হৃদয়ের সঙ্গোপনে পর্ব ১৪

হৃদয়ের সঙ্গোপনে পর্ব ১৪
তোয়া নিধী দোয়েল

চারপাশ থেকে মুয়াজ্জিনের মধুর কণ্ঠ স্বর ভেসে আসে। ওয়াশরুম থেকে অজু করে টাওয়াল দিয়ে হাত মুখ মোছে আদনান। ওর ছোট বেলা থেকে-ই অভ্যাস ফজরের আগে ওঠা। ফজরের এই সময় টা তার ভীষণ প্রিয়। এক স্নিগ্ধ সুন্দর শান্তির অনুভূতি হয়।
আলমারি থেকে দুইটা জায়নামাজ বের করে চেয়ারের উপরে রাখে। টেবিলের উপর থেকে টুপি নিয়ে মাথায় পরে। এর পর আবার ওয়াশরুমে গিয়ে এক মগ পানি নিয়ে আসে।
বালিশ, চাদর, কম্বল সব কিছু দিয়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে তুর্কি। শান্তির ঘুমে মূহুর্তে ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দেয় আদনান। চোখে মুখে ঠান্ডা কিছু অনুভূতি হওয়ায় ধড়ফড় করে উঠে বসে ও। দুই হাত দিয়ে মুখ মুছে । মুখে তো পানি! পানি এলো কোথায় থেকে! ও মুখ থেকে হাত সরিয়ে আশে পাশে তাকায়। মগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে আদনান। মাথায় টুপি। গায়ে সাদা ফতুয়া। গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

❝আজান দিছে। অজু করে আসো।❞
তুর্কি ভ্রু কুঁচকে রাগী স্বরে বলে,
❝এই ভাবে পানি ঢেলে কেউ উঠায়? আপনি ভদ্র ব্যবহার করতে পারেন না?❞
❝না। তাড়াতাড়ি যাও। পরে ঝগড়া করবো। ভোরের আলো ফোটার আগে ফজর আদায় করা উত্তম।❞
❝তাই বলে এত সকালে!❞ (একটু দুখি স্বরে)
আদনান মগ রেখে এসে দেখে তুর্কি আবারও শুয়ে পড়েছে। আদনান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তুর্কির কাছে আসে। এত দিনের অভ্যাস এক দিনে বদলানো সম্ভব না। তবে প্রতিদিন একটু একটু অভ্যাস করলে এক দিন হয়ে যাবে। আদনান তুর্কির কাছে এসে বলে,
❝বেগম সাহেবা, আমি উঠতে বলেছি। আজান দিয়েছে অনেক্ষণ আগে। অজু করে আসেন ফাস্ট। এক সাথে নামাজ পড়ি।❞

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তুর্কি ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলে,
❝যোহরের সময় পড়বো।❞
❝ফজর হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের শুরু। তাড়াতাড়ি উঠো। আর আমি আগে-ই বলেছি আমাদের বাড়ি নামাজ আদায় না করলে তাকে খেতে দেওয়া হয় না।❞
❝সমস্যা নেই স্যার। আমাকে যেখান থেকে এনেছেন সেখানে দিয়ে আসুন। এমনি-তে-ই আমাকে ঠকিয়ে বিয়ে করেছেন।❞
আদনান কপালে ভাঁজ ফেলে বলে,
❝বুঝেছি মগের পানিতে তোমার হয়-নি। দাঁড়াও বালতি ভরে নিয়ে আসছি।❞
বালতির কথা শুনে আবারো ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে তুর্কি। এই লোককে দিয়ে বিশ্বাস নেই। একবার যখন বলেছে সত্যি সত্যি করবে।

❝বললাম তো আমি খেতে চাই না।❞
❝তুমি উঠবে কি না?❞
অগত্যা তুর্কিকে বিছানা ছেড়ে নামতে হয়। কখন লোকটা সত্যি সত্যি বালতি ভরে পানি নিয়ে হাজার হয় বলা যায় না। ও কখনো এত সকালে ঘুম থেকে উঠেছে কিনা সন্দেহ। জুবাইরা নামাজ আদায় করলে ও কখনো তুর্কিকে দিয়ে ফজর আদায় করাতে পারেন-নি। তুর্কি ঘুমে টলছে ঠিক-ই কিন্তু, রাগ এক চুল ও কমে নি। ও আদনানের দিকে মুখ ভেঙিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যায়। আদনান পেছন থেকে বলে,
❝শাড়ি পরে নামাজ আদায় করতে কষ্ট হবে। ওয়্যারডবের দ্বিতীয় ড্রয়ারে দেখো একটা ব্যাগে থ্রি-পিস রাখা আছে। ওইটা পরে এসো এতে কম্ফোর্ট ফিল হবে।❞
তুর্কি রাগ নিয়ে বলে,
❝রাতে দিতে পারলেন না? শাড়ি পড়ে ঘুম আসা যায়?❞
❝রাতে তোমার সাথে আমার দেখা হয়েছে?❞
তুর্কি খুস খুস করে কেশে ওয়্যাড্রোবের দিকে যায়। রাতে ওই রকম অকাজ করার পর, আর ওদের দেখা হয়-নি। আদনান ও কিছু বলে নি।

শাড়ি ছেড়ে থ্রি-পিস পরে ফ্রেশ হয়ে অজু করে আসে তুর্কি। ওড়না দিয়ে মাথায় ভালো ভাবে ঘোমটা দেয়। আদনান একটা জায়নামাজ তুর্কির হাতে দেয়। আরেকটা নিজে নিয়ে বলে,
❝নিয়ম জানো না শিখিয়ে দিতে হবে?❞
তুর্কি ভ্রু কুঁচকে রেগে বলে,
❝নামাজ আদায় করি না বলে কি নিয়ম ও জানিনা?❞
আদনান মৃদু হেসে জায়নামাজ বিছায়। তবে হাসি টুকু দৃষ্টিগোচর হয় না তুর্কির। আদনান জায়নামাজের পাশে তুর্কি ও জায়নামাজ বিছায়। আদনান বলে,
❝স্বামী-স্ত্রী পাশা পাশি কাতারে দাঁড়াতে পারে না। তাহলে দুই জনের নামাজ-ই নষ্ট হয়। তুমি আরেকটু পেছনের দিকে যাও।❞

তুর্কি তাই করে। এক সাথে দুইজন নামাজ শেষ করে। জায়নামাজ ভাঁজ করতে করতে আদনান বলে,
❝এই যে ফজর আদায় করলে সারা দিন বিপদ থেকে সুরক্ষিত থাকবে।❞
❝যেখানে সবসময়, আপনার মত জলজ্যান্ত বিপদ নিয়ে ঘুরবো ;সেখানে অন্য কিছু থেকে রক্ষা পাওয়া বিলাসিতা৷ এখন আমি ঘুমাতে গেলাম।❞
❝উঁহু। ফজরের পর কিসের ঘুম? চুপ চাপ বই নিয়ে আসো। কিছু-ই পড়া হচ্ছে না তোমার।❞
❝মানে! আমি বিয়ে-ই করেছি যেনো লেখা পড়া না করতে হয়। আর আপনি আমাকে এই সকাল থেকে পড়তে বলছেন?❞

❝এত কথা বলো কেনো? যা করতে বলেছি তাই করো।❞
❝করবো না। আপনার কোনো কথা আমি শুনবো না।❞
❝আমার এক কথায় আমার শাশুড়ী মা তোমাকে আমার হাতে তুলে দিছে। আর তুমি তার মেয়ে আমার কথা শুনবে না? তোমার ঘাড় শুনবে।❞
❝আপনি এই ভাবে আমার উপর নির্যাতন করতে পারেন না। আমি.. আমি মামলা করবো আপনার নামে।❞
❝আই গেস, এত দিনে আমি কী কর‍তে পারি আর কী করতে পারি না তোমার ধারণা হয়ে গেছে। সো….ফাস্ট।❞
❝আমার মাথা করতে পারেন। ❞
আদনান স্টাডি টেবিলের ছোট ড্রয়ার থেকে একটা বস্তু বের করে তুর্কির দিকে ধরে।
❝বুঝেছি জানালা দিয়ে ফেলেছিলাম বলে ভালো লাগে নি। আছাড় মেরে ভাঙলে শান্ত হবে।❞
তুর্কি চোখ বড় বড় করে তাকায়৷ ওই তো ওর ফোন! আদনান হাত উপরে তোলে তুর্কি চ্যাঁচিয়ে উঠে
❝আ আ আ আ আ। যাচ্ছি যাচ্ছি। ভাঙবেন না প্লিজ। ❞
আদনান হাত নামায়।
❝গুড জব। ফাস্ট।❞

তুর্কি রাগ নিয়ে বই খাতা নিয়ে টেবিলে বসে। ওর সারা শরীর ঘুমে টলছে। ও এই অসভ্য লোকটাকে মোটে ও ভয় পায় না। ভয় পায় লোকটার পাগল পাগল কাজ কর্মে। যা বলে তাই করে। তুর্কি পদার্থ বই বের করে ফোসে উঠে
❝শা*লা*র নিউটন পৃথিবীতে এত এত সূত্র আবিষ্কার করছে অথচ (আদনানের দিকে তাকয়ে) ঘাড়ত্যাড়া লোকের ঘাড় কীভাবে সোজা করতে হয় এই সূত্র বানায় নাই৷ শুধু পরিক্ষার হলে কি ভাবে আমাগো বাঁশ দিতে পারবো সেই ধান্দায় ছিলো।❞
❝তবে ঘাড়ত্যাড়া বউয়ের ঘাড় কীভাবে সোজা করতে হয় সেই সূত্র আমি আবিষ্কার করেছি। কয়েক দিন পর এই সূত্র পাব্লিস করবো ;যাতে সব নিরহ স্বামীরা শান্তিতে বাঁচাতে পারে।❞
❝অসভ্য মার্কা খারাপ লোক❞

আদনান একটা বই নিয়ে তুর্কির পাশে বসে। তুর্কি চোখ নিভু নিভু করে বইয়ের দিকে তাকায়। কিছুসময় যাওয়ার পর রচনা আসে ডকাতে। তুর্কি যেনো চাঙ্গা হয়ে উঠে৷ মূহুর্তেই বই-টই ফেলে দৌড়ে যায় দরজা খুলতে। আজ বাড়িতে বিশাল অনুষ্ঠান সেই জন্য-ই এসেছে।
বাড়ি ভর্তি মেহমান। একে একে তুর্কিকে সবাই দেখে যাচ্ছে। আর অনেক অনেক উপহার দিয়ে যাচ্ছে। ভীষণ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে ওকে। গাঢ় খয়েরী রঙের শাড়ি পরেছে। এত মানুষের ভিড়ে ও ওর মন পড়ে রয়েছে অন্য জায়গায়।
মাথায় ঘুরছে কী ভাবে এই লোকের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। আজ রচনা আসলছিলো বলে বেঁচে গেছে। প্রতিদিন যদি এই ভাবে সকালে উঠে পড়তে বসতে হয় তাহলে কী লাভ হলো বিয়ে করে! পড়ালেখা যেনো না কর‍তে হয় সেই জন্য-ই তো বিয়ে টা করা। কিছুতে-ই এই লোকের সাথে থাকা যাবে না। তা না হলে পড়তে পড়তে শহিদ হতে হবে।

“হাই মিসেস রাজ”
এত ভিড়ের মাঝে ও একটা পরিচিত কণ্ঠস্বর ভেসে আসে। তুর্কি সেই দিকে তাকায়।
হালকা গোলাপি রঙের সিল্কের শাড়ি পরিহিত এক অপরুপ নারী এসেছে। নারীটিকে ও চেনে। কোহেলি। কোহেলি ওর পাশে এসে বসে। একটা রিং বক্স থেকে একটা গোল্ডের রিং বের করে ওর হাতে পরিয়ে দেয়। ফিসফিসিয়ে বলে,
“গিফট টা পছন্দ হয়েছে?”
এই মহিলাকে তুর্কির মোটে ও সহ্য হয় না। মুখে হাসি নিয়ে বলে
“কেনো পছন্দ না হলে কি অন্য কিছু দিবেন?”
কোহেলি হেসে বলে,
“রাজের থেকে মূল্যবান আমার জীবনে আর কিছু-ই নেই। আর সেটাই তোমাকে দিয়ে দিয়েছি। আর কী চাও?”
“আপনার রাজের থেকে মুক্তি।”
“মানে?”

“আপনার ওই বুইড়া মার্কা ক্রাশকে আমার একদম পছন্দ না। কিসের জন্য যে আমার কপালে এসে জুটলো আল্লাহ্ জানে!”
“এক দম নাটক করবে না। আমি খুব ভালো করে-ই জানি তুমি ইচ্ছে করে রাজ কে ফাঁসিয়েছো। তা না হলে তোমার মত নিব্বি মার্কা মেয়েকে রাজ কোনো দিন ও বিয়ে করতো না”।
“আমাকে আপনার নিব্বি মনে হয়?”
“না শুধু নিব্বি না। ভীষণ শেয়ানা ও মনে হয়। টাকার লোভে এসেছো”
“ হুউম (মুখ ঝামটা দিয়ে) আমার বাবা সৌদি থাকে। এক বাপের এক বেটি আমি। ছোট বেলা থেকে কোনো জিনসের অভাব নেই আমার। অন্য মানুষের টাকার প্রতি আমার এক ফোটা লোভ ও নেই। লোভী তো আপনি”
“হ্যাঁ, অবশ্যই আমি লোভী। রাজ-কে পাওয়ার ভীষণ লোভ আমার। ভীষণ ভীষণ ভীষণ!”

মুখের সামনে তুড়ি মারার আওয়াজ হতেই ভাবনা থেকে বের হয় তুর্কি। কোহেলি ওর সামনে রিং এর বক্স ধরে রেখেছে। তার মানে ও এতক্ষণ কোহেলিকে নিয়ে এই সব ভাবছিলো! পরপরই নিজের ওপর বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হয়! যতই ওর বর বুড়ো কিংবা ওর পছন্দের না হোক; তবুও ও-ওর বরের দিকে ও কাউকে নজর দিতে দিবে না। যতই ওদের মাঝে ঝামেলা হোক; ওর বরের দিকে কাউকে নজর দিতে দিবে না। ও রাগ করবে, ঝগড়া করবে; কিন্তু তাই বলে হাতছাড়া করবে না। ও রিং টা হাতে নিয়ে উপরে নিচে মাথা নাড়ায়। যার অর্থ ওর পছন্দ হয়েছে।
-জি। অনেক পছন্দ হয়েছে।
-পছন্দ হওয়ার-ই কথা। আফটার ওল, আমার জীবনের সব থেকে মূলবান জিনিস টা তোমাকে দিয়েছি!
তুর্কি ভ্রু কুঁচকে বলে,

-বুঝলাম না!
-না বোঝার মত তো কিছু বলি-নি।
কোহেলির ইঙ্গিত বুঝতে পেরে তুর্কি ফুঁসে ওঠে। তবুও মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,
-যা বোঝাতে চাইছেন, স্পষ্ট করে বলুন।
-রাজের থেকে মূলবান জিনিস আমার জীবনে আর নেই। আর সেটাই তোমাকে দিয়ে দিয়েছি। সেটাই বললাম।
তুর্কি ঠোঁটের হাসি আরও দীর্ঘ করে বলে,
-যে জিনিস টা সৃষ্টিকর্তা শুরু থেকেই আমার জন্য রেখেছে; সেটা আপনি আমাকে দিচ্ছেন? মাই গড!
কোহেলি কপালে ভাঁজ ফেলে বলে,
-মানে?

-না বোঝার মত কিছু বলিনি। উনি শুরু থেকেই আমার নামে ছিলো। মাঝে আপনি ইচ্ছে করে এসেছেন। আগে যা হয়েছে বা ছিলো সব ভুলে জান। (একটু এগিয়ে এসে) এখন আমার জিনিস আমার কাছে চলে এসেছে। ভুলেও আর নজর দিয়েন না। আমি আপনার প্রোফেশন টাকে ভীষণ সম্মান করি। সেটার সম্মানহানি হোক সেটা আমি চাই না। আর আমার জিনিসের দিকে নজর দিলে আমি কিন্তু কোনো সম্মান-টম্মান দেখবো না।
কোহেলি কিঞ্চিৎ রাগী স্বরে বলে,
-এই তুমি আমাকে থ্রেট করছো?
-নাহ্! মোটে ও না। আমি থ্রেট করার মত বোকা কাজ করি না। যেটা বলি সেটা করে ছাড়ি। সো বি কেয়ারফুল! আমার বরের থেকে দূরে থাকুন।

কোহেলি রাগে কটমট করতে করতে চলে যায়। এই সব মেয়েদের সাথে কথা বলে নিজের সম্মান খোঁয়ানোর কোনো দরকার নেই। কোহেলি চলে যেতেই তুর্কি শয়তানি হাসি হাসে। খুব এসেছিলো ওর বর কে নিয়ে কথা বলতে। ঝগড়া, মারা-মারি করলেও জামাই ও ছাড়বে না!
পাশাপাশি দুই চেয়ারে বসে খাবার খাচ্ছে রেজুয়ান আর মুজাহিদ। আদনানের অনেক কলিক রা এসেছে তাই ও সেইখানে ব্যস্ত। গরুর গোশতের বাটি থেকে মুজাজিদ কয়েক পিছ গোশত উঠিয়ে প্লেটে নেয়। রেজুয়ান মুজাহিদদের প্লেট থেকে একটা গোশত উঠিয়ে বলে,

“কম কম খাও বাপের ভাই। তা হলে রাতের বেলা গরুতে পেটের ভেতর হাম্বা হাম্বা করবো।”
মুজাহিদ চোখ মুখ কুঁচকে তাকায়। ওকে কম খেতে বলছে অথচ নিজে ওর প্লেট থেকে উঠিয়ে খাচ্ছে।
“তাড়াতাড়ি শেষ করো। মেয়ে দেখতে যেতে হবে। এত মানুষ আসছে না জানি কত সুন্দরী মেয়েরা আসছে।”
“তুই কবে যে মেয়েগো হাতে গণধোলাই খাবি। সেইদিন মানুষ হবি।”
“সমস্যা নেই বাপের ভাই। ধোলাই খেলে আমি একা খামু না। সাথে তোমারে আর ভাইরে নিয়ে খামু। তোমরা-ই তো এই গুলা আমারে শিখাইছো৷ তা না হলে আমার মত মাসুম অবুঝ একটা শিশু এত কিছু বোঝে নাকি।”
“হো মাসুম। মনতো না যেনো আরিচার সদরঘাট।”

“হো আর সেই ঘাটে শুধু সুন্দর সুন্দর মেয়েরা-ই নাই। সুন্দরী মেয়েগো মায়ে-রাও আছে। তুমি চাইলে (এক লোকমা মুখে নিয়ে) দুই তিনটা ধরিয়ে দিতে পারি।”
মুজাহিদ বা হাত দিয়ে রেজুয়ানের কান টেনে ধরে বলে,
“আমি যে তোর চাচা তুই কি ভুলে যাস?”
“কিসের চাচা? তুমি তো আমার বাপ। কিন্তু আফসোস, মা নাই। কার লগে আকাম কইরা আমারে পেটে ধরছো আল্লাহ জানে।”

দ্রুত কান ছেড়ে দেয় মুজাহিদ। আশে পাশে তাকিয়ে দেখে কেউ শুনলো নাকি। এ জীবনে এই ছেলের মুখ থেকে চাচা ডাক শোনা হবে না। না এই ছেলে বুঝবে সে ওর চাচা।
“শোনো বাপের ভাই। আজ যে মেয়েটা পছন্দ করবো সেই মেয়েটা আমার। আর মেয়ের মা তোমার ওকে। তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করো সুন্দরী মেয়ে খুঁজতে হবে।”
পেছন থেকে দুইজনের ঘাড়ে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আদনান।
“আমাকে রেখেই খেতে বসছআজ।”
মুজাহিদ এক পিছ গোশত উঠিয়ে আদনানের মুখে দিয়ে বলে,
“তোকে অনেক খুঁজছি পাই নাই।”
“ভাই আশে পাশে কোনো সুন্দরী মেয়ের মা কে দেখছো নাকি। আমার পালিত বাপ টাকে কে বিয়ে করাবো তাই একটা সুন্দরী মহিলা লাগবো।”

রেজুয়ান আরেকটা গোশতের পিছ দিয়ে বলে।
“আরে দেখছি না মানে। বাড়ি ভর্তি। পাত্র রাজি থাকলে-ই এখনি বিয়ে করয়ে দিতে পারি”
“তোরা যদি এখন না থামছ একটা লাথি মারুম। আশে পাশে অনেক মানুষ কেউ শুনলে কি বলবে”।
রেজুয়ান দুখি স্বরে বলে,
“হো হো ভাই চুপ থাক। বেচারা বিয়ের আগে আকাম কইরা আমারে পয়দা করছে ;এইটা যদি কেউ জানে তাইলে আর কেউ বিয়ে করবো না।”
“তোর জংলীর দল। আর যদি কোনো দিন আমারে কোনো কাজে ডাকছ তখন পামুনি। তুই যদি আরেকবার বলছ আমার বউ রান্না পারে না একটু রান্না করে দেও। পামনি। আর তুই ❝এই মেয়েডারে ভাল লাগে একটু পটাতে সাহায্য করো❞। পামনি তখন”
“বাপের ভাই বাপের ভাই চেইতো না চেইতো না। আর বলুম না”
“চুপ খাচ্চর কথা বলবি না এক দম।”

খাওয়া শেষে এক টিস্যু ছিঁড়ে হাত মুচ্ছে রেজুয়ান আর মুজাহিদ। তবু ও আরেকটা নেবে না। ওদের ভালোবাসা অন্য রকম। ওদের ঝগড়ার কোনো ভেলু নেই। এই ঝগড়া এই গলায় গলায় ভাব।
একটা শাড়ি পড়া মেয়ে রেজুয়ানের দিকে একটা মোড়ানো টিস্যু পেপার ছুঁড়ে দেয়। রেজুয়ান সেই দিকে একবার তাকিয়ে টিস্যু তোলে। টিস্যুতে সযত্নে লেখা,

হৃদয়ের সঙ্গোপনে পর্ব ১৩

-আই লাভ ই মীম ভাই। প্লিজ এক্সেপ্ট মাই প্রপোজাল৷ ০১৮********।
রেজুয়ান মুজাহিদদের দিকে তাকিয়ে বলে,
“বলতে না বলতে হাজির। খোঁজ নেবো নাকি মেয়ের মায়ের সম্পর্কে”?

হৃদয়ের সঙ্গোপনে পর্ব ১৫