তুমি অজান্তেই বেঁধেছ হৃদয় পর্ব ১৮
মুন্নি আক্তার প্রিয়া
অনু নিশ্চুপ। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। সে রায়ান ভাইয়ের অনেক রুড বিহেভিয়ার দেখেছে আগেও। কিন্তু এরকমটা দেখেনি। তাকে কখনোই এতটা রাগান্বিত হতে দেখেনি অনু। তাও এবার এমন একটা বিষয় নিয়ে রাগ দেখাচ্ছে, যেখানে অনুর বিন্দু পরিমাণ আগ্রহ নেই। সে স্নিগ্ধকে নিয়ে এমন কিছু ভাবা তো দূরে থাক, কল্পনাতেও আসেনি। তাকে কেনই বা অনু পছন্দ করার চেষ্টা করবে?
অনুর এমন নিরব ভূমিকা আরো বেশি মাথায় আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে রায়ান ভাইয়ের। সে দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“জবাব দে।”
অনু কিছুটা দূরে সরে গেল জোরপূর্বক। গম্ভীরকণ্ঠে বলল,
“আমি কাউকেই পছন্দ করার চেষ্টা করছি না। শুধু নিজের মতো করে থাকছি।”।
“তুই নিজের মতো থাকছিস না। আমাকে আরো বেশি করে পো’ড়া’চ্ছি’স। এত আনন্দ পাচ্ছিস আমাকে কষ্ট দিয়ে?”
“আপনি কেন আমাকে বারবার এভাবে দোষারোপ করছেন আমি বুঝতে পারছি না, রায়ান ভাই। আপনি সবসময় সবকিছু নিজের মতো করে ভেবে নেন, নিজের গায়ে মেখে নেন। আর শেষে এসে দোষ দেন আমাকে। দয়া করে এখন এসব বন্ধ করেন। সবকিছুরই একটা শেষ থাকে। আপনিও এবার সবকিছু এখানে শেষ করুন।”
রায়ান ভাই চুপ করে আছে। অনু পানির বোতলটা তুলে নিয়ে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“রুমে যাচ্ছি। কেউ দেখলে অন্য কিছু ভাববে। তখন আবার বাড়িতে আপনার রেপুটেশন নষ্ট হয়ে যাবে।”
অনু রুমে এসে দেখে শাপলা লাইট জ্বালিয়ে বসে আছে।
“একি! ঘুম ভেঙে গেল নাকি?” জিজ্ঞেস করল অনু।
শাপলা হাই তুলে বলল,
“হ্যাঁ, পাশে তোমাকে পাইনি তো তাই। কোথায় গিয়েছিলে?”
প্রশ্নটা করার সময় শাপলা মুচকি মুচকি হাসছিল। অনু অবশ্য পাত্তা দিল না। বলল,
“পানি আনতে।”
“ইশ! মিথ্যে কথা। আমি দেখেছি।”
অনু ভড়কে গিয়ে বলল,
“কী?”
“তুমি সিঁড়ির রেলিঙের পেছনে প্রেম করছিলে।”
অনু মৃদু ধমকের সুরে বলল,
“চুপ! এসব কথা কারো কানে গেলে আমি শেষ।”
“আরে চিল! আমি কাউকে কিছু বলব না। কিন্তু দুলাভাইটা কে হুম?”
“তুমি ভুল ভাবছ। আমি কোনো প্রেম করছিলাম না। কথা বলছিলাম। আর এখন এসব বাদ দাও। ঘুমিয়ে পড়ো এখন। সকালে উঠে আমরা হাঁটতে বের হবো।”
শাপলা বুঝতে পেরেছে, অনুর পেট থেকে এখন কোনো কথা বের করা যাবে না। তাই সেও বাধ্য হয়ে আবার শুয়ে পড়ল। অনু পাশফিরে শুয়ে রায়ান ভাইয়ের কথা ভাবছে। তার আচরণ হঠাৎ করে এতটা বদলে গেল কী করে? আর সে চাচ্ছেই বা কী? কখনো খুব নরম হচ্ছে কখনো বা রাগান্বিত, আবার কখনো কখনো অনুকে এড়িয়ে চলারও চেষ্টা করছে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই স্থির থাকতে পারছে না। অনু অবশ্য নিজের পরিবর্তনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। এখন আর আগের মতো কষ্ট লাগে না। অভ্যাস হয়ে গেছে।
বাড়িতে প্রথম ছেলের বিয়ে তাই বেশ ঘটা করে আয়োজন করা হয়েছে। পুরো গ্রাম দাওয়াত করা হয়েছে। ধনী-গরিব কেউই বাদ নেই। এর মাঝে কল্পনা এবং জুঁই এসে আবদার করেছে মেহেদির একটা অনুষ্ঠান করতে হবে। সাধারণত মেহেদির অনুষ্ঠান তো মেয়েদের বাড়িতে করা হয়। জুঁইয়ের ভাষ্যমতে, এই বাড়িতে মেহেদি অনুষ্ঠানের উপলক্ষ রিয়াদ ভাইয়া হলেও মেহেদি দিবে বাড়ির মেয়েরা। আর নাচ-গানেরও একটা আয়োজন করা হবে। শুধুমাত্র আত্মীয়-স্বজন এবং বাড়ির মানুষরা থাকবে এই অনুষ্ঠানে। নাতনিদের এই আবদারও মেনে নিয়েছেন দাদা। নিজেদের মনমতো নাচার জন্য একটা দিন পেয়ে কাজিনরা সবাই নাচ প্র্যাক্টিস করা শুরু করে দিয়েছে ইতোমধ্যে। ওদের জন্য উঠানের ঠিকমতো হাঁটার অবস্থা নেই। তবুও বাড়িটা দেখতে ভালো লাগছে। ওরা আছে বলেই তো পাখির মতো কিচিরমিচির করে পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখছে। এমনকি রোমিও নিজেও সবার দেখাদেখি গানের তালে তালে লাফাচ্ছিল।
ওদের নাচ প্র্যাক্টিস করার সময় লিলি খালা যাচ্ছিল পাশ দিয়ে। আয়ান তখন খালার হাত ধরে নাচতে নিয়ে গেল। লিলি খালার হাত ধরে ঘুরাচ্ছে। লিলি খালা হাসবেন নাকি বকবেন বুঝতে পারছেন না। তবে ভীষণ লজ্জা পাচ্ছেন তিনি। লিলি খালা মেকি রাগ দেখিয়ে বললেন,
“ওরে হ’ত’চ্ছা’ড়া! ছাড় আমারে।”
আয়ান বলল,
“খালা, চলো তুমি আর আমি নাচ দেই।”
“মুখ’পো’ড়া কয় কী!” ক্ষেপে বললেন লিলি খালা।
সবাই হাসছে। লিলি খালা থামার পরে তার পুরো মাথা ভনভন করে ঘুরছে। সে দ্রুত ফ্লোরে বসে পড়ল। আয়ানকে বকাবকি করতেও থামছে না সে। দাদি তখন বললেন,
“তুই আমার নাতিরে এত বকতেছিস কেন? আমার এত সুন্দর নাতি যে তোর লগে নাচছে এডা তো তোর ভাগ্য।”
লিলি খালা ভ্রুকুটি করে বললেন,
“অমন ভাগ্য আমার লাগব না। তোমার নাতির লগে নাইচা এখন পুরা পৃথিবী আমার চাইরধারে নাচতাছে।”
মেয়ে কাজিনদের সবার একসাথে একটা নাচ আছে। সবাই এতক্ষণ সেই নাচের প্র্যাক্টিস করছিল। এখন বসে রেস্ট নিচ্ছে সবাই। শাপলা নিজেও আছে এই দলে। ওরা রেস্ট নেওয়ার সময় ছেলে কাজিনরা নিজেদের মতো গান ছেড়ে উরাধুরা নাচছে। রায়ান ভাই এতক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। এবার সে নিচে নামল।
অনু চেয়ারে বসে ছেলেদের উলটা-পালটা নাচের স্টেপ দেখছে আর হাসছে।
রায়ান ভাই এসে অনুর সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“উঠে দাঁড়া।”
অনু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। রায়ান ভাই জিজ্ঞেস করল,
“উইল ইউ বি মাই ডান্স পার্টনার?”
অনুর চোখে-মুখে বিস্ময়। রায়ান ভাই নাচবে তাও আবার তার সাথে? এটাও কি বিশ্বাসযোগ্য? কিন্তু সে পুলকিত হয়ে গেল না। পূর্বের জেদ তার বজায় আছে। সে এক পলক রায়ান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
“নো!”
রায়ান ভাই চোখ-মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে অনুর দিকে। সে তার এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“উইথআউট সেয়িং অ্যা ওয়ার্ড, জাস্ট হোল্ড মাই হ্যান্ড!”
রায়ান ভাইয়ের সেই পুরনো রূপ দেখে অনু ভয়ে ভয়ে হাত এগিয়ে দিল, রায়ান ভাইয়ের হাতে। সাউন্ড বক্সে তখন বাজছিল কে.কে এর ‘হা তু হে, হা তু হে মেরে বাতো ম্যায় তু হে’ গানটি। সবাই তখন দুষ্টুমি করা বাদ দিয়ে রায়ান ভাই এবং অনুর নাচ দেখছিল। নাচ যে দুজনের পার্ফেক্টলি মিলছে ঠিক তাও নয়, কিন্তু রায়ান ভাই চেষ্টা করছে অনুর সাথে স্টেপ পার্ফেক্টভাবে মেলানোর। অনুর এক হাত ধরে ঘুরিয়ে যখন কাছে আনলো তখন ফিসফিস করে রায়ান ভাই বলল,
“মেবি আ’ম ইন লাভ উইথ ইউ, অন্দি।”
অনুর কান থেকে মনে হচ্ছে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে। চারদিক শান্ত থাকলেও তার বুকের ভেতর যেন বি’স্ফো’র’ণ ঘটে গেছে। সে সঙ্গে সঙ্গে রায়ান ভাইকে ছেড়ে দিল। চারদিকে ততক্ষণে সবার করতালির শব্দ। কাজিনদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ দুজনে। বিশেষ করে রায়ান ভাই! কারণ অনু ছোটো থেকেই খুব ভালো নাচে, এটা বাড়ির সবাই জানে। কিন্তু রায়ান ভাই আর নাচ? অসম্ভব ব্যাপার-স্যাপার! রায়ান ভাইয়ের সুন্দর কণ্ঠের গানের সাথে বাড়ির সবাই পরিচিত আছে, তবে নাচের সাথে নয়। দু-একবার অবশ্য কানে এসেছিল রায়ান ভাই নাকি কলেজ এবং ভার্সিটিতে থাকতেও বেশ কয়েকবার ডান্স করেছিল প্রোগ্রামে। কিন্তু সেগুলোর অথেনটিক কোনো প্রমাণ ছিল না। অনেক খুঁজেও সেই নাচের কোনো ভিডিয়ো পাওয়া যায়নি। রায়ান ভাইও কখনো এই বিষয়ে কথা বলতো না। কিন্তু আজ তো সবাই স্বচক্ষেই দেখতে পেল। তাও আবার এমন সফ্ট ও রোমান্টিক একটা গানে কাপল ডান্স! হাসান, আয়ান, রবিন, সূর্য, সিয়াম সবাই রায়ান ভাইকে পারছে না মাথায় তুলে ফেলতে। রায়ান ভাই লজ্জা পাওয়ার ভান ধরে বলল,
“আরেহ্ যা! হয়েছে থাম। একটু চেষ্টা করলাম আরকি।”
হাসান বলল,
“না, না ভাইয়া এসব বললে হবে না। তোমাকে আমাদের সঙ্গেও একটা নাচ দিতেই হবে।”
সিয়াম বলল,
“হ্যাঁ, ঠিক, ঠিক। কোনো বারণ শুনব না।”
রায়ান ভাই অতি আনন্দে রাজি হয়ে গেছে। আজ তার নিজেকে ভীষণ হালকা লাগছে। এতদিন ধরে মনের ভেতর কথাটি লুকিয়ে রাখতে রাখতে হাঁপিয়ে পড়েছিল। আজ অনুকে বলতে পেরে ভারমুক্ত লাগছে। স্বস্তি কাজ করছে বুকের ভেতর। এখন অনুর যা ইচ্ছে হয় অনু করুক।
মাহফুজা বলল,
“অনেক তো নাচ হলো। এবার একটা গান হয়ে যাক? রায়ান ভাই, আপনি অনেকদিন আমাদের কোনো গান শোনাননি। আজ প্লিজ একটা গান শুনিয়ে দেন।”
তমাল ভাইয়া বলল,
“হ্যাঁ, রায়ান আজ একটা গান শোনা তো।”
রায়ান ভাই মনে মনে খুশিতে গদগদ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাইরে একটু ভাব নিয়ে বলল,
“ওকে।”
এরপর সূর্যকে বলল,
“আমার রুম থেকে আমার গিটারটা নিয়ে আয় যা।”
সূর্যকে গিটার আনতে পাঠিয়ে রায়ান ভাই আড়চোখে তাকাল অনুর দিকে। থমথমে মুখে বসে আছে মেয়েটা। দেখে মনে হচ্ছে আর দুনিয়াতেই নেই। অন্য কোনো গ্রহে চলে গেছে। অনুকে এতটা অবাক করতে পেরে মনে মনে হাসছে রায়ান ভাই। তখন তো সরাসরিই মনের কথা বলে দিয়েছে, কিন্তু এখন বলবে গানের ভাষায়। উপস্থিত আর কেউ তার গানের মর্মোদ্ধার করতে না পারলেও, অনু ঠিকই পারবে তার বিশ্বাস।
সূর্য গিটার নিয়ে ফিরে এসেছে। রায়ান ভাই গিটার নিয়ে বসে বলল,
“একটা বাংলা গান বলি কী বলিস?”
জুঁই বলল,
“ভাইয়া সঙ্গীত বাংলার পুরনো গানগুলো থেকে একটা বলো।”
“আরে আমিও তো এমনটাই ভেবেছিলাম। ভাই-বোনের মনের কত মিল বাহ্! চল, আজ আমরা সবাই নস্টালজিয়া সময়ে ফিরে যাই।”
সবাই হেসে একসঙ্গে চিৎকার করে বলল,
“চলোওওওও।”
রায়ান ভাই গান শুরু করেছে,
“আই অ্যাম ইন লাভ
হ্যাঁ তোমারই,
তুমি নিজেই জানো না ।
আই অ্যাম ইন লাভ
বাড়াবাড়ি,
মানো কিনা মানো না।
তুমি আছো ধারে কাছেই
তবু হায় এ কী জ্বালাতন,
ভাবি নিজেই, কত কী যে…
আরে বেঁধে রাখি মন!
এসে দেখো বাঁধা সাঁকো
আছে মনেরই পাড়েই,
ও… নিলে নিও খেলা ছেড়ে
এলে প্রথম বারেই,
শোনো কি শোনো না!
আই অ্যাম ইন লাভ
হ্যাঁ, তোমারই,
তুমি নিজেই জানো না।”
রায়ান ভাইয়ের ধারণা মিথ্যা নয়। এই গান গাওয়ার অর্থ অনু ভালো মতোই বুঝতে পেরেছে। তবে সে চেষ্টা করছে ভাবলেশহীন থাকার। যদিও তার মুখের প্রতিক্রিয়া সে লুকোতে পারছে না এবং এটা দেখে রায়ান ভাই গান গাইতে গাইতে হাসছে।
এদিকে ওদের দুজনকে আর কেউ লক্ষ্য না করলেও শাপলা ঠিকই লক্ষ্য করছে। শুধু কথাটা অনুকে জিজ্ঞেস করার একটা সঠিক সময় খুঁজছে সে।
আজ স্নিগ্ধাদের বাড়িতে মেহেদি অনুষ্ঠান হচ্ছে। রায়ান ভাই, তমাল ভাইয়া, আয়ান সূর্য সবাই জোর করে রিয়াদ ভাইকে নিয়ে ওদের বাড়িতে যাচ্ছে। মানুষ হলুদে যায় শুনেছে সবাই, কিন্তু তাই বলে মেহেদি অনুষ্ঠানেও? মা, চাচিদের এমন অনুমতিহীন কথায় কাজিনরা সবাই দুই ফুপির কাছে আবদারের ঝুড়ি নিয়ে বসেছে। এবং বরাবরের মতোই ফুপিদের জন্য সবাই পারমিশন পেয়ে গেল। শুধু ছেলেরা নয়, বরং মেয়ে কাজিনরাও যাচ্ছে। ঐ বাড়িতে অবশ্য এখনো কেউ জানে না এটা। সারপ্রাইজ থাকবে।
সবাই মিলে যখন স্নিগ্ধাদের বাড়িতে উপস্থিত হয়েছে তখন চারপাশে হইচই শুরু হয়ে গেছে ওদের দেখে। স্নিগ্ধা লজ্জায় মুখও ঢাকতে পারছে না। কারণ ওর দুই হাত ভরা মেহেদি। সবুজ শাড়ি পরেছে। রজনীগন্ধার মালা দিয়ে বানানো কানের দুলে খুব সুন্দর লাগছিল স্নিগ্ধাকে। রিয়াদ ভাই যে এভাবে সারপ্রাইজ দিতে আসতে পারে সে কল্পনাও করেনি। আয়ান স্নিগ্ধার উদ্দেশে জিজ্ঞেস করল,
“ভাবি, সারপ্রাইজ হয়েছেন?”
স্নিগ্ধা লজ্জিত বদনে মাথা নত করে হাসছে। স্নিগ্ধ ও ওর অনেক বন্ধু এবং কাজিনরাও ছিল একপাশে। স্নিগ্ধ তখন এগিয়ে এসে বলল,
“আমার বোন তো সারপ্রাইজ হয়ে গেছে তার হবু বরকে দেখে। কিন্তু আমরা তো সারপ্রাইজ হয়ে গেলাম, এতগুলো পরির মতো সুন্দরী বেয়াইনদের দেখে।”
বিয়ে বাড়িতে এসব মজা, হাসি-ঠাট্টা খুবই সাধারণ বিষয়। কিন্তু রায়ান ভাইয়ের ভালো লাগছে না। তার শুধু মনে হচ্ছে, স্নিগ্ধ কথাটি শুধুমাত্র অনুকে উদ্দেশ্য করেই বলেছে।
স্নিগ্ধর জবাবে জুঁই বলল,
“বেয়াই, এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকলে পরে তো চোখে সমস্যা হয়ে যাবে।”
স্নিগ্ধর এক বন্ধু তখন বলল,
“তা হোক না সমস্যা! এরকম সুন্দরী বেয়াইনদের দেখে যদি চোখ নষ্ট হয় তাও স্বস্তির।”
স্নিগ্ধ ডালা থেকে একটা মেহেদি তুলে নিয়ে, এক হাত অনুর দিকে বাড়িয়ে বলল,
“আসুন বেয়াইন, মেহেদি অনুষ্ঠানে যখন এসেই পড়েছেন, তখন আজ মেহেদি দিয়ে দেই।”
এই পর্যায়ে রায়ান ভাই আর চুপ থাকতে পারল না। সে স্নিগ্ধর বাড়িয়ে রাখা হাতে নিজের হাত রেখে দুষ্টুমি করার ছলে বলল,
“সবসময় শুধু বেয়াইনরাই কেন? আমরা বেয়াইরা কী দোষ করেছি? দুষ্টু!”
উপস্থিত সবাই রায়ান ভাইয়ের কথা শুনে খ্যাঁকখ্যাঁক করে হাসছে। বিশেষ করে অনুর কাজিনরা সবাই। রায়ান ভাই যে এমনও মশকরা করতে পারে এটা ওদের ধারণার বাইরে ছিল। রিয়াদ ভাইয়ের বিয়ের উপলক্ষে রায়ান ভাইয়ের অনেকগুলো দিকই জানতে পারছে সবাই। রিয়াদ ভাই এবং অনু দুজনেই চুপ করে ছিল এতক্ষণ। কিন্তু ওরাও রায়ান ভাইয়ের ঢঙের সুরে বলা কথা শুনে মুখে হাত চেপে হাসছে এখন।
স্নিগ্ধ তখন হাসতে হাসতে বলল,
“বেয়াই, আপনাদের জন্য তো আপনাদের বেয়াইনরা আছে।”
রায়ান ভাই মোক্ষম জবাব দিয়ে বলল,
“তাহলে নিজের হাতেই নিজেদের বোনদের তুলে দিচ্ছেন আমাদের হাতে? পরে কিন্তু কোনো দায়-ভার রাখতে পারবেন না, বেয়াই।”
নিজের কথার ফাঁদে নিজেই আটকে গেছে স্নিগ্ধ। সে হেসে বলল,
“তবে আজ নতুন ইতিহাস রচিত হোক। আমরা বেয়াইরা মিলে মেহেদি উৎসব করি।”
সবাই একে-অপরকে মেহেদি দিয়ে দেওয়ার জন্য সারিবদ্ধভাবে বসে পড়েছে। একজন ফুল এঁকে দিচ্ছে, আরেকজন গোরু আঁকছে, হাঁস-মুরগি, ছাগল কোনো কিছুই বাদ রাখছে না কেউ। রায়ান ভাইয়ের এক হাতে হাঁস এঁকে দিয়েছে স্নিগ্ধ। রায়ান ভাই আবার স্নিগ্ধর হাতে এঁকে দিয়েছে ছাগল। এমন বিরল মেহেদি উৎসব ইতোপূর্বে কোনো বিয়েতে হয়েছে কিনা সন্দেহ!
তুমি অজান্তেই বেঁধেছ হৃদয় পর্ব ১৭
রায়ান ভাই হাত ধুতে যাওয়ার সময় অনুর সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। অনু তখন সবার মেহেদি দেওয়ার কাণ্ড দেখে জোরে জোরে হাসছে। রায়ান ভাই অনুর সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল। অনুরও হাসি বন্ধ হয়ে গেছে। রায়ান ভাই অগ্নিদৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে রইল কয়েক সেকেন্ড। এরপর ডান হাতের মধ্যমাঙ্গুলি এবং শাহাদাৎ আঙুল দুটো তুলে নিজের দুই চোখের দিকে তাক করে পরক্ষণে অনুর দিকে তাক করল। এরপর চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“আই ডোন্ট লাইক ইট হোয়েন ইউ লাফ্ ফর আদার গাইস। বিকজ ইউ আর জাস্ট মাইন!”