ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৪৩

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৪৩
মাহিরা ইসলাম মাহী

জাওয়াদ ফিসফিস করে বলল,
“ একটু ছুঁয়ে দেই লিটল বার্ড?”
অদিতি কেঁপে উঠে।
জাওয়াদ তার হাত মুঠো করে শক্ত করে ধরে, রমণীর হুঁশ আসে।
ছুটানোর তাগিদে মোচড়ামুচড়ি করে।

“ লাভ নেই।আমি না চাইলে এ বাঁধন ছুটবে না যে লিটল বার্ড।”
“ আপনি নিজেও নিজ অনুভূতি আমায় জানান নি কিন্তু ।”
“ এই যে জানানোর তাগিদেই যে এখানে আসা।”
“ মিথ্যা।”
“ সত্যি। “
“ ছুঁয়ে বুঝাই?”
“নাআআ।”
জাওয়াদ পুনরায় ফিসফিস করে বলল,
“ একটুখানি ছুঁই? একটু?”
আদিতি মাথা নাড়ায়,
“ উঁহু। “
“ একটুখানি?”
“ নাআআআ প্লিজ।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

জাওয়াদ হাল ছাড়ে শক্ত হাতের মুঠো আলগা করে দেয়।
“ তবে তাই হোক। তুমি যদি না চাও তবে আমি ফিরে যাবো খালি হাতে।
শুধু মনে রেখ মাই লিটল বার্ড এই মুহুর্ত এই দিনটি পরবর্তী হয়তো কখনো না ওও আসতে পারে।”
জাওয়াদ অদিতির হাত ছাড়িয়ে উঠে বেরিয়ে যেতে নেয়।
“ নাআ প্লিজ, শুনুন জাওয়াদ?”
পিছু থেকে অদিতি জাওয়াদের বাম হাত আঁকড়ে ধরে।
জাওয়াদের ঠোঁটে দুষ্টু হাসির ঝিলিক খেলে।
“জাওরা বললে নাকি ঠিক শুনতে পেলাম না।আবার বলো তো মাই লিটল বার্ড?
অদিতি ভীষণ লজ্জা পায়। একবারে পেয়ারা গাছের মগডাল হতে ভরা মজলিসে ঠাস করে নিচে পরে হাত পা ভেঙে ঘরে বসে থাকার ন্যায় মারাত্মক লজ্জা।

হুঁশ হারিয়ে সেই মুহুর্তে বান্ধবী’র মুখের সম্মোধন সে বাহিরে উগলে দিয়েছে।
এখন মাটি ফাঁক করে তার ভেতরে ঢুকে পরে বসে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে ইশশ।এত লজ্জা কেন।ইশশ।
থতমত স্বরে সে সুধায়,
“কিচ্ছু বলিনি।”
“ সত্যি বলোনি? আমি তো শুনতে পেলাম কিছু বললে? আচ্ছা তবে যাচ্ছি?”
“ না বলতাম তো।”
জাওয়া পিছু ঘুরে গভীর দৃষ্টিতে চায় তার ছোট্ট পাখিটার পানে,
“ তবে কি চাইছো? বিয়েও করবে না, যেতেও দেবে না কোনটা চাও হে ছলনাময়ী রমণী?”
অদিতি মুখখানা চুপসে গেল।চোখে মুখে ফুটে উঠলো স্পষ্ট রাগ।
রাগত কন্ঠে সে বলল,

“ আমি এখনো সব কিছুতে ক্লিয়ার নই।শুনতে পেয়েছেন?”
“সবটা তো শুনলে মাই লাভ, তবে?”
“ আমি আপনার মুখ থেকে সবটা শুনতে চাই জাওয়াদ।”
জাওয়াদ হতাশ শ্বাস ছেড়ে বলল,
“ বলো তবে কি জানতে চাও?”
“ এভরিথিং? বলুন জাওয়াদ?”
জাওয়াদ পুনরায় এগুলো
অদিতির দিকে ঝুঁকলো।ফিসফিস করে বলল,
“ আমার নামখানা তোমার মুখে উচ্চারিত হতে শুনে আমি ধন্য মাই লাভ।বিলিভ মি ভীষণ ভালো লাগছে শুনতে।”
অদিতি লজ্জাবতী গাছের ন্যায় নুয়ে যায়।
“ বাজে কথা, আসল কথা বলুন।”
লজ্জা রাঙা মুখশ্রী ঢাকতে বৃথা প্রচেষ্টা তার।
জাওয়াদ আরো খানিকটা এগোয়।প্রেয়সীর হাত শক্ত মুঠো করে ধরে।
ফিসফিস করে সুধায়,।

“ ভালোবেসেও ভালোবাসি না বলা দু’জন মানব মানবী কে এক করতে আমার এই অভিযান মাই লাভ।
জানো তো দু’জন লাভ বার্ড এর মাঝে তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি কাজ করে আগুনে উত্তপ্ত সাপের বিষাক্ত বিষের ন্যায়। তা যদি কোনো ভাবে তাদের টাস করে তারা মুহুর্তে ছ্যাত করে উঠে।আমার দ্বায়িত্ব ছিল শুধু সেটুকুই।আমার দ্বায়িত্ব আমি পালন করেছি।দ্যাটস ইট।”
“ তবে যে ভার্সিটিতে আপনাদের দুজনের বিয়ের খবর?”
“ সব মিথ্যা, বানোয়াট। আর কিছু?”
“ সত্যি? “
“ গড প্রমিস।এরপরও বিশ্বাস না হলে আমায় মেরে ফেল। ছুরি দেব মাই লাভ।নাকি তোমার ধারালো নখ গুলোই ব্যবহার করবে?”
অদিতি চোখ মুখ কুঁচকে চায়।
“ মানুষটা কি এই মুহুর্তে একটু বেশি কথা বলছে না?”
অদিতি সামান্য পিছু হটতেই জাওয়াদ হ্যাঁচকা টানে সেই দুরুত্বটুকু ঘুচিয়ে নেয়।
“ হেই ছলনাময়ী রমণী বিয়ে করবে কি আমায়।জবাব দাও নয়তো প্রাণ নাও।”
অদিতি বিস্মিত দৃষ্টিতে চোখ বড় বড় করে চেয়ে ।
এমন আকুতি,অনুরক্তি যে সে জীবনে কারো থেকে আশা করেনি।কারো থেকে না। কি জবাব দেবে সে এর?
আদৌতে এমন আকুতি ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব তার পক্ষে?

তৃপ্তির ফ্লাটের ছোটখাট্ট ড্রয়িংরুম প্রায় ফাঁকা।
গুটিকয়েক মানুষের অবস্থান সেথায়।
এই যেমন নিস্তব্ধ, সুজন, মাহীন, আদ্রিত বেরিয়েছে বাহিরে।
তাসফি, আশা রহিমা খালার সঙ্গে গপ্প জমাতে ব্যস্ত।
ভদ্রসভ্য কাজী সাহেব বসে বসে মিষ্টি খেতে ব্যস্ত।
সৃজন তৃপ্তি কে বোঝাতে ব্যস্ত।
তৃপ্তি’র একটাই কথা তার মেয়ে যা চাইবে তাই হবে।
“ আমার দ্বারা কিছু করা সম্ভব নয় সৃজন।মেয়ে আমার কলিজা।কলিজা যে সিদ্ধান্ত নেবে তাই সই।”
নাওমী, কাশফি, মাহরিসা জানালার ধারে দাঁড়িয়ে নিচে দাঁড়িয়ে থাকা তার বাপ- চাচা দের সিগারেট খাওয়ার দৃশ্য অবলোকন করছে আর মিটি মিটি হাসছে।
নাওমী মাহরিসার কানে কানে ফিসফিস করে বলল,

“ তোমার ডেঞ্জারাস বর যে ধূমপান করতেও জানে।তার বাপের সঙ্গে? ভীষণ ডেঞ্জারাস ভীষণ মানে ভীষণ। “
“ নাওমী।”
মাহরিসা করুণ চোখে চায়।
নাওমী শব্দ করে হাসে।
কাশফি অবাক কন্ঠে বলে,
“ তোমরা কি নিয়ে কথা বলছো বলোতো মারু আপু?”
একা একা সোফায় বসে ফোন স্ক্রল করতে থাকা নীবিড় নাওমী সে হাসি চেয়ে দেখে আঁড় চোখে।
মেয়েটার এত হাসি আসে কোথা থেকে আশ্চর্য।
রহিমা খালা কোথাও থেকে দৌঁড়ে এসে নীবিড়ের পাশে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল,

“ কাকে দেখেন গো আব্বাজান।কাউকে দেখে পছন্দ টছন্দ হয় নাকি আব্বাজান?”
নীবিড় চমকে তাকায়।
থতমত ভঙ্গিতে চেয়ে সে রহিমা খালা’র পানে।
রহিমা খালা তার সে চাউনিতে দাঁত কেঁলিয়ে হাসে।
আদ্রিতের হাতে জলন্ত সিগারেট, মাত্র ধরিয়েছে সে।নিস্তব্ধ’র হাতেও তাই। তারটা নিভু নিভু শেষ প্রায়।শেষ টানটুকু দিয়ে জলন্ত সিগারেট পায়ে পিষে আঁড় চোখে চায় সে ছেলের পানে।
তীর্যক কন্ঠে সুধায়,

“ ইদানীং সিগারেট খাওয়া ধরেছ নাকি? বেশ!বেশ।চমৎকার। “
“ বাপ খেতে পারলে ছেলের খেতে দোষ কোথায় বলুন?”
নিস্তব্ধ মিষ্টি করে হাসে।
“ বাপ যে হই শিকার তো করলে?”
“ শিকার না করে উপায় কোথায়।একই রক্ত যে বৈছে শরীরে তা ঘুচাই কেমনে বলুন?”
নিস্তব্ধ তীর্যক হেসে বলল,
“ সে তুমি চাইলেও পারবে না।”
“ আপনাকে কে বলল আমি চাইছি? আমি তো চাই এই ট্যাগ টুকু থাকুক আজীবন।”
নিস্তব্ধ চমকে চাইলো ছেলের পানে।ছেলে তবে এখনও ভালো বাসে বাবা কে?
তার চোখ ভিজে এলো।
অথচ যে বললো সে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে সিগারেটের শেষ টানটুকু দিতে ব্যস্ত।
সুজন নিস্তব্ধ’র কানে কানে ফিসফিস করে বলল,

“ কাঁদিস না ভাই খবরদার কাঁদিস না।তোর বাপ কি তোর সামনে কাঁদতো? দেখেছিস? খবর দার এ ভুল মোটেও করিস না।
সুজন মাহীনের পেটে গুতো মেরে বলল,
“ সব সমস্যা তোর জন্য কে বলেছিলো তোকে রূপবতী মেয়ে পয়দা করতে।একটু কমলা রঙেরও তো সে হতে পারতো নাকি।
দরকার পরলে তোর চেম্বার থেকে নিয়ে দুটো বাঁকা দাঁত লাগিয়ে দিতি।তবে মোর বন্ধুর ছেলেটা অন্তত রক্ষে পেত তোর ছলচাতুরী বুদ্ধির হাত থেকে। “
মাহীন করুণ চোখে চায় বন্ধুদের পানে।
এখন যত দোষ নন্দঘোষ তাইনা? হাহ।
ইহজীবনে প্যারা নামক অদৃশ্য বস্তটা বোধহয় পিছু ছাড়বে না।উহু কিছুতেই না।প্রশ্নই উঠে না ছাড়ার।

তারপরে আসা যাক সাদাফ আর নিস্তব্ধতা’র কাছে।
নিস্তব্ধ বাবার আদেশে দুজনে দাঁড়িয়ে তৃপ্তির রুমের বেলকনিতে।
সাদফ ফ্যালফ্যাল করে শুধু দেখতেই ব্যস্ত তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নীল শাড়ী পরিহিত অপসরি কে।
নিস্তব্ধতা অগ্নি চোখে চেয়ে বলল,
“ তুই কি মুখ খলবি নাকি ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলবো? কোনটা?”
সাদাফ সে কথা শোনার পর্যায়ে নেই। বরং ফিসফিস করে বলল,
“ নীরুরেএএএএ তোকে একটু জরিয়ে ধরি? আর পারছি না তো।”
নিস্তব্ধতার অনুমতির তোয়াক্কা করলো না সাদাফ। শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।
বক্ষের ভেতর মিশিয়ে নেওয়ার পায়তারা। “
নিস্তব্ধতা’র বুকে কাঁপন ধরে।
ফিসফিস করে বলল,

“ তুই জানিস তোকে ঠিক তালগাছের পেত্নীর মতো দেখতে লাগছে? তালগাছের পেত্নী হয়েই বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছিস।তেঁতুল গাছের শাঁকচুন্নি হলে তো আমার মরণ নিশ্চিত।আমি যে মরতে চাইনা। আমার মরণ হলে তোর কি হবে? তোকে তো ওই জাওরা ব্যাডায় তুলে নিয়ে যাবে।”
নিস্তব্ধতা সাদাফের পিঠে কিল বসায়।
“ আমি পেত্নী হলে তুই কি? প্রেত্নাত্না? তুই মরেই যা ছাড় আমায় অসভ্য। “
“ ছাঁড়বো না। নীরুরেএএ তোকে একটা চুমু খাই? গালে? না না গালে না ঠোঁটে? বহুদিনের সাধ আমার তোর ওই টকটকে লালরঙা ঠোঁটে চুমু খাবো।তুই রক্তলাল দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে থাকবি।”

“ খবরদার না সাদাফ।তোকে আমি খুন করবো।”
“ কর না।খুন হতেই তো এসেছি।আর পারছি না।একটু দয়া কর।”
সাদাফ নিস্তব্ধতার গলায় মুখ গুজলো।
নিস্তব্ধতা পৃথিবীর সবথেকে নিষ্ঠুরতম কাজটুকু করলো নিঃশব্দে।
নিজেকে ছাড়িয়ে সাদাফকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌঁড়ে বেরিয়ে গেল নীল রঙা শাড়িতে এলো চুলের মেয়েটা।
“ এভাবে কষ্ট দিস মা আমায় নীরু ধর্মে সইবে না।
মাফ পাবি না তুই।”
নিকুচি করেছে তোর মাফের।তোর মাফের গুল্লি মারি।

ভদ্র সভ্য কাজী সাহেবের খাবার খাওয়ায় ব্যাঘাত ঘটায় সে একটু বিরক্তই বটে।
তবে এটা ভেবেই খুশি হয় যে অবশেষে যার বিবাহ সম্পূর্ণ করতে এসেছিল তার বিয়ে তো সম্পূর্ণ হচ্ছে। এতেই খুশি সে।
অদিতি জাওয়াদের পাশে সোফায় গম্ভীর মুখে বসে।জাওয়াদের চোখে মুখে তৃপ্তি’র হাসি।

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৪২

তাকে কবুল বলতে বলা হয়।
চোখের পলকে তিন কবুল বলে ক্ষান্ত হয় সে।
এরপর আসে অদিতির পালা।
জাওয়াদের অতিথি পাখিকে কবুল বলতে বলা হয়।

ধূসর রংধনু ৩ পর্ব ৪৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here