শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৮
নূরজাহান আক্তার আলো
তখন দুপুর একটা পঁয়ত্রিশ। শীতল আর কিয়ারা কলেজ থেকে বেরিয়ে ফুটপাত ধরে হাঁটছে। মুখ ভার দু’জনেরই। ক্লাস করবে না বলে জারুল গাছের নিচে নিজেদের আড়াল করে বসেছিল। যাতে কেউ দেখতে না পায়। না খোঁজে। কিন্তু হঠাৎ জাঁদরেল এক স্যার সেখানে উপস্থিত হন।
একের পর প্রশ্ন করতেই থাকেন। অতঃপর প্রশ্নের তোপে পড়ে অগত্যা তাদেরকে ক্লাসে যেতেই হয়েছে এবং সবগুলো ক্লাসও করতে হয়েছে।
মাথার উপরে চড়া রোদ। ভ্যাপসা গরম। গাছপালা থম মেরে আছে যেন
পাতা নড়লেও জাত যাবে। এই রোদের মধ্যে না হেঁটে শীতল কিয়ারাকে বিদায় জানিয়ে রিকশায় উঠে বসল। অতঃপর চৌধুরী নিবাসের গেটের সামনে নেমে ভাড়া মিটিয়ে ভেতরে প্রবেল করল। মূল ফটকটা অতিক্রম করে যেতে যেতেই হঠাৎ বাগানের দিকে নজর পড়ল। ফুলের বাগানের
একপাশে ফলের গাছ লাগানো। তবে অন্য ফলের তুলনায় বেশির ভাগই টক জাতীয় ফলের গাছ রয়েছে সেখানে। যেমন, তেঁতুল, বরই, আমড়া, আমলকি, পেয়ারা, জলপাই। বলা বাহুল্য, বাড়ির মেয়ে /বউরা যেসব ফল খেতে পছন্দ করে সেসব ফলের গাছ। এ কাজ করেছেন শারাফাত চৌধুরী নিজেই। যাতে বাড়ির মেয়ে/বউরা ইচ্ছেমতো ফল খেতে পারে। তাই উনি দেশি বারোমাসি ফলের গাছ লাগিয়েছেন। বেশ ক’দিন হলো, বাগানমুখো হওয়া হয় না শীতলের। বিগত সপ্তাহে মেজো আম্মুর সঙ্গে লেবু আনতে গিয়েছিল। তারপর এদিকে পা মাড়ানো হয় নি। তাছাড়া শুদ্ধ বাড়ি থাকলে গাছে উঠতে পারে না। উঠলে মারে। বকে। ধমকায়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মা’র খাওয়ার ভয়ে গাছ উঠে না নয়তো গাছে উঠে ফল পাড়তে একাই একশ সে।
হঠাৎ কি ভেবে যেন সে বাগানের দিকে গেল। রোদে, গরমে, কলেজের ড্রেসের অবস্থা খারাপ। তবুও সেদিকে পাত্তা নেই তার। দুটো বিড়ালের মারামারির শব্দ শুনে সেদিকে পা বাড়িয়েছে। তার পায়ের শব্দ শুনে দুটো বিড়াল দু’দিকে দৌড়ে পালিয়ে গেল। ফেলে রেখে গেল সদ্য ফোটা পাখির দুটো ছানা। বেঁচে আছে ছানাদুটো। নড়ছে এখনো। সে ছানাদুটো দেখে হাতে তুলে আশেপাশে তাকিয়ে দেখল। কোন গাছে পাখি দুটোর মায়ের বাসা বুঝতে উঠতে পারল না। তবে মাথার উপর বরই গাছ দেখে বুঝল পাখির বাসা এখানেই হবে। সে কলাপাতা ছিঁড়ে পাখির ছানাদুটো রেখে পিছু সরে একটু আড়ালে লুকিয়ে রইল। মা পাখিটা কিচিরমিচির শব্দে হাজির হয়ে মুখে করে তার বাচ্চা দুটো নিয়ে চলে গেল। ভরদুপুরে
ভালো একটা কাজ করে মনটাও ফুরফুরে হয়ে গেল। তারপর কি ভেবে গাছের দিকে তাকিয়ে ভাবল অনেকদিন পেয়ারা মাখা খাওয়া হয় না।
যেই ভাবা, সেই কাজ, কাঁধের ব্যাগটা মাটিতে রেখে তরতর করে গাছের উঠে ডাসা ডাসা গোটা কয়েকটা পেয়ারা ছিঁড়ল। এদিক-ওদিক তাকিয়ে গাছের ডালে বসে তৃপ্তি সহকারে খেলো। পেটে ক্ষুধা থাকায় মনে হচ্ছিল
পেয়ারা না যেন অমৃত খাচ্ছে। নিজেদের বাগানে তাড়া খাওয়ারও ভয় নেই, ধমকানোর সুযোগ নেই, যে ধমকানো সে তো বাড়িতেই নেই তাহলে কিসের ভয়! এসব ভেবে সে ইচ্ছেমতো দেখে-দেখে, বেছে বেছে পেয়ারা নামিয়ে নিচে নামল। তারপর সেগুলো ব্যাগে পুরে চলল বাড়ির ভেতরে। গাছ উঠতে-নামতে গিয়ে ড্রেসটা নষ্ট হয়ে গেছে। না ধুলেই নয়। তবে সে ধুবে না। কারণ এই বাহানায় আগামীকাল কলেজ মিস করবে। মনে মনে
এমন দুষ্টু পরিকল্পনা এঁটে চেঁচিয়ে আম্মু! আম্মু! করে ডেকে ফুরফুরে মেজাজ ড্রয়িংরুমের পা রাখতেই থমকে দাঁড়িয়ে গেল। তার ডাক শুনে উপস্থিত ক’য়েকজোড়া চোখের দৃষ্টি তার দিকে নিবদ্ধ। সে মুখ কাঁচুমাচু করে দ্রুত পা ফেলে রান্নাঘরের দিকে ছুঁটল। বিদেশীরা এখানে কেন? সে রান্নাঘরে গিয়ে মা-চাচীদের ব্যস্ত হাতে খাবার রেডি করতে দেখে বুঝল তারা গেস্ট হয়ে এসেছে। তাদের জন্যই রান্না হয়েছে হরেক পদ বাঙালি আইটেম। রান্নাঘরের দরজায় তাকে দেখে সিরাত আস্তে করে বলল,
-‘একি! এ কি অবস্থা তোর? কলেজ থেকে ফিরলি নাকি যুদ্ধ করে?’
-‘এরা কারা মেজো মা?’
-‘শুদ্ধর গেস্ট। যা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়।’
‘শুদ্ধর গেস্ট’ কথাটা তার মস্তিষ্কে টোকা দিলো।ঢোক গিলল কয়েকবার।
মস্ত বড় ডায়নিং টেবিলজুড়ে সিট দখল করে বসে আছে চেনা-অচেনা মানুষজন। সে কথা বাড়ল না। পরনের ড্রেসের হাল দেখে পেঁয়ারাগুলো
রান্নাঘরে রেখে গুঁটি গুঁটি পায়ে এগোল সিঁড়ির দিকে। এমনকি সিঁড়িতে
উঠতে উঠতেও ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখতে দেখতে রেলিং ধরে উঠছে। ভয় কাজ করছে। যার গেস্ট সে কি বাসায় এসেছে নাকি? যদি আসে তাহলে মার খাওয়া ফরজ হয়ে গেছে। আজকে মার খাওয়া থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। আজ বুঝি আধমরা হতেই হবে। এসব ভাবতে ভাবতে সে দাঁত দিয়ে নখ খুঁটতে খুঁটতে সিঁড়ি পেরিয়ে শখের রুম বরাবর আসতেই দরজা খোলার শব্দ শুনল। শুদ্ধর রুমের দরজা খুলছে দেখে সে তড়িঘড়ি করে লুকাতে গিয়েও শুদ্ধর মুখোমুখি পড়েই গেল। এভাবে তাকে দৌড়াতে দেখে শুদ্ধ ভ্রুঁ কুঁচকে দাড়াল। আপাদমস্তক দেখে বিশেষ করে ড্রেসের হাল দেখে শীতল চাহনি নিক্ষেপ করে বলল,
-‘গাছে উঠেছিলি?’
শীতল মুখ কাচুমাচু করে নত মস্তকে কেবল মৃদুভাবে মাথা নাড়াল। শুদ্ধ কিছু বলল না শুধু ভ্রুঁজোড়া কুঁচকে তাকিয়ে রইল। রোদে চোখ, মুখের কি অবস্থা করেছে। মোদ্দাকথা, ভর দুপুরে গাছে উঠে কেউ? পড়ে হাত পা ভাঙলে কি হতো? তাকে নিশ্চুপ দেখে শীতল আড়চোখে একবার দেখে মিনমিন করে বলল,
-‘মগডাল থেকে বাবুই পাখির দুটো ছানা পড়ে গিয়েছিল। ছানাদুটো তুলে দিতে গাছে উঠেছিলাম। আর উঠব না।’
-‘(….)’
-‘আপনি কখন এলেন শুদ্ধ ভাই? আপনার না দেরিতে ফেরার কথা ছিল?’
-‘শোকেসে সাজানোর তলব করে ভুলে গেলে চলবে? তোর এত আগ্রহ দেখে দেরি করি নি কাজকর্ম ফেলে চলে এসেছি। চল, এবার শোকেসে সাজাবি আমায়।’
শীতলের মুখটা চুপসে গেল। সে চুপসানোর মুখটা নিয়ে মায়া মায়া সুরে শেষ প্রচেষ্টায় নামল। এই মুহূর্তে মিষ্টি মিষ্টি কথায় যদি একবার পালিয়ে বাঁচতে পারে ভুলেও রুমের দরজায় খুলবে না। তবে তার কাছে শুদ্ধকে ঘায়েল করার একটা অস্ত্র আছে। হঠাৎ কোথা থেকে যেন তার অসীম সাহস উদয় হলো। সে মিষ্টি কথায় পটাতে না পারলে সেই অস্ত্রটা কাজে লাগাবে বলে ভেবে নিলো। অতঃপর সে বলল,
-‘ মজা করে বলেছি তাই আমি ক্ষমাপ্রার্থী। এরপরও যদি মারেন আমি কিন্তু বড় বাবাকে বলে দেবো আপনি সিগারেট খান।’
একথা বলে শুদ্ধর চোখে চোখ রেখে তাকাল। তাকাতেই মনে হলো ভুল করে ফেলল নাকি আরেকটা। ভয়ে বুকটা ধুরুধুরু করে কাঁপতে লাগল।
তবে তাকে অবাক করে দিয়ে শুদ্ধ পাল্টা জবাব দিলো না, পাশ কাটিয়ে চলে গেল। শীতলের খুশি এবার দেখে কে। সে গালভর্তি হেসে শত্রুকে পরাজিত করার খুশিতে নাচতে-নাচতে, গাইতে-গাইতে, তার রুমে চলে গেল। ভেবেও নিলো এবার থেকে শুদ্ধ মারতে এলে এই হুমকিটাই দেবে সে।
বিদেশীরা সাধারণ ঝাল খেতে পারে না। তাদের কথা মাথায় রেখে সব রান্না করা হয়েছে। সায়নও এসেছে সবার সঙ্গে আলাপ জমাতে। শুদ্ধ নিচে নেমে আগে মা চাচীদের যাওয়ার ইশারা করে নিজে সবাইকে তুলে খাওয়ানোর দায়িত্ব নিলো। সিঁতারা চৌধুরী হাতের বাঙালি রান্না তৃপ্তি করে খেতে তারা বাহবা দিলো। ছেলেদের খাওয়া শেষ হলে তারা সবাই ড্রয়িংরুমের সোফায় বসল। শুদ্ধও খায় নি দেখে মা চাচীদের সঙ্গে খেতে বসল। বোনরাও বসেছে। শখ, স্বর্ণ এতক্ষণ উপরেই ছিল। বাইরের কেউ এলে বাড়ির মেয়েদের বারবার তাদের সামনে ঘুরাঘুরি করা পছন্দ করে না শুদ্ধ, সায়ন। সায়ন ছাড় দিলেও শুদ্ধ দেয় না। তাই তারা এসে নিচে নামে নি মায়ের ডাকে খেতে এসেছে। সবাই বসেছে কিন্তু শীতল নেই। একটুপরে সেও ফ্রেশ হয়ে খেতে এলো। শখ শীতলের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে একটা ইশারা করল। শখের ইশারায় মাথাতে ওড়না তুলে ভেংচি কেটে চেয়ার টেনে বসল। এইটুকু ইশারা না করলে শীতলের সঙ্গে সঙ্গে বড় ভাইদের কাছে তাদেরও বকা খেতে হতো।
সবাই খেতে খেতে টুকটাক গল্প করছে তবে নিচু স্বরে। সিঁতারা চৌধুরী ছেলের প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছে। হঠাৎ ব্যাথাতুর শব্দ শুনে সবাই চোখ তুলে তাকাল শীতলের দিকে। শীতল ঠোঁট চেপে ধরেছে। সিরাত তখন বললেন,
-‘কি রে দাঁতে পাথর পড়েছে নাকি?’
শীতল ঠোঁট থেকে হাত সরাতেই দেখে ঠোঁটে কামড় লেগে রক্ত বেরিয়ে গেছে। এত রক্ত দেখে স্বর্ণ বোনের দিকে পানি এগিয়ে দিলেও সিমিন শীতলের পিঠে দুম করে কিল বসিয়ে দিলেন। নিজে নিজে খেতে গিয়ে কে ঠোঁট কেটে ফেলে, কে! এখনও কি ছোটো আছে? নাকি তাকে হাতে তুলে খাইয়ে দেওয়ার বয়স আছে? এত তাড়াহুড়োয় খেতেই হবে কেন?
সব সময় এত কিসের চঞ্চলতা? সিমিন মেয়েকে চাপা সুরে বকতে শুরু করলেন। এদিকে ঠোঁটের তীব্র জ্বলন, অন্যদিকে কিল, এই দু’টোর চাপে শীতল ঠোঁট ভেঙে কেঁদে ফেলল। সে কাঁদতে কাঁদতে উঠতে গেলে তার হাত ধরে সিঁতারা থামিয়ে দিলেন। ছোটো জা’কে বকলেন। সিমিনের এই স্বভাবটা খুব খারাপ যেটাই হোক মেয়ে দু’টোকে মারেন। বকেন। জায়ের বকা খেয়ে সিমিন কথা বাড়াল না। নিজের এঁটো হাতটা ধুয়ে শীতলকে আগে পানি খাওয়ালেন। রক্ত মুছে দেখলেন কতটুকু কেটেছে। তারপর রান্নাঘর থেকে মধু এনে ঠোঁট লাগিয়ে দিলেন। মাংসের ঝোলের ঝালটা কমে এলে চোখের পানি, নাকের পানি এক করে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আধ খাওয়া রোস্টের দিকে। ভীষণ মজা হয়েছে রান্না। মোজা মা রান্না করেছে চোখ বন্ধ করেই বলে দিতে পারবে সে। ইচ্ছে ছিল তিনটে সাবাড় করার। কিন্তু কিছু খেতে পারে নি কেবল দুই লোকমা ভাত মুখে পুরেছিল। তার আগেই কামড় লেগে ঠোঁট কেটে গেল। ভর তুপুরে পেট পুরে সবাই খেলো কিন্তু মেয়েটা কিছু খেতে পারল না দেখে সিমিনের গলা দিয়েও খাবার নামল না। উনি দই, মিষ্টি এগিয়ে গমগমে সুরে খেতে ইশারা করলেন। বেশ খানিকটা কেটে ফুলে গেছে শীতলের নিচের ঠোঁট। মায়ের কিল খেয়ে শীতল কিছু বলাে সাহস করল না। অল্প অল্প করে দই নিয়ে মুখে দিলো।
স্বর্ণের ফোনেটা সেই তখন থেকে বেজেই চলেছে। সাইলেন্ট থাকায় ঘুমে বিভোর স্বর্ণ কিছুই টের পাচ্ছে না। এতবার কল করেও স্বর্ণকে না পেয়ে কিয়ারা এবার শখকে ফোন দিলো। শখ কিয়ারার নাম্বার দেখে শীতলের হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে নিজে পড়ায় মন দিলো।শীতল ফোন কানে ধরে
শখের রুম থেকে বেরিয়ে ধীর পায়ে বেলকণির দিকে এলো। কিয়ারার নাক টেনে কান্নার শব্দ পেতেই সে ভ্রুঁ কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
-‘কি রে কাঁদছিস কেন? তোর ফ্যাঁচর ফ্যাঁচর কান্নার শব্দ শুনতে কল করেছিস?’
-‘শীতল আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। কাঁদতে কাঁদতে আমি শেষ। তূর্য’র সঙ্গে কেন এমন হলো, কেন?’
একথা শুনে শীতল মস্তিষ্কে জোর খাঁটিয়ে মনে করার চেষ্টা করল, তূর্য কে। এই নামের কাউকে চিনে বলেও মনে পড়ছে না তার। তবে কিয়ারা কাঁদছে মানে আপনজন হবে হয়তো। তাই সে স্বান্ত্বণা দিতে বলল,
-‘থাক কাঁদিস না। আমরা কেউই সারাজীবন বেঁচে থাকার জন্য আসি নি। আমাদের সবাইকে মরতে হবে।’
এদিকে শীতলের স্বান্ত্বণার বাণী শুনে কিয়ারার কান্না বন্ধ হয়ে গেল। সে নাক টানতে টানতে পাল্টা প্রশ্ন করল,
-‘ তূর্য মরে নি রে শীতল। সে তিথির চোখের সামনে অন্য কাউকে বিয়ে করে বাসর সেরেছে। ভাবতে পারছিস কতটা কষ্টের?’
-‘বাল। কে তূর্য, কে তিথি? কার কথা বলছিস তুই? এমনিতেই মুড অফ খবরদার বলছি মাথা খাবি না আমার। ক্লিয়ার কাট কথা বল নয়তো দূরে গিয়ে মর। নিজের জীবনে সুখ নেই ও আসছে অন্যজনের দুঃখের কাহিনি শোনাতে।’
শীতলের বিরক্তমাখা কথা শুনে কিয়ারা চুপসে গেল। কান্নাকাটি অফ করে জানাল, সে কলেজ থেকে ফিরেই কাজিন রিলেটেড উপন্যাস পড়ে শেষ করেছে। উপন্যাসের নায়ক ভুল বুঝে আরেকজনকে বিয়ে করেছে। নায়িকার সামনে বউ নিয়ে বাসরঘরে ঢুকেছে। তিথি, তুর্য ছিল কাজিন।
মূলত বাড়ির কেউ জানত না তারা একে অপরের ভালোবাসে। চমৎকার
একটি উপন্যাস। তবে উপন্যাসটি স্যাড ইন্ডিং। বিচ্ছেদের ইন্ডিং মানতে না পেরে কিয়ারা কেঁদে কেঁটে একাকার অবস্থা। এদিকে মন দিয়ে পুরো কাহিনি শুনে শীতলেরও মন খারাপ হলো। সে বলল,
-‘ওটা আমিও পড়ব কাল দিয়ে যাস তো বইটা।’
-‘ আগামীকাল কলেজে যাবি? ‘
-‘না, সকালের দিকে আম্মুর সঙ্গে ডাক্তারের কাছে যাব।’
-‘আচ্ছা। তাহলে বিকেলে আমি তোর বাসায় যাব।’
-‘শোন, তোর কাছে যতগুলো কাজিন রিলেটেড উপন্যাস আছে তুই সবগুলো নিয়ে আসবি। এই জনরার উপন্যাস খুব ভালো লাগে আমার।’
শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৭
-‘আচ্ছা। ‘
তারপর সে কথা বলে কল কেটে সামনে তাকাল। হঠাৎ তার মনে হলো সে ছাড়াও এখানে কেউ আছে। কিন্তু কে? কে তার কথা শুনছে লুকিয়ে লুকিয়ে? কি মনে করে সে পেছনে ঘুরতেই দেখে একটু দূরে শুদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে। চোখে শীতল চাহনি। যাহ্, এখন কি হবে? কি করে বলবে সে যা ভাবছে আদৌও সেইরকম কিছু নয়।