তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব ৩ || ভালবাসার গল্প

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব ৩
Anika Fahmida

অনু আদ্রের হাত চেপে ধরায় আদ্র রেগে অনুকে বলল,
–আমার হাত ছাড় অনু।
আদ্র রেগে গেছে বুঝতে পেরে অনু হাত ছেড়ে দিল। পরমুহূর্তেই অনু আদ্রকে বলল,
–আমি আজকে পড়ব না আদ্র ভাইয়া। তুমি যতই আমাকে জোর করো না কেন, আমি পড়ব না।
আদ্র হাতে লাঠি নিয়ে বলল,
–কি বললি তুই?
আদ্রের হাতে লাঠি দেখে অনু ভয়ে ভয়ে বলল,
–তোমার শরীরে জ্বর আদ্র ভাইয়া। এতো কষ্ট করে তোমার আজকে আমাকে পড়াতে হবে না। তুমি এখানে বসো আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
–আমি কিছুই খাবো না অনু। আর তোকে পড়তে হবে মানে পড়তে হবে।
–কিন্তু আমি তো পড়বো না।
আদ্র রেগে গিয়ে বলল,

–বুঝতে পেরেছি তুই আমার কথা শুনবি না। তোর পড়াশোনায় মনোযোগ নেই। বেশ ভালো তো। আমি আর তোকে কোনোদিন পড়াতে আসবো না। আজকেই আমি তোকে লাস্ট পড়ালাম। আমি চললাম।
আদ্র অনুর রুম থেকে চলে গেল। আদ্রের কথায় অনু অবাক হলো। সত্যি আদ্র ভাইয়া আর পড়াতে আসবে না? আদ্র ভাইয়া পড়াবে না এটা তো ভালো কথা। কিন্তু অনুর এতো মন খারাপ কেন হচ্ছে? কেন হচ্ছে অনুর জানা নেই। অনু টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদতে লাগল।
আদ্র চলে যাচ্ছে দেখে আমেনা বেগম আদ্রকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–আদ্র বাবা তোমার অনুকে পড়ানো হয়ে গেছে?
আদ্র হতাশ হয়ে বলল,
–খালামনি অনুকে পড়ানো হয় নি। অনুর পড়াশোনায় একদম মনোযোগ নেই। তাই আমি ভাবছি আমি আর অনুকে পড়ানোর জন্য আসবো না। অনুর জন্য অন্য কোনো টিউটর রাখলে ভালো হবে।
আমেনা বেগম অনুর উপর রেগে গিয়ে আদ্রকে বলল,
–মেয়েটা এতো খারাপ হয়ে গেছে। আজকেই আমি অনুকে উচিত শিক্ষা দিব।
অনুর মা রেগে অনুর রুমে যাওয়ার জন্য রওনা দিতে গেলেই আদ্র বাধা দিয়ে বলল,
–না খালামনি অনুকে কিছু বলো না। অনু বাচ্চা মেয়ে। আমিই হয়তো অনুকে ঠিকঠাক পড়াতে পারছি না।
আমেনা বেগম আদ্রকে বলল,

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

–তুমি এতো মেধাবী ছাত্র হয়ে অনুকে ঠিকমতো পড়াতে পারছো না এটা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না বাবা।
আদ্র অামেনা বেগমকে বলল,
–কিন্তু এটাই সত্যি খালামনি। আমি অনুর জন্য সঠিক শিক্ষক নই। আমি এখন আসি খালামনি।
–আদ্র বাবা দাঁড়াও। কিছু না খেয়ে চলে যাচ্ছো কেন?
–আমার খিদে নেই খালামনি। আমি আসি। আর এমনিতে তো মাঝে মাঝে এই বাড়িতে আসবোই।
আদ্র আর একমুহূর্তও দাঁড়াল না। অনুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে গেল। অনুর মা মন খারাপ করে অনুর রুমে গিয়ে দেখে অনু টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে।
–আদ্রকে তুই কেন তাড়িয়ে দিলি অনু?
অামেনা বেগমের কথায় অনু নিজের চোখের জল মুছে ভাঙা গলায় বলল,
–আমি আদ্র ভাইয়াকে তাড়িয়ে দেই নি আম্মু। আদ্র ভাইয়া নিজেই চলে গেছে।
আমেনা বেগম অবাক হয়ে অনুকে বলল,
–তুই কাঁদছিস কেন অনু?আদ্র তোকে আর পড়াতে আসবে না। তোর তো খুশি হওয়ার কথা।
অনু খেয়াল করে দেখল হ্যা অনু কাঁদছে। কিন্তু কেন কাঁদছে সেটাই বুঝতে পারছে না। অনু চুপ করে রইল।
আদ্র মাঠের এক বেঞ্চিতে বসে আছে। আদ্রের সাথে আছে আদ্রের বন্ধু রিফাত, নিলয়, প্রান্ত, রিনি, সুমি।
রিফাত আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,
–কিরে আদ্র এভাবে মন খারাপ করে বসে আছিস কেন? আমরাই বকবক করছি। তুই তো কিছুই বলছিস না। কি হয়েছে তোর? জ্বরের শরীর নিয়েও এখানে আড্ডা করতে চলে এলি।
আদ্র উত্তরে বলল,
–জানি না।
সুমি আদ্রকে বলল,

— তোর মতো সুদর্শন ছেলেকে মন খারাপে মানায় না আদ্র। তোকে রাগী লুকেই মানায়। তুই তো আমাদের বললি তোর শরীর খারাপ। তাহলে বাসায় গিয়ে রেস্ট নে। নাহলে আমাদের সাথে গল্প কর।
রিনি সুমির সাথে সাথে বলল,
–হ্যা ঠিক বলেছিস সুমি। এই আদ্র যে কেন মন খারাপ করে এখানে বসে আছে কিছুই বুঝতে পারছি না।
নিলয় আদ্রের কাঁধে হাত রেখে বলল,
–ছ্যাঁকা খাইছিস নাকি মাম্মা?
আদ্র নিজের কাঁধ থেকে নিলয়ের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মন খারাপ করে বলল,
–সবসময় মজা ভালো লাগে না নিলয়।
প্রান্ত হেসে বলল,
–বুঝেছি পোলায় প্রেমে পড়ে দেবদাস হয়েছে।
বন্ধুদের কথাবার্তা আদ্রের কাছে ভালো লাগছে না। তাই আদ্র সেখান থেকে উঠে চলে গেল। সবাই পিছু ডাকল কিন্তু আদ্র শুনল না।
বাসায় গিয়ে বাথরুমে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে আদ্র অনেক্ষণ ভিজতে লাগল। আদ্র মনে মনে বলল,
–আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আমি অনুর প্রতি খুব বেশি দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। না আমার এতো দুর্বল হলে চলবে না। সামনে আমার অনার্স ফাইনাল এক্সাম। সারাদিন অনুর কথা ভাবা চলবে না। আর কখনো অনুকে পড়াতে যাবো না আমি। অনুর কাছে গেলে নিজেকে কেমন যেন পাগল পাগল মনে হয়। এটা হতে দেওয়া চলবে না।
আদ্র দুই ঘন্টা শাওয়ারে দাঁড়িয়ে থাকার পর বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসল। নীল কালার টি শার্ট আর জিন্স পড়ে আদ্র বিছানায় শুয়ে পড়ল।

রাত আটটা বাজে৷ কিন্তু আদ্র এখনো শুয়ে আছে। আদ্রের মা রেহেনা পারভিন অনেকবার আদ্রকে খাবার খাওয়ার জন্য ডাক দিয়েছেন কিন্তু আদ্র তার মায়ের কথা শুনে নি। এই গরমেও আদ্র কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে। রুমে এসি চলছে তবুও আদ্রের শরীর প্রচন্ড গরম। হঠাৎ গালে কারও শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে আদ্র চোখ খুলে তাকাল। সামনে অনুকে দেখে আদ্র অবাক হলেও তার চেয়ে বেশি অবাক কারণ অনুর চোখ মুখ ফুলে আছে। দেখেই মনে হচ্ছে ভীষণ কেঁদেছে অনু। কিন্তু অনু কান্না করেছে কেন? আদ্র মনে মনে বলল,
–আমি চলে গিয়েছি তোর তো খুশি হওয়ার কথা। তাহলে তুই কেন কাঁদলি অনু? তোর মন কেন এতো খারাপ? আচ্ছা তাহলে আমার মনে যেই অনুভূতিগুলো আমাকে তাড়া করে বেড়ায় সেই অনুভূতি কি তোকেও তাড়া করে বেড়ায়?আমার মতো তুইও কি আমাকে নিয়ে ভাবিস অনু?
আদ্রের ভাবার মাঝে অনু কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলল,
–আদ্র ভাইয়া তুমি খুব খারাপ।
আদ্র অনুর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটানে অনুকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিল। অনু ভয় পেয়ে আদ্রকে বলল,
–কি করছো আদ্র ভাইয়া? আমাকে ছাড়ো।
আদ্র অনুকে বলল,
–আমি খারাপ এটা কেন বললি?
অনু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
–আমি জানি না।

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব ২

আদ্র অনুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। আদ্রের জ্বরের উষ্ণতা অনুর শরীরে অনুভব হচ্ছে। অনুর খুব গরম লাগছে কিন্তু তাও কিছু বলছে না। হুট করে আদ্র অনুকে ছেড়ে দিয়ে অন্যদিকে মুখ করে বলল,
–রুম থেকে চলে যা অনু।
অনু বুঝতে পারছে না এই আদ্র ভাইয়ার হঠাৎ হঠাৎ কি হয়? এই টেনে জড়িয়ে ধরে আবার এই ছেড়ে দিয়ে বলে চলে যা। অনু মন খারাপ করে বিছানা থেকে উঠে চলে যাচ্ছিল তখন আদ্র অনুকে বলল,
–আমার জন্য সুপ নিয়ে আয় অনু। আমি সারাদিন কিছু খাই নি। ক্ষুধা লেগেছে।
–আদ্র ভাইয়া তুমি সারাদিন না খেয়ে ছিলে কেন?
–এমনি।
–কি বলছো তুমি? খালামনি কিছু বলে নি তোমায়?
–আমাকে আম্মু অনেক জোর করেছিল কিন্তু আমিই আম্মুর কথা শুনি নি।
–খালামনির কথা শুনো নি কেন?
— মন ভালো ছিল না।
–মন ভালো ছিল না কেন?
–এতো কথা না বলে আমার জন্য সুপ নিয়ে আয়।
আদ্রের ধমক শুনে অনু রুম থেকে বেরিয়ে গেল আদ্রের জন্য সুপ আনতে। আদ্র একইভাবে শুয়ে রইল৷ অনু বেশ কিছুক্ষণ পর সুপ নিয়ে রুমে এলো। অনু্ আদ্রকে ডাক দিতে লাগল,
–আদ্র ভাইয়া? আদ্র ভাইয়া উঠো। তোমার জন্য সুপ নিয়ে এসেছি।
আদ্র উঠে বসল। অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,
–তুই নিজে সুপ বানিয়েছিস?
অনু আদ্রকে বলল,

–আমি কি সুপ বানাতে পারি নাকি? আমি তো রান্নাই করতে পারি না৷ খালামনিকে বলেছি খালামনি সুপ বানিয়ে দিয়েছে।
আদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলল।তারপর অনুকে বলল,
— ওহ। আমাকে খাইয়ে দে।
অনু অবাক হয়ে আদ্রের দিকে তাকিয়ে রইল৷ কিন্তু কিছুক্ষণ পর আদ্রের কথা মতো অনু আদ্রকে সুপ খাওয়াতে লাগল৷ আদ্র অনুর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে সুপ খেতে লাগল। আদ্রের এমনভাবে তাকানো দেখে অনুর কেমন যেন লাগছে কিন্তু কিছু না বলে অনু আদ্রকে চুপচাপ সুপ খাওয়াতে লাগল। সুপ খাওয়া শেষ করে আদ্রকে অনু পানি খাইয়ে দিল। আদ্র আবারও শুয়ে পড়ল। নিজের দু চোখ বন্ধ করে আদ্র অনু্কে শান্ত স্বরে বলল,
–এতো রাতে আমার বাসায় কেন এলি?

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব ৪