Violent love part 41
Mariam akter juthi
“থমথমে পরিস্থিতি, কারো মুখে কোন কথা নেই। আছে শুধু সবার মুখে আতঙ্কের ছাপ। কিছুক্ষণ আগ মুহূর্ত পর্যন্ত “ডারপিলিং ইকো হসপিটাল” স্বাভাবিক অবস্থায় মানুষ চলাফেরা করছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে হসপিটালের মানুষ মনে হয় দোতলা ডঃ আহিলের রুমের চারপাশ জুড়ে গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে। কারণ আরিশ তখন বাসা থেকে এমন ভাবে বেরিয়ে আসছিল, খান মহলের মানুষ আরিশের মূর্তিমা বুঝতে না পারলেও আয়ান ঠিকই ধরতে পেরেছিল। আরিশ নিশ্চিত কাউকে না কাউকে মারতে যাচ্ছে, তাই আরিশের পিছন এসে ওকে থামাতে না পেরে বাইক নিয়ে ওর পিছু যায় তবে আরিশ এতটাই ফুল স্পিডে বাইক রাইড করে আসছিল যার দরুন আয়ান অনেকটা পিছিয়ে যায়। আরিশ হসপিটালের সামনে বাইক পার্ক করে,কারো দিকে না তাকিয়ে সোজা ডঃ আহিলের কেবিনে এসে উনাকে কিছু বুঝতে না দিয়েই ওনার কলার চেপে চেঁচিয়ে বললো,
‘আমার *বালের ডাক্তার! তুই *বালের ডক্টরী করে আসছো? যে 24 ঘন্টা পরেও আমার বউ চোখ খুলছে না? আজ আমি তোর *বালের ডক্টরি বের করছি। তোকেও আজ বউয়ের মত অবস্থা করব, কারণ জানিস তো? আরিশ খানের বউ নেই তো কেউ নেই। — আরিশ কথাটা শেষ করতে না করতেই ডঃ আহিলের নাকে মুখে একের পর এক পাঞ্চ মারতে, আহিলের নাক ফেটে ঝরঝর করে রক্তের সাথে ঠোঁট ফেটে রক্ত ঝরতে শুরু করল। এক সময় আহিল মার খেতে খেতে হা করে মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে আয়ান দৌড়ে এসে আরিশকে টেনে ওনার থেকে সরিয়ে ,চোখ গরম করে ওখানে থাকা সবার উদ্দেশ্য চেঁচিয়ে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘আপনারা এখানে তামাশা দেখছেন? দেখছেন একটা মানুষ রক্তাক্ত হচ্ছে, না থামিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছেন?
আয়ানের এমন কথায় একজন হালকা সাহস করে বলেই ফেলল,
‘আপনার ভাই যে উন্মাদ, উনাকে থামাতে গিয়ে কিনা আমাদের জীবনটা খোয়াতে হয়। –ওনাদের এমন কথায় আয়ান নিশ্বাস ত্যাগ করে, কারণ ওরা মিথ্যা বলেনি, এরা কেউ ওকে থামাতে এলে সে সময় উনাদের ও ডঃ আহিল এর মত অবস্থা হতো। তাই আবারও নিশ্বাস ফেলে ঘুরে, আরিশের দিকে ঘুরে ওকে থামানোর জন্য কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরিশ আশেপাশে তাকিয়ে আহিলের বসার টেবিলের উপর পানি ভর্তি চার্চের একটা বোতল দেখে সেটা হাতে নিয়ে তেড়ে এসে, আহিলের মাথায় বাড়ি মারতে উনি সাথে সাথে চিৎকার করে ওঠেন, উনার মাথার এক সাইড ফেটে গিয়ে মুষলধারা রক্তের ঝরনা বইতে লাগলো। ডঃ আহিল আর সজ্ঞানে থাকতে পারলো না, ঝিমিয়ে আস্তে করে মেঝেতে লুটিয়ে পড়তে, আয়ান কোনরকম আরিশ কে টেনে উনার থেকে একপাশ আনতে আরিশ আহিলের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘এটাও আমার বউয়ের মত অজ্ঞান হয়ে গেল, এটাকেও মারার আগে হারবাল খাওয়ানো উচিত ছিল। আয়ান আরিশের এমন কথায় ওকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বলল,
‘ভাই আমার শান্ত হও,কি হয়েছে তোমার? এভাবে ওনাকে শুধু শুধু মারছো কেন তুমি?
‘মারব না? এই বালের ডক্টর বলে ২৪ ঘন্টায় নাকি আমার বউয়ের জ্ঞান ফিরবে, সেখানে এখন ২৬ ঘণ্টা পার হয়ে ২৭ ঘন্টা শেষ হতে চলছে। আমার বউ এখনো চোখ খুলছে না। তাহলে বল? এই ডক্টর *বালের ডক্টরি করল? সেখানে একে আমি ছেড়ে দিব? ওকে তো আমি আজ জানে শেষ করবো, যাতে এই *বালের ডক্টর কারো সাথে যেন আর *বালের ডাক্তারি করতে না পারে।
“খান মহলের সবাই বসে সন্ধ্যায় টুকটাক কথা বার্তা বলছিলেন। তখন আরিশ বেরিয়ে যেতে ওনারা তেমন দেখেও বিষয়টা দেখেননি, তারপর মুহুর্তে হসপিটাল থেকে কল পেয়ে ওনারা তোড়জোড় করে চার ভাই একসাথে ছুটে হসপিটালে আসেন। তাড়াহুড়ায় চার ভাই হসপিটাল এসে, এমন ঘটনা দৃশ্য দেখে উনারা বাকরুদ্ধ হয়ে শুধু ড্যাব ড্যাব করে আরিশের দিক তাকিয়ে ছিল। এই ছেলেকে ওনারা দুপুরে, খান বংশের বড় ছেলে হিসেবে উপাধি দিল। তার প্রতি কৃতজ্ঞ ছিল, তার প্রতিটা কাজে। কিন্তু রাত পোহাতে না পোহাতে তার বেপরোয়া স্বভাব আবারো জাগ্রত হবে কে জানত? তাহলে হয়তো দুপুরে তাদের দেওয়া বংশের একমাত্র বুদ্ধিমত্তা হিসাবে উপাধি দিত না। তবে এই মুহূর্তে ওনারা আরিশ কে কিছু বলতেও পারছেন না।
উনারা কি বা আর বলবে? আরিশ নিজে কুকর্ম করে, বউকে অজ্ঞান করে রেখে। এখন এসে ডাক্তারের মাথা ফাটালো। এ নিয়ে যদি ওনারা কিছু বলতে যায়, তাহলে ওনাদের ছেলের ডাইরেক্ট উত্তর আসবে, –‘তোমাদের ছোট ভাইকে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছি, তখন তো ঠিকই বলেছিলে আমি যা করি ঠিক করি। তাহলে এখন আমার বউকে ডাক্তার ফিরিয়ে আনতে পারল না, তাই শাস্তি দিয়েছি এখন আমার স্বভাব বেপরোয়া? ওনারা এসব চিন্তা করে, সেদিন শুধু চুপ ছিলেন। আর নয় তো দিনটা যদি ভাইকে ফিরিয়ে আনার আগে হত, তাহলে নির্ঘাত আজ সাফওয়ান খান দুটো চড় আরিশের গালে লাগিয়ে দিত। — তবে কি আর করার? ছেলের উন্মাদনা বেপরোয়া স্বভাব, নীরবে সহ্য করে, ওকে, আয়ানের সাথে বাড়ি ফেরত পাঠিয়ে। ডক্টর আহিলের যাবতীয় খরচ চিকিৎসা ওনারা করিয়ে তারপর বাড়ি ফিরেন।
আরিশ সেদিন বাড়ি ফিরে, নিজে রুম থেকে নিচে পর্যন্ত নামেনি। সার্বক্ষণ শূন্য চোখে তাকিয়ে ছিল নিজ প্রিয়সির ফ্যাকাসে মুখের দিক। এভাবে কেটে গেছে পরপর দুটো দিন, জুথি তখন ও জ্ঞানে না আসতে আরিশ বিষন্ন মনে উঠে রুমের বারান্দায় চলে যায়। স্বচ্ছ নীল আকাশ কে দেখার জন্য। আরিশ বারান্দায় গেছে বেশ সময় পার হতেও রুমে আসেনি। সে শুধু এক দৃষ্টিতে বারান্দার দোলনাটার উপর বসে আকাশের দিক তাকিয়ে ছিল। এভাবে সময় পার হয়ে ১ ঘণ্টার মতো কেটে যেতে, উঠে দাঁড়ায় রুমের ভিতর আসার জন্য, তারপর? তারপরের ঘটনা তো আপনারা জানেনই, তাই বর্তমানে ফিরছি।
★[ব্যাক]★
“ফারি জুথি কে এই তিন দিনের কথা একে একে, ছোট ছোট করে টুকটাক ভাবে বলল, — ‘আরিশ কে চিলেকোঠার ঘরে পাঠানোর পরে, ওরা ইভার বিয়ের দিন দুপুরে এই খবর পেয়েছিল। ইভা আপুর বিয়েতে ওরা ও তেমন সাজিনি, আপুর সাথে পর্যন্ত যায়নি। মনি আর মাইশা কে পাঠিয়েছিল, রাদিফ ভাইয়ের সাথে রোদ আপুর বিয়ে হয়েছে,ইভা আপুর বিয়ের দিনই। আর সেদিনই আরিশ ভাই জুথির আব্বুকে নিয়ে এসে সবাইকে চমকি দিয়েছিল। আর সব শেষ ডক্তর বলে গিয়েছিল, তোর নাকি ২৪ ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরবে। সেই জায়গায় তোর তিনদিন জ্ঞান না আসতে, আরিশ ভাই ডাক্তারের মাথা ফাটিয়েছিল। অতঃপর তোর জ্ঞান আসলো। ফারির মোটামুটি সব খুলে বলায়, জুথির মাথায় শুধু একটা কথাই আটকালো, ওর বাবা ফিরে এসেছে। ওর বাবা মরে যায়নি, তাই চোখ দুটো বারবার পলক ফেলতে ফেলতে, ফারিকে ওর ডান হাত দ্বারা কোনরকম সামনে থেকে সরিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
‘আমার আব্বু, আমার আব্বু উনি বেঁচে আছেন? – বলে চোখ থেকে পানি ফেলতে ফেলতে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে মায়ের রুমে এসে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতে দেখে, এক পাশ ফিরে ওর বাবা ঘুমানো অবস্থায় আছে। এটা দেখে কোনরকম বলল,
‘অ, আ,আব্বু!
ইউনুস খান দারজা খোলার শব্দ পেয়ে,ওনার ঘুম হালকা হয়ে যায়। তার উপর কাঁপা কন্ঠে আব্বু ডাকটা শুনে দ্রুত বিছানা থেকে উঠে বসে, দরজার দিক তাকাতে দেখে তার অতি আদরের কলিজা পাখি টা, দরজায় দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে। এটা দেখে উনি হাতের ইশারায় ওকে কাছে ডাকতে, জুথি এতটা দৌড়ে নিচে আসার জন্য বেশ হাপিয়ে গেছে, এমনিতেই তার শরীর প্রচন্ড দুর্বল। হাতের বাহুতে ব্যথা। তবুও সেদিক তোয়াক্কা না করে, বাবার ডাকে ছুটে কাছে গিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
‘আ,আমার আব্বু, ততুমি আমাদের রেখে কোথায় ছিলে? জজানো কত কষ্ট হত আমার তোমার জন্য? কত মিস করতাম আব্বু ডাকটা? কেন এলেনা এতদিন? খুব কান্না পাচ্ছে কিন্তু আমার।
ইউনুস খান মেয়ের ফোপানো কথায়, ওর মাথায় চুমু খেয়ে বললেন,
‘কাঁদে না আমার মা, এইতো বাবা চলে এসেছি তো সোনা। এভাবে কাঁদলে বাবার কষ্ট হয় তো? এটা কি আমার মা বোঝেনা?
‘আ,আমি এখন অনেক ক,কান্না করব, তোমার বুকে মাথা রেখে। আর তুমি সেই আগের মত বলবে, কাঁদলে কিন্তু চকলেট দিব না,আরিশের কাছে দিয়ে আসব। ঠিক আছে? – অভিমানী কন্ঠে। – ওর এমন কথায় ইউনুস খান মাথা দুপাশে দুলিয়ে মুচকি হাসলেন, তার মেয়েটা এখনো সেই একই রয়ে গেছে শুধু বদলেছে সময়। এসব ভেবে আবারো ওর মাথায় চুমু খেয়ে বললেন,
‘আমার আম্মুটা আর কাঁদে না, না হলে কিন্তু বাবা আবার চলে যাব। – উনি একথা বলতে জুথি ফোপাতে ফোপাতে কোনরকম কান্নাটা থামাতে, ওনার বুক থেকে মুখ উঠিয়ে বলল,
‘এই তো দেখো আর কাঁদছি না, তবুও তুমি আমাদের রেখে আর যেও না।
মেয়ের এমন কথায়, মুচকি হেসে ওর দু গালে চুমু দিয়ে বললেন,
‘না না, আমার এই পাখিদের রেখে আমি আর কই যাব? সব সময় আমার পাখিদের নিয়েই থাকবো।
‘সত্যি তো?
‘একদম পাক্কা সত্যি।
জুথি বাবার বুকে বেশ কিছুক্ষণ মাথা রেখে কান্না করার ক্লান্তিটা দূর করে, আস্তে করে উঠে বসতে ইউনুস খান বললেন,
‘তুমি দুপুরে খেয়েছ মা?
জুথি উনার কথায় মাথা দুপাশে ঘুরালো, যার মানে- ‘না সে এখনো ভাত খায়নি। জুথির না শব্দে মাথা নাড়ানো দেখে, উনি হালকা চাপা সরে বললেন,
‘এগুলো কিন্তু আমার পছন্দ না আম্মু, তাড়াতাড়ি খেয়ে আসো।
জুথি বাবার কথায় মাথাটা নিচে করে আসতে বলল,
‘আচ্ছা। – বলে উনার থেকে বিদায় নিয়ে, খাবার টেবিলে আসে। জুথি কে খাবার খেতে টেবিলে আসতে দেখে সানজিদা খান বললেন,
‘মৌ তোমার খাবার ফারিকে দিয়ে রুমে পাঠিয়েছি।
জুথি উনার কথায় আর টেবিলের কাছে দাড়ালো না, সিঁড়ি বেয়ে পুনরায় নিজের রুমে যাবে বলে সিঁড়ি গুলো পার করে করিডোর আসতে, রোদকে পার্পেল কালার সিল্কের শাড়ি পরে ওর পাশ থেকে চলে যেতে দেখে রোদের শাড়ির আঁচল টা খামচে ধরে চোখ মুখ ছোট করে বলল,
Violent love part 40
‘রোদ আপু?
“চলতি পথে বাধা পেয়ে, পাশাপাশি অসহ্য কারো কণ্ঠ পেয়ে রোদ বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে পিছন ঘুরে বলল,
‘সমস্যা কি? এভাবে আঁচল টেনে ধরেছিস কেন?