Violent love part 32

Violent love part 32
Mariam akter juthi

সূচি এগিয়ে এসে আরিশ কে হাগ করতে নিলে, তৎক্ষণে জুথি আরিশের সামনে এসে দুহাতে আরিশ কে পিছনে রেখে ভ্রু কুঁচকে বললো,
‘মুখে কথা বলতে পারো না? জড়িয়ে ধরতে হবে কেন?
‘আরে আমার ভাই আমি জড়িয়ে ধরতে পারবো না? বোকা বনে যেয়ে।
‘না।
‘কেন?
‘আমি বলেছি তাই।
সূচি জুথির কথায় ওর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে, তাৎক্ষণে আরিশ ইশারায় ওকে থামতে বলায়,সূচি বলতে নিয়েও থেমে যায়। সূচিকে থামতে দেখে আরিশ জুথির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ওকে তোর রুমে নিয়ে যা! – বলে যেতে নিলে জুথি হুট করে বললো,
‘কেন ওকে আমার রুমে নেব কেন? আমি কাউকে আমার রুমে নিব না, হু…। — বলে ‘ভ্রু কুঁচকে মুখ ভেংচালো। আরিশ জুথি কে জেলাস হতে দেখে ঠোঁট কামড়ে হেসে,ওর কানের কাছে ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বললো,
‘ঠিক আছে নিতে হবে না,তুই তো আমার কাছে আমার রুমে থাকিস! এখান না হয়, সুচিকে আমার রুমে নিয়ে যাই? তুই বরং তোর রুমে যা। – বলে আবারো ঠোট কামড়ে হেসে ওর থেকে সরে আসতে, তৎক্ষণে জুথি সূচির পাশে দাঁড়িয়ে বোকা হেসে সূচির থেকে কাপড়ের ব্যাগটা হাতে নিতে নিতে দাঁত কেলিয়ে বললো,

‘না,না নিব না কেনো? আমি তো মজা করছিলাম, সূচি তো আমারও বোন হয় তাই না, ‘বলুন? আপনি একদম চিন্তা করবেন না, আমি ওকে এক্ষুনি আদরের সহিত আমার রুমে নিয়ে যাচ্ছি।– বলে সূচির কাঁধে হাত রেখে ওকে টেনে নিয়ে যেতে নিলে সূচি ভেবাচেকা খেয়ে আরিসের দিক তাকালো, যেই মেয়ে নিবে না বলে মুখ ভেচকানো হঠাৎ এমন পরিবর্তনে মেয়েটা আরিশের দিক তাকাতে দেখে আরিশ মুখে টিপে হাসছে, এটা দেখে সূচি বুঝে, আরিশ ভাই কিছু তো একটা বলেছে, তার জন্যই… এটা ভেবে সূচিও মুচকি হেসে দিল। সূচিকে হাসতে দেখে জুথি কপাল কুঁচকে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘একা একা পাগলের মত হাসছো কেন?
জুথির কথায় সূচি হাসি থামিয়ে একটু ভাব নিয়ে বললো,
‘তো হাসবো না? আশেপাশের জেলাসি পোড়া গন্ধ পাচ্ছি!
“পড়ন্ত বিকাল গোধূলির শেষ লগ্ন, খান বাড়ির প্রতিটি কোনায় যেন খুশির আমেজ বয়ে যাচ্ছে। বাগান থেকে শুরু করে বাড়ির প্রতিটি জায়গায় ঝিলিক বাতির মেলা, লাইটিং ফুল,তারা বাতি ঝাড়বাতি সব জায়গায় ফুটিয়ে তুলেছে বেশ, ইতিমধ্যে জুথির নানাবাড়ির মেহমানরা সব চলে এসেছে, ওর নানুর নাম, ‘মুক্তিযোদ্ধা’ ইদ্রিস হাওলাদার। নানীর নাম তাহামিনা বেগম। ওর তিন মামা, বড় মামা লোকমান হাওলাদার। স্ত্রী প্রিয়া বেগম, তাদের একটা ছেলে বয়স ১৩,নাম ‘নাঈম’। মেজ মামা, জলিল হাওলাদার, স্ত্রী মুক্তা বেগম, তাদের ও একটাই ছেলে, বয়স ২, নাম ঈশা। ছোট মামা জুয়েল হাওলাদার, স্ত্রী শায়লা বেগম তাদের কোন সন্তান নেই, তবে ছোট মামী অন্তর সত্তা।

পাশাপাশি, রাদিফের, রোদের, আরিশের নানা বাড়ির আত্মীয়-স্বজনরাও চলে এসেছে। বড়’রা এক জায়গায় বসে আড্ডা দিচ্ছি,তো বুড়ো বুড়ি অন্য জায়গায়, আর যেখানে বুড়ো বুড়ি আছে সেখানে তো কোন কথাই নেই, তাদের আদি কালের বুদ্ধ বুড়ি সংস্কার তো আছেই। বাচ্চারা তো বাগানের খেলাধুলা করছে আবার কেউ কেউ সাউন্ড বক্সের সাথে তাল মিলিয়ে নাচ গান করছে, এত এত মানুষের ভিড় রেখে, ‘জুথি, ফারি, তানিশা, শর্মি (তানিশার বোন) সূচি, ইভা, রোদ, মাইশা, দৃষ্টি, সব গোল মিটিংয়ে বসেছে। যদিও ইভা আসতে চাইছিল না, ওদের জোরাজরিতে এখানে এসে বসা, তাদের এখন মূল আলোচনা হচ্ছে, সন্ধ্যায় তারা নাচবে, অভিনয় করবে ভিখারী সেজে টাকা উঠাবে। ওদের এমন পরিচালনায় রোদ কিছু না বলে চুপচাপ বসে থাকলেও, ইভা বেশ বিরক্ত হলো,আর হবেনা তার বিয়ে তাকে এনে এসব শোনাচ্ছে, ইভা ওদের থেকে সরে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

‘তোদের যা করার করিস! আমাকে এ বিষয়ে জরাস না। – বলে আর কারো কোন কথা না শুনে, রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ইভার সাথে দৃষ্টি ও ওর সাথে যায়,ইভা চলে যেতে ওভাবে সবাই কিছুক্ষণ, থম মেরে বসে থাকতে, আবারো শুরু হল তাদের আলোচনা, ওদের আলোচনা কেন্দ্র করে জুথি বললো,
‘আচ্ছা আমরা সবশেষ মাদবর চাচা নাটকটা করলে কেমন হবে? সবার দিকে উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে।
‘মন্দ হবে না বরঞ্চ ভালোই হবে। ‘ফারি’
‘আচ্ছা তাহলে আমি, জামাই তানিশা বউ, তুই মাদবর (ফাড়ির দিক তাকিয়ে) শর্মি শালী, সূচি ঘটক,মাইসা দর্শক।
জুথির কথায় সবাই একটু ভেবে সায় জানিয়ে দিল, ওদের নাচ গানের বিষয়ের প্লান শেষ হতে, গায়ে হলুদের সাজের জন্য পার্লার যাওয়া নিয়ে কথা শুরু হতে ফারি বললো,

‘আজ আমরা uk ডল সাজবো, সবাই ওকে?
ফারির কথায় জুথি কিছু বলবে, এমন সময় আরিশ জুথির রুমে এসে,সূচি কে কেন্দ্র করে বললো,
‘সূচি আমার সাথে আয়, কথা আছে! বলে একবার আড় চোখে জুথির দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে সূচি ও উঠে দাঁড়ায় আরিশের পিছু পিছু যাওয়ার জন্য। সুচি উঠতে জুথি ভ্রু কুঁচকে তাকালো ওর দিক, অতঃপর মনে মনে আওরালো, —‘বেত্তামুজ, চুন্নি,গোল চোখ, মাগুর মাছ,শিং মাছ একটা। উনি (আরিশ ভাই) ডাকলেই যেতে হবে? আর উনি (আরিশ ভাই) হঠাৎ ডাকল কেন? কি এমন বলবে যে আমাদের সামনে বলতে পারল না? ওর এসব ভাবার মধ্যে তানিশার ধাক্কায় হুশ ফিরে, ওর তল্লভ ফিরাই ওরা সাজ পাশাপাশি আরও কিছু নিয়ে কথা বলার ব্যস্ত। কিন্তু জুথির মন পড়ে আছে, ওরা আলাদা করে কি কথা বলছে জানার জন্য। সময় কেটে ৬.৭ মিনিট পার হতে জুথি আর বসে থাকতে পারলো না, ওরা এত সময় নিয়ে কি এমন বলছে জানতে উঠে দাঁড়াতে, ফারি জুথি কে দাঁড়াতে দেখে জিজ্ঞেস করতে, জুথি বললো,

‘তোরা কথা বল আমি একটু আসছি!
আরিশ কে গম্ভীর ভাবে বসে থাকতে দেখে সূচি বললো,
‘এতে কাজ হবে?
সূচির কথায় আরিশ ওর ঘুরে শ্বাস ছেড়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
‘আমি আমার মৌ কে জন্মানোর পর থেকে চিনি, দেখবি এক্ষুনি এখানে এলো বলে।
সূচি আরিশের কথা শুনলো, অতঃপর মুচকি হেসে বললো,
‘সত্যি ব্রো তোমার ভালোবাসা দেখে অবাক হই, কেউ কাউকে এতটা ভালবাসতে পারে? আমার তো মাঝে মাঝে হিংসা হয়, কেমনে বাসো ভাই?
তাছাড়া তোমাদের কাহিনীটা আমার ভালই লাগে, কজন পারে নিজের বউ বানাবে বলে জন্মানোর পর থেকে মানুষ করতে?

সূচির কথায় আরিশের মনে পরে আজ থেকে ১৭ বছর আগের কথা। দিনটা ছিল শুক্রবার, সময়টা ছিল রাত্র ৯.৩৪ মিনিট। যেদিন সবাই প্রে করছিল ছোট চাচুর যেন এবার ছেলে হয়। কিন্তু সবার দোয়া হয়তো সেদিন আল্লাহ তায়ালা কবুল করেননি, ছেলে না হয় হয়েছিল মেয়ে। যার দরুন বাড়ির কেউই তেমন খুশি হয়নি, সবার মন ভেঙ্গে যাওয়া’তে যে যার রুমে চলে গিয়েছিলেন সেই দিন। কিন্তু সেদিন কেউ খুশি না হলেও আরিশ খুশি হয়েছিল, সেই ১০ বছরের আরিশ মায়ের হাত ধরে হসপিটাল এসেছিল জুথি কে দেখবে বলে। জুথির জন্মের পর সর্বপ্রথম সে নার্সের পর আরিশের কোলে উঠেছিল, সেদিন সেই নবজাতক জুথি আরিশের কোলে উঠে চোখগুলো টালুমালু করে তাকিয়ে আউ আউ করে হাসছিল, যেটা দেখে আরিশ কিছুক্ষণ থম দিয়ে জুথির দিকে তাকিয়ে আনমনেই মাকে উদ্দেশ্য করে একটু জোরেই বলেছিল,

—‘আম্মু ও হওয়াতে বাড়ির কেউই তো তেমন খুশি হয়নি, তোমরা কেউ চিন্তা করো না, ওকে তোমাদের কাউকে দেখতে হবে না। আজ থেকে ওর সব দায় দায়িত্ব আমার! কারণ ও বড় হলে আমি ওকে বিয়ে করবো, তাহলে আর তোমাদের ওকে বোঝা মনে হবে না। এই কথাটুকু বলে বাচ্চা মেয়েটার কপালে গভীর চুম্বন করেছিল আরিশ।
“আরিশ কথাটা তো,সেদিন ঠিকই বলেছিল, যাতে অবাক হয়ে চেয়েছিল সানজিদা খান, ইউনুস খান। এতোটুকু ছেলের মুখে এমন কথা, ওনারা মোটেও আশা করেননি, সেদিনের পর দিন কাটে, মোমেনা খান কে হসপিটাল থেকে বাড়ি নিয়ে আসার পর,আরিশ খেয়ে না খেয়ে সারাদিন ওই জুথি কে নিয়েই পড়ে থাকতো।

জুথির ডায়াপার চেঞ্জ করা, সময়ে ফিডার খাওয়ানো। ঘুম পাড়ানো, ঘুমিয়ে গেলে বিছানা থেকে তুলে বুকের উপর নিয়ে স’যত্নে মাথায় হাত ভোলানো। এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে গেছে ২ টা বছর। তখন জুথি কে দেখতে বেশ গোলুমোলু, ও সুন্দর লাগতো। জুথির প্রতি আরিশ কে এতটা অ্যাডিকটেড হাতে দেখে সবাই অবাক হত। তবে কেউ তেমন গায়ে মাখত না। সবার ধারণা বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু হলো তার উল্টোটা, যখন জুথির ৪ বছর সম্পূর্ণ হয় তখন যেন ওকে দেখতে পরির থেকে কোন অংশে কম লাগতো না। যেই দেখ তো গাল ধরে নয়তো নাক ধরে, টেনে দিত। যেটা আরিশের মোটেও পছন্দের তালিকায় ছিল না।

কারণ যেটা তার একান্তই তার, যেটা সে অন্য কারো সামান্য ছোঁয়া টুকু পছন্দ করে না। পাশাপাশি, জুথির চঞ্চলতা ও টোল পড়া হাসি দেখে, রাদিফ ও ওকে নোটিস করতো। একটা সময় তারও কিভাবে কিভাবে যেন জুথির প্রতি ভাল লাগার সৃষ্টি হয়। আর সেই রেস ধরেই কাটতে থাকে দিন। এভাবে এক মেয়েকে নিয়ে দ্বন্দ সৃষ্টি হয় দুই ভাইয়ের মধ্যে। আরিশ কোনভাবেই তার মৌ কে ছাড়বেনা,আর রাদিফ ও বড়দের নিষেধ করার পর জুথির থেকে দূরত্ব বাড়াবে না। তাই আরিশ জুথির ১০ বছর হতে না হতে,জেদ ধরে বিয়ে করে নিয়েছিল, তার মৌকে। কিন্তু তাতেও রাদিফ দূরত্ব বজায় করেনি। যতটা পেরেছে ওর সাথে চিপকে থাকার চেষ্টা করেছে। যেটা সে একদমই মানতে পারেনি, তাইতো আজ ৭ সাত টা বছর কেটে গেল তার মৌয়ের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে। ওর ভাবনার ছেদ ঘটে জুথির মিষ্টি কন্ঠে সূচি ঢাকায়।

‘সূচি?
জুথির কন্ঠ পেয়ে,আরিশ তাকালো দরজার দিক, অবশেষে তার প্রশান্তি মিলল, এই এক মুখ যা তার সারাদিন দেখলেও বিরক্ত অনুভব হয় না বরঞ্চ তার ক্ষণে ক্ষণে প্রশান্তি মিলে। জুথি কে রুমে আসতে দেখে সূচি আরিশের দিক তাকাতে আরিশ চোখ দিয়ে ইশারা করল তাদের প্লান মত কাজ করতে,সূচি ও আরিশ কে আশ্বাস দিয়ে ঘুরে জুথির দিক তাকাতে জুথি ইনিয়ে বিনিয়ে বললো,
‘তোমার না আমাদের সাথে পার্লারে যাওয়ার কথা ছিল? আমরা তো যাচ্ছি তুমি যাবে না?
তৎক্ষণে সূচির থেকে জবাব এলো,

‘না,
‘কেন? ভ্রু কুঁচকে।
‘কারন আজ আমি স্পেশাল সাজবো! মুচকি হেসে।
‘স্পেশাল?
‘হুম,আরিশ ভাই তো বললো, সে নাকি আজকে একজনকে স্পেশাল সাজাবে, আর সেই স্পেশাল হিসেবে আমাকেই বেছে নিয়েছে। মুখ টিপে হেসে।
‘তোমাকে বেছে নিয়েছে মানে? ঈশ্ব রাগ দেখিয়ে।
আরিশ কাজ হয়ে গেছে দেখে, বাঁকা হেসে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

Violent love part 31 (2)

‘হ্যাঁ স্পেশাল সাজাবো!
জুথি আরিশের কথায় ঘুরে ওর দিক তাকিয়ে কোমরে হাত দিয়ে, দাঁত কিড়মিড় করে বললো,
‘আপনার যদি কাউকে স্পেশাল সাজাতেই হয়, তাহলে আপনি আমাকে সাজাবেন, অন্য কাউকে কেন সাজাবেন?

Violent love part 33