Violent love part 36

Violent love part 36
Mariam akter juthi

“চারিদিকে সূর্যের কিরণ ছড়িয়ে, রোদ্রের মধু আলো এসে রুমে মাখোমাখো হয়ে ছড়িয়ে গেছে। এখনো পাতলা কম্বল মুড়িয়ে, শুয়ে জুথি। প্রায় সকাল ৮.২২ এর ঘরে এখনো ওঠার নাম নেই, সে যে ঘুমিয়ে আছে এমন টাও নয়, সে জেগে জেগে শুয়ে আছে,সেই ২২ মিনিট ধরে। গতকাল ওদের ওখান থেকে ফিরতে প্রায় বারোটা বেজে গিয়েছিল। সেই এসে ক্লান্ত শরীর নিয়ে, জুথি আরিশের রুমে আজ আর না এসে, নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়েছিল। কারণ এই লোকটার কাছে শুলে, তাকে জড়িয়ে ধরতে হবে, তার কোলবালিশ হতে হবে। তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে হবে, তাকে চুমু খেতে হবে। যা ওর এই শরীরে এখন একটু সম্ভব না। তাই সরল মনে নিজের রুমে ঘুমাবে ভেবে লাইট নিভিয়ে দিতে, আরিশ তাৎক্ষণে ওর রুমে এসে, জুথি কে কিছু বুঝতে না দিয়েই,দফ করে ওকে নিয়ে শুয়ে পড়তে জুথি ছাড়া পেতে চেয়ে বললো,

‘আমি অনেক ক্লান্ত, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে! দয়া করে আজ এভাবে ঝাপটে ধরবেন না। — কে শুনে কার কথা? আরিশ নিজের আইড মতো করে ওকে প্রতিদিনের ন্যায় জড়িয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
‘মৌ ঘুমাবো আমি, একদম ডিস্টার্ব করবি না।
‘এভাবে কষ্ট হচ্ছে তো!
‘অভ্যাস করে নে, হাজার কষ্টের মাঝেও তোকে আমাতেই মত্ত থাকতে হবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

জুথি আর কথা বাড়ালো না, কারণ এই লোককে কিছু বলে কাজে আসবে না। তাই নাক দিয়ে শ্বাস নিতে না পেরে, হা করে শ্বাস নিতে লাগলো। একসময় ওভাবে প্রিয় পুরুষের সন্নিধ্যে পেয়ে, তার হাত জড়িয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমায়। সকাল হতে, মুখ জুড়ে চুমু, ঘাড়ে কামরের মধু ব্যথা অনুভব করতে আস্তে আস্তে চোখ খুলতে দেখে আরিশ তার দিকে কেমন নেশাময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরিশ কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে, জুথি আরিশের বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে আর একটু চেপে যেতে আরিশ ওকে, ওর থেকে সরিয়ে, বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বললো,

‘ঢং করিস না ওঠ, আমি ফ্রেশ হব।
জুথি হাত দুটো আরিশের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে আহ্লাদী কন্ঠে বললো,
‘নিয়ে যান।
‘পারবো না।
‘ঠিক আছে নিতে হবে না। — বলে জেদ ধরে ওপাশ কাত হয়ে শুয়ে পড়তে আরিশ বিরক্ত হয়ে বললো,
‘মৌ আমাকে বের হতে হবে, এখন মেজাজ গরম করাবি না।
‘,,,,,,,,,,,,,,,।

জুথি কে চুপচাপ অন্যপাশ ফিরে থাকতে দেখে, আরিশ রাগি নিশ্বাস ফেলে, দাঁতে দাঁত চেপে বললো, — ‘অবাধ্য নারী, সব সময় ন্যাকামি করবে। বলে দফ দফ পা ফেলে নিজের রুমের দিক চলে যায়। আরিশ চলে যেতে, ওর উপস্থিতি টের না পেয়ে, জুথি অভিমানের পাল্লাটা ভারী করে ওভাবেই কম্বলটা শরীরের সাথে শক্ত করে পেঁচিয়ে শুয়ে রইলো, জেদের রেশ ধরে ২২ মিনিট পার হতে, তখনো জুথি একইভাবে শুয়ে, জুথি মুখ ফুলিয়ে থাকার এক সময় অনুভব করে, ওর কানের কাছে কেউ ঝুঁকে, ওর এটুকু অনুভব করার মধ্য আরিশ ওর শরীর থেকে হুট করে কম্বলটা সরিয়ে, ওকে এক টানে কোলে তুলে ওয়াশরুমের দিক যেতে জুথি বললো,
‘নামান, যাব না আমি আপনার সাথে।

আরিশ ও,ওর মত করে ওকে নিয়ে ওয়াশরুমের আয়নার সামনে বসিয়ে ব্রাশে পেস্ট লাগাতে লাগাতে বললো,
‘দাঁত বের কর!
‘শয়তান বেডা লাগবে না আপনার আদিখ্যেতা,অ,,, ততক্ষণে আরিশ শক্ত হাতে জুথির গাল চেপে ফোঁস ফোঁস করে বললো,
‘ওই তোর নাটক দেখতে, আসছি আমি? বিগত দিন ধরে দেখছি, সাহস বেড়ে গেছে তাইনা? কিছু বলছি না, তাই বলে যে বলবো না, এটা ভাবিস না। নেক্সট আমার সামনে ফটর ফটর করে কথা বলার সাহস দেখালে মুখ থাপরে লাল করে দিব।

আরিশ কে রেগে যেতে দেখে, জুথি মাথাটা নিচু করতে আরিশ আবারো মুখটা জাগিয়ে বললো,
‘থাপ্পর খেতে না চাইলে দাঁত বের কর! – আরিশ কথাটা বলতে দেরি, জুথির -ই করতে দেরি হলো না। জুথি দাঁত বের করে দিতে আরিশ ওর দাঁতগুলো নিজ হাতে মেজে দিয়ে, একই ব্রাশ দিয়ে ওর দাঁত মেজে আবারো জুথিকে মেজে দিল। এভাবে দুজনার পরপর ব্রাশ করা হয়ে গেলে,জুথি আয়নার সামনে মুখটা তুলে বলে উঠলো,
‘আরিশ ভাই আপনার বডি তো অনেক সুন্দর একটা চুমু খাই?
‘আবার জিগায়।

দুজনে দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটি শেষ করে একসাথে বেরিয়ে আসে। জুথি তোয়ালে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে যেতে দেখে আরিশ মুখের ভঙ্গিমা কেমন করে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে, কোন বিষয় নিয়ে ভীষণ রেগে আছে, সেটা সে ওয়াশরুমে থাকতেই আঁচ করেছিল, কিছুক্ষণ আগে তো ঠিকই ছিল, রুমে গেলো,ওখান থেকে ফেরত আসার পর হঠাৎ এমন লাগছে কেন কে জানে? জুথি আড় চোখে আরিশ কে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বললো,
‘মনে আছে সেদিন কি বলেছিলাম?
আরিশ সাদা রংয়ের কাজ করা পাঞ্জাবিটা গায়ে জড়াতে জড়াতে বললো,
‘কি?

‘আজ সন্ধ্যার পর চিলেকোঠার ঘরে চলে আসবেন, সারপ্রাইজ আছে।
তৎক্ষণে আরিশ ফুল রেডি হয়ে আয়নার সামনে চুল গুলো ঠিক করে, জুথির দিকে ঘুরে চোখ দুটো বন্ধ করে নিঃশ্বাস ফেলে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বললো,
‘আমি বেরোবো। ফিরতে লেট হবে, কখন ফিরবো জানিনা। তবে আনুমানিক রাত ৮.৯ বাজবে। শোন ইভুর মেহেদী অনুষ্ঠান,রনি ভাইয়ের বাড়ির লোকের আসবে। খবরদার সেখানে তুই ভুলেও যাবি না, কোন ছেলের সাথে কথা বলবি না। রাদিফ ওর ধারে কাছে ঘিসবি না, যা বললাম এর ব্যতীত আমার নজর কিংবা কানে আসলে তোর জন্য ভালো হবে না।

জুথি আরিশের কথার মুহূর্তেই মন খারাপ করে মাথাটা নিচু করে, উপর নিচ করল। যার মানে সে তার কথার অবাধ্য হবে না। আরিশ জুথির মাথা নাড়ানো দেখে কিছু বলল না, কারণ এই মেয়ে তার অবাধ্য নারী, এখন বলছে করবে না, একটু পর সে,সেটাই করবে। – ভেবে জুথির অগোছালো সামনে আসা চুলগুলো আলতো হাতে পিছনে সরিয়ে বললো,
‘মনে থাকে যেন! কথার নড়চড় যেন না হয়। করা কন্ঠে কথাটা বলে জুথির কপালে চুমু খেয়ে, নাকে গালে-কানে পরপর চুমু খেয়ে, ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘আমি গেলাম। — বলে দরজা পর্যন্ত আসতে, আরিশ ঘুরে আর একবার জুথির দিকে তাকাতে ওর চুপসে যাওয়া ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে, নিঃশ্বাস ফেলে আবারো ফিরে এসে জুথির ঠোঁটে চুমু খেয়ে, আর কিছু না বলে রাফ পায়ে হেঁটে বেরিয়ে আসে। আরিশ চলে যেতে জুথিও নিশ্বাস ফেলে মন মরা হয়ে চুলগুলো আঁচড়ে বেনুনি করে নিল। মন খারাপ করে কি লাভ? এই লোক বাসায় থাকে কতক্ষণ? সেই দেশে ফেরার পর থেকে রাজনীতি নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকে, সেখানে বাসায় বড়জোর সময় দেয় তিন থেকে চার ঘন্টা। এমন এমন দিন আছে সকাল সাতটায় চলে যায় রাত্র দশটা কিংবা ১১ টায় বাড়ি ফিরে। জুথির এ নিয়ে এখন আর মন খারাপ হয় না। লোকটা তাকে যতোটুকু সময় দেয় এতেই হল। জুথি মন খারাপ করে না তো বলল, আদৌ কি এটা সত্যি? না একদমই না, নারী তার ভালোবাসার মানুষটার কাছে থাকার জন্য তার একটু সন্নিধ্যে পাওয়ার জন্য তাকে আঁকড়ে থাকার জন্য,সব রকম বাহানা খোঁজে। সেখানে জুথি সে তো তার আরিশ ভাই কে ভীষণ ভালোবাসে।

“খান বাড়িতে এতো মানুষের সকালের নাস্তা রেডি করে কর্তীরা বেশ ক্লান্ত। যদিও উনারা রান্না করেনি, লোক দিয়ে করানো তবুও নিজেদের একটা ঘুচ ঘাচের, ব্যাপার তো আছে। উনারা মেয়ে,মহিলাদের জন্য খাবার গুলো ভিতরে আনিয়ে পুরুষদের বাহিরে ডেকোরেট করা খাবার জায়গায় যেতে বললেন, খাবার, টেবিলে বেড়ে সবাইকে ডাকতে সেখানে ফারি, সূচি তানিশা বাদে সবাই এসে পড়ল। সূচি ফারির না আসার কারণ তানিশা, সে সেই সকাল থেকে পেটে ব্যথায় কাতরাচ্ছে। সাথে কোমর ব্যথা তো আছেই। এটা তার প্রতি মাসে নির্ধারিত ব্যথা। তবে এবার যেন তারিখ রেখে আগ বাড়িয়ে হয়ে গেছে। তাই এসব কিছুর প্রিপারেশন নিয়ে, সে এই বাড়িতে আসেনি। এখন জুথির কাছেও যেতে পারছে না, আরিশ ভাইয়া ওর কাছে বলে। তাই আপাতত ফারির থেকে সামলে নিয়েছে। সবকিছু ম্যানেজ হলেও, ধীরে ধীরে পেটে ব্যথা কোমর যন্ত্রণা করছে।আর ওকে এভাবে ফেলে ওরা দুজও যেতে পারছে না। তাই একসাথে বসে ফাঁকফুক গল্প করছে, আর তানিশা শুয়ে শুয়ে তা শুনছে, হঠাৎ ওদের গল্প করার মধ্য আয়ান ফারির রুমে এসে তানিশাকে গুজো হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো,

‘কি হয়েছে তোমার? চোখ মুখ এমন লাগছে কেন?
আয়ান কে এ রুমে আসতে দেখে,ফারি সূচি আসতে করে উঠে সেখান থেকে বিনা বাক্য খাবার খেতে টেবিলে চলে যায়।ওরা চলে যেতে আয়ান দরজা টা চাপিয়ে তানিশার কাছে এসে ওর মাথায় হাত রেখে স্লো বয়েজে বললো,
‘কি হয়েছে, শরীর অসুস্থ লাগছে?
তানিশা সে, আয়ানের গলা পেয়ে সেই তখন থেকে মুখটা ওরনায় মধ্যে লুকিয়ে নিশ্চুপ হয়ে আছে। আয়ান যে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করছে সেদিক তার কোন খেয়াল নেই, তানিশা কে এভাবে নিজেকে আড়াল করতে দেখে আয়ান ওর মুখের উপর থেকে ওড়নাটা সরিয়ে বললো,

‘কিছু জিজ্ঞেস করছি তো?
‘,,,,,,,,,,।
‘আরে বাবা এ ভাবে চুপ করে, আছো কেন? কি হয়েছে বল আমাকে!
‘সমস্যা আপনি,
‘মানে?
‘কিছু না, আপনি যান।
‘বলবে নয়তো, চু,,,
‘এটা আপনাকে বলা যাবে না।
‘স্বামীকে সব কিছু বলা যায়!
‘কিন্তু আপনি তো স্বামী নন?
‘দুদিন পর, ইসরাত জাহান তানিশা নামের মেয়েটি আমার বউ হবে। এখন সে বলছে আমি তার স্বামী না।
‘দেখুন,,,,।
‘ঠিক আছে,তোমার শরীরের পোশাক সবগুলো খুলো আজ আমি মন ভরে দেখবো, তোমার এত দেখানোর শখ!
‘ছিঃ নির্লজ্জ পুরুষ।

‘আরে দুদিন পরে বিয়ে করব, তার চারদিন পরে বাবা হব! নির্লজ্জ না হলে কি আর সন্তানের মুখ দেখতে পারব?
‘বেহায়া পুরুষ, আপনি কি এই রুম থেকে যাবেন?
‘জি না মহারানী। — আয়ান কথাটা শেষ করতে না করতে ওর ফোন আসে, ফোনটা হাতে নিতে দেখে জরুরি কল। তাই দ্রুত ফোনটা রিসিভ করতে ওপাশ থেকে বললো,
‘আয়ান, আপনি একটু জলদি ক্লাবে আসুন। এখানে আপনার ভাইকে সামলানো যাচ্ছে না, ইতিমধ্যে উনি ৭ জনকে মেরে দিয়েছেন।

‘কি বলছেন? আরিশ ভাই,, এতটুকু বলে আয়ান ফোনটা কেটে তানিশাকে বাই বলে, দ্রুত পায়ে হেঁটে কাউকে কিছু না বলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।
“আয়ান, লোকেশন অনুযায়ী ক্লাবে পৌঁছে যেতে, গিয়ে দেখে আরিশ তখনো সবার উপর চিৎকার চেঁচামেচি করছে। আরিশ কে এভাবে রাগে বোধশূন্য হতে দেখে আয়ান ওর কাছে গিয়ে ওকে ঢেলে একপাশে এনে ওকে শান্ত করার জন্য বললো,
‘আরিশ ভাই, এত রেগে আছো কেন? প্লিজ মাথাটা ঠান্ডা করো।
‘ওদের সাহস হয় কি করে? গরিবকে দেওয়া টাকা মেরে দেওয়ার? তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করার, জোরপূর্বক তাদের ঘর থেকে মেয়েদের তুলে আনার?
‘তাই বলে তুমি ৭ জন কে মারবে?

‘ওরা আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা টানছে, সেখানে আমি ওদের বাঁচিয়ে রাখবো? আর ওই আমান ওকে বলেছিলাম আমার সাথে টক্কর না দিতে, ওকে, ওকে তো আমি.. চিৎকার করে।
‘শোনো ভাই মাথা গরম করো না, আমি আছি তো! তোমার সাথে, কি হয়েছে জেনে সবটার সামলে নিচ্ছি।
আরিশ আয়ানের কথায় শান্ত হলেও রাগটাকে কে যেন ঠান্ডা করতে পারল না। ঘন ঘন শ্বাস টেনে রক্ত আভা চোখ নিয়ে লোকগুলোর দিক তখনো তাকিয়ে। আয়ান লোকগুলোর সাথে কথা বলে, যতটুকু বোঝার বুঝে, লাশগুলোকে সরিয়ে ফেলে উনাদের চলে যেতে বলে আরিশের কাছে এসে বললো,
‘ভাইয়া, মাথা ঠান্ডা করো আমরা নিজেরাই যাব ওখানে, উনাদের কি কি সমস্যা সমাধান করব।

“খান মহল জুড়ে, আনন্দের হইচই। বিকাল হতে, সেটা যেন একটু বেশিই মনে হচ্ছে। রাত্র হলে, মেয়ের হাতে মেহেদি দেওয়া হবে। তাই ছোট বড় যারা আছে এখন তারা মেহেদী দিয়ে রাখছে। আর নয়তো রাতে সময় হবে না, পরশু বিয়ে। সবার মুখে এক কথা, যার হাতের মেহেদী বেশি গাঢ় হবে তার জামাই ভবিষ্যতে তাকে তত বেশি ভালবাসবে। যদিও এসব আজগুবে কথা। তবুও লোকচারে যেন রীতিটা সরছে না। সবাই একে একে মেহেদী পূর্ণ করতে, লুসিয়ান ওদের কাছে এসে সবার হাতে মেহেদী দেখতে দেখতে বললো,
‘এখণে দজনর হতে সবচয়ে মেহেদী সন্দর হব, এক অমর বউ দুই ভাইয়ের বউ।
লুসিয়ান এর এমন, বিখ্যাত বাংলায় জুথি লুসিয়ানের দিক তাকিয়ে বললো,
‘আপনি তো বিয়ে করেননি, তাহলে আপনার বউ এলো কোথা থেকে?
‘কনো ওই ত অমার বউ! ফারির দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে। — লুসিয়ানের দেখানো অনুযায়ী জুথি সেদিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,

‘শুধু বলেছিলাম, ফারির বিদেশি ছেলে পছন্দ আর আপনি ওকেই বেছে নিলেন?
‘দি ওয়ান হু ইজ মেন্ট ফর ইউ উইল কাম টু ইউ ন্যাচারালি।
~অর্থ:ভাগ্যে যে থাকে সে তো আপনা আপনি হবে।
‘হুম এটা ঠিক।
“সময়টা প্রায় সন্ধ্যা, কিছুক্ষণ বাদে ওনারা মেহেদী ঢালা নিয়ে চলে আসবেন। উনাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থায়, ট্রে জুরে খাবার তৈরি করছেন সানজিদা খান, পাশাপাশি ওনার বাকি জায়েরা। এদিকে ওনারা, এসবের ব্যস্ত থাকলেও জুথি ফারি, তানিশা সূচি মিলে চিলেকোঠার ঘরটা মন মত সাজাচ্ছে। আজ জুথি এক বিশ্বযুদ্ধ করবে বলে কথা,আরিশ কে তার মনের কথা জানাবে। তাদের সুন্দর একটা সংসার হবে, তাদের ভালোবাসা হবে। এটা কি কম বড় কথা? না একদমই না, ওদের রুম সাজাতে সাজাতে প্রায় এক ঘন্টার বেশি সময় লেগেছে। পুরো রুম সাজিয়ে, ওরা তিনজন ক্লান্ত হয়ে বিছানায় ধপ করে বসে ফারি বললো,

‘আমরা রুম সাজাতে তো, হেল্প করলাম। এবার তুই কোন গন্ডগোল করিস না। আর সব কিছু ভালোভাবে হয়ে গেলে আমাদের একটা ট্রিট দিস।
‘ইশ কত ভালোবাসা! তানিশা খুঁচিয়ে।
তানিশা কে খুঁচিয়ে কথা বলতে দেখে জুথি বললো,
‘দাঁড়া আয়ান ভাইকে বললো, তোর ও স্বামীর ভালোবাসায় চাই।
‘এই একদম না,তোর ওই খবিশ ভাইয়ের ভালোবাসা আমার চাই না।
‘হ,দেখা যাবে। ভেংচি কেটে।
ওরা জুথির হাতে হাতে সবকিছু সাহায্য করে যে যার মত নিচে চলে গেছে, জুথিও সব গোছগাছ করে, নিচে আসতে রাদিফের ডাকে পিছন ঘুরে তাকায়,

‘জুথি তোমাকে কিছু বলার ছিল।
‘হ্যাঁ বল!
‘অনেকবার সুযোগ করে তোমার সাথে কথা বলার ট্রাই করেছি কিন্তু পারিনি, তুমি কি আমার কথা শুনবে? করুন কন্ঠে।
জুথি রাদিফের চোখের দিক তাকিয়ে, ওর অসহায়তা দেখে বললো,
‘হ্যাঁ শুনছি বলো।
রাদিফ জুথির হ্যাঁ সূচক কথায় ওর কাছে এসে ওর হাতটা মুঠোর মধ্যে নিয়ে বললো,

‘আমি পারছি না, জুথি আমি পারছি না। এভাবে আর পারছি না।
জুথি রাদিফের এমন কাজে, হাতটা ওর থেকে ছাড়িয়ে একটু পিছিয়ে গিয়ে বললো,
‘দেখো, তুমি কি বলতে চাও সেটা বল।
‘জুথি তুমি কি কিছু বুঝতে পারো না?
‘দেখো রাদিফ ভাই, আমি কিছু বুঝলেও, সেটা সম্ভব না, আর না বুঝলেও সম্ভব না।
‘কেন এভাবে বলছো?
‘কারণটা তোমার জানা।
‘কিন্তু সেটা তো,তুমি মানো না তাই না?
‘দেখো আমি সবটা মানি,,

‘তুমি মিথ্যা বলছো, তুমিতো আরিশ কে ভয় পাও ঘৃণা কর?
‘দেখো ভয় পাই,মানে এই নয় সম্পর্কটা আমি মানি না।
‘আমি তো তোমাকে ভালোবাসি জুথি।
জুথি রাদিফের এতুর কথায় ওকে এড়িয়ে চলে যেতে নিলে, রাদিফ ওর হাতটা চেপে ধরে বললো,
‘আমার কথা কিন্তু শেষ হয়নি। একটু গম্ভীর কণ্ঠে।
‘আমার হাতটা ছেড়ে কথা বলো।
‘ছাড়বো না।
‘তু,,

‘তুমি একবার বলো আমাকে ভালোবাসো, আমি আমার আম্মু আব্বুকে বোঝাবো, তুমি আরিশ কে নয় আমাকে ভালোবাসো, আমার সাথে থাকতে চাও।
‘কেন? তোমার আম্মু আব্বুকে না বুঝিয়ে আমার সাথে থাকতে পারবেন না? তাদের অনুমতি কেন লাগবে?
‘জুথি তারা আমার মা-বাবা।
‘এগজ্যাক্টলি এটাই, আপনাদের মধ্যে পার্থক্য। আপনি আপনার মা বাবার কথা ছাড়া আমার সাথে থাকতে পারবেন না, কারণ আপনি তাদের বাধ্য সন্তান। কিন্তু উনি নয়, কারণ উনি আমার জন্য সবকিছু ছাড়তে পারেন, মারতেও পারেন, মরতেও পারেন। আর সবচেয়ে বড় কথা আমি ওনাকে ভালোবাসি। — বলে রাদিফের কোন কথা না শুনে, নিচে আর না গিয়ে, চিলেকোঠার ঘরে চলে আসতে, রাদিফ ও জেদ দেখিয়ে জুথির পিছন পিছন চিলেকোঠার ঘরে এসে ওকে ঘুরিয়ে ওর দুই বাহু চেপে হালকা চেঁচিয়ে বললো,

‘সব সময় সম্মানটা সবার আগে আমি তোমায় দিতাম, এখন কেন এমন করছো?
‘আরে, রাদিফ ভাই, ছাড়ো আমাকে।
‘না, আজ তোমার উত্তর হ্যাঁ হবে তবেই আমি তোমাকে ছাড়বো।
‘আমি তোমাকে ভালবাসি না, কয়বার বলব এই কথাটা? তাছাড়া উনি চলে আসবেন এক্ষুনি, তোমাকে আমার সাথে এভাবে দেখলে তোমাকেও মারবে সাথে আমাকে তো মেরেই ফেলবেন।
‘তুমি তো এমন ছিলে না?
রাদিফ বারবার ঘুরেফিরে কথা প্যাচাচ্ছে দেখে, জুথি ঢোক গিলে দরজার দিক তাকালো। অতঃপর রাদিফের ধরে রাখা হাত দুটো, বাহু থেকে ছাড়িয়ে শ্বাস নিতে নিতে বললো,
‘রাদিফ ভাই, দয়া করে তুমি যাও। তোমার মাথা ঠিক নেই।
‘হ্যাঁ হ্যাঁ আমার মাথা ঠিক নেই। বলে জুথি কে টেনে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরতে ধরতে বললো,
‘তোমাকে চাই! অনেকটা চাই।

Violent love part 35

হঠাৎ করে কি হয়েছে জুথি স্মরণে আনতে পারল না, যখন মনে হল রাদিফ ওকে জোর করে জড়িয়ে ধরেছে, তার আগেই আরিশের হুংকারে জুথির ছোট্ট শরীরটা কেঁপে উঠলো । শ্বাস-প্রশ্বাস ভারী হতে শুরু করে। হঠাৎ আরিশের আগমনে রাদিফ জুথি কে ছেড়ে দিতে, সেদিকে তাকিয়ে জুথি রাদিফ দেখে,আরিশ রক্ত আভা চোখ করে হাত দুটো মুঠিবদ্ধ করে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ওদের দিক তাকিয়ে আছে। তখনকার নিভে যাওয়া রাগটা যেন ওদের এমন দৃশ্যে দাউ দাউ করে ওর মস্তিষ্কে জ্বলে উঠলো। আরিশের এরাকোম চেহারা দেখে জুথি নিচের দিকে তাকিয়ে বারকয়েক ঢোক গিললো। ততক্ষণে আরিশ মুঠিবদ্ধ হাত দুটো খুলে তাই দিতে দিতে রুমের ভিতর জুথির দিকে আসতে আসতে বললো,
‘বাহ, এটাই ছিল চিলেকোঠার ঘরে তোর সারপ্রাইজ? দুজনার এমন রোমাঞ্চকর দৃশ্য দেখানোর?

Violent love part 37