কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ৮
মিসরাতুল রহমান চৈতী
গাড়ির জানালা দিয়ে ভেসে আসা হালকা বাতাস চৈতীর চুলগুলোকে উড়িয়ে দিচ্ছিল। গাড়ির ভেতরে এক ধরনের নিঃশব্দ উত্তাপ জমে আছে। রাতুল ড্রাইভিংয়ে মনোযোগী, কিন্তু মাঝে মাঝে একবার করে চৈতীর দিকে চোখ পড়ে যাচ্ছে। চৈতী চুপচাপ বসে আছে, জানালার বাইরে তাকিয়ে।
আজ ৮ দিন পর সে ঘরবন্দী থেকে বের হলো। মুক্ত বাতাসে মন খুলে শ্বাঃস নিচ্ছে।
রাতুল এক পলক চৈতীর দিকে তাকিয়ে আবার গাড়ি চালাতে শুরু করলো।
হাজার যান-জট পেরিয়ে অবশেষে তাদের গাড়িটা এসে থামলো স্কুলে।
রাতুল চৈতীর দিকে তাকিয়ে বলল,
— “নেমে পড়ো। আজ থেকে নতুন শুরু।”
স্কুলের দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাসে পা রাখার পর চৈতী একটু নড়েচড়ে বসলো। মনে হলো নতুন জায়গার গন্ধে তার ভেতরে একটুখানি আশা জেগে উঠছে।
ভর্তি প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ হলো। অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক রাতুলের প্রতি আন্তরিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
— “আপনার দায়িত্ববোধ সত্যিই প্রশংসনীয়। এই মেয়েটার ভবিষ্যৎ আপনার হাতে সুরক্ষিত।”
রাতুল একরকম গম্ভীর মুখে উত্তর দিলো,— “সে শুধু দায়িত্ব নয়, আমার প্রতিশ্রুতি।”
স্কুল থেকে বের হয়ে তারা গাড়িতে উঠে পড়লো। রাতুল মনে মনে ভাবলো এখন বাসায় ফিরবে না। বরং তাকে নিয়ে একটু নদীর পার ঘুরতে যাবে এতে করে যদি একটু ওর মনটা হাল্কা হয়।
গাড়ি নদীর পাড়ের দিকে মোড় নিলো। চৈতী জানত না কোথায় যাচ্ছে, কিন্তু জানালা দিয়ে আসা ঠান্ডা বাতাসে মনে হলো কিছুটা শান্তি ফিরে আসছে।
রাতুল গাড়ি থামিয়ে বলল, — ” নেমে আসো।”
চৈতী অবাক হয়ে বলল, — “এখানে কেন?”
রাতুল কোনো উত্তর না দিয়ে দরজা খুলে নেমে পড়লো। চৈতীও বাধ্য হয়ে নেমে এলো। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিল এক অন্যরকম শান্ত পরিবেশ—পাখিদের ডাক, ঢেউয়ের শব্দ আর হালকা বাতাস যেন একটুকরো স্বস্তি এনে দিল।
রাতুল চুপচাপ নদীর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কিছুক্ষণ দু’জনই নীরবে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে রইল। হঠাৎ বাতাসে চৈতীর চুলগুলো উড়তে লাগলো। রাতুল নিজের অজান্তেই হাত বাড়িয়ে চুলগুলো সরিয়ে দিলো।
চৈতী চমকে উঠল।— “কি করছেন এটা?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রাতুল ধীর কণ্ঠে বলল, — “চিন্তা কোরো না। মানুষ হিসেবে আমি হয়তো খুব একটা ভালো নই, কিন্তু ওয়াদা ভাঙার মানুষও নই। তোমার চুলগুলো তোমাকে অস্বস্তি দিচ্ছিল, তাই সরিয়ে দিলাম। এর বাইরে আর কিছু নয়।”
শব্দগুলোর সরলতায় ছিল এক ধরনের গভীরতা, আর রাতুলের চোখে লুকিয়ে ছিল এমন এক প্রতিশ্রুতি, যা সহজে ভাঙার নয়।
রাতুল হালকা হাসিতে বলল, — “চলো, তোমায় নিয়ে একটু শপিংয়ে যাই। কিছু টুকিটাকি কিনে দিই। আসো, আমার সাথে।”
বলে সে ধীরে হাঁটা শুরু করলো। চৈতী কিছুক্ষণ চুপ থেকে তার পিছু নিলো।
গাড়িতে উঠতেই রাতুল ইঞ্জিন স্টার্ট দিলো। চারপাশে নীরবতা, শুধু গাড়ির মৃদু গড়গড় শব্দ যেন তাদের কথা বলার প্রয়োজনটা লাঘব করে দিচ্ছিল।
গাড়ি থামলো এক শপিং মলের সামনে। রাতুল দরজা খুলে দিলো চৈতীর জন্য।
— “বের হয়ে আসো চৈতী। ”
চৈতী ক্ষানিকটা নার্ভাস ফিল করছিলো এই প্রথম শহরের এত বড় একটা শপিংমলে এসেছে।
রাতুল হঠাৎ থেমে পাশ ফিরে চৈতীর দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বললো, — “যদি অনুমতি দাও, তোমার হাতটা ধরতে চাই। এতো বড় শপিং মলে মানুষের ভিড়ে যদি হারিয়ে যাও, তখন কি হবে? তুমি হয়তো পালিয়ে গিয়ে বাঁচবে, কিন্তু আমি?”
তার গলা আরও নরম হয়ে এলো, — “আমি যে ধোঁকায় ধোঁকায় মরবো। এত সহজে হার মানতে চাই না… আমি বাঁচতে চাই, চৈতী। তোমার সাথে। দেবে কী সেই অনুমতি?”
চৈতী কয়েক মুহূর্ত চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। তার চোখে একরাশ দ্বিধা, এক অদ্ভুত সংশয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে দিলো রাতুলের দিকে।
রাতুল শক্তপোক্ত হাতে আলতো করে ধরে নিলো সেই নরম হাতখানা। কোনো জোর নেই, কেবল এক রকম সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি যেন ভেসে এলো তার স্পর্শে।
ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যাওয়ার ভয়টাও যেন মিলিয়ে গেল এই একটুকু স্পর্শে। দুজনেই নীরব, কিন্তু হাত ধরে হাঁটার সেই মুহূর্তেই মনে হলো— হয়তো এটাই তাদের নতুন গল্পের শুরু।
রাতুল আর চৈতী হাত ধরে শপিং মলের ভিড়ের ভেতর দিয়ে হাঁটতে শুরু করলো। চারপাশের কোলাহল, দোকানগুলোর রঙিন আলো আর মানুষের ব্যস্ততা—সবকিছুই যেন তাদের থেকে আলাদা এক জগতে চলছিল।
রাতুল সবার আগে নিয়ে গেলো চৈতীকে একটি বোরকার দোকানে। সেখানে দাঁড়িয়ে নিজের পছন্দমতো বেশ কয়েকটি বোরকা আর হিজাব বেছে নিলো। প্রতিটা বোরকার রঙ, কাপড় আর ডিজাইন যেন চৈতীর স্বভাব আর ব্যক্তিত্বের সাথে পুরোপুরি মানানসই হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখলো।
এরপর তারা গেল কুর্তির দোকানে। রাতুলের পছন্দে কেনা হলো বিভিন্ন রঙের এবং নান্দনিক নকশার বেশ কিছু কুর্তি আর স্টাইলিশ সালোয়ার। প্রতিটা পোশাক যেন চৈতীর আরও সুন্দরভাবে প্রকাশ করে।
এরপর চুরিদারের দোকানে গিয়ে চৈতীর জন্য বাছাই করলো কয়েকটি আরামদায়ক ও ট্রেন্ডি চুরিদার। সবশেষে, এক দোকান থেকে নিলো কিছু গ্রাউন—নরম কাপড়ের, নান্দনিক ডিজাইনের।
কিছু মানানসই ওড়না কিনে শপিং শেষ করলো রাতুল। প্রতিটা জিনিস কেনার সময় তার চোখে ছিল এক অদৃশ্য যত্ন।
রাতুল চৈতীকে নিয়ে জুতার দোকানে গেলো। কিছু জুতা কিনলো । চৈতীকে সঠিক মাপের আরামদায়ক স্যান্ডেল বেছে দিলো, যাতে বাসায় থাকার সময়ও তার পা শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারে।
সবশেষে রাতুল কসমেটিক এর দোকানে গিয়ে কিছু উন্নতমানের কসমেটিকসও কিনে নিলো।
শপিং শেষে, চৈতীকে নিয়ে রাতুল যখন শপিংমল থেকে বের হওয়ার জন্য লিফটে উঠছিল, ঠিক সেই সময় একটি ছেলে হঠাৎ করে চৈতীর কোমরে হাত দিতে চেষ্টা করল। কিন্তু তার আগে, রাতুল দ্রুত এগিয়ে এসে ছেলেটির হাতটাকে শক্ত করে ধরে ফেললো। মুখে মাস্ক থাকার কারণে সেই ছেলে রাতুলকে চিনতে পারেনি।
রাতুল এক ঝটকায় ছেলেটির হাত ছাড়িয়ে নিয়ে, কিছু না ভেবেই তার নাক বরাবর শক্ত একটা ঘুষি মেরে দিলো। ছেলেটি পিছনে হেলে পড়ে গেল। রাতুলের চোখে ঝলকানি, মুখে তীব্র রাগের প্রকাশ। সে সোজা দাঁড়িয়ে, গর্জনপূর্ণ কন্ঠে বললো,
— “কার গায়ে হাত দেওয়ার এত সাহস দেখিয়েছিস? সে আমার। চৈতী ইজ মাইন।” এর ফল তুই পাবি জাস্ট রেডি থাক কথটা বলে চৈতীকে নিয়ে দ্রুত লিফটে উঠে গেলো।
রাতুল দ্রুত লিফটের দরজা বন্ধ করে দিয়ে নিচে নামতে শুরু করলো। তার চোখে তীব্র রাগ আর উত্তেজনা স্পষ্ট। চৈতী কিছু বলার আগেই রাতুল কপালে একটা চিন্তার রেখা টেনে নিলো, যেন সে ভাবছিল কীভাবে এই ঘটনার পরবর্তী ধাপটি নেয়া উচিত।
চৈতী অবাক হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল, কিছুটা সংকুচিত এবং অস্বস্তি অনুভব করছিল।
নিচে নামতে রাতুল দ্রুত চৈতীকে নিয়ে রওনা দিলো বাসার উদ্দেশ্যে।
বাসায় এসে শপিং ব্যাগগুলো রেখে রাতুল চৈতীকে একপলক তাকিয়ে বলল, “আমি কিছু জরুরি কাজ আছে, তোমার জন্য কিছু প্রয়োজন হলে কল করবে।” তারপর দ্রুত বেরিয়ে গেলো।
চৈতী কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো, তবে কোনো প্রশ্ন করল না।
রাতুল খুব স্পিডে গাড়ি স্টার্ট দিলো। ঘন্টা – দুয়েক এর মধ্যে মে পৌঁছে যায় তার গোডাউন এর। সেইখানে বাঁধা আছে শপিং থাকা সেই ছেলেটি যে চৈতীকে ছুঁতে চেয়েছিলো।
রাতুল গোডাউনের ভেতরে প্রবেশ করে একপাশের চেয়ার টেনে তুলে সেটাতে বসে পড়ল। তার চোখে এক ধরনের অপ্রতিরোধ্য রাগ ছিল, যেন কিছু একটা পরিপূর্ণতা দাবি করছিল। ছেলেটিকে সামনে দাঁড়াতে দেখে, সে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
” এই হাত দিয়ে তুই আমার চৈতীকে ছোঁয়ার সাহস দেখিয়েছিলিস না ?” মেয়ে দেখলে শরীরে জ্বালা ধরে সমস্যা নাই আজ সব জ্বালা মিটিয়ে দিবো। “চৈতী একটা সদ্য ফুটে ওঠা একটি নিষ্পাপ ফুল, যার মতো সরলতা আর মাধুর্য পৃথিবীতে বিরল। আর সেই ফুলকে কলঙ্কিত করার জন্য তুই যে দুঃসাহস দেখিয়েছিস, তার ফল তুই পাবেই।”
রাতুল গভীর রাগে বলল, “মামুন, এই মামুন, এখনই ওইটা নিয়ে আয় তো!”
রাতুলের কড়া আওয়াজে মামুন তৎক্ষণাৎ সাড়া দিলো। সে দ্রুত এক কাঁচের বোতল নিয়ে হাজির হলো, যার ভিতরে ছিলো কিছু তরল পদার্থ। বোতলের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে রাতুল সিঁটিয়ে বলল, “এটা ঠিক কোন জায়গায় কাজে লাগবে?”
কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ৭
তারপর বাঁকা হেসে মামুনের দিকে তাকিয়ে বললো,, এই মামুন এসিড টা ওর পুরুষঅঙ্গে ঢেলে দে। দেখি কেমন জ্বালা ধরে।
মামুনের পাকাপোক্ত অভিজ্ঞতা হাত সে বোতলটি নিয়ে এগিয়ে গেলো। বোতলটি এগিয়ে যেতে ছেলেটি ছটফটিয়ে ওঠে।
কিন্তু মামুন ছেলেটির ছটফটানি উপেক্ষা করে ছেলেটির সামনে গিয়ে বোতলের ঢাকনা খুলে তরল পদার্থটা তার প্যান্টের ভিতরে ঢেলে দেয়। মূহুর্তে ছেলেটি ছটফট করতে করতে চেয়ার সমেত পড়ে যায়। মুখটা বাঁধা ছিলো তাই সে আর্তনাথ করতে পারে না। কিন্তু একটা সময় সে নিস্তেজ হয়ে যায়।
