প্রেমসুধা পর্ব ৬০

প্রেমসুধা পর্ব ৬০
সাইয়্যারা খান

বাইরে তখন মৃদু মৃদু বাতাস। ঠান্ডায় জমে যাওয়ার উপক্রম। তৌসিফ কফি নিতে একটা ফুড জোনে ঢুকা মাত্রই পৌষ’র সামনে আগমন ঘটে এক নারীর। পৌষ তার চেহারা খেয়াল করে নি। হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়াতেই পৌষ চোখ তুলে তাকালো। বরাবর দাঁড়িয়ে সুন্দরী এক রমণী। কপাল কুঁচকে পৌষ সরে যেতে নিলেই নারীটি বাংলায়ই বললো,
— কেমন আছো পৌষ?
পৌষ অবাক হলো। এই ভিন দেশের মাটিতে তাকে “পৌষ” বলে কে ডাকবে? ওর অবাকতা দেখে নারীটি সামান্য হাসলো। বললো,

— অবাক হচ্ছো? হওয়ারই কথা। আমি কিন্তু তোমার সম্পর্কে আরো জানি। তুমি তৌসিফে’র ওয়াইফ আর সে তোমাকে খুবই আদর-যত্নে রাখে। তোমার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। এই আদর যত্ন কিন্তু সে আরো অনেককেই করেছে। সেসব গুরুত্বপূর্ণ না। তবে তোমার বুঝতে হবে সে কিন্তু কাজের মেয়েদেরও একই ভাবে আদর করে….ইমম। তুমি কি বুঝতে পারছো না? পৌষ আমি কিন্তু তাকে খুব করে চিনি। তার পুরুষ শরীরের ঘ্রাণ খুব কাছ থেকেই নিয়েছি আমি। হয়তো আরো কিছু নারীও নিয়েছে।
–“পিয়ু”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তৌসিফে’র কণ্ঠে আচমকা এই ডাকে দু’জন নারী একসাথে চমকালো। পিয়াসী ভাবে নি তৌসিফ এত তারাতাড়ি ফিরত আসবে কারণ কফির কাউন্টারে অনেক ভীর। তৌসিফ চোয়াল শক্ত করে এগিয়ে আসা মাত্র ই পৌষ ঠান্ডা গলায় প্রশ্ন করলো,
— আপনি বাদে আর কোন নারীর সাথে তার সম্পর্ক আছে?
পিয়াসী ঘাবড়ানো বাদ দিয়ে তৌসিফে’র দিকে তাকাতেই দেখলো তৌসিফ তাকে খেয়ে ফেলবে ঠিক ওমন ভাবেই দৃষ্টি দিয়ে রেখেছে। পিয়াসী হরবড়িয়ে বলে উঠলো,
— পুরো এলাকা জানে…
— আর তুই? তুই কি জানিস?
আচমকা পৌষ’র গলার স্বর আর সম্মোধন বদলে গেলো। আপনি থেকে সোজা তুইতে আগমন তার। পিয়াসী রাগী দৃষ্টি ফেলে বললো,

— বেয়াদব মেয়ে তোমার কত বড় আমি জানো?
— জেনে কি কাজ আমার? ভাগ এখান থেকে নাহয় চুল টেনে দুটো পটকানি দিব এখানেই ভ্যাটকি লেগে যাবি!
তৌসিফ এগিয়ে আসতে আসতেই পিয়াসী বলে উঠলো,
— কত নারী নিয়ে তৌসিফে’র বদনাম জানো? সোহা’কে নিশ্চিত চেনো….
বাকিটা শুনার অপেক্ষা পৌষ করলো না। ও হামলে পড়েছে পিয়াসীর উপর। পিয়াসীর রঙ করা চুল গুলো টেনে ধরে গালে মুখে আঁচড় কাটতে কাটতে বলতে লাগলো,
— কু’ত্তী! ** তুই চিনিস আমাকে? আমার সংসারে আগুন লাগাস! তোর চুল ছিড়ে শাক খাব আমি! শা’লী, আমার সংসারে আগুন লাগাতে চায়! তোর মুখ ভেঙে দিব আমি।

মানুষ জন জর হতে সময় লাগল না। তৌসিফ তারাতাড়ি পৌষ’কে ধরলো। পিছন থেকে ধরেও সরাতে পারছে না৷ পৌষ’র যেন শক্তি বৃদ্ধি পেলো হঠাৎ। পিয়াসী’র চুল ও ছাড়ছে না৷ তৌসিফ বহু কষ্টে ছাড়ালো। পিয়াসী’র যেন দম আটকে আসছে৷ গার্ড চলে আসা মাত্রই পিয়াসী’কে সুযোগ না দিয়ে তৌসিফ গার্ডদের বললো পিয়াসী’কে সরাতে অতঃপর পৌষ’কে নামালো। পৌষ সমান তালে বাংলা ভাষায় উচ্চতর গালি দিয়ে যাচ্ছে। তৌসিফ না পেরে ওকে নিয়ে বেরিয়ে এলো। পৌষ ঝটকা মা’রে। সরে দাঁড়ায় তৌসিফ থেকে। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে হাঁটা ধরে অচেনা রাস্তায়। রাগে মাথাটা দপদপ করছে। তৌসিফ’কে কিছু বলারও সুযোগ দিচ্ছে না ও। তৌসিফ শক্ত হাতে ধরলো এবার। নিজেও রাগ দেখিয়ে বললো,

— হয়েছে?
— কেন কষ্ট লাগলো বুঝি?
— পৌষরাত।
— এক্ষণ বাসায় যাব।
— ওকে ফাইন। হোটেলে ব্যাক করছি।
— হোটেল ফোটেল না৷ সোজা বাসায় যাব এখন। এখনই দেশে ফিরব। এই ** কেন এনেছেন? পুরাতন বউকে জ্বালাতে?
তৌসিফ ওকে টেনে গাড়িতে তুললো। রাস্তায় মানুষ দাঁড়িয়ে ওদের নাটক দেখছে। পৌষ গাড়িতে দূরত্ব রাখলো। হোটেল রুমে পৌঁছেই ও নিজের লাগেজ গোছাচ্ছে। তৌসিফ হাজার বুঝালেও বুঝ মানতে নারাজ। তৌফিক ওর বাহু ধরে নিজের কাছে টানলো। দুই বাহু চেপে ধরে বললো,

— এখানে এনেছি কারণ আমার পুরাতন বেশ কিছু বন্ধু আছে এখানে।
— ** আছে এখানে!
— পৌষরাত, মাথা ঠান্ডা করো।
— মাথা আমার ঠান্ডাই আছে। ঐ *** আমার সংসারে আগুন লাগায়। ওর কি দোষ? ইচ্ছে করে ওকে দেখাতে এখানে এসেছেন আপনি? এ্যাই ও আপনাকে ছাড়লো কেন? সোহা’র জন্য? এত এত প্রেম তাকে বলেন নি সোহা’র সাথে বোনের সম্পর্ক! ওওও সরি, বোন তো না সোহা। এরমানে কি? পুরো এলাকা কেন বলে এটা? পিয়ু কেন ডাকলেন তাকে? কেন অস্ট্রেলিয়াই আসতে হলো? কেন পরিষ্কার করেন নি সোহা কে হয় আপনার? আর পিয়াসী কেন বললো বিভিন্ন নারী? কয় বউ আপনার? নাকি বিয়ে ছাড়াই..

আর কিছু বলার আগেই পৌষ’র ডান গালে দানবীয় এক চড় পরলো। ছিটকে বিছানায় গিয়ে পরলো পৌষ। তৌসিফে’র চোখ দুটো তখন টকটকে লাল দেখাচ্ছে। রাগ তার সহজে উঠে না। উঠলে নিয়ন্ত্রণে থাকে না তৌসিফ। তার শিরা উপশিরা তখন দপদপ করে জ্বলছে। পৌষ দমে যায় নি বরং তেজি গলায় বলে,
— সত্যি গায়ে লাগলো নাকি? কি কথা বলুন। উত্তর আজ দিতেই হবে আপনাকে। তৌসিফ তালুকদারের কত নারী সঙ্গ আছে? আমার তো জানা দরকার।
তৌসিফ ওর গাল দুটো চেপে ধরে হিসহিসিয়ে শুধু বললো,
— কুকুরের পেটে ঘি হজম হয় না।
অতঃপর সে উঠে গিয়ে রুমের দরজার সবগুলো লক একটিভ করে দিলো। পৌষ ঝাঁঝালো গলায় বললো,
— এখনই দেশে যাব আমি! থাকব না এখানে।
— ব্যবস্থা করছি।
অতি ঠান্ডা অথচ হিংস্র সেই কণ্ঠস্বর।

— আপনি কোথায় ছিলেন?
সোহা’র প্রশ্নের উত্তর করে না মেহেদী। সোহা আবারও বলে উঠলো,
— কথা বলুন মেহেদী। আজ সপ্তাহ খানিক ধরে রাত কোথায় কাটান আপনি? এত টাকা কোথা থেকে আনছেন? মেহেদী আপনি কি খারাপ কোন কাজে জড়াচ্ছেন?
মেহেদী ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। গোসল করে এসেছে মাত্র। চুল গুলো মুছে খাটে বসে বললো,
— সামনের মাসেই তিন রুমের ফ্ল্যাট নিব আমরা সোহা। মিনু’কে এনে রাখব। আচ্ছা, এক কাজ করি, রাতে তো আমি বাসায় থাকি না। মিনু’কে এনে রাখো। তোমার সাথে এখানে থাকলো। সকালে বাসায় ফিরে আমি মায়ের রুমে থাকব নে।
সোহা আর সহ্য করতে পারলো না। মেহেদী’র হাতটা ধরে আতঙ্কিত গলায় বললো,

— কি বলছেন? মেহেদী! আপনি এমন ছিলেন না। আমি তো বারবার বলছি আমি শুধু আপনাকে বুঝাতে চাইছিলাম এত হিসেবি হতে নেই। খরচ তো হয়ই৷ আমার টাকা আছে। আমার সম্পদ যা আমাকে দেয়া হয়েছে তা আপনি নিন।
— কেন নিব?
— কি আজব কথা মেহেদী। বউ হই আপনার।
— আচ্ছা, তুমি সব বাবুকে দিও। আমার লাগবে না।
— বলুন রাতে কোথায় থাকেন?
— সত্যি বলছি, আরেকটা বিয়ে করি নি।

মেহেদী হাসলো। সোহা বিরক্ত হয়ে ওর হাত চেপে ধরতেই কপাল কুঁচকায় মেহেদী। সোহা তাকালো মেহেদী’র হাতের দিকে। ও তাকিয়ে রইলো। শুধু হা করে তাকিয়েই রইলো। সুন্দর একজন শিক্ষকের কলম ধরা হাতটা কাটাছিড়া হয়ে আছে। চামড়া ছিলে আছে কিছু জায়গায়। সোহা’র চোখের গরম পানির ফোঁটা পরলো মেহেদী’র ক্ষতবিক্ষত হাতে। জ্বলে উঠলো সেই হাত। সোহা তখনও দেখছে। এ কোন শিক্ষকের হাত না। এটা একটা দিনমজুরের হাত। না জানি কত কত ইট আর বস্তা টেনেছে এই হাত। সোহা কি মনে করে হঠাৎ মেহেদী’র শার্টের বোতাম গুলো খুললো।

প্রেমসুধা পর্ব ৫৯

গা থেকে শার্ট সরাতেই দেখা গেলো তার সুন্দর অপরিপক্ক কাঁধ দুটো সন্তান তুলার বদলে তুলেছে ভারী কিছু বস্তু। সোহা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো হঠাৎ। ধপ করে বসে পরলো মেহেদী’র পায়ে। মেহেদী ওকে বুকে নিতে চাইলেও পারলো না৷ সোহা আহাজারি করে উঠলো। দরজায় শাশুড়ী ধাক্কাছে কি হয়েছে জানতে। কেউ খুলে না৷ সোহা চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে শুধু বললো,
— আমি কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না। আমাকে ত্যাগ করুন মেহেদী। আপনার সুখ সব নষ্ট করে দিব আমি।

প্রেমসুধা পর্ব ৬১