প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১৩
মারশিয়া জাহান মেঘ
আঁধারীনি নিজের রুমে বসে আছে মন খারাপ করে। শায়ান অনেক বলেছিল, চলো একটু বাইরে যাই, তোমার ভালো লাগবে। কিন্তু, আঁধারীনি যায়নি। তার মনের অসুখ না সারলে ভালো লাগবে কেমন করে? তখনি দরজা খো’লার শব্দ হলো। আঁধারীনি তাকালো সেইদিকে। ধ্রুবকে আসতে দেখে বিছানা থেকে নামলো। তারপর পাশ কা’টি’য়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই, ধ্রুব হাত ধ’রে ফেলে আঁধারীনির। বললো,
“কোথায় যাচ্ছিস?”
“শায়ান ভাইয়ার কাছে।”
ধ্রুবের মে’জা’জটা দ্বিগুণ উগ্র হয়ে গেল। দাঁতে দাঁত চে’পে বললো,
”আমাকে জ্বা’লা’তে আসিস না আঁধার, যেই অনলে আমাকে জ্বালাবি, সেই অনলেই তোকে জ্বালিয়ে আমি দ্বিগুণ ক’ষ্ট দিব।”
স্মিতা আর ধ্রুবকে একসাথে দেখে ভেতরে ভেরতে জ্ব’লে যাচ্ছে আঁধারীনি। স্মিতা মেয়েটা ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। তাই আঁধার নিজেও শায়ানের হাত শ’ক্ত করে ধ’রে বসলো। ধ্রুব তাকালো সেইদিকে। আঁধারীনি দেখিয়ে দেখিয়ে স্মিতাকে বললো,
“সম্পর্ক কয় বছরের তোমাদের?”
স্মিতা মেয়েটা বোধহয় প্রশ্নটা শুনে সন্তুষ্ট নয়। সে বললো,
“৫ বছরের।”
অবাক হলো আঁধারীনি। এতদিনের সম্পর্ক অথচ সে টেরই পায়নি! ধ্রুবও দারুণ নাটক জানেতো। সে এমন হাবভাবে চলেছে যেন, গার্লফ্রেন্ড নেই তার। আঁধারীনি খোঁ’চা মে’রে বললো,
“ধ্রুব ভাই, কয়টা মেয়েকে তোমার ভালো লাগে বলোতো?”
“তোকেওতো আমার ভালো লাগে, তাই বলে তুই কি আমার গার্লফ্রেন্ড হয়ে যাবি?”
“হতেওতো পারি, মানুষের মনইতো তাই না?”
কাশি পেলো ধ্রুবের। স্মিতা পা’নি এগিয়ে দিয়ে বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“এই মেয়ে, কোন সময় কোন কথা বলতে হয়, তা তুমি জানো না?”
আঁধারীনি দু কাঁধ উঁচিয়ে বললো,
“কি আশ্চর্য! আমি আবার কি বললাম?”
ধ্রুব স্মিতাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
“তুই বোন, বোনের মতো থাক আঁধার। এত কথা বলিস কেন?”
কথাটি গায়ে লাগলো আঁধারীনির। সে জবাবে বললো,
“আমি আপনার কোন জন্মের বোন? কাজিন আপন বোন কখনোই হতে পারে না।”
“তাহলে?”
“বউ হতে পারে, বউ।”
শায়ান অবাক হয়ে শুনছে আঁধারীনির কথা। শায়ান বললো,
“এইসব বাদ দাও আঁধারীনি, খেয়ে নাও। রাতে পা’র্টি আছে সবাই বের হব।”
“জানিতো শায়ান ভাই, ওই জন্যইতো পার্টির আগে মিঙ্গেল হয়ে গেলেন আমাদের ধ্রুব ভাই।”
“তো কি? সিঙ্গেল থাকব? তুই নিজেওতো মিঙ্গেল।”
আঁধারীনি ধ্রুবকে জ্ব’লা’নোর জন্য বললো,
“এখনো হইনি, আপনার কথা শুনে এইবার হতে হবে। শায়ান ভাইয়া, খেয়ে নিন জলদি।”
কথা বাড়ালো না ধ্রুব। নেহাৎ সবাই এইখানে আছে, তাই বেঁচে গেছে এই মেয়ে। আজকাল বেশ কথা বলতে শিখেছে মেয়েটা।
চারিদিকে আলো ঝলমলে করছে। সবার হাতেই জুস, ড্রিং কস। আঁধারীনি শায়ানের হাত ধ’রে হাঁটছে। ধ্রুব হাঁটছে স্মিতার হাত ধরে। পাশে ভিন্ন মানুষ থাকলেও, দুজনার দৃষ্টি দুজনার দিকেই। আঁধারীনির বিরক্ত লাগছে এই লুকোচুরি লুকোচুরি খেলা খেলতে। ধ্রুবকে জেলাস করাতে গিয়ে, সে নিজেই সেই জেলাসী ফিল করছে। স্মিতা পড়তে যাচ্ছিলো, ধ্রুব কো’ম’ড়ে হাত ধরে দাঁড়িয়ে পড়ে। আঁধার তা দেখে শায়ানের হাত ছেড়ে দেয়। ধ্রুব সাথে সাথে স্মিতাকে দাঁড় করিয়ে কো”ম’ড় ছেড়ে দেয়। ধ্রুব বললো,
“স্মিতা, দেখে চলো।”
“তুমি পাশে থাকতে, আমার চোখ দিয়ে দেখতে হবে কেন? তোমার চোখ দিয়ে দেখেই না হয় চলব।”
আঁধারীনি মিনমিনিয়ে বললো,
“এসেছে, এই যুগের সাবানা।”
ধ্রুবর কানে সেই বাক্য গেল। হাসি চা’পি’য়ে রেখে বললো,
“আঁধারীনি, আজ তোর আর শায়ানের জন্য একটা সারপ্রাইজ রেখেছি।”
আঁধারীনি চমকালো। বললো,
“কিসের সারপ্রাইজ?”
“আছে, আছে একটু পরই জানতে পারবি। আর একটু ওয়েট কর। এখন চল, ওইদিকটাই গিয়ে বসি।”
সবাই বিলাসবহুল বাড়ির বাগানটাই বসে রইলো। শুধু শায়ান, আঁধারীনি, ধ্রুব, স্মিতা নয়। আরও অনেকেই চেয়ারে বসে কথা বলছে। শায়ান আঁধারীনির দিকে তাকালো। পার্লের একটা সিম্পল নেকলেস পড়েছে আঁধারীনি। মুখের সৌন্দর্য ওই পার্লটা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। সে আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারলো না। বলেই ফেলল,
“আঁধার, আজ তোমায় অপ্সরী লাগছে।”
হাসলো আঁধারীনি। বললো,
“আপনাকেও অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে ভাইয়া।”
“আঁধারীনি, বিয়ে করবে কখন তুমি?”
হঠাৎ এই প্রশ্ন শুনে আঁধারীনি বললো,
“বিয়ের বয়স হয়নিতো শায়ান ভাইয়া।”
“বিয়ের বয়স হয়নি, প্রেমের বয়স হয়েছে?”
শব্দ করে হাসলো আঁধারীনি। সেই হাসির দিকেই তাকালো ধ্রুব। আঁধারীনির হাসি সুন্দর। আজ অন্যরকম লাগছে আঁধারীনিকে। আঁধারীনি বললো,
“আচ্ছা, আমি একটু ওদিক থেকে আসছি, দরকার আছে।”
“আমি আসি?”
“না ভাইয়া, লাগবে না। আমার সমস্যা হবে না।”
আঁধারীনি উঠে যেতেই ধ্রুব বললো,
“আমার একটা কল এসেছে, তোরা থাক, আমি আসছি।”
ধ্রুব ফোন কলের বাহানায় আঁধারীনির পেছন পেছন গেল। আঁধারীনি পেছনে কাউকে অনুভব করে পিছন ফিরে তাকালো। ধ্রুবকে দেখে বললো,
“আপনি কি করছেন আমার পেছন পেছন?”
“এই পথ দিয়ে তুই-ই যেতে পারবি? আমরা কেউ যেতে পারব না?”
“না তা কেন হবে? আপনার স্মিতাকে ছাড়া আসলেন যে?”
“ডানা দুটো বেশি উড়ছে তাই না?”
“আমিতো মেয়ে নই, পরী। ডানাতো উড়বেই তাই না?”
“জ্বীন পরী?”
“ধ্রুব ভাই…..”
প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১২
আঁধারীনি আর শায়ান পাশাপাশি বসে আছে। ধ্রুব হঠাৎ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। আঁধারীনির দিকে এক পলক তাকিয়ে শায়ানকে বললো,
“তোর হাতের ফুলটা আমায় একটু দেতো।”
“কেন!”
“দে না…”
শায়ানের হাত থেকে ফুলটা নিজেই নিয়ে নিলো ধ্রুব। হাটু গেড়ে স্মিতার সামনে বসে বললো,
“উইল ইউ ম্যারি মি স্মিতা?”