তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব ৮ || Anika Fahmida

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব ৮
Anika Fahmida

ঈদ উপলক্ষে সবাই বাইরে ঘুরতে বের হয়েছে। একমাত্র অনু বাসায় একা বসে আছে। কিছু ভালো লাগছে না। ঈদের নতুন জামাটাও অনু পড়ে নি। হাতে কোনো মেহেদীও দেয় নি। মনের অবস্থা প্রচুর খারাপ। বিছানায় শুয়ে আছে অনু। খুব কান্না পাচ্ছে। আদ্র অনুর ফোনে কল দিল। অনু দেখল আদ্র ফোন দিয়েছে তাও ফোনটা ধরল না৷ আদ্র অনবরত ফোন দিচ্ছে। একসময় বাধ্য হয়েই অনু ফোনটা ধরল। অনু ফোন রিসিভ করে বলল,

–হ্যা বলো আদ্র ভাইয়া।
আদ্র রেগে গিয়ে অনুকে বলল,
–একটা থাপ্পড় দিবো বেয়াদব মেয়ে৷ ফোন ধরছিলি না কেন? কয়টা ফোন দিয়েছি তোর কোনো আইডিয়া আছে?ফোন না ধরে কি করছিলি?
অনু মন খারাপ করে বলল,
–কিছু ভালো লাগছে না। তাই শুয়ে আছি।
আদ্র চিন্তিত হয়ে বলল,
–কি হয়েছে তোর? শরীর খারাপ?
–হ্যা মাথাটা ভীষণ ব্যথা করছে। রাতে ঘুমাই নি। মনটা খুব খারাপ।
–হাতে মেহেদী দিয়েছিস?
–না দেই নি।
–কেন?
–ভালো লাগছে না।
–আমি একটু পড়েই তোর বাসায় আসছি।
–কেন আদ্র ভাইয়া?
–বেশি কেন কেন করলে আমার মার খাবি তুই।
অনু চুপ করে রইল। শান্ত স্বরে আদ্রকে বলল,
–আচ্ছা আসো।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

কিছুক্ষণ পরেই আদ্র অনুর বাসায় আসল। এসেই দেখতে পেল অনু বিছানায় কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে। ঈদের নতুন জামাটাও পড়ে নি। আদ্র বিছানায় অনুর পাশে বসে অনুর কপালে হাত রাখল। অনুর শরীর কেমন যেন গরম। হাতে কারও স্পর্শ পেয়ে অনু চোখ মেলে তাকিয়ে আদ্রকে দেখল। আদ্র কালো রঙের একটা সুন্দর পাঞ্জাবি পড়েছে। আদ্রের ফর্সা গায়ের রঙের সাথে ভীষণ মানিয়েছে। আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে আছে। অনু হালকা হেসে আদ্রকে বলল,
–তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে আদ্র ভাইয়া।
–তুই নতুন জামা পড়িস নি কেন?
–এমনি। ভালো লাগছে না।
আদ্র অনুকে টেনে শুয়া থেকে উঠে বসাল। অনু বিরক্ত হয়ে আদ্রকে বলল,
–আদ্র ভাইয়া আমাকে টেনে তুললে কেন? শুয়ে থাকতেই তো ভালো লাগছিল।
–একদম চুপ করে বসে থাক।
আদ্র পকেট থেকে মেহেদী বের করে অনুর ডান হাতে সুন্দর করে মেহেদী দিতে লাগল। এতো সুন্দর করে আদ্র ভাইয়া মেহেদী দিতে পারে তা অনুর জানা ছিল না। অনু হা করে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। অনু অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,
–আদ্র ভাইয়া তুমি এতো সুন্দর করে মেহেদী দিতে পারো আমার জানা ছিল না। এতো সুন্দর করে তো আমিও দিতে পারি না।

আদ্র মুচকি হেসে অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,
–যাক মেহেদী ডিজাইনটা তোর পছন্দ হয়েছে।
অনু হেসে আদ্রকে বলল,
–হ্যা খুব পছন্দ হয়েছে।
আদ্র অনুর হাতের একপাশে লাভ চিহ্ন এঁকে দিয়ে অনুর হাতে আদ্র নাম এঁকে দিল। অনু অবাক হয়ে বলল,
–আদ্র ভাইয়া আমার হাতে তোমার নাম লেখলে কেন? আমার নাম তো লেখতে পারতে।
আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,
–মন চাইল তাই আমার নাম লিখলাম। ভালো না লাগলে বল নামটা মুছে দেই।
অনু তাড়াতাড়ি করে আদ্রকে বলল,
–না, মুছে দেওয়ার লাগবে না। তোমার নামটাই আমার হাতে থাকুক।
–কিছুক্ষণ পর মেহেদী শুকিয়ে গেলে হাতটা ধুয়ে ফেলবি।
অনু এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজের পড়ার টেবিলে কতগুলো ব্যাগ দেখতে পেল। আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,
–এগুলো কিসের ব্যাগ আদ্র ভাইয়া?
আদ্রকে অনুকে বলল,
–ব্যাগ খুললেই দেখতে পারবি।
অনু কৌতুহলী হয়ে আদ্রকে বলল,
–তুমি মুখে বলো না কি আছে ঐগুলাতে?
আদ্র গম্ভীর স্বরে বলল,
–আমি বলতে পারবো না। খুলে দেখে নে।

অনু বিছানা থেকে উঠে গিয়ে টেবিল থেকে ব্যাগগুলো খুলতে লাগল। খুলে অনু অবাক হয়ে গেল। অনেকগুলো ড্রেস, চুড়ি, চকলেট। অনু অবাক হয়ে আদ্রের দিকে তাকাল। আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। অনু আদ্রকে বলল,
–এগুলো কার জন্য কিনেছ আদ্র ভাইয়া?
আদ্র এবার রেগে গিয়ে বলল,
–কার জন্য আবার কিনবো? একটা বলদির জন্য কিনে নিয়ে এসেছি।
–বলদিটা কে?
–তোর মাথায় আসলেই বুদ্ধি নেই। যেহেতু এসব আমি তোর রুমে এনেছি তারমানে এগুলো তুই বলদিটার জন্যই কিনে এনেছি।
–আমার জন্য এতো কিছু কেন আনলে?
–ইচ্ছে হলো তাই এনেছি। খালামনি এবং আংকেলের জন্যও এনেছি।
–তুমি সবার জন্য কিনেছ?
–হ্যা। তো?
–কিছু না। এতোকিছু না কিনলেও পারতে।
–কিছুক্ষণ পর লাল রঙের ড্রেসটা পড়ে বাইরে আয়। আমি তোর জন্য ওয়েট করব। আজ ঘুরতে যাবো।
অনু অবাক হয়ে বলল,
–আমিও সাথে যাবো?
আদ্র গম্ভীর স্বরে বলল,
–জ্বি হ্যা তুইও যাবি।
অনু আদ্রকে জিজ্ঞেস করল,
–আর কেউ যাবে?
–না।
–ওহ। আর কেউ যাবে না কেন?
–চুপ করে রেডি হয়ে সাথে চল।

আদ্র রুম থেকে বের হয়ে চলে গেল। অনু আদ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। অনুর হাতের মেহেদী শুকিয়ে এসেছে। হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে অনু আদ্রের দেওয়া লাল রঙের থ্রি পিজটি পড়ে নিল। হাতে লাল রঙের চুড়ি, কপালে কালো টিপ, চোখে কাজল,ঠোঁটে লাল লিপস্টিক পড়ে তৈরি হয়ে অনু ড্রইং রুমে এলো। অনুর সুন্দর সাজ দেখে আদ্র কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে নিয়ে চোখ সরিয়ে বলল,
–এবার চল।
অনুর মা আমেনা বেগম এসে আদ্রকে বলল,
–আদ্র অনুকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?
আদ্র আমেনা বেগমকে বলল,
–অনুর মন খারাপ তাই ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছি খালামনি।
আমেনা বেগম আদ্রকে বলল,
–আচ্ছা নিয়ে যাও।
অনু আদ্রের সাথে একটা সুন্দর পার্কে ঘুরতে গেল। পার্কের পরিবেশটা খুব সুন্দর। চারিদিকে কত ফুলের বাগান। আদ্র অনুর হাত ধরেই হাঁটছে। অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
–জায়গাটা খুব সুন্দর আদ্র ভাইয়া।
আদ্র গম্ভীর স্বরে বলল,
–তোর কাছে একটা অনুরোধ করবো। রাখবি?
–কি বলো?
–আমাকে আদ্র ভাইয়া না ডেকে শুধু আদ্র বলে ডাকবি? প্লিজ না করবি না?
অনু অবাক হয়ে বলল,
–এটা তুমি কি বলছো আদ্র ভাইয়া? তোমাকে আদ্র বললে খালামনি, আংকেল কি ভাববে? আর আমার আম্মু আব্বুই বা কি ভাববে?

–কিছুই ভাববে না। আর যদি কেউ তোকে কিছু বলে বাকিটা আমি দেখে দিব। তবুও আমাকে শুধু আদ্র ডাক। ভাইয়া বলে ডাকবি না।
অনু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
–আচ্ছা ঠিক আছে। তোমাকে আদ্র বলেই ডাকব।
আদ্র খুশি হয়ে অনুকে বলল,
–তাহলে এখন ডাক?
–এখন?
–হুম এখন।
অনুর একটু অসস্থি লাগছে। তবুও অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
–আদ্র!
–শুধুই আদ্র বলবি? আর কিছু তো বল?
–চলো আদ্র সামনের ঐ দিকটায় যাই।
–হ্যা চল।
একসময় হাঁটতে হাটতে অনু আদ্রকে ক্লান্ত স্বরে বলল,
–আমার পায়ে ব্যথা করছে কি করবো আদ্র?
আদ্র অনুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
–কিছু তো একটা করা যায়।
আদ্র অনুকে কোলে তুলে নিল। অনু অবাক হয়ে বলল,
–আরে কোলে তুলছো কেন?
–অনু আই লাভ ইউ।
অনু অবাক হয়ে আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
–কি বলছো তুমি?
–হ্যা ঠিক বলছি। আমাকে তুই ভালোবাসিস না?

অনু চুপ করে আছে। আদ্র অনুকে কোলে করে অনেক্ষণ হেঁটে একটা বেঞ্চে বসাল। অাদ্র দেখছে অনু মাথা নিচু করে মন খারাপ করে বসে আছে। আদ্র অনুকে আবারও জিজ্ঞেস করল,
–কি হলো অনু কিছু বলছিস না কেন?
–ভালোবাসা কেমন হয় আমি জানি না আদ্র। তাই তোমাকে আমি ভালোবাসি কিনা তা আমি জানি না। কিন্তু হ্যা যখন আমি তোমার সাথে থাকি আমার খুব ভালো লাগে। তোমার কথা প্রতিদিন আমার মনে পড়ে। তোমাকে মিস করতে থাকি। তোমাকে দু চোখ ভরে না দেখলে মন শান্তি লাগে না। এটা কি ভালোবাসা আদ্র?
আদ্র মুচকি হেসে অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
–আমি তোকে মুখে কিছু বলবো না। একদিন তুই উপলব্ধি করতে পারবি আমাকে ভালোবাসিস কিনা। আমি তোর মুখ থেকেই শুনতে চাই যখন তুই পুরোপুরি বুঝতে পারবি।
অনু মন খারাপ করে বলল,
–আমাকে ক্ষমা করে দিও আদ্র।
–তোর মনের কথা তুই সঠিক বুঝতে পারছিস না। একদিন হয়তো বুঝবি।
–সত্যি বলছো?
— হ্যা সত্যি বলছি আদ্র কখনো মিথ্যা বলে না।

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব ৭

আদ্রের অনার্স পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। আদ্রের বাবা ঠিক করেছে আদ্রকে লেখাপড়ার জন্য বিদেশ পাঠিয়ে দিবে। আদ্রও তার বাবাকে না করে নি। কিছুদিন পর বিদেশ যাওয়ার ডেট। অনু আদ্রের বিদেশ যাওয়ার খবর শুনে দৌড়ে আদ্রের বাসায় গেল। কাউকে কিছু না বলে সোজা আদ্রের রুমে গিয়ে ঢুকল। আদ্র বই পড়ছে।
অনু ভাঙা গলায় আদ্রকে বলল,
–তুমি বিদেশ চলে যাবে আদ্র?
অনুর কন্ঠ শুনে আদ্র বই বন্ধ করে অনুর দিকে তাকাল।
আদ্র গম্ভীর স্বরে বলল,
–হ্যা যাবো। তো কি হয়েছে?
–আমাকে একা ফেলে দিয়ে চলে যাবে?
অনু না চাইতেও কান্না করতে লাগল। আদ্র রেগে গিয়ে অনুকে বলল,
–একদম কান্না করবি না অনু। এতে কান্না করার কিছু তো আমি দেখছি না৷ আমি আবারও দেশে ফিরে আসবো।

–কত বছর পর?
–পাঁচ বছর পর।
অনু অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,
–কি এতো বছর পর?
আদ্র অনুকে বলল,
–এটা কোনো বছরই না।
–তোমার কাছে অল্প মনে হচ্ছে?
–হ্যা।
অনু নিজের চোখ মুছে নিয়ে বলল,
–আমার কথা তোমার মনে পড়বে না?

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব ৯