তুমি অজান্তেই বেঁধেছ হৃদয় পর্ব ১১

তুমি অজান্তেই বেঁধেছ হৃদয় পর্ব ১১
মুন্নি আক্তার প্রিয়া

সবাই মিলে অনুর ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছে। রান্নাবান্না করে দিচ্ছে। এত খাবার কোথায় নিয়ে রাখবে কে জানে! ভার্সিটির হোস্টেলে ফ্রিজ অবশ্য আছে কিন্তু সেখানে তো সবাই খাবার রাখে। আপাতত অনু কাউকে কিছু বলল না। বেশি হওয়া খাবার রুমমেটদের দিয়ে দেবে। অনু খুশি ছিল যে সে তার জেদ রাখতে পারছে আবার মন খারাপ লাগছে বাড়ির সবার কথা ভেবে। যখন দেখল মা মন খারাপ করে অনুর কাপড় গুছিয়ে দিচ্ছে, তখন মনে হয়েছিল ‘না’ করে দিক। সে যাবে না কাউকে রেখে। কিন্তু যখনই আবার রায়ান ভাইয়ের বলা কথাগুলো মনে পড়েছে তখনই আবার দুর্বল মন শক্ত হয়ে গিয়েছে। নিজের জেদ ও সিদ্ধান্তে অটল থেকেছে সে।

অনু হোস্টেলে চলে যাবে বলে সবাই আজ বাড়িতে আছে। রায়ান ভাইও। কিন্তু সে নিচে নামেনি। নিজের ঘরে ঘুমাচ্ছে। অনুর কোনো আশা নেই তার প্রতি। তবুও ভেবেছিল অন্তত চাচাতো ভাই হিসেবে হলেও বাকি সবার মতো সেও অনুকে এগিয়ে দিতে আসবে। কিন্তু নিজের এই ভাবনার প্রতি অনুর এখন হাসি পাচ্ছে। না চাইতেও আবার সে রায়ান ভাইয়ের প্রতি এক্সপেকটেশন এনে রেখেছিল! অনু অবাক হয়ে দেখল, মা, চাচিরা, চাচাতো বোনগুলো কীভাবে কাঁদছে! মনে হচ্ছে অনু হোস্টেলে নয় যেন শ্বশুরবাড়ি চলে যাচ্ছে। মেয়েদের মন আল্লাহ্ এত নরম কেন বানিয়েছেন? বাপ-চাচাদের মুখ থমথমে হয়ে আছে। চাচাতো ভাইদের মন খারাপ। কিন্তু ছেলে তো, চাইলেও কাঁদতে পারে না। অন্যদিকে অনুর দুই ভাই ভীষণ রেগে আছে। দুদিন ধরে কোনো কথা বলছে না। আজকে ওরাই অনুকে দিয়ে আসবে হোস্টেলে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

গাড়িতে ওঠার আগে অনুর কান্না পেয়ে গেল ভীষণ। রোমিও যখন ওর ওড়না কামড়ে ধরে ঘেউ ঘেউ করছিল, যেন জানতে চাচ্ছিল ওকে রেখে কোথায় যাওয়া হচ্ছে; তখন কষ্টটা যেন আরো বেশি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ছোট্ট একটা বোবা প্রাণিও অনুর অনুপস্থিতি বুঝতে পারছে, চলে যাচ্ছে বুঝতে পারছে, কষ্ট পাচ্ছে অথচ আল্লাহ্ যাকে জ্ঞান-বুদ্ধি সমস্ত কিছু দিয়ে তৈরি করেছেন সে-ই মানুষটারই কিছু বোঝার ক্ষমতা নেই! রোমিও এমনভাবে অনুর ওড়না কামড়ে ধরেছিল যে কোনোভাবেই ওকে ছাড়ানো যাচ্ছিল না। বাধ্য হয়ে ওকে সাথে নিতে হলো। আসার সময় বাবা আর ভাইদের সাথে পাঠিয়ে দেবে। গাড়ির সামনে দুই সিটে তমাল এবং আয়ান বসেছে। পেছনে আলমগীর চৌধুরী, অনু এবং ওর কোলে রোমিও। একরাশ মন খারাপ ও কষ্ট নিয়ে অনু বাড়ি ছাড়ল। জীবন যে এমন অদ্ভুত রকম হতে পারে অনুর কল্পনাতেও ছিল না।

হোস্টেলের সামনে এসে গাড়ি থামিয়েছে তমাল। হোস্টেলের মহিলা কেয়ার-টেকারকে দিয়ে অনুর সব জিনিস ভেতরে পাঠিয়ে দিলেন আলমগীর চৌধুরী। অনুর বুক ফেটে কান্না আসছে। এখানে থাকতে ইচ্ছে করছে না। বাবাকে বলতে ইচ্ছে করছে,
“আমি এখানে থাকব না, আব্বু। আমি তোমাদের সাথে বাড়িতে চলে যাব।”
অদৃশ্য এক শক্তি অনুর গলা টিপে ধরেছে। কোনো কথা বলতে পারল না সে। আলমগীর চৌধুরী মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

“সাবধানে থেকো, নিজের যত্ন নিও। আর যেকোনো দরকার হলে কল দিও।”
অনু টলমল দৃষ্টি মেলে মাথা দুলাল। আলমগীর চৌধুরীর বুক ভার হয়ে আসছে। হঠাৎ এত কান্না পাচ্ছে তার! তিনি ফোন আসার অজুহাতে ফোন কানে নিয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালেন। অনু ভাইদের কাছে গিয়ে আর কান্না আটকে রাখতে পারল না। ক্রন্দনরত কণ্ঠে বলল,
“এখনো আমার ওপর রাগ করে থাকবে?”
তমাল জড়িয়ে ধরল অনুকে। কোনো কথা বলতে পারল না। আয়ান এবার অনুকে জড়িয়ে ধরে বলল
“চল বাসায় চলে যাই, অনু? তোর এখানে থাকার দরকার নেই পাখি।”
তমাল বলল,

“থাক, জোর করিস না ওকে। কয়েকদিন থাকুক। ইচ্ছে পূরণ করুক। এরপর এসে জোর করে হলেও নিয়ে যাব।”
অনু কোনো জবাব দিল না। বাবা, ভাই ও রোমিওর থেকে বিদায় নিয়ে ভেতরে ঢুকল। রোমিও যাওয়ার সময় বারবার ঘেউঘেউ করছিল। গাড়িটা চোখের আড়াল হওয়া অবধি দরজার ভেতর দাঁড়িয়ে অনু দেখল। গার্ড এগিয়ে এসে বললেন,

“মন খারাপ কোরো না, মা। বাবা-মা ছাড়া দূরে থাকতে সবারই কষ্ট হয়। কিন্তু তবুও থাকা লাগে অনেক সময়। এখানে তোমার মতো অনেক মেয়ে আছে। প্রথম প্রথম একটু খারাপ লাগব। পরে ঠিক হইয়্যা যাইব।”
অনুর এখন আরো কান্না পাচ্ছে। গার্ড ওকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে ওপরে পাঠিয়ে দিল। নিজের রুমে এসে দেখল ওর রুমমেট খাচ্ছে। অনু ঘড়ি দেখল। সকাল ১১টা বাজে। নাস্তা করছে বোধ হয়। অনুর চোখের পাপড়ি তখনো ভিজে আছে। অনু গিয়ে নিজের বিছানায় বসল। এই হোস্টেলে যারা থাকে সবাই একই ভার্সিটির। কিন্তু এই মেয়েটাকে অনু চেনে না। চেনার কথাও নয় অবশ্য। এত বড়ো ক্যাম্পাস, এতগুলো ব্যাচ, এত স্টুডেন্টস সবাইকে তো আর চিনে রাখা সম্ভব না। অনু বসার পর দেখল মেয়েটা পেয়ারা খাচ্ছে। অনুকে দেখে মেয়েটি এগিয়ে এলো। ওর পাশে বসে বাটি এগিয়ে দিয়ে বলল,

“হাই, আমি শাপলা। নাও পেয়ারা খাও।”
অনু মলিন হাসি দিয়ে বলল,
“থ্যাঙ্কিউ, আমি এখন কিছু খাব না।”
“তোমার নাম কী?”
“অনিন্দিতা।”
“অনেক বড়ো নাম।”
“অনু বলে ডাকতে পারো।”
“ওকে। কোন ইয়ারে আছো?”
“ফার্স্ট ইয়ার, থার্ড সেমিস্টার।”
“কোন ডিপার্টমেন্ট?”
“ইংলিশ।”
শাপলা এবার জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল,
“ওপস! সরি আপু। আপনি তো আমার সিনিয়ার। আমিও ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে। কিন্তু আমি মাত্র ফার্স্ট সেমিস্টারে আছি। ভেবেছিলাম একই ব্যাচের কেউ হয়তো উঠবে। সরি আপু। কিছু মনে করবেন না।”
“ইট’স ওকে। আমাকে তুমি করেই বলতে পারো। সমস্যা নেই।”
শাপলা হেসে বলল,

“থ্যাঙ্কিউ। একটা কথা বলব?”
অনু ব্যাগ থেকে কাপড় বের করল গোছানোর জন্য। সঙ্গে শাপলাকে জবাব দিল,
“বলো।”
“তুমি কি কান্না করেছ?”
অনু থমকাল। মলিন হেসে বলল,
“কেন?”
“তোমার চোখ দেখে মনে হচ্ছে। বাড়ির জন্য মন খারাপ হচ্ছে তাই না?”
“এটাই কি স্বাভাবিক না?”
“না, সবার জন্য হয়তো না।”
“কেন?”
“আমার সাথে এমন হয়নি তো তাই। উলটো আমি খুশি হয়েছিলাম হোস্টেলে এসেই।”
অনু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কেন?”
শাপলা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,

“পুরো গল্প অন্য একদিন বলব আপু। এখন রেডি হবো। ক্লাস আছে। শুধু এটুকু বলি, আমার বাবা নেই। সৎ মা ঘরে। কেমন থাকা যায় তাহলে বলো? বড়ো একটা ভাই আছে।ভাবিকে নিয়ে ঢাকায় থাকে। ভাবিরও চোখের বি’ষ আমি। সৎ ভাই-বোনও কেউ দেখতে পারে না আমাকে। তাই আমার ভাইয়াই আমাকে হোস্টেলে এনে রেখেছে। সব খরচ ভাইয়াই দিচ্ছে ভাবিকে না জানিয়ে। ইন্টারেস্টিং না?”
অনু কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। এত কষ্টের কথাগুলো মেয়েটা এমন হেসে হেসে কী করে বলছে? শাপলা চুল বাঁধতে বাঁধতে কথাগুলো বলছিল। এবার ঘড়ি হাতে পরে বলল,
“আসি আপু।”
“শাপলা?”
“হু?”

অনু এগিয়ে গিয়ে শাপলাকে জড়িয়ে ধরল। শাপলা ভীষণ অবাক হয়েছে। অনু বলল,
“তুমি ভীষণ স্ট্রং! এমনই থেকো।”
শাপলার চোখে পানি টলমল করছে। এরকম আহ্লাদ, সান্ত্বনা, সরলতা শাপলা বহু বছর কারো থেকে পায়নি। কেউ একটু বুকে জড়িয়ে নেয়নি ওকে বাবা মা’রা যাওয়ার পর। অনু ওকে ছেড়ে দেওয়ার পর চোখে পানি দেখেও কিছু বলল না। মৃদু হেসে বলল,
“ক্লাস শেষ করে এসো। সন্ধ্যায় দেখা হচ্ছে।”

অনেকক্ষণ বিছানায় এপাশ-ওপাশ করে রায়ান নিচে নামল। রোমিওকে দেখল এক কোণায় চুপ করে বসে আছে। সাধারণত খুব লাফালাফি করে, এদিক-সেদিক হাঁটে। আজ একদম নিঝুম। কিন্তু কেন? অনুর জন্য? রায়ানের এত বিরক্ত লাগছিল সবকিছু! সে রেডি হয়ে অফিসে চলে গেল। অফিসে গিয়েও দেখল তার কিছু ভালো লাগছে না। সব জায়গায় অনুর কথা মনে পড়ছে। বারবার অনুশোচনা হচ্ছে। মনে হচ্ছে, অনুর এভাবে বাড়ি ছাড়ার পেছনে একমাত্র সে-ই দায়ী। কিন্তু সে তো আর অনুকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলেনি। শুধু বলেছিল ওর থেকে দূরে দূরে থাকতে। আর অনু কিনা! জাস্ট ভাবতে পারছেনা রায়ান কিছু। ইচ্ছে করে ওকে এমন অনুশোচনায় ফেলে গিয়েছে অনু। বেয়া’দব মেয়ে একটা!

অনু পুরোদমে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছিল। মন খারাপ হলে কেঁদে নিচ্ছিল। এরপর আবার নিজের জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছিল। সেই সঙ্গে সে খুব অদ্ভুত অদ্ভুত অজানা গল্প জানতে পারছিল। প্রতিদিন ক্লাস শেষ হওয়ার পর যখন সে বের হয় ক্যাম্পাস থেকে তখন দেখে আয়ান ওর জন্য দাঁড়িয়ে আছে। হাতে জুস, চকোলেট আরো নানান খাবার। অনুকে না দেখে নাকি ওর ভালো লাগে না তাই প্রতিদিন এসে এক পলক দেখে যায়। সন্ধ্যায় তমাল আসে। অনুকে বাইরে নিয়ে যায় খেতে। দুই ভাই-বোন কিছুক্ষণ সময় কাটায়। তমাল প্রতিবার ওকে বোঝায় বাসায় চলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু অনু যেন তখন অবুঝ হয়ে যায়। এই বিষয়ে কোনো কথাই বলে না। বেশ কয়েকদিন দিন তমাল ভাইয়ার সাথে রিয়াদ ভাইও এসেছিল অনুর সাথে দেখা করতে। সবচেয়ে অবাক করা ঘটনা ঘটেছিল অন্য একটি। একদিন অনু পড়ছিল। তখন শাপলা এসে বলল,

”আপু, আমি একটা জিনিস নোটিশ করলাম।”
অনু জানতে চাইল,
“কী?”
“একটা লোক প্রতিদিন আমাদের জানালা বরাবর দাঁড়িয়ে থাকে। বেশ কয়েকদিন ধরেই দেখছি বিষয়টা। নালিশ করব কী?”
অনু কৌতুহলবশত জানালার কাছে এসে দাঁড়াল। এতদূর থেকেও নিজের বাবাকে চিনতে কষ্ট হলো না অনুর। রাত এগারোটা বাজে আর বাবা ওর হোস্টেলের সামনে! কান্না গলায় দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। অনু জিজ্ঞেস করল,
“কতদিন ধরে নোটিশ করেছ, শাপলা?”
“আজ নিয়ে পাঁচদিন।”
“কতক্ষণ থাকে জানো?”
“তাও তো বারোটা পর্যন্ত হবে।”
অনু এবার কেঁদে ফেলল। কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“উনি আমার বাবা, শাপলা!”

শাপলা ভীষণ অবাক হলো। কাঁদতে কাঁদতেই এলোমেলো পা ফেলে অনু দুই তলা থেকে নিচে নামল। এত রাতে বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই। রাত আটটার মধ্যে সবাইকে হোস্টেলে থাকতে হয়। এরপর গেইট বন্ধ করে দেওয়া হয়। অনু গেইটের কাছে এসে চিৎকার করে ডাকল,
“আব্বু!”
আলমগীর চৌধুরী ছুটি গেলেন গেইটের কাছে। লোহার গেইটের ফাঁকা দিয়ে মেয়ের হাত ধরে বললেন,
“এত রাতে তুমি নিচে নেমেছ কেন, মা? কী হয়েছে তোমার?”
গার্ড অনুকে চিনতে পেরেছিলেন। আলমগীর চৌধুরীকেও তিনি চেনেন। তাই তিনি সেদিন গেইট খুলে দিয়েছিলেন। আলমগীর চৌধুরী মেয়েকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন। বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন, কী হয়েছে। ততক্ষণে শাপলাও নিচে নেমে এসেছিল। ওকে দেখে আলমগীর চৌধুরী জিজ্ঞেস করেছিলেন,

“তুমি শাপলা না, মা? ওর রুমমেট?”
শাপলা বলল,
“জি, আঙ্কেল।”
“ওর কী হয়েছে জানো? এভাবে কাঁদছে কেন?”
“আমি আপুকে বললাম, কিছুদিন ধরে আপনাকে দেখছি আপনি আমাদের জানালা বরাবর দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে আপু জানালা দিয়ে আপনাকে দেখতে পায়। আমি জানতাম না যে, আপনি আপুর আব্বু। পরে আপু কাঁদতে কাঁদতে নিচে নেমে এলো।”
আলমগীর চৌধুরী বললেন,

“ধুর বোকা মেয়ে! এখানে কাঁদার কী আছে?”
অনু কাঁদতে কাঁদতেই বলল,
“তুমি কেন এত রাত পর্যন্ত এখানে দাঁড়িয়ে থাকো, আব্বু?”
“কী করব? বাড়িতে গিয়ে দেখি তুমি নেই। মনটা খুব খারাপ লাগে। তাই এখানে এসে দাঁড়িয়ে থাকি। তোমায় আসতে বলি না, যদি তুমি রাগ করো প্রতিদিন আসি বলে। তাই দূর থেকে তোমায় অনুভব করি। আমার মেয়েটা মাত্র একটুখানি দূরে আমার থেকে!”
অনু বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“তুমি এভাবে আর দাঁড়িয়ে থাকবে না। প্রতিদিন আসবে তুমি। এসে আমার সঙ্গে দেখা করে যাবে। ভাইয়ারাও তো আসে। আমি কি দেখা করি না?”
আলমগীর চৌধুরী অবাক হয়ে বললেন,
“তমাল, আয়ান প্রতিদিন আসে?”
“হ্যাঁ।”

“কী ব’দ’মা’ই’শ দুটো! আর বাড়িতে এমন ভাব ধরে যে, তোমাকে সহ্যই করতে পারে না।”
অনু এবার হেসে ফেলল। বলল,
“মা, চাচিরা, আরিফা, ইতিরা আর লিলি খালাও আসে মাঝে মাঝে। চাচারাও এসেছিল কয়েকবার।”
“বাব্বাহ্! আর সবাই আমার ওপর এমন ক্ষেপে আছে যে, তোমাকেও সহ্য করতে পারে না এমন অভিনয় করে।”
“তোমার ওপর ক্ষেপে আছে কেন?”
“তোমাকে হোস্টেলে থাকার অনুমতি দিয়েছি তাই। তুমি বাড়িতে কবে যাবে, মা?”
অনু দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,
“যাব আব্বু। সময় হোক।”
অথচ অনু নিজেও জানে না যে, তার এই সময় কবে আসবে! বাড়ির সবাই অনুর সাথে দেখা করতে এসেছে। একমাত্র রায়ান ভাই ছাড়া। অনুর অবচেতন মন এবারও ভেবেছিল, রায়ান ভাই আসবে। আর রায়ান ভাই এবারও ওর ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে। প্রতিদিন রাত হয়, সকাল আসে সবকিছু এক রকমই চলে। অনু ধীরে ধীরে কেমন যেন শান্ত হয়ে গিয়েছে। জীবনের কাছে যেন আর কোনো আশা-ই নেই ওর।

বাইরে ঝুমবৃষ্টি আজ। অনেকদিন কাঠফাটা রোদের পর আজ এভাবে ঝুমবৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বাড়িতে ফিরেছে রায়ান। অনু বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তার সবকিছু যেন এলোমেলো হয়ে গেছে। বাড়িতে ফিরে এখন আর অনুকে সে দেখতে পায় না এটা তাকে কী ভীষণ বাজেভাবে পীড়া দিচ্ছে! অনুর হাসি, কাছে আসার চেষ্টা, ইনিয়েবিনিয়ে নিজের মনের ভাব প্রকাশ, বোকা বোকা চাহনী সমস্ত কিছু রায়ানকে ভেতর থেকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। অনুর অনুপস্থিতি এত বাজেভাবে ওকে ঘিরে ধরেছে যে, ও না পারছে বলতে আর না পারছে সহ্য করতে।

তুমি অজান্তেই বেঁধেছ হৃদয় পর্ব ৯

ভেজা কাপড় নিয়েই রুমে বসে বসে সিগারেট খাচ্ছিল রায়ান। অনুকে সে কোনোভাবেই মাথা থেকে বের করতে পারছে না। হঠাৎ করে সে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। ঘড়িতে সময় দেখল সন্ধ্যা ছয়টা বাজে। আধ খাওয়া সিগারেটটি ফ্লোরে ফেলে পা দিয়ে পিষে দিল। ভেজা অবস্থাতেই আবার বেরিয়ে পড়ল অনুর হোস্টেলে যাওয়ার উদ্দেশে।

তুমি অজান্তেই বেঁধেছ হৃদয় পর্ব ১২