প্রেমের বর্ষন গল্পের লিংক | |লেখনীতে আয়ানা আরা

প্রেমের বর্ষন পর্ব ১
লেখনীতে – আয়ানা আরা (ছদ্মনাম)

‘এক বছর আমার সাথে ভালোবাসার নাটক করে কি পেয়েছেন মিস্টার নীলাদ্র?’
চেঁচিয়ে কথাগুলো বললাম আমি। কিছু আমার অপর পাশের মানুষটার কোনো হেলদল নেই। মনে হয় আমার কথা সে কানেই নেয় নি। আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,’কাল আমি খালামনিকে আমার আর আপনার বিয়ের ব্যপারে বলবো আর আপনি এখন এই কথা বলছেন?’

নীলাদ্র চোয়াল শক্ত করে বলেন,’কিসের বিয়ে হ্যা?তোমাকে তো আমি কোনোদিন ভালোই বাসিনি। বন্ধুদের সাথে বাজী ধরে প্রেমের নাটক করেছিলাম এতোদিন। নাটক করার সময় শেষ তাই অভিনয় করাও শেষ।’
আমি উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে বলি,’বাহ মিস্টার নীলাদ্র আপনি তো অনেক বড় অভিনেতা। আপনাকে তো বাংলা সিনেমায় সাবানার সাথে নেওয়া উচিত। দুইজনকে খুব মানাবে কিন্তু।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমার কথা শুনে যে নীলাদ্র বেশ রেগে গেছে ভালোই বুঝতে পেলাম আমি। আমি মনে মনে বাকা হাসি। আমি আর কিছু বলতে যাবো তার আগেই কেউ আমাকে কষিয়ে থাপ্পড় মারে। আমি গালে হাত দিয়ে ব্যক্তিটার দিকে তাকাই। ব্যক্তিটাকে দেখে আমি অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে যাই কারণ সামনে থাকা ব্যক্তিটা আর কেউ না আমার গুনধর খালাতো ভাই ফারিশ চৌধুরী। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই সে বলে,’অনামিকা তলে তলে প্রেম করে বেড়াস?আম্মু তোকে এইসব করার জন্য কলেজ পাঠায়?’

চেঁচিয়ে কথা গুলো বললেন তিনি। আমি সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেলি। আমাকে কথা বলতে না দেখে তিনি আরো রেগে যান আমাকে টানতে টানতে গাড়ির মধ্যে নিয়ে যান। উনার এহেন কাজে আমি অনেকটাই ঘাবড়ে যাই ফারিশ ভাইয়া বরাবরই শান্ত স্বভাবের মানুষ। এতো সহজে তিনি রাগেন না। আর যখন রেগে যান তখন উনার থেকে ভয়ংকর আর কেউ হয় না। আমি কিছু বললাম না তাকে কারণ এখন কিছু বললে তিনি নির্ঘাত রেগে যাবেন আরো। কিছুক্ষন পরেই তিনি বাসার সামনে এসে গাড়ি থামান। আমাকে আবার টানতে টানতে আমার রুমে নিয়ে এসে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে খালামনিকে ডাকতে থাকেন।

আমি মেঝেতে বসে বসে নিজের ঠোঁট চেপে নিজের কান্না আটকানোর চেষ্টা করছি।
খালামনি এসে দেখেন আমি মেঝেতে পরে আছি আর ফারিশ ভাইয়া রাগে ফুঁসছেন। খালামনি ফারিশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কর্কশ গলায় বলেন,’ফারিশ অনি মেঝেতে কেনো তুই কিছু করেছিস?’
ফারিশ ভাইয়া রাগে ফুসতে ফুসতে বলেন,’তোমার ভাগ্নি তলে তলে প্রেম করে বেড়ায়। আজ থেকে ওর কলেজ যাওয়ার বন্ধ।’

খালামনি ঝাঝালো কন্ঠে বললেন,’কথা নেই বার্তা নেই হুট করেই ওর কলেজ যাওয়া কিভাবে বন্ধ করতে পারিস!আর প্রেম করে তো কি হয়েছে? আমি ওর পছন্দের মানুষের সাথেই ওর বিয়ে দিবো।’
ফারিশ ভাইয়া বাকা হেসে বলেন,’ওর সো কল্ড বয়ফ্রেন্ড তো ওকে ভালোই বাসেনি আবার বিয়ে।’
এই বলে হাসতে থাকেন। উনার কথা শুনে আমার খুব খারাপ লাগে। উনি সবসময়ই আমার সাথে এইভাবে কথা বলেন। কখনো ভালো ভাবে কথা বলেন না এর কারণ কি আমি জানি না।

খালামনি ফারিশ ভাইয়াকে ধমক দিয়ে বলেন,’এইখানে তুই অনির দোষ দেখতে পাচ্ছিস??ভালোবাসা গুনাহ না কিন্তু প্রতারণা করা অনেক গুনাহ। ছেলেটা পাপ কাজ করেছে আর তুই আমার মেয়েকে কথা শুনাচ্ছিস। শুন অনি কলেজ যাবে ওর কলেজ যাওয়া কিভাবে তুই অফ করবি আমিও দেখি।’

খালামনির কথা শুনে ফারিশ ভাইয়া রাগে ফুস ফুস করতে করতে নিজের রুমে চলে যান। ফারিশ ভাইয়া চলে যেতেই খালামনি আমার কাছে এসে আমাকে উঠিয়ে দিয়ে বিছানায় বসিয়ে বলেন,’মন খারাপ করিস না অনি। আর সবসময় মনে রাখবি প্রতারণা করে কেউ কখনো সুখি হতে পারে না। প্রকৃতি এর প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়ে।’
আমি খালামনিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে বললাম,’খালামনি আমি কি এমন করেছিলাম যে আমার আব্বু আম্মু আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন?আমার আর পাঁচটা মেয়ের মতো কেনো এইরকম জীবন নেই?’
খালামনি আমার মাথা হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেন,’কে বলেছে তোর কেউ নেই? আমি আছি ফারিশ আছে আর কি লাগে তোর?’

আমি মনে মনে বললাম,’তোমার ছেলে তো আমাকে সহ্যই করতে পারে না।’
খালামনি আমাকে ছাড়িয়ে বললেন,’আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে নে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে কাঁদতে কাঁদতে।’
আমিও সায় জানালাম। খালামনি উঠে যেতেই একটা সালওয়ার কামিজ নিয়ে শাওয়ার নিতে চলে গেলাম। বেশ কিছুক্ষন শাওয়ার নেওয়ার পর বের হই। ব্যালকনিতে চলে যাই চুল শুকাতে। আমার রুমের পাশেই ফারিশ ভাইয়ার রুম। তিনি যে এখন ব্যালকনিতে আছেন তা আমি খেয়াল করি নি।

আমি চুল শুকাচ্ছিলাম তখনই ফারিশ ভাইয়ার কন্ঠ শুনতে পাই সে বলছে,’ছেলেদের দেখাতে ব্যালকনিতে চুল শুকাতে এসেছিস তাই না?বুঝি না তোর মনে এতো ছেলে পটানোর আইডিয়া কেমনে আসে। এই এই তুই কি কলেজ বাঙ্ক করে ছেলে পটানোর কলেজে যাস।’

উনার কথা শুনে আমি মাথা নিচু করে চুপচাপ রুমে চলে গেলাম। উনার কথা শুনে প্রতিবারের মতোই কষ্ট পেলাম আমি। কেনো শুধু সে আমার সাথে এমন করে। কখনো কি ভালো ভাবে কিছু বলতে পারে না!এই কারণে বেশ রাগও হয় আমার কিন্তু শুধু মুখ বুজে সহ্য করে নেই। খালামনিকে একবার এই ব্যপারে নালিশ করাতে সে আমার কলেজে এসে আমাকে অনেক অপমান করে তার অপমান করার জন্য কিছু সিনিয়ররা আমাকে র‍্যাগিং করেন। ওইদিন থেকে আমার উনার প্রতি ঘৃণা জেগেছে। শুধুই ঘৃণা। ভাবনার মাঝেই একটা লেডিস গার্ড এসে বললেন,’ছোট ম্যাম আপনাকে বড় ম্যাম লাঞ্চ করতে ডেকেছে।’

আমি লেডিস গার্ডকে বলি,’ঠিকাছে আপু আপনি যান আমি আসছি।’
উনি চলে যেতেই আমিও নিচে চলে গেলাম। নিচে যেয়ে দেখি খালামনি খাবার বাড়ছে। আমিও খালামনিকে সাহায্য করতে চলে গেলাম। খালামনি আমাকে বললেন,’অনি ফারিশকে ডেকে আন তো। ছেলেটা প্রতিদিন খাবার অনিয়ম করে।’
খালামনির কথা শুনে আমি যেতে রাজী না হলেও চলে গেলাম।
|২|
ফারিশ ভাইয়ার রুমের সামনে আমি দাঁড়িয়ে আছি। ভিতরে যেতে ভয় লাগছে উনি যদি আবার অপমান করেন। আমি একটা হালকা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়। এই প্রথম আমি ভাইয়ার রুমে ঢুকছি নাহলে ভাইয়া তার রুমে আমাকে কখনোই ঢুকতে দিতো না। আমাকে ঢুকতে দেখে ভাইয়া চমকে যায় তড়িৎ গতিতে কিছু লুকিয়ে ফেলে। আমি ভ্রুকুচকে তাকাই উনার দিকে উনি তা দেখে আমাকে ধমক দিয়ে বলেন,’আমার রুমে কি করছিস?বলেছিলাম না আমার রুমে ঢুকবি না?কথা কি কানে যায় না তোর।’

আমি কিছু না বললাম না মাথা নিচু করে থরথর কাঁপছি। উনি নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললেন,’বল কেনো এসেছিস?’
আমি কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,’খালামনি খেতে ডেকেছে।’
তিনি কিছুটা কর্কশ গলায় বললেন,’আমি আসছি তুই যা এইখান থেকে এখন।’
আমি আর এক মিনিটও ওইখানে না থেকে দ্রুত নিচে এসে হাঁপাতে থাকলাম। আমাকে হাঁপাতে দেখে খালামনি বললেন,’কি হয়েছে অনি হাঁপাচ্ছিস কেনো?’
আমি নিজেকে সামলে দুই দিকে মাথা নাড়ালাম অর্থাৎ আমার কিছু হয় না। খালামনি বললেন,’তোর খাবার বেড়ে দিয়েছি খেয়ে নে।’

আমিও ভদ্র মেয়ের মত খালামনির কথায় খেতে চলে গেলাম। তখনই সিঁড়ি দিয়ে ফারিশ ভাইয়া নামতে নামতে এসে আমার পাশেএ চেয়ারে বসে পরেন। উনার এইভাবে আমার পাশের চেয়ারে বসাতে আমি একটু অস্বস্তিতে পরে যাই। আমাকে নড়াচড়া করতে দেখে ফারিশ ভাইয়া বিরক্তি নিয়ে বললেন,’তুই কি এইখানে খেতে আসছিস নাকি নড়াচড়া করতে আসছিস? খাওয়ার থেকে তো বেশি নড়াচড়াই করছিস।’

খালামনি ফারিশ ভাইয়াকে বকা দিয়ে বলেন,’ফারিশ!মেয়েটাকে একটু শান্তি মতো খেতে তো দে।’
ফারিশ ভাইয়া খালামনির কথা শুনে নিজের মতো খেতে থাকে। আর আমি এক রাশ অস্বস্তি নিয়ে খেতে থাকি। খাওয়া শেষে আমি নিজের রুমে চলে আসি।
কিছুক্ষন পর আমি টিভিতে কিছু একটা দেখে চিৎকার দিয়ে উঠি। রীতিমতো হাত পা কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে গেছে আমার।

প্রেমের বর্ষন পর্ব ২