শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৪৮
নূরজাহান আক্তার আলো
পৃথিবী গোল। গোলাকার এই পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষের বসবাস।
ভিন্ন তাদের অভিমত এবং একেক জন একেক গুনে অধিকারী। তাদের মধ্যে বিশেষ এক গুনের অধিকারী আজম। বিশেষ বলার কারণ বিশেষ একটি গুন। আর সেই গুনটি হলো, তার সকল চিন্তা-ভাবনার সূচনা হয় ওয়াশরুমে গেলে। সকল চিন্তার সুফলও মিলে আবার ওই ওয়াশরুমেই।
কেন এমন হয় সে জানে না তবে খেয়াল করেছে নরম গদিতে বসে চিন্তা করে যেসব সমাধান খুঁজে পায় না, অকারণে ওয়াশরুমের কমোডে বসে চিন্তা করলে দ্রুত সমাধান পেয়ে যায়। এজন্য সে ভাবে এটা তার মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত একটি গুন। যে গুনের কথা কাউকে বলে নি।
বললে নজর লাগতে পারে এবং গুনের প্রভাব ধীরে ধীরে কমতে পারে।
যেটা সে কখনো চায় না এরচেয়ে গোপন জিনিস গোপনেই থাকুক। তবে শাহরিয়ার ভাইকে কিছু না বললে তার খুব অস্থির অস্থির লাগে। বুকটা কেমন আনচান করে। সে ভেবেছে যেদিন ভাইয়ের মন ভালো থাকবে সে কথাটা ভাইকে বলবে। আবদার করবে দুঃচিন্তা করার জন্য হলেও তাকে যেন একটা স্পেশাল ওয়াশরুম বানিয়ে দেয়। যেখানে টিভি, এসি, বেড
সবকিছুর ব্যবস্থা থাকবে। আর সে যখনই চিন্তায় পড়বে সেখানে শুয়ে বসে ভাববে আর ভাবলেই সকল সমস্যার সমাধান হাতের মুঠোয় পেয়ে যাবে। সমাধান পেয়ে ভাই ভীষণ খুশি হবে, ভাইয়ের খুশিতে সেও খুশি।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এসব ভেবে সে মনে মনে হাসল। কিন্তু হাসিটা ঠিকঠাকভাবে ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠার আগেই মাড়িতে ব্যথা পেল। গতকাল থেকে মাড়ির ব্যথায় অবস্থা তার অবস্থা খারাপ। এই লজ্জার কথা আর কাকে বলবে সে? ভাবলে তো নিজেরই হাসই পায়। কারণ এ বয়সে এসে তার নতুন করে দাঁত উঠছে। এই দাঁতের নাম আবার আক্কেল দাঁত। কোন বেআক্কল এই দাঁতের না আক্কেল রেখেছে তার জানতে ইচ্ছে করছে। সে বেআক্কল
লোকটা কি বেঁচে আছে? যদি থাকে তাহলে সেই লোকের কাছে গিয়েই জিজ্ঞাসা করবে, ‘বে-আক্কল একটা জিনিসরে কুন বিবেকে আক্কেল নাম দিলেন কাকা? দিলেন, দিলেন, ভাইব্বা নামডা দিতে ফারলেন না? আর ফারলেন না তো এই আকামের দায়িত্ব আফনারে নিতে কইছে কেডায়?’
কিন্তু সেই লোককে কি খুঁজে পাবে? তার ব্যথাটা আগে কমুক তারপর সেই লোককেই খুঁজতে বের হবে সে। মনে মনে এসব ভেবে সে আশপাশ তাকিয়ে কোথায় কি আছে খুঁটিয়ে দেখল। বড় সড় ঝকঝকে-তকতকে ওয়াশরুম। আসলে মানুষের এত এত টাকা থাকলে যা হয় নয়তো কে আবার হাগার জায়গায় এত টাকা খরচ করে? যতই টাকা খরচ করুক ফেলে যায় তো ওই দুর্গন্ধযুক্ত মাল-মশলা। ভাগ্যিস, শাহরিয়ার ভাইয়ের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিল নয়তো এত দামি ওয়াশরুমে হাগার শখ অপূর্ণই থেকে যেতো। অবশ্য এজন্য ভাইকে একদিন ট্রিট দিলে মন্দ হয় না। ভাই জিজ্ঞাসা করলে বলবে, ‘হাগার ট্রিট।’ আর এই বিশেষ ট্রিট এর আগে কেউ কাউকে দিয়েছে কী না জানে না, তবে সে দিবে। বাংলা ইতিহাসে এই ট্রিট দিয়েই ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম লেখাবে। পরের প্রজন্ম আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইবে, ‘এই অদ্ভুত ট্রিটের আবিষ্কারক কে? তখন অভিভাবকরা গর্ব করে বলবে, ‘আমাদের গর্বিত দেশের গর্বিত এক সন্তান, আজম আলী সৈকত।’
এদিকে ঘড়ির কাঁটা যে টিকটক করে এগিয়েই চলেছে সেদিকে কোনো হুঁশ নেই তার। সে এখনো ভাবনায় মশগুল। অথচ তার অনুপস্থিতিতে
কেউ যে নিজের প্ল্যান সাকসেস করতে উঠে পড়ে লেগেছে সেটা হয়তো ক্ষুণাক্ষরেও টের পাচ্ছে না বেচারা৷ মোদ্দাকথা, সায়ন যদি জানে তাহলে তার কী করবে কে জানে। কারণ সায়ন কিছুক্ষণ আগে এক পাঁচ তারকা রেস্টুরেন্টে খেতে পাঠিয়েছে তাকে। আদেশ অনুযায়ী এসে চেয়ার বসে খাবার অর্ডার করার পর পরই অনুভব করল এখনই ওয়াশরুমে যাওয়া প্রয়োজন। খাবার আসতে দেরি দেখে সে ওয়াশরুমে এসেছিল ব্যক্তিগত কাজ সারতে। আপাতত ইচ্ছে ছিল না ভাবনার জগতে বিচরণ করতে।
কিন্তু অভ্যাসবশত ভাবনার জগতে ডুবে গেল। একের পর এক ভাবনা তার মস্তিষ্কে ঘুরতে লাগল। ব্যক্তিগত কাজ সারতে বসে হঠাৎ তার স্মরণ হলো এ মুহূর্তে ওয়াশরুমে আসা ঠিক হয় নি। এলেও এতক্ষণ বসে সময় কাটানোর মানেই হয় কারণ সায়ন তাকে কড়া আদেশ করেছে ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকতে। কিন্তু সেটা না করে সে ওয়াশরুম এসে বসে আছে। একথা স্মরণ করে সে দ্রুত কাজ সারতে গিয়ে দেখল পানি নেই। যাহ্, এবার কি হবে? তাড়াহুড়োর সময় আজাইরা ভুল কাজগুলো হয় কেন কে জানে।
সে কার থেকে যেন শুনেছিল বাইরের অনেক দেশেরই ওয়াশরুমে পানি
থাকে না। তখন টিস্যুই একমাত্র ভরসা..! এইটা কোনো কথা? এজন্যই পাঁচ তারকা-ফারকা রেস্টুরেন্ট ভালো লাগে না তার। যত বড় নামি-দামি জায়গা সেখানেই নিত্য নতুন ঝামেলা। এরচেয়ে সাধারণ ল্যান্টিনগুলোই ভালো, বদনা ভরে নিয়ে যাওয়া যায়। কাজ সম্পূর্ন না হওয়া অবধি সেই পানি যক্ষের ধনের মতো আগলে চোখের সামনে রাখা যায়। কিন্তু শহরে তো ল্যান্টিন বললেও মানুষজন হাসে। অথচ এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচার আর কোনো উপায় আছে? শহর যতই এগিয়ে থাকুক কিছু কিছু ক্ষেত্রে গ্রামই ভালো। এখন সে কার কাছে পানি চাইবে? কাকে বলে এ বিপদের
কথা? গ্রাম হলে তো এতক্ষণে চেঁচিয়ে বলা যেতো, ‘ এ্যাই কল পাড়ে কে আছিস এক বদনি পানি দিয়া যা।’ কিন্তু এখানে তো সে উপায়ও নাই। হ্যাঁ টিস্যু আছে কিন্তু এই কাজটা করে নি কখনো।
জীবনে ভাবে নি একাজ করা লাগবে! সে আরেকবার চেক করে দেখল পানি এসেছে কী না। না, আসে নি। কতক্ষণ এভাবে বসে থাকবে? এই মুহূর্তে কাকে গালি দিবে বুঝে উঠতে পারল না আজম। তবে তার ভাগ্য সুপ্রন্ন বোধহয় হঠাৎ পানি এলো। সে খুশিতে ডগমগ হয়ে কাজ সেরে বের হতে গিয়ে দেখল বাইরে থেকে ওয়াশরুমের দরজা লক করা। এ কাজ কে করল? কার লুকোচুরি খেলার ইচ্ছে জাগল? সে কতক্ষণ দরজার হাতল ধরে টানাটানি করেও কোনো সমাধান আনতে পারল না। বাধ্য হয়ে দরজা থাবা দিয়ে ডাকল কিন্তু কেউ সাড়া দিলো না, খুললও না। খাবার অর্ডার দিয়ে ওয়াশরুমে
এসেছে তাও প্রায় আধাঘন্টা হয়ে গেছে। একথা স্মরন হাতেই তার বুক ধরফড় করতে লাগল। দ্রুত পকেট থেকে ফোন বের করে একের পর এক কল করতে থাকল সায়নকে। কিন্তু সায়নের কোনো খোঁজ নাই। সে
পুনরায় কমোডের ঢাকনায় নামিয়ে চেপে বসল। তারপর ফোনেটা নিয়ে
দ্রুত গতিতে টাইপ করে সায়নকে ঘটনা জানাল। কিন্তু সায়ন মেসেজ সিন করছে না। কলও ধরছে না। কিছুক্ষণ আগেই তো কথা হলো এই সময়টুকুর মধ্যে কোথাও গেল? গেল, গেল, ফোনটা কোথায় রেখেছে?
এখন কি হবে? এখান থেকে কিভাবে বের হবে? এাথা ভাবতে ভাবতে তার কালঘাম ছুটে গেল। সে দরদর করে ঘামতে ঘামতে সেখানেই মাথা ঘুরে পড়ে গেল।
শীতল খেতে খেতে এদিক ওদিকে তাকাতে তাকাতে তার নজর বিঁধল সামনের একটা টেবিলে। সেখানে একটা ছেলে বসে আছে এবং একাই রাজকীয় ভোজ নিয়ে বসেছে। তবে একটা খাবারও স্পর্শ করেছে কী না সন্দেহ। শীতল তাকে দেখতে দেখতেই ছেলেটাও হঠাৎ মুখ উঁচিয়ে চোখ তুলে তাকাল। আচমকা চার চোখের চোখাচোখিও হয়ে গেল। এবং তার চোখ দেখে শীতল আচমকা ভীষম খেলো। কাশতে কাশতে আরেকবার
দেখল সামনে বসা সুদর্শন ছেলেটাকে। আচ্ছা, নীল চোখ দেখল নাকি? কি আশ্চর্য, বাংলাদেশেও নীল চোখের মানুষ আছে? কই কখনো দেখে নি তো! তবে অদ্ভুত রকমের সুন্দর ছেলেটার চোখজোড়া। উম, ছেলেটা কি বিদেশি নাকি বাঙালি? চেহারা দেখে অবশ্য মনে হচ্ছে বাঙালি আর বিদেশীর মিশেলে তৈরি। তাকে তাকাতে দেখে ছেলেটা কী মনে করে যেন শীতলদের টেবিলের কাছে এলো। কাছে এগিয়ে আসায় শীতলও সিওর হলো ছেলেটার চোখজোড়া সত্যি সত্যি নীল। তবে সন্দেহ থেকে গেলে লেন্স লাগানো নাকি আসল তা নিয়ে। নিজের ভাবনা ছেড়ে শীতল এবার ভ্রুঁ কুঁচকে একবার বোনের দিকে তাকাল তো একবার জুবায়ের এর দিকে। তারাও প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকিয়ে আছে সামনে দাঁড়ানো ছেলেটার দিকে। তখন ছেলেটা হ্যান্ডশেক করতে জুবায়ের এর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে হাসিহাসি মুখে বলল,
-‘হ্যালো, আ’ম ইয়াসির খান!’
তার হাত বাড়ানো দেখে জুবায়ের উঠে দাঁড়িয়ে নিজেও ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে ছোট করে উত্তর করল,
-‘জুবায়ের।’
-‘ক্যান আই জয়েন ইউ গায়েস!’
একথা শুনে জুবায়ের একবার স্বর্নের দিকে তাকাল। স্বর্ণ মাথা নিচু করে খেতে ব্যস্ত। সে মূলত বুঝতে চাচ্ছে, মানুষটা স্বর্ণ কিংবা শীতলের চেনা কি না। তবে স্বর্ণ, শীতলের মুখ দেখে মনে হচ্ছে না তারা চেনে না। আর তার খুঁতখুঁতে মন অচেনা কাউকে সঙ্গে নিতে মন সায় দিচ্ছে না। তবে তার মুখ দেখে ইয়াসির যেন বুঝল মনের ভাবনা। সে মলিন হেসে বলল,
-‘আজ আমার মায়ের জন্মদিন। কাউকে নিয়ে যে জন্মদিন পালন করব সেই আপনজনও আমার নেই। আমি একজন টুরিস্ট। কিছুদিনের জন্য এসেছি মাত্র। তাই বলছিলাম কী যে…..!’
সে কথা শেষ করে শীতলের দিকে তাকিয়ে মলিন হাসল। শীতলের খু্ব মায়া লাগল। জুবায়ের কিংবা স্বর্নের আশায় না থেকে সে বলল,
-‘সমস্যা নেই ভাইয়া আসুন আমরা একসাথে ডিনার সারি।’
-‘সত্যি?’
-‘সত্যি। ‘
শীতলের কথায় ইয়াসির ওয়েটারকে ডেকে তার অর্ডারকৃত খাবারগুলো শীতলদের টেবিলে দিতে বলল। এত বারণ করেও শুনল না। স্বর্ণ এখনো একবারও চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে নি। তখনই স্বর্ণের ফোনের সায়নের নাম্বার থেকে কল এলো। এতে স্বর্ণ একটু অবাকই হলো। তবে কল কেটে যাওয়ার আগে কল রিসিভ করতেই সায়ন বলল,
-‘এখনো কি রেস্টুরেন্টেই আছিস?’
-‘হুম। তুমি কি..?’
-‘ আজম ওয়াশরুমে আঁটকে গেছে গিয়ে দেখ।’
-‘ মানে?’
-‘গিয়ে দেখ, হারামজাদা বেঁচে আছে নাকি পটল তুলেছে!’
-‘আজম ভাই চট্টগ্রামে?’
-‘হুম, তোরা যেই রেস্টুরেন্টে আছিস সেখানকার ওয়াশরুমে।’
একথা শুনে স্বর্ণ কল কেটে উঠে দাঁড়িয়ে জুবায়ের কে বলল,
-‘আমি না ফেরা অবধি এক পাও নড়বেন না। আশা করি, স্মরণ করিয়ে দিতে হবে না আমরা এখন আপনার দায়িত্বে।’
হঠাৎ কঠিনসুরে বলা কঠিন কথায় জুবায়ের প্রচন্ড অবাক হলো। তবে অবাকের ভাবটুকু বুঝতে না দিয়ে বলল,
-‘আপনি কোথায় যাচ্ছেন?’
-‘ওয়াশরুমে।’
একথা বলে আর দাঁড়াল না দ্রুতপায়ে স্থান ত্যাগ করল। তার যাওয়ার দিকে একবার তাকিয়ে ইয়াসির মলিন সুরে বলল,
-‘আমার উপস্থিতি আপুটা বোধহয় পছন্দ করছে না। আমি নাহয় উঠে..! ‘
একথা শুনে শীতল হড়বড় করে বলল,
-‘না, না আপনি ভুল বুঝছেন। আসলে আমার আপু কম কথা বলে তাই আর কি।’
-‘ওহ। তবে আপুটা রাগী হলেও আপুর ছোটো বোন খুব মিশুকে দেখি।’
-‘ হুম। ভাইয়া একটা কথা বলি?’
-‘চোখ নিয়ে বুঝি?’
শীতল এবার বিষ্ময় নিয়ে তাকাতেই ইয়াসির হো হো করে হেসে উঠল। শীতল আরেকদফা অবাক হলো ইয়াসিরের গেজ দাঁত দেখে। মনে মনে একটু আফসোস হলো তার বিশুদ্ধ পুরুষটা এভাবে হাসে না কেন ভেবে।
তবে এই পুরুষটার হাসি দেখে মনে হচ্ছে খুব ভালো একজন মানুষ সে। যে প্রাণখোলাভাবে হাসতে পারে তার মনে কি নোংরা থাকতে পারে?
একথা ভেবে সে নিজেই হেসে আগ্রহ নিয়ে বলল,
-‘ তারমানে আপনার চোখ কি সত্যি সত্যি নীল?’
-‘হুম।’
-‘ খুবই সুন্দর। কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে পুরোপুরি বাঙালি না তবুও এত ভালো বাংলা বলতে পারছেন কিভাবে? ‘
-‘আসলে বাংলাদেশে জন্ম হলেও বড় হয়েছি সুইডেনে। বাবা বাঙালি ছিল বিধায় বাংলার প্রতি আগ্রহ জন্মেছিল। তারপর একটু একটু করে শেখা। এখানে মাঝে মাঝে আসি কাজের ক্ষেত্রে, ওহ বলাই তো হলো না আমি পেশায় সাইস্টিস্ট।’
-‘বলেন কি? আমার ভাইয়াও তো নামকরা সাইন্টিস্ট!’
-‘তাই নাকি?’
-‘তা আপনার ভাইয়ের নামটা কি জানতে পারি?’
-‘অবশ্যই! ভাইয়ার নাম শোয়াইব শুদ্ধ। ‘
-‘শুদ্ধ? উম, শুদ্ধ, শুদ্ধ, না এই নামে কাউকে চিনি বলে তো মনে করতে
পারছি না। তবে কর্ম যখন এক চিনে নিতে আর কতক্ষণ?’
-‘হুম।’
তাদের এসব আলাপ জুবায়ের এর কেন জানি পছন্দ হচ্ছে না। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পরখ করছে সামনে বসা সুদর্শন পুরুষটাকে। তখন কিছু মনে না হলেও এখন কেন জানি খটকা লাগছে। তাকে ঘনঘন তাকাতে দেখেও ইয়াসির পাত্তা দিলো না নিজে হাতে শীতলের প্লেটে এটা ওটা তুলে দিতে দিতে গল্পে ডুবে রইল। এদিকে স্বর্ণ আসছে না দেখে কিছু বলতে গেলে ফোনে রিংটোন বেজে উঠল। জরুরি কল দেখে উঠে দাঁড়িয়ে একটু দূরে গেল কথা বলতে। তবে তার দৃষ্টি রইল শীতল আর ইয়াসিরের দিকেই।।তাকে যেতে দেখে ইয়াসির এবার মুগ্ধ নয়নে তাকাল আপনমনে মাথা নিচু খেতে থাকা শীতলের দিকে। ছবিতে যেমন দেখেছিল তার থেকেও সুন্দরী এই মেয়ে।
এমন একটা জলজ্যান্ত পুতুল নিজের কাছে থাকলে মন্দ হয় না। তবে পুতুলটাকে নিতে যে কাঠখড় পোড়াতে তার তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবুও কষ্ট করে যদি এমন একটা প্রাপ্তি পাওয়া যায় তাহলে সেই কষ্ট করতে প্রস্তুত। এখন কথা হচ্ছে, আজই তুলবে নাকি পুতুলটাকে? একথা ভাবতে ভাবতে ঘাড় ঘুরিয়ে সে তাকাল অদূরের টেবিলে থাকা তার লোকদের দিকে। সামান্য একটা ইশারায় মুহূর্তেই বিদ্যুৎ চলে গেল। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেড়ে গেল চারিপাশ। যারা খেতে এসেছিল তারা বিরক্তসূচক শব্দ করে নানান কথাবার্তা বলতে লাগল। এদিকে তখনো আকাশ ফাটিয়ে মেঘ গর্জন করছে। বৃষ্টির তীব্রতা যেন দ্বিগুন বেড়েছে। অন্ধকারে ভীতু শীতল হাতের চামচ রেখে ইয়াসিরের উদ্দেশ্যে বলল বলল,
-‘ভাইয়া আছেন? ফোন থাকলে লাইন অন করেন প্লিজ। এত অন্ধকার আমার একদমই ভালো লাগে না।’
-‘কেন নয় সোনা?’
-‘ক কি..!’
একথা বলতে না বলতেই শীতল তার কাঁধের কাছর নরম কিছুর স্পর্শ পেলো। এরপরই সূচ ফুটানোর মতো কিছু অনুভব হতেই সে নড়েচড়ে উঠতেই ইয়াসির শক্ত করে তার মুখ চেপে ধরল। শীতল গোঙানোরও সময় পেল না তার আগেই নাকে রুমাল চেপে ধরতেই সে সেন্স হারালো। ততক্ষণে ইয়াসিরের লোকরা বিদ্যুৎ যাওয়ার সাথে সাথে জুবায়েরকেও সেন্সলেন্স করে ফেলেছে। খেতে আসা অন্যান্যা লোকরা যারা ফোনের
লাইট অন করতে গেছে তাদের ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৪৭
খানিকক্ষণ পরেই বিদ্যুৎ এলে ততক্ষণে কালো পোশাকধারী লোকজনে ভরে গেছে রেস্টুরেন্ট। এরা কারা? কেন এসেছে? এই নিয়ে সবার মাঝে আতঙ্কের
সৃষ্টি হয়েছে। তবে লোকগুলো কাউকেই কিছু বলল না হঠাৎ এসে হঠাৎ করে চলেও গেল। তবে কেউ খেয়াল করল না এতগুলো লোকের মাঝে একটি মেয়েকে সেন্সলেস করে তুলে নিয়েছে। সেই মেয়েটা আর কেউ নয় চৌধুরী নিবাসের সবচেয়ে চঞ্চল প্রাণ। চৌধুরীদের চোখের মণি। আর শোয়াইব শুদ্ধর____ প্রাণভোমরা।