মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৮

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৮
নুজাইফা নূন

হোয়াট ? পুলিশে ধরে নিয়ে গিয়েছে মানে ? কি বলছো এসব ?তুমি সঠিক খবর জানো তো?”
-” জ্বি ম্যাডাম। আমাদের কাছে এমনি তথ্য এসেছে।সবটা প্ল্যান অনুযায়ী হচ্ছিলো। যেহেতু নির্জন রাস্তা ছিলো।তাই মানুষের ও কোনো সমাগম ছিলো না। কিন্তু হুট করে কোথা থেকে একজন হিরো এসে মেয়েটাকে বাঁচিয়ে নিলো।”

-” পাঁচ ছয় টা ছেলে মিলে একটা ছেলের সঙ্গে পারলো না ? অকর্মার ঢেঁকি সব কয়টা।”
-” ম্যাডাম বললাম না ছেলেটা হিরোর মতো দেখতে। গায়ে অনেক শক্তি।অনেক অনেক খায় হয়তো।”
-” জাস্ট শাট আপ।আমি মরছি আমার টেনশনে।আর তুমি আমার সাথে মশকরা করছো ? তোমাদের কে বিশ্বাস করাটাই ভুল হয়েছে আমার।নিজেরা তো ফাঁসলে সাথে আমাকেও ফাঁসালে বলে রাগে গজগজ করতে করতে ঐশ্বর্য কল কেটে দিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” পুলিশের চাপে পড়ে ওরা যদি মুখ খোলে তাহলে তো আমি ফেসে যাবো।আমার সব কিছু শেষ হয়ে যাবে।না না আমি কিছুতেই নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারতে পারি না।আমাকে কিছু একটা করতে হবে বলে ঐশ্বর্য অতি দ্রুত নিজেদের বাড়িতে চলে আসে।তাকে একা ফিরতে দেখে সালেহা বেগম বিচলিত হয়ে বললো,
-” ছোট ম‌্যাডাম এতো তাড়াতাড়ি হলুদের অনুষ্ঠান শ্যাষ হয়ে গিলো ? গেলেন ই তো কয়েক ঘণ্টা আগে।এর‌ই মধ্যে আইয়া পড়লেন? আপনে একা আইলেন যে ? সিজদা মা ক‌ই?”

-” ঐশ্বর্য সালেহা বেগমের কথার উত্তর না দিয়ে বাবা বাবা বলে ডাকতে শুরু করলো। রাশেদ চৌধুরী তখন নিজের রুমে ফারুক মির্জার সাথে ফোনে কথা বলছিলেন।ঐশ্বর্যের চিৎকার শুনে তিনি রুম থেকে বেরিয়ে এসে বললেন,
-” কি হয়েছে ঐশ্বর্য? চিৎকার করছো কেন?আর এতো তাড়াতাড়ি অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলো ? তুমি তো বলেছিলে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে? তুমি একা এসেছো? সিজদা কোথায়? সিজদা কে দেখছি না তো।”

-” এক সাথে এতো গুলো প্রশ্ন করলে আমি কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দিবো বাবা?”
-” তুমি তোমার মতো করে বলো।”
-” বাবা একটা বড় ধরনের সমস্যা হয়ে গিয়েছে।আমি বা সিজদা কেউই বিয়ে বাড়িতে পৌঁছাতে পারি নি।”
-” মানে ? সিজদার কোনো বিপদ হয় নি তো ?”
-” হ্যাঁ বাবা।”

-” গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে আমার খুব পানির তেষ্টা পেয়েছিলো। কিন্তু গাড়িতে কোনো পানি ছিলো না।আমি পানি কিনে নিয়ে এসে দেখি গাড়িতে সিজদা নেই।আমি অনেক খুঁজেছি কিন্তু কোথাও সিজদা কে পাই নি। ওহ্ গড! সিজদা তো এখানকার রাস্তা ঘাট কিছুই চিনে না।এমনটা তো নয় যে সিজদা গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে যাচ্ছিলো। এজন্যই সিজদা হাওয়া খাওয়ার জন্য গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে হাঁটতে কোথাও চলে গিয়েছে।সিজদা যেহেতু রাস্তা চিনে না।তাই আর ফিরতে পারে নি।”

-” তুমি এতোটা দায়িত্ব জ্ঞানহীন হলে কি করে? তুমি তো জানতে সিজদা রাস্তা ঘাট কিছু চেনে না। তুমি জানার পরেও সিজদা কে একা রেখে কিভাবে চলে গেলে?”
-” বাবা এখন এসব কথা বলার সময় নয়। আমাদের সিজদা কে খুঁজে বের করতে হবে।এই মুহূর্তে আমাদের থানায় গিয়ে একটা মিসিং ডায়েরী করা প্রয়োজন।”
-” ঠিক আছে।চলো বলে রাশেদ চৌধুরী ঐশ্বর্য কে নিয়ে অতি দ্রুত বেরিয়ে পড়েন। তাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে সালেহা বেগম চোখের পানি মুছে বললেন,

-” মায়ের মন ঠিক‌ই সন্তানের বিপদ আঁচ করতে পারে।আমি ঠিক এই ভয় ডা পাচ্ছিলাম। কিন্তু আমার ক্যান জানি মনে হ‌ইতাছে ছোট ম্যাডাম নাটক করতাছে।সে সব জানে।সে ইচ্ছে ক‌ইরা সিজদা রে বিপদের মুখে ঠেইলা দেছে। নিজেরে কেউ যাতে কোন প্রকার সন্দেহ না করে এজন্য মিছে মিছে কান্দোনের নাটককরতাছে।নাটকবাজ ছেড়ি একটা।তোর বিচার আল্লাহ করবো। আল্লাহ ছাড়া দেয়। কিন্তু ছেড়ে দেয় না।।”

-” তোমার নাম কি মায়াবতী?”
-” সিজদা পরম যত্নে সারজিসের ক্ষতস্থানে রুমাল বেঁধে দিচ্ছিলো।সারজিসের প্রশ্নে হাত থেমে যায় তার।সে আমতা আমতা করে করে বললো,
-” জ্বি না।”
-” ওকে ফাইন।বাট আই উইল কল ইউ মায়াবতী।সিজদা ইংরেজি বুঝতে না পেরে বললো,
-” কিছু বললেন?”
-” তোমার নাম যাই হোক।আমি জানতে চাই না।আমি তোমাকে মায়াবতী বলে ডাকবো।যদি তোমার কোন আপত্তি না থাকে।”

-” না না।আমার কোনো আপত্তি নেই।আপনার যে নামে ডাকতে ভালা লাগে সেই নামে ডাকবেন।”
-” থ্যাংক ইউ সো মাচ।বাট আই হ্যাভ নোটিশ সামথিং। তুমি আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছো আবার শুদ্ধ ভাষায় ও বলছো। ব্যাপার টা কিন্তু খুবই ইন্টারেস্টিং।”
-” সিজদা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সারজিসের ফোন বেজে উঠে।সারজিস সিজদা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললো,

-” চলো চলো। অলরেডি আমার অনেক লেট হয়ে গিয়েছে। হসপিটাল থেকে বার বার কল আসছে বলে সারজিস গাড়ির দরজা খুলে দেয়।সিজদা গাড়িতে বসলে সারজিস দরজা লাগিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে।সারজিস গাড়ি স্টাট দিতে যাবে তখনি দেখে সিজদার সিট বেল্ট লাগানো হয় নি।সারজিস তৎক্ষণাৎ সিজদার দিকে ঝুঁকে আসে সিট বেল্ট লাগিয়ে দেওয়ার জন্য।সিজদার তো লজ্জায় মরি মরি অবস্থা।সারজিসের চোখে চোখ রাখার স্পৃহা নেই তার।জীবনের প্রথম কোনো পুরুষ এতোটা কাছাকাছি এসেছে তার।সিজদার সর্বাঙ্গ কাঁপুনি দিয়ে ওঠে।সজারুর ন্যায় দাঁড়িয়ে যায় শরীরের সমস্ত লোমকূপ। হার্ট বিট দ্রুত গতিতে লাফাতে শুরু করে।সিজদা চোখ বন্ধ করে শাড়ির আঁচল খামচে ধরে বসে থাকে।সারজিসের সিট বেল্ট লাগানো হয়ে গেলেও সিজদার থেকে সরে আসে না। বরং সিজদার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে কিয়ৎক্ষণ।সিজদার ভিতু চেহারা দেখতে বেশ ভালো লাগছে তার। মিনিট কয়েক অতিবাহিত হবার পর সারজিস সিজদার থেকে সরে এসে গাড়ি স্টাট করলো।গাড়ি চলতে শুরু করে আপন গতিতে।সারজিস একবার সিজদার চুপসে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,

-” তুমি শুধু মায়াবতী ন‌ও।সাথে ভিতুবতী ও বটে ।আই লাইক ইট।”
-” গাড়িতে পিনপতন নীরবতা কাজ করছে। দুজনের কারো মুখেই কোনো কথা নেই।প্রায় আধা ঘন্টা পর গাড়ি এসে হসপিটালের সামনে থামে।সারজিস সিজদা কে নিয়ে হসপিটালে প্রবেশ করে।সবাই সিজদা কে সারজিসের সাথে দেখে অবাক হয়ে যায়।
সারজিস স্যার বিয়ে করেছে কথাটা মূহুর্তের মধ্যেই হসপিটালে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি হালিমা বেগমের কাছে ও কথাটা পৌঁছে যায়।তিনি কালবিলম্ব না করে সারজিসের কাছে কল দেন।সারজিস ফোন রিসিভ করা মাত্রই তিনি সারজিস কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললো,

-” তুমি বিয়ে করে নিলে দাদুভাই? একবার ও আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না? এই জন্যই তুমি সিজদার মতো একটা ভালো মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছিলে না।এই ছিলো তোমার মনে? আমি এক্ষুনি আসছি হসপিটালে।আমি ও দেখতে চাই তুমি কোন হুর পরী বিয়ে করেছো।”
-” কাম অন দাদু।তোমাকে কে বললো আমি বিয়ে করেছি? আমি বিয়ে করলে এতোক্ষণে ব‌উ নিয়ে বাসর ঘরে থাকতাম। ব‌উ নিয়ে হসপিটালে আসতাম না। রাস্তায় একটা মেয়ে বিপদে পড়েছিলো।আমার সময় নেই দেখে তাকে তার বাসায় পৌঁছে দিতে পারি নি।আমার সাথে করে হসপিটালে নিয়ে এসেছি।আমার কাজ শেষ হলে তাকে তার বাসায় পৌঁছে দিবো।”

-” আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম দাদু ভাই।”
-” ডোন্ট প্যানিক।আ’ম নট ম্যারিড।আমি বাসায় ফিরে সবটা বলবো তোমাকে ।এখন রাখছি।বাই বলে সারজিস ফোন পকেটে রেখে নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।”
-” সিজদা সারজিসের চেম্বারের এক কোণে গুটি মেরে বসে রয়েছে।সারজিস পেশেন্ট দেখছে। কিন্তু তার বেহায়া চোখ বারবার সিজদাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে। লুকিয়ে দেখার মাঝে এক ধরনের ভালো কাজ করছে তার মধ্যে।তার কানে অরিজিৎ সিং এর গানের লিরিক্স বাজছে,

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৭

তোকে একার দেখার লুকিয়ে কি মজা
সে তো আমি ছাড়া কেউ জানে না
তোকে চাওয়ারা পাওয়ারা নয় রে সোজা
সে তো আমি ছাড়া কেউ জানে না।।

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৯