Tell me who I am part 23
আয়সা ইসলাম মনি
সকালবেলা অকস্মাৎ কারান কেন যেন অন্য রকম হয়ে উঠল। হঠাৎ করে কী ভেবে মিরার কোমর এক হাতের জালে আটকে দিয়ে, খানিকটা দুঃখে মিশিয়ে হতাশ কণ্ঠে বলল, “তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছো, তাই না মিরা?”
মিরা কক্ষ থেকে বেরিয়ে রন্ধনশিল্পের মগ্নতাকে একপাশে সরিয়ে, এখন পুরোপুরি কারানের এই কথা বোঝার চেষ্টায় মনোযোগী হলো। তবে এই বাক্যের ভিতর কোনো দুঃখজনক অতীত ঘটনা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, নাকি অন্য কোনো কণ্টকিত বিষয় ছড়িয়ে পড়ছে, তা এখনই বুঝতে পারছে না মিরা। কিন্তু একথা পরিষ্কার যে, এটি সেই কোনো এক পুরোনো ঘটনার সাথে সম্পর্কিত, যা মিরার মনে আজও গভীরভাবে গেঁথে রয়েছে।
মিরার কোনো সাড়া না পেয়ে, কারান একেবারে নীচু আওয়াজে উচ্চারণ করল, “এগারো মাস।”
এবার মিরা খুবই সামান্য ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটিয়ে শীতল কণ্ঠে বলে, “জীবনের অন্ধকার দিকটি মেনে নেওয়া অপরিহার্য, কারণ তা না হলে আলোর প্রকৃত সৌন্দর্য অনুভব করা সম্ভব নয়, কারান। দুঃখের অনলে পুড়ে, তখনই সুখের আসল রূপ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।”
এত গভীর ভাবার্থপূর্ণ বাক্য শুনে, কারান স্তম্ভিত হয়ে মস্তক কিছুটা ঝুঁকিয়ে মিরার মুখমণ্ডলকে নিবিষ্ট দৃষ্টিতে দেখতে থাকে। মস্তিষ্কে একটাই চিন্তা চলে আসে, ‘সত্যিই তো; যদি আমরা সর্বদা স্বাচ্ছন্দ্যের মাঝে জীবন অতিবাহিত করতাম, তবে সুখের প্রকৃত অর্থ কি কখনো বুঝতে পারতাম?’
একটু সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর, কারান মুখে সামান্য হাসি ফুটিয়ে বলে, “মনে হয়, তুমি বলেই এত টর্চার সহ্য করেছো। অন্য কেউ হলে তো নিশ্চিত ডিভোর্স দিয়ে ফেলত।”
মিরা কিঞ্চিৎ হাসি দিয়ে গম্ভীরভাবে বলে, “এদিক থেকে আমি বেশ স্বার্থপর। তোমাকে ডিভোর্স দেওয়ার চিন্তা ভুলেও মাথায় আনিনি। কি দরকার এমন একটা ছেলেকে ডির্ভোস দেওয়ার। পরে যদি কোনো বুড়ো বেটার সাথে বিয়ে দিত!”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“তাহলে স্বীকার করছো, তোমার হাসবেন্ড হ্যান্ডসাম, তাই তো?”
মিরা একপলক কারানের দিকে তাকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে বলে, “কখন বললাম? তোমাকে তো বাঁদরের মতো দেখায়। ক্রিস ইভানসকে দেখেছো? কতটা সুদর্শন!”
কারানের মুখের হাসি মূহুর্তেই মিলিয়ে গেল। একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে খানিক চুপ করে থাকল। মৃদু কণ্ঠে বলল, “দুনিয়াটা এমন কেন, মিরা? যে মানুষের কাছে সবচেয়ে স্পেশাল হতে চাই, তার চোখেই আমি সবচেয়ে তুচ্ছ। যার ভালোবাসার জন্য নিজের সবকিছু উজাড় করে দিতে ইচ্ছে করে, তার কাছ থেকেই সবচেয়ে গভীর আঘাত পাই। অথচ সেই মানুষটি বাদে দুনিয়ার সবাই আমাকে স্বীকৃতি দেয়, প্রশংসা করে। মাঝেমধ্যে মনে হয়, আমি যেন প্রিন্সেস ডায়নার ভাই। তার সেই মর্মস্পর্শী কথাটা বারবার মনে পড়ে-
‘আমি যাকে ভালোবাসি, সে ছাড়া পুরো পৃথিবী আমাকে ভালোবেসেছিল।’
কিন্তু সেই একজন মানুষের ভালোবাসার শূন্যতা গোটা দুনিয়ার ভালোবাসাকেও নিস্তেজ করে দেয়।”
কারানের কণ্ঠে লুকানো বেদনার স্পর্শ, মিরার হৃদয়ের গভীরে চাপা অস্থিরতা জাগিয়ে তুলল। তবে কি তার কথাগুলো কারানকে এতটা ব্যথা দিচ্ছে? মিরার অন্তরেও যে অশান্তির ঢেউ বয়ে যাচ্ছে, কারান কি তা অনুভব করতে পারছে না?
মিরা নিজেকে সংবরণ করল। ভেতরের হাজারো ঝড় চেপে রেখে ধীরে ধীরে কারানের দিকে এগিয়ে গিয়ে আলতোভাবে তার কাঁধে হাত রাখল। কারানও এই মুহূর্তের প্রতীক্ষাতেই ছিল।
মিরার কোমল স্পর্শে সে তাকে আরো কাছে টেনে নিয়ে কাঁপা গলায় বলে উঠল, “বলো না মিরা, ভালোবাসো আমাকে?”
মিরা চুপ করে রইল। এরপর চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নিয়ে বলল, “বলবো। কোনো একদিন বলবো। ততদিন নাহয় অপেক্ষা করো।”
“আর কবে মিরা?”
“কারান, ‘ভালোবাসি’ শব্দটা সবসময় ব্যবহার করা উচিত নয়। এ যেন কোনো রত্ন, যা বারবার প্রদর্শিত হলে তার ঔজ্জ্বল্য হারায়। পৃথিবীর সমস্ত মূল্যবান কথা মানুষ একবার বলে, কিংবা খুব বেশি হলে দু-তিনবার; তাতেই তার ভার থাকে, তার মহিমা অটুট থাকে। ভালোবাসি শব্দটাও তেমনই। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে মহামূল্যবান উচ্চারণ। তাই আমি এই শব্দটি তখন বলবো, যখন এই শব্দটি শোনা তোমার জন্য খুব বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে উঠবে।”
কারান একটা দীর্ঘ শীতল শ্বাস ছেড়ে স্বচ্ছ হাসিতে বলে উঠল, “তোমার প্রতিটি কথায় এত জটিলতা কেন, মিরা? মনে হয় ম্যাথেমেটিক্সের কমপ্লেক্স নাম্বারস চ্যাপ্টারটাই তোমার সবচেয়ে প্রিয় ছিল।”
মিরা হেসে জবাব দিল, “না না, তোমার মতো অতটা ব্রিলিয়ান্ট ছিলাম না আমি। সেই আই মাইনাস ওয়ান-এর ম্যাথ করতে গিয়ে আমার সব নিউরন গুলিয়ে যেত।”
“কিন্তু আমি জানি, আমার বউ ব্রিলিয়ান্ট। সেটা তুমি যতই অস্বীকার করো না কেন।”
মিরা ভ্রূ কুঁচকে সন্দেহের ভান করে বলে উঠল, “তুমি না বলেছিলে, আমার সম্পর্কে কিছুই জানো না!”
কারান রহস্যমাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে একটু হাসল।
“সে তো আগে বলেছিলাম। এখন তোমার পুরো হিস্ট্রি জানি।”
“তাহলে এবার আমাকে বিদায় দিন, জাহাঁপনা। রান্না করা এখনো বাকি আছে যে।”
কারান এক ভ্রূ উঁচিয়ে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল,
“বাহ! আমার বউ তো অনেক উন্নতি করেছে। আচ্ছা যাও, বুকে পাথর চাপা দিয়ে তোমাকে রান্নাঘরে পাঠাচ্ছি। মনে রাখবে, এই হৃদয়টা কষ্টে ভেঙে যাচ্ছে।”
মিরা হেসে বলে, “এই নাটক করলেই রান্না হয়ে যাবে না, মহাশয়।”
এরপর মৃদু হাসির মায়াবী সুরে মিরা রান্নাঘরের উদ্দেশে প্রস্থান করল। আর কারান দেয়ালে হেলান দিয়ে হেসে মিরার চলে যাওয়া দেখতে থাকে।
রাত প্রায় দুইটা। পৃথিবীটা সচল থাকলেও মিরার মনটা বিষাদে নিমজ্জিত। সেই দুঃসহ দৃশ্যের চিত্র তার মনে ঝলকানি হয়ে জেগে উঠেছে।
মিরা বারান্দায় এসে বাতায়নের পাশে দেয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে গভীর চিন্তায় মনোনিবেশ করেছে।
“আচ্ছা, কারান তো নিশ্চয়ই ওদের স্কেচগুলো কাকাইকে দিয়েছে। কিন্তু কাকাই কি আসলেই ধরতে পারবে ওদের? আর ধরলেও, ওদের যে শাস্তি প্রাপ্য, তা তো পুলিশরা দিতে পারবে না। (থেমে) আজকের এই বয়সে আমি যদি ঐ অবস্থানে থাকতাম, তাহলে নিজের জীবন বাজি রেখে হলেও মেয়েটাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতাম। হয় দুজনেই মরতাম, নয়তো দুজনই বেঁচে যেতাম। ইশ! জানোয়ারও মনে হয় অতটা ভয়ঙ্কর হয় না, যতটা ওই তিন পিশাচ ছিল।”
এর মধ্যেই মিরার গভীর ভাবনায় জল ঢেলে পিছন থেকে সুধাময়ী কণ্ঠে কারান বলে ওঠে, “ঘুমাচ্ছো না কেন, বেগম?”
মিরা এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বিষণ্নভাবে উত্তর দেয়,
“তুমি ঘুমাও। আমি কিছুক্ষণ পরে ঘুমাবো।”
“আমি তো এখন গোসল করবো।”
মিরা অবাক হয়ে পিছন ঘুরে ভ্রূ দুটো সঞ্চালিত করে বলে, “এত রাতে তুমি গোসল করবে? ভূতে ধরেছে তোমাকে?”
কারান মিষ্টি হেসে বলে, “ভূতে ধরেনি, প্রেমে ধরেছে। কিন্তু বউ তো সে ইচ্ছেটা পূরণ করবে না। তাই গোসল করে প্রেমের প্রেতাত্মা নামাবো।”
মিরা নাক ফুলিয়ে হেসে ফেলে। মিরার হাসি দেখে কারানও হেসে ওঠে। তারপর কারান আবার বলে, “তাছাড়া, রাত দুইটা-তিনটা কোনো ব্যাপার নাকি! বউয়ের সঙ্গে ফি’জিক্যাল হওয়ার পর, এমন কতবার গোসল করতে হবে।”
মিরা কোনো উত্তর না দিয়ে উপরে হাত তুলে মোনাজাতের ভঙ্গিমায় বলে, “হে আল্লাহ! আপনি এই অসভ্য পুরুষটার মুখে লাগাম দিন, যেন পরেরবার কথা বলতে গেলে একশোবার ভেবে বলে। আমিন।”
তারপর মুখে হাত বুলিয়ে, কটমট করে কারানের দিকে তাকিয়ে থাকে।
কারান দুষ্টু হেসে, গোসলের সংকল্পে অগ্রসর হয়। তার চলে যাওয়ার পর, মিরা আবার আকাশের দিকে চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে। রাতের আকাশ যেমন গভীর স্নানে ডুবে গেছে, তার মনও তেমনি অজানা শূন্যতায় ডুবে গেছে।
বেশ কিছুক্ষণ পরে, গোসলখানা থেকে কারানের গম্ভীর কণ্ঠস্বর ভেসে আসে, “মিরা, বেডের ওপর থেকে বাথরোবটা দাও।”
কারানের ডাকে মিরার মস্তিষ্ক সজাগ হয়। তাই সে নিজের স্থানে দাঁড়িয়ে না থেকে, বাথরোব নিয়ে দ্রুত কারানের কাছে চলে যায়। কিন্তু কারান বাথরোবের সাথে তার বউকেও টেনে নিতে ভুলল না। মিরা কিছুটা অবাক হলেও, তার হৃদয়ের গভীরে অজানা অনুভূতির ঝংকার বেজে ওঠে। তবে কারানের মন দুষ্টু চিন্তায় বিভোর। তাই সে ঝরনার মুখ মিরার দিকে ঘুরিয়ে দিল। পানির স্রোত মিরার চোখে এসে পড়লে, সে চোখ বুঝে জল ঝেড়ে চোখ মেলতে চেষ্টা করে। কিন্তু কারান তো ছাড়ার পাত্র নয়। এবার আরো গভীরভাবে মিরাকে নিজের মধ্যে জড়িয়ে ধরে।
মিরা বিরক্তির গলায় বলল, “কি করছো তুমি? ঠান্ডা লেগে যাবে, কারান। সরো তো! আমি কিন্তু তোমার মতো আজব জীব নই, যে রাতের বেলা গোসল করবো।”
কারান কুটিল হাসি হেসে বলে, “চুপচাপ এভাবেই থাকো। আদারওয়াইজ, উলটো-পালটা কিছু করে ফেলব।”
এই কথা শুনে মিরা অগ্নিশর্মা হয়ে উঠল। তাই কারানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে যেতে চাইল, কিন্তু কারান এক লহমায় তার ঠোঁটগুলো নিপুণভাবে নিজের দখলে নিয়ে নিল। অকস্মাৎ আক্রমণে মিরা চোখ দুটো বন্ধ না করে আচ্ছন্ন হয়ে তাকিয়ে রইল। ঝরনার শশকধ্বনির সঙ্গে মিলেমিশে কারানের শীতল ও নিরন্তর পানির মতো স্পর্শ মিরার হৃদয়কে গভীরভাবে ক্রশিত করছে। কারান তার শরীরের প্রতি দখলদারিত্ব আরো প্রবল করল।
মিরা হাত দিয়ে সরিয়ে কারানকে মুক্ত করতে চাইল, কিন্তু কারান তাকে আরো নিবিড়ভাবে নিজের সাথে আঁকড়ে ধরলো। এতে মিরার শরীর খানিকটা সংকুচিত হয়ে যায়। মিরা নড়াচড়া করতেও ভুলে গেল, এক প্রকার অচেতনতার মধ্যে হারিয়ে গেল। দীর্ঘক্ষণ চুম্বনের পর কারান তার ঠোঁট সরিয়ে নিল। তবে মিরার মাঝে অশান্ত অনুভূতির ঝড় তোলার জন্য এই চুম্বনই যথেষ্ট ছিল।
মিরা চক্ষুদ্বয় মেলে দেখে কারান গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মিরার সম্পূর্ণ ভিজে যাওয়া মুখাবয়ব আর দেহ কারানকে অস্বাভাবিক তীব্রতার অনুভূতিতে আচ্ছন্ন করে ফেলল। মিরার সৌন্দর্য যেন অপরিসীম রহস্যে মোড়া, যা কারানকে অস্থির করে তুলল। সে অবাক হয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে মিরার আকর্ষণ অতুলনীয় ও অদ্বিতীয়! মিরা মানুষ না হয়ে পরী হলেই তো পারতো!
পানির ক্ষীণ স্রোত মিরার চোখের কোণ ছুঁয়ে ওষ্ঠাধর বেয়ে ধীরে ধীরে গড়িয়ে পড়ছে। সেই স্বচ্ছ ফোঁটাগুলি কারানের মনে আগ্নেয় জ্বালা সৃষ্টি করল। এই পানি, এই নির্লজ্জ জলকণাও যদি মিরার দেহের প্রতিটি কোণে ছুঁয়ে যেতে পারে, তাহলে সে স্বামী হয়ে কেন পারবে না! এ অন্যায় সহ্য করার মতো নয়।
কারানের হৃদয়ের গভীরে তীব্র আকাঙ্ক্ষার বিস্ফোরণ ঘটল। মিরার প্রতি তার যে অধিকার, তার যে তীব্র মোহ, তা তাকে প্রতিটি শ্বাসে গ্রাস করতে লাগল। এবার আর কোনো দ্বিধা নয়, আর কোনো অপেক্ষা নয়।
তাই তার হাতের সঞ্চারে মিরার শাড়ির আঁচল নিচে ফেলে দিল। কারান মিরার কাঁধে ঝুঁকে এসে তার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিল। মিরা সামান্য কেঁপে উঠলেও, তার অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা তাকে প্রতিরোধ করার কোনো শক্তি দিল না।
কারানের অন্তরে মিরাকে অধিকার করার অভূতপূর্ব বাসনা প্রবল হয়ে উঠল। ক্ষণিকের জন্য মিরার গলাকে ঠোঁট দিয়ে স্পর্শ করার পর, কারান আরো অনবদ্য হয়ে উঠল।
তাই নিমীলিতলোচনে কারান মিরার কাঁধে গভীরভাবে কামড় বসিয়ে দিল। প্রথম কামড়ে মিরার ভিতরে উন্মাদনা সৃষ্টি হলেও দ্বিতীয় কামড়ে তার সমস্ত উত্তেজনা অবলুপ্ত হয়ে মুচড়ে যেতে শুরু করল। মিরার ঘাড়ে কামড়ের গভীরতা এতই প্রবল হয়ে উঠে যে, তার ঘাড় থেকে কয়েক ফোটা টগবগে শীতল রক্ত গড়িয়ে পড়ল। এবার মিরা কারানকে সরানোর অদম্য চেষ্টা চালাতে থাকে। কিন্তু কারানের যে অবস্থা তাতে তাকে থামানো আর সম্ভব হয়নি।
মিরার গলা সম্পূর্ণ লাল হয়ে গেল। যেন চামড়া ফেটে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসবে। এই অবস্থায় কারানের ভালোবাসা মিরার প্রতি বিষের মতো প্রবাহিত হচ্ছে। মিরার চক্ষুদ্বয় ইতিমধ্যে জলপূর্ণ হয়ে গেছে। এর পরেই কয়েক ফোঁটা জল ঝরনার পানির সঙ্গে মিশে যেতে লাগল।
অবশেষে মিরা ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বলল, “কারান, আমার লাগছে। প্লিজ, থামো।”
কিন্তু মিরার এই মিনতি কারানের উত্তেজনাকে আরও তীব্র করে তোলে। কারান হেসে মিরার কুচির বাঁধন খুলে দিতেই, মিরা কারানের বুকে ধাক্কা দিয়ে বাথরুমের দেয়ালের সঙ্গে মিশিয়ে দেয়।
অতঃপর কারান তার মনের মোহ থেকে মুক্তি পেয়ে আস্তে আস্তে বাস্তবতায় ফিরে আসে।
মিরা অশ্রুপাতে ভরা চোখে কাঁপানো গলায় বলে, “কেন এমন করছো, কারান? আমি এই ভালোবাসা নিতে পারছি না… আমার যন্ত্রণা হচ্ছে।”
যেখানে কিনা একটু আগেও কারান তার সত্ত্বা দিয়ে এই ভালোবাসায় পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করেছিল, সেই ভালোবাসার মানুষের কণ্ঠে এমন অপ্রত্যাশিত, বিধ্বংসী কথা শুনে তার মন অতৃপ্ত, বিষন্ন হয়ে ওঠে।
কারান রক্তাক্ত চোখে চোয়াল শক্ত করে বলে, “বেরিয়ে যাও।”
মিরা কপাল কুঁচকে কারানের পানে অপলক তাকিয়ে থাকে। মিরা কখনো কল্পনাও করেনি, কারানের থেকে এমন কঠিন, নিষ্ঠুর বাক্য শুনবে। সে তো ভাবেছিল, কারান স্নেহের গভীরতা প্রকাশ করবে।
মিরা ব্যথায় কাতর হয়ে চাপা আর্তনাদে বলল, “কা-কারান…”
কারান চোখ তুলে মিরার দিকে তীব্র দৃষ্টি নিবদ্ধ করে তীক্ষ্ণ চিৎকারে বলে, “বেরিয়ে যেতে বলেছি তোমাকে।”
চিৎকারের ধ্বনিতে মিরার শরীর কেঁপে উঠল। কারানের মুখাবয়বের অপরিসীম উগ্রতা অনুভব করে, মিরার ভেতর অজানা শঙ্কার জন্ম হলো। তাই সে আতঙ্কে চুপচাপ বেরিয়ে গেল। মিরা চলে যাওয়ার পর, কারান দেয়ালে এক তীব্র মুষ্টিঘাত করল। কিন্তু সে নিজেকে সংযত করতে পারছে না।
অঙ্গভঙ্গির ভেতর তীব্র উদ্বেগের ছাপ রেখে সে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “এই মেয়ে আমাকে ধ্বংসের অতল গহ্বরে টেনে নিয়ে যাবে। তার শরীরের প্রতিটি অংশ আমাকে পরাভূত করবে। তার সৌন্দর্য আমাকে শেষ করে ফেলবে। উফফ, উফফ! থামো, কারান, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করো।”
তবে কারান পুরোপুরি উত্তেজনার আগুনে পোড়া। কোনোভাবেই নিজেকে শান্ত করার উপায় খুঁজে পাচ্ছে না।
চোখ-মুখ চেপে ধরে নিজের অস্থিরতা ঢেকে রাখার চেষ্টা করল, “আমার মিরাকে লাগবে। আই ফিল লাইক আ’ম স্লিপিং আউট অফ কন্ট্রোল। আআআআ!”
নিজেকে শান্ত করার একমাত্র পথ হিসেবে নিজের মাথার চুল টানতে থাকে।
অন্যদিকে মিরা ব্যথিত হলেও কারানের জন্য আবেগ তৈরি হলো।
“না, ওকে এভাবে ছেড়ে চলে আসা উচিত হয়নি। আমি ভুল করেছি। হয়ত ও অনিচ্ছাকৃতভাবে এমন আচরণ করেছে। কিন্তু এই মুহূর্তে, অন্তত ওর কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরা উচিত।”
এই ভাবনায় মিরা আবার গোসলখানায় ফিরে গিয়ে গভীর শ্বাস নিয়ে বলে, “কারান।”
দেয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকা কারান, মিরার মধুর কণ্ঠ শুনে আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। কারান বুঝতে পারছে, এখন সে নিজের প্রলোভন ও আকাঙ্ক্ষার মধ্যে আটকা পড়েছে। একে তো উত্তেজনা, তার উপরে রাগ আর উন্মাদনা। কারান জানে, এখন মিরার কাছে যাওয়া যাবে না।
কারান মুখ ফিরিয়ে চোখ বন্ধ করে আবার খুলে। কিন্তু নিজের আবেগকে দমন করতে না পেরে তীক্ষ্ণ কটমট কণ্ঠে বলল, “বোকা মেয়ে, দূরে সরো। তুমি কি বুঝতে পারছো না আমি কি পরিস্থিতিতে আছি? আমার কাছে এসো না। আমি তোমাকে শেষ করে ফেলব।”
কারানের ভয়াবহ কথাগুলো শোনার পর, মিরা আঁতকে উঠে ভয়ে বাথরুম ছেড়ে বেরিয়ে আসে। কিন্তু যখন তার ভিজা শরীরের সুঘ্রাণ বাতাসে ভেসে এসে কারানের সত্ত্বাকে আরো গভীরে আকর্ষণ করে, তখন আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। তাই কারান তড়িঘড়ি করে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে মিরার মাথার পিছন অংশ শক্ত করে ধরে চুম্বনের আকাঙ্ক্ষায় মিরার ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিশিয়ে দেয়।
এবারও সেই অসংযত, বেপরোয়া চুম্বন। মিরার মনে হচ্ছে, কারান তার ঠোঁটের মাধ্যমে নিজের অভ্যন্তরীণ ক্ষুধা মেটাচ্ছে, আর তার অস্থিরতাকে শান্ত করছে। এক পর্যায়ে কারান তার অধরকে তীব্রভাবে কামড়ে ধরে। এতে কারানের নগ্ন বুকে মিরার ঠোঁট থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়তে থাকে। আর মিরার মনে ভয়াবহ যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ে। মিরার চোখ ভরা অশ্রু, শরীর যেন অবশ হয়ে আসে। সে চোখ বন্ধ করতে চায়, কিন্তু সেই যন্ত্রণা তার অস্তিত্বের মধ্যে গেঁথে যায়। তার সমস্ত শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়।
অনেকক্ষণ পর যখন কারান তার ঠোঁট ছেড়ে মিরার শরীরের অন্য অংশে রাজত্ব করার চেষ্টা চালাতে থাকে, ততক্ষণে মিরা নিজের শরীরের সমস্ত ভার কারানের হাতে ছেড়ে দিয়ে অচেতন হয়ে পড়ে যেতে শুরু করল। কিন্তু কারান শক্ত হাতে মিরাকে ধরে রাখল। তার নেশামাখা দৃষ্টিতে মিরার মুখাবয়ব পরখ করতে লাগল। মিরার দুধ সাদা ত্বকে রক্তের ফোঁটাও অমৃতের মতো মনে হচ্ছে। যা কারানের মনে অদ্ভুত আকর্ষণ তৈরি করছে। কারানের ইচ্ছে হলো, সেই রক্ত সে নিজে গ্রহণ করুক।
কারান নিজের ঠোঁট মিরার ঠোঁটের কাছে নিয়ে তীক্ষ্ণ হাসিতে নেশালো গলায় বলল, “Hey darling, what’s going on? I crave you so deeply. Come to bed, my love,” বলেই মিরাকে নিজের কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিল।
এবার কারান উন্মত্ত চেহারায় মিরার ঠোঁটের কাছে গিয়ে হালকা স্পর্শে মিরার কপোল ও ললাট থেকে ছোট চুলগুলো সরিয়ে দিল।
পরে মিরার বক্ষে চুম্বনের রেশ ছড়িয়ে দিতে এগিয়ে গেল, কিন্তু তখনই মিরা নিজের চেতনাতে ফিরে এসে দ্রুত উঠে কারানের চোখের দিকে তাকিয়ে রেগে চিৎকার করে বলল, “ইউ আর আ টুইস্টেড সোল (বিকৃত মানসিকতা), কারান। ভালোবাসা? ভালোবাসার মানে বুঝো তুমি? না, বুঝো না। তোমার কাছে ভালোবাসার মানে শুধুই আঘাত দেওয়া।”
মিরার কথা শেষ হতেই কারানের চেহারায় অগ্নিকুণ্ড জ্বলে উঠল। রাগান্বিত দৃষ্টিতে সে বলল, “চোখ নামিয়ে কথা বলো। ভুলে যেও না, তুমি কার সঙ্গে কথা বলছো। তোমার সরলতাই আমাকে টানে, মিরা। তাই নিজের সহজাত স্বভাব হারিয়ে কঠিন হয়ে যেও না। যদি তুমিও আমার মতো হয়ে যাও, তবে আমাকে কে সামলাবে, সুইটহার্ট?”
মিরা ঘন ঘন নিশ্বাসের সঙ্গে কাঁপা গলায় বলে উঠল,
“তোমার এই ভালোবাসা আমার পছন্দ নয়। বুঝেছো?”
কারান ঠোঁটে তীক্ষ্ণ হাসি টেনে বলল, “আমার ভালোবাসা এমনই, মিরা। আমি ওসব মিষ্টি, কোমল ভালোবাসায় বিশ্বাস করি না। আই প্রেফার রুথলেস লাভ। তবুও তোমার জন্য নিজেকে মাঝে মাঝে বদলাতে হয়। কিন্তু আসল আমি এটাই। তাই অভ্যস্ত হয়ে যাও। নাও স্টপ টকিং অ্যান্ড লাই ডাউন।”
এ কথা বলেই সে মিরার কাঁধ ধরে শোয়ানোর চেষ্টা করল। কিন্তু মিরা এক ঝটকায় কারানের হাত সরিয়ে দিয়ে চিৎকার করে উঠল, “আমাকে কষ্ট দিয়ে কি শান্তি পাও তুমি?”
তারপর গভীর দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে নিজের বেদনার ভারকে সামলে নিল। হঠাৎই তার কণ্ঠে বিষাদের ছায়া এসে পড়ল। চোয়ালের পেশি শক্ত করে বলল, “সেদিনও তুমি এমনটাই করেছিলে।”
সে কারানের হাত ধরে নিজের কোমরের কাছে নিয়ে যায়। কারানের আঙুলের নিচে স্পষ্ট হয়ে ওঠে কিছু পুরোনো দাগ। ক্ষতগুলো যেন কারানের চোখের সামনে এক মূর্ত অভিযোগ হয়ে দাঁড়ায়।
কারান কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে থাকে।
তারপর সেই দাগগুলোর ওপর আলতোভাবে হাত বুলিয়ে তীক্ষ্ণ হাসি ছুড়ে বলল, “আজকের রাত তার চেয়েও ভয়ংকর হবে। তুমি কি সেই দাগগুলো ধরে রাখতে চাও না, মিরা? এই ক্ষতগুলো মলম দিয়ে মুছে ফেলার চেষ্টা করো না। এগুলো আমার ভালোবাসার দাগ। এটা সারাজীবনের জন্য রেখে দাও।”
মিরা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে কারানের দিকে তাকিয়ে রইল। তার চোখে হাজারো প্রশ্নের ঝড়। যেখানে কারানের থেকে একটু আফসোসের প্রতীক্ষা ছিল, সেখানে সে দেখল নির্মম হাসি।
মিরা অস্ফুটে বলল, “তুমি কী মানুষ নও? এত ব্যথা দেওয়ার পরেও তোমার কোনো অনুশোচনা নেই?”
কারান বাঁকা হাসলো। মিরা কারানের নির্লিপ্ত ভাব দেখে কষ্টে নিস্তব্ধ হয়ে বিছানা থেকে উঠে চলে যেতে শুরু করলে, কারান তার হাত ধরে এক টান দিয়ে কোলে বসিয়ে শীতল দৃষ্টিতে বলল, “You’ve made me lose my mind today. I won’t be able to stop myself anymore.”
সে তীক্ষ্ণ হেসে ধীরে ধীরে মিরার বক্ষস্থলের দিকে এগোতে থাকল। কিন্তু মিরা কষ্টের গভীর থেকে চিৎকার করে উঠল, “তোমার স্পর্শ ভালো লাগে না আমার।”
মিরার এই প্রতিক্রিয়ায় কারানের রাগ আকাশের শীর্ষে পৌঁছাল। এক ধাক্কায় মিরাকে নিচে ফেলে দিয়ে মিরার দিকে মাথা ঝুঁকে, কণ্ঠে অপ্রকাশিত ক্ষোভ নিয়ে বলল, “যেদিন তোমার অন্তর আমাকে সম্পূর্ণভাবে নিজের বলে ভাববে, সেদিনই আমি তোমাকে গ্রহণ করবো। তার আগে কারানের দরজা তোমার জন্য বন্ধ থাকবে।”
এ কথা শুনে মিরা অশ্রুসজল চোখে উঠে দাঁড়িয়ে মনের মধ্যে বিদ্বেষ নিয়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেল। কিন্তু মিরার চলে যাওয়া কারানের মনকে আরো তীব্রভাবে আঘাত করে। তার মধ্যে অদম্য কামনা জেগে উঠল, যা কোনোরূপ বাধা গ্রহণ করতে চাইছে না। তার এক এক শিরা-উপশিরায় আগুনের মতো তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছড়িয়ে পড়ছে।
কারান তীব্র উত্তেজনায় চিৎকার করে বলতে লাগল, “আআআআ! কারান, কন্ট্রোল কর। কেন আমি নিজেকে থামাতে পারছি না? কেন আমি তোমার ভিজে শরীর দেখলাম? মিরাআআ!”
তারপর কক্ষের সব জিনিসপত্র একে একে ধ্বংস হতে থাকল। তার ক্রোধ আর কামনা একাকার হয়ে সমস্ত কিছু ভেঙে ফেলছে।
অন্যদিকে মিরা কান্না এবং অসহায়ত্বে ভরা চেহারা নিয়ে বৈঠকখানার সোফায় এসে বসে পড়ল। তার চোখে আর মুখে বিষণ্ণতার ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু কারানের ক্রোধের ঝাঁঝালো শব্দ এবং ভাঙাচুরার আওয়াজ কোনোভাবেই সাউন্ডপ্রুফ আলয়ের দেয়ালের বাহিরে প্রবাহিত হতে পারল না।
এত কিছু করেও যখন কারানের নিজেকে সামলানো কঠিন হয়ে পড়ল, ঠিক তখনই সে এক বিস্ময়কর কাজ করে বসে। নিজের হাতে তীব্র কামড় বসিয়ে দেয়। কামড়ের গভীরতা কতখানি, তা বোঝা যায় দাঁতের প্রতিটি দাগের সঙ্গে টপটপ শব্দে রক্ত পড়তে শুরু করে।
“Why can’t I stop myself? It feels like I could… Ugh, no, no… I can’t hurt, Mira. I can’t push her. No, control yourself, Karan. Just control yourself today.”
কাঁদো কাঁদো চেহারা নিয়ে, কারান দেয়াল ধরে আস্তে আস্তে নিচে বসে পড়ল। তার ভেতর দানা বাঁধা অশান্তির তীব্রতা ভেঙে পড়ল।
“উফফ, আজ মিরার কাছে যাওয়া যাবে না। আমি মিরাকে শেষ করে ফেলব। আমার এত যত্ন করা ভালোবাসাকে আমি শেষ করতে পারি না।”
শেষমেশ কারান উঠে দাঁড়ালো। টেবিলের ওপর ফল রাখা ছিল, তার পাশে ছুরিও। ছুরিটা শক্ত হাতে তুলে নিয়ে, দাঁতে দাঁত চেপে বাম হাতের তালুতে কাটতে শুরু করল। কাটার গভীরতা এতটা বাড়ল যে মাংস বেরিয়ে এলো, রক্তে হাতে ভিজে গেল। কিন্তু কারান ঠান্ডা চেহারায় সেই গড়িয়ে পড়া রক্ত দেখতে থাকে। তার মাথা এখনো সুসংগতভাবে কাজ করছে। তাই তার তৎক্ষণাৎ মনে পড়ে গেল, মিরা অতিরিক্ত রক্ত দেখতে পারে না।
তাই সে ফার্স্ট এইড বক্স আনল। নিজেই সেলাই করতে শুরু করল। রক্তের ক্ষতের বদলে যেন তার হৃদয়ের অভ্যন্তরীণ ক্ষত সে চিকিৎসা করছে। এরপর কারান শান্ত কণ্ঠে বলে, “না, আমি… আমি কিছুটা অতিরিক্ত করে ফেলেছি। আমার কোমল হৃদয়ের বউটাকে এমনভাবে কষ্ট দেওয়া উচিত হয়নি।”
নিজের ব্যান্ডেজ করা হাতটি প্যান্টের পকেটে লুকিয়ে ফেলল সে।
কিছুক্ষণ পর কক্ষ থেকে বেরিয়ে দোতালার লনে দাঁড়িয়ে দেখল, মিরা ফুঁপিয়ে কাঁদছে। কারান গভীর অনুতাপে ডুব দিয়ে বলল, “শিট…বাল বাল বাল! বাল করলাম আমি! এতদিনের সকল প্রেম এক মুহূর্তে ধ্বংস করে দিলাম। না, আমার বউকে বোঝাতে হবে, আবার আগের মতো ভালোবাসতে হবে।”
সিঁড়ি থেকে নামতে শুরু করল সে।
নিচে এসে মিরার পাশে আলতোভাবে বসে পড়ল। কিন্তু অজ্ঞাত আশঙ্কা মিরার শরীরে তীব্র সাড়া জাগিয়ে দিল। কিছু সময় পরে কারান নীরবে মিরার দিকে এগোতে থাকলে, মিরা ভয় পেয়ে খানিকটা দূরে সরে বসল।
কারান তার ভীত চোখগুলো দেখার পর, অশ্রুসজল কণ্ঠে বলল, “ভয় পাচ্ছ?”
“ন… না।”
এবার কারান মিরার কপালের একপাশে নরম চুমু খেয়ে, মিরার পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে, মিরার উরুর উপর থুতনি রেখে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল, “আ’ম…আ’ম সরি, বউ।”
কিছুক্ষণের জন্য থেমে বলে, “আমি বুঝতে পারিনি, এতটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলব। ক্ষমা করে দাও, প্লিজ।”
কিন্তু মিরা তার দিকে তাকালো না৷ মিরার মুখে কোনো প্রতুত্তর না পেয়ে, কারান আরও গভীর দুঃখে ডুব দিয়ে বলল, “তুমি এভাবে চুপ থাকলে আমার ভালো লাগে না, মিরা।” এ কথা বলেই মিরার পা ঝাপটে ধরল।
অতঃপর কারানের এই শিশুসুলভ আকুলতা মিরার হৃদয়কে গভীরভাবে ছুঁয়ে গেল।
মিরা শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছে নরম গলায় বলল, “ওঠো। পাশে বসো।”
কারান স্বচ্ছ হেসে উঠে মিরার পাশে বসে। কিছুক্ষণ পর শীতল কণ্ঠে বলল, “অনেকদিন তোমার এই ঘরের বাহিরে বের হওয়া হয়নি। তাই ভাবছিলাম, পুরোনো চৌধুরি বাড়িতে যাবো।”
মিরা প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “পুরোনো চৌধুরি বাড়ি মানে?”
“মানে আমার দাদুবাড়ি।”
মিরা ভ্রূ কুঁচকে তার দিকে ফিরে বলল, “তোমার দাদা-দাদি বেঁচে আছেন?”
“দাদা নেই, তবে দিদা আছেন। আর সেখানে তোমার আরও কয়েকজনের সাথে পরিচয় হবে। আমার ফুফি আর তার ছেলেমেয়েদের সাথে।”
মিরা বিস্মিত হয়ে কিছুটা সন্দেহ ও কৌতূহল মিশিয়ে বলল, “কই, আমাকে তো কখনো এসব বলোনি।”
কারান হালকা হাসি দিয়ে বলল, “বলিনি, এটাই বরং ভালো করেছি। কারণ পুরোনো চৌধুরি বাড়ির সাথে চৌধুরি বাড়ির কারোর সম্পর্ক নেই গত একুশ বছর ধরে। এমনকি রোমানা ভাবি তো জানেই না, কাকাই বাদে বাবার আর কোনো ভাইবোন রয়েছে। বাবার পরে ফুফি। ওনার নাম ফাতিমা। প্রথম ছেলে তালহা, দ্বিতীয় মেয়ে তারান্নুম, তৃতীয় মেয়ে তুব্বা। আর ফুফা পাইলট ছিলেন। আট বছর আগে প্লেন ক্র্যাশে তিনি মারা যান। আর বাকিটা ওখানে গেলে তুমি এমনিতেই জানতে পারবে।”
তারপর হেসে চোখে মধুর উজ্জ্বলতা নিয়ে যোগ করল, “দিদা একটু খিটখিটে মেজাজের, তবে খুব ভালো মানুষ। ফুফি তোমার মতো; একদম তুলোর মতো মন। এক মুহূর্তেই মিশে যাবে তোমার সাথে।”
কিন্তু মিরা একপাল ভ্রূ কুঁচকে সন্দিহানভাবে বলল, “সব ঠিকাছে, কিন্তু ‘সম্পর্ক নেই’ এর মানে বুঝলাম না।”
কারান মেঝের পানে নিবদ্ধ দৃষ্টি রেখে শান্ত গলায় বলল, “হয়ত রয়েছে এক বিশাল কাহিনি, যা আমি জানি না। আর কখনো জানতেও চাইনি। তবে চৌধুরী বাড়ির সাথে সম্পর্ক না থাকলেও, ইউ এস এ থাকাকালীন পুরোনো চৌধুরি বাড়ির সবার সাথে আমার আলাপ-আলোচনা চলত। আর এই কারণেই, আমার সাথে পুরোনো চৌধুরি বাড়ির সম্পর্ক অটুট রয়ে গেছে। কিন্তু আমরা যে পুরোনো চৌধুরি বাড়িতে যাবো, এটা চৌধুরি বাড়ির কাউকে জানানো যাবে না। বুঝেছ?”
“হুম। সব বুঝলাম। আর এটাও বুঝলাম যে, আমি আসলেই চৌধুরি বাড়ি সম্পর্কে কিছুই জানি না।”
“যেহেতু আমার সাথে আছো, আস্তে আস্তে সব জেনে যাবে। পরশু বিকেলে রেডি থাকবে। এখন ওঠো, শাড়ি চেঞ্জ করে ঘুমাতে যাবে। নাহলে ঠান্ডা লেগে আমার বউয়ের হাঁচি-কাশি হয়ে যাবে।”
মিরা ম্লান হেসে উঠে দাঁড়ালো। কিন্তু তার জন্য আজকের রাতটা কোনো রহস্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রথম পদক্ষেপ।
বেসমেন্টের বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে গাড়ির ইঞ্জিনের গর্জন থেকে জন্ম নেওয়া তীব্র উত্তাপ। নিস্তব্ধতার ফাঁকে পিচঢালা মেঝের ওপর তিনটি ব্যয়বহুল গাড়ির চাকার দাগ স্পষ্ট হয়ে আছে। গাড়ির দরজা খুলে একে একে বেরিয়ে আসে তিনজন পুরুষ।
প্রথমজন, যার উচ্চতা ছয় ফুট ছাড়িয়েছে, গায়ের রঙ এতটাই ফর্সা যে নীলচে শিরাগুচ্ছও তার চামড়ার নিচে ফুটে উঠেছে। বাদামি চুল, বাদামি ভ্রু, আর ক্লিন শেভ করা চিবুক তার কঠোর অথচ অভিজাত চেহারাকে আরো শীতল করে তুলেছে। ধূসর কোট-প্যান্টের নিচে সাদা গেঞ্জি, হাতে ব্র্যান্ডের একখানা ঘড়ি, গলায় ক্রস লকেট। সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে সে ধীরপায়ে এগিয়ে এলো।
দ্বিতীয়জন তুলনামূলক কম লম্বা—পাঁচ ফুট দশ হবে। মুখভর্তি ঘন দাড়ির নিচে উজ্জ্বল ত্বক, নীল শার্টের সাথে কালো প্যান্ট, হাতে জমকালো ঘড়ি। চলনে-বলনে অভিজাত অথচ চোখের গহ্বরে লুকিয়ে থাকা শিকারীর হিংস্রতা অনিবার্য করে তুলেছে তার উপস্থিতিকে।
শেষজন শ্যামবর্ণ, হাড়গিলে গড়ন, কুচকুচে কালো এলোমেলো চুল, বাদামি চোখ, ঠোঁটযুগল কালো ও বাদামির সংমিশ্রণে ছায়া ফেলে রেখেছে তার কঠিন মুখাবয়বে। উচ্চতায় তেমন লম্বা নয়, কিন্তু তার ভঙ্গিমায় এক ধরনের হিংস্র অথচ নির্লিপ্ত আত্মবিশ্বাস। খয়েরি কোটের নিচে সাদা শার্ট আর প্যান্ট, হাতে সিকো ফাইভ ঘড়ি।
তিনজনই নিঃশব্দে সামনের দিকে এগিয়ে গেল।
“হ্যালো, ব্রো।”
একজন এগিয়ে এসে আলিঙ্গন করতেই অপরজন হেসে জবাব দিল, “হেই ডার্ক।”
আরেকজন চোখ ঝলসানো হাসি ছুঁড়ে বলল, “ব্লাডশেড, খামন ইয়ার।”
তারপর সেও আলিঙ্গনে জড়িয়ে নিল।
ব্লাডশেড বলল, “হাউ অ্যাবাউট ইউ, অবস্কিউর?”
অবস্কিউর মৃদু হাসল, “গ্রেট, ভাই। দশ বছর পর যে আমাদের দেখা হবে, ভাবিনি।”
ডার্ক গভীর স্বরে বলল, “হওয়ারই কথা ছিল। আরেকবার আমাদের নৃশংসতার সাক্ষী রাখার জন্য হলেও আমাদের মিলিত হতে হতো।”
ব্লাডশেড তীক্ষ্ণ হাসি ছুঁড়ে দিল, “ইয়েস, ব্রাদার। আজ হুইস্কির আনন্দ নেওয়া যাক। ট্রিট ব্লাডশেড দেবে।”
অবস্কিউর কপাল কুঁচকে বলে উঠল, “উঁহুঁ, আমার অন্য কিছু চাই। সেই খেলা আবার হবে।”
তার ঠোঁটের কোনে খেলা করল এক বিকৃত তৃপ্তি।
ডার্ক ব্যগ্র হয়ে বলল, “দশ বছর অপেক্ষা করেছি। এবার আবার সময় এসেছে… আমাদের লালসা মেটানোর। তবে আগের মতো নয়—নতুন রূপে, নতুন স্বাদে!”
তারপর তিনজনই হাহা করে হেসে উঠল। সে হাসিতে ছিল না কোনো উষ্ণতা, ছিল না কোনো মানবিকতা। বরং সে হাসির গভীরে এক ভয়াবহ নেশা, এক অন্ধকার শিহরণ লুকিয়ে ছিল। অর্থাৎ অন্ধকারের রাজা তার সিংহাসনে ফিরে এসেছে।
অবস্কিউর চোয়ালের পাটি শক্ত করে বলল, “আমি আর ব্লাডশেড মা’ল আনছি। ডার্ক, তুই হুইস্কি আন। এটাই তোর জন্য ভালো। নাহলে তোর ভূতের মতো সাদা চেহারা দেখলে কেউ আর ধারেকাছেও আসবে না।”
ডার্ক বাঁকা হাসল।
“ওকে। বাট আই কান্ট ওয়েট। জলদি কর।”
তারপর তারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল।
গাড়ি দ্রুত গতিতে শহরের রাস্তায় ধুলো ছুটিয়ে ছুটিয়ে ছুটল। কিছুদূর যাওয়ার পরই ব্লাডশেড আর অবস্কিউরের চোখ জ্বলে উঠলো অজানা ক্ষুধায়। তাদের ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল বিদ্বেষপূর্ণ, ধারালো হাসি।
গাড়ি থামল। শুনশান রাস্তায় কেবল তাদের নিশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
একটা বাচ্চা মেয়ে, বয়স আট কি নয় হবে। স্কুল ইউনিফর্ম পরা, হাতে ছোট্ট একটা ফুলের চারা। পথের ধুলায় পা ফেলে নাচতে নাচতে এগিয়ে আসছে।
ব্লাডশেড সামনে এগিয়ে দাঁড়াতেই মেয়েটি থমকে গেল।
সে এক পায়ে বসে মেয়েটির কাঁধে আলতো করে হাত রাখল। ব্লাডশেড কণ্ঠস্বর কোমল করে বলল, “কোথায় যাচ্ছ, বেবি?”
বাচ্চা মেয়েটি কিছুটা ইতস্তত করে বলল, “কে আপনি?”
“আমি তোমার বাবার ফ্রেন্ড, মানে তোমার আঙ্কেল।”
মেয়েটি সন্দেহের চোখে তাকাল, ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল, “কিন্তু আপনাকে তো আমি প্রথমবার দেখলাম।”
ব্লাডশেড মৃদু হাসল, “যখন তুমি এইটুকু ছিলে, তখন দেখেছো।”
মেয়েটি কিছুটা ভাবল, তারপর বলল, “আচ্ছাআআ।”
“চকলেট খাবে? সিল্ক চকলেট?”
মেয়েটি মাথা নাড়ল, “না, মামমাম বাহিরের কারো থেকে চকলেট খেতে নিষেধ করেছে।”
ব্লাডশেড অল্প হেসে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে। তোমার জন্য একটা গিফট আছে।”
সে পিছনে হাত দিয়ে অবস্কিউরকে ইশারা করল। অবস্কিউর গাড়ির ভেতর থেকে একটা টেডিবিয়ার বের করে এনে ব্লাডশেডের হাতে দিল।
মেয়েটি উৎফুল্ল কণ্ঠে বলল, “কি গিফট, আঙ্কেল?”
ব্লাডশেড হাসল, “টেডিবিয়ার।”
মেয়েটির চোখ চকচক করে উঠল। সে খুশিতে লাফিয়ে উঠল, “ওয়াওও! এটা তো অনেক বেশি সুন্দর!”
ব্লাডশেডের ঠোঁটের কোণে এক অদ্ভুত হাসি খেলা করল। “আরও একটা গিফট আছে—বার্বিডল। নিবে?”
মেয়েটি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে হেসে বলল, “হুম হুম।”
“চলো, তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিই।”
মেয়েটি এক মুহূর্ত ভাবল, তারপর শিশুসুলভ সরলতায় মাথা নেড়ে বলল, “কিন্তুউউ…আচ্ছা, চলো।”
ব্লাডশেড মেয়েটির ছোট্ট কোমল হাত নিজের হাতের মাঝে চেপে ধরে গাড়ির দিকে এগোতে থাকে। তার ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠেছে নিষ্ঠুর হাসি, যা ভয়ানক লালসার প্রতিফলন।
মেয়েটিকে গাড়িতে তুলে বসিয়ে ব্লাডশেড নির্দয় নৈমিত্তিকতায় চেতনানাশক প্রয়োগ করে। মুহূর্তের মধ্যে মেয়েটির শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়।
গাড়িটি এবার সাইরেনের মতো গর্জন করে জঙ্গলের দিকে ছুটে চলল।
অনেকটা সময় পর গাড়িটা নির্দিষ্ট গন্তব্যে এসে ধীরগতিতে থামল। ব্লাডশেড শিশুটিকে কোলে তুলে নিল, শরীরটা এতটাই নিস্তেজ যে মনে হলো জীবন্ত কেউ নয়, কেবল একটা ভাঙাচোরা পুতুল।
অন্ধকার ঘরের বেসমেন্টে ঢুকতেই একটা ভেজা, গুমোট গন্ধ নাকে এল—জলমগ্ন দেয়াল, পুরোনো কাঠের গুঁড়ো, আর কাঁচা অ্যালকোহলের তীব্র ঘ্রাণ। ঘরের কোণে ডার্ক অপেক্ষা করছিল, তার সামনে টেবিলে হুইস্কির বোতল সাজানো। আলো এতটাই ম্লান যে মানুষের মুখও অস্পষ্ট দেখা যায়। কিন্তু শিশুটিকে দেখেই ডার্কের চোখ জ্বলে উঠল। ঠোঁটের একপাশে এক চিলতে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল।
ডার্ক কণ্ঠে শীতল উত্তেজনা নিয়ে বলল, “আমার খাবার চলে এসেছে।”
মেয়েটিকে কাঠের স্তূপের ওপর রাখা হলো, গাঢ় অন্ধকারে নিথর হয়ে শুয়ে রইল সে। অবস্কিউর বলল, “দড়ি নিয়ে আয়, ডার্ক।”
ডার্ক চোখে নিষ্ঠুর দৃষ্টি নিয়ে একটা মোটা দড়ি টেনে আনল। তার আঙুল মেয়েটার চিবুকের নিচ তুলে ধরল, তারপর ফিসফিস করে বলল, “আজকের দিন তোমার জন্য রাত নিয়ে আসবে।”
অন্ধকারে তাদের ছায়াগুলো দপদপ করে নড়তে লাগল। কারও শ্বাস ভারী হয়ে উঠল, কারও হাত নিশপিশ করছে। ব্লাডশেড ঝুঁকে এল। তারপর নখের চাপে মেয়েটার কাঁধে গভীর দাগ ফুটিয়ে দিল সে, এক ফোঁটা উষ্ণ র*ক্ত গড়িয়ে নামল নিচে। র*ক্তের গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়তেই ঘরের অন্যরা তৃষ্ণার্ত নে*কড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল।
এতক্ষণ নিস্তেজ পড়ে থাকা মেয়েটার শরীরে হঠাৎ এক ঝটকা লাগল—যন্ত্রণার ভয়াবহতায় শিরদাঁড়া বেঁকে উঠল!
ব্লাডশেড হাসল। গভীর, আতঙ্ক ছড়ানো সেই হাসি হেসে বলল, “চিৎকার করো না, বেবি। এখানে তোমার কান্না শোনার কেউ নেই…শুধু আমরা আছি। আর আমরা কান্না শুনে আরও ক্ষুধার্ত হয়ে উঠি।”
হঠাৎ শক্ত থাবা নামল শিশুটির শরীরে। মলিন কাপড় এক এক করে ছিঁ*ড়ে খুলে যেতে লাগল। আঁধারের ভিতর কাপড়ের ফাটা শব্দটা আরও বেশি ভয়ানক ঠেকল। অন্ধকার হাতগুলো শরীরের উপর ঘুরে বেড়াচ্ছে, নখের আঁচড়ে কাঁপছে হাড়-মাংস। অবস্কিউরের একজোড়া ঠোঁট নিচু হলো, ঠান্ডা চামড়ার উপর আগুনের মতো একটা চুম্বন রেখে গেল। তারপরই একটা হিংস্র কা*মড়!
কামড়ের ভয়ানক ব্যথায় মেয়েটির নিস্তেজ শরীর দপদপ করে উঠল! শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল, ধড়ফড় করে চোখ খুলল সে, কিন্তু কিছুই দেখতে পেল না। চোখে কালো পট্টি বাঁধা, হাত-পা শক্ত করে দড়ি দিয়ে আটকানো! মুখও কাপড়ে বেঁধে রাখা, যেন একটাও আর্তনাদ বের হতে না পারে।
চারপাশে তাহাসির বিকৃত প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পড়ল। শিশুটির গায়ের চামড়ায় ধাতব চেইনের ঠান্ডা ছোঁয়া দিল, একজোড়া হাত বুনো লোভ নিয়ে মেয়েটার শরীর বেয়ে নীচে নামছে। সিলিংয়ের উপরে ঝুলতে থাকা আলোটা দুলে দুলে আরও বিভীষিকাময় হয়ে উঠছে। আজ এই ঘরেই শুরু হবে সেই ভয়ংকর খেলা।
এরপর ৩ জন নিজেদের শরীর উন্মু*ক্ত করলো। প্রথম পুরু*ষা* প্রবেশ করাতেই ওখানেই মেয়েটার প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার পালা। ব্যথায় শিশু মেয়েটার পুরো দেহ ঘাম আর রক্তে ভিজে গেল। পবিত্র শরীরটায় ক্লেশ ছড়িয়ে গেল। ক্ষণে ক্ষণে বারে বারে ওরা মেয়েটার শরীর উপ*ভোগ করতে লাগলো। কা*মড় দিয়ে নখের আঁ*চড় দিয়ে ছিড়ে নিচ্ছিল শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ। কিন্তু এ খেলা বেশিক্ষণ চলমান রাখতে পারলো না। প্রচণ্ড র*ক্তক্ষরণে শিশুটি অন্তিম প্রহর গুনতে গুনতে অবলীলায় মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে নিজেকে এই নৃশং*সতার হাত থেকে মুক্তি দিল। যদিও বাচ্চাটি যে নেই এটা ওরা বুঝতে পারেনি। তাই মারা যাওয়া শিশুটির উপরেও অপারগ হামলা চলতে থাকলো। একটা সময় যখন বুঝতে পারলো বাচ্চাটা আর নেই তখন প্রচণ্ড ক্ষোভে তিনজন খুকরি আর কাটারির সাহায্যে বার বার তুলতুলে নরম দেহটাকে কো*পাতে থাকলো। এই কো*পানোর কারণ হলো এত সহজেই কেন ও মা*রা গেল। ওকে তো আরও ভো*গ করার ইচ্ছে ছিল। কো*পানোর নিমিত্তে সদ্য বের হওয়া উষ্ণ র*ক্ত ছিটে ছিটে ওদের মুখমণ্ডল র*ক্তের নিচে ঢাকা পরে গেল।
অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত কাজ। অর্থাৎ কসাই এর মতো মাং*সগুলো পিস পিস করে আলাদা করা। প্রথমত হাত দুটোকে তিন ভাগ করলো। পরে পায়ের পাতাকে আলাদা করলো। এবার বাকি শরীরকে সযত্নে কেটে নিল। স্বাভাবিক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে ৫-৬ লিটার র*ক্ত থাকলেও শিশুর দেহে সাধারণত ৪-৪.৫ লিটার র*ক্ত থাকে। সেই র*ক্তেই পুরো কাঠ ভিজে যেতে লাগলো। কিন্তু না! এ র*ক্ত ফেলা যাবে না। ডার্ক একটা ব্যাগে করে র*ক্ত সংরক্ষণ করলো। সাথে নমনীয় তুলতুলে মাং*সগুলো আলাদা আরেকটা ব্যাগে রাখা হলো। বাকি হাড্ডি আর গ্রহণযোগ্য নয় এমন মাং*সগুলো অন্য ব্যাগে ঢোকালো। তবে একটা কাটা পায়ের পাতা ব্যাগে ঢোকানো হয় না। সেখানে খুব স্বচ্ছ করে কাটার দিয়ে লিখে দেওয়া হয়েছে OWL তারই পাশে এঁকে দেওয়া একটা বিষাক্ত চিহ্ন। চিহ্নটি দেখতে মাথার খুলির মতো (☠️)। আর তারা এটা প্রতিটি ধর্ষ*ণের পর করে থাকে।
এবার পায়ের পাতাটি হাতে উঠিয়ে হাসতে হাসতে ডার্ক বলে,
“আবার পুলিশরা দৌড়াবে। আবার চিন্তা করে করে উ*ন্মাদ হবে। আবার মাথা কামড়াবে। কিন্তু তাদের তো জানা উচিত OWL কখনো পালায়নি। OWL ফিরে এসেছে। হা হা হা।”
এবার উচ্চস্বরে সবাই হেসে উঠলো।
অবস্কিউর বলে,
“আমি আর থাকতে পারছি না। আমার প্রচণ্ড ক্ষুধা পেয়েছে।”
ব্লাডশেড বলে,
“কোনটা পেটের খুদা নাকি মনের খুদা?”
“দুটোই। ওকে আরও কিছুক্ষণ ভো*গ করার আগেই তো ডে*থবডি হয়ে গেল। আমার কাউকে লাগবে। খুব জলদি।”
ব্লাডশেড ক্রুর হেসে বলে,
“ঠিকাছে সাড়ে ১২ টার দিকে তোর জন্য আমি একটা সারপ্রাইজ রাখবো। এখন হুইস্কি নে।”
ডার্ক নয়নগোচর করে বলে,
“উঁহুঁ। আমার এখন অন্য কিছু চাই। এই তাজা রক্তের নেশালো ঘ্রাণ আমাকে উন্মা*দ করে তুলেছে। কে কে খাবি শুরু করে দে। আমি গ্লাস আনছি।”
অবস্কিউর বলে,
“গ্লাস লাগবে না আমি ব্যাগ থেকেই এই জুস খাবো। আর মাংস রান্না করার ব্যবস্থা কর। ব্লাডশেড তুই খাবি না?”
“নাহ। তোদের তো জানা আছে। মানুষের রক্ত বা মাংস এগুলো আমি খাই না।”
এরপর প্রথম ব্যাগের নরম মাং*সগুলোকে বের করে রান্না করা হলো। ডার্ক ও অবস্কিউর বেশ তৃপ্তি সহকারে উদরসাৎ করলো এবং এটা তাদের রোজকার খাদ্য অভ্যাস।
নর*খাদকরা মানুষের মাংসেই বেশি সাধ পেয়ে থাকে। বিশেষ করে সদ্য কাটা টাটকা মাংস তাদের নেশা আর সাধের মাত্রা ক্রমাগত বাড়িয়ে দেয়।
খাওয়া শেষে ডার্ক গাড়ি নিয়ে বাকি হাড্ডি মাং*স বেনিশ করার ব্যবস্থা করতে বেরিয়েছে। মাঝেই রাস্তার পাশে এক ডাস্টবিনে কাটা পায়ের পাতাটা ফেলে দিল। এটা একটা ইঙ্গিত যে OwL ইজ কামিং ব্যাক।
রাত ১২টা বেজে ৩২ মিনিট। ব্লাডশেড, ডার্ক, অবস্কিউর জঙ্গলের ঘরের বিশাল একখানা কক্ষে দাঁড়িয়ে আছে।
ডার্ক হন্তদন্ত করে বলে,
“কোথায় তোর সারপ্রাইজ?”
ব্লাডশেড হাত উপরে উঠিয়ে তালি দিল। ক্ষণিকের মধ্যে এক যুবতীর প্রবেশ ঘটে। মেয়েটি বেশ সুন্দরী। তার বডি ফিটনেস আশ্চর্যজনক। যেকোনো পুরুষ আকৃষ্ট হতে বাধ্য। সে এমন একটা পোশাক পরিহিত যে তার ঘাড় পে*ট সবই উন্মুক্ত। তার কোমরের ভাঁজ আর বিউটিবোন আকর্ষণের সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করে। নিচে ওয়াইড লেগ প্যান্ট পরিধান করা। ধূসররাঙা চোখে আইলাইনার, ঠোঁটে সেপিয়া ব্রাউন লিপস্টিক দেওয়া। গায়ের রং একদম ফরসা নয় আবার শ্যামও নয়। তবে এক দেখায় যে কেউ বলে উঠবে, চোখ ধাঁধানো মনমাতানো এর সৌন্দর্য।
সারপ্রাইজ দেখে ডার্ক আর অবস্কিউর বেশ খুশি হলো এবং সেটা তাদের হিংস্র মনোভাবেই প্রকাশ পেল।
ডার্ক উৎকর্ষ হয়ে প্রশ্ন করে,
“কে এই মেয়ে?”
ব্লাডশেড ক্রূর হেসে বলে,
“রা*তের পরী। মনরঞ্জন করা তার প্রতি রাতের কাজ। আজকে আমাদের মনরঞ্জন করতে এসেছে।”
মেয়েটি মিষ্টি হেসে ওদের দিকে এগোতে থাকে। কিন্তু মেয়েটি জানে না এটাই তার শেষ আসা। আর কোনোদিন এখান থেকে জীবন্ত বের হতে পারবে না। না কখনোই পারবে না।
কিন্তু অবস্কিউর লোভ সামলাতে না পেরে তেরে গিয়ে মেয়েটার গাল দুট শক্ত হাতে আবদ্ধ করে ঠোঁট কা*মড়ে ধরে। মেয়েটা তীব্র ব্যথায় চোখ উল্টে ফেলে। এবার ধীরে ধীরে ৩ জোড়া হাত তাকে ন*গ্ন করার ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আকস্মিক আক্রমণ মেয়েটার কাছে নতুন নয় কিন্তু এমন ভয়ানক হামলা মেয়েটার কল্পনাতীত।
শরীরের সম্পূর্ণ জোর খাটিয়ে ওদেরকে সরিয়ে দিয়ে কঠিন ক্রুদ্ধতার সহিত বলে,
“ইউ বি*চ। আর ইউ ম্যা*ড? আমি এক্ষুনি বেরিয়ে যাচ্ছি। তোমাদের টাকা বসের থেকে নিয়ে নিও।” বলে মেয়েটা বেনিটিব্যাগ থেকে একটা জ্যাকেট বের করে সেটা পড়ে নিয়ে সামনে আগাতে থাকে।
কারণ তার দেহের কাপড় এতক্ষণে ছিড়ে খণ্ডবিখণ্ড করা হয়ে গেছে।
কিন্তু পতি*তা*লয়ের একটা মেয়ের এমন দুঃসাহস দেখে ওরা আগ্নেয়গিরির ন্যায় তেতে উঠলো। সাথে সাথে ছু*রি বের করে মেয়েটার পিঠে নিক্ষেপ করে। ছুরিটা চট করে জ্যাকেট ভেদ করে পিঠে ঢুকে যেতেই মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে ওখানেই বসে পড়ে। এরপর সেই অনাকাঙ্ক্ষিত নিকৃষ্টতর হাম*লা। মেয়েটাকে বেঁধে ফেলা হলো। এবার প্রচণ্ড রাগে যে পা দিয়ে মেয়েটা সামনে পা বাড়িয়েছে সেই পা-কে জ্বল*ছে দেওয়ার উপায় খুঁজলো। এমনকি ক্ষণিকের মধ্যে খুঁজেও পেল।
ফুটন্ত গরম পানি এনে মেয়েটার দুই পায়ের উপর ছেড়ে দেয়া হয়। সাথে সাথে উরু থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত পুরে ছাড়*খার হতে থাকে। মেয়েটা ছটফট করতে থাকে। চোখ থেকে এতটা পানি পড়ে যে চক্ষু বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। অথচ বাধন এত শক্ত করে বাধা যে নড়ারও উপায়ন্তর নেই। হাত পায়ের বাধা অংশগুলো র*ক্তাক্ত হয়ে গেছে। যেন দরি মাংসের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। মেয়েটার পা জ্বলছে দিয়েও ওদের শান্তি হলো না। ওরা সেই ঝলসানো পায়ের উপর চাপা*তি দিয়ে কোপা*তে থাকে। কোপা*তে কো*পাতে একটা সময় মেয়েটির পায়ের অস্থি সম্পূর্ণ দৃশ্যমান হয়ে যায়। উরুর নীচ থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত মেয়েটার পায়ে কোনো মাং*স নেই। শুধুই কঙ্কাল হাড়।
ওদের পৈশা*চিক বর্বরতা দেখে মেয়েটার পেটের নারী ভুঁড়ি দলা পাকাতে থাকে। খাবারগুলো উগড়ে বমি হয়ে মুখ থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেও পারলো না। মুখ যে বাধা, তাই বমি ভিতরেই গিলে নিতে হলো। এরপর শুরু হয় সেই নরপিশা*চের ধ*র্ষণ। গলা থেকে শুরু করে উরু অবধি খুব*লে খুব*লে খাওয়া সাথে ন*খের গভীর আঁচ*ড়।
শেষমেশ তাদের এক যুগ আগের কর্মকাণ্ডের প্রতিফলন ঘটায়। মেয়েটার স্ত* কেটে নেওয়া। শেষ! সাথে সাথে মেয়েটির প্রানভোমরা দেহত্যাগ করলো। পরবর্তীতে যৌ*না* কেটে নেওয়া হলো। এরপর একটা বিকারে কাটা যৌ*না* রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে সংরক্ষিত করা হলো। আর তিনজনের এটাই শখের কাজ। কিছুদিন পর যদিও এগুলো নষ্ট করে দেওয়া হবে তবে কয়েকদিন ক্যামিকেলে ডুবিয়ে রাখবে। আরেকটি বিশেষ কাজ করতে ভুলল না। মেয়েটির পেটের একটা মাং*সের টুকরোতে OWL পাশে সেই খুলির চিত্র এঁকে দিল। পরে সেটি অন্য এক ডাস্টবিনে ফেলে দিল।
দ্বিপ্রহরের দগ্ধ দীপ্তিতে স্কুলের পোশাকে এক কিশোরী প্রবল উচ্ছ্বাসে ফুচকা খেতে ব্যস্ত। তার খাওয়ার ভঙ্গি এতটা মোহনীয় যে পথচারীরাও একবার তাকিয়ে বলতে বাধ্য হবে ‘আমাকেও একটা দাও না।’ গ্রীষ্মের দহন উপেক্ষা করে ফুচকার স্বাদ নেওয়ার আনন্দ কেবল নারীরাই গভীরভাবে অনুভব করতে পারে।
খাওয়া শেষ করে টাকা মিটিয়ে সামনের দিকে এগোতেই হঠাৎ একটি অচেনা পুরুষালি কণ্ঠ বাতাসে ভেসে আসে।
“এ বেডি!”
শব্দটি কানে পৌঁছাতেই ইলিজার ভ্রু কুঁচকে যায়। আশপাশে দ্রুত চোখ বুলিয়ে দেখে, এখানে একমাত্র মেয়েটি সে-ই। তবে কি এই কদর্য সম্বোধন তারই উদ্দেশ্যে? অস্বস্তির প্রবল ঢেউ মুহূর্তেই শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে আসে।
এরপরই অপরিচিত সেই কণ্ঠের অধিকারী পুরুষটি সামনে এসে আরও উচ্চকণ্ঠে বলে ওঠে, “এই দুহুরইরা রৌদে এইহানে কি হরো?”
অপ্রত্যাশিত এই উপস্থিতিতে ইলিজা হতভম্ব হয়ে যায়। শুভ্র! এই অসময়ে, এই জায়গায়? বিস্ময়ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে।
শুভ্র সেই চিরপরিচিত স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে হাসে।
“ওমা! এ্যামনে তাকাইয়া আছো ক্যান? ঢড়াইছো নাহি?”
এবার ইলিজা বিরক্ত মুখে বলে, “আপনার কথাবার্তার শ্রী এমন কেন?”
শুভ্র হাসতে হাসতে বলে, “আরে, আঞ্চলিক ভাষায় যে কী আরাম, সেটা তুমি বুঝবে না। বাই দ্য ওয়ে, এখানে কী করছো?”
“আমার স্কুল এখানে।”
শুভ্র সহজভাবে মাথা নেড়ে বলে, “ওহ, আচ্ছা আচ্ছা। তা তোমার চেহারায় এত গ্লো কেন?”
ইলিজা ভ্রু কুঁচকে বলে, “আপনি তো সত্যিই অদ্ভুত! সৌন্দর্য আল্লাহর দান, আমি কী করে জানব?”
এরই মধ্যে কারানের গাড়ি ওদিক দিয়ে যাচ্ছিল। চলন্ত গাড়ির ভেতর থেকেই ইলিজাকে দেখে হঠাৎ গতি কমিয়ে দেয় সে। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণের পর গাড়ি একপাশে থামিয়ে ইলিজার দিকে এগিয়ে আসে।
শুভ্র তখনও আগের প্রসঙ্গে কথোপকথন চালিয়ে যায়।
“আমি এমনই। তা তোমার নামটা জানা যাবে?”
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই পিছন থেকে কারানের ভারী কণ্ঠ ভেসে আসে, “ইলিজা, তুমি এখানে কী করছো?”
ইলিজা চমকে পিছন ফিরে তাকায়, তারপর হাসিমুখে বলে, “আরে ভাইয়া, আপনি? এখানে কীভাবে?”
কারান গম্ভীর গলায় উত্তর দেয়, “একটা কাজে যাচ্ছিলাম। এই ছেলেটা কে?”
শুভ্র কিছু একটা বলতে যাবে, কিন্তু তার আগেই ইলিজার অকস্মাৎ বলা বাক্যে সে থমকে যায়।
“আমি তো ওনাকে চিনিই না, ভাইয়া। উনি একজন ইউটিউবার।”
কারান চোখ সরু করে শুভ্রর দিকে তাকায়, তারপর নিঃসঙ্কোচে বলে, “চলো, তোমাকে ড্রপ করে দিই।”
ইলিজা মাথা নেড়ে এগিয়ে গিয়ে তার গাড়িতে উঠে বসে।
শুভ্র দাঁড়িয়ে থেকে কিছুক্ষণ গাড়িটা চলে যাওয়া দেখল। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের মনে বলে, “তার মানে ওর নাম ইলিজা! কিন্তু… ওই লোকটা কে? ওর বয়ফ্রেন্ড? (একটু থামে) না, অসম্ভব। তার বয়স তো কমপক্ষে আটাশের বেশি হবে, বয়ফ্রেন্ড হওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাহলে নিশ্চয়ই বড় ভাই। কিন্তু কোথায় যেন ওনাকে দেখেছি… ধুর, বাদ দিই। আগে হালারপো কাব্যরে কল দিই।”
সে পকেট থেকে ফোন বের করল, মনে মনে আরও কিছু ভাবতে ভাবতে নম্বর ডায়াল করল।
কাব্য ফোন ধরতেই শুভ্র কটাক্ষভরা কণ্ঠে বলে ওঠে, “মা’ঙ্গের পুত, মরছোস নাকি?”
ওপাশ থেকে পানি বন্ধ করার শব্দ শোনা যায়। তারপরই কাব্য বিরক্তস্বরে বলে, “আরে আসতেছি দাঁড়া। ওয়াশরুম থেকে বের হয়েই কল দিচ্ছি।”
শুভ্র ভ্রূ কুঁচকে সন্দিহান কণ্ঠে বলে, “তুই কি মুততাছিস? নাকি অন্যটা?”
কাব্য মুখ বাঁকিয়ে বলে, “হারা’মজাদা, গোসল করলাম। দাঁড়া তুই, আইতেছি।”
শুভ্র ফিক করে হেসে বলে, “হালা, ফোন নিয়ে বাথরুমে যাও?”
“আরে বেটা, না। তুই ফোন দিছিলি, তাই বের হয়ে ফোন হাতে নিয়ে এসে পানি বন্ধ করলাম।”
শুভ্র হাসতে হাসতে বলে, “জলদি আয়, হালা।”
তারপর কল কেটে দেয়।
গাড়িতে উঠতেই কারানের কণ্ঠ কঠিন হয়ে ওঠে।
“বিএফ?”
ইলিজা লজ্জায় কুণ্ঠিত হয়ে মাথা নাড়ে।
“আরে না, ভাইয়া। আমি তো ওনাকে চিনিই না। ইউটিউবে ওনার গান শুনেছি, এই পর্যন্তই।”
কারান চোখ সরু করে বলে, “যাকে চেন না, তার সাথে কথা বলছো কেন? (একটু থামে) সাবধানতা অবলম্বন করো, ইলিজা। তোমার জন্য ড্রাইভারসহ একটা গাড়ি পাঠিয়ে দেব। পরেরবার থেকে এভাবে যার-তার সাথে কথা বলবে না। আর যা-ই করো, মিরাকে বা মা-বাবাকে জানাতে ভুলবে না। চাইলে আমাকেও বলতে পারো… কিন্তু সাবধান থাকবে, ইলিজা।”
ইলিজা মৃদু হাসে।
“ঠিক আছে, ভাইয়া। কিন্তু গাড়ির দরকার নেই তো। আমি তো রিকশায়ই যাই।”
কারান গাঢ় স্বরে বলে, “রিকশায় যাবে, সমস্যা নেই। কিন্তু তবুও তোমার জন্য ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবস্থা করব।”
“কিন্তু আপু যদি…”
কারান হেসে বলে, “ওটা আমার ওপর ছেড়ে দাও।”
প্রায় পঁচিশ মিনিট পর, মিরা মঞ্জিলের সামনে এসে গাড়ি থামে। কারান গাড়ি থেকে নেমে ইলিজার জন্য দরজা খুলে দেয়। ইলিজা নেমে দাঁড়াতেই সে আবার গাড়িতে উঠে ড্রাইভিং সিটে বসে।
ইলিজা একটু ভণিতা করেই বলে, “ভাইয়া, বাসায় আসুন না।”
“না, ইলিজা। অন্য একদিন তোমার আপুকে নিয়ে আসব।”
“কিন্তু ভাইয়া, মা-বাবা যদি জানতে পারে আপনি বাসার সামনে এসেও ফিরে গেছেন, তখন কী বলব?”
“তাদের জানাতে হবে না। এবার ভেতরে যাও। আল্লাহ হাফেজ।”
তারপর গিয়ার বদলে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে চলে যায়।
এরই মধ্যে একটি কাটা শিশুর পায়ের পাতা আর রক্তমাখা মাংসের টুকরো পুলিশের হাতে এসে পৌঁছেছে। খবরটি উপরমহলে গিয়েছে, তবে কড়া নির্দেশ এসেছে—এ নিয়ে একটি শব্দও বাইরে ফাঁস করা যাবে না। জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
আমান গম্ভীর মুখে নিজের কেবিনে বসে, চোখ বন্ধ করে গভীর চিন্তায় নিমজ্জিত। চেয়ারটায় গা এলিয়ে দিলেও তার মস্তিষ্ক থেমে নেই। এই সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ ভেসে আসে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা ভেতরে এসে স্যালুট জানায়, “স্যার।”
আমান ধীর গতিতে চোখ খুলে উঠে দাঁড়ায়। তার মুখশ্রী চিন্তায় ভারী হয়ে উঠেছে। আমান বলল, “বুঝলেন পলাশ সাহেব, ঝড় শুরু হয়ে গেছে। ঠিক এক যুগ আগে ঘটে যাওয়া বিভীষিকা ফিরে এসেছে। ২০০৫ সালের সেই নারকীয় ধর্ষ’ণ ও খুনের স্মৃতি আবার জেগে উঠছে। OWL ফিরে এসেছে। ছোট্ট মেয়েশিশু থেকে শুরু করে মাঝবয়সী নারী; কারও নিস্তার নেই।”
পলাশ ধীরে শ্বাস ফেলে, গলায় স্পষ্ট উত্তেজনা নিয়ে বলে, “স্যার, এটা স্পষ্ট ওরা ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের হয়রানি করার জন্য এক টুকরো ইঙ্গিত দিয়েছে। আচ্ছা… OWL মানে তো প্যাঁচা, কিন্তু খুনি বা খুনিরা কেন এই নাম বেছে নিল? এই নাম দ্বারা কি বোঝাতে চায় ওরা?”
আমানের দৃষ্টি শীতল হয়ে আসে। কণ্ঠে হুশিয়ারির ঝাঁজ,
“এই প্রশ্নের উত্তর এক যুগেও পাওয়া যায়নি, পলাশ। আর এ কারণেই আলি আবসার স্যারকে তার জীবন দিতে হয়েছিল।”
“কিন্তু স্যার, আমজনতা যদি না জানে OWL ফিরে এসেছে, তাহলে তারা কীভাবে সাবধান হবে? তাদের উপরে তো যেকোনো সময় হামলা হতে পারে।”
Tell me who I am part 22
আমান দীর্ঘশ্বাস ফেলে, “আমরা আর কি করতে পারি বলুন? প্রশাসক চায় না, পাবলিক জানুক। আমরা শুধুই অপেক্ষা করতে পারি, দেখা যাক কি হয়।”
পলাশ এক মুহূর্ত চুপ করে থাকে, তারপর বিষণ্ন কণ্ঠে বলে,
“স্যার, আমি শুধু ভাবছি, পরবর্তী শিকার কে হতে চলেছে? আর কার মায়ের কোল খালি হতে যাচ্ছে?”