তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব ২ || ভালোবাসার Golpo

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব ২
Anika Fahmida

অনু ভয় পাওয়া দৃষ্টিতে আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
–আমি তোমার দুই গালে চুমু দিতে পারবো না আদ্র
ভাইয়া৷ তুমি আমাকে অন্য কিছু করতে বলো।
আদ্র অনুর দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে বলল,
–তাহলে একশো চল্লিশ বার কান ধরে ওঠবস কর।
আদ্রের কথায় অনুর কান্না পেয়ে যাচ্ছে। কতটা লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে আদ্র অনুকে ফেলছে। অনু কি করে এটা করবে? আর না করেও তো উপায় নেই।কারণ অনুর পায়ে এখনো খুব ব্যথা করছে। পায়ের ব্যথায় উঠতে পারবে কিনা সন্দেহ।

অনু উপায় না পেয়ে আদ্রের কাছে গেল। আদ্র এখনো অনুর দিকে তাকিয়ে আছে। অনু এখন আদ্রের খুব বেশিই কাছে। আদ্রের থেকে অনুর দূরত্ব এক ইঞ্চি। অনুর ভীষণ ভয়, লজ্জা লাগছে। তাই অনু চোখ বন্ধ করে আদ্রের দুই কাঁধে নিজের দুই হাত রেখে আদ্রের গালে চুমু দিতে গেল কিন্তু ভুলবশত অনু আদ্রের গালে চুমু না দিয়ে ঠোঁটে চুমু দিয়ে ফেলল। অনু চোখ খুলে যখন ব্যাপারটা বুঝতে পারলো তখন অনেক জোরে চিৎকার দিল। এটা অনু কি করে ফেলল? ভুলবশত কিনা আদ্র ভাইয়ের ঠোঁটে চুমু দিয়ে ফেলল! এবার অনু বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কান্না করতে লাগল। কিন্তু আদ্র সেই একইভাবে বিছানার এক পাশে বসে আছে। আদ্র অনুর কান্না দেখছে। মনে মনে আদ্রের হাসি পেলেও মুখে অনুকে বলল,
–বাহ্ অনু তুই তো দেখি এক ধাপ এগিয়ে গেছিস রে। তোকে বললাম আমার দুই গালে চুমু দিলে তুই শাস্তি থেকে মুক্তি পাবি আর তুই কিনা সরাসরি আমার ঠোঁটে চুমু দিয়ে বসলি? তুই ভীষণ দুষ্টু হয়ে গেছিস।
অনু একবার আদ্রের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাল। তারপর আবারও লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি করে বিছানার কাঁথা নিজের শরীর মুখে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল। অনু আদ্রের বিপরীত দিকে ঘুরে শুয়ে আদ্রকে বলল,
–আদ্র ভাইয়া তুমি তোমার বাসায় চলে যাও। প্লিজ আমাকে আর কিছু বলতে এসো না।

–বাইরে খুব ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে। আর তুই আমাকে এই ঝড় বৃষ্টির দিনে তোর বাসা থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছিস অনু? আমার যদি কিছু হয়ে যায় তখন তুই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবি তো?
অনু তাড়াতাড়ি করে আদ্রের দিক করে শুয়ে পড়ল। তারপর আদ্রর দিকে তাকিয়ে অনু বলল,
–তোমাকে বাইরে যেত হবে না আদ্র ভাইয়া। তুমি এখানেই বসে থাকো।
আদ্র নিজের মোবাইল ফোন বের করে গেমস খেলতে লাগল৷ বেশ কিছুক্ষণ সবকিছু নিরব হয়ে রইল। অনু মুখের উপর এখনো কাঁথা দিয়ে রেখেছে। অনুর বুকের ভিতরটা ঢিপঢিপ করছে। ঐসময় কি করে বসল। আদ্র ভাইয়ার ঠোঁটে কিনা! অনু আর কিছু ভাবতে পারল না।
নিরবতার পর্যায় শেষ করে আদ্র অনুকে জিজ্ঞেস করল,
–অনু তুই বাসায় একা কেন?খালামনি কোথায় গেছে?
অনু কাঁথা থেকে মুখ তুলে আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

–আম্মু বাজারে গেছে আদ্র ভাইয়া। আজ বাসায় আদা, রসুন, তেল, চিনি, লবণ কিছু নেই। সব শেষ হয়ে গেছে। আম্মুর আব্বুকে বলতে খেয়াল ছিল না। ফোনেও টাকা নেই। তাই তো আম্মু বাজারে চলে গেল। কিন্তু ঝড় বৃষ্টির জন্য হয়তো আম্মু কোথাও দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে কখন বৃষ্টি থামবে।
আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,
–খালামনি ছাতা নেয় নি?
–নেয় নি তো। এজন্যই তো আম্মুর আসতে দেরি হচ্ছে।
আদ্র উঠে দাঁড়াল। অনু অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,
–কি হলো আদ্র ভাইয়া উঠে পড়লে কেন?
আদ্র অনুর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
–বোকা মেয়ে আমাকে আগে বলবি না? ঝড় বৃষ্টি কখন থামবে কে জানে? আমি গিয়ে খালামনিকে নিয়ে আসি।
অনু মন খারাপ করে বলল,
–তুমিও তো আমার কাছ থেকে জানতে চাও নি।
আদ্র রুম থেকে বেরিয়ে গেল। অনু শুয়ে থাকা থেকে উঠে বসল৷ অনু এবার নিজে নিজেই রেগে বলল,
–পঁচা আদ্র ভাইয়া তুমি। আমাকে আগে শাস্তি দিতে। আর এখন লজ্জা দেও। আম্মুকে তো আদ্র ভাইয়ার এসব কাজের কথা বলতেও পারবো না। আম্মুকে বলে দিলে আদ্র ভাইয়া আমার বারোটা বাজিয়ে দিবে।
বেশ কিছুক্ষণ সময় পর আদ্র অনুর মা আমেনা বেগমকে নিয়ে বাসায় পৌঁছাল। অনু পা ব্যথায় উঠে দাঁড়াতে পারবে না তাই বিছানায় শুয়ে রইল। আমেনা বেগম অনুর রুমে এসে হাসিমুখে অনুকে বলল,
–দেখেছিস অনু! আমার আদ্র বাবা কত ভালো। তুই তো কোনো কাজেরই না। আমি ঝড় বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছি, কই আমাকে হাতে ছাঁতা নিয়ে নিতে আসবি তা না! উল্টো এখানে শুয়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস! আদ্রের কাছ থেকে তো কিছু শিখতে পারিস অনু।

অনু বিরক্তি দৃষ্টিতে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল। অনু আমেনা বেগমকে জিজ্ঞেস করল,
–আম্মু আদ্র ভাইয়া কোথায় গেছে?
আমেনা বেগম অনুকে বলল,
–আদ্র আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে নিজের বাসায় চলে গেছে। কত করে বললাম বৃষ্টি কমলে তারপর বাড়ি যা কিন্তু আমার কথা ছেলেটা শুনলই না।
অনু মন খারাপ করে বলল,
–ওহ্
আমেনা বেগম রেগে অনুকে বলল,
–আজকে ঠিকঠাক মতো আদ্রের কাছে পড়া বলতে পেরেছিস অনু?
অনু হাসার চেষ্টা করে বলল,
–হ্যা আম্মু পেরেছি।
–যাক পড়া পেরেছিস তাহলে।
আমেনা বেগম অনুর রুম থেকে চলে গেল।
–তোমার বোনের ছেলে যে কত ভালো তাতো তুমি জানো না আম্মু। ভালো না ছাঁই। রাগীর সাথে পুরো লুচ্চা আদ্র ভাইয়া। কিন্তু তোমাকে বললে তো উল্টো তুমি আমাকে বকবে। আমার কথা বিশ্বাসই করবে না। কপাল আমার।
অনু মনে মনে এসবই ভাবছিল তখন অনুর ফোনে আদ্রের কল আসল। অনু ফোনের স্ক্রিনে আদ্র ভাইয়ার নাম দেখে চমকে উঠলো। আদ্র ভাইয়া আবার কল দিলো কেন? কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করে অনু বলল,
–হ্যালো আদ্র ভাইয়া?
আদ্র রাগী স্বরে বলল,

–আজকে তো পড়া দিতে পারলি না।গতকালকের পড়াটা আজকে শিখে রাখিস অনু। আগামীকাল পড়া না পাড়লে তোর কপালে দুঃখ আছে। তোর পা ব্যথা দেখে বাড়তি পড়া দিলাম না।পায়ে মলম লাগিয়ে নিস।ফোন রাখলাম। বাই।
আদ্র ফোন রেখে দিল। অনু মন খারাপ করে বলল,
–এই পায়ে ব্যথা নিয়ে এখন আমাকে পড়তে হবে? আদ্র ভাইয়া তুমি এতো নিষ্ঠুর কেন? আর তোমাকেই কেন আমার টিউটর হতে হলো? দুনিয়ায় কি আর কোনো টিউটর আমার জন্য ছিল না? যেখানে অন্য টিউটর সপ্তাহে চারদিনের বেশি পড়াতেই চায় না সেদিকে তুমি আমাকে প্রতিদিন পড়াতে চলে আসো। সপ্তাহে সাত দিন! এটা আমার সাথে খুব অন্যায় করা হচ্ছে। আমি একটু ছুটির দিনও পাচ্ছি না। ভালো লাগে না কিছু।
নিজের রুমের সোফায় আদ্র বসে আছে। আদ্রের জ্বর সাথে ঠান্ডাও লেগে গেছে। কারণ নিজের ছাতাটা আদ্রের খালামনিকে দিয়ে দিতে হয়েছিল। ফলস্বরূপ আদ্রকে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে। আমেনা বেগম বারণ করেছিল আদ্রকে বৃষ্টিতে না ভিজতে। আদ্র আমেনা বেগমকে উত্তরে বলেছিল তার বৃষ্টিতে কিছু হবে না। কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজলে আদ্রের জ্বর চলে আসে। ঠান্ডা লেগে যায়। এখনও তাই হয়েছে। আদ্র রুমাল দিয়ে নিজের মাথা মুছতে মুছতে বলল,

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব ১

–জ্বর ঠান্ডা আসার আর টাইম পেল না। কিন্তু আমার যতই জ্বর ঠান্ডা লাগুক না কেন! কাল অনুকে আমি পড়াতে যাবোই। মেয়েটা একটুও পড়াশোনা করে না। এই অনুকে নিয়ে যে আমি কোথায় যাবো!
আদ্র নিজের ফোনের গ্যালারিতে সেট করে রাখা অনুর হাসি মুখের ছবিটি দেখতে লাগল। অনু যখন পড়া না পেরে নিজেকে শাস্তি থেকে বাঁচানোর জন্য মুচকি হেসে আদ্রের সাথে কথা বলছিল তখনই আদ্র অনুর অজান্তে ছবিটি তুলে ফেলে। আদ্র অনুর ছবির দিকে তাকিয়ে আবারও বলতে লাগল,
–তুই খুব বোকা অনু। এতোটা বোকা না হলেও পারতি। কিন্তু তোর এই বোকামিতেই তোকে খুব মানায়।
পরেরদিন বিকালে কলিংবেল বাজলো। অনু দরজা খুলে দেখে আদ্র এসেছে। অনু মুখ গুমোট করে নিজের রুমে চলে গেল। অনু নিজের চেয়ারে বসে পড়ল। আদ্র অনুর পাশের চেয়ারে বসল। অনু আদ্রর দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল কিন্তু আবারও খেয়াল করে আদ্রের দিকে অনু তাকাল। আদ্র রাগী স্বরে অনুকে বলল,

–অনু এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?
অনু অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,
–আদ্র ভাইয়া তোমার চোখ মুখ খুব লাল হয়ে আছে।
আদ্র বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতেই অনুর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
–আমার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে ভালো কথা। তাতে তোর কি অনু? তুই পড়ায় মনোযোগ দে।
–তোমার চোখ লাল দেখতে আমার ভালো লাগছে না আদ্র ভাইয়া।
অনু হঠাৎ করেই আদ্রের কপালে হাত ছুঁয়ে দিল। আদ্র নিজের কপালে রাখা অনুর হাতটা সাথে সাথে চেপে ধরে সরিয়ে ফেলল। অনু আর্তনাদ করে বলল,
–আদ্র ভাইয়া তোমার তো খুব জ্বর!
–আই ডোন্ট কেয়ার।
–আদ্র ভাইয়া তুমি ঔষধ খাও নি?
আদ্র রেগে চিৎকার করে বলল,

–জাস্ট সাট আপ অনু। আমাকে নিয়ে বেশি কথা বলবি না।পড়া বের কর।
অনু আদ্রের ধমক খেয়ে কাঁদতে লাগল। আদ্র অনুর কান্না সহ্য করতে পারে না। তাই আদ্র অনুর চোখের জল মুছে দিতে লাগল। অনু এবার আদ্রের হাত চেপে ধরল।

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব ৩