অন্তঃদহন পর্ব ২১

অন্তঃদহন পর্ব ২১
DRM Shohag

আসমানী নওয়ান বিস্ময়ে বাকহারা হয়ে মাথা নিচু করে তার হাতে মুখ ঠেকিয়ে রাখা অসহায় ছেলেটার পানে চেয়ে আছে। চোখের কোণে পানি জমেছে।
প্রথমদিকে সন্ধ্যাকে ডিভোর্স দেয়ার ব্যাপারে আকাশকে দোষারোপ করলেও এখন কেন যেন আকাশকে দোষ দেন না তিনি। ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দেয়ার পর সন্ধ্যার প্রতি আকাশের রিয়েকশন খুব একটা অস্বাভাবিক ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা সন্ধ্যা যাওয়ার পরদিন থেকেই তার ছেলেটাকে ভীষণ অগোছালো লাগে। মা হয়ে সে ছেলেকে বুঝবে না এমন তো নয়।
আসমানি নওয়ান তার দু’হাত সরিয়ে নিয়ে আকাশের গালে হাত দিয়ে ভেজা গলায় বলে,

– আমি তো জানিনা আব্বা আমার জান্নাত কোথায়! তুমি খুঁজতে থাকো, আমার দোয়া তোমার সাথে আছে। ঠিক খুঁইজা পাইবা।
আকাশ মায়ের দিকে অসহায় চোখে চেয়ে রইল। আসমানী নওয়ান একটু হেসে বলে,
– তোমাগো বিয়ার আগে জান্নাত আমায় কইছিল, ওয় বোবা তাই তুমি ওরে ভালোবাসবা না।
আকাশ তার মায়ের কথা নাকোচ করে সাথে সাথে বলে,
– ও যেমন, আমি ওকে সেভাবেই ভালোবাসি মা।
কথাটা বলে আকাশ কেমন অপ্রস্তুত হলো। আসমানি নওয়ান হাত উঁচু করে আকাশের মাথায় হাত দিয়ে মৃদু হেসে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– আমি জানি আব্বা। এই যে দোয়া কইরা দিতাছি। তুমি ভালোবাসো বইলা আল্লাহ যেন খুব তাড়াতাড়ি জান্নাতরে তোমার লগে মিলায় দেয়।
আকাশ মলিন হেসে তার মাকে আবার-ও জড়িয়ে ধরে। তার সন্ধ্যার সাথে যে খুব খারাপ হয়েছে, এসব ভাবলেই তার দমবন্ধ লাগে। নিজেকেই কোঁপাতে ইচ্ছে করে তার। সে তার সন্ধ্যাকে বাঁচাতে পারেনি। বুকটা আবার-ও ভারি হয়ে আসতে লাগলো। ভেতরটা ছটফটিয়ে উঠলো। অপরাধবোধে তার ভেতরটা ছিঁড়ে যায়।

গতকাল সাধন আর সোহা,, সৌম্য, সন্ধ্যা, সৃজাকে নিয়ে পঞগড়ের তেতুলিয়ার ছোট্ট একটি গ্রামে এসেছে। যেখানে তিনজন মানুষ থাকে। রিয়া, রিয়ার মা আর রিয়ার নানি। সৌম্য সাধনকে জিজ্ঞেস করেছিল, এরা সাধনদের কে হয়?
সাধনের উত্তর ছিল, – যাদের নিজের বলতে কেউ নেই। তাদের আপনজন হয় কিছু ভালো মনের মানুষ। রিয়ারা তাদের মাঝে থাকা ভালো মানুষ, যারা সাধনদের খুব আপন। এখানে এসে রিয়াদের সৌম্য তার আর সন্ধ্যার আসল নাম বলেনি৷ তার নাম সাধন বলেছে, সন্ধ্যার নাম সোহা বলেছে৷ সাধন কিছু বলতে গিয়ে-ও থেমে যায়। সে বুঝেছে সৌম্য ভ’য় পাচ্ছে। যারা সৌম্যদের খুঁজছে তারা যদি নাম শুনে খুঁজে পেয়ে যায় এজন্য।

গত দেড় মাস আগে হালকা শীতল ছিল। ধীরে ধীরে শীতের তীব্রতা বাড়ছিল। তবে পঞগড়ে এসে সকলের মনে হলো, প্রচন্ড শীত পড়েছে। পঞগড় উত্তর দিকে অঞ্চল হওয়ায় শীত বেশি লাগছে৷ গতরাতে সবাই শীতের জন্য খুব ক’ষ্ট করেছে। তাই আজ সকাল সকাল সাধন শহরে গিয়ে সবার জন্য একটি করে শীতের পোষাক এনেছে। কিন্তু সৌম্য এমনি নিতে রাজি নয়। তার ভীষণ আত্মসম্মানে লাগে এসব। সাধন তখন থেকে বোঝাচ্ছে সৌম্য রাজি হয়না। এক পর্যায়ে সাধন অসহায় কণ্ঠে বলে,

– সৌম্য তুমি আমাকে আপন ভাবতেই পারছ না। আমি সত্যি-ই ক’ষ্ট পাচ্ছি। আমি তোমার ভাই হলে আমাকে ফিরিয়ে দিতে পারতে? তুমি সোহাকে বোন ভাবছ, আমিও সন্ধ্যাকে বোন ভাবছি। আর তোমাকে ভাই। তাহলে আমি কি তোমাদের এই একটি শীতের কাপড় উপহার দিতে পারিনা? আমাকে পর-ই ভাবো তুমি। লাগবে না আমার আর ভাই।
সৌম্য ছোট করে বলে,
– সেরকম কিছু না সাধন।
সাধন বলে,

– তাহলে কিরকম কিছু? তাছাড় আমি কলেজ পর্যন্ত পড়েছি। তারপর আর পড়িনি। আর তুমি তো ভার্সিটি লাইফ শেষ করে ফেললে। ভবিষ্যতে অবশ্যই চাকরি করবে। তখন আমি তোমার থেকে অনেক দামি দামি জিনিস আবদার করব, হাজার হোক একটাই ভাই আমার। তুমি আপাতত আমার এই কমদামী পোষাক গ্রহণ কর, প্রিয় ভাইসাব!
সাধন কথাটা পুরনো আমলে রাজার সামনে দাসীরা যেভাবে বলতো, সেভাবে একটু ঝুঁকে বলেছে।
সাধনের নাটকীয় ভঙ্গিতে বলার ধরনে সৌম্য হেসে ফেলল। সাধন-ও হাসলো। সৌম্য সাধনের হাত থেকে শীতের পোষাক নিয়ে মৃদুস্বরে বলে,

– নিয়ে নিলাম। আমার টাকা হলে তোমাকে পুরো দোকান-ও কিনে দিতে পারি। তখন না নিলে খবর আছে তোমার।
সাধন সাথে সাথে বলে,
– আরে নাহ। আমি তো খুশিতে লুঙ্গি ডান্স দিব। তুমি শুধু আমার ইচ্ছা পূরণ করতে থাকবা, আর আমি পায়ের উপর পা তুলে খাবো।
সৌম্য মৃদু হাসলো।
এর মধ্যে একটি কেলেঙ্কারি হয়েছে, সিলেট থেকে পথে গ্রাম থেকেই সাধনের ফোনটি চুরি হয়ে গিয়েছে। আর এ কারণে সৃজার বাবার সাথে সাধন, সৌম্য কেউ যোগাযোগ করতে পারছিল না। শিমুদের ফোন নেই, তাই কল করে জানাতে পারেনি। তবে সকালে উঠে সাধন শীতের পোষাক কিনতে শহরে গিয়ে ওখানে এক দোকান থেকে সৃজার বাবার নাম্বারে কল করে তাদের কথা জানায়। সৃজার বাবা সৌম্য’দের সিলেট ফিরতে বলেছে। সৌম্য’র সাথে তার কথা আছে বলেছে। সাধন জানিয়ছে তারা দ্রুত ফিরবে।

সোহা, সন্ধ্যা, সৃজা গায়ে সোয়েটার জড়িয়ে রিয়াদের বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়েছে। এখন সকাল ১০ টার মতো বাজে। মেঘের আড়াল থেকে মাঝে মাঝে সূর্য একটুখানি উঁকি দেয়।
সাধন, সন্ধ্যা উঠানের কোণায় দু’জন একসাথে বসে আছে। রিয়া হেসে বলে,
– একজোড়া সাধন ভাইয়া, একজোড়া সোহা আমাদের বাড়িতে। আমার ভাবতেই ভালো লাগছে।
রিয়ার কথায় সবাই হাসলো। সোহা রিয়ার পিঠে চাপড় মে’রে সন্ধ্যার কাঁধে হাত রেখে হেসে বলে,
– বলবি জমজ বোন। আমরা হলাম পৃথিবীতে হারিয়ে যাওয়া জমজ ভাই-বোন, বুঝলি?
রিয়া মুখ বাঁকিয়ে বলে,

– জমজ হলে চেহারার মিল থাকে মূর্খ।
সাধন সৌম্য’র কাঁধে হাত রেখে গলা উচিয়ে বলে,
– হে শ্রদ্ধেয় রিয়া গাধি শুনে রাখ, মনের মিল-ই আসল মিল। আমাদের মনের মিল আছে মানে আমরা জমজ ভাইবোন বুঝলি?
সাধনের কথায় সবাই শব্দ করে হাসছে। রিয়া চোখমুখ কুঁচকে বলে,
– একদম আমাকে গাধি বলবে না সাধন ভাইয়া। তোমরা জোর করে জমজ ভাইবোন হয়ে যাচ্ছো। আর আমাকে গাধি উপাধি দিচ্ছ।
সৃজা হেসে বলে,

– বাদ দাও রিয়া। নামের মিল, মনের মিল সবই তো আছে। মিল থাকলেই হলো।
সাধন হেসে বলে,
– এইতো একটা মনের কথা বললি সৃজা। রিয়া গাধিকে বোঝা তো সৃজা। সব গাধা বোনদের মাঝে আমি এক চালাক প্রাণী হয়ে মসিবতে পড়ে গেছি।
সৌম্য মৃদু হেসে বলে,
– এজন্যই তোমাকে দেখার পর থেকে আমার শুধু শেয়ালের কথা-ই মনে পড়তো।
রিয়া হেসে বলে,
– আসলেই। মুখটা একদম শেয়ালের মতো থেবড়া। দুই নাম্বার সাধন ভাইয়া একদম ঠিক বলেছেন।
সাধন দু’হাত তার গালে রেখে বলে,

– এই না। ছিঃ! আমি সুন্দর।
সাধনের এক্সপ্রেশনে আবার-ও সবাই হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে সন্ধ্যার চোখের কোণে পানি জমে গিয়েছে। সৌম্য সন্ধ্যাকে এভাবে হাসতে দেখে প্রশান্তির শ্বাস নেয়। তার বোনুকে খুব কম-ই হাসতে দেখেছে সে। সাধন আর সোহা ম্যাজিক জানে যেন। এদের কেউ নেই, অথচ কত সুখী তারা। আবার অন্যদের-ও মাতিয়ে রাখে।
হঠাৎ-ই সোহা সন্ধ্যার দু’হাত ধরে উঠানের মাঝে সমানে ঘুরতে লাগলো। সন্ধ্যা প্রথমে ভ’য় পেলে-ও ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগলো। ঠোঁট প্রসারিত করে হাসতে লাগলো। সোহা খিলখিলিয়ে হাসে।
সৌম্য বলে,
– বোনু থেমে যা। পড়ে যাবি।
সোহা চেঁচিয়ে বলে,
– আরে ভাইয়া,, তোমার বোন আমার-ও বোন। আমি ছাড়বো না তাকে। তাই নো চিন্তা।
সন্ধ্যার হাসি আরও প্রসারিত হয়। সৌম্য, সাধন দু’জনেই তাদের দু’বোনের দিকে চেয়ে মৃদু হাসলো।

দুপুর হতে না হতেই সন্ধ্যার প্রচন্ড মাথা ব্য’থা শুরু হয়। গায়ে হালকা জ্বর। এখানের আবহাওয়া বেশি ঠাণ্ডা, হঠাৎ এতো বেশি ঠাণ্ডা সাথে তখন সোহার সাথে লাফঝাঁপ করে বেচারির এই কাহিল। কিন্তু মাথা ব্য’থার তীব্রতায় চোখ থেকে না চাইতে-ও টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
সৌম্য সন্ধ্যার ডান হাত ধরে রেখেছে। খুব চিন্তা হচ্ছে তার। মাথার কাছে সোহা বসে সন্ধ্যার মাথার চুল টেনে দিচ্ছে আর বলছে,
– আমি স্যরি বোন! তখন অনেক ঘুরিয়েছি, আমার জন্যই তোমার এমন হলো।
সন্ধ্যা মায়া মায়া চোখে সোহার দিকে তাকালো। ভাই ছাড়া এভাবে তার মাথায় কেউ কখনো চুল টেনে দেয়নি। এতো মায়া-ও দেখায়নি। মেয়েটি কত আপন ভাবে তাকে। সন্ধ্যা হাত উঁচিয়ে সোহার গালে দিয়ে একটু হেসে মাথা নাড়িয়ে বোঝায়,

– তোমার দোষ না।
সোহার খুব মন খারাপ। হঠাৎ-ই বিছানা থেকে নেমে কোথায় যেন গেল। আবার দু’মিনিটে ফিরে এসে সন্ধ্যার পাশে সৌম্য’র দিকে তাকিয়ে বলে,
– ভাইয়া চিন্তা করবেন না। আমার ভাইয়া ওষুধ আনতে গেছে। আমাদের বোনু ঠাস করে অসুস্থ হয়েছে, আবার ঠুস করে সুস্থ হয়ে যাবে।
সোহার কথায় সন্ধ্যা, সৌম্য একটু হাসলো। প্রায় দশমিনিটের মাথায় সাধন কিছু ওষুধ এনে সৌম্য’র হাতে ধরিয়ে দিলে সৌম্য টাকা দিতে চায়, সাধন রে’গে বলে,
– তুমি সবসময় আমাকে পর ভাবো কেন বলো তো সৌম্য? সন্ধ্যা তো আমার-ও বোন। আমি একটুখানি ওষুধ এনে দিতে পারিনা? তুমি এভাবে টাকা দিলে আমার খুবই খারাপ লাগে।
সাধন কথাটা রে’গে বললেও নিচু স্বরে বলেছে। নয়তো এরা সৌম্য আর সন্ধ্যা নাম শুনে নিতে পারে। সৌম্য বেশ কিছুক্ষণ সাধনের দিকে চেয়ে হঠাৎ-ই সাধনকে জড়িয়ে ধরে। সৌম্য মানুষদের সাথে কম মিশে। মাস পেরিয়ে গেলে-ও সে মানুষের সাথে এতোটা ফ্রিলি মিশতে পারেনা। কিন্তু সাধন ছেলেটা অদ্ভুদ। দু’দিনেই কত আপন লাগে তার। সাধন সৌম্য’র পিঠ চাপড়ে মৃদু হাসলো।

দুপুর পর পর সন্ধ্যার জ্বর ছেড়ে যায়, সাথে মাথা ব্য’থাও আর নেই। এতো মানুষ সেবা করলে অসুস্থ থাকবে কি করে? সোহা তো মাথার কাছে থেকে উঠছিলোই না। মেয়েটি খুব মায়া করে। সৃজা-ও তাকে খুব ভালোবাসে। সাথে তার সৌম্য ভাইয়ার সাথে আরেকটি সাধন ভাই পেয়ে সন্ধ্যার মনপ্রাণ জুড়িয়ে যায়।
সৃজার বাবা সাধনকে যেতে বলেছিল, সৌম্যকে কিছু বলবে, এজন্য সৌম্য আর এখানে থাকতে চায়নি। তাই তারা দুপুরের পর পর-ই সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।

রাত প্রায় একটার কাছাকাছি, তখন সৌম্য’রা ভানুগাছ গ্রামে এসে পৌঁছায়।
সৌম্য সৃজার বাবার কথা জিজ্ঞেস করলে সৃজার মা জানায়, সৃজার বাবার মাথা ব্য’থা করছিল তাই ঘুমিয়ে গিয়েছে। ঘুম থেকে ডাকতে চাইলে সৌম্য তার মামাকে ডাকতে নিষেধ করে দেয়। আগামীকাল কথা বলা যাবে। সৃজার মা তার স্বামীকে আর ডাকেনি। মানুষটা কেমন যেন চিন্তিত ছিল। তাকে শুধু বলেছে,
– সৃজার মা আমার মনে হয়, আকাশ নওয়ান সন্ধ্যার কেউ। এজন্যই ছেলেটার চোখেমুখে এতো অসহায়ত্ব ছিল। সৌম্যকে আকাশের ব্যাপারে বলতে হবে। যদি সৌম্য চেনে, তবে আরও পরিষ্কার হব।
কথাগুলো বলে সৃজার বাবা ঘুমিয়ে যায়। সৃজার মা আকাশের কথা বলতে চাইলো একবার। আবার ভাবলো সৃজার বাবা সকালে উঠে কথা বলবে, সেই গুছিয়ে বলবে।

এরপর সৌম্য, সন্ধ্যা, সাধন, সোহা, সৃজা সবাইকে খেতে দেয়। এরপর সবাই যে যার মতো ঘরে শুতে চলে যায়।
সন্ধ্যার শরীর দুর্বল, সৌম্য সন্ধ্যার সাথে থাকলো। বোনুকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই তার। একটু-আধটু অসুস্থ বোনকে একা রেখে শান্তি পাবেনা। সৌম্য’র কাজে সাধন হেসে বলেছিল,
– মনে হচ্ছে, সন্ধ্যাকে বিয়ে দেয়ার পর, সন্ধ্যার কিছু হলে, তুমি সন্ধ্যার বরকে ঘর থেকে লাথি মেরে বের করে দিয়ে বলবে, আমার বোন সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আমি ওর সাথেই থাকবো, তুই বের হ।

সাধনের কথায় সৌম্য চোখমুখ কুঁচকে নেয়। সোহা, সৃজা হাসলেও সন্ধ্যার চোখের কোণে জলকণা জমে। আকাশের মুখটা মনে পড়ে গেল যে! আকাশকে ভুলে যায় নি সে। সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত আকাশ, যে এখনো তার স্বামী। হয়তো তাকে ডিভোর্স দেয়ার জন্য খুঁজছে। সন্ধ্যার ক’ষ্ট হয়। সন্ধ্যার মনে প্রশ্ন জাগে, আকাশকে দিয়ে আসা চিঠিগুলো কি আকাশের মন একটু-ও নরম করতে পারেনি? হয়তো না। তার তো কোনো গুণ-ই নেই। আকাশ তাকে নিয়ে কেন ভাববে?
কথাগুলো ভেবে বুক চিরে ক’ষ্টমিশ্রিত শ্বাস বেরিয়ে আসে।

আকাশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পুরো বাংলাদেশের খুঁটিনাটি খুঁজবে সে। আর এমনটা করলে সে ঠিক তার সন্ধ্যাকে পেয়ে যাবে। গতকাল রাতে ছটফট করে কেটেছে তার। আজ সকাল সকাল উঠে আবার-ও বেরিয়ে গিয়েছিল। সাথে পুলিশ, ডিবি তো ছিল-ই। আজ সারাদিন সিলেটের পাশের শহর তন্নতন্ন করে খুঁজেছে। কিন্তু বরাবরের মতোই হতাশ।
ফিরতে ফিরতে রাত দু’টো বেজে গিয়েছে। ক্লান্তি, বেদনায় ভরা মনে ব্যর্থ প্রেমিকের ন্যায় ঢুলতে ঢুলতে বাড়িতে প্রবেশ করে। ড্রয়িং-রুম পাস করে সিঁড়ি উঠতে নিলে কিছু কথা কানে আসলে আকাশের পা থেমে যায়।
– সন্ধ্যা, সৌম্য সিলেটের ভানুগাছ গ্রামে আবার ফিরেছে? ভালো তো। ইরার বাবা ইশতিয়াক শেষ পর্যন্ত বেঈ’মানী করল। ও নেই ভালোই হয়েছে। তোমার বুদ্ধি আছে বলতেই হবে। একদম জায়গা বুঝে কো’প দিয়েছ। কতক্ষণ আগে আ’গুন দিয়েছ? বাঁচার চান্স নেই তো?
একটু পর আবার বলে,

– আচ্ছা আচ্ছা। মিনিট ১০ পেরিয়েছে। অনেক জ্বালালো এই সন্ধ্যার বাচ্চা। আর এর ভাই তো আরেকটা। অ’সহ্য। ম’রু’ক দু’টো। বাকিগুলোও ম’রু’ক, এতো দরদ দেখিয়েছে যেমন, তেমন ম’রু’ক।
আকাশ ড্রয়িং রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে তার বাবার বলা কথাগুলো শুনলো। দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বাবার দিকে দিকে চেয়ে আছে। আকাশের পাশে অরুণ দাঁড়িয়ে। সে আজ আকাশের সাথে ছিল। আকাশের বাবার এইসব শুনে তার নিজের মাথা যেমন ঘুরে উঠছে তেমন রা’গ-ও হচ্ছে।
আকাশ হঠাৎ-ই চিৎকার করে ডেকে ওঠে,
– এই বাপ??????????
আকাশের বাবা ভ’য় পেয়ে যায়। হাত থেকে ফোন পড়ে যায়। দ্রুত পিছু ফিরে আকাশকে তার দিকে জ্বলন্ত চোখে চেয়ে থাকতে দেখে ভীত চোখে তাকায়। আকাশ বড় বড় পা ফেলে তার বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। চোখমুখ শক্ত করে রাগান্বিত স্বরে বলে,

– তোমার মতো জা’নো’য়া’র বাপের র’ক্ত আমার শরীরে?
কথাটা বলে তার বাবার পাশে থুতু ফেলে আকাশ। আবার-ও কিছু বলতে চায়, কিন্তু তার শক্তি লোপ পাচ্ছে। তার সন্ধ্যার ঘরে ১০ মিনিট আগে আ’গুন দিয়েছে? সে কি করবে এখন? আর কত শা’স্তি বাকি তার জন্য? আকাশ এক সেকেন্ড-ও সময় ন’ষ্ট না করে দ্রুতপায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে কল করেছে।
ছেলের চিৎকারে আসমানী নওয়ানের ঘুম ভেঙে যায়। তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে অরুণকে দেখে জিজ্ঞেস করে,

– কি হইছে আব্বা?
অরুণ ছোট করে বলে,
– সন্ধ্যারা যেখানে আছে, আঙ্কেল লোক লাগিয়ে সেই বাড়িতে আ’গুন লাগিয়ে দিয়েছে আন্টি।
কথাটি বলে অরুণ আকাশ যেদিকে গেল, সেদিকে যায়।
অরুণের কথাটি শুনতেই আসমানী নওয়ানের মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। পাশে দেয়াল ধরে দাঁড়ালো ভদ্রমহিলা। চোখজোড়া ঝাপসা হয়ে গিয়েছে। বিড়বিড় করে আওড়ায়, – আমার জান্নাত!

আকাশ বাইরে বেরিয়ে কাঁপা হাতে তার পরিচিত লোকদের জানায়, সিলেটের ভানুগাছ গ্রামে আ’গুন লেগেছে। সেখানে যেন ইমিডিয়েটলি ফায়ার সার্ভিস পাঠানো হয়। যেকোনো মূল্যে যেন সবাইকে বাঁচানো হয়।
এরপর সে গ্যারেজে গিয়ে গাড়িতে উঠতে নিয়ে-ও থেমে যায়। সে কাঁপছে, ঠিক করে দাঁড়াতে পারছে না। ড্রাইভ করবে কি করে? সবচেয়ে বড় কথা গাড়িতে যেতে সময় লাগবে ১০ ঘণ্টার-ও বেশি।
অরুণ আকাশের কাঁধে হাত দিলে আকাশ ঝাপসা চোখে অরুণের দিকে তাকায়। সে কথা বলতে চাইছে। কিন্তু তার কথা বের হচ্ছে না। তবু-ও বহুকষ্টে উচ্চারণ করল,

– হেলিকপ্টার!
অরুণ বুঝলো আকাশের মনোভাব। কিন্তু এতো দ্রুত হেলিকপ্টার কোথায় পাবে? আকাশের হাত থেকে আকাশের ফোন নিতে চাইলে আকাশ নিজেই কাউকে কল করল। কল রিসিভ হতেই আকাশ কাঁপা কণ্ঠে বলে,
– স্যার আমার এক্ষুনি পার্সোনাল কারণে হেলিকপ্টার লাগবে। প্লিজ স্যার!
ওপাশ থেকে ভদ্রলোকটি আকাশের কণ্ঠ শুনে অবাক হয়ে বলে,
– কি হয়েছে তোমার আকাশ? ইমার্জেন্সি কিছু?
আকাশ কথা বলতে পারছে না। তার বাচ্চাদের মতো কাঁদতে ইচ্ছে করছে। তবুও বহুকষ্টে বলে,
– স্যার প্লিজ!
ভদ্রলোক অবাক হয়ে বলে,

– পা’গ’ল না-কি তুমি? বারবার প্লিজ বলছ কেন? আমি তোমার বাবা। কতবার বলব তোমায়? আমি ব্যবস্থা করছি। আমাকে কয়েক মিনিট সময় দাও। আর লোকেশন পাঠিয়ে দাও আমাকে।
আকাশ বা হাতে গাড়ি ধরে রেখে ডান হাতে ফোন অরুণের দিকে বাড়িয়ে দেয়। অরুণ দ্রুত ভদ্রলোকের নাম্বারে তাদের কাছেপিঠে একটি জায়গার এড্রেস পাঠায়।
মজার ব্যাপার হলো ইনি একজন মন্ত্রী। যার আকাশের বাবার সাথে সম্পর্ক যতটা খারাপ, আকাশের সাথে সম্পর্ক ততই ভালো। পরিচয়টা আকাশের বাবার দ্বারা হলেও আকাশ যে তার বাবার বিপরীত মেরুর এটা বুঝেই তিনি আকাশকে এতো পছন্দ করেন। আকাশের সভাপতি হওয়ার পিছনে এই ভদ্রলোকের অনেক অবদান।
অরুণ আকাশকে নিয়ে ফাঁকা জায়গাটিতে যায়। উনি জানিয়েছেন, মিনিট ১৫ এর মাঝেই হেলিকপ্টার পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সৌভাগ্যবশত আগে থেকেই সব রেডি থাকায় এতো দ্রুত পারছে।

কিছুক্ষণের মাঝেই মাঠটির মাঝখানে এসে হেলিকপ্টার ল্যান্ড করে। ভেতর থেকে সেই ভদ্রলোক বেরিয়ে আসলে অরুণ অবাক হয়, অবাক হয় আকাশ-ও। নিজের বাবা তার জীবনের সুখ কেড়ে নিচ্ছে। আর নামের বাবা তার সুখ ফিরিয়ে দেয়ার কত আয়োজন করছে!
লোকটি এগিয়ে এসে আকাশের সামনে দাঁড়িয়ে চিন্তিত কণ্ঠে বলে,
– কি হয়েছে আকাশ?

আকাশের কি হলো কে জানে। সে দ্রুত ভদ্রলোকটি সাপ্টে ধরল। লোকটি বোধয় খুশি-ই হলো। নিঃসন্তান তিনি। সে আকাশের থেকে এমন ব্যবহার চায়, ছেলের মতো ব্যবহার চায়, কিন্তু আকাশ সবসময় তার থেকে দূরত্ব রেখে চলে। তবে আজ আকাশের কান্ডে যতটা খুশি হচ্ছে তার চেয়ে বেশি খারাপ লাগছে। কি হয়েছে ছেলেটার?
আকাশ ভদ্রলোকটিকে ছেড়ে তার হাত ধরে হেলিকপ্টারের দিকে এগিয়ে যায়। তিনি কিছু বললেন না। আকাশ কোথায় যায়, দেখা যাক। এরকর নাহয় বোঝা যাবে। আকাশ যে কথা বলার অবস্থায় নেই তা তিনি বুঝেছেন।
প্রায় ২ ঘণ্টায় মাথায় ভানুগাছ গ্রামের একটি ফাঁকা জায়গায় হেলিকপ্টার ল্যান্ড করা হয়। সর্বপ্রথম আকাশ হেলিকপ্টার থেকে নেমে যায়। সে কোনোদিকে তাকালো না। অন্ধকারের মাঝে কতটুকু পথ চিনলো কে জানে! দিকবিদিকশুন্য হয়ে দৌড়ায়, সৃজার বাবার বাড়ির দিকে। পিছন পিছন অরুণ আসছে আর আকাশকে ডাকছে। আকাশ শুনতে পায় না। পুরো গ্রামের শোরোগোলে এই ছোট্ট গ্রাম যেন ভূমিকম্পের ন্যায় কাঁপছে। আকাশের চোখ থেকে পানি গড়ায়। তার সহ্য হচ্ছে না। তার সন্ধ্যা ঠিক আছে তো?

বেশ কিছুক্ষণ পর যখন কাঙ্ক্ষিত বাড়ির সামনে পৌঁছায় আকাশ। সামনে তাকালে দেখতে পায়, দাউদাউ করে পুরো বাড়ি পু’ড়ছে। কয়েকজন বালতিতে করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু তারা আ’গুন নেভাতে ব্যর্থ। আশেপাশের সব মানুষগুলো বলাবলি করছে।
– পুরো ২ ঘণ্টা ধরে আ’গুন জ্বলছে। তারউপর আবার কত জোরে শব্দ হলো, মনে হয়, বোম মা’র’ছে। কেউ বাঁচলো না। সবাই ছাই হয়ে গেলো!
কথাগুলো আকাশের কানে এসে বাড়ি খায়। আশেপাশে কোনো ফায়ার সার্ভিস গাড়ি নেই। আকাশ চিৎকার করে ডাকে,
– সন্ধ্যামালতী?????????

সময় ন’ষ্ট না করে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা আগুনের দিকে দৌড় লাগায়। পিছন থেকে অরুণ এই দৃশ্য দেখে পায়ের গতি বাড়িয়ে দৌড়ে এসে আকাশকে সাপ্টে ধরে। আকাশের শক্তির সাথে সে পারছে না। সর্বশক্তি দিয়ে দু’হাতে আকাশকে সাপ্টে ধরে। আশেপাশ থেকে কয়েকজন লোক এসে আকাশকে টেনে ধরে।
পিছন থেকে সেই মন্ত্রী আকাশের এমন দৃশ্য দেখে কি বলবেন বুঝলেন না। এখানে কোনো ফায়ার সার্ভিস না দেখে তিনি অবাক হয়। দ্রুত ফোন বের করে কাউকে কল করে ঝাড়তে থাকে, এখানে কেন ফায়ার সার্ভিস পাঠানো হয়নি। তারা জানায়, ফায়ার সার্ভিস এর গাড়ি এসেছিল, কিন্তু এই ছোট্ট গ্রামের এই জায়গায় গাড়ি ঢুকতে পারেনি, তাই আবার-ও ফেরত গিয়েছে। ভদ্রলোক বেশ কয়েকটি হেলিকপ্টার পাঠাতে বলে। এই আ’গুন নিভবে না মনে হচ্ছে, কিছু না কিছু করা প্রয়োজন, নয়তো একসময় এই এলাকা পুড়ে যাবে।

চারপাশটা কেমন যেন গুমগুম করছে। গ্রামের মানুষেরা দলে দলে ছুটছে। সবার ঘুম হা’রা’ম হয়ে গিয়েছে।
আকাশ জ্বলতে থাকা আগুনের দিকে চেয়ে চিৎকার করে ডাকে, – সন্ধ্যা???
চোখ থেকে টুপটুপ করে ঝর্ণার ন্যায় পানি ঝরছে। সবগুলো মানুষকে ঠেলে সামনে এগোতে চাইলো, উল্টে দুর্বল শরীর টা টানতে পারলো না, উল্টে দু’হাঁটুতে ভর করে ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে। সামনে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে,

– তোমাদের পায়ে পড়ি, আমায় ছেড়ে দাও প্লিজ! আমার সন্ধ্যা জ্ব’লে যাচ্ছে। আমাকে ওর কাছে যেতে দাও, ওকে বাঁচাতে দাও। আমার সন্ধ্যা ম’রে যাচ্ছে৷ কু’ত্তা’র বাচ্চা ছাড় আমায়।
এক পর্যায়ে না পেরে আগের চেয়ে-ও জোরে চিৎকার করে ডাকে, – সন্ধ্যামালতী ???????????
লোকগুলো অবাক হয়ে চেয়ে আছে। সন্ধ্যা নামের একটি মেয়ে কে তারা চিনতো। বেশ কয়েকদিন হলো সৃজাদের বাড়িতে দেখছিল। বুঝল, আকাশের কেউ, এজন্যই ছেলেটা এভাবে চিৎকার করছে, অনেক প্রলাপ বকছে।
আকাশ ক্লান্তিতে মাথা নিচু করে বিড়বিড়িয়ে বলে,
– আমায় ছাড়ো তোমরা। দয়া কর প্লিজ! আমার সন্ধ্যা আমায় ডাকছে! আমি না গেলে ও তো ম’রে যাবে। ছাড়ো আমায় প্লিজ!

অরুণ আকাশের সামনে হাঁটুমুড়ে বসে আকাশকে জড়িয়ে ধরে। চোখ থেকে দু’ফোঁটা পানি টুপ করে গড়িয়ে পড়ে। এমন আকাশকে সে দেখেনি। সে চিনতে পারছে না তার বন্ধুটাকে। আকাশ অরুণকে টের পেয়ে কান্নামাখা গলায় বিড়বিড়িয়ে বলে,
– ভাই, আমায় ছেড়ে দে। আমার সন্ধ্যা পু’ড়ে যাচ্ছে। আমার সন্ধ্যা ছাড়া আমি কি করে বাঁচবো?
হঠাৎ গায়ের জোরে অরুণকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর লোকগুলোকে ধাক্কা দেয়। সকলে বেখেয়ালে থাকায় বুঝতে পারেনি। আকাশ দৌড় লাগায়। বিড়বিড়িয়ে আওড়ায়, – আমার সন্ধ্যামালতী তুমি। এইতো আমি আসছি।

অরুণ দ্রুত মাটি থেকে উঠে দাঁড়ায়। আকাশের পিছু দৌড়ায়। এইবার আকাশের পিছু আকাশের বাবা সমতুল্য সেই ভদ্রলোকটি-ও ছুটল। রাতের আঁধারে তাকে কেউ চিনলো না, এজন্যই সুবিধা হয়েছে।
গ্রামের মানুষ চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আকাশের পা’গ’লামো দেখে সামনে থেকে বেশ কয়েকজন লোক আকাশকে আটকে ধরে। আকাশ নিজেকে ছাড়াতে ছটফটায়। জ্বলতে থাকা বাড়িটির পানে চেয়ে চোখের পানি ফেলে। চিৎকার করে বলে,

– ছাড়ো আমায়। ওখানে আমার সন্ধ্যা আছে। দয়া কর প্লিজ! আমার সন্ধ্যা ম’রে যাচ্ছে।
অরুণ দৌড়ে এসে আকাশকে ধরে ভাঙা গলায় বলে,
– এমন পা’গ’লামি কেন করছিস? ওখানে গেলে তুই ছাই হয়ে যাবি আকাশ। একটু বোঝ?
আকাশ চিৎকার করে বলে,
– আমি আমার সন্ধ্যাকে ছাড়া বাঁচতে চাইনা। ওকে বাঁচিয়ে দিবি অরুণ? ওর আগুনে ক’ষ্ট হচ্ছে অরুণ। ওকে বাঁচিয়ে দে না!

লাস্ট কথাগুলো কাঁদতে কাঁদতে ক্ষীণ স্বরে বলে। আবার-ও আগের ন্যায় মাটিতে ধপ করে বসে পড়ে। গ্রামের লোকগুলো আকাশকে শক্ত করে ধরে আছে, যেন আকাশ কোনো আসামি! তারা মানবতার খাতিরে করছে। আকাশের পা’গ’লা’মিতে সকলের খারাপ লাগে।
সামনে জ্বলন্ত আগুনের থেকে আলো এসে আকাশের মুখে পরেছে। যারা খবর দেখে তারা অনেকেই আকাশকে চিনতে পেরে কয়েকগুণ বেশি অবাক হয়ে চেয়ে আছে আকাশের দিকে।
আকাশ বিড়বিড়িয়ে আওড়ায়,

– সন্ধ্যামালতী আমাকে রেখে যেও না!
হঠাৎ-ই শরীরের পুরো ভার ছেড়ে দিলে শক্ত মাটির উপর ঠাস করে উপুড় হয়ে পড়ে যায়। অরুণ আর সেই ভদ্রলোকটি দ্রুত আকাশকে উল্টে দেখল আকাশের জ্ঞান নেই। বুঝল সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে। এরপর আকাশকে কাছেপিঠে এক হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়।
কিছু সময়ের মাঝে বেশ কয়েকটা হেলিকপ্টার এসে উপর থেকে পানি ফেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। কারেন্টের তারে আ’গুন লেগে যাওয়ায় আগুন নেভাতে বেশ বেগ পোহাতে হয়। ধীরে ধীরে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করে। ততক্ষণে আ’গুন নেভাতে সক্ষম হয়। গ্রামের মানুষগুলো হায় হায় করতে থাকে। এক রাতের মাঝে পুরো পরিবার পুড়ে ছাই হয়ে গেল।

আকাশকে হসপিটালে অ্যাডমিট করানোর পর, প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা দিলে আকাশের জ্ঞান ফিরে আসে। তখন সকাল প্রায় সাতটা বাজে। আকাশ চোখ মেলে আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলো এটা হসপিটাল। সবকিছু খেয়ালে আসতেই ধড়ফড় করে বেড থেকে নেমে দাঁড়ায়। কোনোদিকে তাকালো না। একপ্রকার দৌড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে বাইরে যায়। বাইরে অরুণ আকাশে এভাবে বেরিয়ে আসতে দেখে আকাশকে ডাকলো।
– আকাশ তুই অসুস্থ। প্লিজ কোথাও যাস না।

আকাশ অরুণকে ধাক্কা দিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে যায়। পিছু পিছু নার্স এসেছিল আকাশকে ডাকলো, আকাশ কারো কথা গ্রাহ্য করল না। হসপিটালটি সৃজার বাবাদের বাড়ি থেকে খুব বেশি দূরে না হওয়ায় আকাশ কয়েক মিটিটের মাঝেই সেখানে পৌঁছে যায়। দৌড়ে গিয়ে সেই ফাঁকা জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায়। আকাশ সামনে তাকায়।
গত পরশু যেখানটায় একটি বড়সড় একটি বাড়ি ছিল, আকাশ এসেছিল এই বাড়িটায়, তার সন্ধ্যার খোঁজ নিতে। অথচ আজ পুরো বাড়ি সহ বাড়ির প্রতিটি সদস্য ছাই হয়ে মাটির সাথে মিশে গিয়েছে। তাদের মধ্যে একজন তার সন্ধ্যা। আকাশের সামনে এগোনের সাহস হয় না। হঠাৎ-ই দু’হাতে মাথার চুল টেনে সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার দিয়ে ডাকে,

– সন্ধ্যামালতী???????????
মাটিতে ধপ করে বসে পড়ে। অসহায় কণ্ঠে আওড়ায়,
– সন্ধ্যামালতী প্লিজ ফিরে এসো!

গ্রামের সকল মানুষ যে যার বাড়ি ফিরছিল। কেউ কেউ আকাশকে দেখে মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়েছে। আকাশের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে আসমানী নওয়ান, যে মিনিট দুই আগে গাড়ি থেকে নেমেছে। অফিসের পিএ বায়ানকে কল করে তখন-ই রওয়ানা দিয়েছিল। পৌঁছালো এখন। সিলেটে পা রাখতেই ছেলের আর্তনাদে বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল তার। পাশে দাঁড়ানো বায়ান দ্রুত পায়ে এসে আকাশের পাশে দাঁড়ায়। পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে অরুণ-ও।
আকাশ দু’হাতের মাঝে মুখ রেখে কি যেন বিড়বিড় করে। আসমানি নওয়ান সামনে তাকালে দেখল ছাইয়ের স্তূপ জমা হয়ে আছে। ওখানে তার জান্নাত আছে তাইনা? বুক চিরে বেরিয়ে আসে কিছু আক্ষেপের কথা, – ক্ষ’মা করিস জোৎস্না, তোর মেয়েটাকে আগলে নিতে পারলাম না আমি।
বুকটা ভার হয়ে আসে। চোখ থেকে নোনাপানি গড়িয়ে পড়ে। দুর্বল পায়ে এগিয়ে এসে আকাশের পাশে দাঁড়িয়ে ভাঙা গলায় ডাকে,

– আব্বা?
আকাশ সাড়া দেয় না। আসমানী নওয়ান বেশ কয়েকবার ডাকলে আকাশ মাথা তুলে তাকায়। আাকশের চোখদু’টো র’ক্তের ন্যায় লাল হয়ে আছে। সেই চোখ থেকেই অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। মায়ের দিকে চেয়ে অসহায় কণ্ঠে বলে,
– আমার সন্ধ্যাকে এনে দিবে না মা? তুমি যে কালকে বললে, আমি আমার সন্ধ্যাকে পাবো, তবে কেন পেলাম না মা?
কথাগুলো বলতে বলতে আকাশের কণ্ঠ জড়িয়ে আসে। আকাশ হঠাৎ-ই মায়ের পায়ের সাথে কপাল ঠেকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,

– মা আমার সন্ধ্যা পুড়ে গিয়েছে। আমি ওকে বাঁচাতে পারিনি মা। আমার খুব ক’ষ্ট হয় সন্ধ্যামালতীকে ছাড়া থাকতে। ওকে এনে দাও না মা! আমি আর ওকে বকব না, কখনো ওকে বা’জে কথা বলব না। আমার সন্ধ্যা অভিমান করে হারিয়ে গেছে। ওকে একবার বলো না মা, আমি ওকে খুব ভালোবাসি। ওকে ফিরতে বলো আমার কাছে। আমি ওকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারিনা। ও কিভাবে আমাকে রেখে হারিয়ে গেল? মাআআআ কথা বলো।
আসমানী নওয়ান শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। দু’চোখ বন্ধ। চোখের কোণ ঘেঁষে পানি গড়ায়। ছেলের আহাজারিতে বুক ভেঙে আসে, সাথে তার জান্নাতের হারিয়ে যাওয়া! আসমানী নওয়ান ধীরে ধীরে ছেলের পাশে বসে। আকাশ মায়ের মুখের দিকে চেয়ে ভাঙা গলায় বলে,

– তুমি একদিন বলেছিলে, আমি হাজার কেঁদে কেঁদে চাইলেও আমার সন্ধ্যাকে আর পাবো না। তোমার কথা ফলে গিয়েছে মা। তুমি খুশি হয়েছ তো? আমি অনেক ডেকেছি সন্ধ্যামালতীকে। কিন্তু ও আসেনি। ও চলেই গেল।
আসমানী নওয়ান বোবা চোখে ছেলের পানে চেয়ে রইল। আকাশ মাথা নিচু করে ক্ষীণ স্বরে বলে,
– সন্ধ্যা একা একা কেন চলে গেল? ও আমায় নিয়ে গেল না। ও আমায় এভাবে শাস্তি দিতে পারলো? মা জানো, আমার কখনো এতো ক’ষ্ট হয়নি। আমি এতো ক’ষ্ট নিতে পারছি না। আমার সন্ধ্যাকে এনে দিবে মা? আমি আর কখনো কিছু চাইবো না, বিশ্বাস কর।
আকাশ কথাগুলো বলতে বলতে তার মায়ের কাঁধে কপাল ঠেকিয়েছে। আসমানি নওয়ান আকাশের পিঠে হাত রেখে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দেয়।
অরুণ, বায়ান একটু পর পর চোখের পানি মুছে ফেলে। আকাশের অবস্থা দেখে তারা নিজেদের ঠিক রাখতে পারছে না।

মোট ছয়টি লা’শ পাওয়া গিয়েছিল। তবে কাউকে চেনা যায়নি। পুরো কয়লা হয়ে গিয়েছে। কারো কারো বডির কিছু অংশ খুঁজেই পাওয়া যায়নি।
এরপর চোখের পলকে পেরিয়ে গেল পাঁচ মাস।
আকাশ, আসমানী নওয়ান কেউ আকাশের বাবার সাথে কথা বলে না। যেন তারা এই লোকটাকে চেনেই না।
আসমানী নওয়ান সেদিন শ’ক্ত থাকলে-ও, সেদিনের পর থেকে হয়ে গেলেন অসুস্থ,, আর আকাশ হয়ে গেল পাথরের মতো শক্ত। মাকে নিয়ে দু’দিন পর পর হসপিটাল দৌড়ায়। অনুভূতিহীনদের মতো বেঁচে আছে দু’টো মানুষ।

রিয়াজ ঝাপসা চোখজোড়া দু’হাত দিয়ে মুছলেন। আকাশের দু’পাশের কাঁধ একটু-আধটু ভেজা। রিয়াজ কিছু বলার মতো খুঁজে পেল না। শুধু আকাশের দিকে চেয়ে-ই রইল।
নিয়াজ রিয়াজের পাশের চেয়ারে বসতে বসতে বলে,
– ভাইয়া এখানে কি করছ?
রিয়াজ আকাশকে দেখিয়ে বলে,
– আকাশের জীবনের কাহিনী শুনলাম।
নিয়াজ আকাশের দিকে তাকালো। সন্ধ্যা আর সৌম্য’র চিকিৎসা সে করেছিল। নামটাও জানতো। সিলেট তার বোনের বাসা। সেখানে তার দাদু যাত্রাপথে সৌম্যদের দেখা পেয়েছিল। তারা তার বোনের বাসার ওখানেই থাকতো।
তাদের দাদু এসে তাদের কাছে গল্প করেছিল। তারপর একদিন শুনলো সন্ধ্যা, সৌম্য যে বাড়িতে থাকতো সেই বাড়ি পুড়ে গিয়েছে। সাথে তারা-ও আর নেই।

রিয়াজ হয়তো দাদুর মুখে গল্পটা শোনেনি। তাই সন্ধ্যা, সৌম্যকে চেনেনি।
এরপর সে হসপিটালে আকাশের মাকে এডমিট করানোর পর জানতে পেরেছে সন্ধ্যা আকাশের বউ ছিল। মেয়েটির জন্য তার খারাপ লাগে এখনো। সেদিন রাতে তাকে বাঁচাতে পারলেও এর কিছুদিন পরেই মেয়েটি পরপারে চলে গেল, সাথে তার ভাই। নিয়াজ দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
আকাশ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালে মাথাটা কেমন ঘুরে ওঠে। নিয়াজ খেয়াল করে বলে,
– ঠিক আছো?
আকাশ ভাঙা গলায় বলে,
– আমার মজা দেখতে এসেছ তাইনা? আমি ক’ষ্ট পাচ্ছি, তুমি তো খুব খুশি হচ্ছো।
নিয়াজের খারাপ লাগলো। ছেলেটাকে এতো খাপছাড়া সে আগে কখনো দেখেনি। সবসময় একটা মুড নিয়ে থাকতো। অথচ এখন কি! মৃদুস্বরে বলে,

– আমি তোমাকে শ’ত্রু ভাবি না, তুমি হয়তো ভাবো।
আকাশ উত্তর দেয়,
– আমিও ভাবিনা।
নিয়াজ বলে,
– ক্লাসে সবসময় তুমি টপার হতে বলে শুধু একটু হিংসা করতাম।
আকাশ ক্যান্টিন থেকে যেতে যেতে মৃদুস্বরে বলে,
– জানি।
রিয়াজ আকাশের রেখে যাওয়া খাবারের প্লেটটির দিকে চেয়ে রইল। আকাশকে ডাকতে গিয়েও ডাকলো না। তার মনটা ভার হয়ে আছে আকাশের কথা শুনে।

রিয়া ডায়রিটা পাশে রেখে দু’হাতে মুখ ঢেকে রেখেছে। বেচারি সৌম্য’র জীবনকাহিনী পড়েই শো’কা’হত। চোখের বারোটা বাজিয়ে ফেলেছে। নামগুলো তার কাছে পরিচিত ঠেকে। এতো কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে আবার-ও ডায়রির পাতা খুলে পড়তে বসল।

রাত তখন ১:৩০ প্রায়। সৌম্য’র চোখে ঘুম নেই। সে ভাবলো বাইরে গিয়ে একটু হাঁটবে। কিছু ভালো লাগছে না। বাইরে বেরোতে নিলে সন্ধ্যা বিছানা থেকে নেমে সৌম্য’র হাত ধরে। সৌম্য বিচলিত কণ্ঠে বলে,
– কি হয়েছে বোনু? খারাপ লাগছে?
সন্ধ্যা দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে বোঝায় না। ইশারায় বলে, – সে-ও সৌম্য’র সাথে বাইরে যেতে চায়। সৌম্য মৃদু হেসে বোনের হাত ধরে বাইরে বেরিয়ে যায়। জোৎস্নার আলো নেই আজ। তবে মৃদু বাতাস বইছে। সৌম্য সন্ধ্যার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূর এগিয়ে যায়। ভালোই লাগছে। সৌম্য ভাইয়ের কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে হাঁটছে। অনেকদূর হাঁটার পর হঠাৎ কানে আসে শোরোগোলের আওয়াজ। সৌম্য সন্ধ্যা দু’জনেই ভ্রু কুঁচকে তাকায়। তবে তেমন পাত্তা দিল না। এসব গ্রামে অনেক যাত্রাপালা হয়। সেসব হতে পারে।

এদিকে শীতের রাত হওয়ায় ঘরে আগুন লাগলেও সাধনদের উষ্ণতা পেয়ে যেন ঘুম আরও গাঢ় হয়ে যায়। সকলেই কমবেশি ক্লান্ত থাকায় এমনিতেই ঘুমে বিভোর। কিন্তু এতো এতো শোরোগোলের আওয়াজে প্রথমে সাধনের ঘুম ভাঙলো। ঘুমের ঘোরে আশেপাশে তাকালে সে ভ’য় পেয়ে যায়। চারপাশে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। সাধন তার বোনের দিকে তাকায়। সোহা কি আরামে ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ পাশে আ’গুনের ফুলকি পড়লে সাধন চেঁচিয়ে ওঠে। সোহা ঘুমিয়ে। সাধন কাঁপা কণ্ঠে ডাকলো,
– সোহা বোন ওঠ। আ’গুন লেগেছে।
সোহা ধড়ফড় করে উঠে বসে। ঘুমুঘুমু চোখে চারিপাশে তাকালে ঘুম উড়ে যায়। তার পাশে ঠাস করে আগুনের ফুলকি এসে কাপড়ের উপর এসে পড়ে। সোহা চেঁচিয়ে উঠে সাধনকে জড়িয়ে ধরে। কেঁদে দিয়ে বলে,
– ভাইয়া আমাকে বাঁচাও।

সাধন ডানহাতে সোহার কাপড়ের উপর থা’প্প’ড় দিয়ে আগুন নিভিয়ে দিয়ে বোনকে আগলে নেয়। সোহা গুটিশুটি মেরে ভাইকে ধরে কাঁদতে থাকে। সাধন কোনোদিকে বেরোনোর পথ পায় না। পাশের ঘরগুলো থেকে চিৎকারের আওয়াজ আসছে। সাধন সোহা দৌড়ে অন্য রুমে যেতে চায়, কিন্তু আ’গুনের তেজে যেতে পারছে না। সময়ের পাল্লা বাড়তে থাকে, এক পর্যায়ে আ’গুন থেকে বাঁচাতে পারলো না ঘরের ভেতর থাকা ব্যক্তিরা। সৃজা তার ভাইকে জড়িয়ে ধরে আছে। ছোট্ট সিজান চিৎকার করে কাঁদছে। সৃজা ভাইটাকে জড়িয়ে গলা কাটা মুরগির ন্যায় ছটফটায়, সৃজা কাঁদতে কাঁদতে ভাইকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,

– ঘুমা ভাইয়া। আল্লাহ তোকে ফুলের বাগানে রাখবে। ঘুমা।
সিজান বোনের গলা জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– আপু আমি ম’রি গিলাম। আমার শলীল জুলচে। আমাকি বাঁচাউ।
সৃজা শুধু কেঁদেই গেল, আর বিড়বিড় করল,
– ঘুমা ভাইয়া। আল্লাহ তোকে জান্নাতের বাগান দিবে।
পাশে রুমে সৃজার বাবা, মা জ্বলছে আর আহাজারি করছে, সাথে ছেলেমেয়েদু’টোর চিৎকারে কলিজা ফেটে যাচ্ছে। কিচ্ছু করার রইল না। সৃজার বাবা শেষ একবার দীর্ঘশ্বাস নিয়ে প্রিয় স্ত্রীকে জড়িয়ে অহস্য য’ন্ত্র’ণা’য় জ্ঞান হারায়। একসময় সৃজার মা-ও স্বামীর বুকেই হয়তো শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল।
সাধন, সোহা দু’জনে দু’জনকে জড়িয়ে ধরে আছে। দু’ভাইবোন জ্বলন্ত খড়ির ন্যায় জ্বলছে। সোহা কাঁদতে কাঁদতে বলে,

– ও ভাইয়া। আমার খুব ক’ষ্ট হচ্ছে গো। আমার শরীর টা জ্বলে ছাই হয়ে গেল! আমায় বাঁচাবেনা ভাইয়া?
সাধন বোনকে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে কান্নামাখা গলায় বলে,
– ক্ষমা করিস বোন। আমি তোকে ওপারে গিয়ে আর কখনো তোকে মারবো না।
সোহা ভাইয়াের গলা জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– ভাইয়া? ও ভাইয়া? ম’রে যাচ্ছি আমি। আহ!
সাধন বোনের কপালে চুমু খায়। সোহা চেঁচিয়ে কাঁদে। সাধন বোনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। বিড়বিড়িয়ে বলে,
– তোকে অনেক ভালোবাসি বোনু।

একসময় সৌম্য, সোহা-ও নিস্তেজ হয়ে গেল। আ’গুন তাদের জ্বালিয়ে দিল। সোহা বিড়বিড় করে,
– ভাইয়া, ভালোবাসি। সন্ধ্যা বেস্ট ফ্রেন্ডকেও ভালোবাসি।
সাধন বোনকে ছাড়লো না একটু-ও। জ্ঞান হারায় তবুও শক্ত করে ধরে রাখলো। চোখের কোণ ঘেঁষে পানি গড়িয়ে পড়লো। সৌম্য’র কথা মনে পড়ল। বিড়বিড় করল, – বোনু, সৌম্য ভা…..
দু’ভাইবোন জ্ঞান হারায়। নাহ, হয়তো শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে ফেলেছে। দু’জন দু’জন গলা জড়িয়ে আগুন পোড়া খড়ির ন্যায় পু’ড়ছে।

সৌম্য, সন্ধ্যা প্রায় দেড় ঘণ্টাখানেক এদিক-ওদিক ঘুরে আবার-ও উল্টোপথ ধরে। বাড়ির দিকে যত এগোয়, তত মনে হলো চারপাশটা কেমন আলোতে ভ’রে গিয়েছে। সৌম্য ভ্রু কুঁচকে বোনের হাত ধরে পায়ের গতি বাড়ায়। এতোক্ষণে শোরোগোল বেড়ে গিয়েছে। অনেকটা কাছে আসলে সৌম্য যখন বুঝল বাড়িতে আ’গুন লেগেছে তখন বোনের হাত ধরে দৌড় লাগায়। সন্ধ্যা চোখ বড় বড় করে ভাইয়ের সাথে পা মেলায়। আ’গুনের তেজে দু’ভাইবোন এগোতে পারেনা। সন্ধ্যা নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলে এগিয়ে যায়, এখানে তো সোহা আছে, সবাই আছে। কোথায় সবাই।

সৌম্য, সন্ধ্যা সিজান আর সোহার আর্তনাদ একটু-আধটু শুনতে পেল। সন্ধ্যার কান্না পায়। সব ভুলে এগিয়ে যায়। সোহা যে তাকে বেসফ্রেন্ড বলেছিল, বোন বলেছিল। সেই বোন আ’র্ত’নাদ করছে। সন্ধ্যার পা থেমে থাকে? সে সব ভুলে দৌড়ায়।
হঠাৎ-ই বিকট শব্দ হয়, সন্ধ্যা যেন কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়েছে। একদম উড়ে পড়ার মতো কয়েক হাত দূরে এসে পড়ে। সৌম্য চিৎকার করে ডাকে,
– বোনু???????

দৌড়ে গিয়ে সন্ধ্যার পাশে হাঁটুমুড়ে বসে। সন্ধ্যার কোনো সাড়া নেই। সৌম্য সন্ধ্যাকে এতো ডাকলো, অথচ কোনো সাড়া পায় না। সন্ধ্যাকে টেনে বুকে জড়িয়ে নিয়ে সামনে তাকায়। আ’গুনের তীব্রতা যেন বেড়েই চলেছে।
হঠাৎ-ই উপরে কয়েকটা হেলিকপ্টার ঘুরতে দেখে সৌম্য ভীত চোখে তাকায়। ভাবে এরাই হয়তো তাদের ক্ষ’তি করতে চাইছে। সৌম্য দ্রুত সন্ধ্যাকে কোলে তুলে নেয়। কোনদিকে যাবে বুঝতে পারেনা। তারা বাড়ির পিছনের দিকটায়। এজন্য এদিকে কেউ নেই। সৌম্য জ্বলতে থাকা বাড়িটার দিকে তাকায়। চোখের কোণ ঘেঁষে পানি গড়িয়ে পড়ে। তার প্রিয় মানুষগুলো কি তবে তাকে আর বোনুকে ছেড়ে চলে গেল?

ভাবনার মাঝেই আরও কয়েকটা হেলিকপ্টার দেখে সৌম্য অজ্ঞান সন্ধ্যাকে কোলে নিয়ে দিকবিদিকশুন্য হয়ে দৌড়ায়। সে পারলো না তার প্রিয় মানুষগুলোকে বাঁচাতে। তার বোনটা ঠিক আছে তো? কথাটা ভাবলতেই সৌম্য’র পায়ের জোর কমে আসে। সৌম্য আশেপাশে লুকানোর মতো কিছু খুঁজে না পেয়ে রাস্তা থেকে কিছুটা নিচের দিকে নেমে যায়। এরপর সন্ধ্যাকে সেখানে শুইয়ে দু’হাতে সন্ধ্যার গালে চাপড় মে’রে ডাকে,
– বোনু? এই বোনু? ওঠ বোনু!
প্রায় ১০ মিনিটের মতো সন্ধ্যাকে ডেকে-ও যখন কোনো রেসপন্স পায় না। তখন সৌম্য’র চোখ বেয়ে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। তার বোনকে কি শেষমেষ হারিয়েই ফেলল? সৌম্য দু’হাতে সন্ধ্যাকে জড়িয়ে নিয়ে ভাঙা কণ্ঠে আওড়ায়,

– বোনু ওঠ না? তুই ছাড়া আমার কেউ নেই বোনু। যারা একটু-আধটু ছিল, তারা-ও হারিয়ে গেছে। এই বোনু? বোনু???
সন্ধ্যার কোনো সাড়া না পেয়ে সৌম্য দিশেহারা হয়ে পড়ে। আবার-ও সন্ধ্যাকে কোলে নিয়ে রাস্তা দিয়ে এদিক-ওদিক ছোটে। কোথায় নিয়ে যাবে তার বোনটাকে? রাস্তার পাশে একটি কল চোখে পড়লে সৌম্য সন্ধ্যাকে কলের পাড়ে শুইয়ে দেয়। এরপর দু’হাতে কল চেপে দ্রুত দু’হাত কলের মুখে রাখে। কিছুটা পানি দু’হাতের মুঠোয় জমা হলে তা নিয়ে দ্রুত সন্ধ্যার মুখে ছিটিয়ে দেয়। এরপর দু’হাতে সন্ধ্যার দু’গাল ধরে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে ডাকে,

– বোনু? উঠ না বোনু! আমার একা রেখে যাস না। তুই আমায় রেখে গেলে আমি ম’রে যাবো বোনু। তুই না আমার ছোট মা? একটু চোখ মেলে তাকা। বোনু?
সৌম্য’র চোখের কোণে ঘেঁষে গড়িয়ে পড়া কয়েক ফোঁটা নোনা পানি সন্ধ্যার মুখের উপর পড়ে।
সৌম্য আবার-ও উঠে এসে কল থেকে পানি নিয়ে সন্ধ্যার মুখে ছিটায়। এরকরম চারবার করার পর সন্ধ্যা একটু নড়ে ওঠে। সৌম্য’র জানে পানি আসে। দ্রুত সন্ধ্যাকে দু’হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। বিড়বিড়িয়ে বলে,
– বোনু? আমায় ছেড়ে যাস না কখনো।
সন্ধ্যা ভাইকে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে উঠলো। সৌম্য ডান হাতে তার চোখজোড়া মুছে সন্ধ্যার দিকে তাকায়। সন্ধ্যা ভাইকে ইশারায় বোঝায়,

– সোহা, সাধন, সৃজা, সিজান, মামা, মামি সবাই ওই ঘরে পু’ড়ে গিয়েছে ভাইয়া?
সৌম্য’র চোখজোড়া ভিজে ওঠে। আশেপাশে তাকালো। অনেকটা সময় পেরিয়েছে। শোরোগোল টা কমেছে বোধয়। সৌম্য সন্ধ্যাকে ধরে আবার-ও সৃজাদের বাড়ির দিকে যায়। আশপাশটা কেমন যেন শুনশান লাগলো। কেউ নেই এখানে এখন।
কিছুক্ষণ আগে-ও যেখানে একটি বাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল, সেই বাড়িটি এখন ছাইয়ে পরিণত হয়ে আছে।
তাদের ছোট্ট একটি পরিবার ছিল, হয়তো র’ক্তের সম্পর্ক ছিল না, তবে তার চেয়েও বেশি টান ছিল প্রতিটি মানুষের সাথে, তাদের সবাইকে হারিয়ে ফেলল সৌম্য আর সন্ধ্যা। সন্ধ্যা দৌড় দেয়। একটুখানি গিয়ে হঠাৎ-ই পায়ে গরম লাগলে টিকতে না পেরে পিছিয়ে আসে। সৌম্য বোনকে আগলে নেয়। পরনের প্যান্টে ফোন ছিল, যেটা বের করে চারিদিকে লাইট দিয়ে খুঁজল কিছু।

একটু ঘুরে ঘুরে দেখলে হঠাৎ চোখে পড়ল, দু’টো মাথা। তবে চেনা যাচ্ছেনা। একদম কালো কুচকুচে হয়ে গেছে। সৌম্য বেশ কিছুক্ষণ চেয়ে চিনতে পারলো এটা তার মামা মামি। মুহূর্তেই ছেলেটার সৌম্য’র চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল। তার মা নেই, বাবা থেকেও নেই। এই দু’জন মানুষ-ই ছিল বাবা মায়ের মতো। আল্লাহ কি সুন্দর করে তাদের কেড়ে নিল! এরপর একটু দূরেই দেখল একটি ছোট্ট মাথা, আরেকটি মাথা লাগানো। সৌম্য চিনলো এরা সৃজা, সিজান। সিজানের আদোআদো স্বরে ডাক, সৃজার বলা সেই কথাটি কানে বাজলো,
– সোহাকে একদিনেই বোন বানিয়ে ফেললেন? আর আমি একমাসের বেশি হয়ে গেল, একসাথে থাকছি। তাও আমাকে বোন ভাবতে পারছেন না? আপনি এতো কিপ্টা কেন?
সৌম্য ভেজা চোখে চেয়ে বিড়বিড় করল,

– সৃজা তোমাকে আমি প্রথম দিন-ই বোনু বানিয়ে নিয়েছিলাম। শুধু তুমি বুঝতে পারোনি।
সন্ধ্যার চোখ থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে। সৌম্য বা হাতে বোনকে আগলে নিয়ে আরেকটু সামনে এগোলে আরও দু’টো মাথা দেখল। এদের চিনতে একটু-ও অসুবিধা হলো না। সাধন,, দু’দিনের পরিচিত হওয়া এক ভাই তার। সৌম্য এ পর্যায়ে বোনকে জড়িয়ে বাচ্চাদের মতো কেঁদে উঠলো কেন জানি। সাধন যে বলেছিল, সে চাকরি পেলে তার থেকে সাধন শীতের পোষাক কিনে নিবে। তাকে বারবার আপন ভাইয়ের কথা মনে করিয়ে দিত! কিন্তু সে যে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল।

সন্ধ্যা কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলেছে। সোহার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো কি করে ভুলবে সে? তার জ্বর আসলে সোহা তার মাথায় কত স্নেহের হাত বুলিয়ে দিত! আর কখনো দিবে না। দৌড়ে এসে আর জড়িয়ে ধরবে না তাকে। আর হাসবে না তার দিকে চেয়ে। তাকে আর হাসাবে না সোহা নামক চঞ্চল মেয়েটি। সে হারিয়ে গিয়েছে।
হঠাৎ মানুষের একটু আঁচ পেয়ে সৌম্য নিজেকে সামলে নেয়। সন্ধ্যাকে ধরে দ্রুত জায়গাটি প্রস্থান করার জন্য পা বাড়ায়। সৌম্য জানেনা এসব কারা করেছে, তবে কেউ না তো কেউ তাদের মা’র’তেই করেছে। সন্ধ্যা যেতে চায় না। সে সোহা, সৃজা, সিজান মামা, মামি ওদের রেখে কি করে যাবে? সৌম্য সন্ধ্যাকে জোর করেই টেনে নিয়ে যেতে থাকে।

ধীরে ধীরে দিনের আলো ফুটতে শুরু করে। সৌম্য সন্ধ্যাকে নিয়ে রাস্তায় ধারে বসে থাকে। কোথায় যাবে, কি করবে কিচ্ছু জানেনা। পকেটে কয়টা টাকা আছে। আর তার ফোনটা। আর তাদের গায়ে একটি করে জামা। পায়ের জুতো-ও নেই। রাত বলে খালি পায়ে হাঁটতে বেরিয়েছিল।
সৌম্য সন্ধ্যাকে আগলে নিয়ে বসে ভাবছে কি করবে। হঠাৎ রিয়াদের বাসার কথা মনে পড়ে। আর তো যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।
বেলা বাড়লে সৌম্য বাসের টিকিট কাটে দু’টো। টিকিট কেটে পকেটে থাকলো দুই টাকার একটি কয়েন।
সৌম্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এরপর বাস আসলে খালি পায়ে দুইভাইবোন সেই বাসে উঠে বসে। অনেকে বাঁকা চোখে তাকিয়েছে। অন্যসময় হলে হয়তো একটু অন্যরকম লাগতো। কিন্তু আজ সৌম্য, সন্ধ্যার কোনো অনুভূতি হলো না। তারা প্রিয় মানুষগুলোকে হারিয়ে পাথর হয়ে গিয়েছে যেন।

এরপর সন্ধ্যা, সৌম্য রিয়াদের বাড়ি এসে কিছুদিন এখানে থাকতে চায়। সৌম্য, সন্ধ্যার অবস্থা দেখে তারা অবাক হয়েছিল। সৌম্যদের নিজেরকে নতুন করে পরিচয় দিতে হয়নি। কারণ তারা আগে থেকেই রিয়াদের কাছে সাধন, সোহা হিসেবে পরিচিত। এরপর দু’ভাইবোন এখানেই থাকতে শুরু করলো।
জমির দলিলগুলো পুড়ে গিয়েছে। সৌম্য’র আর তার মামার ঋণ শোধ করা লাগেনি। তবে তার বাবার মতো মামাকে হারিয়ে ফেলেছে। বাঁচাতে পারেনি।
দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেল পাঁচ মাস। এখানে সৌম্য টিউশন পায়নি বলে আবার-ও মিস্ত্রির কাজ করে। যখন যে কাজ পায়, সেটাই করে। দিনমজুর যাকে বলে। দিনশেষে তার বোনুর মুখে দু’টো খাবার তুলে দেয়। এইতো তাদের জীবন। এভাবেই চলছে।

রিয়া হাতের ডায়রি ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। সন্ধ্যা রিয়াকে রাতের খাবার খেতে ডাকতে এসেছিল। রিয়াকে এভাবে কাঁদতে দেখে দৌড়ে এসে রিয়াকে ঝাঁকিয়ে ইশারায় বলে,
– কি হয়েছে?
রিয়ার কান্নায় একে একে তার মা, নানি, সাথে সৌম্য এসে হাজির হয় এই ঘরে। রিয়ার মা এগিয়ে এসে বলে,
– কি হয়েছে মা? এভাবে কাঁদছিস কেন?
রিয়া কাঁদতে কাঁদতে ফিক উঠিয়ে ফেলেছে। সময় নিয়ে নিজেকে সামলে বলে,

– মা জানো, এদের নাম সন্ধ্যা আর সৌম্য। আমাদের সাধন ভাইয়া আর আমার বান্ধবী সোহা ম’রে গিয়েছে মা। ওরা আর বেঁচে নেই। এজন্য আজ পাঁচ মাস হয়ে গেছে এখানে আর আসেনা। আর আগে দুই মাস পর পর-ই আসতো। আমি মিছেমিছি অভিমান করে আছি সাধন ভাইয়া আর সোহার উপর। ওরা তো বেঁচেই নেই মা।
রিয়ার কথা শুনে রিয়ার মা আর তার নানি স্তব্ধ চোখে তাকায়। সন্ধ্যার চোখ থেকে আবার-ও টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। একবার সৌম্য’র দিকে তাকালো। সৌম্য ঝাপসা চোখে সন্ধ্যার দিকে চেয়ে আছে। সন্ধ্যা দৌড়ে এসে ভাইকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে উঠলো। সে সোহাকে কখনো ভুলবে না।

অন্তঃদহন পর্ব ২০

তার কখনো কোনো বান্ধবী ছিল না। ওই একটাই বান্ধবী ছিল তার। যে খুব ভালো ছিল। তাকে খুব ভালোবাসতো। সে কি করে ভুলবে তার বোনটার কথা?
সাধন সন্ধ্যাকে বা হাতে জড়িয়ে নিয়ে ডান হাতে ঝাপসা চোখজোড়া ডলে কয়েকবার। সাধনের সেই নাটকীয় ভঙ্গিতে বলা, ‘প্রিয় ভাইসাব’ কানে বাজলো। কতবার তাকে জড়িয়ে ধরেছিল। আপন ভাই বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছিল। কথাগুলো ভেবে আবার-ও চোখজোড়া ঝাপসা হয়। মনে মনে বিড়বিড় করে,
– পরিচয়টা দু’দিনের। স্মৃতি খুবই সামান্য। অথচ এর ভার এতোটাই বেশি, যা বইতে আমাদের দু’ভাইবোনের নিঃশ্বাস নিতে ক’ষ্ট হয়। দম আটকে আসে।

অন্তঃদহন পর্ব ২২