তুমি অজান্তেই বেঁধেছ হৃদয় পর্ব ২০

তুমি অজান্তেই বেঁধেছ হৃদয় পর্ব ২০
মুন্নি আক্তার প্রিয়া

রায়ান ভাই অনুর থমথমে মুখ দেখে মুখ টিপে হাসছে। পরক্ষণে অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“চল।”
অনু কোনো জবাব দিতে পারল না। কেবল পাথরের মূর্তির মতো রায়ান ভাইকে অনুসরণ করে বিয়ের অনুষ্ঠানে গেল। সেই রাতে অনুর ঠিক করে ঘুমও এলো না। সারা রাত অস্বস্তি লেগেছে। রায়ান ভাইটা এমন হয়ে গেল কী করে? মনে হচ্ছে, অনুর থেকে তার নিজের ভালোবাসাটাই বেশি। দূরত্ব কি এভাবেও ভালোবাসা সৃষ্টি করতে পারে?
সারা রাত ঘুম হয়নি বলে সকালে ঘুমও ভাঙল সবার পরে। তাও শাপলা আর জুঁই টেনে তুলেছে। লিলি খালা কড়া করে কফি বানিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। গোসল করে কফিটা খাওয়ার পর শরীর এবং মন দুটোই হালকা লাগছিল। ঝরঝরে মন নিয়ে সাজতে বসে যখন আয়নায় নিজেকে দেখল তখনই আবার গতকাল রাতের ঘটনা মনে পড়ে গেল অনুর। লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। ব্লাশ আর লাগাতে হবে না আজ।
জুঁই চুড়ি পরতে পরতে অনুর রুমে এসে তাড়া দিয়ে বলল,

“কিরে আয়নার সামনে এমন চুপ করে বসে আছিস কেন? জলদি রেডি হ। আব্বু আর চাচ্চুরা একটু পরই দেখবি চেঁচামেচি শুরু করে দেবে।”
অনু তড়িঘড়ি করে বলল,
“হ্যাঁ, হ্যাঁ রেডি হচ্ছি।”
মাথা থেকে যতই রায়ান ভাইয়ের চিন্তা সরাতে চাক না কেন, তা আর সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবুও জোরপূর্বক অনু সাজায় মন দিল। আজ সে মেরুন রঙের জর্জেট একটা লেহেঙ্গা পরেছে। লেহেঙ্গার স্টোনের সাথে ম্যাচিং করে দুই হাতে স্টিলের সাদা চুড়ি পরেছে। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, চোখে গাঢ় কাজল দিয়েছে এবং চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে। শাপলা মুগ্ধ হয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আপু, তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে।”
অনু লজ্জিত বদনে বলল,
“থ্যাঙ্কিউ। তোমাকেও সুন্দর লাগছে, শাপলা।”
“আরে ধুর! আমার কথা ছাড়ো। আমি তো ভাবছি তোমার বেয়াইদের কথা। তোমাকে দেখে তো আজ তাদের মাথা ঘুরে যাবে। বিশেষ করে স্নিগ্ধ ভাইয়ার।”
এ কথা বলে শাপলা হাসছে। ওর হাসির সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনুও হাসতে হাসতে দরজার দিকে তাকাল। দেখতে পেল, রায়ান ভাই দুহাত বগলদাবা করে ভ্রু কুঁচকে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করে এমন রাগ করার মানে কী? শাপলা এবং অনু দুজনেই হাসি বন্ধ করে ফাঁকা ঢোক গিলল। রায়ান ভাই কর্কশকণ্ঠে বলল,
“রেডি হওয়া শেষ? নিচে আয়। বের হবো আমরা।”
অনু মাথা নাড়িয়ে বলল,

“আসছি।”
রায়ান ভাই চলে যাওয়ার পর শাপলা মাথায় হাত দিয়ে বলল,
“সর্বনাশ! রায়ান ভাই মনে হয় শুনে ফেলেছে আমি যা বলেছি।”
“শুনলে শুনেছে, তাতে কী?”
“রাগ করেছে দেখলে না?”
“করুক। চলো আমরা নিচে যাই।”
সবাই বরযাত্রী যাওয়ার জন্য বের হয়েছে। অনেকে এর মধ্যেই গাড়িতে উঠে বসেছে। রায়ান ভাই তদারকি করছেন, কে কোন গাড়িতে বসবে। অনু এবং শাপলাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“তোরা এই গাড়িতে ওঠ।”

এরপর সে নিজেই গাড়ির পেছনের দরজা খুলে দিল। শাপলা উঠল আগে। অনু ওঠার সময় রায়ান ভাই খুব সঙ্গোপনে অনুর ওড়না টেনে ধরল। বাধ্য হয়েই অনুকে তখন দাঁড়িয়ে পড়তে হয়েছে। রায়ান ভাই সেই সুযোগে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“তোকে যেন আজ স্নিগ্ধর আশেপাশে না দেখি, মাইন্ড ইট!”
অনু ফাঁকা দৃষ্টিতে রায়ান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। সে কী বলবে বুঝতে পারছে না। রায়ান ভাই বলল,
“গাড়িতে উঠে বোস।”

এরপর নিজে বসল ড্রাইভিং সিটে। ওর পাশে বসেছে সূর্য। বাকি কাজিনরা বসেছে বরযাত্রীর সাথে অন্য গাড়িতে।
স্নিগ্ধাদের বাড়িতে যাওয়ার পর সচরাচর বিয়ে বাড়িতে যা হয়, এবারও তাই হলো। গেইট আটকে দাঁড়িয়েছে কনেপক্ষরা। শালিকাদের দাবি টাকা আদায় করা। এই নিয়ে দুই পক্ষের বেয়াই-বেয়াইনদের দুষ্টু-মিষ্টি একটা ঝগড়া হয়ে গেছে। তবে এই ঝগড়ায় অনু কিংবা রায়ান ভাই কেউই শামিল ছিল না। রায়ান ভাইয়ের ভয়েই অনুর সাহস হয়নি ওদের সাথে কোনো রকম তর্ক করার। অবশেষে একটা নির্দিষ্ট সমাধানে এসে কনেপক্ষের আবদার মিটিয়ে বরপক্ষের ভেতরে যাওয়ার সুযোগ হলো।

সবাই ভেতরে গিয়ে বসার পর নিয়ম-কানুন সেরে খেতে দেওয়া হলো সবাইকে। রায়ান ভাই, তমাল ভাইয়া, আয়ান, সূর্য ওরা খাবে রিয়াদ ভাইয়ের সাথে। বরের জন্য আলাদা আয়োজন। অনুরা বসেছে চেয়ার-টেবিলে। অনু যেখানে বসেছে সেখান থেকে রায়ান ভাইকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বেশ কয়েকবার চোখাচোখিও হলো দুজনের। রায়ান ভাইকে ভীষণ প্রফুল্ল লাগছে আজ। সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। আর অনুর সঙ্গে আই কন্টাক্ট হলেই কেমন যেন করে হাসছে। একটা দুষ্টু দুষ্টু টাইপ হাসি। নিশ্চয়ই গতকালের চুমুটার জন্য। ব’দ লোক একটা!
“কী ব্যাপার বেয়াইন, মন খারাপ?”
অনুর ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটল। সামনে তাকিয়ে দেখতে পেল স্নিগ্ধকে। গোশতের বাটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনু মৃদু হেসে বলল,

“না।”
“তাহলে এমন মনমরা হয়ে বসে আছেন কেন? আপনারা তো ভাইকে বিয়ে করাচ্ছেন। আর আমি বোন বিদায় দিচ্ছি। মন তো খারাপ করব আমরা।”
জবাবে মাহফুজা বলল,
“আপনার কষ্টে অনুও কষ্টিত তাই দুঃখ ভাগাভাগি করছে, বেয়াই।”
স্নিগ্ধ হেসে ফেলল। হেসে বলল,
“কথাটা খারাপ বলেননি বেয়াইন।”
এরপর সে অনুর প্লেটে গোশত তুলে দিল। অনু থামিয়ে বলল,
“হয়েছে, হয়েছে। আর না।”
স্নিগ্ধও জোর করে বলল,
“আরে এটুকু খেলে হবে নাকি? পেট ভরে খেতে হবে।”
“আমি এত খেতে পারব না।”
“পারবেন। না পারলে তো আমি আছিই।”

স্নিগ্ধ কথা শুনছিল না। জোর করে প্লেটে গোশত দিতে গেলে অনু বাধ্য হয়েই স্নিগ্ধর হাত ধরে থামিয়ে বলল,
“না, প্লিজ! খাবার নষ্ট হবে শুধু শুধু। নিতে পারলে আমি নিজেই নেব।”
রায়ান ভাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সব দেখছে স্টেজে বসে। তার চোখে-মুখে এখন স্পষ্ট রাগ। সেদিকে অবশ্য এই টেবিলের কারোরই মনোযোগ নেই। সবাই অনু এবং স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে আছে। ওদের টেবিলে বড়ো ফুপি এবং ছোটো ফুপিও বসেছেন। ছোটো ফুপি তখন বললেন,
“এত করে বলছে, নে না হয়।”
“আমি খেতে পারব না, ফুপি।” বলল অনু।
ফুপি বললেন,
“না পারলে আমরা আছি। তুই নে।”
ফুপির কথা শুনে অনু স্নিগ্ধর হাত ছেড়ে দিল। স্নিগ্ধ জয়ের হাসি হেসে অনুর প্লেটে গোশত তুলে দিল। বাকিদেরও খাবার সার্ভ করে সে, এদিক-ওদিক আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়ল ফের। কিছুক্ষণ বাদে আবার ফিরে এলো। ফুপিদের বলল,

“আন্টি, আরেকটু গোশত দেই? পোলাও দেবো? কী লাগবে বলুন?”
ছোটো ফুপি বললেন,
“ব্যস্ত হইও না বাবা। লাগলে বলব।”
“এখানে সব আছে। যা লাগে নিয়ে নিবেন প্লিজ। কোনো ত্রুটি হলে জানাবেন।”
ফুপির সাথে কথা বলতে বলতে স্নিগ্ধ অনুর দিকে তাকাল। এরপর ঘুরে গিয়ে দাঁড়াল অনুর কাছে। গোশতের বাটি হাতে নিয়ে বলল,
“আরেকটু নিন।”
অনু বিরক্ত হয়ে বলল,
“আবার!”
স্নিগ্ধ হেসে বলল,
“আপনি তো খাচ্ছেনই না কিছু।”
“আমি খাচ্ছি। বাকিরা খাচ্ছে কিনা দেখুন।”

“দেখেছি। আপনিই খাচ্ছেন না শুধু। প্লেটে যা গোশত তুলে দিয়ে গিয়েছিলাম, সব তো ওভাবেই পড়ে আছে।”
“আমি তো আগেই বলেছিলাম, এত খেতে পারব না।”
“আমি খাইয়ে দেই?”
অনু চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে বলল,
“না, ধন্যবাদ। আমার হাত আছে।”
স্নিগ্ধ ওর কথা শুনল না। গ্লাস থেকে পানি নিয়ে হাত ধুয়ে অনুর প্লেট থেকে গোশত তুলে নিল। বলল,
“নিন হা করুন।”
অনু মুখ ঘুরিয়ে বলল,
“কী শুরু করেছেন?”
“বেয়াইনের আপ্যায়ন করছি।”
“ধন্যবাদ। আমি খাচ্ছি। আমার হাত আছে।”

“দেখতেই পাচ্ছি আপনার হাত আছে। আমি একটু ভালোবেসে খাইয়ে দিচ্ছি, খাচ্ছেন না কেন?”
এবারও ফুপি বলার পর অনুকে স্নিগ্ধর হাতে খেতে হলো। স্নিগ্ধ একে একে সবাইকে গোশত খাইয়ে দিচ্ছিল। সেই সময়ে অনুর চোখ গেল রায়ান ভাইয়ের দিকে। গোশত চিবুচ্ছিল অনু। রায়ান ভাইয়ের অগ্নিমূর্তি ধারণ করা রাগ দেখে চাবানো বন্ধ করে রেখেছে। চোখাচোখি হলেও অনু বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারল না। চোখ নামিয়ে নিয়েছে। রায়ান ভাই বারবার করে বলেছিল, স্নিগ্ধর থেকে দূরে থাকতে। কিন্তু এটা কি সম্ভব সবসময়? সবার সামনে এভাবে একটা মানুষকে কি এড়িয়ে চলা যায় যদি নিজে থেকে সে কথা বলতে আসে? তারমধ্যে আবার ফুপিরা জোর করছিল। অনু কী-ই বা করত?

অনু আর খেতে পারল না। সুযোগ খুঁজতে লাগল রায়ান ভাইয়ের সাথে কথা বলার জন্য। কিন্তু আজ আর সে রায়ান ভাইয়ের নাগাল পায়নি। শুধু যে ব্যস্ততা ছিল, এমন নয়। রায়ান ভাই নিজেই অনুকে এড়িয়ে চলেছে। এক পর্যায়ে কথা বলতে না পেরে হাল ছেড়ে দিয়েছে অনু।
কনে বিদায়ের সময় স্নিগ্ধাকে কাঁদতে দেখে অনুরও চোখ টমলমল করছে। মেয়েদের জীবনটা কেমন অদ্ভুত! স্নিগ্ধা ওর বাবা-মা, ভাইকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে। আসার সময় অনু ওদের সাথেই এক গাড়িতে করে এসেছে। গাড়িতে উঠেও স্নিগ্ধার কান্না থামছিল না। রিয়াদ ভাইয়ার খুব খারাপ লাগছিল স্নিগ্ধাকে এভাবে কাঁদতে দেখে। সে ভরসা দিতে শুধু আলতো করে স্নিগ্ধার হাতের ওপর হাত রাখল।

বাড়িতে পৌঁছানো মাত্রই তুমুল জোরে বৃষ্টি নামা শুরু করেছে। তাই গ্রামবাসী যারা এসেছিল নতুন বউ দেখতে, তারাও চলে গেল দ্রুত করে। দিনে আসবে তারা। নিয়ম-কানুন শেষ করে স্নিগ্ধাকে রিয়াদ ভাইয়ের রুমে দিয়ে এসেছে সবাই। এরপর যে যার মতো ফ্রেশ হয়ে শুতে চলে গেছে। এমনিও আজ সবাই ভীষণ ক্লান্ত। তারওপর কাল আবার রিসিপশনের অনুষ্ঠান আছে। অনেক কাজ বাকি।
সবাই শুয়ে পড়লেও অনুর চোখে ঘুম নেই। মনটা কেমন যেন হাসফাস করছে। রায়ান ভাই কি তাকে ভুল বুঝেছে? অনু বারবার এপাশ-ওপাশ করছিল বলে শাপলা জিজ্ঞেস করল,

“আপু, তুমি কি কিছু নিয়ে চিন্তিত?”
“উঁহুম!”
“আমাকে বলো। দেখি তোমায় হেল্প করতে পারি কিনা?”
অনু অনেকক্ষণ ভেবে দুপুরের ঘটনাটি বলল। সব শুনে শাপলা বলল,
“ভাইয়াকে কল দাও। কল দিয়ে কথা বলো।”
অনু হতাশ হয়ে বলল,
“দিয়েছি। মেসেজও করেছি। রিসিভ করেনি। মেসেজেরও উত্তর দেয়নি।”
“তাহলে সরাসরি গিয়ে কথা বলো।”
“পাগল তুমি? কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে। বাড়ি ভরা আত্মীয়-স্বজন।”
“কেউ দেখবে না। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকব। কেউ আসলে ডাক দেবো তোমায়।”
অনু একটু চিন্তিত হয়ে বলল,
“থাক, কাল কথা বলব।”

“কাল তো সে আরো ব্যস্ত থাকবে। এখনই সুযোগ কথা বলার। চলো।”
শাপলা জোর করেই অনুকে বাইরে নিয়ে গেল। সব রুমের লাইট বন্ধ। আয়ানের রুমে ‘কাভি জো বাদাল’ গানটা বাজছে। বাইরেও তখন বৃষ্টি। অনুর ভয় ভয় করছে। শাপলা ইশারা করল রায়ান ভাইয়ের রুমে নক করার জন্য।
ফাঁকা ঢোক গিলে অনু দরজায় আস্তে আস্তে নক করল। চারবার নক করার পর রায়ান ভাইয়ের রুমের লাইট জ্বলে উঠল। দরজা খুলে দেখল অনুকে। তার হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। তার মানে এখনো ঘুমায়নি সে। ভ্রু কুঁচকে গম্ভীরকণ্ঠে রায়ান ভাই জানতে চাইল,
“কী চাই?”
“কথা আছে আপনার সাথে।”

রায়ান ভাই সরে ভেতরে যাওয়ার জন্য জায়গা করে দিল। অনু ভেতরে গেল। রায়ান ভাই সিগারেটে টান দিয়ে ইশারায় চেয়ার দেখিয়ে অনুকে বসতে বলল। অনু বসল না। রায়ান ভাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কয়েক সেকেন্ড সমস্যা নিয়ে বলল,
“কী সমস্যা? বসছিস না কেন?”
অনু এবার বসে পড়ল। রায়ান ভাই গিয়ে বসল বিছানায়। পা মাটিতে রেখে বিছানায় বসে, সিগারেটে টান দিল আবার। বলল,
“বল।”
অনু ভীতকণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“আপনি কি আমার ওপর রাগ করে আছেন?”

“কেন?”
“মনে হচ্ছে।”
“কেন মনে হলো তোর এমন?”
“আপনার ব্যবহারে।”
“এমন কী করেছি আমি? তোকে মেরেছি? বকেছি? কিছুই তো করিনি।”
“এড়িয়ে চলছেন।”
“তাই নাকি? এড়িয়ে চললে তো এখনো কথা বলতাম না। তোকে রুমে ঢুকতে দিতাম না।”
অনু কথা বলার খেই হারিয়ে ফেলেছে। রায়ান ভাই এমনভাবে প্রতিটা কথার জবাব দিচ্ছে যে, অনু আর কথা আগাতে পারছে না। ওকে চুপ থাকতে দেখে রায়ান ভাই বলল,
“চুপ করে আছিস কেন? কথা না বলতে এসেছিস? বল।”
অনু বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ল। থমথমে মুখে বলল,

“না, কিছু না।”
চলে যাওয়ার জন্য দরজার দিকে পা বাড়াতেই পেছন থেকে রায়ান ভাই বলল,
“স্নিগ্ধর হাতে খেয়ে পেট ভরেছিল?”
অনু থমকে দাঁড়িয়ে পেছনে তাকাল। রায়ান ভাইও উঠে আধখাওয়া সিগারেটটি ফ্লোরে ফেলে, পা দিয়ে পিষে দিল। ফের বলল,
“বল?”
অনু নিস্তেজ কণ্ঠে বলল,
“আমি খেতে চাইনি। ফুপি…”

কথা সম্পূর্ণ করার পূর্বেই রায়ান ভাই এগিয়ে গিয়ে অনুর কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“তাহলে খেলি কেন? বল কেন খেলি? ফুপি বললেই তোর খেতে হবে অন্য কারো হাতে? তুই তো ওর হাতও ধরেছিলি। খাবার নিবি না এটা মুখে বলা যায় না? হাত ধরে আটকাতে হয়? ভুল করে না হয় তোকে একবার কষ্ট দিয়েই ফেলেছিলাম। উলটা-পালটা অনেক কিছুই তোকে বলেছিলাম। পরে তো আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। সরিও বলেছি। এরপরও তুই আমাকে দিনের পর দিন ইগনোর করে কষ্ট দিয়েছিস, এখনো দিচ্ছিস। আমি তোর দেওয়া এই নিরব কষ্ট নিরবেই মেনে নিচ্ছিলাম। কিন্তু তোর তো তাতেও মন ভরছে না। তোর আরো কষ্ট দেওয়া চাই। তাই নতুন করে ছক কষেছিস। স্নিগ্ধর সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছিস, যাতে করে আমি তিলে তিলে ম’রে যাই। খুব আনন্দ পাচ্ছিস না এসব করে? কর। করতে থাক। স্নিগ্ধকে বিয়ে করার কথাও কি ভাবছিস? করতে পারিস। যা ওকে বিয়েও কর। কিচ্ছু বলব না আমি। অল দ্য বেস্ট। তোর বিয়েতে কংরাচুলেশন জানাবো তোকে। খুশি এবার?”

তুমি অজান্তেই বেঁধেছ হৃদয় পর্ব ১৯

কথাগুলো বলে রাগে কাঁপতে কাঁপতে অনুকে ছেড়ে দিল রায়ান ভাই। রুমে পায়চারি করতে করতে চুলে হাত বুলাচ্ছে সে। পায়চারি থামিয়ে অনুর দিকে তাকিয়ে দেখল, ওর চোখে পানি টলমল করছে। রায়ান ভাই বলল,
“কথা শেষ? যা ঘরে যা এখন।”
অনুও তবুও ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। রায়ান ভাই বলল,
“দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা।”
অনু এবার দৌঁড়ে গিয়ে পায়চারিরত অবস্থাতেই রায়ান ভাইকে জড়িয়ে ধরল। রায়ান ভাই থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছে।

তুমি অজান্তেই বেঁধেছ হৃদয় পর্ব ২১

2 COMMENTS

Comments are closed.