রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ২৩ || লেখিকা : স্বর্ণা সাহা

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ২৩
লেখিকা : স্বর্ণা সাহা

দিশানী জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলো,
—আপনি আমার জন্য এতো কেনো করেন? আপনি বলেছিলেন এর উত্তর আপনি একদিন দেবেন আজ এই উত্তরটা জানা আমার দরকার, হয়তো আমি উত্তরটা জানি কিন্তু এটা আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই।
—সত্যিই শুনতে চাও তুমি?
—হুম!শুনতে চাই কারণ আপনার এই উত্তরটার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
নীলাদ্রি দিশানীর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
—তাহলে শোনো। ভালোবাসি তোমাকে। এখনো অনেক ভালোবাসি। তোমার বিয়ে হওয়ার পরে তোমাকে ভুলতে চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু পারিনি।ভীষণভাবে ভালোবাসি তোমাকে, আর বেসেই যাবো।
এই কথা শুনে মেঘা খুশিতে চিৎকার করতে নেবে তখনি সৌম্য মেঘার মুখ চেপে ধরে চুপ করতে বললো।
দিশানী চুপ করে আছে।নীলাদ্রি আবারও বললো,

—আশা করি তুমি তোমার উত্তরটা পেয়ে গেছো।
—বিয়ে করবেন না?
—কতবার এই কথার উত্তর দেবো বলোতো? আমি তো একবারই বলেছি আমি অন্য কাউকে আর কখনো ভালোবাসতে পারবোনা তাই অন্য কাউকে বিয়ে করে তার জীবন নষ্ট করার কোনো মানেই হয়না। এখন তো বুঝে গেছে কাকে ভালোবাসি আমি।
দিশানী মুচকি হেসে বললো,
—অন্য কাউকে তো বিয়ে করার কথা বলি নি আপনাকে,আপনার ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করবেন?
নীলাদ্রি দিশানীর কথার মানে বুঝতে পারেনা। তাই দিশানীকে জিজ্ঞেস করে,
—মানে, ঠিক করে বলো?
—মানেটা খুব সহজ, বিয়ে করবেন আমায়?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নীলাদ্রি দিশানীর কথায় অবাক হয়ে গেলো। এদিকে সৌম্য সিটি বাজিয়ে উঠলো আর মেঘা হাততালি দিতে শুরু করলো। মেঘা দিশানীর কাছে গিয়ে দিশানীকে জড়িয়ে ধরে বললো,
—ওরে দিশু রে কি দিলি রে?
সৌম্য নীলাদ্রির কাছে গিয়ে বললো,
—ভাই!এইবার কিন্তু আর না করতে পারবি না, আমার বোন তোকে নিজে থেকে বিয়ের কথা বলেছে এখন তুই কিন্তু না করতে পারবি না।
নীলাদ্রি দিশানীকে জিজ্ঞেস করলো ,
—তুমি নিজে থেকে আমাকে বিয়ের কথা বলছো?
দিশানী ধমক দিয়ে বললো,

—কেনো আপনি কানে কম শোনেন নাকি যে আমার কথা আপনার কানে পৌঁছায়নি।শুনুন আমি একটা মেয়ে হয়ে লজ্জার মাথা খেয়ে আপনাকে নিজে থেকে বিয়ের কথা বলেছি আপনার উত্তর যেনো হ্যাঁ হয় নাহলে কিন্তু আপনার খবর আছে।
সৌম্য আর মেঘা দিশানীর কথায় হেসে ফেললো। সৌম্য হাসতে হাসতেই বললো,
—তুই যেভাবে কথাটা বললি নীলাদ্রির আর না বলার কোনো ক্ষমতাই নেই।
দিশানী এবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো,
—এখন এসব হাসি-ঠাট্টা সাইডে রেখে আমি সিরিয়াসলি নীলাদ্রি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি আপনার উত্তরটা কি, হ্যাঁ নাকি না?
নীলাদ্রি মুচকি হেসে বললো,

—না করার সাধ্য আছে নাকি আমার। তুমি নিজে থেকে আমাকে বিয়ের কথা বলেছো এটা আমার জন্য অবিশ্বাস্য।
মেঘা নীলাদ্রিকে বললো,
—অবিশ্বাস্য কেনো নীলাদ্রি দা, তুমি যে বলেছিলে ভালোবাসায় ধৈর্য আর বিশ্বাস থাকলে সব হয় তাহলে অবিশ্বাস্য কেনো?
নীলাদ্রি উত্তর দিলো,
—তাও মনে তো ভয় থাকেই তাইনা?
দিশানী এবার বিরক্ত হয়ে বললো,

—উফ তোরা না যা-তা, আর নীলাদ্রি আপনি এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলবেন না হ্যাঁ কি না সেটা বলুন।আপনি যদি ভাবার জন্য সময় নিতে চান নিতে পারেন।
নীলাদ্রি উত্তর দিলো,
—হ্যাঁ ম্যাডাম আমি রাজী, এটা তো সোজা একটা জিনিস,এটার জন্য আমার আবার কোনো ভাবনার কি দরকার আছে। তোমরা বিয়ের ডেট ঠিক করে ফেলো। তারপর আবার বিয়ের কেনাকাটা করতে হবে তো আমাদের।
সৌম্য বললো,
—শুধু কি কেনাকাটা নাকি আরো কত কাজ বাকি আছে বলতো।

নীলাদ্রি আর দিশানী আলাদা কথা বলার জন্য বেলকনিতে এসেছে। নীলাদ্রি দিশানীকে জিজ্ঞেস করলো,
—তুমি বিয়ে করার জন্য রাজি হলে এই অসম্ভবটা সম্ভব হলো কি করে?
—সব ক্রেডিট মেঘার, মেঘার জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে।
—মেঘার জন্য কি করে?
মেঘা চা আনতে আনতে বললো,

—সরি নীলাদ্রি দা তোমাদের কথার মাঝে চলে এলাম।তুমি দিশানীকে তোমার মনের কথাগুলো জানাতে বারণ করেছিলে কিন্তু আমি দিশানীকে সব বলে দিয়েছি, তবে এর জন্য আমার কোনোরকমের দুঃখ লাগছেনা বরং আমি যে দিশানীকে সব বলে দিয়েছি এতে আমি খুব খুশি। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট, এরকম রঙহীন জীবন আমার ভালো লাগছিলো না। সবাই যেখানে নিজেদের জীবনকে গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত সেখানে তোমরা এভাবে থাকবে এটা আমার একদমই সহ্য হচ্ছিলো না। তাই আমি দিশানীকে সেদিনের সব কথা বলে দিয়েছি। আর দিশানীকে ভাবার জন্য সময় দিয়েছি।এখন শুধু তোমাদের বিয়ে হওয়ার অপেক্ষা।
দেখতে দেখতে আরো কয়েকটা দিন চলে গেলো। নীলাদ্রি আর দিশানীর বিয়ের ডেট ফাইনাল হয়ে গেছে।

নির্ঝর আর এলিনা ভালোমতোই সংসার করছে।নির্ঝরের পরিবারের সাথেও এলিনা মানিয়ে নিয়েছে।
সুজাতা নিরাকে বললো,
— নির্ঝর আর নতুন বৌমা কে ডেকে নিয়ে আয়, ওদের সাথে আমার কিছু কথা আছে।
—আচ্ছা ডেকে নিয়ে আসছি।
এলিনা আর নির্ঝর সুজাতার ঘরে আসতেই সুজাতা এলিনাকে বললো,
—দেখো বৌমা তুমি তো সবই জানো আমরা একটা নাতি-নাতনির জন্য কবে থেকে অপেক্ষা করে আছি, এখন সবই তোমার হাতে, আমাদের এই আশাটা রাখো।
এলিনা মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানালো।

দিশানী, মেঘা, সৌম্য আর নীলাদ্রি ওদের বিয়ের জন্য কিছু কথাবার্তা বলছে তখনি নীলাদ্রি বলে উঠলো,
—আমাদের বিয়ে হবে তোমার দাদা-বৌদিকে কে বলবে না?
—ওদের বলে লাভ হবে না, ওরা আসবে না।
—কিন্তু বলা তো দরকার হাজার হোক উনি তোমার দাদা হন।
—আচ্ছা ফোন দিচ্ছি। কিন্তু আপনি কথা বলবেন আমি কথা বলতে পারবো না।
—আচ্ছা আমিই বলবো তবুও তুমি ফোন দাও।
দিশানী ওর দাদাকে ফোন দিলো। প্রথমবারে উনি ফোন ধরেনি, দ্বিতীয়বার ফোন দিতেই দিশানীর দাদা ফোন ধরে তারপর বলে,

—ফোন করেছিস কেনো?শোন তোকে কোনো হেল্প কিন্তু আমি করতে পারবো না।
দিশানী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
—দরকারের সময়ই তোকে ফোন করে সাহায্য চাইলাম না আর এখন তোকে সাহায্যের জন্য ফোন করবো?আমাকে কি পাগল কুকুরে কামড়েছে নাকি। যাই হোক,শুনেছিস নিশ্চই সামনে আমার বিয়ে?
—না শোনার কি আছে? খবর কি আর থেমে থাকে নাকি এমনিতেই খবর পাওয়া যায়। এসব খবর হাওয়ায় ভাসে।

—খবর যখন পেয়েছিস তাহলে তো ভালোই। শোন তোর সাথে একজন কথা বলবে।
দিশানী নীলাদ্রির হাতে ফোন দিলো। নীলাদ্রি কুশল বিনিময় করে বললো,
—দাদা, সামনে তো আমার আর দিশানীর বিয়ে। দিশানী তো আপনার বোন হয় আপনি বিয়েতে না আসলে খুব খারাপ দেখাবে। আমরা দুজন চাই আপনি এই বিয়েতে আসুন।
দিশানীর দাদা উত্তর দিলো,

—না ভাই। আমার এই বিয়েতে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই।বিয়ে ঠিক করার সময় তো আমাদেরকে লাগেনি তাহলে এখন লাগছে কেনো?ও নিজেই যখন বিয়ে ঠিক করেছে তখন একা একাই বিয়ে করুক। আমরা যাবো না।
—এটা কেমন দেখায় দাদা? আপনারা না আসলে আমাদের খারাপ লাগবে।আপনাদের আশীর্বাদ তো দরকার আমাদের।

রঙহীন জীবনের রঙ পর্ব ২২

দিশানী নীলাদ্রির কথা শুনে বুঝতে পারলো ওর দাদা বিয়েতে আসার জন্য না করে দিয়েছে আর ওর দাদা যেরকম মানুষ নিশ্চই আরো কিছু বলেছে।
দিশানী নীলাদ্রির হাত থেকে ফোন নিয়ে ওর দাদাকে বললো,
—শোন আসলে আসবি না আসলে নাই। আমরা আমাদের কর্তব্য পালন করেছি।এখন তুই বড় ভাই হয়ে যদি নিজের দায়িত্ব ভুলে যাস তাহলে সেটা তোর ব্যাপার। না আসিস একটু আমাদের নতুন জীবনের জন্য আশীর্বাদ করে দিস তাহলেই হবে।রাখছি।

দিশানী ফোন কেটে দিলো।নীলাদ্রি দিশানীকে বললো,
—এভাবে না বললেও পারতে হাজার হোক উনি তোমার দাদা হয়।
—শুধু সম্পর্কের খাতিরে ও আমার বড় দাদা হয় তাছাড়া আর কিছু না। বড় দাদা হিসেবে ও আমার কোনো দায়িত্বই পালন করেনি। মা মারা যাওয়ার পরে তো একপ্রকার সম্পর্কই ছিন্ন করে দিয়েছে আমার সাথে।তাহলে ওর সাথে এভাবে কথা না বলে আর কিভাবে কথা বলবো আমি?

রঙহীন জীবনের রঙ শেষ পর্ব