ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ৮

ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ৮
তাজরীন ফাতিহা

“মা, ভাতু কাবা না?”
স্কুল থেকে এসে নিশাত মনমরা হয়ে শুয়ে ছিল। মন মেজাজ দুটোই তার খারাপ। নাহওয়ানের কথার কোনো জবাব না দিয়ে আগের মতোই শুয়ে রইলো নিশাত। নাহওয়ান নিশাতের উত্তর না পেয়ে মায়ের কোলের মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করতে লাগলো। নিশাত বিরক্ত হয়ে বললো,
“বিরক্ত কোরো না নাহওয়ান। তোমার বাবার কাছে যাও।”
কথাটা বলে আগের ভঙ্গিতে শুয়ে থাকলো সে। মারওয়ান বিড়ির টাকা খুঁজছে চিরুনি তল্লাশি করে কিন্তু কোথায় পাচ্ছে না। নিশাতের কথা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে বিছানায় চাইলো। মারওয়ান বুঝলো পরিস্থিতি গরম। তবুও কিছু করার নেই টাকা তো চাইতেই হবে। বিড়ি না খেলে মাথা ঠিক থাকে না তার। বিছানার দিকে এগোতে এগোতে মারওয়ান বললো,

“আমাকে কিছু টাকা দাও তো। পরে শোধ করে দিবো”
নিশাত কোনো প্রতিউত্তর করলো না। মারওয়ান নিশাতের কোনো রেসপন্স না পেয়ে বিছানার সামনে গিয়ে তাকে হাত দিয়ে ঠেলে বললো,
“কথা শোনো নি?”
নিশাতের নড়চড় নেই। নাহওয়ান অবুঝের মতো মা, বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। মারওয়ান নাহওয়ানকে বললো,
“বাবা তোমাকে যে খেলনা কিনে দিয়েছিলাম ওটা দিয়ে খেলো গিয়ে। আমরা একটু পর ভাত খাবো।”
বাচ্চাটা ঘাড় কাত করে নেমে অন্য রুমে চলে গেলো। মারওয়ান নিশাতের পাশে গা ঘেষে বসলো। নিশাত একেবারে শক্ত কাঠের মতো হয়ে আছে। মারওয়ানের তাই মনে হলো। নিশাতের হাত ও ব্যাক সাইড ডলে দিতে দিতে বললো,
“শোনো টাকাটা জরুরি। হাতে টাকা পেলে তোমায় দিয়ে দিবো।”
নিশাত কঠিন ভঙ্গিতে শুয়েই থাকলো। মারওয়ান বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আশ্চর্য তোর তো ভালো কথা গায়ে লাগে না রে। এতো ভালোভাবে বলছি কয়টা টাকা দে পরে তোকে দিয়ে দিবো শুনছিসই না। এমনিতে বাবার কাছে একবার চাওয়া হয়ে গেছে নাহলে তোর কাছে জীবনেও চাইতাম নাকি টাকা?”
কথাটায় কি হলো জানা নেই কিন্তু নিশাত মুখ বুঝে কেঁদে দিলো। মারওয়ান হতভম্ব হয়ে গেলো। নিশাতকে সে জীবনে এরকম করে কাঁদতে দেখেনি। কেঁদেছে হয়তবা কিন্তু তার সামনে এই প্রথম। কেমন একটা চাপা কষ্ট নিয়ে কাদঁছে মনে হচ্ছে। মারওয়ানের কেমন যেন লাগছে। যদিও লিলিপুটের কান্নায় তার কিছু যায় আসে না কিন্তু এভাবে কাঁদতে দেখে কেমন যেন করছে বুকটা। মারওয়ান উঠে চলে গেলো। যাওয়ার আগে নাহওয়ানকে মায়ের কাছে থাকতে বলে গেলো। নাহওয়ান বাবার কথা শুনে মায়ের কাছে চলে গেলো। নাহওয়ান রুমে গিয়ে মাকে ডেকে বললো,

“মা কুডা লাগচে ভাতু কাবে ককোন?”
নিশাত ছেলের কথা শুনে চোখমুখ মুছে ফেললো। উঠে মুখ ধুয়ে ছেলেকে নিয়ে ভাত খেলো। সংসারটা তার কাছে এখন তিক্ত হয়ে উঠেছে। তার সাথেই কেন ওই ভ্যাগাবনটাকে(অকর্মা) জুড়তে হলো? মাঝে মধ্যে খুবই হতাশ লাগে তার। সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে কোথাও চলে যেতে পারতো। একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করে এখনো এই সংসারটা করছে নাহলে এই সংসার দুদিনও কেউ করতো না।
বাচ্চাকে শুইয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ দোয়া, জিকির, কুরআন পাঠ করলো। নামাজ স্কুল থেকে এসেই পড়েছে। আল্লাহকে ডাকা হচ্ছে সকল সমস্যা সমাধান ও মনে প্রশান্তি আনার একমাত্র মাধ্যম। তার বান্দার মনের সকল ব্যথা তিনি নিশ্চয়ই দেখেন। তার পরিত্রাণও ওই রবই করবেন নিশাতের পূর্ণবিশ্বাস আছে এতে।

“আসসালামু আলাইকুম আংকেল।”
মাহাবুব আলমের দু’হাত ভর্তি বাজার। বাজার বলতে ঘরের টুকিটাকি জিনিস। মাছ, মাংস, শাক সবজি তেমন একটা বাজার করতে হয়না তবুও মাসে একবার আসেন বাজার করতে। হঠাৎ সালামের আওয়াজ আসায় সেদিকে ফিরলেন। চমকে গেলেন তিনি খানিকটা। ইহাব ভুঁইয়া মুচকি হেঁসে প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইহাব মাহাবুব আলমকে চমকাতে দেখে মনে মনে হাসলো। এগিয়ে এসে বললো,
“ভালো আছেন আংকেল?”
মাহাবুব আলম কোনো কথা বললেন না। ইহাব আবারও বলে উঠলো,
“আপনাকে তো তেমন দেখা যায়না আংকেল। সব কিছু ভালো তো?”
বলেই একটা রহস্যময় হাসলো। মাহাবুব আলম বললেন,
“আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ ভালো রেখেছেন।”
ইহাব প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে একটু রহস্য করে প্রশ্ন ছুড়লো,

“তাই?”
মাহাবুব আলম কপালের ঘাম মুছে বললেন,
“হ্যাঁ।”
“আরে আংকেল ঘামছেন কেন? বেশি গরম তো না। আমাকে বাজারটুকু দিন। চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।”
মাহাবুব আলম বললেন,
“প্রয়োজন নেই। আমি যেতে পারবো।”
“সেটা তো আমিও জানি আপনি পারবেন। তবুও ছেলে মনে করে দিন।”
মাহাবুব আলম চমকের উপরে আছেন। এই ছেলের হলো কি আজ? তার সাথে এতো মিষ্টি স্বরে কথা বলছে। কাহিনী তো কিছু একটা আছেই। চেয়ারম্যানের ছেলে তাকে দেখে নিজ উদ্যোগে এগিয়ে এসেছে ব্যাপারটা অদ্ভুত না? ইহাব জোর করেই বাজারের ব্যাগটা হাতে নিলো। চারপাশে অনেকে তাকিয়ে ছিল দেখে মাহাবুব আলম আর জোর জবরদস্তি করেননি। চুপচাপ প্রস্থান করলেন বাজার থেকে।

মাহাবুব আলম নিজেদের বাড়ির দরজায় টোকা দিলেন। পাশেই ইহাব বাজারের ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে। পথিমধ্যে অনেকবার মাহাবুব আলম ব্যাগ নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু ইহাব দেয়নি। মানহা দরজায় আওয়াজ শুনেই বুঝলো বাবা এসেছে। তাই মাথায় একটু ঘোমটা দিয়েই ঝড়ের গতিতে দরজা খুলতে দৌঁড়ে গেলো। উঠানের সামনে বিশাল গেট। ওটা উৎফুল্ল হয়ে খুলে বাবাকে দেখেই বলে উঠলো,
“আব্বু এতো দেরি কেন আজ? তোমার ওষুধের কথা ভুলে গিয়েছো?”

বলতে বলতেই বাবার সাথে অন্য একজন পুরুষকে দেখে মানহা পড়িমড়ি করে দৌড়ে ঘরে ঢুকে গেলো। যেহেতু সে পরিপূর্ণ পর্দা করে সেহেতু এরকম পরপুরুষের সামনে এভাবে চলে আসায় প্রচণ্ড বিব্রত হয়েছে মানহা। একজন পর্দাশীল মেয়েই জানে একজন গায়রে মাহরাম পুরুষের চাহনি তাদের কাছে ঠিক কি? গায়রে মাহরাম পুরুষের নজর এতোটাই ভয়াবহ মেয়েরা যদি তা জানতো তাহলে নিজেদেরকে লোহার কাপড়ে ঢেকে রাখতো। মানহার রীতিমত কান্না পেয়ে গেছে। সে অসংখ্যবার তওবা পড়ে ফেললো। মাহাবুব আলমও বেশ খানিকটা বিব্রত ও কষ্ট পেয়েছেন তা তার চেহারায় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। আজকে ফোন নিয়ে যাননি তিনি নাহলে ফোন করেই বলে দিতে পারতেন বাসায় অন্য একজন আসবে। ইহাবের ভীষণ মজা লাগছে এদের কাহিনী। মাহাবুব আলমকে বললেন,
“আংকেল বাজারটা কোথায় রাখতে হবে?”
“আমার হাতে দাও। আর কিছু করতে হবে না। তুমি ভিতরে এসে বসো। চা, নাস্তা কিছু খেয়ে যাবে।”
“তার প্রয়োজন নেই আংকেল। নিজের খেয়াল রাখবেন আসি।”
কথাটুকু বলে ইহাব প্রস্থান করলো। তার মুখে পরিকল্পনার একধাপ এগিয়ে যাওয়ার খুশি ঝকমক করছে। এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা।

রাত সাড়ে এগারোটা বাজে। এখনো মারওয়ান বাসায় আসেনি। সেই যে দুপুরে বেড়িয়েছে এখনো পর্যন্ত কোনো খবর নেই। সচরাচর এতো দেরি কখনোই করে না। আজ এতো দেরি করছে কেন? নাহওয়ানকে খাইয়ে নিশাত ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। বাচ্চাটা বাবার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছে কিন্তু বাবার আজকে দেখা নেই। নিশাতের বুকটা কাঁপছে অজানা ভয়ে। বারান্দায় গিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়ালো। ভালো লাগছে না। সময় চলে যাচ্ছে কিন্তু মারওয়ানের কোনো খবর নেই। এই পুরুষটা তাকে শান্তি দিবে না। নিশাত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সংসার জীবনের প্রথম অধ্যায়ের কথা ভাবতে লাগলো।

যখন মারওয়ান আজাদ নামক ছন্নছাড়া, সংসারের প্রতি উদাসীন পুরুষের সাথে তার বিয়ে হয় তখন সে ভীষণ অখুশি ছিল। তারপর তার মা যখন তাকে স্বামীর গুরুত্ব বোঝালো তখন থেকে একটু নরম হয়েছিল সে। স্বামীকে খুশি করার চেষ্টা করতো না চাইতেও। কিন্তু কথায় আছে না বেয়াদব পুরুষ কখনো ভালো কিছু নিতে পারেনা তেমনই মারওয়ান আজাদ নামক বদ পুরুষ তার এসবকে ন্যাকামি আখ্যা দিয়েছিল। নতুন বউয়ের প্রতি স্বামীর এ কি মনোভাব? রাগে জিদে বাবার বাড়ি চলে গিয়েছিল সে। একটা খোঁজ পর্যন্ত নেয়নি ওই ভাদাইম্মাটা। সে চলে যাওয়ায় নাকি আরও রিল্যাক্স মুডে নাক ডেকে ঘুমোতে পেরেছে। অবশ্য এসব সে পরে শুনেছে।
পড়াশোনাটা শ্বশুর আব্বাই তাকে করিয়েছেন। শ্বশুর আব্বার কাছে সে আজীবন কৃতজ্ঞ। এই মানুষটা তাকে যে পরিমাণ আদর, যত্ন করেছে তার ঋণ শোধ করার মতো না। একারণেই সংসার নামক এই ছিন্ন সুতোটা এখনো টিকে আছে মনে হয়। ঘাড়ত্যাড়া লোকটা জীবনেও সোজা হবার নয়।

রাত একটা বাজে। এখনো আসেনি লোকটা। নিশাত এতক্ষণ বসে বসে অতীতের স্মৃতিচারণ করছিল। নাহওয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে আছ নিশাত। কি আদুরে ভঙ্গিতে ঘুমাচ্ছে বাচ্চাটা! হাত পা ছড়িয়ে গাল ফুলিয়ে ঘুমিয়ে আছে। এ যেন অবিকল মারওয়ান আজাদ। বাবার চেহারা এতোটা পেলো কি করে বাচ্চাটা? তার চেহারাও তো একটু আধটু পেতে পারতো। নিশাত ছেলের ফুলো ফুলো গালে চুমু খেয়ে ঘুমন্ত ছেলের মুখের দিকে চেয়ে বললো,
“তোর বাপ ফোন ধরে নারে নাহওয়ান। কোথায় গেলো বলতো? এই ঘাড়ত্যাড়া বাপকে একটু সোজা করতে পারিস না তুই? বাপের ন্যাওটা হলি কেন রে? তুই আমার বুকের মানিক আব্বা? তোর বাপ আমাকে টেনশনেই মারবে। ওই আধ বুড়ো লোকটার চিন্তায় আমি এখনো ঘুমোতে পারলাম না। কোথায় আবার বিড়ি টানছে কে জানে? টাকা পয়সা তো নেই। বিড়ির নেশায় ছিনতাই টিনতাই করছে নাকি আবার?”

কথাটা একেবারে ফেলে দেয়ার মতো না। বিড়ির টানে আবার ছিনতাই করতে গেছে নাকি? নিশাত ভ্রু কুঁচকে রেখে আবারও ফোন দিলো কিন্তু এবার ফোন বন্ধ বলছে। সে চিন্তিত ভঙ্গিতে খাটে হেলান দিয়ে রইলো।
রাত দুইটার দিকে ঘরের দরজায় কড়া নাড়ায় নিশাতের ঘুম ছুটে গেলো। বসে থাকতে থাকতে ঘুম এসে গিয়েছিল। দরজায় আবারও নকের শব্দে তাড়াতাড়ি উঠে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কে?”
“আমি।”
মারওয়ানের উত্তর। নিশাত দরজা খুলে দিলো। মারওয়ান তাকে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বললো,
“এতক্ষণ লাগে দরজা খুলতে?”
নিশাত দরজা আটকে বললো,

“হ্যাঁ রাত দুটোর সময় আপনার জন্য তো জেগে থাকবো। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।”
মারওয়ানের পা হঠাৎ করেই কেন যেন থমকে গেলো। নিশাতের দিকে একটু চেয়ে আবার রুমে গিয়ে হাত, মুখ ধুলো। তারপর ছেলের পাশে আস্তে করে শুয়ে পড়লো। নিশাত তা দেখে বললো,
“কি হলো শুয়ে পড়লেন যে? ভাত খাবেন না?”
মারওয়ান জবাব দিলো না। নিশাত আস্তে করে মারওয়ানের পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
“ভাত খেয়ে ঘুমান।”
মারওয়ান চোখ বন্ধ করেই জবাব দিলো,
“আমার টেনশন কারো না করলেই চলবে। এতক্ষণ যেহেতু টেনশন না করে খেতে, ঘুমাতে পেরেছে এখনও তেমন ঘুমাক।”
নিশাত বুঝলো তাকেই ইঙ্গিত করে খোঁচা দিয়ে কথাগুলো বলেছে। আহা ঢংয়ের আলাপ! এতক্ষণ ফোন দিতে দিতে অস্থির হয়ে গেছে তার হিসেব নেই এখন এসেছে রং ঢং করতে। নিশাত বললো,

“ফোন ধরেননি কেন?”
“ইচ্ছে হয়নি তাই।”
“তা কি ইচ্ছে হয় শুনি একটি।”
“কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ ঘুমা। মাথা খারাপ করিস না।”
“কেন বিড়ির টাকা জোগাড় হয়নি বুঝি?”
মারওয়ান প্যান্টের পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে বালিশের কাছে রাখলো। নিশাত ভাবলো সিগারেট কেনার টাকা কই পেয়েছে? মারওয়ান ছেলেকে আদর করে কোলের মধ্যে ঢুকিয়ে ঘুমের দেশে চলে গেলো। নিশাত একটু অবাকই হয়েছে। বালিশে মাথা দেয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়েছে। এতো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লো কিভাবে? নাক ডাকার শব্দ আসছে। নিশাত আর দাঁড়িয়ে না থেকে নিজেও ওপর পাশে ঘুমিয়ে পড়লো।

“বাবা সুসু কব্বো।”
বিছানায় শুয়ে শুয়ে নাহওয়ানকে নিয়ে খেলছিল মারওয়ান। তখনই বাচ্চাটা লাফিয়ে কথাটা বলে উঠলো। মারওয়ান বললো,
“একটু পরে করিস। এখন উঠতে আইলসেমি লাগছে।”
নাহওয়ান বললো,
“একনি কব্বো।”
মারওয়ান হামি দিয়ে বললো,
“ধুরু বাপ একটু অপেক্ষা কর।”
নাহওয়ান অবুঝ স্বরে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বললো,
“একানে কলে ডিবো?”
মারওয়ান বিছানা থেকে আলস্য ঝেড়ে উঠলো। ছেলেকে কাঁধে চেপে দৌঁড়ে যেতে যেতে বললো,
“চল চল সুসু করিয়ে নিয়ে আসি। এখানে করিস না বাপ।”

মারওয়ান দেখলো তার শরীর গরম গরম লাগছে। ব্যাপার কি? ছেলেকে অন্য পাশে নেয়ার জন্য উঠাতেই ঝর ঝর করে কাজ সেরে ফেললো নাহওয়ান। আগেই সেরেছে এখন বাকিটুকু সারলো। মারওয়ান ছেলের দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“ডাম্বলের বাচ্চা!! কাজ সেরে ফেলেছিস?”
নাহওয়ান ফোকলা হেঁসে বাবার দিকে তাকিয়ে রইলো। ছেলের আদুরে হাসির দিকে তাকিয়ে মারওয়ান বললো,
“তোকে একটু মারি ফাইয়াজ?”

নাহওয়ান মাথা নাড়িয়ে না বললো। ফোলা ফোলা গালে বাবার দিকে তাকিয়ে বাবার গলা জড়িয়ে ধরলো। মারওয়ান কিছু না বলে ছেলের জামা, কাপড় পাল্টে নিজের ও ছেলের জামা নিয়ে টয়লেটে ঢুকলো। এখন বাপ, বেটা গোসল করবে। ছেলেকে সাবান দিয়ে ডলে ডলে গোসল করিয়ে নিজেও ছেলের পাশাপাশি সাবান ডলে গোসল করে নিলো। গোসল শেষে ছেলেকে জামা পড়িয়ে টয়লেটের সামনে দাড় করিয়ে বললো,
“এখানে থাক। বাবা চট করে জামা পাল্টে আসছি।”
বলেই টয়লেটের দরজা আটকে দিলো। নাহওয়ান এটা দেখে দরজা ধাক্কাতে লাগলো। সেও বাবার পাশে থাকবে বলে চিল্লাতে লাগলো। মারওয়ান জামাকাপড় পাল্টাতে পাল্টাতে বলতে লাগলো,
“আরে থামরে। বাপের ইজ্জত দেখার জন্য মরিয়া হয়ে গেছে। বদ কোথাকার।”
কোনরকম জামা পাল্টে বেরিয়ে এসে ছেলেকে উল্টো করে ঝুলিয়ে কাঁধে নিয়ে বললো,

ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ৭

“বজ্জাত তুই বুঝিস না বাপের একটা প্রাইভেসি আছে?”
“পাইবেচি কি?”
“তোর মাথা।”
নাহওয়ান খিকখিক করে হেঁসে দিলো।

ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ৯