শেহজাদী পর্ব ২৪ || Arishan Nur || রোমান্টিক গল্প

শেহজাদী পর্ব ২৪
Arishan Nur

নিস্তব্ধ, গুমোট, ছন্নছাড়া আকাশে বিরাজ করছে ভেলা ভেলা মেঘ। বৃষ্টি থেমে গেলেও কালো মেঘ উবে যায়নি বরং আকাশের বুকে থেকে উঁকিঝুকি মারছে। আবারো যখন-তখন বর্ষণ শুরু হতে পারে।
ইমান আর মিরা রাব্বি নামের ছেলেটার সঙ্গে হাঁটা ধরেছে। চায়ের দোকান থেকে মেঠোপথের মতো মাটির রাস্তা ধরে হাঁটছে তারা। বৃষ্টি হওয়ার জন্য মাটির রাস্তা কাদো কাদো হয়ে আছে।
ইমান ফিসফিসিয়ে বলে, মিরা তোমার ফোন কোথায়? বের করছো না কেন? ফোন সঙ্গে থাকা ভালো।

মিরা চারপাশে চোখ বুলিয়ে বললো, ফোন চার্জে ছিল আর আমি একটু হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। বলেছি না একবার যে ফোন আনিনি? আপনার তো দেখি শর্ট টাইম মেমোরি লসের রোগ রয়েছে৷
— ফালতু কথা ছাড়ো তো! আর ফোন সঙ্গে না আনলে তখন কিভাবে জানলে হাইওয়ে থেকে আমরা যে হোটেলে উঠেছি তা এক ঘন্টার ওয়াকিং ডিসটেন্স? হু?
— আরে বাবা! জেরা করছেন কেন? আমি কি একবার ও বলেছি যে তখনই গুগল ম্যাপ দেখেছি? হোটেলে থাকতেই আমি আর ইরা বসে বসে আশেপাশের স্পট গুলো সম্পর্কে ধারণা নিচ্ছিলাম তখন শো করেছিলো। ক্লিয়ার?

ইমান ঠোঁট বাকিয়ে বলে, তুমি মানুষটাই মাথা থেকে পা ঝামেলায় ভর্তি। যার ভাগ্যে তুমি আছো, তার কপালে একটা বড়সড় বাঁশ জুটবে।
মিরা কথার পিঠে কিছু বলবে,কিন্তু কি ভেবে যেন কথা বলতে গিয়েও থেমে গেল। তার বুক হুহু করে উঠে কিন্তু কেন?সে কি কোনভাবে চায় তার এবং ইমানের অসম্পূর্ণ সম্পর্ক আবারো গড়ে উঠুক? বাবা তো এটাই চান! বাবার চাওয়াই কি তার চাওয়া?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আচমকা কি যেন হলো! অমনোযোগী হয়ে হাঁটার দরুণ ইটের সমেত কাদায় পা ফেলে সে। মিরার স্যান্ডেল কাদামাটিতে ডেবে গেল এবং পাশে পড়ে থাকা ইটের সঙ্গে পায়ের গোড়লীতে লেগে মিরা ভীষণ জোরে ব্যাথা পেল। সে গগনচুম্বী চিৎকার দিলো। চোখে সরিষা দেখা শুরু করেছে সে। তীব্র ব্যাথায় সে নেতিয়ে পড়ে। দুনিয়া শূন্য এবং অর্থহীন লাগতে লাগলো তার কাছে।
ইমান আর রাব্বি একটু সামনে এগিয়ে গিয়েছিল। মিরার আর্তনাদ শোনামাত্র তারা পেছন ঘুরে তাকায়। মিরার কালো মুখ দেখে ইমান পেছনে ফিরে যায়।

মিরার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে, কি হলো আবার?
মিরা কাদো কাদো মুখে বলে, আমার পা বোধহয় মরেই গেল!
— পা আবার মরে যায় কিভাবে?
— জানি না! শুধু জানি আমার পা আর নেই!
ইমান বিরক্ত হয়ে বলে, লিসেন মিস ড্রামাকুইন! এম্নিতেই বহুল ক্যাচাল করেছো। দোহাই লাগে আর ঝামেলা করিও না।
মিরা অসহায় গলায় বলে, আমি ঝামেলা করি?
— খুব!

মিরা ছোট বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে বলে, তাহলে আসলেন কেন? যান। চলে যান। আমার জন্য ঝামেলা পোহাতে হবে না। আমি একাই এখানে বসে থেকে পায়ের ব্যাথায় মরে যাব।
ইমান পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলে, থাক আর ঢং করতে হবে না! কি হয়েছে বল!না বললে বুঝব কিভাবে?
— আমি পায়ে ভীষণ ব্যাথা পেয়েছি। নড়াতেও পারছি না পা! পায়ের ব্যাথাতেই আমি মারা যাব।
ইমান মিরার পায়ের দিকে তাকালো। অন্ধকার জন্য কিছু দেখা যাচ্ছে না৷
রাব্বি এবারে এগিয়ে এসে বলে, বোধহয় ভাবীর পা মচকে গেছে। শহরের মেয়ে উনি! গ্রামের কাদায় হেঁটে অভ্যাস নাই তো!

মিরা ঝুকে এসে নিজের পা ধরে বসে রইল।
ইমান বলে, আস্তে আস্তে হাঁটার চেষ্টা কর৷
মিরা হালকা কাতর হওয়া গলায় বলে, আস্তে হাঁটা তো দূর আমি পা নাড়াতেও পারছি না৷
— তাহলে রাব্বির বাসায় যাবে কিভাবে?
মিরা অভিমানী কণ্ঠে বলে, আমাকে রেখেই চলে যান।

রাব্বি বললো, ভাইয়া! আপনি ভাবীকে কোলে তুলে নেন। বাকি পথ কোলে করেই নিয়ে যান৷
ইমান তার কথা শুনে চুপ রইল। মিরা ইমানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, না। না। রাব্বি। তোমার ভাইয়া আমাকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটতে পারবে না। তার কষ্ট হবে। হাঁপিয়ে যাবে। কি দরকার? উনার সাধ্য নেই আমাকে কোলে তুলে হাঁটার!
মিরার কিউট গলায় ঠেস মারা কথাটা ইমানের গায়ে লাগলো খুব! মিরার মতো চিকন মেয়েকে কোলে তুলে হাঁটতে পারবে না সে? এতোটাও অকর্মক না সে! জিম আগের মতো রেগুলারলি না করলেও সে এখনো যথেষ্ট ফিট আছে। একটা মিরা মাত্র কেন ! দশ-দশটা মিরাকে একসঙ্গে তুলেও সে বহুত আরামেই হাঁটতে-চলতে পারবে!

ইমান তার দিকে এগিয়ে আসে। এতে সে ঘাবড়ে গিয়ে হালকা হেসে বলে, আমি পায়ের ব্যাথায় মরে যাচ্ছি,,,,,,
আর কিছু বলবে তার আগেই ইমান তাকে কোলে তুলে নেয়। মিরা হতভম্ব, অবাকের শেষসীমা এমনকি স্তব্ধ হয়ে যায়। তাকে সত্যি সত্যি কোলে তুলে নিল ইমান!
ইমান তাকে কোলে তুলে নিয়ে বলে, রাব্বি সামনে আগাও!

মিরা চুপচাপ ইমানের কোলে বসে রইল এবং ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে তার দিকে। মিরার হৃদয়ের ভেতরে কি যেন হয়ে যাচ্ছে। বিশাল বড় বড় রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটছে না তো? তার গা, হাত-পা শিরশির করে উঠছে৷ ভীষণ লজ্জায় লাল হয়ে গেল সে। দ্রু মুখ লুকানোর চেষ্টা করছে সে।
রাব্বি দাত কেলিয়ে হেসে বলে, ভাইয়া! আপনাকে আর ভাবীকে একসঙ্গে কি সুন্দর মানিয়েছে! আল্লাহ সবসময়ই এমন হাসি-খুশি রাখুক আপনাদেরকে। খুব ভালোবাসেন একে অপরক তাই না?
ইমান জবাব না দিলেও, মিরা মাথা ঝাকালো বেশ জোরেই মাথা নিচু রেখেই!

রাত এগারোটা বাজতে চললেও মিরা আপুর আসার নাম-গন্ধ নেই জন্য ইরা টেনশনে মরে যাচ্ছে। সেই কখন হাটার নাম করে বের হলো! এখনো আসছে না৷
ইরা হোটেলের লবিতে বসে আছে। আপু কি অফিসের কাজ করতে গেছে কোথাও? চৌধুরী ভাইয়া কোথায়? বড্ড অস্থির লাগছে তার।

তখনই সাদকে ওয়াইন হাতে হোটেলের পুল সাইড থেকে বের হতে দেখেই ইরার চোখ কপালে। এই ছেলে এতোরাতে পুলের দিকে কি করছিল? হাতে খারাপ জিনিস নিয়ে ঘুরছে! কি বেহায়া সে!
সাদ ইরার দিকে চোখ বড় করে তাকালো। সম্ভবত এই সময় ইরাকে এখানে আশা করেনি সে।
সে হাতের গ্লাসটা পাশের টেবিলে রেখে ইরার কাছে গিয়ে বলে, ইরাবতী আপনি এখানে কি করছেন?
ইরা ঝাঝালো কণ্ঠে বলে, আমার নাম ইরা। ইরাবতী বলে কেন ডাকছেন?
সে দাত কেলিয়ে হেসে বলে, আদর করে ডাকি।

ইরার চোখ অটোমেটিকলি বড় হয়ে গেল। সাদ শব্দ করে হেসে বলে, আপনি এতোরাতে কি করছেন? রুমে যান।
— কেন আমি থাকলে ফূর্তি করতে সমস্যা হচ্ছে?
— না। তা না।
— পুলে সাইডে সম্ভবত ক্লাব আর বার আছে তাই না?
— হুম। যাবেন?
— ছিঃ!!
— কি করছেন এখানে? বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলেন?
— আমার কোন বয়ফ্রেন্ড নেই।
— জুটায় নেন।
— ইচ্ছে নেই।

শেহজাদী পর্ব ২৩

— আমার তো অনেক ইচ্ছা করছে আপনাকে গার্লফ্রেন্ড বানাতে।
ইরা হতভম্ব হয়ে গেল এবং রাগী গলায় বলে, ফাজলামি পেয়েছেন সবকিছু?
সাদ তার দিকে এগিয়ে এসে বলে, দুনিয়াটাই তো ফাজলামো! আপনি করবেন আমার সঙ্গে ফাজলামি?
— একটা কষে থাপ্পড় দিব। আপনার মুখ দিয়ে ভোটকা গন্ধ আসছে। কয় গ্লাস খেয়ে এসেছেন?
সাদ হেসে বলে, গ্লাস না পেগ বলে। আমার লিমিট পাচ পেগ। আজকে ভাইয়া নাই জন্য নয় পেগ গিলেছি। এই মূহুর্তে আপনাকে চুমু দিতে মন চাচ্ছে। ইরা আমি যদি আপনাকে জড়িয়ে ধরি আপনি রাগ করবেন?

কথাটা শেষ করেই সাদ আরো একটু এগিয়ে আসে।
ইরা প্রচন্ড ভয় পাওয়া চোখে সাদের দিকে তাকায়। এই মাতালটা কিছু করে বসবে নাতো!
সাদ ঘোর লাগা কণ্ঠে বলে, মিস ইরা! রুপের ঝলক বলে কিছু থাকলে আপনি সেই রুওএর ঝলকপুরের রাজকন্যা! আকাশ-পাতাল, জমিন-আসমানকে সাক্ষী রেখে বলছি, আই লাভ ইউ।
ইরা নির্বাক হয়ে পড়লো। কি বললে ভেবে পাচ্ছে না সে।কখন, কবে, কোনদিন এই হাদারামটা তার প্রেমে পড়ে গেল?
আচমকা তার গালে উষ্ণ ছোয়া এসে হামলা করলো। কেউ একজন শক্ত করে তার কোমড় চেপে ধরলো।

শেহজাদী পর্ব ২৫