তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব ৭ || Anika Fahmida

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব ৭
Anika Fahmida

অনু আদ্রের বাসার বিশাল বড় আম গাছে উঠেছে আম পেড়ে খাওয়া জন্য। কাউকে না জানিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে আম পেড়ে খেতে অনুর ভালোই লাগে। নিজের ওড়নায় অনেকগুলো আম ইতিমধ্যে অনু নিয়ে ফেলেছে। কিন্তু আরেকটা ডালের বড় এক সবুজ আম দেখে অনুর ভীষণ লোভ হলো। অনু সেই আম হাত বাঁড়িয়ে আনতে গিয়ে গাছ থেকে পা পিছলে পড়ে চিৎকার করে উঠল। অনু চোখ এখনও বন্ধ করে আছে। বুকের ভিতর ঢিপঢিপ আওয়াজ হচ্ছে। ভীষণ ভয় লাগছে। কিন্তু কি হলো? অনু মনে মনে বলল,
–এতক্ষণে তো আমার পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু আমি ব্যথা পেলাম না কেন?

অনু অনুভব করতে পারল অনু কারও কোলের মধ্যে রয়েছে। সেই ব্যক্তি অনুকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে কোলে তুলে রেখেছে। চোখ খুলে অনু নিজের খুব কাছে আদ্রকে দেখে চমকে উঠল। আদ্রই অনুকে এখনও কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনুর বিশ্বাস হচ্ছে না। অনুর কাছে সবকিছু স্বপ্ন লাগছে।
গাছে উঠে যখন অনু আম পাড়ছিল তখন আদ্র নিজের বারান্দায় বসে ছিল কিন্তু হঠাৎ আদ্র অনুকে দেখতে পেল অনু গাছের উপরে বসে আছে। আদ্র নিজের বাসা থেকে নিচে নেমে বাইরে বেরিয়ে গেল। বাগানের মধ্যে গাছের এক পাশে দাঁড়িয়ে আদ্র অনুর কান্ড কাজ দেখছিল। আদ্রের কাছে ভালোই লাগছিল অনুর দুষ্টুমি কিন্তু হঠাৎ অনু গাছ থেকে পা পিছলে পড়ে গেলে আদ্র সাথে সাথেই অনুকে ধরে ফেলে। আদ্র রেগে অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

–তুই গাছে উঠেছিলি কেন?
অনু ভয় পাওয়া স্বরে আদ্রকে বলল,
–আম পাড়ার জন্য।
আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,
–আমাকে বললে আমি তোকে আম পেড়ে দিতাম না?
অনু কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
–হ্যা পেড়ে দিতে তো আদ্র ভাইয়া।
আদ্র রেগে চিৎকার করে উঠে অনুকে বলল,
–তাহলে নিজে কেন গাছে উঠেছিস? আরেকটা হলেই তো পড়ে গিয়ে ব্যথা পেতি।
অনু ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। আর কিছু বলল না। অনু আদ্রের শার্ট চেপে ধরে আদ্রের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে লাগল। কারণ অনু হুট করে নিচে পড়া যাওয়ায় ভয় পেয়েছে সাথে আদ্রও অনুকে ধমক দিয়েছে। আদ্র এখনও অনুকে কোলে তুলে রেখেছে। তাই অনুকে আদ্র কোল থেকে নামিয়ে দিল। মাটিতে আম পড়ে ছড়াছড়ি অবস্থা। আদ্র মাটি থেকে আমগুলো এক এক করে তুলে নিয়ে অনুর আঁচলে রাখল। তারপর আদ্র অনুকে গম্ভীর স্বরে বলল,
–এবার বাসায় যা।
অনু আদ্রকে অবাক হয়ে বলল,
–এই এতগুলো আম কি আমি একা খাবো নাকি? তুমিও খাবে আদ্র ভাইয়া। এই নাও আম।
অনু হাত বাড়িয়ে অনেকগুলো আম আদ্রের দিকে বাড়িয়ে দিল। আদ্র মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে অনুকে শান্ত স্বরে বলল,
–আমি আম খাবো না।
অনু চিন্তিত হয়ে বলল,
–কেন খাবে না?
আদ্র রেগে গিয়ে বলল,

–বেশি কথা একদম বলবি না। আমার বাসার বাগানে কি করছিস? নিজের বাসায় চলে যা।
অনু মন খারাপ করে আদ্রকে বলল,
–তুমি আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছো আদ্র ভাইয়া?
আদ্র অনুকে বলল,
–তাড়িয়ে দেই নি। কিন্তু তুই আমার চোখের সামনে বেশি আসবি না। তাই বলেছি চলে যা।
অনু অবাক হয়ে আদ্রকে বলল,
–কেন আমি তোমার কাছে আসলে কি হবে?
আদ্র অনুর কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
–দেখতে চাস কি হবে?
অনু ভয় পেয়ে পিছাতে পিছাতে বলল,
–না, আমি দেখতে চাই না।
আদ্র বাঁকা হেসে অনুকে বলল,
–কিন্তু এখন তো তোকে দেখতে হবে।
আদ্র অনুর কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসল। আবারও অনুর ওড়নার আঁচল থেকে সব আম মাটিতে পড়ে গেল। অনু ভয় পেয়ে আদ্রের দিকে অবাক হয়ে তাকাল। আদ্র অনুর ডান গালে চুমু দিল এবং বাম গালও চুমু দিয়ে অনুকে ছেড়ে দিল। অনু আদ্রের ঠোঁটের স্পর্শে কেঁপে উঠল। অনু নিজের গালে হাত দিয়ে আদ্রকে বলল,

–আদ্র ভাইয়া এটা তুমি কি করলে?
আদ্র অনুর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
–কি করলাম বুঝতে পারলি না?তোকে আদর করলাম।
তুই আশেপাশে থাকলেই তোকে আমার আদর করতে মন চায়। তাই তো বলেছি যখন তখন আমার আশেপাশে আসবি না। কিন্তু তুই তো আমার কথাই শুনিস না। আমার আদর খেতে বুঝি তোর খুব ভালো লাগে তাই না অনু?
অনু লজ্জা পেয়ে বলল,
–কিসব বলছো তুমি আদ্র ভাইয়া?
–আমি কি বলছি তা তোর বুঝার লাগবে না।
আদ্র আর কোনো কথা না বলে মুচকি হেসে বাগান থেকে চলে গেল। অনু এখনও দাঁড়িয়ে আছে। অনু গালে হাত দিয়ে মনে মনে বলল,
–আমি কখন তোমার আশেপাশে আসলাম? তুমিই তো বারবার আমার আশেপাশে আসো আদ্র ভাইয়া।
অনু আর আম নিয়ে বাড়ি ফিরল না। আমগুলো বাগানেই পড়ে রইল। অনু দৌড়ে আদ্রের বাসার বাগান থেকে নিজের বাসায় চলে এলো। অনু নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে হাঁপাতে লাগল। আবারও অনুর চোখের সামনে নিজের দুই গালে আদ্রের চুমু দেওয়ার দৃশ্য দেখতে পেল। অনুর নিজের গালে হাত দিয়েই বিছানায় বসে পড়ল। নিজের পুরো মুখে অনুর প্রচুর ঘাম জমে গেছে। অনু নিজের হাত দিয়ে সেই ঘাম মুছতে লাগল। হঠাৎ করে অনুর ফোনের ফেসবুক মেসেঞ্জারে মেসেজ আসল। আদ্রের মেসেজ! অনু হাতে ফোন নিয়ে আদ্রের মেসেঞ্জারে ঢুকেই একটা বড় শক খেল। আদ্র অনুর কোমড় জড়িয়ে ধরে অনুর গালে কিস করছে এই দৃশ্য ছবি তুলে রেখে দিয়েছে। অনু মনে মনে বলল,

–আদ্র ভাইয়া এসব পিক কিভাবে তুললো? কে তুললো এই পিক আর কেন তুললো?
এরই মাঝে আদ্রের আরেকটা মেসেজ অনু দেখতে পেল। আদ্র অনুকে লিখেছে,
–কিরে অনু এই পিকটা দেখে ভয় পেলি? ভয় নেই। আমার দ্বারায় অসম্ভব কিছুই নয়। আমার বাগানে অনেকগুলো সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে সেটা হয়তো তুই জানিস না। সেই ক্যামেরা থেকেই এই ছবিগুলো তোলে নিজের কাছে রাখলাম। ভালো করি নি বল?
অনু এই মেসেজটা পড়ার পর তাড়াতাড়ি করে আদ্রের মোবাইলে কল দিল। আদ্র কল ধরতেই অনু বলল,
–এমন কেন করলে আদ্র ভাইয়া? তুমি এসব ছবি তুলে কি প্রমাণ করতে চাইছো?
আদ্র স্বাভাবিক স্বরেই অনুকে বলল,
–কিছুই প্রমাণ করতে চাইছি না। শুধু তোর আমার এই মুহুর্তটুকু ক্যামেরা বন্ধী করে রাখলাম।
অনু ভয় পাওয়া গলায় আদ্রকে বলল,
–প্লিজ আদ্র ভাইয়া তুমি এই ছবি বাসার কাউকে দেখিও না। আম্মু আব্বু জানলে আমাকে অনেক শাস্তি দিবে। তুমি আমার কথা বুঝতে পারছো তো?
আদ্র গম্ভীর স্বরে অনুকে বলল,
–হ্যা আমি বুঝতে পারছি। তোর বাসার কাউকে এই পিক দেখাবো না।
আদ্রের কথায় অনু এবার শান্ত হলো। আদ্র আর কিছু না বলেই ফোনটা কেটে দিল। আদ্র ফোন কেটেছে দেখে অনু মন খারাপ করে মনে মনে বলল,
–এভাবে ফোনটা আদ্র ভাইয়া কেটে দিল!

আদ্রের হাতে অনু আর আদ্রের রোমান্টিক দৃশ্যের ফটো। যেখানে আদ্র অনুর গালে চুমু দিচ্ছে। আদ্র অপলক দৃষ্টিতে ছবিটির দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখের এক পলকও এদিক ওদিক যাচ্ছে না। অপরদিকে অনুও মোবাইল হাতে নিয়ে সেই ছবিটি দেখতে লাগল। অনুর মনের মধ্যে ভীষণ ভয় লাগছে। আদ্র ভাইয়া যেই রাগী যদি ছবিটি দিয়ে কিছু করে ফেলে? আবার অনু ভাবল এমন নাও হতে পারে। একটু বেশিই হয়তো ভাবছে।
বারান্দায় বসে আছে আদ্র। মনটা উদাসীন। যতই অনুকে মন থেকে সরাতে চাইছে ততই যেন অনু আদ্রের মনের মাঝে গেঁথে যাচ্ছে। আদ্র চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। আদ্রের অনুকে নিজের চোখের সামনে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। তাই আদ্র নিজ বাসা থেকে বেরিয়ে অনুর বাসায় চলে গিয়ে অনুর বাসার কলিংবেল বাজাতে লাগল। অনুর মা আমেনা বেগম দরজা খুলে আদ্রকে দেখে বলল,
–আরে আদ্র বাবা ভিতরে এসে বসো।
আদ্র ড্রইং রুমের ভিতরে এসে এদিক ওদিক খুঁজে আমেনা বেগমকে শান্ত স্বরে বলল,
–খালামনি অনু কোথায়? অনু নিজের রুমে আছে?
আমেনা বেগম আদ্রকে বলল,
–না বাবা। অনু ছাঁদে গিয়েছে।
আদ্র অনুর মাকে বলল,

–আচ্ছা খালামনি আমি দেখে আসি অনু কি করছে। যদি আবার ছাঁদে হোচট খেয়ে পড়ে যায়!
অামেনা বেগম চিন্তিত হয়ে আদ্রকে বলল,
–হ্যা বাবা ঠিকই বলেছো। মেয়েটা আমার একা একা ছাঁদে। যদি হোচট খায়! তুমি যাও।
আদ্র অনুকে খোঁজার জন্য ছাঁদে উঠতে লাগল।
বিকেল বেলা। সূর্য একেবারে ডুবে গিয়ে রাত হয়ে যাবে একটু পর। পাচঁ তলার ছাঁদের রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে থেকে সূর্যের লাল আলোটার দিকে তাকিয়ে থাকতে অনুর বেশ ভালো লাগছে৷ অনু তিন তলার ফ্ল্যাটে থাকে। কিন্তু ফ্ল্যাটটা পাঁচ তলার। আদ্রের নিজের দু তলা বড় বাড়ি থাকলেও অনু নিজের বাড়িতে নয় বরং অনু ভাড়া ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকে। কারণ আদ্রের বাবা বড়লোক হলেও অপরদিকে অনুর বাবা মধ্যবিত্ত। অনুর মায়ের বড় বোন আদ্রের মা। কিন্তু আদ্রের পরিবার ধনী হয়েও অনুর পরিবার মধ্যবিত্ত হওয়া নিয়ে ছোট করা,ঝগড়া, হিংসা, অহংকার কখনো করা হয় নি। আমেনা বেগম এবং রেহেনা পারভিনের এই বোনের মধুর সম্পর্ক অটুট হয়ে আছে। এবং আদ্রের বাবা ও অনুর বাবার মাঝেও ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।
ছাদে দাঁড়িয়ে থেকেও হঠাৎ করেই অনুর মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে৷ আদ্রের কথাই বার বার অনুর মনে পড়ছে।

–এখানে একা দাঁড়িয়ে কি ভাবছিস অনু?
আদ্রের কন্ঠ শুনে চমকে অনু পেছন ফিরে তাকাল। আদ্র এগিয়ে এসে অনুর পাশে রেলিংয়ের কাছে দাঁড়াল। অনু আদ্রের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,
–আমার মন ভালো নেই আদ্র ভাইয়া। কিছুই তো ভালো লাগছে না।
আদ্র চিন্তিত স্বরে অনুকে বলল,
–কেন তোর কি মনের অসুখ হয়েছে অনু?
অনু হতাশ হয়ে আদ্রকে বলল,
–হ্যা হয়তো মনের অসুখ হয়েছে। তুমি হঠাৎ আমাদের বাসার ছাঁদে কেন এলে আদ্র ভাইয়া?
আদ্র বাইরের প্রকৃতি দেখতে দেখতে বলল,
–আমার নিজেরও জানা নেই।
অনু দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। কিছুক্ষণ নিরবতা থাকার পর অনু আদ্রের কাছে আবদার করে বলল,
–আদ্র ভাইয়া একটা গান শুনাবে? প্লিজ না করবে না। আমার মন ভালো নেই। তোমার গাওয়া একটা গান শুনতে চাই। কখনো তোমার গলায় গাওয়া গান আমি শুনি নি। একটা গান গাও।
আদ্র অনুর দিকে কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে গান গাইতে আরম্ভ করল,

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব ৬

Chal diya
Dil tere peeche peeche
Dekhta main rah gaya
Kuch toh hai
Tere mere darmiyan
Jo ankaha sa reh gaya
Main jo kabhi keh na saka
Aaja kehta hoon pehli dafa
Dil mein ho tum
Aankhon mein tum
Pehli nazar se hi yaara
Dil mein ho tum
Aankhon mein tum
Pehli nazar se hi yaara

আদ্র হিন্দি গান গাইছে আর অনু মুগ্ধ হয়ে আদ্রের গান শুনছে। আদ্র অনুর দিকে তাকিয়েই পুরুষালি সুরেলা কণ্ঠে গান গাইতে লাগল। আদ্রের গান গাওয়া শেষ হলে অনু খুশিমনে আদ্রকে বলল,
–আদ্র ভাইয়া তুমি খুব সুন্দর গান গাইতে পারো। তোমার গানের কন্ঠ এতো সুন্দর তা আমি আগে জানতাম না।এতো সুন্দর করে কিভাবে গান গাও তুমি?
আদ্র হেসে ফেলে অনুকে বলল,
–গানটা একমাত্র তোর জন্য গেয়েছি বলেই এতো ভালো হয়েছে। নাহলে হয়তো গান গাওয়াটা ভালো হতো না।
আদ্রের কথা শুনে অনু প্রথমে একটু অবাক হলেও পড়ে অনু দাঁত বের করে হেসে আদ্রকে হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরল। অনু এভাবে শক্ত করে আদ্রকে জড়িয়ে ধরায় আদ্র কিছুটা অবাক হলেও পড়ে আদ্রও মুচকি হেসে দুই হাতে অনুকে জড়িয়ে ধরল।

তোমাকে ঘিরে আমার অনুভূতি পর্ব ৮