে ওভাবে প্রতিবাদ করার সাহস পেতি না, তাই এই ভয়ের কোনো মানে নেই।তোর জীবনদশায় তুই যা যা দেখেছিস এটা তোর আসল ভয়,
তোর জীবনে যা যা ঘটে গেছে এসবের কারণেই তুই আর কোনো বন্ধনে জড়াতে চাইছিস না। এটা হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু নীলাদ্রির ভালোবাসাকেও তুই অস্বীকার করতে পারিস না, এভাবে ওনাকে কষ্ট দিস না। পুরো রাত আছে ভাবার জন্য এই বিষয়ে ভাব, সবাই যখন নিজের জীবনকে আবার নতুন করে শুরু করছে তাহলে তুই কেনো নিজের জীবনকে নতুন করে শুরু করবি না।
মেঘা এসব বলে নিচে চলে গেলো।
এইদিকে নির্ঝর আর এলিনার বিয়ে ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে।
দিশানী সারারাত ভেবেছে যে কি করবে অবশেষে ভোরের দিকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দিশানী সকালে নিচে আসতেই মেঘা দিশানীকে বলে,
—চোখমুখের এই অবস্থা কেনো? রাতে ঘুমাসনি?
—কিভাবে ঘুমাবো তুই তো সারারাত ভাবতে বললি।
—কি ভাবলি?
—আগে কথা বলতে চাই নীলাদ্রির সাথে।
নীলাদ্রিকে নিজে থেকে বলতে হবে যে উনি কি চান।আমি ওনার সাথে এই ব্যাপারে কথা বলতে চাই।
—চল আজকেই নীলাদ্রি দার বাড়িতে যাই, কথা বলে আসি।
—ওনাকে বাড়িতে পাওয়া যাবে?
—আজকে ছুটির দিন। চেম্বারে যেতে দেরি আছে। চল ব্রেকফাস্ট করেই যাই।
—ওনাকে ডেকে নিলে হয়না?
—এটা ভালো আইডিয়া।
মেঘা নীলাদ্রি কে ফোন দিয়ে বললো,
—তোমার সাথে খুব জরুরি কথা আছে। তাড়াতাড়ি চলে এসো এখানে এসেই ব্রেকফাস্ট কোরো।
—কি ব্যাপারে কথা আছে?
—সেটা আসলেই বলবো, তাড়াতাড়ি এসো।
—আচ্ছা।
মেঘা ফোন রাখতেই দিশানী বললো,
—আমি কিন্তু সব কথা একটু ঘুরিয়ে বলবো, হাজার হোক একটা মেয়ে আমি,এভাবে নিজে থেকে কথাগুলো বলতে আমার তো লজ্জা লাগবেই।
—আচ্ছা ঘুরিয়েই নাহয় বলিস তবুও বলিস প্লিজ।
—হুম
মেঘা আর দিশানী টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে তখনি সৌম্য এসে চেয়ারে বসতে বসতে বললো,
—নীলাদ্রি এখনো আসেনি?
মেঘা উত্তর দিলো,
—না, এখনো আসেনি। তবে এসে পড়বে কিছুক্ষনের মধ্যে।
সৌম্য দিশানীকে বললো,
—শোন দিশানী, আজকে কিন্তু তোর হাতেই সবকিছু আছে। বিয়েটা যেনো তাড়াতাড়ি খেতে পারি। ভালোকিছুর অপেক্ষায় আছি কিন্তু আমরা দুইজন।
সৌম্য ওইদিনের পর থেকে দিশানীকে তুই করেই ডাকে।
সৌম্যর কথা শুনে দিশানী বললো,
—দেখা যাক না কি হয়।

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ২১

এর মধ্যেই নীলাদ্রি চলে এলো। এসেই বললো,
—কি বলার জন্য জরুরি তলব দেওয়া হলো?
মেঘা উত্তর দিলো,
—আগে ব্রেকফাস্ট করে নাও তারপর বলবো।
সবাই ব্রেকফাস্ট শেষ করে ড্রইংরুমে এলো।মেঘা বললো,
—দিশানী তোমাকে কিছু কথা বলবে।
নীলাদ্রি দিশানীর দিকে তাকিয়ে বললো,
—কি কথা বলবে?
দিশানী জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলো,
—আপনি আমার জন্য এতো কেনো করেন? আপনি বলেছিলেন এর উত্তর আপনি একদিন দেবেন আজ এই উত্তরটা জানা আমার দরকার, হয়তো আমি উত্তরটা জানি কিন্তু এটা আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই।

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ২৩