হ্যালো 2441139 পর্ব ৩৪

হ্যালো 2441139 পর্ব ৩৪
রাজিয়া রহমান

একটা পাঁচ তারা হোটেলের সি ভিউ রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে রজনী। তিনতলার এই রুমটা থেকে সমুদ্রকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। খোলা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আজকের এই সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে রজনীর মনে পড়লো তার জীবনেরই এখন সূর্যোদয় হওয়ার সময় হয়ে এসেছে। জীবনে যা চেয়েও পাওয়া হয় নি,সেসব ভেবে আক্ষেপের আগুনে পুড়তে পুড়তে রজনীর এখন নিজেকে কয়লা মনে হয়। পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারলো না।
কেনো যে একটু সাহসী হয়ে প্রতিবাদ করতে পারলো না ভেবে পায় না রজনী। কি হতো নার্গিসের মতো সাহসী হলে!
কিছুক্ষণ আগে আষাঢ় কল করে জানিয়েছে নার্গিস রাগ করে চলে গেছে কোথাও।রজনী ভাবে সে হলে কি কখনো পারতো!

পারতো না।মানুষ হিসেবে সে ভীষণ ভীতু মানুষ।তার চাইতে বেশি অভিমানী মানুষ। অভিমানী মানুষের যন্ত্রণা বেশি। বুকে ক্ষত নিয়ে ও সে হাসিমুখে নিজের কষ্ট আড়াল করে যায় অনবরত।
রজনীর ভাবনার মধ্যে সিরাজুল ইসলাম উঠে এলেন বাহিরে।রজনীর পেছনে এসে দাঁড়ালেন তিনি।রজনীর ভীষণ হাসি পেলো।একটা সময় সিরাজুল ইসলামের সাথে এই মুহুর্তটা কতো কল্পনা করেছেন।কল্পনা করে তিনি নিজেই রোমাঞ্চিত হয়েছেন!কিন্তু ভাগ্যে সেই সুখ জোটে নি।আজ এই বয়সে এসে এই অপ্রত্যাশিত রোমান্স ভালো লাগছে না।
সব বয়সের আলাদা চাহিদা থাকে।একটা রঙিন বেলুন শৈশবে যতটা আকর্ষণ করে, যৌবনে তার প্রতি কোনো আগ্রহ থাকে না আর।
এই মুহূর্তে স্বামীর চাইতে সময় কাটানোর চাইতে বেশি রজনীর চিন্তা হচ্ছে বাড়িতে কি পরিস্থিতি এখন।
মহুয়া বেগম নাশতা করেছেন!
পিয়াসা কি খেয়েছে?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আষাঢ় রাতে কখন ফিরেছে। ভাবতে ভাবতে রজনীর চেহারায় চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে।
সিরাজুল ইসলাম নিজেও বুঝতে পারছেন এই মুহূর্তে এসে এরকম কিছু রজনীর ভালো লাগছে না।রজনীর চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,”কি চিন্তা করছো?কোনো সমস্যা? ”
“আপনার এভাবে আমাকে নিয়ে আসা উচিত হয় নি।বাড়িতে কেউ নেই।বাড়িতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। ”
“কোনো সমস্যা হচ্ছে না রজনী। আমার এই কাজটা হয়তো অনেক বছর আগেই করা উচিত ছিলো কিন্তু আমি করতে পারি নি।সেটা আমার ব্যর্থতা। হয়তো এখন সময় শেষ হয়ে গেছে। তবুও নিজের অপরাধবোধ থেকে সামান্য একটুও যদি নিস্তার পাই তার জন্য খেসারত দিতে আমি সব করতে রাজি এখন।”

রজনী ক্রুর হেসে বললো, “সময় গেলে কি সাধন হয় কখনো? আপনি রাজি হলেই বা কি আমার!
একটা সময় আপনি অফিস থেকে ফেরার পথে আমার জন্য মনে করে একটা ফুল নিয়ে আসলেও আমার আনন্দ হতো অথচ এখন শুধু ফুল না,ফুল গাছ নিয়ে আসলেও আগের মতো সেই অনুভূতি আসে না।
সব কিছুর জন্য একটা পারফেক্ট টাইমিং এর প্রয়োজন হয়।নির্ধারিত সেই সময় পেরিয়ে গেলে আর সেই আনন্দ, আবেগ,আহ্লাদ কিছুই আসে না মনে। উল্টো বিষন্ন লাগে ভীষণ। পেলামই যখন, তখন যখন চেয়েছিলাম তখন কেনো পেলাম না ভেবে বুকের ভেতর যন্ত্রণারা হাহাকার করে।

আজকে এই সি ভিউ রুম আমার কাছে বাড়িতে আমার বেডরুমের চাইতে একটুও অন্যরকম ফীল করাতে পারছে না।আমার মন পড়ে আছে আপনাদের সেই বিশাল জমিদার বাড়িতে।আপনার মা’য়ের খাবারের শিডিউল, পিয়াসার কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি-না, আষাঢ় রাতে ফিরেছে কি-না আমার মন এখন সেখানে। ”
সিরাজুল ইসলাম সমুদ্রের দিকে তাকালেন।হাজার হাজার মানুষ সমুদ্র তীরে প্রিয় মানুষের সাথে সূর্যাস্ত দেখছে।সিরাজুল ইসলাম ও দেখছেন তবে তাদের মতো সেই আবেগ নেই মনে। রজনীর গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সিরাজুল ইসলাম বললেন,”কোথাও না কোথাও তুমি ও তো আমার মা’য়ের মতোই রজনী। এই যে তুমি এখন নিজেকে বাদ দিয়ে ছেলে,মেয়ে সবাইকে নিয়ে চিন্তা করছো।একটা বয়সে এসে সব মানুষ চায় আশেপাশের সবাইকে নিয়ে থাকতে। আমার মা আগের যুগের মানুষ। তার সময়কার স্থান, কাল,পাত্র আর বর্তমান এক রকম না রজনী। আমার মা’য়ের উপর ক্রোধ জমিয়ে রেখো না।”

কথার উত্তরে রজনীর অনেক কথাই বলার ছিলো। বলার ছিলো কিভাবে মহুয়া বেগম একটা রজনীগন্ধার সতেজতা মলিন করে দিয়েছেন। বলার ছিলো কিভাবে বুকের ভেতর বইতে থাকা ভালোবাসার নদীকে মহুয়া বেগম শুকনো মরুভূমি করে তুলেছেন।
বলা হলো না কিছুই।কথায় কথা বাড়বে শুধু, সেই সাথে বাড়বে তিক্ততা।বুকের ভেতর অভিমানের পাহাড় ভারী হতে হতে নিশ্বাস বন্ধ করে দেওয়ার পর্যায়ে চলে এসেছে।
এতো দিন যখন নিরবে সহ্য করে গেছেন এখন আর কেনো অযথা তর্ক করবেন!
সিরাজুল ইসলামের মনে হলো তিনি আবারও ভুল করেছেন।
রজনীর শুকনো মুখের দিকে তাকালে সিরাজুল ইসলামের ইচ্ছে করে সময়কে বদলে দিতে।কোনো যাদুবলে যদি পারতেন ত্রিশ বছর সময় কমিয়ে দিতেন।
সেই রজনীগন্ধার সতেজতায়,হাসিতে মুগ্ধ হয়েছেন এক সময়, সেই ফুলকে দিনের পর দিন নিজের চোখে শুকিয়ে যেতে দেখেও কোনো প্রতিবাদ জানাতে পারেন নি।
রজনী রুমে চলে গেলো। সিরাজুল ইসলাম বিচের দিকে তাকিয়ে রইলেন শূন্য চোখে।একটা ছেলে আর মেয়ে বিচে হাটছে।মেয়েটার পরনে আকাশি রঙ শাড়ি,ছেলের পরনে পাঞ্জাবি।
মেয়েটা হাটতে হাটতে অকারণে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ছেলেটা সযতনে মেয়েটার কাঁধ নিজের বুকের সাথে টেনে নিচ্ছে।

সিরাজুল ইসলামের হঠাৎ মনে হলো তিনি তাকিয়ে আছেন ঠিকই কিন্তু কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না।চোখে ভাসছে অনেক অনেক বছর আগের কথা। রজনী শাড়ি হাতে নিয়ে তাকে বলছেন,”চলো আমরা আজকে সূর্যোদয় দেখবো এক সাথে। সকালে তো তারিন ঘুমে থাকবে,তখন তো আর অসুবিধা হবে না ওকে রুমে রেখে গেলে।এই সবুজ শাড়িটি পরবো আমি,তুমি এই লাল পাঞ্জাবিটা পরে নাও।”
সিরাজুল ইসলাম বিরক্ত হয়ে বললেন,”পাগল না-কি! সূর্য দেখার জন্য এখন শাড়ি পাঞ্জাবি পরা লাগবে!সূর্য কি এই প্রথম উঠছে না-কি রজনী!
জন্মের পর থেকেই তো সূর্য দেখি,তাহলে আজকে কেনো এরকম পোশাক পরতে হবে?আর এতো সকালে আমার ঘুম ভাঙে না।তুমি তারিনকে নিয়ে যেও অথবা শিরিনদের সাথে যাও।”
রজনী চুপ করে তাকিয়ে ছিলো। আজ বহু বছর পর মনে হলো সেই তাকানোতে মিশে ছিলো কতো না বলা অভিযোগ, অভিমান,যন্ত্রণা।

এই যে ছেলেটা আর মেয়েটা, জীবনের সূর্যাস্তের সময় ও তাদের কোনো এক দিন মনে পড়বে দুজন মিলে একদিন সমুদ্রের পাড়ে এভাবে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেয়েছেন।দুজন ম্যাচিং পোশাক পরেছেন।
এই স্মৃতিটুকু তাদের জীবনের পথে অনেক অভিযোগ দূর করে দিবে।অনেক অভিমান মুছে দিবে।
অথচ তার নিজের!
রুমে ঢুকতে ইচ্ছে করছে না সিরাজুল ইসলামের। রজনীর দিকে তাকালেই অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে যান তিনি। এরকম কেনো লাগে!
এতো অনুশোচনা আগে কেনো হয় নি!

শিরিনের দুই চোখ আস্তে আস্তে ছোট হয়ে আসছে।মিরার ভয় লাগছে মায়ের দিকে তাকাতে।মা কি সত্যি বুঝে ফেলেছে না-কি!
মিরার গলা শুকিয়ে আসছে।
মিরা চায় না মা কিছু বুঝুক।মা বুঝলে পিয়াসার জীবন হেল হয়ে যাবে।পিয়াসার জীবন হেল হলে আষাঢ় ঘাড় ধরে তাদের সবাইকে বাড়ি থেকে বের করে দিবে।বাড়ি থেকে বের করা নিয়ে মিরা চিন্তিত নয়।মিরা চিন্তিত আষাঢ়ের কাছে প্রমাণ আছে মিরা দুই দিন বড় মামার আলমারি থেকে টাকা চুরি করেছে।
সবচেয়ে বড় ভয় মিরার সেখানে। সেই ভয়েই মিরা চুপ করে রইলো।
নয়তো মিরা শিরিনের মেয়ে,কেউ তার লেজে পা দিলে ছোবল মারতে মিরা দ্বিতীয় বার ভাবার মেয়ে না।
পিয়াসাকে সে এতো ছাড় দেওয়ার মানুষ না।
কিন্তু নিজেকে সেইফে রাখতেই সে পিয়াসাকে নিয়ে কনসার্ন হচ্ছে।

শিরিন মিরার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বললো, “জ বা ই করে দিমু মিথ্যা কথা কইলে।সত্যি করে বল,কে?”
“আমি জানি না মা।এসব কথা বাদ দাও।আমার নিজেরই আষাঢ় ভাইরে ভাল্লাগেনা।”
শিরিন চোখ ছোট করে তাকিয়ে রইলো। তারপর হেসে বললো, “তোর ভালো লাগে না! ঠিক আছে তাহলে মিনিকে বলবো আমি।কিন্তু লাভের গুড় পিপড়ারে আমি খেতে দিমু না।”
নিরা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো মা’য়ের কাছে। হাতের ফোনটা শিরিনের সামনে ধরে বললো, “মা দেখো,দেখো আষাঢ় কার সাথে সম্পর্কে আছে।”
মিরা নিজেও উঠে গেলো। গতকালের ভিডিওটা। ভিডিওতে পিয়াসা স্পষ্ট না হলেও ফর্সা হাতের কালো ঘড়িটার দিকে তাকিয়েই শিরিন বুঝে গেলো এই মেয়ে পিয়াসা ছাড়া আর কেউ না।
শিরিন এই ভয়টা পাচ্ছিলো যেদিন পিয়াসা এই বাড়িতে এসেছে সে দিন-ই। কিন্তু এখন দেখছে তার ভয় সত্যি হতে যাচ্ছে।

শিরিন কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো।তারপর ভাবনা চিন্তা করে উঠে গেলো। পিয়াসার থেকে ওর মা’য়ের ফোন নাম্বার নিলো।পিয়াসা কিছুটা অবাক হলেও নাম্বার দিয়ে দিলো শিরিনকে।
খানিক পরে যখন মা কল করে পিয়াসাকে, পিয়াসা অবাক হয়। মা এখন স্কুলে। আর পিয়াসা এখন কোচিং এ যাবে।এই সময় তো মা কল করে না।তাহলে আজকে কি মনে করে কল দিলো!
পরমুহূর্তে মনে পড়লো কিছুক্ষণ আগে শিরিন আন্টি মা’য়ের ফোন নাম্বার নিয়েছে তার থেকে।
কল রিসিভ করতেই মা’য়ের শান্ত সুর ভেসে এলো কানে।
শারমিন মেয়েকে সোজাসুজি বললো, “পিয়াসা মা,তুমি এখন বড় হয়েছো।তোমার এই বয়সটা অন্য রকম। এই বয়সে মানুষ অনেক ভুল করে। যদিও সেসবকে আমি ভুল বলি না।জীবন অনেক কিছুই শেখায় আমাদের। আজ যা ঠিক মনে হয় তা আবার একটা সময় হাস্যকর লাগে।”

পিয়াসার কেমন চিন্তা হচ্ছে মা’য়ের কথা শুনে। চিন্তিত হয়ে পিয়াসা বললো, “কি হয়েছে মা?কোনো সমস্যা?”
“আমি আমার মেয়েকে বিশ্বাস করি মা।যা-ই হোক তুমি মা’কে সত্যিটা জানাও।ঘটনা সত্যি হলেও আমি সাদরে মেনে নিবো,মিথ্যে বললে আমি ও জবাব দিতে জানি।স্কুলে আমার এই রেকর্ড তোমার অজানা নয়।”
পিয়াসার এবার সত্যি ভীষণ ভয় করতে লাগলো।

“একটু আগে আষাঢ়ের ফুফু শিরিন কল করেছে।গতকাল রাতে তুমি আর আষাঢ় কি কোথাও গিয়েছিলে?সোশ্যাল মিডিয়ায় আষাঢ় একজন সেলিব্রেটি এটা আমরা সবাই জানি।একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে গতরাতে। শিরিন আমাকে সেটা পাঠিয়েছে। বলেছে তুমি এখানে পড়ার নাম দিয়ে এসে আষাঢ়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছো।তুমি আষাঢ়ের সাথে এখানে ওখানে ঘুরতে যাচ্ছো।মা,আষাঢ়ের প্রতি কি তোমার এরকম কোনো অনুভূতি আছে?আষাঢ় ভালো ছেলে এটা আমরা সবাই জানি।তুমি যাকেই চুজ করবা জীবনে, আমরা তাকেই মেনে নিবো।কিন্তু এসব ব্যাপার আমি এবং তোমার বাবা চাই অন্য কেউ জানানোর আগে তুমি আমাদের জানাবে।”
পিয়াসার দুই চোখ ভিজে গেলো।আষাঢ়ের কথা ভাবলে সে তাকে ভিলেন ছাড়া কিছু ভাবতে পারে না। কখনোই সে আষাঢ়কে নিজের জীবনের কিছুই ভাবে না।সেখানে এরকম অপবাদ!

“মা,আষাঢ় ভাই মানুষ হিসেবে ফেরেশতা হলেও তাকে আমার কাছে আর দশজন মানুষের মতো মনে হয়। তার প্রতি আমার বিন্দুমাত্র এরকম কোনো আগ্রহ নেই। আর যদি সত্যি বলতে হয়,তাকে আমি চরম অপছন্দ করি।এই জীবনে তিনিই একমাত্র পুরুষ যাকে আমি অসম্ভব রকম অপছন্দ করি।তাকে নিয়ে এরকম কিছুই আমি কখনো ভাবি না।গতকাল রজনী আন্টি আর আংকেল ঘুরতে গিয়েছেন।সেখানে তাদের সি অফ করতে আমাকে নিয়ে গিয়েছে আন্টি।ফেরার পথেই উনি রেস্টুরেন্টে ঢুকেন।সেখানে ওনার অনেক ফ্যান ওনাকে ঘিরে ধরে বিধায় আমি অসুবিধায় পড়বো ভেবে তিনি আমার সাথে এরকম ট্রিট করেছেন। তাছাড়া তিনি অন্য কারো সাথে সম্পর্কে আছেন।না আমার তার প্রতি কোনো অনুভূতি আছে,না তার আমার প্রতি কোনো অনুভূতি আছে।

আমি লিখে দিতে পারি, আষাঢ় ভাইয়ের প্রতি আমার এই মনোভাব আজীবন এমন থাকবে।”
শারমিন মেয়ের কথা শুনে খুশি হলেন।আষাঢ় হিরের টুকরো ছেলে হতে পারে, রজনী তার বান্ধবী হতে পারে কিন্তু তাদের পরিবারের অভ্যন্তরীণ সব নিয়ম নীতি শারমিনের পছন্দ না।মেয়ের শ্বশুর, শাশুড়ী হিসেবে রজনী, সিরাজুল ইসলাম বেস্ট হতে পারে কিন্তু শ্বশুর বাড়ি হিসেবে এই বাড়িটি সবচেয়ে নিকৃষ্ট। ঘরের বউকে পায়ের নিচের পাপোষ ভাবে এরা।
রজনীর জীবন যেভাবে কেটেছে, তার মেয়ের সাথে তা রিপিট হোক শারমিন কখনোই চায় না।
কল কেটে শারমিন শিরিনকে কল দিলো।

শারমিন মহুয়া বেগমের রুমে বসে পান খাচ্ছে মায়ের সাথে
শিরিন শারমিনের কল রিসিভ করতেই শারমিনের তপ্ত সুরে ভেসে এলো।শিরিন ফোনের স্পিকার অন করে দিলো।
“আমার মেয়ের নামে আর একটা মিথ্যে অপবাদ দেওয়ার আগে দশবার ভেবে কথা বলবেন।আমার মেয়ে ওখানে পড়তে গিয়েছে, ওকে আমি প্রেম করতে পাঠাই নি।কিংবা কোনো ছেলের পেছনে লেলিয়ে দিই নি।আর একবার এই ধরনের কোনো কথা বললে আপনার জিভ টেনে আমি ছিড়ে ফেলবো শিরিন আপা।

হ্যালো 2441139 পর্ব ৩৩

আপনাদের এই পরিবার জমিদারের বংশের হতে পারে, কিন্তু আপনাদের এই পরিবারে কোনো সচেতন বাবা মা মেয়ে বিয়ে দিবে না।যতোই হিরের টুকরো ছেলে হোক অথবা যতোই ধনী হোক।তারাই দিবে যাদের কাছে অর্থসম্পদ সবকিছুর আগে।আমার কিংবা আমার স্বামীর কারোরই সেসবে আগ্রহ নেই।আমরা আমার মেয়ের জন্য একটা পরিবার চাই যেখানে আমার মেয়েকে খাঁচায় বন্দী না রেখে খোলা আকাশ দেওয়া হবে উড়ার জন্য। আপনাদের পরিবারটা এসব বুঝবেন না।আমার মেয়ের সাথে আপনার ভাইপোর কোনো সম্পর্ক নেই,না কখনো হবে।আমি কখনো হতে দিবো না।”
শিরিন মহুয়া বেগমের দিকে তাকায়। মহুয়া বেগমের কপালের রগ দপদপ করছে।

হ্যালো 2441139 পর্ব ৩৫