মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ৪৯

মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ৪৯
মুসতারিন মুসাররাত

প্রত্যাশা ওপাশে যায় আইসক্রিম কিনতে। সামনের মেয়েটা সরতেই প্রত্যাশা বলল,
-” চকবার দিন তো।”
বিক্রেতা ছেলেটি জিজ্ঞেস করল,
-” কয়টা দেবো আপা?”
-” তি….”
তিনটা বলতে গিয়েও থেমে যায় ও। হালকা ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লেগেছে। এই সময়ে আইসক্রিম খাওয়া ঠিক হবে না। তারপর নীরব জানলে বকাঝকা করবে। এসব ভেবে অগত্যা বলল,
-” দু’টো দিন।”
পার্স খুলে দুইশো টাকার একটা নোট দিলো প্রত্যাশা। ছেলেটি বলল,
-” আপা ভাংতি দেন।”
পার্স খুঁজে দেখে বলে প্রত্যাশা,
-” খুচরা নেই তো দেখছি।”
ছেলেটি তার টাকা রাখার থলে হাতড়ে টাকা বের করতে থাকে।

আনিশা আর ইচ্ছে বসে কথা বলছে আর হাসছে। কিছুপল পরে ইচ্ছের নরম তুলতুলে টেডিটায় আঙুল দিয়ে চাপ দিয়ে বলল আনিশা,
-” ওয়াও! কি নরম তুলতুলে টেডি!”
ইচ্ছের গালে হাসি ফুটল। ঝটপট বলল,
-” জানো আমার এরকম আরেকটা টেডি আছে। দুটোই পাপা গিফট করেছিল। এটা হোয়াইট কালারের আরেকটা ব্লাক। দ্যাখো দ্যাখো এর আইস কেমন বড়বড়। ইয়ু…তুমি ভ’য় পেয়েছো?”
টেডিটা দুইহাতে আনিশার সামনে তুলে ভ’য় দেখানোর মতো করে ইচ্ছে। মুখের এক্সপ্রেশন এমন করে যেন খুব ভয় পাচ্ছে সে। সাথে আনিশাকে ভ’য় দেখানো তার একমাত্র লক্ষ্য। আনিশা ছোট্ট তর্জনী আঙুলটা দিয়ে টেডির চোখে খোঁচা মা*র*ল। পাকা পাকা গলায় বলল,
-” ধূর, আমি ভ*য় পাইনা। আমি ব্রেভ গার্ল। বড় দাদান বলে, আমি বড় হয়ে সিইডি[ সিআইডি] হবো। ছোট দাদানকেও ছাড়িয়ে যাব, হুঁ। সেজন্য আমাকে এত্ত এত্ত সাহসী হতে হবে। যারা ভীতু তারা কখনো….”
আকস্মিক কেউ একজন আনিশার কথায় বাগড়া দিল। মুখে মাস্ক, মাথায় সানক্যাপ পড়া একটা লোক এসে মিষ্টি গলায় বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” এইযে পিচ্চি, এইযে তোমাকে তোমাকে বলছি।”
আনিশা ভ্রু কুঁচকে নাক ফুলিয়ে তাকাল। ইচ্ছে সরু চোখে চাইল। লোকটা আঙুল নেড়ে বলল,
-” লাল জামা পড়া পিচ্চি তোমাকে বলছি। ওইযে তোমার পাপা ওখানে। তোমাকে ডাকছে।”
পাপার কথা শুনে ইচ্ছে চনমনে হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে তাকাল। কালো বাইকের উপর মাথায় কালো হেলমেট পরা একজন বসে। ঘাড়টা অন্যদিকে ঘুরিয়ে। বাইকটা সেম নীরবের বাইকের ডিজাইন। হেলমেট পরা ইচ্ছে অত বুঝল না। মাথা নেড়ে নেড়ে বলল,
-” পাপা ওখানে?”
-” হ্যাঁ, তোমার পাপা। তোমাকে ডাকছে। চলো আমার সাথে।”
ইচ্ছে উঠে যেতে নেয়। আনিশা থামিয়ে দেয়। বলে,
-” ইচ্ছে যেয়ো না। আমার আম্মু বলে অপরিচিতদের কথা না শুনতে। আর তাদের দেয়া কিছু খেতেও বারণ করে, হুম।”
-” ওটা পাপা নাকি চলো দেখে আসি তো।”
আনিশা সবেগে দু’পাশে মাথা নেড়ে বলল,
-” না না…আমি যাব না। শুনলে না নতুন ভাবী বলল কোথাও না যেতে। দাঁড়াও আমি এক্ষুনি ভাবীমণিকে ডেকে বলছি।”

প্রত্যাশা ওপাশ থেকে মাঝেমাঝে তাকাচ্ছে। ওরা দু’টো ওখানেই চুপচাপ আছে। মাস্ক পড়া লোকটা প্রত্যাশার তাকানো দেখার সাথে সাথেই উল্টোদিক ঘুরে ফোন কানে ধরে কথা বলার অ্যাক্টিং করতে থাকে।
এদিকে ইচ্ছে ঘাড়টা পিছনে ঘুরিয়ে রাস্তার বাইকের দিকে তাকাল। বাইকার হাত তুলে একটা বল দেখাল। এবারে ইচ্ছের চোখে খুশির ঝিলিক ফুটল। সে তো ক’দিন আগেই পাপাকে বলেছিল বলের কথা। ইচ্ছে কোনো দিকে না তাকিয়ে ছুট্টে যায়।

আনিশা ছোট মানুষ অতকিছু না ভেবে সে শুধু ভাবল— ইচ্ছে কথা শোনেনি। তাই ভাবীকে বলে দিবে। ভাবী নিশ্চয় এর জন্য ওকে বকবে। এটা ভেবে আনিশা সামনের দিকে প্রত্যাশার আসার অপেক্ষায় থাকল।
ইচ্ছে দৌড়ে যেতে গিয়ে হঠাৎ পরে যায়। মাস্ক পরা লোকটা তক্কে তক্কে পিছুন পিছুন আসছিল। এটা যেন তারজন্য সুবর্ণ সুযোগ হয়ে এল। দ্রুত গিয়ে ইচ্ছেকে তুলে দেয়। পিছুন সাইডটা একটু ফাঁকা। আর যে যার মতো ব্যস্ত। এটাই যেন মোক্ষম সুযোগ হলো মুখোশধারীর কাছে। সে আর কালবিলম্ব না করে বিদ্যুত বেগে ইচ্ছের মুখে রোমাল চেপে ধরে। চিৎকার করার সুযোগই পেল না ইচ্ছে। এক নিমেষে শরীরটা ঢিলে হয়ে নেতিয়ে পড়তে নেয়। অজ্ঞান হতেই লোকটা পরম যত্নে কোলে তুলে নিল মেয়েটাকে। মাথাটা লোকটার কাঁধে হেলে পড়ল। লম্বা পা ফেলে বাইকের কাছে আসতেই হেলমেট পরা বাইকার চাপা গলায় বলল,

-” তাড়াতাড়ি ওঠে বস।”
ইচ্ছেকে বসাতে গিয়ে ওর বুকের সঙ্গে আঁকড়ে ধরা টেডিটা হাত ফসকে মাটিতে পড়ে গেল। লোকটা তাড়াতাড়ি সেটা তোলার জন্য ঝুঁকতেই বাইকার গালি ঝাড়ল,
-” শা*লা তাড়াতাড়ি কর। মানুষ টের পেয়ে যাবে। আর তুমি বাল আছো হুতুল-পুতুল তুলতে।”
বাইক স্টার্ট দিতে থাকে। ছেলেটি একহাতের সাহায্যে মাটি থেকে টেডিটা তুলে বাইকে চড়ে বসতে বসতে বলল,
-” শা”লা তুমি জানো না হে, বড়লোকের এসব বাচ্চারা বাপ-মাকে ছাড়া থাকতে পারে। তবে এই পুতুল ছাড়া নাওয়া খাওয়া বাদ দেয়। পুতুল কোলের কাছে না নিয়ে এদের ঘুম আসে না। জ্ঞান ফিরলে পুতুল পুতুল করে কাঁদবে দেইখা নিয়ো।”
বাইক চলছে। এরমধ্যে একজন মহিলা দেখে বলে উঠল,

-” ঘুমন্ত বাচ্চাটাকে ওভাবে নিয়ে যাচ্ছে কেনো? আহারে ঘুমিয়ে পড়েছিল বোধহয়।”
বাইকার স্পিড বাড়িয়ে দিল। ইচ্ছে দু’জনের মাঝে। মাথাটা এপাশে-ওপাশে হেলে পড়তে চাচ্ছে। বাইকার এবার কড়া গলায় হুঁশিয়ারি করে বলল,
-” বাচ্চাটার মাথা ধরে রাখ ব্যাটা। এর কিছু হলে কিন্তু রক্ষে থাকবে না। বাচ্চাটার গায়ে ফুলের টোকাও দিতে বারণ আছে।”
-” ভাই এইটা কি ওই শা*লা এএসপির মেয়ে?”
প্রশ্নটা কর্ণকুহরে পৌঁছতেই মুখটা বিকৃত করে ফেলল বাইকার ছেলেটি। বিশ্রীভাবে গা”লি ছুঁ’ড়ে বলল,

-” মা*** এএসপি। বালছাল ওর নাম বলে মাথা গরম করে দিলা আবার। শা*লার বউয়ের গায়ে হাত দেয়ার অপরাধে আমার ভাইটারে কী মাইরটাই না দিছিলো। শা”লার বউরে কিছুই তো করতে পারছিল না। ঠিকসময় মতো এএসপি তো হাজির হয়ই। বউকে সেভ করে নেয়। অথচ আমার ভাইয়ের হাতটা ভেঙে দেয়। ওর বউয়ের গায়ে হাত তোলার জন্য। আবার টগবগে গরম পানির মগে জোর করে ঠোঁট ডুবিয়ে রেখে কয়; এইডা নাকি ওর বউয়ের দিকে চুমু খাওয়ার জন্য ঠোঁট বাড়ানোর শা*স্তি।”
-” আপনার সে ভাই কই?”
-” ভাইয়ের সাথে আরেকজন ছিলো। দুইজন রে ই*য়া*বাসহ গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলে ভরছে। তবে ভ*য় নাইকা। ম্যাডাম বড়লোক, অনেক টাকা দিছে। উনি কথা দিছে টাকার বিনিময়ে অল্পদিনের মধ্যেই ছাড়াইয়া আনবে। সেইজন্য মা*ইর খাইছে, তবু ম্যাডামের নাম মুখে আনেনি।”
.
.
আইসক্রিম বিক্রেতা দশ টাকার , বিশ টাকার নোট করে মিলিয়ে দু’বার করে গুণতে নেয়। প্রত্যাশা বিরক্ত হয়ে বলল,
-” আরে এতবার গুনতে হয় নাকি? ঠিকই আছে, দিন তো। বেশি দিলে তো অবশ্যই ফেরত পাবেন।”
টাকা হাতে নিয়ে ঘাড় ঘুরাতেই প্রত্যাশা একটু থমকে গেল। সামনেই আনিশা, কিন্তু ইচ্ছে কই? মনে হলো হয়তো শান বাঁধানো বসার জায়গার ওপাশে লুকিয়ে আছে। আবার লুকোচুরি খেলছে নাকি?
চকবার হাতে এগোতেই আনিশা দৌড়ে এলো। ঠোঁট ফুলিয়ে অভিযোগের সুরে বলল,
-” নতুন ভাবী, ইচ্ছে তোমার কথা শোনেনি। ইচ্ছে না__”
প্রত্যাশা চারপাশে চোখ বুলিয়ে কপালে ভাঁজ ফেলে জিজ্ঞেস করল,

-” ইচ্ছে কই আনিশা?”
-” ওদিকে গেছে।”
আঙুল দিয়ে পেছন দিকে দেখায় আনিশা। প্রত্যাশা ভ*য় পেয়ে তাড়াহুড়ো করে বলল,
-” ওদিকে গেছে মানে? কই গেল?”
এই বলে আনিশার হাত টেনে দ্রুত এগিয়ে যায় প্রত্যাশা। আনিশা ঘনঘন বলে,
-” এক লোক ইচ্ছেকে ওর পাপা ডাকছে বলতেই ও যায়।”
এবারে প্রত্যাশার বুক কেঁপে উঠল। চিন্তায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এল। সামনে যাকেই পায় তাকেই প্রায় কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে প্রত্যাশা,
-” একটা ছোট বাচ্চা মেয়েকে দেখেছেন? লাল রঙের ফ্রক, হাতে সাদা টেডি বিয়ার? দেখেছেন কেউ?”
একজন মহিলা এগিয়ে এসে বলল,

-” হ্যাঁ, একটু আগেই দেখেছি। গায়ে লাল ফ্রক, ফর্সা রং, তাই তো?”
প্রত্যাশা হাঁপাতে হাঁপাতে মাথা নাড়ল,
-” জ্বী জ্বী কোথায় দেখলেন? কোনদিকে গেছে?”
প্রত্যাশার চোখেমুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। কপালের ঘাম গড়িয়ে পড়ছে। নিজেকে খুব অসহায় ঠেকছে ওর। মহিলা চমকে দিয়ে বলল,
-” ঘুমন্ত মেয়েটাকে বাইকে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল দু’টো ছেলে।”
প্রত্যাশার হাত থেকে চকবার মাটিতে পড়ে গেল। হঠাৎ যেন শিরা-উপশিরা অবশ হয়ে যাচ্ছে। কী করবে? কীভাবে বাড়িতে বলবে? কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। দিশেহারা হয়ে ফোনটা হাতে নেয় ও। প্রথমে নীরবের নম্বরে কল দিলো। আশেপাশে এতক্ষণে মানুষ জড় হয়ে যায়। সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করে এটা-ওটা বলে প্রত্যাশাকে আরো বিভ্রান্ত করে তুলছে। একজন বলল,

-” ইয়া আল্লাহ, নিশ্চয় ছেলেধরা ছিলো।”
আরেকজন ফিসফিসিয়ে বলল,
-” ইশশ্! অমন ফুটফুটে মেয়েটাকে মে*রে ফেলবে না তো।”
ভয়ে প্রত্যাশার হাত-পা হিম শীতল বরফ হয়ে আসে। মাথা ঝিমঝিম করছে। দুই হাতে মোবাইল চেপে ধরল কানে। প্রথমবার রিং হয়ে কে”টে গেল। আবার ডায়াল করল। অস্ফুটে ফিসফিস করে বলল,
-” প্লিজ নীরব, তাড়াতাড়ি ফোনটা তুলুন।”
এবারে তিন সেকেন্ডের মধ্যেই কল রিসিভ হয়। ওপাশ থেকে নীরবের শান্ত গলা,
-” প্রত্যাশা আমি একটু ব্যস্ত। হাফ আওয়ার্স পরে ব্যাক করি? তুমি আবার এজন্য অভিমান করো না কিন্তু। কাজ শেষ করেই ব্যাক করব, প্রমিজ জান।”
প্রত্যাশার বুক ধড়ফড় করছে। গলা শুকিয়ে গেছে। জিভ দিয়ে শুষ্ক ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে এক নিঃশ্বাসে বলল,

-” নীরব…নীরব ইচ্ছেকে পাওয়া যাচ্ছে না।”
-” হোয়াট? পাওয়া যাচ্ছে না মানে?”
প্রত্যাশা হোঁচট খাওয়া গলায় শর্টকাটে পুরো ঘটনাটা বলে। নীরব চোয়াল শক্ত করে আঙুল মুষ্টিবদ্ধ করে বলল কঠিন কণ্ঠে,
-” ড্যাম ইট! তুমি ওদের নিয়ে বের হয়েছিলে কেনো?”
প্রত্যাশা আর সামলাতে পারল না। শব্দ করে কেঁদে উঠল। ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে অনুনয় করল,
-” নীরব প্লিজ ইচ্ছেকে খুঁজে বের করুন। আমার উপর যত রাগ করার আছে করবেন। আমি কিচ্ছুটি মনে করব না। শুধু প্লিজ, ইচ্ছের কিছু যেন না হয়। ইচ্ছেকে সুস্থ সমেত দ্রুত এনে দিন। আমার জন্য ইচ্ছের ক…”
কথা শেষ করার আগেই কান্নায় গলা রুদ্ধ হয়ে গেল প্রত্যাশার। নীরব জোড়াল শ্বাস ফেলল। নিজেকে সামলে শান্ত স্বরে বলল,
-” টেনশন করো না। ইন শা আল্লাহ ইচ্ছের কিছু হবে না। আমি আসছি।”

মিনিট বিশের মধ্যেই নীরব উপস্থিত হয়। প্রত্যাশার চোখদুটো ভেজা। পাশে দাঁড়ানো আনিশাও ফুঁপাচ্ছে। ইচ্ছের হদিস না মেলার কষ্ট দু’জনার চোখেমুখেই স্পষ্ট। কয়েকজন মহিলা ঘিরে দাঁড়িয়ে নানা কথা বলতে বলতে কৌতূহল মেটাচ্ছে। একেকজন একেক কথা বলছে— বাসায় জানিয়েছো? তাড়াতাড়ি পুলিশ কে*স করতে হবে?
হঠাৎই কানে এলো বাইকের ব্রেক চাপার তীক্ষ্ণ শব্দ। সবাই একসাথে মাথা ঘুরিয়ে তাকাল। নীরব বাইক থামিয়ে দৃঢ় ভঙ্গিতে হেলমেটটা হাতলে ঝুলিয়ে দিল। চোখেমুখে অগ্নিগর্ভ দুশ্চিন্তা। লম্বা লম্বা পায়ে এগিয়ে আসছে। ভিড়ের সামনে এসে দারাজ গলায় ডাক দিল,
-” প্রত্যাশা?”

প্রত্যাশা তৎক্ষণাৎ মাথা তুলে তাকায়। সামনের মহিলারা ইউনিফর্ম পরা নীরবকে দেখে বিস্ময়ে চেয়ে আছে। এক মুহূর্ত দেরি না করে প্রত্যাশা দৌড়ে নীরবের সামনে এসে দাঁড়াল। ভেজা চোখে ব্যাকুল হয়ে চেয়ে ভাঙা কণ্ঠে বলল,
-” নীরব আ_”
প্রত্যাশার কোনো কথা না শুনে। নীরব শুধু বলল,
-” বাসায় যাবে, চলো।”
প্রত্যাশা ব্যাকুল কণ্ঠে অপরাধীর মতো বলল,
-” ইচ্ছেকে না নিয়ে কী করে বাড়ি যাই? ইচ্ছে আমার সাথে এসেছিল। আমি ওকে ছাড়া কোন মুখে বাসায় যাব?”
নীরব চোয়াল শক্ত করে তাকাল। বলল,
-” তুমি বাসায় না ফিরে এখানে থাকলে ইচ্ছেকে পাওয়া যাবে? যাবে না। তাই পা*গ*লামি করো না। ফাস্ট বাসায় চলো। তোমাকে নিরাপদে রেখে তারপর আমি আমার কাজ করব।”

ইচ্ছেকে পাওয়া যাচ্ছে না এ খবর এতক্ষণে ছড়িয়ে পড়েছে। নীরব ওদেরকে বাসায় দিয়ে দরজার সামনে থেকেই চলে যেতে নেয়। নীহারিকা পিছু ডাকলেন। এক আকাশ উদ্বেগ উৎকণ্ঠা মিশিয়ে বললেন,
-” নীরব বাবা, মেয়েটাকে সহীহ সলামতে পাওয়া যাবে তো? কী থেকে কী হয়ে গেল! বিপদ যেনো পিছুই ছাড়ছে না। আমার ভীষণ ভ’য় হচ্ছে।”
-” ডোন্ট ওয়ারি মা। ইনশাআল্লাহ ইচ্ছেকে সুস্থ সমেত ফিরে পাব।”
নীহারিকা আরো কিছু বলতে নেয়। নীরব সেসব না শুনেই দ্রুত প্রস্থান করে। ওখানকার এক মহিলা বলছিল। সেখান থেকে একটা কথা নীরবের টেনশন মাইনাস করে একবারে অর্ধেকে নামিয়ে আনে। কথাটা— “পরে যাওয়া টেডি একটা ছেলে তুলে নেয়।” তারমানে টেডি ইচ্ছের সাথেই আছে। টেডির চোখে মাইক্রো ক্যামেরা লাগানো। যদিও মূল উদ্দেশ্য ছিলো ওই বাড়ির রহস্য উদঘাটনের জন্য এই চালাকি। তবে নিঃসন্দেহে আজ ইচ্ছেকে পেতে এটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রত্যাশা মাথা নত করে দাঁড়িয়ে। নীলাশা শর্মিলা সবাই আছেন। প্রত্যাশার দিকে তাকিয়ে নীহারিকা আফসোস করে বললেন,

-” উফ্! আমারই ভুল হয়েছে। মস্ত বড় ভুল হয়েছে। যে নিজেকেই সামলাতে পারে না। তার সাথে দুইটা বাচ্চাকে পাঠিয়ে। ইশশ্! কেনো যে তখন বারণ করলাম না। বাড়িতে একটার পর একটা বিপদ চলছেই। একটুও ফুরসত মিলছে না। কবে যে এক দন্ড স্বস্তি মিলবে। ইয়া আল্লাহ! কোন পা*পে আজ আবার আমার নাতনীটাকে হারাতে বসেছি। যেভাবেই থাকুক সুস্থ রেখো।”
এটাওটা বলে হা হুতাশ করতে থাকেন নীহারিকা। শর্মিলা মেয়ের উপর চোটপাট দেখাতে নেন। ওর জিদ থেকেই এতকিছু ঘটল। নীহারিকা চেঁচিয়ে উঠলেন,
-” থাম তো। আমার আর ভালো লাগছে না। এইটুকু মেয়েকে দোষ দিয়ে কী হবে। বড়গুলা যখন কেয়ারলেস। দায়িত্ব নিয়ে গেছে অথচ পালন করতে পারে না। একটা অঘটন ঘটিয়ে এসেছে।”
নীলাশা হঠাৎ ধীর স্বরে বলে উঠল,
-” মা কেউ যদি আগে থেকে ওত পেতে থাকে তাহলে কী করার বলুন। আমার মনেহয় আগে থেকেই এটা প্ল্যান করা। প্রত্যাশা হয়তো তাদের কাজটা না বুঝে সহজ করে দিয়েছে। এভাবে না হোক অন্যভাবেও তো এরকম কিছু হতে পারতো।”

প্রীতির কপালে চিন্তার ভাঁজ। ফোনটা কানে। ভাইয়ের কাছে অসহায় সুরে বলছে,
-” ভাইয়া ইচ্ছেকে পাওয়া যাচ্ছে না।___। এখন কী করব ভাইয়া? আমার ভীষণ টেনশন হচ্ছে। বুঝতে পারছি না কে এমন করতে পারে? ইচ্ছের সাথে শ”ত্রুতাই বা কীসের?”
-” ছেলেধরা হতে পারে। আঁটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করতে পারে। কিন্তু কথা হলো যায়হোক, ইচ্ছের যেনো কোনো ক্ষ*তি না করে বসে। আচ্ছা প্রীতি তুই নীরবের সাথে কথা বলেছিস?”
তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে বলল প্রীতি,
-” নীরবের কেয়ারলেস বউয়ের জন্য আজ এমন হয়েছে। এর জবাবদিহিতা ওর বউসহ নীরবকে করতে হবে। আর নীরবের কাছে কীসের কথা বলতে যাব? ওর কাছে হেল্প চাইব? ইচ্ছেকে খুঁজে দিতে বলব? মাই ফুট। আমাদের কী লোকজন কম আছে নাকি? ওর থেকেও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সাথে আমার মায়ের খাতির আছে।”
সার্থক কথা না বাড়িয়ে বলল,
-” টেনশন করিস না। আমি এক্ষুনি আসছি। ষযত দ্রুত সম্ভব ইচ্ছেকে তোর কাছে ফিরিয়ে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে।”
প্রীতি ফোনটা হাতের মুঠোয় চেপে ধরল। হুইলচেয়ারে বসা মায়ের দিকে অসহায় চাউনিতে চেয়ে অনুরোধের সুরে বলল,

-” প্লীজ মা জলদি কিছু একটা করো। আমার ভীষণ টেনশন হচ্ছে। ইচ্ছে কোথায়, কীভাবে আছে? আমি জাস্ট নিতে পারছি না।”
তানিয়া নির্লিপ্ত মুখে বসে। প্রীতি হাতের তালুতে মুখ ঢেকে নিল। পরপর দম ফেলে দাঁত কড়মড়িয়ে বলে উঠল,
-” যা রাগ ওই মেয়েটার উপর হচ্ছে না। হাতের কাছে পেলে সজোড়ে দু’টো থা*প্পড় দিতাম।”
প্রীতি মায়ের মুখপানে তাকিয়ে তিরিক্ষি হয়ে বলল,
-” এভাবে চুপ করে বসে থাকবে?”
তানিয়া একটু নড়েচড়ে উঠলেন। বললেন,
-” নীরব নিশ্চয় বসে নেই।”
প্রীতি তেজি কণ্ঠে বলল,

-” নীরবের অপেক্ষায় প্রীতি বসে আঙুল চুষতে চায় না। নীরব খুঁজে বের করার আগেই আমরা বের করব। তুমি আর্জেন্ট ইচ্ছেকে খুঁজে বের করো। আশাকরি তোমার লোকের অভাব নেই।”
তানিয়া শান্ত গলায় বলল,
-” তুমি চিন্তা করো না। আমি সব ব্যবস্থা করছি।”

ঘড়ির কাঁটা রাত একটা ছুঁয়েছে। নিস্তব্ধ কক্ষে দুজন মানুষ। নীরবের চোখ গেঁথে আছে ল্যাপটপের স্ক্রিনে। সামনে ঝুঁকে টেবিলে হাত দু’টো ঠেস দিয়ে রেখে দাঁড়িয়ে আছে সে। ল্যাপটপের নীল আলোয় চোখদুটো শিকারি বাজপাখির মতোন জ্বলজ্বল করছে। পেছনে দাঁড়ানো তানভীর ফাঁকা ঢোক গিলে বলল,
-” স্যার, ইচ্ছেকে কিডন্যাপ করে আসলে লাভটা কী? মানে উদ্দেশ্যটা একচুয়েলি কী হতে পারে? মাথায় কিছুই আসছে না।”
নীরব দৃষ্টি না সরিয়েই শান্ত গলায় বলল,
-” উদ্দেশ্য দুইটা হতে পারে। এক ব্ল্যাকমেইল করে ডাটা মুছে ফেলতে বলা। দুই চাপের মধ্যে রাখা।”
তানভীর কপালে ভাঁজ ফেলে আবার বলল,

-” কিন্তু স্যার যদি ব্ল্যাকমেইল করার জন্যই হয়। তাহলে এখনো পর্যন্ত ফোন দিল না কেন?”
নীরব গভীর নিঃশ্বাস টেনে ঠান্ডা স্বরে উত্তরে বলে,
-” সেটাই ভাবছি। মনে হচ্ছে নতুন কোনো খেলা শুরু করতে যাচ্ছে। কিন্তু ওরা ভুলে গেছে এই খেলাতেই আজ নিজেরাই ফাঁদে পা দিল। যে প্রমাণ আজ কমাস ধরে খুঁজছি। নিজেদের বোকামিতেই সেটা অনায়াসেই পাইয়ে দিল। নিজের ষ’ড়যন্ত্রে নিজেই ধরা খেল।”
-” এখন কী করবেন?”
-” যা করার ভোরের আলো ফুটলে। চাইলেই সব সম্ভব নয়। কিছু নিয়ম-কানুন আছে তো।”
-” জ্বী স্যার।”

এদিকে রাতে ফোন দিয়ে প্রীতি প্রত্যাশাসহ বাড়ির সবার উপর রাগ ঝাড়ে। তাদের ওখান থেকেই মেয়েটা নিখোঁজ হলো। এটা তাদেরই ষড়যন্ত্র। হেনোতেনো বলে।
ঘড়িতে সকাল নয়টা বাজে। গোটা রাত পেরিয়ে গেলেও ইচ্ছের খোঁজ মেলেনি। চিন্তায় দু’চোখের পাতা করোরই এক হয়নি। এখন অবধি গলা দিয়ে খাবারো নামেনি। সবাই ভীষণ চিন্তিত। নীরব রাতে বাসায় ফেরেনি। এরমধ্যে ডোরবেল বাজতেই পরী দরজা খুলে দেয়। নীহারিকা শব্দ শুনে আশা নিয়ে আসেন, হয়তো ইচ্ছের খবর পাওয়া যাবে নীরব এসেছে। কিন্তু তার ভাবনায় গুড়ে বালি। একজন পুলিশ অফিসার পিছনে দু’জন লেডি কনস্টেবল। ওসি জিজ্ঞাসু গলায় বললেন,

-” ইয়ানূর প্রত্যাশা কে?”
শর্মিলা, নীলাশাও উপস্থিত হয়। নীরব এসেছে ভেবে প্রত্যাশা রুম থেকে ত্রস্ত বেরিয়ে আসে। পুলিশের মুখে নিজের নাম শুনে চমকে তাকাল। নীহারিকা কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ নিয়ে পাল্টা জিজ্ঞেস করলেন,
-” কেনো? তাকে কী দরকার?”
ওসি সোজাসাপ্টা বলল,
-” পাঁচ বছরের বাচ্চা মেয়ে ইচ্ছে। তাকে গতকাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। সে ইয়ানূর প্রত্যাশার সাথেই ছিলো। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে থানায় যেতে হবে।”
বাড়িতে ছেলেরা কেউ নেই। নীহারিকা অবাক গলায় বললেন,
-” প্রত্যাশাকে থানায় যেতে হবে মানে?”
-” ওনার নামে কেস হয়েছে?”
প্রত্যাশা শাশুড়ির কাছে এসে দাঁড়াল। থমকে গেল সবাই। শর্মিলা বললেন,

-” প্রত্যাশার নামে কেস হয়েছে মানে? কে কেস করেছে?”
-” ইচ্ছের…”
কথা টান দিয়ে কেড়ে নেয় প্রীতি। পিছুন থেকে নির্ভীক চিত্তে এগিয়ে আসতে আসতে উত্তর দেয়,
-” আমি করেছি কেস।”
প্রীতি এগিয়ে যায় ঠিক প্রত্যাশার সামনে। শাশুড়ি পাশেই ছিলো। রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন নীহারিকা,
-” তোমার মাথা পুরোপুরি গেছে নাকি?”
প্রীতি কথা কানেই তুলল না। ও প্রত্যাশার বাহু খাবলে ধরে বলল,
-” আমার মেয়েটাকে কোথায় রেখেছো? বলো?”
প্রত্যাশা কেঁপে উঠলো। বলল,
-” আমি জানি না।”
প্রীতি চেঁচিয়ে উঠল,

-” আলবাত জানো তুমি। তুমি কিছু করেছো ইচ্ছের সাথে। নইলে ইচ্ছে নিখোঁজ অথচ নীরব নির্লিপ্ত। ও কেনো এখনো ইচ্ছেকে বের করল না। তারমানে ও ঠিক জানে তুমিই ইচ্ছের সাথে খারাপ কিছু করেছো। ইচ্ছের কিছু হলে তোমাকে ছাড়বো না।”
কথা শেষ করেই প্রীতি হাত উঠায়। প্রত্যাশার গালে থাপ্পড় মারতে হাত তোলে। প্রত্যাশা চোখ খিচ মে*রে মাথাটা ঘুরিয়ে নেয়। প্রীতির হাতটা নীহারিকা ধরে ফেলে। এক ঝটকায় প্রীতির হাত ছেড়ে দিয়ে উল্টো ঠাস করে প্রীতির গালে সপাটে চড় বসালেন। পরপর দু’টো চ’ড় দিয়ে থামলেন। হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন,

-” তোমার স্পর্ধা দেখে আমি অবাক হচ্ছি। আমার সামনে আমার নীরবের বউয়ের গালে হাত তুলতে যাও। আমার বাড়ির মানসম্মান পানিতে ডুবাতে আমার বাড়ির বউয়ের নামে কেস করো। কতটা বেপরোয়া ভাবতে পারছো তুমি? এতটা ডেসপারেট মেয়ে আমি জনমে দেখিনি। অ*সভ্য মেয়ে মানুষ।”
প্রীতি গালে হাত দিয়ে আ*গুন চোখে তাকাল। ফোঁস করে ওঠে বলল,
-” ওর জন্য আমার মেয়ে নিখোঁজ। আপনাদের একবারো আমার মেয়ের কথা চিন্তা হচ্ছে না।”
নীহারিকা বলেন,

-” প্রত্যাশাকে দেখে অমন মনেহয়? মনেহয় ও কখনো তোমার মেয়ের ক্ষ*তি করতে পারে?”
-” আমি অতশত জানি না। আমার মেয়েকে আমার কাছে চাই। যতক্ষণ আমার মেয়েকে পাচ্ছি না, ততক্ষন পর্যন্ত হলেও প্রত্যাশাকে লকাপে থাকতে হবে। অফিসার দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? আপনাদের কাজ করুন।”
নীহারিকা শর্মিলাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
-” নীরবের কাছে ফোন দে। সারাটা রাত গেল ও করছে টা কী?”
অফিসার একটু ভয়ে ভয়ে আছে। নীহারিকা নীরবের সাথে কথা বলার সময় চেয়ে নিলেন। শর্মিলা ফোনে সবটা নীরবকে বলে। নীরব তৎক্ষণাৎ সদর থানার ওসির কাছে কল দিল। নীরব বলল,

-” এএসপি নীরব মাহবুব স্পিকিং।”
ওসি লম্বা করে সালাম দিল। নীরব উত্তর দেয়ার প্রয়োজন বোধ করল না। সোজাসুজি বলল,
-” মিসেস নীরবের থেকে পাঁচশো গজ দূরে থাকবেন। আ’ম কামিং।”
ওসি ঠোঁট ভিজিয়ে নিচু স্বরে বলল,
-” স্যার, আইন তো সবার ক্ষেত্রেই সমান হওয়ার কথা।”
ওপাশ থেকে নীরবের বজ্রকণ্ঠ ভেসে এলো,
-” আইন সমান। তবে আইন মানে নির্দোষ মানুষকে প্রমাণ ছাড়া হ্যারেজ করা নয়। আমি অর্ধ ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছাচ্ছি। এর মধ্যে যদি আমার স্ত্রীকে কেউ স্পর্শ করারও দুঃসাহস দেখায়; মনে রাখবেন তখন আমি শুধু হ্যাজবেন্ড হয়ে নয়। এএসপি হিসেবে আইনের সর্বোচ্চ ব্যবহার করব। মাইন্ড ইট।”
ওসি বেকায়দায় পড়েছে। দুদিক থেকেই সে প্রচন্ড চাপে আছে। সে বেচারা দিক পাচ্ছে না। এদিকে প্রীতিকে বলেছে,
-” আগে স্যার আসুক।”

নীরবের আসতে বিলম্ব হয়। আধা ঘন্টা পেরিয়ে যায়। এরমধ্যে খানিক্ষণ আগে প্রীতির সাথে কথা বলে এই ঘটনা শুনে সার্থক আসে। প্রীতিকে বোঝাতে বলল,
-” প্রীতি এসব বাড়াবাড়ি হচ্ছে। প্লীজ বন্ধ কর এসব। প্রত্যাশা কেনো ইচ্ছের ক্ষতি করতে যাবে।”
প্রীতি বলল,
-” হিং*সে করে। আমি জানি প্রত্যাশা এটা হিং*সে করেই করেছে। নীরব ইচ্ছেকে অনেক আদর করে, ইচ্ছে নীরবকে পাপা ডাকে। এসব প্রত্যাশার সহ্য হয় না। উপরে ভালো মানুষি দেখালেও ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড হিং*সায় জ্ব”লে ও। তাই তো আমার মেয়েকে নিয়ে কিছু একটা করেছে। পেপার পত্রিকায় অহরহ আসে হিংসার জের ধরে বাচ্চাকে ড্রেনে, নদীতে ফেলে মে**”

-” প্রীতি এসব তোর ভুল ধারণা। তুই আবার ভুল করতে যাচ্ছিস।”
প্রীতি এবারে ক্ষে*পে উঠল। অফিসারের উপর চড়াও হলো,
-” আপনারা কী এখানে মাছি তাড়ানোর জন্যে এসেছেন? মাথায় রাখবেন আইন সবার ক্ষেত্রে সমান। হোক সে এএসপি কিংবা প্রাইম মিনিস্টারের বউ। আপনারা এভাবে বসে থাকলে আমি উপর মহলে ফোন করতে বাধ্য হবো।”
এবারে ওসি শুকনো ঢোক গিলে লেডি কনস্টেবলকে নির্দেশ দেয়। প্রত্যাশা শাশুড়ির কাছেই জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে। থানা পুলিশ এসব তার এমনিতেই পছন্দ হয় না। এমন বিষয়ে এবারে বুকটা রীতিমতো কাঁপতে থাকল। লেডি কনস্টেবল যতটা এগোতে থাকল। প্রত্যাশা ততটাই জড়সড় হতে থাকে। প্রত্যাশার দিকে হাত বাড়িয়ে একজন লেডি কনস্টেবল বলল,

-” ম্যাডাম ভালোভাবে আমাদের সাথে চলুন। জোর করতে বাধ্য করবেন না।”
বুট পায়ে গটগট করে আসার শব্দে সবাই সচকিত দরজার দিকে চাইল। দরজার ফাঁক গলে কঠিন চোখেমুখে নীরব ঢুকল। মুখমণ্ডলে অ*গ্নি ঝলক, ঠোঁট দুটো চেপে ধরা। এক হাতে মাথার ক্যাপ চেপে ধরে, অন্য হাত শার্টের কাফ শক্ত করে টেনে নিল। ওসি আর কনস্টেবলরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াল। নীরবের দৃষ্টি প্রথমেই পড়ল প্রত্যাশার ভয়ে সঙ্কুচিত মুখপানে। তারপর কনস্টেবলের বাড়ানো হাতের দিকে তাকিয়ে বজ্রকণ্ঠে বলল,
-” স্টপ, স্টপ। আই সেইড স্টপ। স্টে অ্যাওয়ে ফ্রম মিসেস নীরব।”
সাথে সাথে লেডি কনস্টেবলের মুখ ভীতু হয়। নীরব ওসির দিকে তাকিয়ে বলল,
-” আইনকে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু আইন মানে নিরপরাধকে টেনে নিয়ে যাওয়া নয়। আমার আসা পর্যন্ত যেটুকু করেছেন ওটুকুই যথেষ্ট। এখন সরে যান।”
প্রীতি দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

-” তুমি তোমার ক্ষমতার অপব্যবহার করছো।”
নীরবের রাগের পারদ তরতরিয়ে আকাশ ছুঁলো। বলল,
-” তোমাকে আগেই বলেছিলাম নিজের মধ্যে চেঞ্জেস আনো। এ-ও বলেছিলাম তুমি যে ব্যবহার হচ্ছো সেটা যাতে করে হলে বোঝার চেষ্টাটুকু করো। কিন্তু না, তুমি তো তুমিই। সেই বেপরোয়া রাগ, জিদ নিয়ে নিজের ধ্বংস নিজেই ডেকে আনলে।”
প্রীতি তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
-” আমার চেঞ্জের জন্য এতটুকু ভেবেছ এরজন্য থ্যাংকস। তবে সো স্যরি, তোমার বউয়ের উপর মার্সি করতে পারছি না। ইচ্ছেকে না পাওয়া অবধি প্রত্যাশাকে জেলহাজতেই থাকতে হবে। ওকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দিতে আমি অন্তত পারছি না।”
নীরব মেরুদণ্ড টানটান করে দাঁড়িয়ে। ঠোঁটে ফিচেল হাসি ফুটিয়ে বলল,

-” প্রিয়স্মিতা খান প্রীতির বিরুদ্ধে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। এখন কার বদলে কে জেলে যাবে সেটা সবাই দেখবে। যে পুলিশ ফোর্স তুমি প্রত্যাশার জন্য এনেছো। তারাই এখন তোমাকে অ্যারেস্ট করতে বাধ্য।”
প্রীতি হকচকিয়ে উঠে বলল,
-” হোয়াট? প্রমাণ কী? আর..আর আমার বিরুদ্ধে কী অপরাধ আছে?”
নীরবের দৃষ্টিতে ঘৃ*ণা ঝলসে উঠে। বলল ঘৃ*ণা ভরা কণ্ঠে,

মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ৪৮

-” তোমার অপরাধ শুনতে চাও? তবে শোনো; প্রত্যাশার ডাবে ড্রা*গ মেশানো, গু*ণ্ডা ভাড়া করে প্রত্যাশাকে তুলে নেওয়া, নীবিড় মাহবুবের সঙ্গে প্রতারণা। হ্যাঁ এখানে তুমি ব্যবহার হয়েছো। তোমার মা তার স্বার্থে তোমাকে ব্যবহার করেছে। কিন্তু তার মানে তোমার অপরাধ কম নয়। নীবিড়কে ঠকানোর জন্য, তোমার প্রত্যেকটি অন্যায়ের জন্য ইচ্ছে করছে।”
বলতে বলতে রি’ভ’লবা’র বের করে প্রীতির কপালে ঠেকাল নীরব। দাঁত চেপে বলল,
-” ইচ্ছে করছে নিজ হাতে শা*স্তি দিতে। একদম শুট করে দিতে। দিই শুট করে?”

মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ৫০