আপনাতেই আমি পর্ব ৩৫
ইশিকা ইসলাম ইশা
শপিং মলের সামনে দুই পরিবার মিলিত হয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। মমতা বেগম ছেলের জন্য বেশ কিছু সেরোয়ানি দেখছেন ইতিমধ্যে।মায়া বিরক্ত হয়ে মায়ের দিকে তাকালো।মায়া ইন্টার এ পড়ে। দেখতেও ভীষণ সুন্দর।তার বিরক্তির কারণ হল তার মায়ের চয়েজ।এতো গুলোর মাঝে ছেলের জন্য পছন্দ সহ সেরওয়ানি পাচ্ছেন না তিনি। দূর থেকে রিদি দেখল মমতা বেগম কে।দেখতে সুন্দর মমতা বেগম। চেহেরায় বয়সের ছাপ পড়লেও বেশ মেইনটেইন করে নিজেকে।পড়নে সুতি শাড়ি।পরিপাটি করে পড়া শাড়িটি বেশ মানিয়েছে তাকে।মমতা বিরক্ত হল।এতো বড় শপিং মলে তার ছেলের জন্য একটা সেরওয়ানি পাচ্ছেন না তিনি।উঠে অন্য সাইডে চলে গেল।একে একে কিছু পাঞ্জাবি দেখছেন তিনি।হুট করে চোখ আটকে যায় সবুজ রঙের পাঞ্জাবিতে। পাঞ্জাবি দেখার জন্য টান দিতেই অন্য একটা হাতও টেনে ধরে পাঞ্জাবি টা।মমতা বিরক্ত হয়ে চোখ তুলে তাকায়। ডঃআশিক মাহমুদ কে দেখে পাঞ্জাবি টা ছেড়ে অন্য সাইডে চলে যেতেই আশিক বলে,
আয়ান কে মানাবে বেশ তাই না!!
মমতা কোন কথা বলল না। আবারো চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মায়া বলে,
বাহহহ বাবা তোমার চয়েস আছে।তবে এটা ভাইয়ার বিয়ের ফাংশন এ মেহেদী সেরেমনিতে জোস লাগবে।তাই না আম্মু!!
মমতা বেগম তবুও কিছু বলল না।চলে গেল।মায়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অসহায় বোধ করল মায়া তাকাল বাবার দিকে।আশিক মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।তার করা পাপের শাস্তি তার ছেলে মেয়ে পাচ্ছে।মায়া কাঁদো কাঁদো মুখে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আম্মু আমার কোন কিছুর অভাব বুঝতে দেয় নি বাবা শুধু একটা সুখী পরিবার ছাড়া।আমরা কি একসাথে থাকতে পারি না বাবা।তুমি,মা,ভাইয়া,ভাবী,আমি।মেয়ের কথায় কলিজায় আঘাত পেল আশিক।সে তো চেষ্টা করেছে সব ঠিক করার কিন্তু মমতা কখনো ফিরে দেখে নি।আশিক মেয়ে কে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।”নারীর ভালোবাসা যেমন সুন্দর, নারীর ঘৃনা তেমন ভয়ংকর ”
আড়ালে থেকে বাবা মেয়ের কথা শুনল আয়ান।বোনের মতো তারও তো একটা সুখী পরিবার চাই। কিন্তু সব কি ভাগ্য থাকে। এগিয়ে আসল তাদের দিকে।মায়ার মাথায় হাত রেখে বলল।
আমাদের মতো অভাগী কেউ যেন না হয়।সব থেকেও যার কিছু নেই।কথাটা বলেই চলে গেল আয়ান।আশিক দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।
এদিকে তীব্র কে দেখে যেন শপিং মলের দোকানে ভীর জমে গেছে।সব স্টাফ গুলো সুযোগ পেলেই ছুটছে তার দিকে যে কোন বাহানায়।তীব্র বিরক্ত হচ্ছে।এই জন্য সে মেয়েদের সাথে বেশি কথা বলে না।বৌয়ের জন্য একটু ভালো কি হয়েছে তাতে যেন সবাই লাই পেয়েছে। ইচ্ছে করছে ঠাস ঠাস করে থাপ্পর মারতে। অসহ্য!!বৌ তার সেরা বলতে হবে মেঘের সাথে শপিং এ এতোই ব্যস্ত বর যে এখানে আছে তার কোন ধ্যান নাই।নেহাত বৌ ছাড়া তার কাউকে সহ্য হয় না তাই নাহলে যে হারে মেয়েরা ঘুরঘুর করছে তাতে মনে হচ্ছে সে যেন মৌমাছির চাক।
দূর থেকে তীব্রর দিকে তাকাল রিদি।তীব্রর রাগান্বিত ফেস দেখে হাসল। বেচারা রাগে ফেটে পড়লেও কিছু বলছে না।বর তার বেস্ট এতে কোন সন্দেহ নেই।এতো এতো সুন্দর মেয়ে তার সামনে ঘুরছে তবুও তাকাচ্ছে না পর্যন্ত।মাঝে মাঝে মানতে ভীষণ কষ্ট হয় তীব্র!তীব্র চৌধুরী!দি তীব্র চৌধুরী নাকি তার স্বামী তাও আবার এতো ভালোবাসে।এই ভালবাসা কখনো না হারায় প্রতিদিন একটাই প্রার্থনা করে রিদি।এই ভালবাসা টুকু যদি সে হারিয়ে ফেলে তাহলে রিদি নিজেকেও যে হারিয়ে ফেলবে। নিঃস্ব হয়ে যাবে।
রিদি তীব্রর দিকে তাকিয়ে কথা গুলো ভেবে এগিয়ে গেল তীব্রর দিকে।আনমনেই গিয়ে জড়িয়ে ধরল তীব্রকে।তীব্র অবাক হল।তার চেয়েও বেশি অবাক! না না অবাক না বলতে গেলে আকাশ ভেঙ্গে পড়ল যেন ঘুরঘুর করা মেয়েদের মাথায়। আর তীব্র তো তীব্র বৌ পেলে সে দুনিয়া ভুলে যায়। আশেপাশে সবাই কে উপেক্ষা করে চিন্তিত কন্ঠে বলল,
এই জান কি হয়েছে?
রিদি কিছু বলল না।তার ভালো লাগছে এভাবে বুকে মিশে থাকতে। কিন্তু এদিকে তীব্রর চিন্তা হচ্ছে।রিদিকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলে রিদি ছাড়ে না।বিরবির করে বলে,
আমি এভাবেই থাকব!!
কাছাকাছি থাকায় রিদির কথা শুনতে পেল তীব্র। মেঘ কে ইশারায় ডেকে বলল,
আমি রিদিকে নিয়ে যাচ্ছি।আই হোপ বাকি তুমি ম্যানেজ করতে পারবে।
জ্বি স্যার.. মানে ভাইয়া।
তীব্র একবার সবার দিকে ভু কুঁচকে তাকাল।রাগ হলো এভাবে তাকানোর কি আছে,
মাই ওয়াইফ।এনি প্রবলেম?
সবাই যেন আরো বেশি অবাক হল।তাতে তীব্রর কি!!সে তো নিজের মতো রিদিকে কোলে তুলে হাটতে লাগলো।আর রিদি লজ্জায় মুখ তুলেও কারো দিকে তাকালো না পড়ে রইলো সেভাবে।
পার্কিং এরিয়ার এসে রিদিকে কোলে নিয়েই গাড়িতে বসল তীব্র। এবার রিদি মুখ খুলল,
এভাবে গাড়ি চালাবেন কিভাবে ছাড়ুন!!
না।ছাড়ব বলে কি ধরেছি?
রিদি আর জোর করল না। মিশে রইল বুকে। একটু থেমে রিদি বলে,
আমাকে সবসময় এভাবেই ভালোবাসবেন তো!! আপনার ভালবাসায় আসক্ত আমি তীব্র। ভীষণ ভাবে আসক্ত। আমার ভয় করে তীব্র।আপনাকে হারিয়ে ফেলার।আপনাকে হাড়ালে আমি নিজেও হারিয়ে যাব।কখনো খুঁজলেও পাবেন না আর।
তীব্র হুট করেই রেগে গেল।রিদিকে ছাড়িয়ে নিয়ে রিদির গাল চেপে ধরল,
ফালতু কথা কম বল!তুই আছিস বলে আমি শান্ত হয়ে আছি ।তোকে ছাড়া তো দূর তুই না হলে একটা দিনও আমার চলবে না।তাই বেকার আমাকে রাগিয়ে দিবি না।বলেই রিদির গাল ছেড়ে দেয়।
রাগে ফুসফুস করছে তীব্র।রিদি তীব্রর মুখ দুহাতে ধরে সারা মুখে ঠোঁটের ছোয়া দেয় তীব্র চুপচাপ আদর টুকু নিয়ে বুকে চেপে ধরল রিদিকে।বৌ এর থেকে দূরে থাকতে হবে ভাবলেই ধংস করতে ইচ্ছে হয় তীব্রর।সে জানে না কি আছে রিদির মাঝে যার জন্য রিদিকে এতো চায় তীব্র। কিন্তু এই মেয়েটা ছাড়া তার নিশ্বাস কমে আসে।
বাড়িতে আসতে আসতে তীব্রর বুকেই শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে রিদি। তীব্র কয়েক পল সেভাবেই রিদিকে নিয়ে বসে থেকে গাড়ি থেকে বের হয়ে বাসায় আসে।
চারদিকে আলোকিত আজ আশিক মাহমুদ এর বাড়ি। শূন্য বাড়ি প্রান ফিরে পেয়েছে যেন। আত্বীয় স্বজন মিলে বেশ রমরমা পরিবেশ।এমন রমরমা পরিবেশ অনেক বছর আগে ছিল যখন মমতা আর তার ছোট্ট একটা সংসার ছিল।বছরান্তে বাড়ি ভরে থাকত আত্বীয় স্বজনে।মমতা সবাইকে দাওয়াত দিত।আশিক মাহমুদ এর বোন,বোন জামাই, বাচ্চা সবাই মিলে বেশ মজা হতো। কিন্তু তার একটা ভুল সবটা শেষ করে দিল। কথাগুলো ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো আশিক মাহমুদ। বেলকনিতে থেকে দেখল বাগান সুন্দর করে সাজানো হয়েছে বিভিন্ন লাইট দিয়ে। মানুষ আসতে শুরু করেছে।তাকেও এখন নিচে যেতে হবে ভেবে চলে আসতে নিলে চোখ আটকে যায় জাম কালার শাড়ি পরিহিত এক নারীর দিকে।নারীটি আর কেউ না মমতা বেগম। সুন্দর পরিপাটি শাড়ি পড়ে আয়ানের টাই ঠিক করে দিচ্ছে।আশিক আবারো ছোট একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।
আয়ান আজ পুরো ব্ল্যাক সুট,বুট পড়েছে। ফর্সা শরীরে কালো রং বেশ ফুটে উঠেছে।ছেলের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসল আশিক। ছোট্ট সেই আয়ান টা কতো বড় হয়ে গেছে।আজ বাদে কাল বিয়ে।আশিক ছেলের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গেস্টদের এটেন্ড করতে এগিয়ে গেল।
মেঘ আজ কালোর মাঝে খয়েরী গর্জিয়াস স্টোনের লং গাউন পড়েছে।ভারী মেকআপ এ একদম পরির মতো লাগছে। পাশাপাশি দুইজনকে বেশ মানিয়েছেও।ছেলে আর ছেলের বৌ কে প্রান ভরে দোয়া করলেন মমতা বেগম। শাশুড়ির সাথে মেঘের বন্ড বরাবরই ভালো ছিল।মাঝের দিকে মমতা বেগমের চলে যাওযায় কথা কম হলেও আগের মতোই স্নেহ করছেন মমতা বেগম।ছেলের বৌ হিসেবে এমন মেয়েই চেয়েছে মমতা।যে তার ছেলেকে আগলে রাখবে।ছেলের বেপোরোয়া স্বভাব দূর করবে।
আপনাতেই আমি পর্ব ৩৪
তিনি আজ খুশি কারন তার ছেলে আজ খুশি।তাদের বিচ্ছেদে ছেলে মেয়ে কষ্ট পেলেও নিজের প্রতি হওয়া অন্যায়ে তিনি কম্প্রোমাইজ করে নি।এতে ছেলে মেয়ে কষ্ট পেলেও তিনি চেয়েও পারেন নি সব মেনে আবার ফিরে আসতে।তবে ছেলের জন্য মন ভরে দোয়া করেছেন তিনি। দুইজনের ভবিষ্যৎ সুন্দর হোক এটাই চাই তার।মমতার ভাবনার মাঝেই পাশে এসে দাঁড়ায় আশিক মাহমুদ।মমতা আশিক কে দেখেই সেখানে থেকে চলে যায়।চলে যাওয়ার পর আর কথা বলে নি মমতা আশিকের সাথে।আশিক মমতার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।